আজকের আলোচনাটি আমার মত ফাকিবাজ গোত্রের জন্য, যারা মনযোগ একসাথে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারন না, তাদের জন্য। এই গোত্রের মানুষই মনে হয় মেজরিটি। এই পর্বে আমরা দুইটি টেকনিক নিয়ে আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ।
১। পোমোডোরো টেকনিক:
মনে করুন, সামনে আপনার পরীক্ষা, একটা বিশাল সিলেবাস পড়ে শেষ করতে হবে। এত বেশি পড়া জমে আছে যে শুরু করলে আর শেষ হবেনা এই ভয়ে আপনি শুরুই করতে পারছেন না। কিংবা বড় একটা থিসিস আপনাকে লিখে শেষ করতে হবে, কিন্তু এত বড় জিনিস কিভাবে শেষ করবেন, এই ভয় জেকে বসেছে। এই সমস্যায় পড়েছিলেন ফ্রান্সেসকো সিরিলো নামের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিও। তিনি কী করলেন? উনার কাছে একটি টমেটো-আকৃতির টাইমার ছিলো, উনি ওটা ব্যবহার করেই সুন্দর একটা পদ্ধতি বের করেছিলেন। আর কাজে লাগিয়ে দেখলেন, বেশ চমৎকার কাজে দেয়। খুশি হয়ে তিনি এই পদ্ধতিটির নাম দিয়ে দিলেন টমেটো টেকনিক। না না, উনি বাঙালি নন, উনি ইটালিয়ান ছিলেন তাই নাম দিয়েছিলেন ইতালি ভাষাতেই- Pomodoro Technique । পোমোডোরো অর্থ টমেটো 🙂 ।
তো এই টেকনিক কিভাবে এপ্লাই করবো? বেশি কিছু না, অত লম্বা কাজ নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা, মাত্র ২৫ মিনিট একটানা কাজটি করবেন বলে মনস্থির করুন। মাত্র কয়েকটি স্টেপেই এটি করে ফেলতে পারবেনঃ
১. বড় একটি কাজ (পড়া শেষ করা, থিসিস করা, প্রোজেক্ট শেষ করা ইত্যাদি) হাতে নিন।
২. মোবাইল ক্লক অথবা ঘড়িতে ২৫ মিনিট পর এলার্ম সেট করুন।
৩. হাতের কাজটি একনাগাড়ে ২৫ মিনিট করুন কোন ডিস্টার্বেন্স ছাড়া।
৪. ৫ মিনিট ব্রেক নিন।
৫. ২৫ মিনিট কাজ + ৫ মিনিট ব্রেক = ৩০ মিনিটে একটি পোমোডরো সাইকেল/সেশান। এই পুরো সাইকেলটি ৪ বার রিপিট করুন।
৬. চারটি পোমোডোরো সাইকেল শেষে ১৫-৩০ মিনিটের ব্রেক নিন।
‘পোমোডোরো ব্রেক’ এ কী করবেন, ফেইসবুকিং / ইউটিউবিং? উহু, গবেষণা এটাই বলে যে সোশাল মিডিয়া নেটওয়ার্কিং কিংবা অনলাইন সার্চিং এ আসলে আমাদের ব্রেইন রেস্ট পায়না, বরং ব্রেইন আরো লোডেড হয়ে যায়। তাই এই সময়ে এমন কিছু করা উচিৎ যা আসলেই শরীর ও মনকে রিফ্রেশ করে, যেমন- যিকর, কুরআন তিলাওয়াত, বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাত/ ঘাড় মেসেজ করা, একটু খলা হাওয়ায় ঘুরে আসা, হেটে আসা, চা/ কফি/ পানি খাওয়া, ইয়োগা করা, ড্রয়িং করা কিংবা কারো সাথে গল্প করাও হতে পারে।
আর হ্যা, ‘২৫ মিনিট সাইকেল’ এর মাহাত্ম্য কী?
গবেষকরা বলছেন, হিউম্যান ব্রেইন কোন কাজে একটানা ২০ থেকে ২৫ মিনিট মনযোগ ধরে রাখতে পারে। সে হিসেবেই মোটামুটি এই থিওরি দাড় করা হয়েছে।
এবার আপনিও দেখুন তো, কোন কোন কাজে আপনি এই টেকনিকটি কাজে লাগাতে পারেন!
২। টু-মিনিট রুল (2- Minute Rule):
ছোট্ট এই রুলটি উল্লেখ করেছেন বেস্টসেলার বই “Getting Things Done” এর লেখক ডেভিড এলেন। এই নিয়মটি আরও সহজ। পপকর্ন খাওয়ার সময়ে যা করা যায় ততটুকু কাজই করতে হবে আপনাকে। মাত্র ২ টি স্টেপঃ
১. যে কাজটি করতে ২ মিনিটের কম সময় লাগে, সেটি ফেলে না রেখে এক্ষুণি করে ফেলুন। যেমন- ঘুমের আগে তিন তাসবীহ আদায়, দিনে ১০০ বার ইস্তেগফার করা, খাওয়ার পর বাসনটি ধুয়ে ফেলা, এক পেইজ বই পড়া, ময়লা কাপড়গুলো যেখানে সেখানে না ফেলে ওয়াশিং বাস্কেটে জড়ো করে রাখা ইত্যাদি। এই কাজগুলো সাথে সাথে করে ফেললে কষ্টও কম হয়, মানসিক স্ট্রেসও কমে, ফেলে রাখলে কষ্ট ও স্ট্রেস দুটোই বাড়বে।
২. যে কাজটি করতে ২ মিনিটের বেশি সময় লাগে, সেটি মাত্র ২ মিনিট করেই শুরু করুন। যেমন- আপনি একটি বই লিখতে চাচ্ছেন, ২ মিনিটে এক লাইন হলেও লিখুন; আপনি ওজন বাড়াতে চাচ্ছেন, ২ মিনিটে একটি আপেল খেয়ে শেষ করুন; আপনি একটি বই পড়ে শেষ করতে চান, তো ২ মিনিটে এক পেইজ পড়ে ফেলুন; প্রতিদিন আধা ঘণ্টা দৌড়ানোর অভ্যাস করতে চাচ্ছেন, কিচ্ছু না, শুধু দৌড়ানোর জুতাটি বের করে গেইটের বাইরে বের করে রাখুন; নফল সালাতের অভ্যাস করতে চান, মাত্র ২ রাকাত সালাত হলেও পড়ুন।মাত্র দুই মিনিট দিয়ে যে কাজটি শুরু করবেন, সেটিই নিয়মিত করলে একসময় অভ্যাসে পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ।
তাহলে আর দেরি কেন? ২ মিনিটের একটা কাজ দিয়েই ভালো কাজের অভ্যাস শুর করে দিন না বিসমিল্লাহ বলে!