Announcement

Collapse
No announcement yet.

|| পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রতিফল ||

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • || পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রতিফল ||

    পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রতিফল

    আল্লাহ রাব্বুল-আলামীন মানুষের উপর দয়া করে মা-বাবা রূপে অনেক বড় একটা নিয়ামত দান করে রেখেছেন। বাবা-মা যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ অনুগ্রহ, এজন্যেই আল্লাহ তাআলার অন্যান্য নিয়ামতের মতো এই মহান নিয়ামত তথা মা-বাবার যাবতীয় হক্ব এবং আদব ও সম্মানের জন্য মৌলিক শিক্ষা অবতীর্ণ করা হয়েছে। এই আসমানী শিক্ষা (মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও আদব) এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরেকটি কারণ এটাও যে, আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য পরকালে জান্নাত লাভ এবং দুনিয়াতে রিযিকের বৃদ্ধি হওয়া পিতামাতার আনুগত্য এবং তাঁদের প্রতি আদব ও সম্মানের সাথে জুড়ে দিয়েছেন।
    আল্লাহ তাআলা পিতামাতাকে চূড়ান্ত পর্যায়ের মর্যাদা দেয়ার লক্ষ্যে কুরআন মাজিদের সুরা —বনী-ইসরাঈলের ২৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করে বলেন; وَقَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاہُ وَبِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُہُمَاۤ اَوۡ کِلٰہُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّہُمَاۤ اُفٍّ وَّلَا تَنۡہَرۡہُمَا وَقُلۡ لَّہُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا "তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বল।"
    তাফসির ফি যিলালিল-কুরআনের মাঝে এই আয়াতের প্রেক্ষিতে বেশ চমৎকারভাবে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। কুরআন মাজীদ খুবই মনোমুগ্ধকর ভাষা এবং কোমল শব্দমালার মাধ্যমে সন্তানদের অন্তরে মাতাপিতার হক্ব পালনে যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করেছে।কেননা, মানুষের জীবন যখন স্বীয় গতিপথ ধরে চলতে থাকে, তখন সবার আগ্রহ-উদ্দীপনা সবইতো কেবল সামনের দিকেই থাকে। সকলেই পিছন ফিরে বাপ-মা’র দিকে না তাকিয়ে, সম্মুখপানে নিজের সন্তানসন্ততিদের দিকে ধাবিত হয়। সাধারণত অল্পসংখ্যক মানুষ-ই এমন হন, যাঁরা পিতামাতার প্রতি-ও পরিপূর্ণ দৃষ্টি রেখে চলতে সক্ষম হন। এজন্যই তো, কুরআনে-কারীম সন্তানদের বুঝশক্তি ও অনুভূতিকে জাগ্রত করে তাদেরকে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপলব্ধি করে দিয়েছে যে, তারা যেন, জীবনের এই চলার পথে পিছনের দিকেও দেখে এবং আব্বা-আম্মার সাথে উত্তম আচরণ করে। সকল মা-বাবা স্বভাবতই এমন যে, তাঁরা ছেলেমেয়েদের চিন্তাভাবনায় নিজেদের জীবন-ই নিঃশেষ করে দেন। যেরকমভাবে একটা শস্যদানা মাটিতে বিলীন হয়ে একটা অংকুরের আকৃতি ধারণ করে বড় হয়; এভাবেই মা-বাবাও সন্তানের ভবিষ্যতের সাথে মিশ্রিত হয়ে থেকে যায়। অর্থাৎ বাচ্চা তার বাবা-মায়ের সমস্ত শক্তি, তাঁদের প্রচেষ্টার ফলাফল ও সকল যোগ্যতা নিংড়ে নিজের ভিতর নিয়ে নেয়। যখন নাকি ছেলেরা স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে অতি দ্রুতই মা-বাবার এত এত কুরবানির কথা ভুলে যায়।আর যদি বাবামায়ের জীবনের সূর্য অস্ত না যায়, তাঁদের হায়াত যদি বাকি থাকে তাহলে এমন বাপ-মা বৃদ্ধাবস্থায় একদম অসহায়ত্বের জিন্দেগী কাটাতে থাকে। এভাবেই (মা-বাবাকে কষ্ট দেয়ার ফলে) সন্তানের জিন্দেগীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উলটপালট হওয়া শুরু হয়ে যায়।একারণেই আল-কুরআন সন্তানদেরকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে, তাদের ইন্দ্রিয়শক্তি জাগ্রত করে দিয়েছে। যাতে করে তারা পিতামাতার দুর্বলতা ও অক্ষমতা অনুভব করে তাঁদের প্রতি উফ শব্দ টুকুনও যেন না বলে। আদব ও সম্মানের প্রথম স্তর: মাতাপিতার আদব ও সম্মানের প্রথম স্তর এই যে, সন্তানের পক্ষ থেকে মা-বাবার ব্যাপারে এরকম কোনো শব্দ-ই ব্যবহার করা যাবে না, যার মধ্যে সমালোচনা, বিরক্তি, কষ্টদায়ক বা রাগের লেশমাত্র বাকি থাকবে। কেননা, এ ধরনের আচরণ বেয়াদবি ও তাদেরকে অপমান-অপদস্ত করার মধ্যে গণ্য হয়। বাবামায়ের সাথে সর্বদাই সম্মানের সাথে কথা বলতে হবে।
    নববী ইরশাদ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হুজুর নবীয়ে-মুকাররম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের থেকে মাতাপিতার মর্যাদা সম্পর্কে ইরশাদ নকল করে বলেন; "যেই হাদিসটি প্রসিদ্ধ লেখক মোল্লা আলী কারী রহ. স্বীয় কিতাব 'মিরকাতুল-মাফাতিহ' এর ৭ম খণ্ডের ৩০৯৮ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন": مَنْ أَصْبَحَ مُطِيعًا لِلّٰہِ فِي وَالِدَيْهِ، أَصْبَحَ لَهُ بَابَانِ مَفْتُوحَانِ مِنَ الْجَنَّةِ، وَإِنْ كَانَ وَاحِدًا فَوَاحِدًا، وَمَنْ أَمْسٰی عَاصِيًا لِلّٰہِ فِي وَالِدَيْهِ أَصْبَحَ لَهُ بَابَانِ مَفْتُوحَانِ مِنَ النَّارِ، إِنْ كَانَ وَاحِدًا فَوَاحِدًا۞ " " যে ব্যক্তির সকাল এই অবস্থায় উদিত হয়েছে য, সে আল্লাহ তাআলার হুকুম মেনে স্বীয় পিতামাতার হক সমুহ আদায় করেছে, তাহলে ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের দুইটি দরোজা খুলে দেয়া হয়। যদি মা-বাবার মধ্যে একজন জীবিত থাকেন এবং তাঁর সাথে যদি উত্তম ব্যবহার করে তাহলে ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের একটি দরোজা খুলে দেয়া হয়। আর যার সকাল এই হালতে উদিত হয় যে, সে আল্লাহ তাআলার হুকুমের পরোয়া না করে নিজের মাতাপিতার হক নষ্ট করেছে তাহলে ওই ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের দুইটি দরোজা খুলে দেয়া হয়। যদি মা-বাবার মধ্যে একজন জীবিত থাকেন এবং তাঁর সাথে যদি খারাপ আচরণ করে তাহলে ওই ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের একটি খুলে দেয়া হয়।"
    ইয়াস রহ.এর গল্প: আবু নাঈম ইস্পাহানীর প্রসিদ্ধ কিতাব হিলয়াতুল-আওলিয়ার ৩য় খণ্ডের ১২৩ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে: হযরত হুমাঈদ আত-ত্ববিল রহ. বলেন, যখন ইয়াস বিন মুয়াবিয়া রহিমাহুল্লাহ বসরা শহরে কাজী(বিচারক) হিসেবে নিযুক্ত হলেন তখন হযরত হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য গেলেন; যখন ইয়াস বিন মুয়াবিয়া রহ. ক্রন্দনরত ছিলেন। হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, কান্না করতেছেন কেন? ইয়াস রহিমাহুল্লাহ উত্তরে বলেন: “كَانَ لِي بَابَانِ مَفْتُوحَانِ مِنَ الْجَنَّةِ، فَأُغْلِقَ أَحَدُهُمَا۔” অর্থাৎ "আমার জন্য জান্নাতের দুটি দরোজা খোলা ছিল, এখন মায়ের মৃত্যুতে একটি দরোজা বন্ধ হয়ে গেলো! তাই কান্না করছি। " ওই ব্যক্তি কতই না ভাগ্যবান! যার মা-বাবা দুজনই বেঁচে আছে আর সে তাঁদের সাথে উত্তম আচরণ করে যাচ্ছে। এরকম সন্তানের জন্য বেহেশতের দুটি দরোজা খোলা আছে। রিযিক বৃদ্ধি: মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করলে রিযিক বৃদ্ধি হয় এবং রিযিকের মাঝে বরকত হয়।
    ইমাম ইবনে জাওযী রহ. "হযরত আনাস বিন মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহুর রিযিকের মধ্যে তারাক্কি ও বরকতের জন্য বর্ণিত রাসূলে-আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র ইরশাদ " স্বীয় লেখনী 'কিতাবুল-বিররি ওয়াছছিলা'র ৫৫ নং পৃষ্ঠায় লেখেন: مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُمِدَّ اللہُ فِي عُمْرِهٖ، وَيَزِيدَ فِي رِزْقِهٖ، فَلْيَبَرِّ وَالِدَيْهِ، وَلْيَصِلْ رَحِمَهُ۞ যে ব্যক্তি এটা চায় যে,আল্লাহ তাআলা তার হায়াত লম্বা করবেন এবং তার রিযিক বৃদ্ধি করে দিবেন তাহলে তার উচিৎ, সে যেন তার মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। ঈর্ষাযোগ্য পুরস্কার: আল্লাহ তাআলা পিতামাতার অনুগত সন্তানকে এরকম পুরষ্কার দেন(/দিবেন) যে, মানুষেরা তাঁর উপর ঈর্ষান্বিত হয়ে যায়(/পড়বে)।
    এমনই এক রেওয়ায়ত উল্লেখ আছে ইবনু আবিদ্দুনিয়া'র কিতাব মাকারিমুল-আখলাক এর ৮৫ নং পৃষ্ঠায়: عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ قَالَ: لَمَّا تَعَجَّلَ مُوسیٰ عَلَيْهِ السَّلَامُ إِلَى رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ، رَأَى فِي ظِلِّ الْعَرْشِ رَجُلًا فَغَبَطَهُ بِمَكَانِهِ، فَقَالَ: إِنَّ هَذَا لَكَرِيمٌ عَلَى رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ۔ فَسَألَ رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يُخْبِرَهُ بِاسْمِهِ، فَلَمْ يُخْبِرْهُ وَقَالَ: أُحَدِّثُكَ مِنْ عَمَلِهِ بِثَلَاثٍ: كَانَ لَا يَحْسُدُ النَّاسَ عَلَى مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ، وَكَانَ لَا يَعُقُّ وَالِدَيْهِ، وَلَا يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ۞ অর্থাৎঃ হযরত আমর ইবনে মায়মুন রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, হযরত মুসা আলাইহিস-সালাম যখন আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাতের জন্য গেলেন তখন তিনি আরশের ছায়ার নিচে এক লোককে দেখতে পেলেন, ওই লোকের অবস্থা এত ভালো ছিল যে, স্বয়ং মুসা আলাইহিস-সালামের তাঁর প্রতি ঈর্ষা এসে গেল। তিনি বললেন: নিশ্চয় এই ব্যক্তি তো তাঁর রবের কাছে বড় সম্মানিত। অতঃপর মুসা আলাইহিস-সালাম আল্লাহ তাআলার কাছে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন; আয় আল্লাহ! আপনার এই বান্দার নাম কি? আল্লাহ তাআলা তাকে নাম না জানালেন না এবং ইরশাদ করলেন, আমি তোমাকে ওই ব্যক্তির তিনটি আমল বলছি: ১) আমি স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে মানুষদের যে-সব নিয়ামত দান করেছি, এজন্য সে কারো উপর হিংসা করত না। ২) এ ব্যক্তি মাতাপিতার অবাধ্য হতো না। ৩) এবং চোগলখোরি করত না।
    পরিশিষ্ট: উপরোক্ত বর্ণনা সমুহ বিস্তারিত জানার পর এখন আমাদের জন্য এই বিষয়টি আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আমরা মুসলমানেরা যদি দুনিয়াতে সম্মানী জীবন এবং ধন-সম্পদ ও প্রসিদ্ধি অর্জন করতে চাই,এবং পরকালে আল্লাহ তাআলার আরশের ছায়ায় বসে ঈর্ষাযোগ্য মর্যাদা ও জান্নাত পেতে চাই, তাহলে আমাদেরকে মা-বাবার সাথে উৎকর্ষ আখলাক পরিদর্শনের পাবন্দি করতে হবে। আমরা আমাদের মাতাপিতার কুরবানী-সমুহের প্রতি এভাবে শ্রদ্ধাশীল হবো যে,সারাটাজীবন তাঁদের আনুগত্য করে যাব। আমরা বাবা-মাকে এভাবে সম্মান করবো যে, তাঁদের সাথে নম্র ভাষায়, উপযুক্ত শব্দচয়নের মাধ্যমে চক্ষু নিচু রেখে কথা বলবো। যদি আমরা মা-বাবার আনুগত্যের উদ্দেশ্যেই এই আমল গুলো করে যেতে পারি তাহলে আমরা দুনিয়া-আখিরাত তথা উভয়-জগতে কামিয়াব হয়ে যাব।ইনশাআল্লাহ।

    # সংগৃহীত ও ঈষৎ পরিমার্জিত
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 5 days ago.
Working...
X