শুবে কি আমার আত্মার আকুতি?
জাতির সঙ্গে, দেশ ও সমাজের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বর্তমান যে অবস্থা, আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক, ভক্তি ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক, দায় ও দায়িত্বের সম্পর্ক, এগুলো আমরা যে অবস্থায় পেয়েছি, দুনিয়া থেকে যাওয়ার সময় পরবর্তীদের জন্য যেন আরো ভাল অবস্থায় রেখে যেতে পারি সেটাই মুখ্য উদ্দেশ্য।
কিন্তু বাস্তবতা কী? প্রতিটি ক্ষেত্রে দিন দিন তো অবস্থার অবনতিই ঘটছে। এজন্য দিলের মধ্যে একটা পেরেশানি, একটা অস্থিরতা যেন কুরে কুরে খায়।
আরেকটা বিষয় হলো এই যে বিশাল দায়-দায়িত্ব, বিপুল কর্ম কর্মযজ্ঞ এগুলো আঞ্জাম দেয়ার জন্য তৈরি আসবাব এর দরকার, যার নূন্যতম পর্যায়েও আমাদের হাতে নেই। কমযোর ইনসান হিসাবে, মানবীয় দুর্বলতা হিসেবে এটাও মাঝে মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
বাকি নিজের স্থুল চোখেও তো দেখতে পাই, গায়েব থেকে আল্লাহ তা'আলা কত সাহায্য করছেন! আমাদের হাজারো অযোগ্যতা সত্ত্বেও কত সাহায্য করছেন, অথচ আমাদের মধ্যে শোকরের কোন জাযবা নেই। আল্লাহ যে বলেছেন, যদি শোকর করো অবশ্যই বাড়িয়ে দেবো, এর ওপর কোন আমল নেই, এটাও অন্তরে বড় অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
তো যাই হোক অন্তরে এত কথা, এত ব্যথা, এত জ্বালা, এত দহন যন্ত্রণা যে, ভেবে পাই না, কোনটা রেখে কোনটা বলি! কোনটা আগে বলা দরকার! কোনটা বেশি প্রয়োজন! কিন্তু এখন কিছুটা পেরেশানি কমেছে উম্মাহর প্রতি কিছু দরদী ভাইদের কন্ঠ স্বরের আওয়াজ শোনে, অস্থিরতা কিছুটা লাঘব হয়েছে তাঁদের তাফাক্কুর দেখে, তাঁরা {{মুজাহিদীন ভায়েরা}}নিয়মিত আমাদের আত্মার খোরাক দিয়ে যাচ্ছেন, এ জন্য অন্তরে জমানো ভালোবাসার সুরভিত নির্যাস দিয়ে শুধু বলি জাযাকুমুল্লাহু আহসানাল জাযা। শুকরান লাকুম জাযীলাস শুকর।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
আজ শুধু গিযা নামক এবাদত সম্পর্কে কিছু কথা বলি। আল্লাহ যেন তৌফিক দান করেন। এ এবাদতের কথা কেন বলতে হবে? কারণ মানুষের জীবনে আল্লাহ তাআলা দুটো বুনিয়াদি জরুরাত ও মৌলিক প্রয়োজন রেখেছেন, যার উপর নির্ভর করে ইনসানের রুহানি ও জিসমানি উজুদ, মানুষের দৈহিক ও আত্মিক অস্তিত্ব। একটা হল এবাদত! জ্বী হ্যাঁ, এবাদত আমাদেরই প্রয়োজন, আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে, আমাদের আত্মার প্রয়োজন!!
আরেকটা হল গিজা ও খাদ্যের প্রয়োজন। এটাই এখানে মূল আলোচনা- এবাদত এর প্রয়োজন এবং খাদ্যের প্রয়োজন দুটোর প্রকৃতি যদিও আলাদা, তবে কোনটারই প্রয়োজন কম না। একথার পক্ষে কোরআনী দলিল রয়েছে । এবাদতের যে প্রয়োজন যদি সুযোগ হয় পরে সে সম্পর্কে বলবো ইনশাআল্লাহ। তবে আলহামাদুলিল্লাহ ভায়েরা নিয়মিত বিভিন্ন সাইটে এবাদত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ, তাত্ত্বিক আলোচনা করে যাচ্ছেন, সেগুলো আমরা আত্মার খোরাক হিসেবে মনে প্রাণে গ্রহণ করবো।
এখন শুধু গিযা ও খাদ্যের প্রয়োজন এর কথা বলি। একটা হল নফসের গিযা, সেটা আমাদের পশুসত্তার চাহিদা। আরেকটা হলো হালাল গিযা, হালাল তরিকায় হাসিল করা এবং হালাল তরিকায় গ্রহণ করা, যেটা আমাদের মানবসত্তার প্রয়োজন।
প্রিয় ভাই, দেখুন! দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা পশু ও প্রাণীর জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা রেখেছেন, কিন্তু তাতে কোন বৈচিত্র রাখেননি। কারণ খাদ্যের উদ্দেশ্য শুধু ক্ষুধা নিবারণ এবং প্রাণ ধারণ। মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলা গিজা ও খাদ্যের নিজাম রেখেছেন, তবে তাতে বিরাট বৈচিত্র রেখেছেন এবং রেখেছেন অপার সৌন্দর্য। মানুষের গিজা ও খাদ্য ব্যবস্থার যে বৈচিত্র ও সৌন্দর্য শুধু এ সম্পর্কে আলোচনা করতে হলেও অনেক সময় ও পরিসর দরকার।
গিযা ও খাদ্যের এ বৈচিত্র ও সৌন্দর্য প্রমাণ করে যে এটা শুধু ক্ষুধা নিবারণ ও প্রাণ ধারণের প্রয়োজনে নয়। এর পিছনে অবশ্যই রয়েছে আরও বড় কোনো কারণ, ঊর্ধ্বজাগতিক কোন রহস্য। সেটা অবশ্যই আমাদের জানা দরকার। কারণ মানবজীবনে এবং ইনসানি জিন্দেগীতে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গিযা ও খাদ্য যদি হালাল উপায়ে এবং যথাযথ ভাবে গ্রহন করা যায় তাহলে এবাদাত দ্বারা বান্দার যেমন তারাক্কী হয়, গিযা ও খাদ্য দ্বারাও একই রকম তারাক্কী হওয়ার কথা।
দেখুন! আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ-
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون
অর্থঃ জ্বীন ও ইনসানকে আমি শুধু আমার এবাদত এর জন্য সৃষ্টি করেছি। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আয়াতে
এবাদত এর কথা বলেই আল্লাহ তাআলা রিজিকের বিষয়টি নিয়ে এসেছেনঃ-
ما اريد منهم من رزق
অর্থঃ তাদের কাছে আমি কোন রিযিক চাই না।
কী প্রয়োজন ছিল এটা বলার? বান্দার কাছে আল্লাহর যে চাহিদা সেটাতো তিনি বলেই দিয়েছেন আয়াতের প্রথম পর্বে। চাহিদা শব্দটি নিয়ে অবশ্য কথা আছে। এবাদত আসলে বান্দার নিজের চাহিদা, নিজের আবদিয়াতের প্রয়োজন। এ প্রয়োজন তার খিলকতের মধ্যেই রেখে দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তো ইনসানের খালিক, মানুষের স্রষ্টা, আল্লাহ তা জানেন, মানুষের জীবনের সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয় হল রিজিক। নাদান ইনসান যদি ভেবে বসে, এবাদত এর সঙ্গে সঙ্গে রিজিকেরও মুতালাবা রয়েছে বান্দার কাছে তার খালিকের, তাহলে তো সে অযথা পেরেশানির শিকার হবে । বান্দাকে তিনি নিশ্চিন্ত করে দিয়ে বলেছেনঃ
ما اريد منهم من رزق
কিন্তু কথা হলো, এতোটুকুই তো যথেষ্ট ছিলো। তারপর আরো স্থুল রুপটাও তুলে ধরেছেন-
وما اريد ان يطعمون
আল্লাহই ভাল জানেন; হয়তো এভাবে বলা হয়েছে মানুষের জীবনে রিজিক ও গিযার আযমত আহাম্মিয়াতের মহত্ব ও গুরুত্ব বোঝানোর জন্য। প্রথমে মৌলিক রূপটা এনেছেন তারপর স্থল রূপটাও উল্লেখ করেছেন-
ما اريد منهم من رزق وما اريد ان يطعمون
আল্লাহর কালাম এর কোন অংশ যদি বেলা সবব এবং অকারণ না হয়; প্রতিটি অংশের ই কোন না কোন হিকমত থাকে তাহলে তো
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون
এরপর আমাদের চিন্তা করতে হবে যে
ما اريد منهم من رزق
এর অবতারণা কেন? কি এর রহস্য? তারপর আবার আরো স্থুলভাবে দ্বিতীয় অংশটি কেন? কেন বলা হচ্ছেঃ-
وما اريد ان يطعمون
আমি চাইনা যে তারা আমাকে খাওয়াবে, সুবহানাল্লাহ!
রিজিক থেকে দায় মুক্তির বিষয়টি তো হলো, কিন্তু বান্দার নিজের যে রিজিকের প্রয়োজন! তার উপায় কী?
দেখুন, দয়াময়ের কত দয়া! পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে,
ان الله هو الرزاق
আল্লাহ তাআলা রাযযাক, তিনিই একমাত্র রিজিকদাতা। আল্লাহ ছাড়া আর কোন রিজিকদাতা নেই। বান্দার দিলে কি মহান খালিকের রাযযাকিয়াতের শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে চিন্তার কোন দুর্বলতা আছে? তাহলে একটু শোনো-
ان الله هو الرزاق ذو القوة المتين
জ্বীন ও ইনসান এর ও কুলমাখলুকাতের রিজিকের ব্যবস্থা তার জন্য কঠিন কিছু নয়। তিনি তো সুসংহত শক্তির অধিকারী। দেখুন! এবাদত সম্পর্কে শুধু একটি বাক্য, সঙ্গে সঙ্গে রিজিকের প্রসঙ্গ, তাও আবার দীর্ঘ বক্তব্য!
এজন্যই যে রিযিক ও গিযার প্রয়োজন মানুষের জীবনে এবাদতের প্রয়োজনের চেয়ে কোন অংশে কম না। বরং এবাদত হলো মানুষের সৃষ্টিগত চাহিদা আর রিজিক হল তার সৃষ্টিগত দুর্বলতা। চাহিদা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে আর দুর্বলতা করে উৎকণ্ঠিত।
এখন কথা হলো রিযিকি, গিযা ও খাদ্যের ব্যবস্থায় এই যে বিপুল বৈচিত্র্য, এই যে অপার সৌন্দর্য্য, কী এর উদ্দেশ্য? কী এর রহস্য? শুধু কি ক্ষুধা নিবারণ? শুধু কি প্রাণ ধারণ? না, কিছুতেই না।
এবাদত দ্বারা বান্দার রুহের গিযা হাসিল হয় আর এই গিযা দ্বারা, এই খাদ্যসম্ভার দ্বারা, রুহটা যে জাসাদ অর্থাৎ শরীরের মধ্যে রয়েছে সেই জাসাদের মধ্যে সালাহিয়াত ও যোগ্যতা অর্জিত হয়।
দেখুন! শক্তি বা পুষ্টি বলিনি,
সালাহিয়াত বা যোগ্যতা বলেছি । মানে হলো, রুহকে ধারণ করার জন্য শারীরিক শক্তি ও পুষ্টির কোনো ভূমিকা নেই। এর জন্য প্রয়োজন অন্যরকম একটা সালাহিয়াত ও যোগ্যতার।
কাফির-মুশরিকদের জাসাদ ও শরীর যত শক্তি ও পুষ্টির অধিকারী হোক, তা কিন্তু রুহকে ধারণ করার যোগ্যতা রাখে না। তাই তাদের রূহ সবসময় কষ্টের মধ্যে থাকে, পেরেশানিতে হাবুডুবু খায়, চিন্তা রাজ্যে ডুবে থাকে, অশান্তির মহাসাগরে ভেসে বেড়ায়, যদিও তাদের বাহ্যিক রূপ আমাদের মুগ্ধ করে।
এমনকি মুসলমানদের মধ্যেও যাদের গিযা হালাল নয়, সুন্নাত মোতাবেক নয় তাদের শরীরও কিন্তু ঐভাবে তৈয়ার হয় না। তাতে রূহকে ধারণ করার সালাহিয়াত ও যোগ্যতা ঐভাবে গড়ে উঠেনা। তাই তাদের রুহও এরকম কষ্টের মধ্যে থাকে, পেরেশানিতে ডুবে থাকে, স্রষ্টার সান্নিধ্য হাছিলের মনমানসিকতা অন্তরে জেগে উঠে না। কারণ স্রষ্টা, ইসলাম ও মুসলমানদের সান্নিধ্যে পরশে ধন্য হতে হলে স্বচ্ছ, প্রশান্ত, ও পবিত্র আত্মার প্রয়োজন।
মানুষের শরীরের মূল মাকছাদ হলো, রুহকে ধারণ করা। তো এবাদত হলে রুহের প্রয়োজন, মিন হাইছু এই দিক থেকে। জাসাদের রুহ যাদের স্বচ্ছ, রুহ যাদের পবিত্র, আত্মা যাদের প্রশান্ত তাঁরাই হলো প্রকৃত মুমিন মিন হাইছু এই দিক থেকে।
তাদের কলবে, তাদের হৃদয়ে, তাদের অন্তরে প্রভুর ভালোবাসা উদ্যেলিত হয়, রাসূলের প্রতি মহব্বত সব জায়গায় প্রস্ফুটিত হয়।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
এই রুহকে, এই কলবকে, এই আত্মাকে স্বচ্ছ করার সহজ প্রদ্ধতি কি আমার তোমার জানা আছে? জ্বীঁ হ্যা,অবশ্যই জানা আছে, তবে গাফলতের নিদ তো কাটছে না, তাই তুমি আমি এর মহত্ত্ব বুঝতে পারছি না, জানো! সেই সহজ আমলটা কি?
জ্বীঁ, অবশ্যই, সেটা হলো জিহাদ ও শাহাদাতের পথ। কিতাল ও জিদালের পথ, সম্মান ও উচ্চ শীখড়ে আরোহণের সুউচ্চ মিনার। উত্তম রিযিকের পবিত্র খাজানা। বাতায়ন পথে জান্নাতের স্বপ্ন দেখার নাঙ্গা তলোয়ার। পরিশেষে এটাই সর্ব স্বীকৃত এ পথ হলো মুমিনবান্দার উসওয়ায়ে হাসানাহ ।
জাতির সঙ্গে, দেশ ও সমাজের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বর্তমান যে অবস্থা, আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক, ভক্তি ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক, দায় ও দায়িত্বের সম্পর্ক, এগুলো আমরা যে অবস্থায় পেয়েছি, দুনিয়া থেকে যাওয়ার সময় পরবর্তীদের জন্য যেন আরো ভাল অবস্থায় রেখে যেতে পারি সেটাই মুখ্য উদ্দেশ্য।
কিন্তু বাস্তবতা কী? প্রতিটি ক্ষেত্রে দিন দিন তো অবস্থার অবনতিই ঘটছে। এজন্য দিলের মধ্যে একটা পেরেশানি, একটা অস্থিরতা যেন কুরে কুরে খায়।
আরেকটা বিষয় হলো এই যে বিশাল দায়-দায়িত্ব, বিপুল কর্ম কর্মযজ্ঞ এগুলো আঞ্জাম দেয়ার জন্য তৈরি আসবাব এর দরকার, যার নূন্যতম পর্যায়েও আমাদের হাতে নেই। কমযোর ইনসান হিসাবে, মানবীয় দুর্বলতা হিসেবে এটাও মাঝে মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
বাকি নিজের স্থুল চোখেও তো দেখতে পাই, গায়েব থেকে আল্লাহ তা'আলা কত সাহায্য করছেন! আমাদের হাজারো অযোগ্যতা সত্ত্বেও কত সাহায্য করছেন, অথচ আমাদের মধ্যে শোকরের কোন জাযবা নেই। আল্লাহ যে বলেছেন, যদি শোকর করো অবশ্যই বাড়িয়ে দেবো, এর ওপর কোন আমল নেই, এটাও অন্তরে বড় অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
তো যাই হোক অন্তরে এত কথা, এত ব্যথা, এত জ্বালা, এত দহন যন্ত্রণা যে, ভেবে পাই না, কোনটা রেখে কোনটা বলি! কোনটা আগে বলা দরকার! কোনটা বেশি প্রয়োজন! কিন্তু এখন কিছুটা পেরেশানি কমেছে উম্মাহর প্রতি কিছু দরদী ভাইদের কন্ঠ স্বরের আওয়াজ শোনে, অস্থিরতা কিছুটা লাঘব হয়েছে তাঁদের তাফাক্কুর দেখে, তাঁরা {{মুজাহিদীন ভায়েরা}}নিয়মিত আমাদের আত্মার খোরাক দিয়ে যাচ্ছেন, এ জন্য অন্তরে জমানো ভালোবাসার সুরভিত নির্যাস দিয়ে শুধু বলি জাযাকুমুল্লাহু আহসানাল জাযা। শুকরান লাকুম জাযীলাস শুকর।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
আজ শুধু গিযা নামক এবাদত সম্পর্কে কিছু কথা বলি। আল্লাহ যেন তৌফিক দান করেন। এ এবাদতের কথা কেন বলতে হবে? কারণ মানুষের জীবনে আল্লাহ তাআলা দুটো বুনিয়াদি জরুরাত ও মৌলিক প্রয়োজন রেখেছেন, যার উপর নির্ভর করে ইনসানের রুহানি ও জিসমানি উজুদ, মানুষের দৈহিক ও আত্মিক অস্তিত্ব। একটা হল এবাদত! জ্বী হ্যাঁ, এবাদত আমাদেরই প্রয়োজন, আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে, আমাদের আত্মার প্রয়োজন!!
আরেকটা হল গিজা ও খাদ্যের প্রয়োজন। এটাই এখানে মূল আলোচনা- এবাদত এর প্রয়োজন এবং খাদ্যের প্রয়োজন দুটোর প্রকৃতি যদিও আলাদা, তবে কোনটারই প্রয়োজন কম না। একথার পক্ষে কোরআনী দলিল রয়েছে । এবাদতের যে প্রয়োজন যদি সুযোগ হয় পরে সে সম্পর্কে বলবো ইনশাআল্লাহ। তবে আলহামাদুলিল্লাহ ভায়েরা নিয়মিত বিভিন্ন সাইটে এবাদত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ, তাত্ত্বিক আলোচনা করে যাচ্ছেন, সেগুলো আমরা আত্মার খোরাক হিসেবে মনে প্রাণে গ্রহণ করবো।
এখন শুধু গিযা ও খাদ্যের প্রয়োজন এর কথা বলি। একটা হল নফসের গিযা, সেটা আমাদের পশুসত্তার চাহিদা। আরেকটা হলো হালাল গিযা, হালাল তরিকায় হাসিল করা এবং হালাল তরিকায় গ্রহণ করা, যেটা আমাদের মানবসত্তার প্রয়োজন।
প্রিয় ভাই, দেখুন! দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা পশু ও প্রাণীর জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা রেখেছেন, কিন্তু তাতে কোন বৈচিত্র রাখেননি। কারণ খাদ্যের উদ্দেশ্য শুধু ক্ষুধা নিবারণ এবং প্রাণ ধারণ। মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলা গিজা ও খাদ্যের নিজাম রেখেছেন, তবে তাতে বিরাট বৈচিত্র রেখেছেন এবং রেখেছেন অপার সৌন্দর্য। মানুষের গিজা ও খাদ্য ব্যবস্থার যে বৈচিত্র ও সৌন্দর্য শুধু এ সম্পর্কে আলোচনা করতে হলেও অনেক সময় ও পরিসর দরকার।
গিযা ও খাদ্যের এ বৈচিত্র ও সৌন্দর্য প্রমাণ করে যে এটা শুধু ক্ষুধা নিবারণ ও প্রাণ ধারণের প্রয়োজনে নয়। এর পিছনে অবশ্যই রয়েছে আরও বড় কোনো কারণ, ঊর্ধ্বজাগতিক কোন রহস্য। সেটা অবশ্যই আমাদের জানা দরকার। কারণ মানবজীবনে এবং ইনসানি জিন্দেগীতে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গিযা ও খাদ্য যদি হালাল উপায়ে এবং যথাযথ ভাবে গ্রহন করা যায় তাহলে এবাদাত দ্বারা বান্দার যেমন তারাক্কী হয়, গিযা ও খাদ্য দ্বারাও একই রকম তারাক্কী হওয়ার কথা।
দেখুন! আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ-
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون
অর্থঃ জ্বীন ও ইনসানকে আমি শুধু আমার এবাদত এর জন্য সৃষ্টি করেছি। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আয়াতে
এবাদত এর কথা বলেই আল্লাহ তাআলা রিজিকের বিষয়টি নিয়ে এসেছেনঃ-
ما اريد منهم من رزق
অর্থঃ তাদের কাছে আমি কোন রিযিক চাই না।
কী প্রয়োজন ছিল এটা বলার? বান্দার কাছে আল্লাহর যে চাহিদা সেটাতো তিনি বলেই দিয়েছেন আয়াতের প্রথম পর্বে। চাহিদা শব্দটি নিয়ে অবশ্য কথা আছে। এবাদত আসলে বান্দার নিজের চাহিদা, নিজের আবদিয়াতের প্রয়োজন। এ প্রয়োজন তার খিলকতের মধ্যেই রেখে দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তো ইনসানের খালিক, মানুষের স্রষ্টা, আল্লাহ তা জানেন, মানুষের জীবনের সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয় হল রিজিক। নাদান ইনসান যদি ভেবে বসে, এবাদত এর সঙ্গে সঙ্গে রিজিকেরও মুতালাবা রয়েছে বান্দার কাছে তার খালিকের, তাহলে তো সে অযথা পেরেশানির শিকার হবে । বান্দাকে তিনি নিশ্চিন্ত করে দিয়ে বলেছেনঃ
ما اريد منهم من رزق
কিন্তু কথা হলো, এতোটুকুই তো যথেষ্ট ছিলো। তারপর আরো স্থুল রুপটাও তুলে ধরেছেন-
وما اريد ان يطعمون
আল্লাহই ভাল জানেন; হয়তো এভাবে বলা হয়েছে মানুষের জীবনে রিজিক ও গিযার আযমত আহাম্মিয়াতের মহত্ব ও গুরুত্ব বোঝানোর জন্য। প্রথমে মৌলিক রূপটা এনেছেন তারপর স্থল রূপটাও উল্লেখ করেছেন-
ما اريد منهم من رزق وما اريد ان يطعمون
আল্লাহর কালাম এর কোন অংশ যদি বেলা সবব এবং অকারণ না হয়; প্রতিটি অংশের ই কোন না কোন হিকমত থাকে তাহলে তো
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون
এরপর আমাদের চিন্তা করতে হবে যে
ما اريد منهم من رزق
এর অবতারণা কেন? কি এর রহস্য? তারপর আবার আরো স্থুলভাবে দ্বিতীয় অংশটি কেন? কেন বলা হচ্ছেঃ-
وما اريد ان يطعمون
আমি চাইনা যে তারা আমাকে খাওয়াবে, সুবহানাল্লাহ!
রিজিক থেকে দায় মুক্তির বিষয়টি তো হলো, কিন্তু বান্দার নিজের যে রিজিকের প্রয়োজন! তার উপায় কী?
দেখুন, দয়াময়ের কত দয়া! পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে,
ان الله هو الرزاق
আল্লাহ তাআলা রাযযাক, তিনিই একমাত্র রিজিকদাতা। আল্লাহ ছাড়া আর কোন রিজিকদাতা নেই। বান্দার দিলে কি মহান খালিকের রাযযাকিয়াতের শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে চিন্তার কোন দুর্বলতা আছে? তাহলে একটু শোনো-
ان الله هو الرزاق ذو القوة المتين
জ্বীন ও ইনসান এর ও কুলমাখলুকাতের রিজিকের ব্যবস্থা তার জন্য কঠিন কিছু নয়। তিনি তো সুসংহত শক্তির অধিকারী। দেখুন! এবাদত সম্পর্কে শুধু একটি বাক্য, সঙ্গে সঙ্গে রিজিকের প্রসঙ্গ, তাও আবার দীর্ঘ বক্তব্য!
এজন্যই যে রিযিক ও গিযার প্রয়োজন মানুষের জীবনে এবাদতের প্রয়োজনের চেয়ে কোন অংশে কম না। বরং এবাদত হলো মানুষের সৃষ্টিগত চাহিদা আর রিজিক হল তার সৃষ্টিগত দুর্বলতা। চাহিদা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে আর দুর্বলতা করে উৎকণ্ঠিত।
এখন কথা হলো রিযিকি, গিযা ও খাদ্যের ব্যবস্থায় এই যে বিপুল বৈচিত্র্য, এই যে অপার সৌন্দর্য্য, কী এর উদ্দেশ্য? কী এর রহস্য? শুধু কি ক্ষুধা নিবারণ? শুধু কি প্রাণ ধারণ? না, কিছুতেই না।
এবাদত দ্বারা বান্দার রুহের গিযা হাসিল হয় আর এই গিযা দ্বারা, এই খাদ্যসম্ভার দ্বারা, রুহটা যে জাসাদ অর্থাৎ শরীরের মধ্যে রয়েছে সেই জাসাদের মধ্যে সালাহিয়াত ও যোগ্যতা অর্জিত হয়।
দেখুন! শক্তি বা পুষ্টি বলিনি,
সালাহিয়াত বা যোগ্যতা বলেছি । মানে হলো, রুহকে ধারণ করার জন্য শারীরিক শক্তি ও পুষ্টির কোনো ভূমিকা নেই। এর জন্য প্রয়োজন অন্যরকম একটা সালাহিয়াত ও যোগ্যতার।
কাফির-মুশরিকদের জাসাদ ও শরীর যত শক্তি ও পুষ্টির অধিকারী হোক, তা কিন্তু রুহকে ধারণ করার যোগ্যতা রাখে না। তাই তাদের রূহ সবসময় কষ্টের মধ্যে থাকে, পেরেশানিতে হাবুডুবু খায়, চিন্তা রাজ্যে ডুবে থাকে, অশান্তির মহাসাগরে ভেসে বেড়ায়, যদিও তাদের বাহ্যিক রূপ আমাদের মুগ্ধ করে।
এমনকি মুসলমানদের মধ্যেও যাদের গিযা হালাল নয়, সুন্নাত মোতাবেক নয় তাদের শরীরও কিন্তু ঐভাবে তৈয়ার হয় না। তাতে রূহকে ধারণ করার সালাহিয়াত ও যোগ্যতা ঐভাবে গড়ে উঠেনা। তাই তাদের রুহও এরকম কষ্টের মধ্যে থাকে, পেরেশানিতে ডুবে থাকে, স্রষ্টার সান্নিধ্য হাছিলের মনমানসিকতা অন্তরে জেগে উঠে না। কারণ স্রষ্টা, ইসলাম ও মুসলমানদের সান্নিধ্যে পরশে ধন্য হতে হলে স্বচ্ছ, প্রশান্ত, ও পবিত্র আত্মার প্রয়োজন।
মানুষের শরীরের মূল মাকছাদ হলো, রুহকে ধারণ করা। তো এবাদত হলে রুহের প্রয়োজন, মিন হাইছু এই দিক থেকে। জাসাদের রুহ যাদের স্বচ্ছ, রুহ যাদের পবিত্র, আত্মা যাদের প্রশান্ত তাঁরাই হলো প্রকৃত মুমিন মিন হাইছু এই দিক থেকে।
তাদের কলবে, তাদের হৃদয়ে, তাদের অন্তরে প্রভুর ভালোবাসা উদ্যেলিত হয়, রাসূলের প্রতি মহব্বত সব জায়গায় প্রস্ফুটিত হয়।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
এই রুহকে, এই কলবকে, এই আত্মাকে স্বচ্ছ করার সহজ প্রদ্ধতি কি আমার তোমার জানা আছে? জ্বীঁ হ্যা,অবশ্যই জানা আছে, তবে গাফলতের নিদ তো কাটছে না, তাই তুমি আমি এর মহত্ত্ব বুঝতে পারছি না, জানো! সেই সহজ আমলটা কি?
জ্বীঁ, অবশ্যই, সেটা হলো জিহাদ ও শাহাদাতের পথ। কিতাল ও জিদালের পথ, সম্মান ও উচ্চ শীখড়ে আরোহণের সুউচ্চ মিনার। উত্তম রিযিকের পবিত্র খাজানা। বাতায়ন পথে জান্নাতের স্বপ্ন দেখার নাঙ্গা তলোয়ার। পরিশেষে এটাই সর্ব স্বীকৃত এ পথ হলো মুমিনবান্দার উসওয়ায়ে হাসানাহ ।
Comment