নেক আমলে বিলম্ব করো না
প্রিয় ভাই ও বোন!
মানুষের অন্তরে কখনো কখনো আল্লাহর তা‘আলার বড়ত্ব ও মহত্ত্বের উদ্ভাস দেখা দেয়। তখন তার অন্তর নেক কাজের প্রতি উদ্ভুদ্ধ হয়। এসময় শয়তান খুব পেরেশান হয়ে যায়। শয়তান বুঝতে পারে যে, এখন তাকে নেক আমল থেকে বাধা দিলে বাধা সে মানবে না। কেননা তার কলবে এখন নূরের উদ্ভাস রয়েছে। তাই সে বান্দাকে এই বলে ধোঁকা দেয় যে, নেক আমল তো করতেই হবে। তবে জোয়ান বয়সে একটু আমোদ ফুর্তি করে নাও। যখন বয়স হবে, তখন তুমি ইবাদাত বন্দেগীতে এমনভাবে ডুবে যাবে যে, মসজিদ থেকে বেরই হবে না।
সুন্নতী লেবাসে, সুন্নতী আচরণে জীবন রাঙিয়ে ফেলবে। রণাঙ্গনে একেবারে ঝাপিয়ে পড়বে। কেউ তাকে পরাস্ত করতে পারবে না। কেউ তার ঝড়ো প্রতিবাদের সামনে দাঁড়াতে পারবে না। কাউকে অশ্লীলতা আর বেহায়াপনার ছড়াছড়িতে লিপ্ত হতে দিবে না। ইসলাম আর মুসলমানের জন্য জীবন দিতে কেউ তাকে রুখতে পারবে না। কিন্তু তার দিন গড়িয়ে যায়, আয়ু ফুরিয়ে যায় সেই আমলগুলো আর শুরু করা হলো না। কোনটাই আর করা হয়ে উঠলো না। সবই আবেগের বাসস্থানে নিদ্রায় চলে যায়।
কিন্তু যারা দ্বীনদার, নেককার, পরহেজগার, হঠাৎ বিশেষ কোন একটা নেক আমলের জযবা অন্তরে এসেছে শয়তান তখন তাকে এই বলে ধোঁকা দেয় যে, আজ না হয় থাক আগামীকাল থেকে শুরু করবো। এভাবে প্রতিদিন তাকে 'আগামীকালের' খাব দেখায়, কিন্তু সেই আগামীকাল তার জীবনে আর আসে না।
বাস্তবতার নিরিখে যারা উপলব্ধি করেছেন, এ ব্যাপারে তাদের নীতি-নৈতিকতামূলক কিছু উক্তিঃ
এক.
আল্লামা নববী রাহি. বলেছেন, দিলে নেক আমলের এরাদা হওয়ার সাথে সাথে তা শুরু করা উচিৎ। কেননা পরে হয়ত এ সুযোগ নাও থাকতে পারে, এমনকি এখন যে আগ্রহ আছে তা পরে মন নাও চাইতে পারে। তখন মাহরুমী ও বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই জুটবে না।
দুই.
ইবনে তাইমিয়্যার রাহি. উক্তিটিও বেশ মনে পড়ছে, অন্তরে যে নেক আমলের জযবা সৃষ্টি হয় সেগুলো প্রকৃতপক্ষে বান্দার কাছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে পাঠানো মেহমান।
তিন.
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহি. বলেন, মেহমানের যথাযথ কদর করা মেজবানের উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য।নেক আমল মহামহিয়ান রবের পক্ষ হতে এক বিরাট নেয়ামত। সাধারণত কোন বাড়িতে মেহমান আসলে সে বাড়ির কর্তারা যদি তার কদর না করে তাহলে সে অবশ্যই দ্বিতীয়বার আর আসবে না। ঠিক তেমনি অন্তরে কোন নেক আমলের জযবা সৃষ্টি হলে, সেটা যথা সময়ে করা না হলে দ্বিতীয়বার আর ফিরে আসে না। তবে আসলেও তার সংখ্যা অপ্রতুল।
প্রিয় ভাই ও বোন!
মুমিন বান্দার অবশ্য কর্তব্য হলো আল্লাহর পাঠানো মেহমানের কদর করা। অন্যথায় এমন আশংকা আছে যে, আল্লাহ বলবেন, এ বান্দা বড় না-শোকর, বড়
বে-কদর। তখন আল্লাহ ঐ বান্দার অন্তরে আর নেক আমলের জযবা ও আগ্রহ দান করেন না। তাই নেক আমলের এরাদা দিলে আসার পর কোন অজুহাতেই সেটাকে বিলম্বিত না করা উচিৎ, বরং সাথে সাথে আমল শুরু করে দেয়া উচিত।
হে প্রিয় ভাই ও বোন!
জিহাদ ও কিতাল, এগুলো কি নেক আমল নয়? এগুলো কি আল্লাহর পক্ষ হতে পাঠানো মেহমান নয়?
ফিতান ও ফাসাদ, এগুলো থেকে বেঁচে থাকা কি নেক আমল নয়? তাদাব্বুর, তাফাক্কুর,তাআল্লুম এগুলো কি নেক আমল নয়? এগুলো কি আল্লাহর পক্ষ হতে পাঠানো নেয়ামত নয়? আযকার, আসলিহাহ, আসকারিয়্যাহ ধারণ করা কি নেক আমল নয়? এগুলো কি আল্লাহর পক্ষ হতে পাঠানো বিশেষ নিরাপত্তা নয়?
শাহাদাত, মোজাদালাত এগুলো কি নেক আমল নয়? এগুলো কি আল্লাহর পক্ষ হতে পাঠানো বিশেষ পুরষ্কার নয়?
হে প্রিয় ভাই ও বোন!
মানুষ মাত্রই অন্তরঙ্গ বন্ধুর সাহচর্য কামনা করে। নেক আমল হলো মানুষের সর্বোত্তম সঙ্গী, সবচে' উপকারী বন্ধু। নেক আমল তোমাকে উদ্ধার করবে মুনকার-নাকীরের সুআল থেকে, জাহান্নামের ভয়ংকর আযাব থেকে। নেক আমল তোমাকে দেখাবে আলোর পথ, পরপারে থাকবে তুমি নিরাপদ। নেক আমল তোমাকে দেখাবে নাজাত যা পেয়ে তুমি হতে পারো পরকালের সেরা জান্নাতী।
Comment