বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য । সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মাদে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর,তাঁর পরিবার,তাঁর বংশধর এবং দ্বীনের জন্য অকাতরে প্রাণ দানকারী সকাল আনসার ও মুহাজির সাহাবায়ে কেরামদের উপর এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা তাঁর অনুসরণ করবে তাঁদের উপর।
এক ভাই জানতে চেয়েছেন যে,কীভাবে ঘুম কমাবেন?
আমি দেখেছি এ বিষয়ে কোন ভাই উত্তর দেননি।
তাই আমি চাচ্ছি এ বিষয়ে নিজ অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বলতে। আল্লাহ তাউফিক দান করুন।
মুহতারাম ভাইয়েরা!
আমি নিজেও আগে গভীর ঘুমে আসক্ত থাকতাম। চেষ্টা করতাম ঘুম কমানোর জন্য । কিন্তু পারতাম না। পরে নিজে দৃঢ় সংকল্প করলাম,যেভাবেই হোক ঘুম কমাবো। পরে আলহামদুলিল্লাহ আমি সফল হয়েছি। এখন আমার কম ঘুমালেও সমস্যা হয় না।
সাধারণত কয়েকটি সময়ে ঘুম আসে:
এক.মাগরিবের পর:
মাগরিবের পর আপনি যদি কিতাব পড়েন (মোবাইলে বা হার্ড কপি) তাহলে শুয়ে পড়া যাবে না। হেলান দিয়ে পড়া যাবে না। আপনি বসে কিতাব পড়বেন। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে যাবেন। দাঁড়িয়েও কিতাব পড়বেন। তাহলে হবে কি! লাগাতর বসে থাকলে অলসতা আসবে। ঘুমও আসবে। এরপরও যদি খারাপ লাগে বা ঘুম আসে তাহলে উযু করে দু রাকাআত নফল নামাজ পড়তে পারেন।
দুই.এশার নামাজের পর:
এশার নামাজের পর খানা খেলে দ্রুত ঘুম চলে আসবে। এজন্য যদি সম্ভব হয তবে খানা একটু দেরি করে খাওয়া যেতে পারে। এরপর খানা খেয়ে কমপক্ষে আধা ঘন্টা পর ঘুমাতে হবে। খানা খাওয়ার পর পরই ঘুমানো ঠিক হবে না।
আর এশার নামাজের পর খানা খেলে কিছুক্ষণ পরই চোখে ঘুম চলে আসবে। তাই খানা খেয়ে হেলান দিয়ে বসা যাবে না বা শুয়ে পড়া যাবে না।
তিন.ফজরের পর:
ফজরের পর ঘুম আসা স্বাভাবিক। অনেকে ফজরের পর না ঘুমিয়ে পারে না। ফজরের পর না ঘুমালে দেখা যায়,পড়তে বসে তদ্রা আসে। এজন্য ফজরের পর ঘুম আসলে আপনি সালাতুত দুহা ( ইশরাক ও চাশতের নামাজকে সালাতুত দুহা বলা হয়) পড়তে পারেন। কিতাব পড়লে দাঁড়িয়ে পড়লে ভালো হবে।
চার.সকালে নাস্তার পর:
সকালে নাস্তার পরও ঘুম আসে। এ সময়ে ঘুম কন্ট্রোল করা দূরহ হয়ে পড়ে। এজন্য এ সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে।
পাঁচ.যোহরের পর:
যোহরের পরও ঘুমাতে মন চায়। এমনকি তন্দ্রা ভাব এ সময়ে সবচেয়ে বেশি হয়।
ঘুম কমানোর জন্য যা যা করবেন:
আপনি আপনার প্রতিদিনের কাজের একটি মুহাসাবা তৈরী করুন। কারণ কাজের কর্মতালিকা থাকলে আপনি নির্ধারিত পরিমান কাজ করতে পারবেন। কাজে বরকত পাওয়া যাবে। আর যদি কাজের কর্মতালিকা না থাকে,তাহলে কাজ কম-বেশি হবে । অনেক ক্ষেত্রে কাজ কমই করা হবে। আর কাজের কর্মতালিকা থাকলে আপনার ফিকির থাকবে। তখন অটোমেটিক কাজের কারণে ঘুম আসবে না। তবে হ্যাঁ,কাজকে গুরুত্ব দিতে হবে। কাজকে গুরুত্ব না দিলে অলসতা চলে আসবে।
আপনি দিনে-রাতে কত ঘন্টা ঘুমাবেন এবং কোন সময় ঘুমাবেন তা নির্ধারণ করে নিন। এরপর নির্ধারিত সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
আর প্রতিদিন কাজের কর্মতালিকা অনুযায়ী কাজ করতে থাকুন। প্রত্যেকটি কাজ নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে।
নিজেকে কাজ থেকে অবসর দিবেন না। নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখুন। তাহলে দেখবেন ঘুম আসবে না। যখন আপনি কোন কাজ করবেন না। অযথা বসে থাকবেন,শুয়ে থাকবেন তখন নিজের অজান্তেই ঘুম চলে আসবে।
যখন ঘুম আসবে তখন আপনি কয়েকটি কাজ করবেন। যেমন.বসা থাকলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করতে হবে। উযু করে দু্রাকাআত নফল নামাজ পড়া যেতে পারে। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ দৌড় দিতে পারেন। বাদানিয়্যাহ করতে পারেন। বিশেষ করে বুক ডাউন দিতে পারেন। একা না থেকে কারো সাথে কথা বলতে পারেন। চা বা কফি পান করতে পারেন। ফোনে পরিচিত কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলতে পারেন। মোবাইলে বা লেপটপে মুজাহিদ ভাইদের ট্রেনিং বা আকর্ষণীয় কোন ভিডিও দেখতে পারেন বা নিউজ দেখতে পারেন।
আসল কথা হলো,ঘুম আসা না আসা নিজের মধ্যে। আপনি দৃঢ় সংকল্প করুন এবং এর উপর অটল থাকুন যে,নির্ধারিত সময় ব্যতীত ঘুমাবেন না।
মনে রাখবেন,আপনি নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখলে,আপনার ঘুম আসবে না।
অনেক ভাইকে দেখা যায়,কাজের কারণে ঘুমাতে পারেন না। যদি বলা হয়,ভাই ঘুমাবেন না! উত্তর আসে,এইতো এই কাজটি শেষ করে ঘুমাবো। আপনি ঘুমিয়ে যান।
এক ভাইয়ের মুখে শুনেছ,এক ভাই দিনে রাতে মিলে তিন ঘন্টা ঘুমায়। এতে তাঁর কোন সমস্যা হয় না। এমনকি স্বাস্থও তার ঠিক আছে।
এজন্য ভাই নিজের কাজ নিয়ে ফিকির করলে। কাজে লেগে থাকলে । মস্তিকের মধ্যে এর একটা প্রভাব পড়বে। তখন ঘুম আসবে না।
আপনি লক্ষ্য করবেন,আপনি সেমাই খেতে ভালবাসেন। আর আপনার মা আপনাকে প্রতিদিন সকাল আটটায় সেমাই রান্না করে দেন। যদি একদিন আপনাকে সেমাই না দেওয়া হয়,আপনার নির্ধারিত সময়ে সেমাইয়ের কথা মনে পড়বে। বা আপনি প্রতিদিন একটা টাইমে ভাল বা খারাপ কাজ করেন,দেখবেন পরের দিন ঐ টাইমে আপনার সেই আগের ভাল বা খারাপ কাজটি করতে মন চাইবে।
এর কারণ কি? কারন হলো,কোন ভাল বা খারাপ বিষয় মস্তিস্কে গেঁথে যায়। এরপর তা মস্তিস্ক আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
এজন্য ভাই কাজে অভ্যস্ত হয়ে যান। কাজে লেগে থাকেন। অলসতা আর গাফিলতি ঝেড়ে ফেলেন। দেখবেন,আপনার ঘুমের কথা মাথায় আসবে না।
আর যখন লাগাতর কাজ করবেন তখন কাজ শেষে নির্ধারিত টাইমে ঘুমোতে গেলে,ঘুম নিয়ে আপনাকে পেরেশানী করতে হবে না। শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন।
অনেকে বলেন যে,কম ঘুমালে মাথা ব্যথা হয়। আপনি মুহাসাবা অনুযায়ী নিয়মিত সব কাজ করুন আর ঘুমের টাইমে ঘুম যাবেন। দেখবেন,মাথা ব্যথা থাকবে না।
হ্যাঁ,এরপরও অতিরিক্ত কাজ করলে বা কম ঘুমালে মাথা ব্যথা হতে পারে। তখন আপনাকে সবর করতে হবে। এই মাথা ব্যথা দিয়ে আল্লাহ আপনাকে পরীক্ষা করছেন যে,আমার বান্দা এত এত কাজ করার পর দেখি মুসিবতে কি করে!
তখন আপনাকে সবর করতে হবে। বেশি সমস্যা হলে সুন্নাহ ফলো করে বাকি পদক্ষেপ অবস্থভেদ নিতে হবে।
সবচেয়ে ভালো হবে,যদি নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়া যায়। এর জন্য আগে ভাগেই ঘুমিয়ে যেতে হবে। এরপর ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করুন। তাহাজ্জুদ পড়া হলে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন। যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ। এরপর আবার উযু করে ফজর পড়ে নিন। তবে সাবধান! এমন যে না হয় যে,ফজর কাযা হয়ে যাবে। কোনমতেই ফজর কাযা করা যাবে না।
বি:দ্র: ঘুম কমানোর সাধারণ একটি ধারনা দেওয়া হলো। এছাড়া অন্য আরো ভালো সিস্টেমও থাকতে পারে। যার যেভাবে ভালো হয় সেভাবেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুস্থ সবল রাখুন। আমাদের সবর করার তাউফিক দিন। সকল রোগ বালাই থেকে হেফাজত করুন। আমাদের প্রত্যেকের সমস্যার সমাধান করে দিন। আমিন। ইয়া রাব্বাল আলামিন।
Comment