দারসে রমাদান।। দারস-২৬।।
দরিদ্র কে?
মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম
==================================================
=====
দরিদ্র কে?
মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম
==================================================
=====
দরিদ্রতার হাকীকত ও বাস্তবতা কী?
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের সাথে বসা ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কি জানো প্রকৃত দরিদ্র কে? সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহুম নিজেদের স্বাভাবিক উত্তরটি দিলেন, “আমাদের বিবেচনায় যার দীনার-দিরহাম নেই সে-ই তো দরিদ্র। হ্যাঁ, এই ব্যক্তি দুনিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে দরিদ্র। মানুষ বলে, অমুক দরিদ্র। অর্থাৎ, তার স্থাবর সম্পত্তি, মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা, জমি, সার্টিফিকেট, চাকরি ইত্যাদি নেই। এই ব্যক্তি দুনিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে দরিদ্র।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আখেরাতের দৃষ্টিকোণ থেকে কে দরিদ্র তা স্পষ্ট করতে ইচ্ছা করেন। তিনি বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য থেকে যারা হাশরের মাঠে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, উম্মতে মুহাম্মদীর কোনো অংশ তারা পাবে না। তারা নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি নিয়ে আসবে। তারা ইসলামের রোকন নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তারা অমুককে গালি দিয়েছে, অমুকের মাল আত্মসাৎ করেছে, অমুকের রক্তপাত ঘটিয়েছে…”। হাদীসের শেষে বলেন: “কিয়ামতের দিন তাদের নেক আমলগুলো সেই ব্যক্তিরা নিয়ে নেবে যাদের উপর সে জুলম করেছে, তাদের আমলনামায় এই নেকিগুলো জমা হবে।
হয়তো কারো উপর কথার মাধ্যমে বাড়াবাড়ি করেছে। গীবত, চোগলখোরী, মিথ্যা, তিরস্কার, গালি, অপবাদ ইত্যাদি করেছে। অথবা দৈহিকভাবে বাড়াবাড়ি করেছে। তাদের মেরেছে, রক্তপাত ঘটিয়েছে বা এমন কিছু করেছে।
এই সীমালঙ্ঘনকারীরা দুনিয়াতে কষ্ট করে যে নেক আমলগুলো করেছে, কিয়ামতের দিন সেই নেক আমলগুলো সেই ব্যক্তিরা নিয়ে নেবে যাদের উপর তারা সীমালঙ্ঘন করেছে। হাশরের মাঠে সেদিন মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে এবং একজন একজন করে এসে তাদের নেকিগুলো নিয়ে যাবে। সেদিন এমন ব্যক্তিরা এসে নেকিগুলো নিয়ে যাবে যাদেরকে তারা চেনে না, জানে না। কিন্তু দুনিয়াতে তাদের উপর জুলম করেছিল। ফলে তারা আজ তাদের নেকিগুলো নিয়ে যাবে।
কিছুলোক ধারণা করে যে, নামায, রোযা, আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি করলেই বোধ হয় কিয়ামতের দিন সফলকাম হওয়া যাবে। অথচ অপরদিকে তারা মানুষের সাথে মুয়ামালা ও আচরণের বিষয়গুলোতে অবহেলা করে। মানুষের উপর জুলম করে, শ্রমিকের যথার্থ পারিশ্রমিক দেয় না, দুর্বলদের উপর অত্যাচার করে। ফলে কিয়ামতের দিন তাদের নেকিগুলো এই লোকেরা নিয়ে যাবে। যাকে গালি দিয়েছে সে নেকি নিয়ে যাবে, যার সম্পদ আত্মসাৎ করেছে সে নেকি নিয়ে যাবে, যাকে প্রহার করেছে সে-ও নেকি নিয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কুরআন তিলাওয়াত, দান-সাদাকা ও অন্যান্য নেক আমলে নিজেকে সজ্জিত করেছে, অপরদিকে মানুষের হক নষ্ট করেছে, তাদের উপর যুলম করেছে, কষ্ট দিয়েছে, তার উদাহরণ সেই ব্যক্তির ন্যায়, যে সকাল থেকে যোহর পর্যন্ত আবার যোহর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ডিউটি করেছে। অতঃপর মাস শেষে সে বেতন পেয়ে বেতনের টাকা প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছে। এই ব্যক্তিকে লোকে পাগল বলবে। বলবে, আপনি সারা মাস কষ্ট করে ডিউটি করেছেন। দিনরাত কাজ করেছেন। যেন কিছু টাকা আয় করতে পারেন। অতঃপর মাস শেষে যখন টাকা আয় করলেন তখন সে টাকা প্রতিবেশি ও বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। আপনি একটা পাগল।
তদ্রুপ, এই ব্যক্তি দুনিয়াতে কষ্ট করে ইবাদত-বন্দেগী করে, দান-সাদাকা করে, কুরআন তিলাওয়াত করে নেকি অর্জন করেছে। আবার এই ব্যক্তি-ই মানুষের উপর কত জুলম করেছে, মানুষকে কত কষ্ট দিয়েছে, কত মানুষের হক নষ্ট করেছে। তার কাছে কিয়ামতের দিন সেই মানুষগুলো সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর একজন একজন করে আসবে আর তার নেক আমলগুলো নিয়ে যাবে। অবশেষে তার নেক আমল শেষ হয়ে যাবে। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ! শুধু কি তাই? যখন তার নেক আমল শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু মানুষের সারি শেষ হবে না, তখন মানুষের গুনাহের বোঝা তাকে দেওয়া হবে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
প্রিয় ভাই, কিয়ামতের দিন এই ব্যক্তির মতো দরিদ্র হওয়া থেকে সাবধান হোন। কেবল নেক আমল করে ধোঁকা খাবেন না। অন্যের উপর জুলম করা, অন্যের হক নষ্ট করা, গালি দেওয়া, সম্পদ আত্মসাৎ করা, কষ্ট দেওয়া থেকে সাবধান হোন। কেননা, এই কাজগুলো আপনার নেক আমলগুলো কিয়ামতের দিন নিঃশেষ করে দেবে। আল্লাহর কাছে এই কাজগুলো থেকে আশ্রয় কামনা করছি।
আরও পড়ুন
২৫ তম দারস--------------------------------------------------------------------------------------২৭তম দারস