অন্যকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার কৌশল
আমরা প্রতিদিন পরিচিত- অপরিচিত অনেক মানুষের সাথে কথা বলি। এমনকি আমাদের আশেপাশে অনেক মালাউন হিন্দুদের সাথেও কথা বলতে হয় এবং লেনদেনও করতে হয়। বৌদ্ধ,খ্রিস্টান,চাকমা ইত্যাদি মানুষের সাথেও কথা হয়,তবে একেবারে কম। অঞ্চলভেদে কমবেশি হতে পারে।
আমরা অনেকেই মানুষের সাথে মিশতে পারি না। আবার অনেকে বলেন যে,মানুষ আমাকে কেয়ার করে না,আমার সাথে মিশতে চায় না,আমাকে পছন্দ করে না,আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায় না ইত্যাদি। অনেকে আবার বলেন যে,আমি মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে পারি না,অন্যকে নিজের বন্ধু বানাতে পারি না,কেউ আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায় না ইত্যাদি।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বানিয়েছেন। মানুষের মাঝে সকলে এক রকমের নয়। মানুষের মাঝে কালো,ফর্সা,চিকন,মোটা,লম্বা,খাট,ধনী,গরিব ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের মানুষ আছে। সবার আচরণ এক রকমের নয়। কেউ নরম স্বভাবের,কেউবা খুব রাগী। সবার চিন্তা চেতনাও এক রকমের নয়।
এরপর যদিও সব মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। সকলে এক ধর্ম পালন করে না। অনেকে আবার কোন ধর্মই বিশ্বাস করে না। যদিও আল্লাহ যুগে যুগে নবীগণকে পাঠিয়েছেন। আর নবীগণ কড়ায় গণ্ডায় রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে নবুওয়াতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আর এরপর সাহাবায়ে কেরামও পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে দ্বীনের প্রচার প্রসার করেছেন। জিহাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করেছেন।
যাইহোক! আসল কথায় আসি।
আপনি কৌশল অবলম্বন করে খুব সহজেই সব মানুষের সাথে মিশতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ
কৌশলে অন্যকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে পারবেন,নিজের বন্ধু বানাতে পারবেন,সবার সাথে মিশতে পারবেন।
এজন্য আপনাকে যা যা করতে হবে:
এক. হাসিমুখে কথা বলা:
একটা প্রবাদ আছে,তুমি হেসে দিলে আমি ফেঁসে গেলাম।
আপনি যখন কারো সাথে কথা বলবেন হাসিমুখে কথা বলবেন। তাহলে শ্রোতা আপনার দিকে আকৃষ্ট হবে। তখন আপনি সহজেই তার সাথে কথা বলার সুযোগ পাবেন।
দুই.শ্রোতার প্রশংসা করা:
প্রতিটি মানুষ তার প্রশংসা করা পছন্দ করে। কিন্তু আমরা কারো সাথে সাক্ষাত হলে নেগেটিভ কথা বলি। তাকে বলি,তুমি কালো হয়ে গেছো,তোমার চেহারাটা শুকিয়ে গেছে ইত্যাদি। এমন না বলা। আমাদের উচিত ব্যক্তির দোষ উপেক্ষা করে তার প্রশংসা করা। তবে প্রশংসা করতে গিয়ে তেল না মারা । বেশি প্রশংসা না করা বা তার ভিতর যা নেই তা বলা। এমন করা যাবে না।
তিন.শ্রোতার ইনফরমেশন জানা এবং সমসাময়িক আপডেট তথ্য জানা থাকা:
আপনি কারো সাথে কথা বলা শুরু করতে চাচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন? এজন্য আপনি শ্রোতার কি পছন্দ তা আগে থেকেই জেনে নিবেন। আর অপরিচিত হলে কৌশলে জেনে নিবেন। এরপর তার পছন্দের বিষয়ে কথা বলবেন। সমসাময়িক বিভিন্ন কথা বলবেন। এভাবে কথা বলতে বলতে গভীরে চলে যাবেন।
শ্রোতা যে জেলার সে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যু নিয়ে কথা বলতে হবে। হতে পারে বিশেষ কোন ব্যক্তি,স্থান বা প্রতিষ্ঠান। এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে গভীরে চলে যেতে হবে।
চার.কথা বলার সময় অন্য মনস্ক না হওয়া বা কিছু আপত্তিকর কাজকে পরিত্যাগ করা:
বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়টি ঠিক না হলে আপনাকে কেউ পাত্তা দিবে না। এ ভুল অনেকের মধ্যেই আছে। হয়তো সে বুঝে না এটা তার ভুল। আমার নিজেরও অনেক মানুষের সাথে এ বিষয়গুলোর কারণে মিশতে কষ্ট হয়েছে। কথা বলার সময় অন্য মনস্ক হওয়া যাবে না। অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলা যাবে না। অনেকে নাক খুটতে খুটতে কথা বলে। এ বিষয়টি সবচেয়ে খারাপ। এতে শ্রোতা ঘৃণা পেয়ে আপনাকে নোংরা মনে করবে।
অনেকে নামাজের সময় নাক খুটতে থাকে। তখন পাশের লোকের বারোটা বেজে যায়। অনেকে মজলিসে কথা বলে যাচ্ছে আবার নাক খুঁটছে। নাকের লোম টেনে ছিঁড়ছে। এরপর চোখে হাত দিয়ে ময়লা সরানো। কটন দিয়ে কান খোঁচা। এ বিষয়গুলো শ্রোতার জন্য খুবই বিরক্তিকর। এমন করলে শ্রোতা আপনাকে নোংরা মনে করবে । আপনাকে ঘৃণা করবে। আপনার থেকে দূরে থাকতে চাইবে।
চিকিৎসা হিসেবে এর জন্য আপনি যে কাজগুলো করবেন,আপনি গোসল বা উযু করার সময় ভালোভাবে নাক পরিষ্কার করবেন, চোখ ভালোভাবে পরিষ্কার করবেন। এরপর রুমাল দিয়ে ভালো করে চোখ মুছে নিতে হবে। এরপর আয়না দেখলে ভালো হবে। নেকড়া দিয়ে নাকের ভিতর পরিষ্কার করতে হবে। না হয় নাকে হাত দিবেন আর ময়লা আসতে থাকবে। আর আপনি শ্রোতার সামনে বসে বারবার নাকে হাত দিবেন আর ময়লা বের করে আশেপাশে মুছতে থাকবেন। তখন শ্রোতা কষ্ট পাবে এবং আপনাকে ঘৃণা করবে। কান পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে আপনি একা থাকাকালে কটন দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। প্রকাশ্যে করাটা বেমানান।
পাঁচ.চোখে চোখ রেখে কথা বলা:
শ্রোতার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে। তাহলে সে আপনার কথার গুরুত্ব দিবে। অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বললে সে মনে করবে আপনি তাকে কেয়ার দিচ্ছেন না। আর গুরুত্বসহকারে তার কথা শুনলে,চোখে চোখ রেখে কথা বললে সে আপনাকে কানেক্ট করবে।
ছয়.ধীরে কথা বলা:
কথা সু্ন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে ধীর গতিতে বলতে হবে। হরবড় বা তাড়াহুড়া করে কথা বলা যাবে না। কথা বলার সময় শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা। আঞ্চলিকতা পরিহার করা। কথার শব্দ চয়ন এবং শব্দের সিলেকশন ভালো হতে হবে। ধীরে কথা বললে পরবর্তী কথার শব্দ চয়ন করা সহজ হবে।
সাত.কনফিডেন্স নিয়ে কথা বলা:
কথা বলার সময় চেহারায় ফুটিয়ে তুলতে হবে। ফেইসে প্রকাশ করতে হবে। হাত নাড়িয়ে কথা বলা যেতে পারে। তবে বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না। তাহলে খারাপ দেখাবে।
আট.শ্রোতার পছন্দের বিষয় জানা:
শ্রোতার পছন্দের বিষয় এবং দুর্বল পয়েন্ট জানতে হবে। শ্রোতার প্লাস পয়েন্টগুলো নোট করতে হবে। যেমন মনে করেন,শ্রোতা বললো যে,উঁচু আওয়াজ ভালো লাগে না। আপনিও বললেন,আমারও উঁচু আওয়াজ ভালো লাগে না। শ্রোতা বললো,আমি বই পড়তে ভালোবাসি। আপনিও বললেন,আমিও বই পড়তে ভালোবাসি।
আপনাকে চোখ আর কানের ব্যবহার বেশি করতে হবে। আর মুখের ব্যবহার কম করতে হবে। আপনাকে কথা কম বলতে হবে। শ্রোতার কথা বেশি শুনতে হবে। আপনি কথা বলার সময় এগুলো কাজে লাগবে।
নয়.টিয়া পাখি হতে হবে:
শ্রোতার সামনে আপনাকে টিয়া পাখি হতে হবে। টিয়া পাখি কথা রিপিট করে। আপনাকেও কথা রিপিট করতে হবে। যেমন.শ্রোতা বললো বাসে মানুষের ভিড় একদমই ভালো লাগে না। আপনিও বলবেন,আমারও বাসের ভিড় ভালো লাগে না। শ্রোতাকে হিট করতে হবে। সে যেটা বলবে আপনাকে তা ঘুরিয়ে বলতে হবে।
এ পয়েন্টগুলো ফলো করে কথা বললে,যার সাথে একবার কথা বলেছেন সে বারবার আপনার সাথে কথা বলতে চাইবে এবং সহজেই আপনি অন্যকে নিজের বন্ধু বানাতে পারবেন,নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে পারবেন। এছাড়া আরো অনেক কৌশল অবলম্বন করেও মানুষকে আপন করা যায়।
আশা করি এ বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখলে বা আমলে নিলে আমাদের জন্য উপকার হবে। আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাউফীক দিন । আমিন
Comment