হ্বকের পথে ফিরে আসা মুমিনবান্দার সহজাত গুণ
প্রিয় ভাই ও বোন!
সত্যকে সমর্পিতচিত্তে গ্রহণ করা মুমিনবান্দার বৈশিষ্ট্য। সত্যের সামনে সমর্পিত হওয়ার দ্বারাই তো বান্দা মুমিনে রুপান্তরিত হয়, তার অস্তিত্ব বিকশিত হয়।
আর তা এ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে যে,
মিথ্যা ও শিরকের অন্ধকার বর্জন করেছি, সত্য ও তাওহীদের আলো গ্রহণ করেছি। তাওহীদের শর্তগুলো আঁকড়ে ধরা, শিরকের মলিনতাগুলো ঝেড়ে ফেলা, এ শ্লোগানে একমত হয়ে একত্ববাদের আলোয় আলোকিত হয়েছি। মিথ্যা ও বাতিলকে মূলৎপাটন করে সত্যের সামনে নতশীর হয়েছি । দ্বীনি যেকোনো বিষয়ে যখনই সত্য উদ্ভাসিত হয়, কায়মনোবাক্যে তা গ্রহণ করা, সর্বান্তকরণ পালনে অনুগত থাকা।
প্রিয় ভাই ও বোন!
এর দৃষ্টান্ত প্রচুর! ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে আপনি পেয়ে যাবেন ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী নবীজীর পুণ্যাত্মা সাহাবীগণের আত্মত্যাগের কথা, যার পরক্ষণেই তারা পেয়েছেন মহান প্রভুর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টির ঘোষণা-
رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ.
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারা আল্লাহর প্রতি খুশি।
দুনিয়াতেই যারা জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে ধন্য হয়েছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. ছিলেন তাঁদের মাঝে অন্যতম। তিনি ছিলেন ইহুদীদের ধর্মগুরু। মেধা ও প্রতিভা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় ঐ মহলে তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল সর্বজনস্বীকৃত। খ্যাতি ছিলো তুঙ্গস্পর্শী। সম্মান ছিলো উচ্চ শীখড়ে।
তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি জগতজোড়া প্রসিদ্ধ । নবুওতের সত্যতা যাঁচাইয়ের জন্য নবীজীর খেদমতে নিবেদন করেছিলেন তিন তিনটি প্রশ্ন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নবীসুলভ ঐশী জওয়াব দ্বারা পরিতৃপ্ত করে দিলেন ইবনে সালামার সত্যান্বেষী হৃদয়কে। ঈমানের ঢেউ বয়ে গেলো ইবনে সালামার ভগ্ন হৃদয়ে । হকের পিপাসু এই ইহুদী ধর্মগুরু ঈমানদীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে দিলেন ‘আশহাদু আন্নাকা রাসূলুল্লাহ’-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল।১,,
প্রিয় ভাই ও বোন!
এভাবেই সত্যকে মাথা পেতে বরণ করে নিতে হয়।
সত্যের সামনে নিজেকে নিঃশর্তভাবে সপে দেয়ার বহু লক্ষ্য-উপলক্ষ্য আসে মুমিনবান্দার জীবনে। নিজের মতের ভ্রান্তি নিশ্চিত হওয়ার পর তা বর্জন করতে কুণ্ঠিত না হওয়া মুমিনবান্দার এক মহিমান্বিত গুণ, চারিত্রিক এবং আদর্শিক বৈশিষ্ট্য। দীর্ঘদিন যাবৎ, এমনকি জীবনভর চলে আসা পথের ভ্রষ্টতা শরীয়তের দলীলের আলোকে যখন প্রমাণিত হয়ে যায় তখন সকল যুক্তিতর্ক, স্বার্থচিন্তা ও মনোবাসনাকে পিছনে ঠেলে মুমিনবান্দা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সঠিক পথটিই বেছে নেয়।
সত্যি বলতে কী, এর জন্য প্রয়োজন তাকওয়ায় উজ্জীবিত একখানা হৃদয়, এর জন্য প্রয়োজন তাকওয়ায় উজ্জীবিত সচ্ছ এক টুকরো গোশত। যা রব আমাদের ছোট্ট দেহটিতে ফুঁকে দিয়েছেন। তাকওয়ার ধন যার রুহে যত বেশি সঞ্চিত হবে, তত সহজেই সে হক এবং সত্যের সন্ধান পেয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কুরআনের সেই অমোঘ বাণীটিও স্মরণ করা যেতে পারে-
ইরশাদ হয়েছে,,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ تَتَّقُوا اللهَ یَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا وَّ یُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ* وَ اللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِیْمِ*.
অনুবাদঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর, তবে তিনি তোমাদের দান করবেন {সত্য-মিথ্যার মধ্যে} পার্থক্যকারী বস্তু। তোমাদের থেকে তোমাদের গোনাহ দূর করে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।০,,
প্রিয় ভাই ও বোন!
হক ও সত্য চিহ্নিত হয় শরীয়তের দলীলের আলোকে, বিজ্ঞ ও খোদাভীরু আলেমগণের গভীর ফিকিরে মাধ্যমে, ইনতিশারপূর্ণ মেধার প্রাণবন্ত যাঁচাইয়ে, যারা দলীলের যথাযথ বিশ্লেষণ এবং দলীলের মাধ্যমে সঠিক সমাধানের যোগ্যতা রাখেন। যদিও বিজ্ঞ আলেমগণের মাঝে শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়ে মতভিন্নতা হয়ে থাকে, কিন্তু সেটি সর্বদা দলীল নির্ভর এবং শাখাগত বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকে।
★★চতুর্থ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইবনু বাত্তাহ আল-উকবারি রাহি. ৩৮৭ হিজরী/ ও পঞ্চম শতাব্দীর ইমাম আবুল মুযাফফর আস-সামআনী রাহি. ৪৮৯ হিজরীতে ‘আল ইনতিসার লি-আসহাবিল হাদীস’ এ গ্রন্থে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেনঃ-
ইমাম আবুল মুযাফফর রাহি.-এর বক্তব্যের একাংশ-
وَبِهَذَا يظْهر مُفَارقَة الاخْتِلَاف فِي مَذَاهِب الْفُرُوع اخْتِلَاف العقائد فِي الْأُصُول، فَإنَّا وجدنَا أَصْحَاب رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَرَضي الله عَنْهُم من بعده اخْتلفُوا فِي أَحْكَام الدّين، فَلم يفترقوا وَلم يصيروا شيعًا، لأَنهم لم يفارقوا الدّين، ونظروا فِيمَا أذن لَهُم، فاختلفت أَقْوَالهم وآراؤهم فِي مسَائِل كَثِيرَة*...
এতে বোঝা যায়, দ্বীনের শাখাগত বিষয়ে মতভেদ আর মৌলিক আকীদার মধ্যে মতভেদ এক নয়। কেননা আমরা সাহাবায়ে কেরাম রা.-কে দ্বীনের শাখাগত বিষয়ে মতভেদ করতে দেখেছি। কিন্তু এতে তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাননি এবং বিভিন্ন দলে-উপদলে, জাতি-বিজাতিতে, বিভক্ত হয়ে পড়েননি। কারণ তাঁরা {দ্বীনের মৌলিক নীতিতে মতভেদ করে} দ্বীন থেকে সরে যাননি। আর ইজতিহাদ এবং মত প্রকাশ করেছেন যেখানে শরীয়ত ইজতিহাদ ও মতপ্রকাশে অনুমোদন করে সেখানে। ফলে এজাতীয় প্রচুর মাসআলায় তাঁদের বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে।
এজন্য আলেমদের দলীলভিত্তিক ইখতেলাফকে দলীলপরিপন্থী বলে উড়িয়ে দেওয়া কিংবা দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে ভিন্নমতকেও গ্রহণযোগ্য মতভিন্নতা সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা দুটোই প্রান্তিকতা ও গোমরাহী।
যাহোক! মূল কথা হলো, সঠিক পথে ফিরে আসা মুমিন বান্দার সহজাত গুণ। মুমিনবান্দার জন্য শোভনীয় নয় ভুল পথে হাঁটা, ভুল পথে অটল থাকা এবং সত্য জানার পরও অন্যকে ভুলের উপর দাওয়াত দেয়া, ভুল বিষয়ে তালকিন করা।
★★এমনই একটি ঘটনা তুলে ধরছি,,
আমর ইবনে উবাইদ রাহি. একজন মু‘তাযিলা আলেম ছিলেন। একটি বিষয়ে মত প্রকাশ করতে গিয়ে একদিন তিনি ভুল করে ফেললেন। মজলিসে উপস্থিত ছিলেন তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়াসেল ইবনে আতা। তিনি তাঁর সাথে একমত পোষণ না করে পাল্টা প্রশ্ন এবং তর্ক জুড়ে দিলেন। একপর্যায়ে আমর ইবনে উবাইদের নিকট ঐ বিষয়ে নিজের ভুল ধরা পড়ে গেলো। আর দেরি নয়; স্বভাবজাত অহমকে জয় করে সাথে সাথেই নিজের মতটি পরিত্যাগ করে সঠিক মতের দিকে ফিরে আসলেন, এই বলে যে- “হক আর আমার মাঝে কোনো দুশমনি নেই। সভাসদকে সাক্ষী রেখে আমি ঘোষণা করছি, এই বিষয়ে আমার যে অবস্থান ছিলো তা থেকে আমি সরে এসেছি এবং সঠিক অবস্থানটি গ্রহণ করছি।২,,
একজন মু‘তাযিলা বিদআতী হওয়া সত্ত্বেও নিজের ভুল স্পষ্ট হওয়ার সাথে সাথে ফিরে এলেন ভুল থেকে। শুধু ফিরেই আসেননি; জনতার সামনে ঘোষণা দিয়ে ফিরে এসেছেন এবং সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন- ‘ভুলকে’ আঁকড়ে ধরে থাকাটা কোনো গর্বের বিষয় নয়, বীরত্বও নয়, বরং ফিরে আসার মাঝেই প্রকাশ পায় বীরত্ব আর বাহাদুরি। হকের সাথে দুশমনি আর ভুল আঁকড়ে ধরে থাকার মাঝে নিজেরই ক্ষতি। তবে বহু ভালো হতো, তিনি যদি এতেজালের বিদআত থেকেও ফিরে আসতে পারতেন!
★★আরেকটি ঘটনা। উবাইদুল্লাহ ইবনুল হাসান আল-আম্বরী রাহি.। তিনি দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতে জন্মগ্রহণ করেন, মৃত্যুবরণ করেন ১৬৮ হিজরীতে। তিনি ছিলেন তৎকালীন বসরার বিজ্ঞ আলেম ও ফকীহ । একসময় কাজির পদেও অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সে কারণে লোকজনের অন্তরে ছিল তাঁর প্রতি বিশেষ এক শ্রদ্ধাবোধ। তাঁর একান্ত শিষ্য বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আব্দুর রহমান ইবনুল মাহদী রাহি. বর্ণনা করেন, তখন আমি ছোট। একদিন এক জানাযায় অংশগ্রহণ করলাম, হঠাৎ উস্তাদজির সাথে সাক্ষাৎ।
তাঁকে একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হলো, কিন্তু তিনি ভুল বললেন-আমি বললাম, আল্লাহ আপনাকে সঠিক বিষয়ের রাহনুমা করেন, বিষয়টি মনে হয় এমন নয়, সঠিক হলো এই । ক্ষণিকসময়ের জন্য তিনি মাথা নিচু করে একদম চুপ হয়ে গেলেন। তারপর মাথা তুলে বললেন, বৎস! তুমিই ঠিক বলেছ। কাজেই আমি নমনীয়তার সাথে আমার মত থেকে ফিরে আসলাম। তারপর বললেন-
لأن أكون ذنبا في الحق أحب إلي من أن أكون رأسا في الباطل
হক ও সত্যের একজন সাধারণ অধীনস্ত হয়ে থাকা আমার নিকট অধিক প্রিয় মিথ্যা ও বাতিলের সরদার হওয়ার চেয়ে।৩,,
প্রিয় ভাই ও বোন!
একটু ভাবুন তো ! তাকওয়ার ধন ছাড়া এসব কীভাবে সম্ভব! এটাই মুমিনের ভূষণ এবং তাকওয়ার নিদর্শন। হক স্পষ্ট হওয়ার পর ঘৃণাভরে বাতিলকে প্রত্যাখ্যান করে হকের পথে ছুঁটে আসা এক ঈমানী আদর্শ। ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলার এটি একটি কার্যকারী উপাদান। সর্বোপরি এটি ঈমানের অঙ্গও বটে। হাজারো প্রলোভন-প্ররোচনার সামনে মুমিন যেমন টলে যায় না, তেমনি শরীয়তের দলীলের আলোকে হক প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার পরও মুমিন মাথা পেতে তা বরণ করে নিতে কোনো সংকোচবোধ করে না। হক গ্রহণে বিলম্ব করে না এবং বাতিলকে ছুঁড়ে ফেলতে কুণ্ঠাবোধ করে না। কারণ মুমিনের বন্ধুত্ব হকের সাথে, বাতিলের সাথে নয়। তার বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গতা সত্যের সাথে, মিথ্যার সাথে নয়।
অস্বীকার করব না- ‘ভুল’ মানব জীবনের অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা। কিন্তু মুমিনবান্দার গুণ হলো ভুল থেকে ফিরে আসা। ভুলের অনুস্বরণে মুমিনবান্দা ক্ষণিকের জন্য পথ হারিয়ে বসতে পারে; কিন্তু ভুলকেই ‘পথ’ হিসাবে গ্রহণ করে না । ভুল আর মুমিনের সম্পর্ক হল অজ্ঞতার। ভুলকে ‘ভুল’ হিসাবে জানার সাথে সাথে মুমিন তা থেকে ফিরে আসে, সমর্পিত হয় হকের সামনে। এখন এ ভুল হতে পারে নিজের বা তার অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের; যার হাত ধরে সে পথ চলছে। এক্ষেত্রে মুমিন অনুসরণ করে হকের; ব্যক্তির নয়। কারণ, সে তো ব্যক্তির হাত ধরেছিল হকের অনুস্বরণের জন্য, হক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য নয়। তাই এক্ষেত্রে মুমিনবান্দা স্মরণ রাখে নবীজীর প্রিয় ফকীহ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর এ উপদেশ-
أَلَا لَا يقلدنّ أَحَدُكُمْ دِينَهُ رَجُلًا، إِنْ آمَنَ آمَنَ، وَإِنْ كَفَرَ كَفَرَ، فَإِنّهُ لَا أُسْوَةَ فِي الشر.
সাবধান! কেউ যেন তার ঈমান অন্যের কাঁধে ন্যস্ত না করে যে, এ ঈমান আনলে এ-ও ঈমান আনে। এ কুফরি করলে এ-ও কুফরি করে। কারণ মন্দের ক্ষেত্রে কেউ আদর্শ নয়। ৪,,
প্রিয় ভাই ও বোন!
আসুন, আমরা সালাফ ও পূর্বসূরী সাদিকীনদের জীবনচরিত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। হককে হকরুপে বরণ করি এবং হকের সঙ্গে থাকি। বাতিলকে বাতিলরুপে বর্জন করি এবং বাতিলের মূলোৎপাটনকারী হই। কুরআন-সুন্নাহর ধারক বাহক হক্কানী আলেম-উলামা যা কিছু বাতিল বলে চিহ্নিত করে দেন- দ্বিধা-সংকোচ ছাড়া তা বর্জন করি এবং বলে দেওয়া হককে হকরুপে গ্রহণ করি। কারণ হকের সাথে মুমিনের কোনো দুশমনি নেই। হ্বকই মুমিনের পথ, হ্বকই মুমিনের পাথেয়।
তথ্যসূত্রঃ
_____________..
১.সহীহ বুখারী, হাদীস নং৩৩২৯;
সিয়ারু আলামিন নুবালা ৪/৬৬
২.আলমুনইয়াতু ওয়াল আমাল, ইবনুল মুরতাযা, পৃ. ৫১; রিসালাতুল মুসতারশিদীন, টীকা : শায়েখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ পৃ. ১০৯,,
৩,,হিলইয়াতুল আউলিয়া ৯/৬;
তাহযীবুত তাহযীব ৭/৭
৪.আলই‘তিসাম, শাতিবী ২/৩৫৯
০,,সূরা আনফাল, আয়াত নং ২৯
প্রিয় ভাই ও বোন!
সত্যকে সমর্পিতচিত্তে গ্রহণ করা মুমিনবান্দার বৈশিষ্ট্য। সত্যের সামনে সমর্পিত হওয়ার দ্বারাই তো বান্দা মুমিনে রুপান্তরিত হয়, তার অস্তিত্ব বিকশিত হয়।
আর তা এ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে যে,
মিথ্যা ও শিরকের অন্ধকার বর্জন করেছি, সত্য ও তাওহীদের আলো গ্রহণ করেছি। তাওহীদের শর্তগুলো আঁকড়ে ধরা, শিরকের মলিনতাগুলো ঝেড়ে ফেলা, এ শ্লোগানে একমত হয়ে একত্ববাদের আলোয় আলোকিত হয়েছি। মিথ্যা ও বাতিলকে মূলৎপাটন করে সত্যের সামনে নতশীর হয়েছি । দ্বীনি যেকোনো বিষয়ে যখনই সত্য উদ্ভাসিত হয়, কায়মনোবাক্যে তা গ্রহণ করা, সর্বান্তকরণ পালনে অনুগত থাকা।
প্রিয় ভাই ও বোন!
এর দৃষ্টান্ত প্রচুর! ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে আপনি পেয়ে যাবেন ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী নবীজীর পুণ্যাত্মা সাহাবীগণের আত্মত্যাগের কথা, যার পরক্ষণেই তারা পেয়েছেন মহান প্রভুর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টির ঘোষণা-
رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ.
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারা আল্লাহর প্রতি খুশি।
দুনিয়াতেই যারা জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে ধন্য হয়েছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. ছিলেন তাঁদের মাঝে অন্যতম। তিনি ছিলেন ইহুদীদের ধর্মগুরু। মেধা ও প্রতিভা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় ঐ মহলে তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল সর্বজনস্বীকৃত। খ্যাতি ছিলো তুঙ্গস্পর্শী। সম্মান ছিলো উচ্চ শীখড়ে।
তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি জগতজোড়া প্রসিদ্ধ । নবুওতের সত্যতা যাঁচাইয়ের জন্য নবীজীর খেদমতে নিবেদন করেছিলেন তিন তিনটি প্রশ্ন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নবীসুলভ ঐশী জওয়াব দ্বারা পরিতৃপ্ত করে দিলেন ইবনে সালামার সত্যান্বেষী হৃদয়কে। ঈমানের ঢেউ বয়ে গেলো ইবনে সালামার ভগ্ন হৃদয়ে । হকের পিপাসু এই ইহুদী ধর্মগুরু ঈমানদীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে দিলেন ‘আশহাদু আন্নাকা রাসূলুল্লাহ’-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল।১,,
প্রিয় ভাই ও বোন!
এভাবেই সত্যকে মাথা পেতে বরণ করে নিতে হয়।
সত্যের সামনে নিজেকে নিঃশর্তভাবে সপে দেয়ার বহু লক্ষ্য-উপলক্ষ্য আসে মুমিনবান্দার জীবনে। নিজের মতের ভ্রান্তি নিশ্চিত হওয়ার পর তা বর্জন করতে কুণ্ঠিত না হওয়া মুমিনবান্দার এক মহিমান্বিত গুণ, চারিত্রিক এবং আদর্শিক বৈশিষ্ট্য। দীর্ঘদিন যাবৎ, এমনকি জীবনভর চলে আসা পথের ভ্রষ্টতা শরীয়তের দলীলের আলোকে যখন প্রমাণিত হয়ে যায় তখন সকল যুক্তিতর্ক, স্বার্থচিন্তা ও মনোবাসনাকে পিছনে ঠেলে মুমিনবান্দা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সঠিক পথটিই বেছে নেয়।
সত্যি বলতে কী, এর জন্য প্রয়োজন তাকওয়ায় উজ্জীবিত একখানা হৃদয়, এর জন্য প্রয়োজন তাকওয়ায় উজ্জীবিত সচ্ছ এক টুকরো গোশত। যা রব আমাদের ছোট্ট দেহটিতে ফুঁকে দিয়েছেন। তাকওয়ার ধন যার রুহে যত বেশি সঞ্চিত হবে, তত সহজেই সে হক এবং সত্যের সন্ধান পেয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কুরআনের সেই অমোঘ বাণীটিও স্মরণ করা যেতে পারে-
ইরশাদ হয়েছে,,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ تَتَّقُوا اللهَ یَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا وَّ یُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ* وَ اللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِیْمِ*.
অনুবাদঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর, তবে তিনি তোমাদের দান করবেন {সত্য-মিথ্যার মধ্যে} পার্থক্যকারী বস্তু। তোমাদের থেকে তোমাদের গোনাহ দূর করে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।০,,
প্রিয় ভাই ও বোন!
হক ও সত্য চিহ্নিত হয় শরীয়তের দলীলের আলোকে, বিজ্ঞ ও খোদাভীরু আলেমগণের গভীর ফিকিরে মাধ্যমে, ইনতিশারপূর্ণ মেধার প্রাণবন্ত যাঁচাইয়ে, যারা দলীলের যথাযথ বিশ্লেষণ এবং দলীলের মাধ্যমে সঠিক সমাধানের যোগ্যতা রাখেন। যদিও বিজ্ঞ আলেমগণের মাঝে শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়ে মতভিন্নতা হয়ে থাকে, কিন্তু সেটি সর্বদা দলীল নির্ভর এবং শাখাগত বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকে।
★★চতুর্থ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইবনু বাত্তাহ আল-উকবারি রাহি. ৩৮৭ হিজরী/ ও পঞ্চম শতাব্দীর ইমাম আবুল মুযাফফর আস-সামআনী রাহি. ৪৮৯ হিজরীতে ‘আল ইনতিসার লি-আসহাবিল হাদীস’ এ গ্রন্থে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেনঃ-
ইমাম আবুল মুযাফফর রাহি.-এর বক্তব্যের একাংশ-
وَبِهَذَا يظْهر مُفَارقَة الاخْتِلَاف فِي مَذَاهِب الْفُرُوع اخْتِلَاف العقائد فِي الْأُصُول، فَإنَّا وجدنَا أَصْحَاب رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَرَضي الله عَنْهُم من بعده اخْتلفُوا فِي أَحْكَام الدّين، فَلم يفترقوا وَلم يصيروا شيعًا، لأَنهم لم يفارقوا الدّين، ونظروا فِيمَا أذن لَهُم، فاختلفت أَقْوَالهم وآراؤهم فِي مسَائِل كَثِيرَة*...
এতে বোঝা যায়, দ্বীনের শাখাগত বিষয়ে মতভেদ আর মৌলিক আকীদার মধ্যে মতভেদ এক নয়। কেননা আমরা সাহাবায়ে কেরাম রা.-কে দ্বীনের শাখাগত বিষয়ে মতভেদ করতে দেখেছি। কিন্তু এতে তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাননি এবং বিভিন্ন দলে-উপদলে, জাতি-বিজাতিতে, বিভক্ত হয়ে পড়েননি। কারণ তাঁরা {দ্বীনের মৌলিক নীতিতে মতভেদ করে} দ্বীন থেকে সরে যাননি। আর ইজতিহাদ এবং মত প্রকাশ করেছেন যেখানে শরীয়ত ইজতিহাদ ও মতপ্রকাশে অনুমোদন করে সেখানে। ফলে এজাতীয় প্রচুর মাসআলায় তাঁদের বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে।
এজন্য আলেমদের দলীলভিত্তিক ইখতেলাফকে দলীলপরিপন্থী বলে উড়িয়ে দেওয়া কিংবা দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে ভিন্নমতকেও গ্রহণযোগ্য মতভিন্নতা সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা দুটোই প্রান্তিকতা ও গোমরাহী।
যাহোক! মূল কথা হলো, সঠিক পথে ফিরে আসা মুমিন বান্দার সহজাত গুণ। মুমিনবান্দার জন্য শোভনীয় নয় ভুল পথে হাঁটা, ভুল পথে অটল থাকা এবং সত্য জানার পরও অন্যকে ভুলের উপর দাওয়াত দেয়া, ভুল বিষয়ে তালকিন করা।
★★এমনই একটি ঘটনা তুলে ধরছি,,
আমর ইবনে উবাইদ রাহি. একজন মু‘তাযিলা আলেম ছিলেন। একটি বিষয়ে মত প্রকাশ করতে গিয়ে একদিন তিনি ভুল করে ফেললেন। মজলিসে উপস্থিত ছিলেন তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়াসেল ইবনে আতা। তিনি তাঁর সাথে একমত পোষণ না করে পাল্টা প্রশ্ন এবং তর্ক জুড়ে দিলেন। একপর্যায়ে আমর ইবনে উবাইদের নিকট ঐ বিষয়ে নিজের ভুল ধরা পড়ে গেলো। আর দেরি নয়; স্বভাবজাত অহমকে জয় করে সাথে সাথেই নিজের মতটি পরিত্যাগ করে সঠিক মতের দিকে ফিরে আসলেন, এই বলে যে- “হক আর আমার মাঝে কোনো দুশমনি নেই। সভাসদকে সাক্ষী রেখে আমি ঘোষণা করছি, এই বিষয়ে আমার যে অবস্থান ছিলো তা থেকে আমি সরে এসেছি এবং সঠিক অবস্থানটি গ্রহণ করছি।২,,
একজন মু‘তাযিলা বিদআতী হওয়া সত্ত্বেও নিজের ভুল স্পষ্ট হওয়ার সাথে সাথে ফিরে এলেন ভুল থেকে। শুধু ফিরেই আসেননি; জনতার সামনে ঘোষণা দিয়ে ফিরে এসেছেন এবং সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন- ‘ভুলকে’ আঁকড়ে ধরে থাকাটা কোনো গর্বের বিষয় নয়, বীরত্বও নয়, বরং ফিরে আসার মাঝেই প্রকাশ পায় বীরত্ব আর বাহাদুরি। হকের সাথে দুশমনি আর ভুল আঁকড়ে ধরে থাকার মাঝে নিজেরই ক্ষতি। তবে বহু ভালো হতো, তিনি যদি এতেজালের বিদআত থেকেও ফিরে আসতে পারতেন!
★★আরেকটি ঘটনা। উবাইদুল্লাহ ইবনুল হাসান আল-আম্বরী রাহি.। তিনি দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতে জন্মগ্রহণ করেন, মৃত্যুবরণ করেন ১৬৮ হিজরীতে। তিনি ছিলেন তৎকালীন বসরার বিজ্ঞ আলেম ও ফকীহ । একসময় কাজির পদেও অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সে কারণে লোকজনের অন্তরে ছিল তাঁর প্রতি বিশেষ এক শ্রদ্ধাবোধ। তাঁর একান্ত শিষ্য বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আব্দুর রহমান ইবনুল মাহদী রাহি. বর্ণনা করেন, তখন আমি ছোট। একদিন এক জানাযায় অংশগ্রহণ করলাম, হঠাৎ উস্তাদজির সাথে সাক্ষাৎ।
তাঁকে একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হলো, কিন্তু তিনি ভুল বললেন-আমি বললাম, আল্লাহ আপনাকে সঠিক বিষয়ের রাহনুমা করেন, বিষয়টি মনে হয় এমন নয়, সঠিক হলো এই । ক্ষণিকসময়ের জন্য তিনি মাথা নিচু করে একদম চুপ হয়ে গেলেন। তারপর মাথা তুলে বললেন, বৎস! তুমিই ঠিক বলেছ। কাজেই আমি নমনীয়তার সাথে আমার মত থেকে ফিরে আসলাম। তারপর বললেন-
لأن أكون ذنبا في الحق أحب إلي من أن أكون رأسا في الباطل
হক ও সত্যের একজন সাধারণ অধীনস্ত হয়ে থাকা আমার নিকট অধিক প্রিয় মিথ্যা ও বাতিলের সরদার হওয়ার চেয়ে।৩,,
প্রিয় ভাই ও বোন!
একটু ভাবুন তো ! তাকওয়ার ধন ছাড়া এসব কীভাবে সম্ভব! এটাই মুমিনের ভূষণ এবং তাকওয়ার নিদর্শন। হক স্পষ্ট হওয়ার পর ঘৃণাভরে বাতিলকে প্রত্যাখ্যান করে হকের পথে ছুঁটে আসা এক ঈমানী আদর্শ। ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলার এটি একটি কার্যকারী উপাদান। সর্বোপরি এটি ঈমানের অঙ্গও বটে। হাজারো প্রলোভন-প্ররোচনার সামনে মুমিন যেমন টলে যায় না, তেমনি শরীয়তের দলীলের আলোকে হক প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার পরও মুমিন মাথা পেতে তা বরণ করে নিতে কোনো সংকোচবোধ করে না। হক গ্রহণে বিলম্ব করে না এবং বাতিলকে ছুঁড়ে ফেলতে কুণ্ঠাবোধ করে না। কারণ মুমিনের বন্ধুত্ব হকের সাথে, বাতিলের সাথে নয়। তার বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গতা সত্যের সাথে, মিথ্যার সাথে নয়।
অস্বীকার করব না- ‘ভুল’ মানব জীবনের অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা। কিন্তু মুমিনবান্দার গুণ হলো ভুল থেকে ফিরে আসা। ভুলের অনুস্বরণে মুমিনবান্দা ক্ষণিকের জন্য পথ হারিয়ে বসতে পারে; কিন্তু ভুলকেই ‘পথ’ হিসাবে গ্রহণ করে না । ভুল আর মুমিনের সম্পর্ক হল অজ্ঞতার। ভুলকে ‘ভুল’ হিসাবে জানার সাথে সাথে মুমিন তা থেকে ফিরে আসে, সমর্পিত হয় হকের সামনে। এখন এ ভুল হতে পারে নিজের বা তার অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের; যার হাত ধরে সে পথ চলছে। এক্ষেত্রে মুমিন অনুসরণ করে হকের; ব্যক্তির নয়। কারণ, সে তো ব্যক্তির হাত ধরেছিল হকের অনুস্বরণের জন্য, হক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য নয়। তাই এক্ষেত্রে মুমিনবান্দা স্মরণ রাখে নবীজীর প্রিয় ফকীহ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর এ উপদেশ-
أَلَا لَا يقلدنّ أَحَدُكُمْ دِينَهُ رَجُلًا، إِنْ آمَنَ آمَنَ، وَإِنْ كَفَرَ كَفَرَ، فَإِنّهُ لَا أُسْوَةَ فِي الشر.
সাবধান! কেউ যেন তার ঈমান অন্যের কাঁধে ন্যস্ত না করে যে, এ ঈমান আনলে এ-ও ঈমান আনে। এ কুফরি করলে এ-ও কুফরি করে। কারণ মন্দের ক্ষেত্রে কেউ আদর্শ নয়। ৪,,
প্রিয় ভাই ও বোন!
আসুন, আমরা সালাফ ও পূর্বসূরী সাদিকীনদের জীবনচরিত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। হককে হকরুপে বরণ করি এবং হকের সঙ্গে থাকি। বাতিলকে বাতিলরুপে বর্জন করি এবং বাতিলের মূলোৎপাটনকারী হই। কুরআন-সুন্নাহর ধারক বাহক হক্কানী আলেম-উলামা যা কিছু বাতিল বলে চিহ্নিত করে দেন- দ্বিধা-সংকোচ ছাড়া তা বর্জন করি এবং বলে দেওয়া হককে হকরুপে গ্রহণ করি। কারণ হকের সাথে মুমিনের কোনো দুশমনি নেই। হ্বকই মুমিনের পথ, হ্বকই মুমিনের পাথেয়।
তথ্যসূত্রঃ
_____________..
১.সহীহ বুখারী, হাদীস নং৩৩২৯;
সিয়ারু আলামিন নুবালা ৪/৬৬
২.আলমুনইয়াতু ওয়াল আমাল, ইবনুল মুরতাযা, পৃ. ৫১; রিসালাতুল মুসতারশিদীন, টীকা : শায়েখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ পৃ. ১০৯,,
৩,,হিলইয়াতুল আউলিয়া ৯/৬;
তাহযীবুত তাহযীব ৭/৭
৪.আলই‘তিসাম, শাতিবী ২/৩৫৯
০,,সূরা আনফাল, আয়াত নং ২৯
Comment