Announcement

Collapse
No announcement yet.

দারসে রমাদান।। দারস-১১। দৈনন্দিন জীবনে সুন্নত পালনে যত্নবান হওয়া।।

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দারসে রমাদান।। দারস-১১। দৈনন্দিন জীবনে সুন্নত পালনে যত্নবান হওয়া।।

    দারসে রমাদান।। দারস-১১।।
    দৈনন্দিন জীবনে সুন্নত পালনে যত্নবান হওয়া

    মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
    অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম

    ==================================================
    =====




    আল্লাহর বান্দারা সত্যিই তাঁকে ভালোবাসে কি না তা বুঝার মাপকাঠি তিনি স্পষ্টভাবে কুরআনে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি কীভাবে বুঝবে যে, সে আল্লাহকে সত্যিই ভালোবাসে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসে? আল্লাহ তাআলা বলেন:
    قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ.
    অর্থ: বলুন, যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহকে ভালবেসে থাকো, তবে আমাকে (নবীকে) অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন।
    (সুরা আল-ইমরান, আয়াত নং-৩১)


    এই বৈঠকে আমাদের আলোচ্যবিষয়, দৈনন্দিন জীবনে পালনীয় সুন্নতের প্রতি যত্নবান হওয়া। প্রতিদিন পালনীয় অনেক সুন্নত রয়েছে। আপনি অনেক লোককে এই সুন্নতগুলোর প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করতে দেখবেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বান্দাকে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসার অন্যতম কারণ হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করা।
    এই সুন্নতগুলো আপনার জীবনে প্রয়োগ অনুসারে আল্লাহর কাছে আপনার মর্যাদা ও অবস্থান নির্ধারিত হবে।
    আপনি যত বেশি এই সুন্নতগুলো জীবনে প্রয়োগ করবেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আপনার মর্যাদা তত বেশি উন্নত হবে।


    সেই সুন্নতগুলো দুই প্রকার। কিছু সুন্নত প্রায়োগিক। কিছু সুন্নত মৌখিক।
    কল্পনা করুন যে, একজন ব্যক্তি যদি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সুন্নতগুলো নিজের জীবনে বাস্তবায়নের জন্য নিজেকে তরবিয়ত দিতে থাকে, তাহলে একসময় তার সমগ্র জীবন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের জীবন্ত নমুনা হয়ে উঠবে।

    পূর্বের এক দারসে বলেছি, যদি বলা হয়, যে ব্যক্তি একটি সুন্নত জীবনে প্রয়োগ করবে, তাকে পর্যাপ্ত টাকা দেওয়া হবে। তাহলে দেখা যাবে এই সুন্নত পালনের জন্য সকলে আগ্রহী হয়ে উঠবে। সুবহানাল্লাহ! কেন? কারণ, মানুষের অন্তরে টাকার মূল্য, দিনার-দিরহামের মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু সুন্নতের মূল্য! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!

    যেমন ধরুন, মিসওয়াক করা একটি সুন্নত। একজন মুসলমান দিনে-রাতে কতবার মিসওয়াক ব্যবহার করে? কমপক্ষে বিশবার। নবী কারীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
    لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَأَمَرْتُهُمْ بِالْوُضُوءِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ “، وفي رواية عِنْدَ كُلِّ وضوء
    অর্থ: “যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে তাদেরকে প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম”। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, “প্রত্যেক ওযুর সময়”।
    (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৮৮৭)


    যখনই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে প্রবেশ করতেন, তখনই তিনি প্রথমে মিসওয়াক করতেন। যেমনটি সহীহ মুসলিমে আম্মাজান হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে।

    কল্পনা করুন! এক ব্যক্তি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায মিসওয়াক করে আদায় করে। একইভাবে দৈনিক ছয় ওয়াক্ত সুন্নত নামায আছে। ফরজ ও সুন্নত মিলে এগারো ওয়াক্ত। অনুরূপভাবে একজন ব্যক্তি দিনে ও রাতে কতবার তার ঘরে প্রবেশ করে। মসজিদ থেকে ফরজ নামায শেষে ফিরে এসে ঘরে প্রবেশ করে। এখানেই সে চার বা পাঁচবার ঘরে প্রবেশ করছে। প্রত্যেকবার ঘরে প্রবেশের পূর্বে সে মিসওয়াক করে। ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম মিসওয়াক করে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করে মুখ পরিষ্কার করতেন।
    এছাড়াও অবহেলিত দৈনন্দিন সুন্নতের মধ্যে আছে জুতা পরার সুন্নত। আপনি অনেককে দেখবেন জুতা পরার সময় বাম পায়ে আগে পরছে এবং খোলার সময় ডান পায়ের জুতা আগে খুলছে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত হচ্ছে, তিনি যখন জুতা পরতেন তখন আগে ডান পায়ে পরতেন এবং খোলার সময় বাম পায়ের জুতা আগে খুলতেন। একজন মানুষ দিনে-রাতে কতবার জুতা পরে, সে বাথরুমে বা ঘরের বাইরে গেলে, মসজিদে যাওয়ার সময়, মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বা অন্যান্য অবস্থায় বারবার এই সুন্নত সামনে আসে।
    যখনই সে এই সুন্নত অর্থাৎ, “জুতা পরার সময় বাম পায়ে আগে পরা এবং খোলার সময় ডান পায়ের জুতা আগে খোলা”র সুন্নত জীবনে প্রয়োগ করবে তখন তার চলাফেরা, ঘরে আসা-যাওয়া এবং সকল কাজ আল্লাহর রাসূলের সুন্নতের জীবন্ত নমুনা হয়ে উঠবে। তার জুতা পরা খোলা সবই তখন নেক আমল হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে।আরশের অধিপতি মহান রবের নিকট প্রার্থনা করি আমাদেরকে তাঁর রাসূলের পূর্ণ আনুগত্য করার তৌফিক দান করুন এবং তাঁর সুন্নত অনুযায়ী জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

    অনুরূপভাবে, যখন একজন ব্যক্তি বাথরুমে প্রবেশ করে, তখন বলবে,

    للَّهُمَّ إنِّي أعُوذُ بكَ مِنَ الخُبُثِ والخَبَائِثِ
    “হে আল্লাহ, আমি খবীস-খবীসা দুষ্ট পুরুষ ও নারী জিন থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি”।
    বাথরুমে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং ডান পা দিয়ে বের হবে। বের হওয়ার সময় বলবে, “غفرانك” “আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করছি”।

    ঘুমের আগের সুন্নতগুলো দেখুন। ঘুমের আগে কয়টি সুন্নত? ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেক সুন্নত রয়েছে। কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছি। যথা, পবিত্র অবস্থায় ঘুমানো। ডান কাতে ঘুমানো। আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। সূরা কাফিরুন পাঠ করা। সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা। সূরা ফালাক, সূরা নাস পাঠ করা ও এই দুই সূরার দম দিয়ে শরীর মাসেহ করা। এছাড়াও হাদীসের কিতাবে আরও অনেক সুন্নতের উল্লেখ রয়েছে।
    অনুরূপভাবে খাবারের সুন্নত রয়েছে। বিসমিল্লাহ বলে খানা শুরু করা। খানা শেষ করে আলহামদুলিল্লাহ বলা। ডান হাতে খাওয়া। খাবার পড়ে গেলে উঠিয়ে সেটি পরিষ্কার করে খাওয়া। এগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।

    মানুষের সাথে সাক্ষাত হলে প্রথমে “السلام عليكم ورحمة الله وبركاته” বলে সালাম দেওয়া। তার সাথে মুসাফাহা করা। মুসাফাহাও একটি সুন্নত। মুসাফাহার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় সাক্ষাৎ করা। মুচকি হাসিও একটি পছন্দনীয় সুন্নত। এছাড়াও দৈনন্দিনের অন্যান্য সুন্নাত রয়েছে।
    এখানে সালাতুদ্দোহা, নিয়মিত ফরজ নামাযের আগে-পরের সুন্নত নামায এবং তাহাজ্জুদ নামায ব্যতীত অন্যান্য কিছু সুন্নতের উল্লেখ করেছি। এই নামাযগুলোতেও প্রায়োগিক ও মৌখিক অনেক সুন্নত আছে, যেগুলো নামাযের ভেতরে আদায় করতে হয়। এই সুন্নতগুলো ফরয নামায হোক বা নফল নামায, সকল নামাযেই আদায় করতে হয়। এই বৈঠকে সেই আলোচনার দিকে গেলে বৈঠক দীর্ঘ হয়ে যাবে।

    কিন্তু আমরা বৈঠক সংক্ষিপ্ত করতে চাচ্ছি। আমরা এই কথাটি পরিষ্কার করতে চাচ্ছি যে, একজন মুসলমানকে তার দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর রাসূলের সুন্নতের প্রতি যত্নবান হতে হবে। সুন্নতের প্রতি যত্নবান হওয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তার সত্যিকার ভালোবাসার প্রমাণ। একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
    كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى.
    “আমার উম্মতের সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যারা অস্বীকার করবে তারা ব্যতীত”।
    সাহাবায়ে কেরাম আশ্চর্য হয়ে গেলেন। এমন কোনো বিবেকবান ব্যক্তি আছে, যে জান্নাতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করবে?!
    নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বললেন:
    مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى
    “যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্যতা করবে সে-ই অস্বীকার করল”।
    (সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৭২৮০)
    আরশের অধিপতি মহান রবের নিকট প্রার্থনা করি আমাদেরকে তাঁর রাসূলের পূর্ণ আনুগত্য করার তৌফিক দান করুন এবং তাঁর সুন্নত অনুযায়ী জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।


    আরও পড়ুন
    ১০ম দারস --------------------------------------------------------------------------------------১২ তম দারস
    নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org

  • #2
    জাযাকাল্লাহ খাইরান Al-Firdaws

    Comment

    Working...
    X