আমি আজ ভিন্ন এক নিয়ামতের কথা আলোচনা করবো। যে নিয়ামত সবাই পায় না আর পাইলেও সবাই এই নিয়ামতের হক আদায় করতে পারে না। এতে নিয়ামতটির শুকরিয়া আদায় হয় না। ফলে নিয়ামতটি আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায়। যা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
رَضُوۡا بِاَنۡ یَّکُوۡنُوۡا مَعَ الۡخَوَالِفِ وَ طُبِعَ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ فَهُمۡ لَا یَفۡقَهُوۡنَ
অর্থঃ “তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের (ছোট ছেলে মেয়ে আর নারী) সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া হয়েছে তাদের অন্তরসমূহের উপর। বস্তুতঃ তারা বোঝে না”। [সূরা আত-তাওবা: ৮৭]
প্রতি কদমে ফিতনার এ জামানায় “হক দলের দাওয়াত” আমার আলোচ্য এই বিশেষ নিয়ামত। হক দলের দাওয়াত পাওয়ার পর মুখে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলাকে শুকরিয়া আদায় আমি বলবো না। আমরা কি মনে করি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললেই শুকরিয়া আদায় করা হয়ে যাবে! আর আপনি বা আমি আল্লাহর দেওয়া বিশেষ নিয়ামতটি পেয়ে যাবো? অথচ আমার বা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে রয়েছে আলসেমি, দায়িত্বহীনতা এবং ইবাদাত বিমূখতা। এমন যেনো পিছন থেকে আমাকে বা আপনাকে কে যেনো আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। হকের পথে যেতে বাঁধা দিচ্ছে। শুধু ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলাকে শুকরিয়া আদায় বলে না বরং আলসেমি, দায়িত্বহীনতা ও ইবাদাত বিমূখতা ছুড়ে ফেলে বিদ্যুৎ গতিতে হকের দাওয়াত গ্রহণ করাকে শুকরিয়া আদায় করা বলে। আবার শুধু হকের দাওয়াত গ্রহণ করাকেই শুকরিয়া আদায় বলে না। দলের আচরণবিধি মেনে চলা ও দায়িত্ব সঠিক সময়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ পালন করাকে শুকরিয়া আদায় করা বলে।
কিন্তু আমরা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে বিদ্যুৎ গতিতে হক দলের দাওয়াত গ্রহণ করে শুকরিয়া আদায় করলেও আচরণবিধি ও দায়িত্ব সঠিক সময়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আদায় করি না। আর এই জায়গায়তে আল্লাহর তা’আলার সাথে সততা না থাকার কারণে ধীরে ধীরে আল্লাহর দেওয়া এই বিশেষ নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করি। ক্রমে ক্রমে কেউ কেউ পুরোপুরি নিয়ামতটি হারিয়ে ফেলি আর কেউ কেউ অন্তরের ইসলাহর মাধ্যমে নতুন উদ্যমে শুরু করি।
আবার কেউ কেউ এমন আছে মনে করে যে, আমার তো অনেক পরিচিত ভাই আছে যারা হক দলের সাথে যুক্ত যখন জিহাদের ডাক আসবে তখন ময়দানে নেমে পড়বো। হক দলে যুক্ত হওয়ার এই নিয়ামত তার দরজায় কড়া নাড়ছে, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে গ্রহণ করছে না অথচ আশা করছে যখন জিহাদের ডাক আসবে তখন দৌড়ে গিয়ে মুজাহিদীনদের কাতারে যোগ দিবে। এখন সে ব্যস্থ অতিভোজনে এবং বিলাসিতায়, এখন সে ব্যস্থ স্থায়ী ক্যারিয়ার গঠনে অথচ সে এই দুনিয়ায় অস্থায়ী। আমি বলছিনা যে দুনিয়ার ক্যারিয়ার বা অর্থের দরকার নাই। তবে আখিরাতের ক্যারিয়ারকে এগিয়ে রাখা তো বুদ্ধিমানের কাজ। যেখানে জীবন ও ক্যারিয়ার দুইটাই স্থায়ী।
আল্লাহ তা’আলা সূরা আল-সাফে বলেন,
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا هَلۡ اَدُلُّكُمۡ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنۡجِيۡكُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِيۡمٍ ١٠ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖ وَتُجَاهِدُوۡنَ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ بِاَمۡوَالِكُمۡ وَاَنۡفُسِكُمۡؕ ذٰلِكُمۡ خَيۡرٌ لَّـكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَۙ ١١ يَغۡفِرۡ لَـكُمۡ ذُنُوۡبَكُمۡ وَيُدۡخِلۡكُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ وَمَسٰكِنَ طَيِّبَةً فِىۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍؕ ذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِيۡمُۙ ١٢
অর্থঃ হে মু’মিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব যা তোমাদেরকে মর্মান্তিক ‘আযাব থেকে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনো আর তোমরা তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ কর; এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (তোমরা যদি আল্লাহর সন্ধান দেয়া ব্যবসা কর তাহলে) তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন আর তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর চিরস্থায়ী আবাসস্থল জান্নাতে অতি উত্তম ঘর তোমাদেরকে দান করবেন। এটাই বিরাট সাফল্য। [সূরা আল-সাফঃ ১০-১২]
আল্লাহ তা’আলা সূরা আল-আহযাবে বলেন,
مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ رِجَالٌ صَدَقُوۡا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَیۡهِ ۚ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ قَضٰی نَحۡبَهٗ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ یَّنۡتَظِرُ ۫ۖ وَ مَا بَدَّلُوۡا تَبۡدِیۡلًا
অর্থঃ মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত তাদের প্রতিশ্রুতি সত্যে বাস্তবায়ন করেছে। তাদের কেউ কেউ [যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করে] তার দায়িত্ব পূর্ণ করেছে, আবার কেউ কেউ [শাহাদাত বরণের] প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা (প্রতিশ্রুতিতে) কোন পরিবর্তনই করেনি। [সূরা আল-আহযাব: ২৩]
আমরা কি আল্লাহর তা’আলা সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি সত্যে বাস্তবায়ন করতে চাই না? আমরা কি চাই না শাহাদাত বরণ করে আমাদের দায়িত্ব পূর্ণ করতে? আমরা কি শাহাদাত বরণের প্রতীক্ষায় নেই? যদি আমরা শাহাদাতের প্রতীক্ষায় থাকি তবে কেনো দুনিয়াকে আকঁড়ে ধরছি? যদি আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন না করতে চাই তাহলে আমাদের মাঝে আলসেমি কেনো? দায়িত্বহীনতা কেনো? আর কেনোই বা বলছি যখন জিহাদের ডাক আসবে তখন দেখা যাবে! আমরা কি প্রস্তুতি ছাড়াই আখিরাতের এই কঠিন পরীক্ষার মখোমুখি হতে চাই? আল্লাহ তা’আলা আমাকে ও আপনাকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন
[ আগুনের ফুলকিরা এসো জড়ো হই দাবানল জ্বালবার মন্ত্রে বজ্রের আক্রোশে আঘাত হানি মানুষের মনগড়া তন্ত্রে ]
Comment