দারসে রমাদান।। দারস-১৫।।
অন্যদের জন্য দোয়া করা
মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম
==================================================
=====
অন্যদের জন্য দোয়া করা
মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম
==================================================
=====
প্রিয় ভাই, আল্লাহ তাআলা কুরআনে মুমিনদের অনেক গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। তিনি কুরআনে মুমিনদের গুণাবলি কেন বর্ণনা করেছেন? শুধু তিলাওয়াত করার জন্য? না কি বাস্তব জীবনে সেই গুণাবলি প্রয়োগ করার জন্য?
কুরআনে উল্লিখিত যে গুণটির ব্যাপারে অনেক মুমিনই উদাসীন তা হচ্ছে, অন্য মুমিন ভাইদের জন্য দোয়া করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلّاً لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ.
অর্থ: এবং যারা পরে এসেছে তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদেরকে ও আমাদের সেই ভাইদেরকে ক্ষমা করুন যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে। আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোন হিংসা-বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু।
[সুরা হাশর, আয়াত-১০]
وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلّاً لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ.
অর্থ: এবং যারা পরে এসেছে তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদেরকে ও আমাদের সেই ভাইদেরকে ক্ষমা করুন যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে। আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোন হিংসা-বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু।
[সুরা হাশর, আয়াত-১০]
প্রিয় ভাই! আপনি এই আয়াতে অন্য মুমিন ভাইদের জন্য দোয়া করার শিক্ষা পাবেন। সর্বদা আপনার মুমিন ভাইদের জন্য দোয়া করুন। এই গুণটি অন্তরের পরিচ্ছন্নতার পরিচায়ক। যে ব্যক্তি অন্য মুমিনদের জন্য দোয়া করে তার অন্তর অন্যদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিরাপদ। তার কলব পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া ও মুনাজাত করার সময় মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য দোয়া করার মাধ্যমে এই গুণটি হাসিল করতে পারি।
সহীহ মুসলিমে এক হাদীসে এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“دعوة المرء المسلم لأخيه بظهر الغيب مستجابة عند رأسه ملك…”
অর্থ: মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। দোয়াকারীর মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে…। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-২৭৩৩)
অর্থ: মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। দোয়াকারীর মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে…। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-২৭৩৩)
লক্ষ করুন! এই ফেরেশতার দায়িত্ব হচ্ছে, যখন আপনি আপনার মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন, হে আল্লাহ, আপনি তাকে মাফ করুন। তখন ফেরেশতা বলবে: “ولك بمثله” আপনার জন্যও তা-ই। অর্থাৎ, আল্লাহ আপনাকেও মাফ করুন। আপনারা জানেন ফেরেশতাদের দোয়া কবুল করা হয়।
প্রিয় দ্বীনি ভাই! আপনাদের কাছে এক মুসল্লীর আশ্চর্যজনক একটি ঘটনা উল্লেখ করব। তিনি আমার সাথে মসজিদে নামায পড়তেন। একবার যখন আমরা নামায পড়ে মসজিদ থেকে বের হলাম, তখন তিনি বললেন, শায়খ! এখন আপনার জন্য দোয়া করেছি। আমি বললাম, জাযাকাল্লাহ খায়র। কীভাবে দোয়া করেছেন? তিনি বললেন, আমি যখন সিজদা করি, তখন সিজদায় বলি, “হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ও মসজিদে আমার পাশের নামাযীকে মাফ করুন”।
এই ভাইয়ের মহান গুণটির প্রতি লক্ষ করুন। তিনি নিজ থেকে কীভাবে দোয়া করেছেন! নিজের পাশের নামায আদায়কারী ব্যক্তির জন্য কীভাবে দোয়া করেছেন! বর্তমানে অন্য মুসলিমদের জন্য দোয়া করার গুণটি খুব কম মানুষের মাঝেই আছে। একমাত্র আল্লাহ যাকে রহম করেন, সেই এই গুণটি হাসিল করতে পারে। আমাদের মাঝে কেউ কি আছে, যে নিজের পাশের নামাযীর জন্য দোয়া করার কথা চিন্তা করেন? এটি একটি মহান গুণ, উন্নত চরিত্রের লক্ষণ ও অন্তরের মহানুভবতার প্রমাণ। একজন মুসলিম দোয়ার মাঝে কেবল নিজের জন্য চিন্তা করবে না; বরং তার সকল ভাইয়ের কথাও স্মরণ রাখবে।
একজন বয়োবৃদ্ধ যার বয়স ষাট বছরের ঊর্ধ্বে। তাঁকে একবার বলি, আল্লাহর কাছে আপনার জন্য ক্ষমা চাইছি। তিনি বললেন, সকল মুমিনের জন্যও তা-ই। পুনরায় বলি, আল্লাহর কাছে আপনার জন্য জান্নাত চাইছি। তিনি বললেন, সকল মুমিনের জন্যও তা-ই। কিন্তু, আমাদের কারও জন্য যদি কেউ দোয়া করেন, আল্লাহর কাছে আপনার জন্য জান্নাত চাইছি। তাহলে তিনি শুধু বলবেন, আমীন। ব্যস, তিনি অন্য মুমিনদের কথা চিন্তাও করবেন না।
এটি খুব ভালো একটি গুণ। একজন মুসলিমের উচিত এই গুণটি অর্জনে নিজেকে তরবিয়ত প্রদান করা। আপনি বারবার নিজেকে তরবিয়ত দিন। অন্য মুসলিমদের জন্য দোয়া করাকে জীবনের অংশ বানিয়ে নিন।
আপনার মুনাজাতের অংশ বানিয়ে নিন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে,
“من استغفر للمؤمنين والمؤمنات كان له بكل مؤمنٍ ومؤمنةٍ حسنة”
অর্থ: যে ব্যক্তি মুমিন নারী-পুরুষের জন্য দোয়া করবে, তার জন্য প্রত্যেক নারী-পুরুষের পরিবর্তে একটি নেকি লেখা হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে,
“من استغفر للمؤمنين والمؤمنات كان له بكل مؤمنٍ ومؤمنةٍ حسنة”
অর্থ: যে ব্যক্তি মুমিন নারী-পুরুষের জন্য দোয়া করবে, তার জন্য প্রত্যেক নারী-পুরুষের পরিবর্তে একটি নেকি লেখা হবে।
এটি এক মহান হাদিস। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লার দৈনন্দিন ওযীফার একটি অংশ ছিল মুসলিমদের জন্য দোয়া করা। তিনি এই হাদিসের উপর আমল করতেন।
চিন্তা করুন! পৃথিবীতে বর্তমানে কতজন জীবত মুসলিম আছে? কমসে কম একশ কোটি। এর মধ্যে কিছু মুসলিমের অবস্থা অস্পষ্ট, যাদের মাঝে শিরক বিদ্যমান। কিছু মুসলিমের ঈমান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন, যারা কেবল নামেই মুসলিম, কাজের ক্ষেত্রে কিছুই না। আরও কমিয়ে হিসাব ধরি দশ মিলিয়ন। পৃথিবীর বুকে কমপক্ষে দশ মিলিয়ন মুসলিম আছে। আপনি তাদের জন্য দোয়া করলে দশ মিলিয়ন নেকি পাবেন। কমপক্ষে দশ মিলিয়ন নেকি পাবেন। আর আল্লাহ যাকে চান বাড়িয়ে দেন। প্রতি এক নেকিতে দশ নেকি বৃদ্ধি পেলেও একশ মিলিয়ন নেকি হবে। এত বিশাল নেকি কীভাবে হাসিল করবেন? শুধু বলবেন যে, “হে আল্লাহ, আপনি সকল মুমিন নারী-পুরুষকে মাফ করুন”। আর যদি সাথে মৃত মুমিনদেরও দোয়ায় শামিল করেন? হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে আজ পর্যন্ত কত বিলিয়ন মুমিন মৃত্যুবরণ করেছেন? আপনি মাত্র চার সেকেন্ডে তাদের জন্য দোয়া করে আপনার ভান্ডারে কত বিলিয়ন নেকি জমা করতে পারেন?
সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। এই মুবারক পুণ্যময় গুণটি নিজের আদতে পরিণত করুন। সর্বদাই আপনার দোয়ার অংশ বানান মুসলিমদের জন্য দোয়া করা।
প্রিয় ভাই, আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বিপদ-মুসীবতে বা সঙ্কটে পড়লে অনেক মুমিনের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। অথচ সে তখন অন্য ভাইদের জন্য দোয়া করার কথা ভুলে যায়। আপনি যখন বিপদ-মুসীবত বা সঙ্কটে পড়বেন বা আপনার ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে, আর আপনার পরিচিত অপর ভাইয়েরও ঋণের বোঝা আছে জানেন। তাহলে আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করুন যে, “হে আল্লাহ, আপনি অমুক ভাইয়ের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করুন, তার গুনাহ মাফ করুন, তার উপর রহম করুন, তার ইসলাহ করে দিন”। সব সময় অপর ভাইয়ের জন্য দোয়া করুন।
বিশেষ করে নিপীড়িত, কারাবন্দি, মুজাহিদ, মুহাজির ভাই-বোনদের জন্য দোয়া করুন। যাদের উপর জুলুম, শাস্তি ও বন্দিত্বের কষ্ট চেপে আছে। আবশ্যিকভাবে তাদের জন্য দোয়া করুন। তাদের জন্য দোয়া করা আপনার দৈনন্দিন দোয়ার অংশ বানান। আল্লাহর শপথ! হে ভাই, আপনি রাহাত ও শান্তি, সাআদাত ও সৌভাগ্য অনুভব করবেন। আপনার অন্তরে প্রশান্তি পাবেন।
সুবহানাল্লাহ! আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন যে, বাস্তবেই আপনার অন্তর হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পবিত্র হচ্ছে; কারণ, আপনি যে আপনার দোয়ায় মুসলিমদের শামিল রাখছেন। তাদের জন্য কল্যাণের দোয়া করছেন। আল্লাহ যেন তাদের পেরেশানী দূর করেন, তাদের সাহায্য করেন, তাদের সঙ্গ দেন, তাদের কষ্ট লাঘব করে দেন।
আরও পড়ুন
১৪ তম দারস -------------------------------------------------------------------------------------১৬ তম দারস
Comment