নিরাপত্তা আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত
প্রিয় ভাই ও বোন!
যিনি শান্তির পথের পথিক, যিনি অন্যের নিরাপত্তা বিধানে সর্বদা সচেষ্ট, যিনি পরের মঙ্গল কামনা ও হিত সাধনায় সদা ব্রতী, সর্বোপরি যিনি সৃষ্টিকুলের শান্তি রক্ষার জন্য মহান স্রষ্টার প্রতি আত্মসমর্পণ করেছেন, তিনিই প্রকৃত ও যথার্থ মুসলিম।
ইমান মানে হলো বিশ্বাস ও নিরাপত্তা, মুমিন অর্থ হলো বিশ্বাসী, নিরাপদ ব্যক্তি ও নিরাপত্তা প্রদানকারী।
আমরা জানি, মুসলিম হতে হলে তাকে অবশ্যই মুমিন হতে হবে। ইমান ও ইসলামের পরিসর ও ব্যাপ্তি যা-ই হোক না কেন, মুমিন মাত্রই মুসলিম এবং মুসলিম মাত্রই মুমিন বিষয়টি কি এমন! এ দুটি একে অন্যের পরিপূরক! একটির সঙ্গে অন্যটি গভীরভাবে সম্পৃক্ত! তাহলে জানা প্রয়োজন, মুমিন ব্যক্তি প্রথমত, নিজে নিরাপদে থাকবেন। দ্বিতীয়ত, অন্যদের জন্য নিরাপদ হবেন। অর্থাৎ আপদ বা বিপদের কারণ হবেন না। তৃতীয়ত, সবার জন্য নিরাপত্তা বিধান করবেন, যেন কেউ কারো ক্ষতি সাধন করতে না পারে। তার জন্য, হয় জীবন দিবেন না হয় নিবেন।
সূরা তাওবাহ, আয়াত নং১১১
আল্লাহ তাআলা আপন কুদরতি পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে নিজেকে ‘সালাম’ তথা শান্তির আকর এবং ‘মুমিন’ তথা নিরাপত্তা বিধায়ক বলে অভিহিত করেছেন। নবী-রাসুলগণকে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন স্বীয় গুণাবলি প্রকাশ করতে। ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানব মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে মহান রব ঘোষণা দিয়েছেন, ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন, যা তোমাদিগকে বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।
সূরা তাওবা, আয়াত নং ১২৮।
নিরাপত্তা মানবজীবনের অন্যতম প্রধান কাম্যবস্তত।
যা ক্ষুদ্র মানসপটে ভেসে ওঠে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মক্কী ও মাদানী জীবনের ছোট ছোট হৃদয় বিদারক কর্মগুলো। শত জ্ঞানীর জ্ঞানও তা ভাবতে ভাবতে দিশেহারা হয়ে যায়। হোচট খেয়ে সত্য পথের পথিক হয়ে যায়।
প্রিয় ভাই ও বোন!
নিরাপত্তা ছাড়া সুখ ও শান্তি কল্পনাও করা যায় না। প্রাণহানি, সম্পদহানি ও সম্মানহানির ভয় যখন উপস্থিত হয় তখন সুখের সকল উপকরণ বিষাদ হয়ে যায়। তাই শান্তিময় জীবনের অন্যতম প্রধান শর্ত নিরাপত্তা।
পৃথিবীর সকল শ্রেণীর মানুষ নিরাপত্তা চায়। সৎ লোকও চায়, অসৎ লোকও চায়। বিশ্বাসীও চায়, অবিশ্বাসীও চায়। অথচ পৃথিবীর সকল নেয়ামতের মতো নিরাপত্তাও আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। তিনিই মানুষকে নিরাপত্তা দান করেন এবং ভীতি ও শঙ্কা থেকে মুক্ত করেন। তাই নেয়ামতকে লুফে নেয়া মুসলমানদের ধোন আবশ্যকীয়, অনিবার্য। তা ব্যতিরেকে শুধুই অকল্যাণ আর অকল্যাণ।
আর এ জয় আসে কোন রাজপথে তা দেখিয়ে গিয়েছেন সকল আকাবীরগণ আর পরাজয় আসে কোন চোরা পথে তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন সকল বীরপুরুষগণ।
প্রিয় ভাই ও বোন!
মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আ. মক্কা নগরীর জন্য তাই প্রথমেই শান্তি ও নিরাপত্তার দুআ করেছিলেন। মক্কাবাসীর জন্য আল্লাহর কাছে খাদ্য চাওয়ার আগেই তিনি চেয়েছিলেন ‘আম্ন’ তথা শান্তি ও নিরাপত্তা।
মহাগ্রন্থে ইরশাদ হয়েছে-
وَإِذْ*قَالَ*إِبْرَاهِيمُ*رَبِّ*اجْعَلْ*هَذَا*بَلَ دًا*آَمِنًا*وَارْزُقْ*أَهْلَهُ*مِنَ*الثَّمَرَاتِ*م َنْ*آَمَنَ*مِنْهُمْ*بِاللَّهِ*وَالْيَوْمِ*الْآَخِر ِ*قَالَ*وَمَنْ*كَفَرَ*فَأُمَتِّعُهُ*قَلِيلًا*ثُمَّ *أَضْطَرُّهُ*إِلَى*عَذَابِ*النَّارِ*وَبِئْسَ*الْمَ صِيرُ
দেখুন রব কি বলছেনঃ-
আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! একে নিরাপদ শহর কর, আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান আনে তাদেরকে ফলমূল থেকে জীবিকা প্রদান করো।’ আল্লাহ বললেন, ‘যে কেউ কুফরী করবে তাকে কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দিবো, অতঃপর তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব এবং কত নিকৃষ্ট তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল।-সূরা বাকারা, আয়াত নং১২৬
বলাবাহুল্য, এ নিরাপত্তা যেমন মানুষের ব্যক্তিজীবনে জরুরী, তেমনি পারিবারিক জীবনে, রাষ্টীয় জীবনে তা আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ।
একটি সমাজকে শান্তির সমাজ তখনই বলা যায় যখন তাতে জান-মালের নিরাপত্তা থাকে। সম্মানের সাথে জীবনযাপনের নিশ্চয়তা থাকে। শান্তির উপকরণ যেমন শান্তি নয়, তেমনি নিরাপত্তার উপকরণও নিরাপত্তা নয়। নিরাপত্তা আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। এই নেয়ামত তিনি ব্যক্তি ও সমাজকে তখনই দান করেন যখন আল্লাহর ফরমাবরদারি করা হয়। জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের দ্বারাই আল্লাহর পক্ষ হতে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। পক্ষান্তরে আল্লাহর বিধানের অবাধ্যতা ও নাফরমানী ব্যক্তি ও সমাজকে নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করে। ঐ সমাজে প্রীতি ও একতার পরিবর্তে বিভেদ ও শত্রুতা ছড়িয়ে পড়ে। যারা একে অপরের জান মালের ‘রক্ষক’ হওয়ার কথা তারাই পরস্পরের জানমাল লুণ্ঠন করতে থাকে। ফলে সমাজে বিস্তার লাভ করে ভীতি ও দারিদ্র। শান্তির শত প্রচেষ্টা এবং দারিদ্র বিমোচনের অসংখ্য কর্মসূচী শুধু ব্যর্থই হতে থাকে। আর এই সব কিছু ঘটে আল্লাহবিস্মৃতি ও আল্লাহর নেয়ামতের না-শোকরীর কারণে। পবিত্র গ্রন্থে ইরশাদ হয়েছে-
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آَمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُون
অর্থঃ আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসত সবদিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ। অতপর তা আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ অস্বীকার করল। ফলে তারা যা করত তার জন্য আল্লাহ তাদেরকে আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।-সূরা নাহল, আয়াত নং ১১২।
প্রিয় ভাই ও বোন!
এ অশান্তির শাস্তি যেমনিভাবে ফাসাদ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ও সমাজ তাদের অপকর্মের জন্য ভোগ করে থাকে, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে তার আগ্রাসনে পড়ে যায় জালিমদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া, তাদের প্রতিবাদ ও সাধ্যানুযায়ী প্রতিরোধ না করা সমাজ ও গোষ্ঠির লোকজনও। তাই নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি অসত্য, অন্যায়, প্রকাশ্য গুনাহ ও খোদাদ্রোহীতার বিরুদ্ধে যার যার সাধ্যানুযায়ী শান্তিপূর্ণ পন্থায় উদ্যোগ গ্রহণ করাও অপরিহার্য।
দুনিয়ার ছোট ছোট ভীতি ও শঙ্কা আখিরাতের চরম ভীতি ও শঙ্কার নিদর্শন। এগুলো আখিরাতের কঠিন মুহূর্তে শান্তি ও নিরাপত্তার মূল্য মুমিনের চিন্তায় উপস্থিত করে। পবিত্র কুরআনুল কারিমে বারবার নিজের জান-মাল ও কেয়ামতের সেই চরম ভীতির পরিস্থিতি সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে।
ঐ চরম ভীতির মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে অভয় ও নিরাপত্তাধারীই হবে সবচেয়ে বড় নেয়ামতপূর্ণ ব্যক্তি। যার মোকাবেলায় দুনিয়ার সকল ভোগ-উপভোগ অতি তুচ্ছ মনে হবে। এই পরম নেয়ামত আল্লাহ শুধু দান করবেন তাঁর মুত্তাকী বান্দাদেরকে, যারা দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করেছেন,
তার ঝান্ডাতলে আশ্রয় নিয়েছেন, সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় দন্ডায়মান থেকে দ্বীন কায়েমের তরে জীবন উৎসর্গ করেছেব। কিয়ামত ও আখিরাতের কঠিন অবস্থাকে ভয় করেছেন। মহান প্রভু আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ঐ জীবনের ভীতি থেকে নিরাপদ রাখবেন।
প্রিয় ভাই ও বোন!
মুমিন মানেই সময় ও অবস্থার প্রতি নিয়ন্ত্রকধারী, এটা মহান প্রভুর সিফাত, তারঁ প্রিয় হাবিবের বৈশিষ্ট্য, ওরাসাতুল আম্বিয়ায়ের সর্বোত্তম আদর্শ। সুতরাং আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনের অনুষঙ্গগুলো ঐ চিরস্থায়ী জীবনেরই কিছু নিদর্শন। এই সকল অনুষঙ্গ থেকে যদি আমরা ঐ জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি গ্রহণ করতে পারি এবং বিস্মৃতি ও উদাসীনতা থেকে মুক্ত হয়ে ঐ কঠিন সময়ের জন্য প্রস্ততি গ্রহণ করতে পারি তাহলে সেটিই হবে বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে প্রতিটি কাজে, প্রতিটি স্থানে, আসমানী নিরাপত্তা লাভের তাওফীক দান করুন। আমীন। আমীন।
প্রিয় ভাই ও বোন!
যিনি শান্তির পথের পথিক, যিনি অন্যের নিরাপত্তা বিধানে সর্বদা সচেষ্ট, যিনি পরের মঙ্গল কামনা ও হিত সাধনায় সদা ব্রতী, সর্বোপরি যিনি সৃষ্টিকুলের শান্তি রক্ষার জন্য মহান স্রষ্টার প্রতি আত্মসমর্পণ করেছেন, তিনিই প্রকৃত ও যথার্থ মুসলিম।
ইমান মানে হলো বিশ্বাস ও নিরাপত্তা, মুমিন অর্থ হলো বিশ্বাসী, নিরাপদ ব্যক্তি ও নিরাপত্তা প্রদানকারী।
আমরা জানি, মুসলিম হতে হলে তাকে অবশ্যই মুমিন হতে হবে। ইমান ও ইসলামের পরিসর ও ব্যাপ্তি যা-ই হোক না কেন, মুমিন মাত্রই মুসলিম এবং মুসলিম মাত্রই মুমিন বিষয়টি কি এমন! এ দুটি একে অন্যের পরিপূরক! একটির সঙ্গে অন্যটি গভীরভাবে সম্পৃক্ত! তাহলে জানা প্রয়োজন, মুমিন ব্যক্তি প্রথমত, নিজে নিরাপদে থাকবেন। দ্বিতীয়ত, অন্যদের জন্য নিরাপদ হবেন। অর্থাৎ আপদ বা বিপদের কারণ হবেন না। তৃতীয়ত, সবার জন্য নিরাপত্তা বিধান করবেন, যেন কেউ কারো ক্ষতি সাধন করতে না পারে। তার জন্য, হয় জীবন দিবেন না হয় নিবেন।
সূরা তাওবাহ, আয়াত নং১১১
আল্লাহ তাআলা আপন কুদরতি পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে নিজেকে ‘সালাম’ তথা শান্তির আকর এবং ‘মুমিন’ তথা নিরাপত্তা বিধায়ক বলে অভিহিত করেছেন। নবী-রাসুলগণকে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন স্বীয় গুণাবলি প্রকাশ করতে। ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানব মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে মহান রব ঘোষণা দিয়েছেন, ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন, যা তোমাদিগকে বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।
সূরা তাওবা, আয়াত নং ১২৮।
নিরাপত্তা মানবজীবনের অন্যতম প্রধান কাম্যবস্তত।
যা ক্ষুদ্র মানসপটে ভেসে ওঠে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মক্কী ও মাদানী জীবনের ছোট ছোট হৃদয় বিদারক কর্মগুলো। শত জ্ঞানীর জ্ঞানও তা ভাবতে ভাবতে দিশেহারা হয়ে যায়। হোচট খেয়ে সত্য পথের পথিক হয়ে যায়।
প্রিয় ভাই ও বোন!
নিরাপত্তা ছাড়া সুখ ও শান্তি কল্পনাও করা যায় না। প্রাণহানি, সম্পদহানি ও সম্মানহানির ভয় যখন উপস্থিত হয় তখন সুখের সকল উপকরণ বিষাদ হয়ে যায়। তাই শান্তিময় জীবনের অন্যতম প্রধান শর্ত নিরাপত্তা।
পৃথিবীর সকল শ্রেণীর মানুষ নিরাপত্তা চায়। সৎ লোকও চায়, অসৎ লোকও চায়। বিশ্বাসীও চায়, অবিশ্বাসীও চায়। অথচ পৃথিবীর সকল নেয়ামতের মতো নিরাপত্তাও আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। তিনিই মানুষকে নিরাপত্তা দান করেন এবং ভীতি ও শঙ্কা থেকে মুক্ত করেন। তাই নেয়ামতকে লুফে নেয়া মুসলমানদের ধোন আবশ্যকীয়, অনিবার্য। তা ব্যতিরেকে শুধুই অকল্যাণ আর অকল্যাণ।
আর এ জয় আসে কোন রাজপথে তা দেখিয়ে গিয়েছেন সকল আকাবীরগণ আর পরাজয় আসে কোন চোরা পথে তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন সকল বীরপুরুষগণ।
প্রিয় ভাই ও বোন!
মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আ. মক্কা নগরীর জন্য তাই প্রথমেই শান্তি ও নিরাপত্তার দুআ করেছিলেন। মক্কাবাসীর জন্য আল্লাহর কাছে খাদ্য চাওয়ার আগেই তিনি চেয়েছিলেন ‘আম্ন’ তথা শান্তি ও নিরাপত্তা।
মহাগ্রন্থে ইরশাদ হয়েছে-
وَإِذْ*قَالَ*إِبْرَاهِيمُ*رَبِّ*اجْعَلْ*هَذَا*بَلَ دًا*آَمِنًا*وَارْزُقْ*أَهْلَهُ*مِنَ*الثَّمَرَاتِ*م َنْ*آَمَنَ*مِنْهُمْ*بِاللَّهِ*وَالْيَوْمِ*الْآَخِر ِ*قَالَ*وَمَنْ*كَفَرَ*فَأُمَتِّعُهُ*قَلِيلًا*ثُمَّ *أَضْطَرُّهُ*إِلَى*عَذَابِ*النَّارِ*وَبِئْسَ*الْمَ صِيرُ
দেখুন রব কি বলছেনঃ-
আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! একে নিরাপদ শহর কর, আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান আনে তাদেরকে ফলমূল থেকে জীবিকা প্রদান করো।’ আল্লাহ বললেন, ‘যে কেউ কুফরী করবে তাকে কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দিবো, অতঃপর তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব এবং কত নিকৃষ্ট তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল।-সূরা বাকারা, আয়াত নং১২৬
বলাবাহুল্য, এ নিরাপত্তা যেমন মানুষের ব্যক্তিজীবনে জরুরী, তেমনি পারিবারিক জীবনে, রাষ্টীয় জীবনে তা আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ।
একটি সমাজকে শান্তির সমাজ তখনই বলা যায় যখন তাতে জান-মালের নিরাপত্তা থাকে। সম্মানের সাথে জীবনযাপনের নিশ্চয়তা থাকে। শান্তির উপকরণ যেমন শান্তি নয়, তেমনি নিরাপত্তার উপকরণও নিরাপত্তা নয়। নিরাপত্তা আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। এই নেয়ামত তিনি ব্যক্তি ও সমাজকে তখনই দান করেন যখন আল্লাহর ফরমাবরদারি করা হয়। জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের দ্বারাই আল্লাহর পক্ষ হতে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। পক্ষান্তরে আল্লাহর বিধানের অবাধ্যতা ও নাফরমানী ব্যক্তি ও সমাজকে নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করে। ঐ সমাজে প্রীতি ও একতার পরিবর্তে বিভেদ ও শত্রুতা ছড়িয়ে পড়ে। যারা একে অপরের জান মালের ‘রক্ষক’ হওয়ার কথা তারাই পরস্পরের জানমাল লুণ্ঠন করতে থাকে। ফলে সমাজে বিস্তার লাভ করে ভীতি ও দারিদ্র। শান্তির শত প্রচেষ্টা এবং দারিদ্র বিমোচনের অসংখ্য কর্মসূচী শুধু ব্যর্থই হতে থাকে। আর এই সব কিছু ঘটে আল্লাহবিস্মৃতি ও আল্লাহর নেয়ামতের না-শোকরীর কারণে। পবিত্র গ্রন্থে ইরশাদ হয়েছে-
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آَمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُون
অর্থঃ আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসত সবদিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ। অতপর তা আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ অস্বীকার করল। ফলে তারা যা করত তার জন্য আল্লাহ তাদেরকে আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।-সূরা নাহল, আয়াত নং ১১২।
প্রিয় ভাই ও বোন!
এ অশান্তির শাস্তি যেমনিভাবে ফাসাদ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ও সমাজ তাদের অপকর্মের জন্য ভোগ করে থাকে, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে তার আগ্রাসনে পড়ে যায় জালিমদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া, তাদের প্রতিবাদ ও সাধ্যানুযায়ী প্রতিরোধ না করা সমাজ ও গোষ্ঠির লোকজনও। তাই নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি অসত্য, অন্যায়, প্রকাশ্য গুনাহ ও খোদাদ্রোহীতার বিরুদ্ধে যার যার সাধ্যানুযায়ী শান্তিপূর্ণ পন্থায় উদ্যোগ গ্রহণ করাও অপরিহার্য।
দুনিয়ার ছোট ছোট ভীতি ও শঙ্কা আখিরাতের চরম ভীতি ও শঙ্কার নিদর্শন। এগুলো আখিরাতের কঠিন মুহূর্তে শান্তি ও নিরাপত্তার মূল্য মুমিনের চিন্তায় উপস্থিত করে। পবিত্র কুরআনুল কারিমে বারবার নিজের জান-মাল ও কেয়ামতের সেই চরম ভীতির পরিস্থিতি সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে।
ঐ চরম ভীতির মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে অভয় ও নিরাপত্তাধারীই হবে সবচেয়ে বড় নেয়ামতপূর্ণ ব্যক্তি। যার মোকাবেলায় দুনিয়ার সকল ভোগ-উপভোগ অতি তুচ্ছ মনে হবে। এই পরম নেয়ামত আল্লাহ শুধু দান করবেন তাঁর মুত্তাকী বান্দাদেরকে, যারা দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করেছেন,
তার ঝান্ডাতলে আশ্রয় নিয়েছেন, সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় দন্ডায়মান থেকে দ্বীন কায়েমের তরে জীবন উৎসর্গ করেছেব। কিয়ামত ও আখিরাতের কঠিন অবস্থাকে ভয় করেছেন। মহান প্রভু আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ঐ জীবনের ভীতি থেকে নিরাপদ রাখবেন।
প্রিয় ভাই ও বোন!
মুমিন মানেই সময় ও অবস্থার প্রতি নিয়ন্ত্রকধারী, এটা মহান প্রভুর সিফাত, তারঁ প্রিয় হাবিবের বৈশিষ্ট্য, ওরাসাতুল আম্বিয়ায়ের সর্বোত্তম আদর্শ। সুতরাং আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনের অনুষঙ্গগুলো ঐ চিরস্থায়ী জীবনেরই কিছু নিদর্শন। এই সকল অনুষঙ্গ থেকে যদি আমরা ঐ জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি গ্রহণ করতে পারি এবং বিস্মৃতি ও উদাসীনতা থেকে মুক্ত হয়ে ঐ কঠিন সময়ের জন্য প্রস্ততি গ্রহণ করতে পারি তাহলে সেটিই হবে বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে প্রতিটি কাজে, প্রতিটি স্থানে, আসমানী নিরাপত্তা লাভের তাওফীক দান করুন। আমীন। আমীন।
Comment