অনলাইনে ইলম শিক্ষা : বাস্তবতা ও সতর্কতা
আপনি দ্বীনি ইলম শিখতে চান; অথচ কষ্ট করতে রাজি নন, তবে আপনি ভুল চিন্তার মধ্যে আছেন। দ্বীনি ইলম শেখার অন্যতম একটি শর্ত হলো, কিতাব ও রিজালের সমন্বয়করণ। রিজাল ছাড়া শুধু কিতাবের ওপর নির্ভর করলে গোমরাহ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আর কিতাব ছাড়া শুধু রিজালের ওপর নির্ভর করলে অন্ধভক্তি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা বিদ্যমান, যা তাকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে দিতে পারে। এ কারণেই মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ কেবল কিতাবই নাজিল করেননি; বরং সাথে রিজালও প্রেরণ করেছেন। এ দুটির সমন্বয়েই মানুষ অন্ধকার থেকে হিদায়াতের পথ খুঁজে পেয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অফাতের পর যুগে যুগে সাহাবা, তাবিয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিনসহ সকল সালাফ ও খালাফের মাঝে এ নিয়মই অনুসৃত হয়ে আসছে। এটাই সিরাতে মুসতাকিমের চিরাচরিত সে পথ, যে পথ ধরে অগ্রগামীরা অগ্রে চলে গেছেন এবং পশ্চাদগামীরা তাদের অনুসরণ করে চলছেন। তাই এটাই নিরাপদ ও সঠিক পথ। এ পথ থেকে সামান্য বিচ্যুতিও বিপদের কারণ হতে পারে। ইতিহাসে অনুসরণীয় এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে কিনা রিজাল বাদে শুধু কিতাব কিংবা কিতাব বাদে শুধু রিজালের দ্বারা সঠিক পথের ওপর আমৃত্যু অটল থাকতে পেরেছে।
বর্তমান সময়ে যেসব ফিতনা দাবানলের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং দিনদিন তা উত্তাপ বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে, সেগুলোর অন্যতম হলো, আলিম-উলামার সাথে পরামর্শ না করে অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমসহ জানা-অজানা বিভিন্ন সোর্স থেকে দ্বীনি ইলম শেখার প্রবণতা। মানুষ শুধু কিছু দ্বীনি বিষয়ক লেখা দেখেই যে কাউকেই বিজ্ঞ শাইখ ভেবে বসে। অতঃপর তার কাছ থেকে দ্বীনের সাধারণ ও স্পর্শকাতর যাবতীয় বিষয় শিখতে থাকে। অথচ বাস্তব জীবনে হয়তো সে শাইখ ইলমের কিছুই জানে না! অনেকে তো এমনও আছে, যারা ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চের ছাত্র; অথচ অনলাইন জগতে সে বিশাল এক মহীরুহ, অনেক বড় শাইখ!
অনলাইনের মারাত্মক একটি দিক হলো, এটা বড়দের সাথে ছোটদের বেয়াদবি করার পূর্ণ সুযোগ করে দেয়। একটি ইলমি ও তাহকিকপূর্ণ পোস্টের কমেন্টবক্সে এসে কাফিয়ার একটি ছোট্ট ছেলেও বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ কোনো আলিমের সাথে যেভাবে বাদানুবাদ শুরু করে, দেখলে মাথা হেঁট হয়ে আসে। এর ভয়ানক কুপ্রভাব পড়ে সাধারণ পাঠকদের ওপর। তারা ভাবে, আলোচক দুজনই সমমানের বা কাছাকাছি পর্যায়ের হবে হয়তো। সেক্ষেত্রে পিচ্চি ছেলেটির ভুল কথাটিকেও অনেকে অজ্ঞতাবশত সঠিক তাহকিকের এন্ট্রি হিসেবে বিবেচনা করায় সঠিক কথাটিও দলিল ছাড়াই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
অনলাইনে এমন অনেক শাইখেরও দেখা পাওয়া যায়, যারা নাসিহার ক্ষেত্রে অতুলনীয়, ভারী ও গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের জুড়ি মেলা ভার, কিন্তু পোস্ট দেওয়ার পর ভাইটির লাইক গুনতে গুনতে আর কমেন্টের রিপ্লাই দিতে দিতেই রাত পার হয়ে যায়, আর এদিকে তার ফজরের সালাতটাও কাজা হয়ে যায়। এগুলো নিছক কোনো অনুমান নয়; বরং বিশ্বস্ত সূত্রে শোনা ঘটনার বিবরণ। এমন আরও অনেক লজ্জাকর কাহিনী আছে, যা এ উন্মুক্ত প্লাটফর্মে প্রকাশ করা অনুপযোগী মনে হচ্ছে। ভার্চুয়াল এ জগত সত্যিই রহস্যময়। এখানে রাতে দেখা অনেক শুভ্রতাই ভোরের আলোতে কালো বলে প্রতিভাত হয়।
যার কাছ থেকে ইলম নেওয়া হচ্ছে, তাকে ভালোভাবে না জানলে বা না চিনলে তার থেকে ইলম অর্জন করা কিছুতেই নিরাপদ নয়। কেননা, হতে পারে দ্বীনি মুখোশের আড়ালে সে গোমরাহি প্রচার করবে। সালাফে সালিহিন এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক ও সজাগ ছিলেন। তাঁরা যাচাই-বাছাই ছাড়া যার তার কাছ থেকে ইলম অর্জন করতে কঠিনভাবে নিষেধ করতেন; যদিও সে বড় পণ্ডিত কেউই হোক না কেন। জগদ্বিখ্যাত তাবিয়ি ইমাম ইবনু সিরিন রহ. বলেন, إنَّ هذا العلم دين؛ فانظروا عمن تأخذون دينكم ‘নিশ্চয়ই এ ইলম হলো দ্বীন। সুতরাং তোমরা কার কাছ থেকে তোমাদের দ্বীন শিখছ, তা ভালো করে খেয়াল করো।’ (মুকাদ্দামাতু সহিহি মুসলিম : ২৬)
এজন্য অনলাইন থেকে দ্বীন শিখতে আগ্রহীদের প্রতি আমার অনুরোধ, এখান থেকে কিছু জানতে পারবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যদি সত্যিকারার্থেই দ্বীন ও ইলম শিখতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই হকপন্থী বিজ্ঞ আলিমদের শরণাপন্ন হতে হবে। এতটুকু কষ্ট করার মানসিকতা না থাকলে আপনার দ্বীন বদদ্বীনে রূপান্তরিত হতে পারে। অফলাইনে কারও ইলম, আমল ও দ্বীনদারির ব্যাপারে আশ্বস্ত হলে তবেই কেবল তার শরণাপন্ন হোন। আর এমন হলে প্রয়োজনবশত তার থেকে অনলাইনেও সাহায্য নেওয়া যাবে; যদিও একান্ত প্রয়োজন না হলে সরাসরি সাক্ষাতে ইলম নেওয়াই অধিক উত্তম।
আল্লাহ আমাদের অনলাইন-জগতের মিথ্যা, ধোঁকা, শঠতা ও ইন্দ্রজালের বাস্তবতা বুঝার তাওফিক দান করুন এবং ইলম শেখার সঠিক জায়গা থেকে ইলম আহরণ ও তদানুযায়ী আমল করার মাধ্যমে দুনিয়া-আখিরাতের স্থায়ী সাফল্য দান করুন।
cp
আপনি দ্বীনি ইলম শিখতে চান; অথচ কষ্ট করতে রাজি নন, তবে আপনি ভুল চিন্তার মধ্যে আছেন। দ্বীনি ইলম শেখার অন্যতম একটি শর্ত হলো, কিতাব ও রিজালের সমন্বয়করণ। রিজাল ছাড়া শুধু কিতাবের ওপর নির্ভর করলে গোমরাহ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আর কিতাব ছাড়া শুধু রিজালের ওপর নির্ভর করলে অন্ধভক্তি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা বিদ্যমান, যা তাকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে দিতে পারে। এ কারণেই মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ কেবল কিতাবই নাজিল করেননি; বরং সাথে রিজালও প্রেরণ করেছেন। এ দুটির সমন্বয়েই মানুষ অন্ধকার থেকে হিদায়াতের পথ খুঁজে পেয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অফাতের পর যুগে যুগে সাহাবা, তাবিয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিনসহ সকল সালাফ ও খালাফের মাঝে এ নিয়মই অনুসৃত হয়ে আসছে। এটাই সিরাতে মুসতাকিমের চিরাচরিত সে পথ, যে পথ ধরে অগ্রগামীরা অগ্রে চলে গেছেন এবং পশ্চাদগামীরা তাদের অনুসরণ করে চলছেন। তাই এটাই নিরাপদ ও সঠিক পথ। এ পথ থেকে সামান্য বিচ্যুতিও বিপদের কারণ হতে পারে। ইতিহাসে অনুসরণীয় এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে কিনা রিজাল বাদে শুধু কিতাব কিংবা কিতাব বাদে শুধু রিজালের দ্বারা সঠিক পথের ওপর আমৃত্যু অটল থাকতে পেরেছে।
বর্তমান সময়ে যেসব ফিতনা দাবানলের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং দিনদিন তা উত্তাপ বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে, সেগুলোর অন্যতম হলো, আলিম-উলামার সাথে পরামর্শ না করে অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমসহ জানা-অজানা বিভিন্ন সোর্স থেকে দ্বীনি ইলম শেখার প্রবণতা। মানুষ শুধু কিছু দ্বীনি বিষয়ক লেখা দেখেই যে কাউকেই বিজ্ঞ শাইখ ভেবে বসে। অতঃপর তার কাছ থেকে দ্বীনের সাধারণ ও স্পর্শকাতর যাবতীয় বিষয় শিখতে থাকে। অথচ বাস্তব জীবনে হয়তো সে শাইখ ইলমের কিছুই জানে না! অনেকে তো এমনও আছে, যারা ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চের ছাত্র; অথচ অনলাইন জগতে সে বিশাল এক মহীরুহ, অনেক বড় শাইখ!
অনলাইনের মারাত্মক একটি দিক হলো, এটা বড়দের সাথে ছোটদের বেয়াদবি করার পূর্ণ সুযোগ করে দেয়। একটি ইলমি ও তাহকিকপূর্ণ পোস্টের কমেন্টবক্সে এসে কাফিয়ার একটি ছোট্ট ছেলেও বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ কোনো আলিমের সাথে যেভাবে বাদানুবাদ শুরু করে, দেখলে মাথা হেঁট হয়ে আসে। এর ভয়ানক কুপ্রভাব পড়ে সাধারণ পাঠকদের ওপর। তারা ভাবে, আলোচক দুজনই সমমানের বা কাছাকাছি পর্যায়ের হবে হয়তো। সেক্ষেত্রে পিচ্চি ছেলেটির ভুল কথাটিকেও অনেকে অজ্ঞতাবশত সঠিক তাহকিকের এন্ট্রি হিসেবে বিবেচনা করায় সঠিক কথাটিও দলিল ছাড়াই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
অনলাইনে এমন অনেক শাইখেরও দেখা পাওয়া যায়, যারা নাসিহার ক্ষেত্রে অতুলনীয়, ভারী ও গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের জুড়ি মেলা ভার, কিন্তু পোস্ট দেওয়ার পর ভাইটির লাইক গুনতে গুনতে আর কমেন্টের রিপ্লাই দিতে দিতেই রাত পার হয়ে যায়, আর এদিকে তার ফজরের সালাতটাও কাজা হয়ে যায়। এগুলো নিছক কোনো অনুমান নয়; বরং বিশ্বস্ত সূত্রে শোনা ঘটনার বিবরণ। এমন আরও অনেক লজ্জাকর কাহিনী আছে, যা এ উন্মুক্ত প্লাটফর্মে প্রকাশ করা অনুপযোগী মনে হচ্ছে। ভার্চুয়াল এ জগত সত্যিই রহস্যময়। এখানে রাতে দেখা অনেক শুভ্রতাই ভোরের আলোতে কালো বলে প্রতিভাত হয়।
যার কাছ থেকে ইলম নেওয়া হচ্ছে, তাকে ভালোভাবে না জানলে বা না চিনলে তার থেকে ইলম অর্জন করা কিছুতেই নিরাপদ নয়। কেননা, হতে পারে দ্বীনি মুখোশের আড়ালে সে গোমরাহি প্রচার করবে। সালাফে সালিহিন এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক ও সজাগ ছিলেন। তাঁরা যাচাই-বাছাই ছাড়া যার তার কাছ থেকে ইলম অর্জন করতে কঠিনভাবে নিষেধ করতেন; যদিও সে বড় পণ্ডিত কেউই হোক না কেন। জগদ্বিখ্যাত তাবিয়ি ইমাম ইবনু সিরিন রহ. বলেন, إنَّ هذا العلم دين؛ فانظروا عمن تأخذون دينكم ‘নিশ্চয়ই এ ইলম হলো দ্বীন। সুতরাং তোমরা কার কাছ থেকে তোমাদের দ্বীন শিখছ, তা ভালো করে খেয়াল করো।’ (মুকাদ্দামাতু সহিহি মুসলিম : ২৬)
এজন্য অনলাইন থেকে দ্বীন শিখতে আগ্রহীদের প্রতি আমার অনুরোধ, এখান থেকে কিছু জানতে পারবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যদি সত্যিকারার্থেই দ্বীন ও ইলম শিখতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই হকপন্থী বিজ্ঞ আলিমদের শরণাপন্ন হতে হবে। এতটুকু কষ্ট করার মানসিকতা না থাকলে আপনার দ্বীন বদদ্বীনে রূপান্তরিত হতে পারে। অফলাইনে কারও ইলম, আমল ও দ্বীনদারির ব্যাপারে আশ্বস্ত হলে তবেই কেবল তার শরণাপন্ন হোন। আর এমন হলে প্রয়োজনবশত তার থেকে অনলাইনেও সাহায্য নেওয়া যাবে; যদিও একান্ত প্রয়োজন না হলে সরাসরি সাক্ষাতে ইলম নেওয়াই অধিক উত্তম।
আল্লাহ আমাদের অনলাইন-জগতের মিথ্যা, ধোঁকা, শঠতা ও ইন্দ্রজালের বাস্তবতা বুঝার তাওফিক দান করুন এবং ইলম শেখার সঠিক জায়গা থেকে ইলম আহরণ ও তদানুযায়ী আমল করার মাধ্যমে দুনিয়া-আখিরাতের স্থায়ী সাফল্য দান করুন।
cp
Comment