ইদারায়ে সাহাব মিডিয়া, উপমহাদেশ পরিবেশিত
“আমল সংশোধনের”।। উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৩য় পর্ব
==================================================
=====
“আমল সংশোধনের”।। উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৩য় পর্ব
==================================================
=====
অতঃপর যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হাদীসে উল্লেখ হয়েছে, তা এমন একটি আমল, যার দ্বারা একজন মুমিন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
ألا أخبرك بملاك ذلك كله
“আমি কি তোমাকে এই সবকিছুর বুনিয়াদ, ভিত্তি কী তা বলে দিবো না?”
“আমি কি তোমাকে এই সবকিছুর বুনিয়াদ, ভিত্তি কী তা বলে দিবো না?”
ملاك شيئ قوامه ما تقوم به تلك العبادة
মিলাক বলা হয় যেটা কোনো স্থাপনার মূল, বুনিয়াদ ও ভিত্তি। যেটা ইবাদাতের মূল তথা ভিত্তি সেটা হল মিলাক। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
ألا أخبرك بملاك ذلك كله
“আমি কি তোমাকে এই সবকিছুর বুনিয়াদ, এই সবকিছুর ভিত্তি কী তা বলে দিবো না?” মুয়াজ রাযিয়াল্লাহু আনহু উত্তর করলেন, “অবশ্যই বলুন।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জবান মোবারক ধরে বললেন;
تكف هذا
“এটাকে থামাও।”
“এটাকে থামাও।”
দেখুন! কত বড় বড় আমলের আলোচনা হয়েছে! ঈমানের আলোচনা হয়েছে, নামাযের আলোচনা হয়েছে, রোযার আলোচনা হয়েছে, হজ ও যাকাতের আলোচনা হয়েছে, জিহাদের আলোচনা হয়েছে, তাহাজ্জুদের আলোচনা হয়েছে। এত বড় বড় আমলের আলোচনা পর বলা হচ্ছে যে, আমি কি তোমাকে বলে দিবো না যে, এই সবকিছুর ভিত্তি কী? তুমি যদি এই সবকিছু হেফাযত করতে চাও, তবে তা কীভাবে করবে তা বলে দিবো না?
অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘জবানকে নিয়ন্ত্রণ কর’। আশ্চর্যের ব্যাপার! এত বড় বড় আমলের আলোচনা হল, আর এই ছোট্ট জবানের হেফাযত! তখন মুয়াজ রাযিয়াল্লাহু আনহু সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কথার কারণে কি আমরা জিজ্ঞাসিত হবো?”
কথা বলাতো খুব সহজ কাজ। কারও ব্যাপারে আলোচনা করা, কোনো কমেন্ট করা, কারও সমালোচনা করা, কারও ব্যাপারে কোনো শক্ত কথা বলা কিংবা বিদ্রূপ করা, এটাতো সহজ ব্যাপার, এতে কি সমস্যা? কেউ কোনো জামাতের বিরুদ্ধে কিছু বললে কে কাকে ধরবে? এটাকে খুব সহজ ব্যাপার মনে হয়, আর এর জন্য এতসব আমল নষ্ট হয়ে যাবে!!! তাও এমন আমল যেগুলোতে মানুষের সারা জীবন কেটে যায়। সকল শক্তি-সামর্থ্য, আগ্রহ ও রাত জাগরণ সবকিছু ব্যয় হচ্ছে এর পিছনে।
তাহাজ্জুদে, জিহাদে কি পরিমাণ সবর করতে হয়? কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এই সবকিছুর ভিত্তি, মূল এবং এগুলোর সংরক্ষণ হল জবান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে।’ মুয়াজ রাযিয়াল্লাহু আনহু আমাদের জন্য, এই উম্মতের জন্য, এই বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন; “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আমাদের জবানের জন্য পাকড়াও হব?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
ثكلتك امك يا معاذ وهل يكب الناس في النار على وجوههم الا حصائد ألسنتهم
“হে মুয়াজ! জাহান্নামে যারা যাবে তারা তো এই জবান ছাড়া অন্য কিছুর জন্য যাবে না।”
“হে মুয়াজ! জাহান্নামে যারা যাবে তারা তো এই জবান ছাড়া অন্য কিছুর জন্য যাবে না।”
জবানের ফলসরূপ, জবানের অর্জনের কারণে সে জাহান্নামে পতিত হবে। এই হাদীসটি একটি জামে হাদীস। দেখুন, মানুষের জীবনের লক্ষ্য হল জাহান্নাম থেকে বাঁচা আর জান্নাতে পৌঁছা। আর এর জন্য সব আমল বলে দেয়া হয়েছে, আর সর্বশেষ এসব আমলের ভিত্তি বলে দেয়া হয়েছে। যদি এইসব আমলের হেফাযত করতে চাও, তবে এই জবানের হেফাযত কর।
ভাই! এটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। জবানের হেফাযত কঠিন কেন? কারণ, জবানের হেফাযত শুধু ঐ ব্যক্তিই করতে পারে যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যার রাগ, ঘৃণা এবং প্রতিশোধ গ্রহণ আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী হয়। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন,আমীন।
এই ব্যক্তি জিন্দেগিকে তুচ্ছ মনে করে না। এই যে যুদ্ধ-জিহাদ, এই যে কষ্ট-মুজাহাদা, সে বুঝে যে, এগুলোর দ্বারা প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন হয়। আবার এগুলোর দ্বারাই বান্দা আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়।
সে বুঝে যে, তার অন্তর স্বাধীন নয়, তার চলাফেরাও স্বাধীন নয়। সে যখন সাথিদের ব্যাপারে আলোচনা করে তখন খামখেয়ালি ভাবে করে না। মনে যা আসে তাই বলে দেয় না। সে তৎক্ষণাৎ নিজের আকল ও জবানের উপর চৌকিদারি করে। সে প্রতিটি মুহূর্তে এটা চিন্তা করে যে, এটা ইনসাফের কথা আর ওটা জুলুমের কথা। এটা অপমানের কথা আর ওটা সম্মানের কথা। যে সাথির ব্যাপারে আমি আলোচনা করছি তার ভিতরে এটা আছে না নেই? এটা সত্য না মিথ্যা? এতে বাড়াবাড়ি হচ্ছে নাতো? ঐ সাথির ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ হচ্ছে নাতো? সে সব সময় নিজের উপর দৃষ্টি রাখে।
অতঃপর দেখুন! সুবহানাল্লাহ!
হাদীস আর সুন্নত হল আল্লাহ তাআলার কিতাবের ব্যাখ্যা।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন:
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا } [الأحزاب: 70]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।” (সূরা আহযাব ৩৩:৭০)
অর্থাৎ, এমন কথা বল যা শরীয়ত অনুযায়ী হয়, যা সত্য হয়, যাতে কোনো মুসলমানের অসম্মান থাকে না, কোনো মুসলমানের উপর অপবাদ থাকে না, কোনো মুসলমানের গীবত থাকে না। এমন কথা বল, যা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, যে কথা আল্লাহকে সন্তুষ্টকারী হয়, আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ না হয়। যে কথার কারণে কোনো মুসলমান ভাইয়ের কষ্ট হয়, যে কথার কারণে দীনের অথবা জিহাদের কোনো ক্ষতি হয় – এমন কথা বলা যাবে না। যখন তোমরা এর উপর চলবে তখন কি হবে? আল্লাহ তাআলা এর পরে বলেন:
{يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ } [الأحزاب: 71]
“আল্লাহ তোমাদের আমল সংশোধন করে দিবেন।” (সূরা আহযাব-৩৩:৭১)
সুবহানাল্লাহ! উলামায়ে কেরাম বলেন যে, আল্লাহ তাআলা যেখানেই তাকওয়ার উপদেশ দিয়েছেন, তাকওয়ার আদেশ করেছেন সেখানেই এমন কোনো আমল কিংবা নিদর্শন বলে দিয়েছেন যার দ্বারা তাকওয়া অর্জন হয়। সুতরাং এখানে কি বলেছেন?
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ﴾ [الأحزاب: 70]
“আল্লাহর তাকওয়া গ্রহণ কর।”
আল্লাহর তাকওয়া কী? এই তাকওয়াই জান্নাতের চাবি। তাকওয়া ছাড়া কেউ জান্নাত অর্জন করতে পারে না। তাকওয়া ছাড়া কেউ আল্লাহর প্রিয় হতে পারে না। তাকওয়া ছাড়া কুফর ও বাতিলের মোকাবেলা করা যায় না। তাকওয়া ছাড়া কোনো কিছুই করা যায় না। তাকওয়া হল মূল জিনিস। তাকওয়া অর্জন করা সকল মুমিনের সংকল্প হওয়া উচিত। তাই আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ﴾ [الأحزاب: 70]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা তাকওয়া অর্জন কর।” (সূরা আহযাব ৩৩:৭০)
তাকওয়া অর্জন করার মাধ্যম কী?
﴿وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا]
“সত্য কথা বল।” (সূরা আহযাব-৩৩:৭০)
শরীয়তের কথা বল। শরীয়ত অনুযায়ী কথা বল। ইনসাফের কথা বল। আর যখন তোমরা এটা করবে, আয়াতের মিল দেখুন (সুবহানাল্লাহ)!
যখন আমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় না থাকবে, তাকওয়া না থাকবে তখন কি আমরা সঠিক কথা বলতে পারবো? ইনসাফের কথা বলতে পারবো?
না, আমরা তখন এমন কথা বলে ফেলবো যা অন্য মুসলমানের হক নষ্ট করবে। আমরা এমনটিই করে থাকি। কারণ, আমাদের মাঝে তাকওয়া নেই। তাই আমাদের মাঝে এই আগ্রহ থাকতে হবে যে, আমাদের মাঝে যেন তাকওয়া চলে আসে।
আরও পড়ুন
Comment