হৃদয় প্রশান্তকর প্রয়োজনীয় কিছু উপদেশ :
১. আপনি যদি আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন, আপনার জীবনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আপনাকে বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই দুনিয়ার খেল-তামাশায় মেতে থেকে এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে সময় নষ্ট করে অর্থপূর্ণ জীবনকে অর্থহীন করে তুলবেন না। সময়ের অনেক মূল্য, তাই জীবনের মূল্যবান সময়কে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে নিজের আখিরাত নির্মাণে মনোযোগী হোন।২. একজন মুমিন হিসেবে আপনি সর্বদা এ বিশ্বাস রাখবেন যে, আখিরাতের জীবনই হলো প্রকৃত জীবন; পার্থিব এ জীবন তো সাময়িক পরীক্ষা মাত্র। পরীক্ষার ফলাফল পাবেন মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে। তাই ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ার স্বার্থে কখনও আখিরাতকে বিসর্জন দেওয়ার মতো বোকামি করবেন না। তবে সম্ভব হলে আখিরাতের স্বার্থে দুনিয়াকে বিসর্জন দিন। এতে আপনার কোনো ক্ষতি তো নেই-ই; উল্টো এতে কেবল লাভ-ই লাভ।
৩. দুনিয়ার পরীক্ষাসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো পরিবার ও সন্তানসন্ততি। মানুষ বেশিরভাগ সময় এদের কারণেই আখিরাতকে ভুলে বসে। এদের সুখ-শান্তির জন্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হয়ে থাকে। মনে রাখবেন, এরা কিয়ামতের দিন আপনাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই অতিরিক্ত বিলাসিতা ও বেশি সুখের আশায় আখিরাত নষ্ট না করে শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকেই পরিবার ও সন্তানসন্ততির যত্ন নিন।
৪. মনে রাখবেন, কিয়ামতের দিন আপনার আমলনামা আপনার হাতেই আসবে এবং আপনার কথা-কাজের জবাব আপনাকেই দিতে হবে। তাই সুস্পষ্ট অন্যায় জেনেও কখনও নিজের ঘনিষ্ঠজনকে সমর্থন করবেন না। হোক সে আপনার প্রিয় ব্যক্তিত্ব, শ্রেষ্ঠ উসতাদ কিংবা বিখ্যাত শাইখ—কখনোই তার অন্যায়-অপকর্মের সহযোগী হবেন না। এতে সাময়িক সুখ পেলেও দিনশেষে আপনি নিজেই নিজের আখিরাত ধ্বংস করে ফেললেন।
৫. স্মরণ রাখবেন, আমাদের জীবনকাল খুবই ক্ষুদ্র। এ অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের নেক আমলের পরিমাণ তো আরও সীমিত। তাই ভুল করেও কখনও মানুষের গিবত-সমালোচনা করে নিজের আমল দিয়ে দেবেন না। অনেকেই আপনাকে এতে জড়াতে চাইবে; যেমনটি অনলাইনের বিভিন্ন ইস্যুতে দেখা যায়, কিন্তু এ ব্যাপারে আপনি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন। নিজের কষ্টার্জিত আমল বিনা লাভে অন্যকে দিয়ে দেওয়ার কোনো অর্থই হয় না।
৬. মনে রাখবেন, আপনার জীবনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের মতো কল্যাণকামী আর কেউ নেই। না পিতা-মাতা, না ভাই-বোন আর না স্ত্রী-সন্তান। তাই পার্থিব জীবনে তাদের থেকে অধিক কিছুর প্রত্যাশা রাখবেন না। এটা খুবই স্বাভাবিক যে, আপনার ঘনিষ্ঠদের থেকে কষ্ট পেতে পারেন, ধোঁকা খেতে পারেন, ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। অতএব নিজের পরিবার ও প্রিয়জনকে খুশি করতে গিয়ে কখনও আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অসন্তুষ্ট করবেন না।
৭. জীবনে যত কঠিন মুহূর্তই আসুক না কেন, কখনও হতাশ হবেন না। হতাশা জীবনকে সমৃদ্ধ করে না; বরং ধ্বংস করে। বেশি হতাশা চলে আসলে, মানুষের প্রতি বিশ্বাস উঠে গেলে ও জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হলে আল্লাহর সাথে চুপিচুপি কথা বলুন। আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং নিজের হতাশার কথা মানুষকে না বলে সিজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে সব খুলে বলুন; দেখবেন, জীবনটা কত সুন্দর ও অর্থবহ হয়ে ওঠে!
৮. মানুষের পার্থিব অবস্থা দেখে কখনও প্রভাবিত হবেন না। কারও অঢেল সম্পদ, কারও বহু সুনাম, কারও অনেক জনপ্রিয়তা, কারও বিশাল ক্ষমতা। এগুলো সবই হাওয়া, যদি না তার তাকওয়া থাকে। আপনি তাকওয়ার মাপকাঠিতে নিজেকে মেপে দেখুন। এতে উত্তীর্ণ হলে আপনি কিয়ামতের দিন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের চেয়েও অধিক সম্মানিত হবেন। এটা আল্লাহর ওয়াদা, যা সুনিশ্চিত। তাই তাকওয়ার মানদণ্ডে নিজের অবস্থা উন্নীত করুন।
৯. কোনো বিষয়ে সত্যটা জানতে পারলে মানুষের নিন্দা-সমালোচনার পরোয়া না করে নির্দ্বিধায় তা গ্রহণ করে নিন এবং সর্বদা এর ওপর অবিচল থাকার জন্য দুআ করুন। হকপন্থী আলিমদের খুঁজে বের করুন এবং তাঁদের অনুসরণ করে চলুন। প্রত্যেকে আপনাকে নিজের দিকে আহবান করবে। আপনি কারও আহবানে সাড়া দেওয়ার আগে তার ইলম, আমল, আখলাক ও দ্বীনদারিতা যাচাই করে নিন, তাহলে আপনার ধোঁকা খাওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে।
১০. সর্বদা মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন। এ ব্যাপারে উদাসীনতা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহর হক ও বান্দার হক সব ঠিক করে রাখুন। সর্বদা তাওবা-ইসতিগফারের ওপর থাকুন। নিজের নেক আমলের পাল্লাকে ভারী করতে থাকুন। সর্বোপরি সকল প্রকারের গুনাহ, বিশেষ করে চোখ ও জবানের গুনাহ থেকে সংযত থাকুন। এ দুটি অঙ্গের গুনাহ থেকে বিরত থাকতে পারলে অন্যান্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাটা একেবারেই সহজ হয়ে যাবে।
আল্লাহ আমাকে এবং সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন।
✍️
Collected
আল্লাহ লেখককে জাযায়ে খাইর দান করুন। আমীন
Comment