আমি একজন দাঈ, খতিব ও আলেম হিসেবে রমজানের প্রস্তুতি কেমন হবে?
প্রিয় ভাই ও বোন!
প্রত্যেকজন মুমিনবান্দার দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান! শাহরু রমাদান। কুরআন নাযিলের মাস, কুরআন তেলাওয়াতের মাস, কুরআনকে জানা, বুঝা ও উপলব্ধির মাস। গাফেল বান্দা তার গাফিলতির ঘোর কাটানোর মাস। নাফরমান বান্দা রবের দিকে ফিরে আসার প্রাণবন্ত একটি মাস। মুমিন বান্দা তাঁর শরীরে ইমানী সতেজতা ফিরে আনার সুবর্ণ একটি সুযোগ । রুহানি খোরাক ও হালাল গিযা ভক্ষণের পাত্রকে পবিত্র করার পরিসরব্যপ্ত একটি সময়।
পবিত্র মাহে রমজানের ভাবমূর্তি ও প্রাণশক্তি টিকিয়ে রাখা মুমিন বান্দার অবশ্য কর্তব্য। এ মাস মুমিনবান্দার দেহ ও মনের সাথে উৎপুতভাবে জড়িত, অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, যার এক প্রান্তের সম্পর্ক নবুয়্যতে মুহাম্মাদীর ঝর্ণাধারার সাথে অন্যদিকের সম্পর্ক দ্বীন ও দুনিয়ার সাথে। সুতরাং প্রস্তুতি নিয়ে দেখুন, অন্যরকম এক প্রশান্তি আসবে হৃদয়ে।ফুরফুরে লাগবে সবকিছু। কেমন জানি একটু বেশিই উদ্যমতা অনুভব করবে। মাহে রমজানের আগমনে অন্যরকম এক রোমাঞ্চ উপলব্ধি করবে। এই তুমি এক নতুন তুমিতে রুপান্তরিত হবে।
প্রিয় ভাই ও বোন!
শাবান মাসের একেবারেই শেষপ্রান্তে আমরা। এই সময়ে সকল মুমিনবান্দার রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। কারণ যথাযথ প্রস্তুতির মাধ্যমেই ভালো কিছু করা সম্ভব। রমজান থেকে পরিপূর্ণ ফায়দা ও লাভবান হওয়া সম্ভব। তবে প্রত্যেক মুমিনবান্দা যেভাবে রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিবে, সেই তুলনায় একজন দাঈ, খতিব ও আলেমের রমজানের প্রস্তুতি হবে ভিন্ন। নিজের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার সাথে সাথে উম্মাহর বিষয়টি নিয়েও তাকে ভাবতে হবে।
একজন দাঈ ও খতিব রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে যা করতে পারেনঃ
এক. প্রথমত সবার মতই নিজে ঈমানী, আমলী ও চারিত্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। তাওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে পুতপবিত্র হয়ে নতুনভাবে একটি জীবন শুরু করার চেষ্টা করবে। মানসিকভাবে পূণ্যের বসন্ত থেকে সব ধরণের বরকত হাসিলের প্রস্তুতি নিবে।
দুই. নবী করীম সা. রমজান আসার আগেই সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতেন, অভিনন্দন জানাতেন, সুসংবাদ দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের সামনে মাহে রমজান চলে এসেছে। মুবারক মাস চলে এসেছে। এই মাসের অনেক ফজিলত রয়েছে।’ এভাবে তিনি সকলকে অভিনন্দন জানাতেন। তাই একজন দাঈ ও খতিব রাসূল সা. এর উত্তসূরি হিসেবে সবাইকে রমজানের সুসংবাদ ও অভিনন্দন জানাতে চেষ্টা করবে।
তিন. যারা হাফেজে কুরআন আছেন তারা ভালোভাবে কুরআন হিফজের বিষয়টির লক্ষ্য রাখতে পারেন। তারাবি এবার মসজিদে ব্যাপকভাবে না হলেও বাসায় বাসায় সতর্কতা অবলম্বন করত তারাবির আয়োজন করা যেতে পারে। এতে বাসার সকলের কুরআন শোনার সৌভাগ্য অর্জিত হবে। এছাড়া কুরআনের মাস হিসেবে সবারই কুরআন বিষয়ে একটু গুরুত্ব দেওয়া অতিব জরুরী। রমজানকে সামনে রেখে যারা গাইরে হাফেজ রয়েছেন তারা এই কয়েকদিনে আয়াতুস সিয়াম অর্থাৎ সূরা বাক্বারার ১৮৩ নাম্বার আয়াত থেকে ১৮৭ নাম্বার আয়াত পর্যন্ত হিফজ করে নিবেন। সেই সাথে অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর পড়বে। প্রতিটি শব্দ ও আয়াত নিয়ে কিছুক্ষণ তাদাব্বুরও করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ‘ফান্নুত তাদাব্বুর’ বা তাদাব্বুর করার পথ ও পদ্ধতি শীর্ষক কোনো কিতাব বা বই পড়ে নিলে বেশি উপকৃত হওয়া যাবে।
চার. সিয়াম বিষয়ক হাদিসগুলো হিফজ করা জরুরী। বিশেষত বুখারি, সহীহ মুসলিমের হাদিসগুলো হিফজ করা অবশ্য কর্তব্য। সেগুলোর অনুবাদ শিখে নেওয়া জরুরী। সেই সাথে কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেখে নিতে হবে। এগুলো আমাদের রমজান পালনে এবং অন্যকে জানাতে ইলমী শক্তি ও সাহস যোগাবে। একজন আলেম হিসেবে, দাঈ বা খতিব হিসেবে এ বিষয়টি খুবই প্রয়োজনীয়। রাসুল সা. রমজানটা কিভাবে কাটিয়েছেন সেটাও সিরাত থেকে এবং হাদিস অধ্যয়নের মাধ্যমে জেনে নেওয়া দরকার। এবিষয়ে দু একটি কিতাব পড়ে নেওয়া যায়।
বিশেষত ড. ফয়সাল বা‘দানির “হাকাযা কানান নাবিউ সা. ফি রমাদান” লেখা কিতাবটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ।
পাঁচ. আমরা রমজান আসলে বিভিন্ন ভাবেই সাধারণ মানুষের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হই। তারা আমাদের কাছে অনেক কিছু জানতে চায়। কিন্তু দুঃখজনক হল, আমরা ইলমী ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ না করার কারনে অনেক সময় সেধরনের প্রশ্নের উত্তর সঠিক, সুন্দর ও প্রাঞ্জল করে এবং মানুষ গ্রহণ করবে এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারি না। সাধারণ মানুষেরা রমজানে বিভিন্ন কারণেই আলেম, দাঈ ও খতীবদের খুব বেশি শরণাপন্ন হয়। তারা একটু পরপরই বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য প্রশ্ন করে। তখন সুন্দর উত্তর না পেলে হতাশ হয়। ভিন্ন কোথাও খুঁজতে থাকে। তাই এই দিক বিবেচনায় প্রথমত সিয়াম বিষয়ে কয়েকটি কিতাব অধ্যয়ন করে ফেলতে হবে। ছোট দু একটি রিসালা বা পুস্তিকা পড়তে হবে। সিয়াম, লাইলাতুল কদর, যাকাত ও ঈদ বিষয়ে আলাদা আলাদা কিতাব পড়তে হবে। এভাবে পড়তে পারলে নিজের মধ্যে একধরণের শক্তি আসবে। ভয় ও আশঙ্কা কেটে যাবে। অন্তত নিজের আমলগুলো জেনে বুঝে করা যাবে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলিষ্ঠতার সাথে উত্তর দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ফিকহের একটি কিতাব থেকে কিতাবুস সাওমও পাড়া যায়। বিশেষত ফিকহে হানাফির গুরুত্বপূর্ণ মতন হিসেবে কুদূরি এবং সেই সাথে আরবের কোনো প্রাথমিক কিতাব থেকেও পড়া যেতে পারে। এছাড়া বাংলায় লেখা একটি কিতাব পড়ে নিলে ভালো হবে। যারা শিক্ষক আছেন তারা সার্বিক সতর্কতা বজায় রেখে কুদূরির কিতাবুস সিয়ামের দরসও দিতে পারেন।
ছয়. দ্বিতীয়ত রমজানের প্রশ্নোত্তর সম্বলিত কোনো কিতাব বা বই পড়ে নিতে হবে। এতে মানুষেরা কি ধরণের প্রশ্ন করতে পারে তা জানা যাবে এবং সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পদ্ধতিও আয়ত্ব করা যাবে। সাথে দলীল প্রমান উপস্থাপন বা সূত্র উল্যেখ করার পদ্ধতি শেখা যাবে। এক্ষেত্রে আল কাউসারের রমজান বিষয়ক প্রশ্নোত্তরগুলো পড়ে নিবে। এছাড়া আরবদের বিভিন্ন ওয়েব সাইটে প্রশ্নের উত্তরগুলো দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই স্থান ও কালের ভিন্নতার বিষয়টি মাথায় রেখে অধ্যয়ন করতে হবে।
সাত. জনসেবামূলক কিছু উদ্যোগ গ্রহন করা। বিশেষত ইফতারি উপলক্ষে কিছু খেজুর, কিছু ছোলাসহ ইফতারি সামগ্রী হাদিয়া হিসেবে প্রতিবেশী ও আশে পাশের মানুষকে পাঠানো যেতে পারে। ইফতারের আয়োজন বা অনুষ্ঠান যেহেতু এ বছর করা যাবে না, তাই ইফতার পৌছানোর ব্যবস্থা করাই ভালো। এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রাখতে পারি। একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, ইফতারি করানো ছাওয়াবের কথা আমরা যেভাবে প্রচার করি সেভাবে এর আমলেও আমাদের এগিয়ে থাকা দরকার। এর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন সুন্দর একটি পরিকল্পনার। এক্ষেত্রে আমি যেই পরিকল্পনাটি করে থাকি তা হচ্ছে, রমজান শেষ হওয়ার পর থেকেই আগামী রমজানের জন্য একটি মাটির ব্যাংক বা পটে ইফতার প্রকল্প লিখে টাকা জমাতে থাকি। পরিবারের সবাইকে অংশগ্রহণ করতে বলি। এভাবে রমজান আসতে আসতে অনেক টাকা হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ। তখন সেটা দিয়ে কিছু রোজাদারকে ইফতারি করাতে চেষ্টা করি। দাঈ ও খতিব সাহেবরাও এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করে দেখতে পারেন। আশা করি এর মাধ্যমে ইফতার করানোর আমলটি সহজ হবে। অন্যের দারস্থ হওয়া লাগবে না। সাধ্যের মধ্যে সাহাবী আমল হয়ে যাবে।
আট. এ উত্তম সুযোগে সাধারণ দিন মজুর, খেটে খাওয়া, পথচারী নিরীহ মানুষের কাছে দ্বীনের আকুতিগুলো তুলে ধরবো। সাধারণত আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে পুরো বছরজুড়ে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাই আমরা এ বিষয়টি প্রাধান্য না দিয়ে সীরাতের বিষয়টি প্রাধান্য দিবো, গযওয়ার বিষয়টি সাবলীল ভাষায় তুলে ধরবো, জিহাদ ও শাহাদাতের ফজিলতের কথা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ। কমপক্ষে বড় বড় কয়েকটি যুদ্ধের আলোচনা তাদের মুখস্থ করিয়ে ফেলবো। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাও হতে পারে যুবক ও বৃদ্ধদের মাঝে।
পরিশেষে একই আওয়াজ,,
সার্বিকভাবে একজন দাঈ, খতিব বা তালিবুল ইলম ঈমানী ও ইলমী প্রস্তুতি নিয়ে রমজানকে বরণ করবে। আমল, কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে রমজানকে ফলপ্রসু করে তুলবে। সেই সাথে প্রতিবেশী ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে মানব সেবায়ও অবদান রাখতে চেষ্টা করবে। এভাবে অগ্রসর হলেই নবির উত্তরসূরি হিসেবে সমাজে তার বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় ভাই ও বোন!
প্রত্যেকজন মুমিনবান্দার দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান! শাহরু রমাদান। কুরআন নাযিলের মাস, কুরআন তেলাওয়াতের মাস, কুরআনকে জানা, বুঝা ও উপলব্ধির মাস। গাফেল বান্দা তার গাফিলতির ঘোর কাটানোর মাস। নাফরমান বান্দা রবের দিকে ফিরে আসার প্রাণবন্ত একটি মাস। মুমিন বান্দা তাঁর শরীরে ইমানী সতেজতা ফিরে আনার সুবর্ণ একটি সুযোগ । রুহানি খোরাক ও হালাল গিযা ভক্ষণের পাত্রকে পবিত্র করার পরিসরব্যপ্ত একটি সময়।
পবিত্র মাহে রমজানের ভাবমূর্তি ও প্রাণশক্তি টিকিয়ে রাখা মুমিন বান্দার অবশ্য কর্তব্য। এ মাস মুমিনবান্দার দেহ ও মনের সাথে উৎপুতভাবে জড়িত, অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, যার এক প্রান্তের সম্পর্ক নবুয়্যতে মুহাম্মাদীর ঝর্ণাধারার সাথে অন্যদিকের সম্পর্ক দ্বীন ও দুনিয়ার সাথে। সুতরাং প্রস্তুতি নিয়ে দেখুন, অন্যরকম এক প্রশান্তি আসবে হৃদয়ে।ফুরফুরে লাগবে সবকিছু। কেমন জানি একটু বেশিই উদ্যমতা অনুভব করবে। মাহে রমজানের আগমনে অন্যরকম এক রোমাঞ্চ উপলব্ধি করবে। এই তুমি এক নতুন তুমিতে রুপান্তরিত হবে।
প্রিয় ভাই ও বোন!
শাবান মাসের একেবারেই শেষপ্রান্তে আমরা। এই সময়ে সকল মুমিনবান্দার রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। কারণ যথাযথ প্রস্তুতির মাধ্যমেই ভালো কিছু করা সম্ভব। রমজান থেকে পরিপূর্ণ ফায়দা ও লাভবান হওয়া সম্ভব। তবে প্রত্যেক মুমিনবান্দা যেভাবে রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিবে, সেই তুলনায় একজন দাঈ, খতিব ও আলেমের রমজানের প্রস্তুতি হবে ভিন্ন। নিজের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার সাথে সাথে উম্মাহর বিষয়টি নিয়েও তাকে ভাবতে হবে।
একজন দাঈ ও খতিব রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে যা করতে পারেনঃ
এক. প্রথমত সবার মতই নিজে ঈমানী, আমলী ও চারিত্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। তাওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে পুতপবিত্র হয়ে নতুনভাবে একটি জীবন শুরু করার চেষ্টা করবে। মানসিকভাবে পূণ্যের বসন্ত থেকে সব ধরণের বরকত হাসিলের প্রস্তুতি নিবে।
দুই. নবী করীম সা. রমজান আসার আগেই সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতেন, অভিনন্দন জানাতেন, সুসংবাদ দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের সামনে মাহে রমজান চলে এসেছে। মুবারক মাস চলে এসেছে। এই মাসের অনেক ফজিলত রয়েছে।’ এভাবে তিনি সকলকে অভিনন্দন জানাতেন। তাই একজন দাঈ ও খতিব রাসূল সা. এর উত্তসূরি হিসেবে সবাইকে রমজানের সুসংবাদ ও অভিনন্দন জানাতে চেষ্টা করবে।
তিন. যারা হাফেজে কুরআন আছেন তারা ভালোভাবে কুরআন হিফজের বিষয়টির লক্ষ্য রাখতে পারেন। তারাবি এবার মসজিদে ব্যাপকভাবে না হলেও বাসায় বাসায় সতর্কতা অবলম্বন করত তারাবির আয়োজন করা যেতে পারে। এতে বাসার সকলের কুরআন শোনার সৌভাগ্য অর্জিত হবে। এছাড়া কুরআনের মাস হিসেবে সবারই কুরআন বিষয়ে একটু গুরুত্ব দেওয়া অতিব জরুরী। রমজানকে সামনে রেখে যারা গাইরে হাফেজ রয়েছেন তারা এই কয়েকদিনে আয়াতুস সিয়াম অর্থাৎ সূরা বাক্বারার ১৮৩ নাম্বার আয়াত থেকে ১৮৭ নাম্বার আয়াত পর্যন্ত হিফজ করে নিবেন। সেই সাথে অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর পড়বে। প্রতিটি শব্দ ও আয়াত নিয়ে কিছুক্ষণ তাদাব্বুরও করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ‘ফান্নুত তাদাব্বুর’ বা তাদাব্বুর করার পথ ও পদ্ধতি শীর্ষক কোনো কিতাব বা বই পড়ে নিলে বেশি উপকৃত হওয়া যাবে।
চার. সিয়াম বিষয়ক হাদিসগুলো হিফজ করা জরুরী। বিশেষত বুখারি, সহীহ মুসলিমের হাদিসগুলো হিফজ করা অবশ্য কর্তব্য। সেগুলোর অনুবাদ শিখে নেওয়া জরুরী। সেই সাথে কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেখে নিতে হবে। এগুলো আমাদের রমজান পালনে এবং অন্যকে জানাতে ইলমী শক্তি ও সাহস যোগাবে। একজন আলেম হিসেবে, দাঈ বা খতিব হিসেবে এ বিষয়টি খুবই প্রয়োজনীয়। রাসুল সা. রমজানটা কিভাবে কাটিয়েছেন সেটাও সিরাত থেকে এবং হাদিস অধ্যয়নের মাধ্যমে জেনে নেওয়া দরকার। এবিষয়ে দু একটি কিতাব পড়ে নেওয়া যায়।
বিশেষত ড. ফয়সাল বা‘দানির “হাকাযা কানান নাবিউ সা. ফি রমাদান” লেখা কিতাবটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ।
পাঁচ. আমরা রমজান আসলে বিভিন্ন ভাবেই সাধারণ মানুষের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হই। তারা আমাদের কাছে অনেক কিছু জানতে চায়। কিন্তু দুঃখজনক হল, আমরা ইলমী ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ না করার কারনে অনেক সময় সেধরনের প্রশ্নের উত্তর সঠিক, সুন্দর ও প্রাঞ্জল করে এবং মানুষ গ্রহণ করবে এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারি না। সাধারণ মানুষেরা রমজানে বিভিন্ন কারণেই আলেম, দাঈ ও খতীবদের খুব বেশি শরণাপন্ন হয়। তারা একটু পরপরই বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য প্রশ্ন করে। তখন সুন্দর উত্তর না পেলে হতাশ হয়। ভিন্ন কোথাও খুঁজতে থাকে। তাই এই দিক বিবেচনায় প্রথমত সিয়াম বিষয়ে কয়েকটি কিতাব অধ্যয়ন করে ফেলতে হবে। ছোট দু একটি রিসালা বা পুস্তিকা পড়তে হবে। সিয়াম, লাইলাতুল কদর, যাকাত ও ঈদ বিষয়ে আলাদা আলাদা কিতাব পড়তে হবে। এভাবে পড়তে পারলে নিজের মধ্যে একধরণের শক্তি আসবে। ভয় ও আশঙ্কা কেটে যাবে। অন্তত নিজের আমলগুলো জেনে বুঝে করা যাবে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলিষ্ঠতার সাথে উত্তর দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ফিকহের একটি কিতাব থেকে কিতাবুস সাওমও পাড়া যায়। বিশেষত ফিকহে হানাফির গুরুত্বপূর্ণ মতন হিসেবে কুদূরি এবং সেই সাথে আরবের কোনো প্রাথমিক কিতাব থেকেও পড়া যেতে পারে। এছাড়া বাংলায় লেখা একটি কিতাব পড়ে নিলে ভালো হবে। যারা শিক্ষক আছেন তারা সার্বিক সতর্কতা বজায় রেখে কুদূরির কিতাবুস সিয়ামের দরসও দিতে পারেন।
ছয়. দ্বিতীয়ত রমজানের প্রশ্নোত্তর সম্বলিত কোনো কিতাব বা বই পড়ে নিতে হবে। এতে মানুষেরা কি ধরণের প্রশ্ন করতে পারে তা জানা যাবে এবং সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পদ্ধতিও আয়ত্ব করা যাবে। সাথে দলীল প্রমান উপস্থাপন বা সূত্র উল্যেখ করার পদ্ধতি শেখা যাবে। এক্ষেত্রে আল কাউসারের রমজান বিষয়ক প্রশ্নোত্তরগুলো পড়ে নিবে। এছাড়া আরবদের বিভিন্ন ওয়েব সাইটে প্রশ্নের উত্তরগুলো দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই স্থান ও কালের ভিন্নতার বিষয়টি মাথায় রেখে অধ্যয়ন করতে হবে।
সাত. জনসেবামূলক কিছু উদ্যোগ গ্রহন করা। বিশেষত ইফতারি উপলক্ষে কিছু খেজুর, কিছু ছোলাসহ ইফতারি সামগ্রী হাদিয়া হিসেবে প্রতিবেশী ও আশে পাশের মানুষকে পাঠানো যেতে পারে। ইফতারের আয়োজন বা অনুষ্ঠান যেহেতু এ বছর করা যাবে না, তাই ইফতার পৌছানোর ব্যবস্থা করাই ভালো। এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রাখতে পারি। একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, ইফতারি করানো ছাওয়াবের কথা আমরা যেভাবে প্রচার করি সেভাবে এর আমলেও আমাদের এগিয়ে থাকা দরকার। এর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন সুন্দর একটি পরিকল্পনার। এক্ষেত্রে আমি যেই পরিকল্পনাটি করে থাকি তা হচ্ছে, রমজান শেষ হওয়ার পর থেকেই আগামী রমজানের জন্য একটি মাটির ব্যাংক বা পটে ইফতার প্রকল্প লিখে টাকা জমাতে থাকি। পরিবারের সবাইকে অংশগ্রহণ করতে বলি। এভাবে রমজান আসতে আসতে অনেক টাকা হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ। তখন সেটা দিয়ে কিছু রোজাদারকে ইফতারি করাতে চেষ্টা করি। দাঈ ও খতিব সাহেবরাও এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করে দেখতে পারেন। আশা করি এর মাধ্যমে ইফতার করানোর আমলটি সহজ হবে। অন্যের দারস্থ হওয়া লাগবে না। সাধ্যের মধ্যে সাহাবী আমল হয়ে যাবে।
আট. এ উত্তম সুযোগে সাধারণ দিন মজুর, খেটে খাওয়া, পথচারী নিরীহ মানুষের কাছে দ্বীনের আকুতিগুলো তুলে ধরবো। সাধারণত আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে পুরো বছরজুড়ে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাই আমরা এ বিষয়টি প্রাধান্য না দিয়ে সীরাতের বিষয়টি প্রাধান্য দিবো, গযওয়ার বিষয়টি সাবলীল ভাষায় তুলে ধরবো, জিহাদ ও শাহাদাতের ফজিলতের কথা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ। কমপক্ষে বড় বড় কয়েকটি যুদ্ধের আলোচনা তাদের মুখস্থ করিয়ে ফেলবো। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাও হতে পারে যুবক ও বৃদ্ধদের মাঝে।
পরিশেষে একই আওয়াজ,,
সার্বিকভাবে একজন দাঈ, খতিব বা তালিবুল ইলম ঈমানী ও ইলমী প্রস্তুতি নিয়ে রমজানকে বরণ করবে। আমল, কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে রমজানকে ফলপ্রসু করে তুলবে। সেই সাথে প্রতিবেশী ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে মানব সেবায়ও অবদান রাখতে চেষ্টা করবে। এভাবে অগ্রসর হলেই নবির উত্তরসূরি হিসেবে সমাজে তার বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
Comment