গোপন গুনাহের পরিণাম ও তা থেকে বাঁচার উপায়!!
اَلْحَمْدُ لله رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى أَشْرَفِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ، وَعَلَى آله وَأَصْحَابِهِ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ، أَمَّا بَعْدُ
فأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم، بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
يَسْتَخْفُونَ مِنَ النَّاسِ وَلَا يَسْتَخْفُونَ مِنَ اللَّهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرْضَى مِنَ الْقَوْلِ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطًا
وقال تعالى إِنَّ اللّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللّهِ فَاسْتَبْشِرُواْ بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
মুহতারাম ভাইয়েরা, দুনিয়ার সাধারণ একটি নিয়ম, যা আমরা সব সময়ই দেখে থাকি, উন্নত রুচির অধিকারী কোনো ক্রেতা ত্রুটি যুক্ত পণ্য কখনোই কিনে না। পণ্যে সামান্যতম খুঁত থাকলে তা দেখতে বাহ্যত যত সুন্দর আর আকর্ষনীয়ই হোক তা সে কিনতে কিছুতেই রাজি হয় না।
মুহতারাম ভাই, আমরা সবাই তো আসলে এক একটি পণ্য। আমাদের ক্রেতা হলেন খোদ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। যখন দুনিয়ার সাধারণ কোনো ব্যক্তি ত্রুটি যুক্ত পণ্য কিনতে চায় না তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কীভাবে ত্রুটিযুক্ত পণ্য কিনবেন, তা তো কল্পনাই করা যায় না।
আমরা সবাই জানি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দৃষ্টিতে বান্দার মাঝে থাকা একমাত্র খুঁত ও ত্রুটি হল, তার মাঝে থাকা গুনাহগুলো। তার বাহ্যিক আকৃতি যেমনই হোক। তার গুনাহই হল তার মাঝে থাকা একমাত্র খুঁত। এ খুঁত যার মাঝে যত বেশি থাকে সে আল্লাহর দৃষ্টিতে তত বেশি অচল পণ্য বলে গণ্য হয়। বাহ্যত সে যতই আকর্ষনীয় হোক। তার মেধা ও বুদ্ধি যতই প্রখর হোক। এমনকি তার জাহেরি আমল যতই সুন্দর হোক।
বান্দার মাঝে থাকা বড় বড় খুঁতের মধ্যে অন্যতম একটি খুঁত হল, তার গোপন গুনাহ। আরবিতে যাকে বলে, ذُنوبُ الخَلَوَات
আল্লাহ তাআলা তাওফিক দিলে আজ এ বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা মুযাকারা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। এ প্রসঙ্গে দুই আড়াই বছর আগে ভাইদের খেদমতে মুখতাসার কিছু কথা আরজ করেছিলাম, এ বিষয়ে সালাফদের কিছু বাণীও পেশ করেছিলাম। আপনাদের কারো মনেও থাকতে পারে। ওই কথাগুলোই আরেকটু খুলে বলার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইখলাস ও ইতকানের সাথে কথাগুলো বলার এবং আমাদের সবাইকে সে মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
মুহতারাম ভাই, আমাদের ওপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কত বড় ইহসান ও দয়া যে, এমন একটা যুগে যখন কিনা চারদিকে শুধু ফেতনা আর ফেতনা, আল্লাহ তাআলা আমাদের মতো কিছু কমযোর বান্দাকে দ্বীন কায়েমের নববী মেহনতের সাথে যুক্ত হওয়ার এবং টুটা ফাটা কিছু খেদমত করার তাওফিক দিচ্ছেন, আমরা এ নেয়ামতের যত শুকরিয়াই আদায় করি না কেন তা কমই হবে।
মুহতারাম ভাই, আমাদের প্রত্যেকের দিলের আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ যেন আমাকে তাঁর দীনের জন্য কবুল করেন। আমার আমলগুলো যেন আল্লাহ কবুল করে নেন। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আমি যেন দীনের পথে অবিচল থাকতে পারি, এ আকাঙ্ক্ষা আমার, আপনার, আমাদের সবার। আমাদের কেউই হয়তো এর ব্যতিক্রম হবে না।
প্রিয় ভাই আমার! আমাদের দিলের এ আকাঙ্ক্ষাটা কখন পূর্ণ হবে? এর জন্য বাহ্যিক কিছু জিনিস তো অবশ্যই লাগবে। দুনিয়া যেহেতু দারুল আসবাব-বাহ্যিক উপকরণের স্থান তাই এখানে বাহ্যিক কিছু আসবাব তো অবশ্যই লাগবে। তাই না?
আল্লাহ যেন আমাকে আপনাকে তাঁর দীনের জন্য কবুল করেন। আমার, আপনার ছোট বড় সকল আমল কবুল করেন এবং জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত দীনের পথে অবিচল রাখেন, এ সবের জন্য অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে, নিজেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে একদম নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত রাখা।
মামুর ভাইদের কাছে নিখুঁত রাখা? না।
মাসউল ভাইদের কাছে নিখুঁত রাখা? না, তাও না।
বরং আলিমুল গাইবি ওয়াশ শাহাদাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে নিখুঁত রাখা।
আর এটি জানা কথা, যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে নিখুঁত থাকবে সে সবার কাছেই নিখুঁত থাকবে।
প্রিয় ভাই আমার! ছোট বড় প্রতিটি গুনাহ বান্দার মাঝে থাকা এক একটি খুঁত। গুনাহ যত বড় হয় সেই খুঁতের আকার তত বড় হয়। আল্লাহর কাছে তার জঘন্যতা তত বেশি হয়।
এ জন্য আমাদের কর্তব্য, প্রতি মুহুর্তে সতর্ক থাকা, ছোট বড় কোনো ধরণের খুঁত যেন আমার মধ্যে না পড়ে। বড় খুঁত তো না-ই, ছোট থেকে ছোট কোনো খুঁতও যেন আমার মধ্যে না পড়ে সারাক্ষণ সেই চেষ্টা আমাকে করতে হবে।
আল্লাহ না করেন, আল্লাহ না করেন, শয়তানের ধোকায় পড়ে যদি কখনো কোনো খুঁত আমার মধ্যে পড়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা দূরে করে ফেলব। একটুও যেন দেরি না হয়।
প্রিয় ভাই আমার! একটু বলুন তো, আমার মালিক যখন আমার ত্রুটি যুক্ত বকরির কুরবানি গ্রহণ করেন না, তো আমি নিজে যদি ত্রুটি যুক্ত হই তাহলে 'ত্রুটি যুক্ত আমাকে' তিনি কীভাবে গ্রহণ করবেন?
এ জন্য ভাই যদি কখনো আমাদের থেকে কোনো ভুল হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে নেব। অন্তর থেকে তাওবা করব। মুখের তাওবা না। অন্তর থেকে তাওবা। কাজটি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে সেই কাজের জন্য অন্তর থেকে অনুতপ্ত হয়ে, সামনে না করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করব ইনশাআল্লাহ।
এর সাথে হযরত থানবি রহ.-এর বলা আরও একটি কাজ করার চেষ্টা করব। তা হল, নফসের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য কিছু জরিমানা ধার্য করা। কয়েক রাকাত নামায, কিংবা কয়েকটা রোযা। কিংবা কিছু সাদাকা। এর পরিমাণটা যেন এমন হয় যা দ্বারা নফসের ওপর চাপ পড়ে। একদম হালকা কিছু হলে চাপ পড়বে না ফলে ফায়েদাও তেমন হবে না। বাঁকা নফসকে সোজা করার জন্য এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি।
ভাই, আমি আপনি কাজ যা-ই করি না কেন, সবার আগে যে কাজটি সবচেয়ে বেশি জরুরি তা হল, নিজেকে নিখুঁত রাখা। গুনাহ মুক্ত রাখা। ছোট বড় সব ধরণের গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। জাহেরি-বাতেনি, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরণের গুনাহ ও আত্মিক ব্যাধি থেকে নিজে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র রাখা।
আল্লাহ হেফাজত করেন, আমাদের কারো কারো মাঝে 'ইউটিউব ব্যাধি' আছে। কারো মাঝে আছে 'ফেসবুক ব্যাধি'। বিনা প্রয়োজনে কিংবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত এসবের ব্যবহার কেবল আমাদের জন্য না বরং সকল মুমিনের জন্যই আত্মিক অনেক বড় ব্যাধি।
এগুলোকে শুধু ব্যাধি বললে ভুল হবে, বলতে হবে ব্যাধির জননী। শুধু মরয না বরং উম্মুল আমরায।
'ফেসবুক আর ইউটিউব ব্যাধি' থেকেই জন্ম নেয় কুনজরের ব্যাধি, মুমিন ভাইদের প্রতি কুধারনার ব্যাধি, গিবত-শেকায়েতের ব্যাধি, হিংসা-বিদ্বেষসহ আরও নানা রকমের আত্মিক ব্যাধি। যা ধীরে ধীরে আমাদের ঈমান-আমল একদম ছারখার করে ছাড়ে।
এ জন্য ভাই, আমাদের সবার কর্তব্য, এসবের ব্যাপারে নিজেকে পূর্ণ সতর্ক রাখা। ফেসবুকের ব্যাপারে আপনার মাসউল ভাইয়ের পক্ষ থেকে দেয়া আপনার খাস কোনো যিম্মাদারি না থাকলে ওটা একদম ওপেনই করবে না।
ইউটিউবে জরুরি কিছু দেখতে হলে খুবই সতর্কতার সাথে দেখবেন। জরুরি জিনিস দেখা শেষ, তো সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে যাবেন। অযথা একটা মুহুর্তও ওখানে থাকবেন না। তা না হলে নিজের অজান্তেই আপনি শয়তানের ফাঁদে ফেঁসে যেতে পারেন।
সর্তকতার একটা উপায় এমন হতে পারে, ইউটিউবে কিছু দেখার সময় অল্প আওয়াজে অন্য কোনো একটা অডিও অন করে রাখলেন। যার আওয়াজ হালকা হালকা কানে আসতে থাকবে। এতে শয়তান আপনাকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। উদাহরণত, শাইখ খালেদ রাশেদ ফাক্কাল্লাহু আসরাহু-এর رئيتُ النبيَّ يبكي 'নবিজীকে আমি কাঁদতে দেখেছি' নামের আরবি খুতবাটা। কিংবা এ ধরণের কোনো কিছু। যার আওয়াজ হালকা হালকা কানে এলেও শয়তান অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়ার সুযোগ পাবে না ইনশাআল্লাহ।
মনে রাখবেন ভাই, খুঁত যদিও সবার জন্যই খুঁত। তবে আমার আপনার জন্য ছোট খুঁতও অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে যেতে পারে। ছোট একটা খুঁতও আমার আপনার জন্য এ পথ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়ে যেতে পারে।
যিম্মাদারির দিক দিয়ে যিনি যত উঁচুতে আছেন তার মাঝে থাকা খুঁতের ক্ষতি তত বেশি হবে। ময়লা দেয়ালের যত ওপরে থাকে চারপাশে দুর্গন্ধও তত বেশি ছড়ায়। বৃষ্টি হলে সেই ময়লা দেয়ালের তত বেশি অংশ নষ্ট করে ফেলে। এজন্য সাবধান ভাই! সাবধান!
'আমার আপনার জন্য ছোট খুঁতও অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে যেতে পারে', এ কথাটি বুঝার জন্য মুহতারাম শাইখুল হাদিস আবু ইমরান হাফি.-এর একটি উক্তি আপনাদের শোনাচ্ছি।
একবার শাইখ বললেন, কোনো পুকুর যখন আকারে ছোট থাকে তখন সেখানে সামান্য ময়লা (অপবিত্র জিনিস) পড়লেই গোটা পুকুর অপবিত্র হয়ে যায়। কিন্তু সেই পুকুরটিই যখন একসময় বড়সড় হয়ে যায় তখন অনেক ময়লা পড়লেও তেমন কিছুই হয় না।
আমাদের জামাতটিকেও বর্তমানে ছোট একটা পুকুরের মতো ধরা যায়। এখন যদি কারো মাঝে সামান্য ময়লাও থাকে তাহলে সেই সামান্য ময়লার কারণে পুরো জামাত ময়লাযুক্ত হয়ে যেতে পারে।
শাইখের কথার সাথে আরেকটু কথা যুক্ত করা যায়।
পুকুর যতদিন ছোট থাকে তত দিন পুকুরের মালিক সেখানে সামান্য ময়লা পড়লেই দ্রুত উঠিয়ে ফেলে। ময়লাটি সেখানে পড়ে থাকতে দেয় না। যেন এর কারণে গোটা পুকুর ময়লা না হয়ে যায়। ঠিক তেমনিভাবে শতভাগ সহী নববী মানহাজের ওপর অটল অবিচল কোনো দীনী জামাতের আসল মালিক তো হলেন আল্লাহ। তাই এখন যদি আমাদের কারো মাঝে সামান্য ময়লাও থাকে তাহলে এ জামাতের মালিক তাকে অবশ্যই এখানে থেকে সরিয়ে দেবেন। যেন তার ময়লার কারণে পুরো জামাত ময়লাযুক্ত না হয়ে যায়।
গোপন গুনাহের কুফল
প্রিয় ভাই আমার! গুনাহ তো গুনাহই, বাহ্যত তা যতই ছোট হোক এবং তা যেভাবেই করা হোক। প্রকাশ্যে করা হোক কিংবা গোপনে। কিন্তু কোনো গুনাহ যখন গোপনে করা হয় তখন সেই গুনাহের জঘন্যতা সাধারণ গুনাহের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে যায়। কারণ, তখন বান্দার সামনে থাকে একমাত্র আল্লাহ। আর কেউ থাকে না। গোপনে গুনাহ করার অর্থই হল, তার কাছে নাউযুবিল্লাহ আল্লাহর কোনো মূল্যেই নেই। সে আল্লাহকে কোনো দামই দিচ্ছে না।
মানুষের দৃষ্টির আড়ালে, গোপনে গুনাহ করা অন্তরে নিফাক থাকার অন্যতম একটি লক্ষণ।
মুনাফিকদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
يَسْتَخْفُونَ مِنَ النَّاسِ وَلَا يَسْتَخْفُونَ مِنَ اللَّهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرْضَى مِنَ الْقَوْلِ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطًا
তারা মানুষের কাছ থেকে নিজেকে গোপন করে আর আল্লাহর কাছ থেকে গোপন করে না অথচ তিনি তাদের সাথেই থাকেন, যখন তারা রাতের বেলা এমন কথার পরিকল্পনা করে যা আল্লাহ পছন্দ করেন না। তারা যা করছে আল্লাহ সবই বেষ্টন করে আছেন। -সূরা নিসা (০৪) : ১০৮
গোপন গুনাহের কারণে বান্দার সকল নেক আমল একদম বরবাদ হয়ে যেতে পারে।
সুনানে ইবনে মাজাহতে সহী সনদে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে,
عَنْ ثَوْبَانَ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَنَّهُ قَالَ : لأَعْلَمَنَّ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِحَسَنَاتٍ أَمْثَالِ جِبَالِ تِهَامَةَ بِيضًا فَيَجْعَلُهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ هَبَاءً مَنْثُورًا . قَالَ ثَوْبَانُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا جَلِّهِمْ لَنَا أَنْ لاَ نَكُونَ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لاَ نَعْلَمُ . قَالَ : أَمَا إِنَّهُمْ إِخْوَانُكُمْ وَمِنْ جِلْدَتِكُمْ وَيَأْخُذُونَ مِنَ اللَّيْلِ كَمَا تَأْخُذُونَ وَلَكِنَّهُمْ أَقْوَامٌ إِذَا خَلَوْا بِمَحَارِمِ اللَّهِ انْتَهَكُوهَا .
সাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আমার উম্মতের এমন কিছু লোক সম্পর্কে জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালা সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সকল নেকআমল বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেবেন।
সাওবান রাযি. বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় আমাদেরকে দিন, পরিস্কারভাবে বলুন, তারা কারা? যেন নিজের অজান্তে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই। তিনি বলেন, তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে, নির্জনে আল্লাহর হারামকৃত কাজে লিপ্ত হবে। সুনানে ইবনে মাজাহ ৪২৪৫ (হাদিসটি সহীহ)
বর্তমান সময়ে গোপন গুনাহের সরঞ্জাম অনেক সহজলভ্য হয়ে গেছে আর এ কারণে এ গুনাহ বর্তমানে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যাপক ভাবে মানুষ গোপন গুনাহে জড়িয়ে পড়ছে। কী যুবক আর কী বৃদ্ধ, কী ছেলে আর কী মেয়ে, সবাই এতে লিপ্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যুবক তরুণদের মধ্যে এ গুনাহে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
বাহ্যত দীনদার এমন অনেকেও এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আমাদের মতো যারা আছে, মানুষ যাদেরকে একটু ভালো মানুষ ভাবে, ভালো মানুষের বেশধারী এই আমরাও মাঝে মধ্যে এই জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়ে যাই।
যাদের বাহ্যিক আকৃতি নেকলোকদের মতো, যারা মানুষের সামনে ইচ্ছেকৃত ভাবে কোনো গুনাহ করে না এমন লোকেরা যখন মানুষের দৃষ্টির আড়ালে গুনাহে লিপ্ত হয় তখন তাদের অবস্থা হয় সবচেয়ে ভয়াবহ।
প্রকাশ্য গুনাহের চেয়ে গোপন গুনাহ অনেক বেশি ভয়াবহ। কারণ, গোপন গুনাহ করা হয় জেনে বুঝে, আয়োজন করে, ইচ্ছাকৃতভাবে। ভুলে কেউ গোপন গুনাহতে লিপ্ত হয় না। গোপন গুনাহ মানুষ জেনে বুঝেই করে থাকে।
কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো এমন হতে পারে যে, সে তুলনামূলক ছোট একটা গুনাহ দিয়ে শুরু করেছে, পরে নিজের অজান্তে ধীরে ধীরে শয়তানের জালে ফেঁসে গেছে। এ ক্ষেত্রেও শুরুটা কিন্তু সে নিজেই করে এবং ইচ্ছে করেই করে।
কেউ যখন গোপন গুনাহে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন এই গুনাহ তাকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। তাকে একদম ধবংস করে ছাড়ে।
শুরুটা ছোট ছোট গুনাহ দিয়ে হলেও পরবর্তীতে শয়তান তাকে অনায়াসেই বড় বড় গুনাহতে লিপ্ত করে ফেলে।
একবার যদি কারো এ জঘন্য অভ্যাস হয়ে যায় তাহলে তার জন্য তা থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
এ জন্য সব সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা, কোনো ভাবেই যেন এ জঘন্য অভ্যাস নিজের মাঝে না আসতে পারে।
কেউ যখন কোনো গোপন গুনাহতে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং বার বার তা করতে থাকে তখন ধীরে ধীরে তার অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় একদম উঠে যায়। অন্তর শক্ত হয়ে যায়। অন্তরে নেক আমলের প্রতি আগ্রহ থাকে না। ইবাদতে স্বাদ পায় না। তেলাওয়াত, নামায ইত্যাদি ভালো লাগে না। চোখে পানি আসার মতো অবস্থা দেখলেও চোখে পানি আসে না।এগুলো হল, গোপন গুনাহের কিছু কুফল।
গোপন গুনাহের আরেকটি কুফল হল, গোপন গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি দীনের পথে অবিচল থাকতে পারে না। গোপন গুনাহ তাকে ধীরে ধীরে দীনের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন,
أجمع العارفون بالله ان ذنوب الخلوات هي أصل الانتكاسات، وأن عبادات الخفاء هي أعظم أسباب الثبات .
সকল আউলিয়ায়ে কেরাম একমত যে, বান্দার গোপন গুনাহ দ্বীনের পথে তার পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ এবং গোপন ইবাদত দ্বীনের পথে অবিচল থাকার অন্যতম উপায়।
গোপন গুনাহের সবচেয়ে জঘন্য পরিণতি হল, এর কারণে ঈমানহারা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার আশংকা আছে।
একটি হাদীস থেকে এ বিষয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হাদীসটি সহী মুসলিমে এসেছে,
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ . وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ " .
সাহ্*ল বিন সা‘দ আস্ সায়েদী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি বাহ্যিক ভাবে জান্নাতীদের মতো আমল করবে; অথচ সে জাহান্নামী। আর কোন ব্যক্তি বাহ্যিক ভাবে জাহান্নামীদের মতো আমল করবে, অথচ সে জান্নাতী। সহী মুসলিম ৬৬৩৪
লক্ষ করুন, শুরুতে বলা হচ্ছে, إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ - সে জান্নাতীদের মতো আমল করবে। তার মানে বাহ্যিক ভাবে সে দীনদার। কিন্তু তার পরিণাম বলা হচ্ছে, هُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ - সে জাহান্নামী।
তার জাহান্নামী হওয়ার কারণটা বুঝা যায়, নবিজীর এ কথা থেকে, فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ - বাহ্যিক ভাবে, মানুষের সামনে তার যে অবস্থা প্রকাশ পেত সে হিসেবে দেখা যেত, সে জান্নাতীদের মতো আমল করছে। এ থেকে বুঝা যায়, জাহেরি ভাবে সে ভালো মানুষ হলেও আসলে সে ছিল গুনাহগার। গোপন গুনাহে লিপ্ত। যা সম্পর্কে মানুষ জানত না। এ কারণেই তার এ পরিণতি।
তাই তো ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেন,
خاتمة السوء تكون بسبب دسيسة باطنة للعبد لا يطلع عليها الناس
মৃত্যুর সময় অশুভ পরিণতির কারণ বান্দার 'গোপন গুনাহ' যা সম্পর্কে মানুষ জানত না।
গোপন গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়
গোপন গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় কী, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বেশ কিছু করণীয় কাজের কথা বলেছেন।
দৃঢ় সংকল্প করা
১ম কাজ, গুনাহ ছাড়ার জন্য হিম্মত করা, দৃঢ় সংকল্প করা। যে কোনো গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য কিংবা অভ্যস্ত হয়ে গেলে ছাড়ার জন্য সর্ব প্রথম যে কাজটি জরুরি তা হল, সেই গুনাহ ছাড়ার প্রবল ইচ্ছা, দৃঢ় প্রত্যয়। এটি আমি ছাড়বোই ছাড়ব। করণীয় কোনো কাজের ক্ষেত্রেও একই কথা। সবার আগে কাজটি করার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। তবেই আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করবেন। তো প্রথম কাজ হল, গোপন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় সংকল্প করা।
আল্লাহর কাছে দোয়া করা
২য় কাজ হল, খুব অনুনয় বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া করা, আল্লাহ যেন গোপন গুনাহ বেঁচে থাকার তাওফিক দান করেন। ওসব গুনাহ থেকে তিনি যেন সম্পূর্ণ রূপে হেফাজত করেন, এ জন্য খুব দোয়া করা।
হাদীসে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু দোয়া এসেছে ওগুলো মনযোগ সহকারে বেশি বেশি পড়া।
اللَّهمَّ إنِّي أَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে গোপনে ও প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আপনার ভয় কামনা করি। (মুসনাদে আহমদ : ১৮৩২৫)
اللهُمَّ اقْسِمْ لَنا مِنْ خَشيَتِكَ مَا يَحُوْلُ بَيْنَنا وَبَيْنَ مَعاصِيْكَ
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার এ পরিমাণ ভয় দান করুন যা আমাদের মাঝে এবং আপনার নাফরমানির মাঝে অন্তরায় হবে। (জামে তিরমিযী : 3502)
اللهمَّ اجعَلْني أخشاك كأنّي أراكَ أبدًا حتّى ألقاك وأسعِدْني بتقواك ولا تُشْقِني بمعصيتِك
হে আল্লাহ, আমি যেন আপনাকে এমনভাবে ভয় করি, যেন আপনাকে দেখতে পাচ্ছি। আপনার সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত যেন আমার এ অবস্থা থাকে। (হে আল্লাহ) আপনার ভয় ও তাকওয়ার মাধ্যমে আমাকে সৌভাগ্যবান বানান। আপনার অবাধ্যতার মাধ্যমে আমাকে হতভাগা বানাবেন না। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ :10/181)
اللَّهُمَّ إنِّي أَسْأَلُكَ الهُدى والتُّقى، والْعَفافَ والْغِنى
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কামনা করি হেদায়েত, তাকওয়া, চারিত্রিক পবিত্রতা ও স্বচ্ছলতা। (সহী মুসলিম : 2721)
اللهمَّ طهِّرْ قلبي من النفاقِ وعملي من الرياءِ ولساني من الكذبِ وعيني من الخيانةِ، فإنك تعلمُ خائنةَ الأعيُنِ وما تُخفي الصدورُ
হে আল্লাহ, আপনি আমার অন্তরকে নিফাক থেকে, আমার আমলকে রিয়া থেকে, আমার জিহবাকে মিথ্যাচার থেকে এবং চোখকে খেয়ানত থেকে পবিত্র রাখুন। আপনি চোখের খেয়ানত এবং অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে জানেন।
তো গোপন গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য ২য় কাজ হল আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
গুনাহের কারণগুলো চিহ্নিত করে নিজেকে তা থেকে দূরে রাখা
৩য় কাজ, যে যে কারণে গোপন গুনাহ হচ্ছে সেই কারণগুলো চিহ্নিত করা। এরপর নিজেকে ওগুলো থেকে দূরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। যে কোনো গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করার অন্যতম উপায় হল, গুনাহের উপকরণ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। এটি একেক জনের ক্ষেত্রে একেকটা হতে পারে। যিনি যে কারণে গুনাহতে লিপ্ত হচ্ছেন তাকে ওই কারণটা দূর করতে হবে। গুনাহের কারণ বা উপকরণ দূর না করা হলে শুধু গুনাহ ছাড়ার ইচ্ছা করলে শুরুতে হয়তো কিছু দিন সেই গুনাহ থেকে দূরে থাকা যাবে কিন্তু এরপর আবার গুনাহ হয়ে যাবে। এ জন্য গুনাহের উপকরণ দূর করা অত্যন্ত জরুরি।
অনেকের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে, বিয়ে না করার কারণে গোপন গুনাহতে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তো তাদের জন্য জরুরি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে নেয়া। কোনো কারণে বিয়ে হতে একটু দেরি হলে এ সময় হাদীসে যা করার কথা এসেছে তা করতে থাকা। অর্থাৎ রোযার আমল করতে থাকা। এতেও ইনশাআল্লাহ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে।
যথাসম্ভব একাকী না থাকা
৪র্থ কাজ, যথাসম্ভব একাকী না থাকা। কারো না কারো সংগে থাকা। একাকী থাকলেই শয়তান এসে হাজির হয়। কখনো যদি সঙ্গে থাকার মতো কেউ না থাকে তাহলে কমপক্ষে এতটুকু করুন, রূমে কোনো শাইখের বয়ান চালু করে রাখুন। বাংলা, উরদু কিংবা আরবি। মনযোগ দিয়ে না শুনতে পারলেও চালু রাখুন। যদি মনযোগ দিয়ে শুনতে পারেন তাহলে আপনার কাছে ভালো লাগে এমন কারো তেলাওয়াত চালু করে রাখুন এবং মনযোগ সহকারে তেলাওয়াত শুনুন। অর্থের প্রতি খেয়াল করে শুনুন। কারো অর্থ জানা না থাকলে তিনি অনুবাদসহ তেলাওয়াত শুনতে পারেন। যতক্ষণ মনযোগ সহকারে শুনতে পারবেন ততক্ষণ তেলাওয়াত শুনুন। মনযোগ দিতে না পারলে বয়ান চালু করে রাখুন। এটি একদম একাকী থাকার চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো হবে।
অবসর না থাকা
৫ম কাজ, অবসর না থাকা। কোনো না কোনো কাজে লিপ্ত থাকা। অবসর থাকলেই শয়তান ভিতরে এসে ফিসফিস করার সুযোগ পায়। করার মতো তেমন কোনো কাজ না থাকলে দীনী যে কোনো বই পড়তে পারেন। তেলাওয়াত শুনতে পারেন। কারো বয়ান শুনতে পারেন। যে কোনো একটা কাজে নিজেকে লাগিয়ে রাখুন। কারণ কেউ যখন কাজে ব্যস্ত থাকে তখন নফস ও শয়তান খারাপ কিছু করার কথা অন্তরে জাগাতেই পারে না। অবসর থাকলে এটি তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. এর একটি প্রসিদ্ধ উক্তি-
هي النفس إذا لم تشغلها بالحق شغلتك بالباطل
নফসকে আপনি ভালো কাজে ব্যস্ত না রাখলে সে আপনাকে খারাপ কাজে ব্যস্ত করে দেবে।
আজেবাজে কল্পনা মনে একদম না আনা
৬ষ্ট কাজ, কোনো ধরণের খারাপ চিন্তা, আজেবাজে কল্পনা মনে একদম না আনা। শয়তান ওসবের কুমন্ত্রণা দিলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে পানাহ চাওয়া। অর্থের প্রতি খেয়াল করে কয়েক বার
أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ পড়ুন। একটু আওয়াজ করে পড়ুন। কমপক্ষে নিজে শুনতে পান এটুকু আওয়াজে পড়ুন। দেখবেন এতে শয়তানের কুমন্ত্রণা কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ ।
এর সাথে হাদিসে আসা আরেকটি দোয়াও পড়ুন,
آمَنْتُ بِاللّٰهِ وَرُسُلِهِ
মুরাকাবার আমল করা
৭ম কাজ, মুরাকাবার আমল করা। আল্লাহ প্রতি মুহুর্তে আমাকে দেখছেন। আমার সব কিছু রেকর্ড হচ্ছে। কেয়ামতের দিন সবার সামনে আমার সব কিছু প্রকাশ করে দেয়া হবে, এ কথাগুলো চিন্তা করা।
আল্লাহ তাআলা এ কথাগুলো সব সময় মনে হাজির রাখার চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন,
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ .
আল্লাহ চোখের খেয়ানত এবং অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত। সূরা গাফির : ১৯
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ .
আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি। তার নফস তাকে যে কুমন্ত্রনা দেয় তা আমি জানি। আর আমি তার গলার শিরা থেকেও নিকটবর্তী। সূরা কাফ : ১৬
'মুরাকাবা ফাইল'টা কিছু কিছু দিন পর পরই পড়বেন। এতে যে কোনো গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য অন্তরে অন্য রকম এক শক্তি অনুভব করবেন ইনশাআল্লাহ।
সব আমল নষ্ট হয়ে যাবে, এ কথা বার বার চিন্তা করা
৮ম কাজ, গোপন গুনাহের কারণে আমার সব আমল নষ্ট হয়ে যাবে, এ কথা বার বার চিন্তা করা।
নিজের মধ্যে লজ্জাবোধ জাগ্রত করা
৯ম কাজ, গুনাহ করার খেয়াল হলে, মনে মনে এ কথা চিন্তা করা, এখন যদি পরিচিত কেউ আমাকে দেখে ফেলে তাহলে কি আমি এই গুনাহ করব? নিশ্চয়ই না। তাহলে আল্লাহ দেখছেন, এ অবস্থায় আমি কীভাবে গুনাহ করি? এভাবে নিজের মধ্যে লজ্জাবোধ জাগ্রত করা। এ বিষয়ে একটি হাদীস এসেছে।
عَنْ سَعِيدِ بن يَزِيدَ الأَزْدِيِّ، أَنَّهُ قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَوْصِنِي ، قَالَ : أُوصِيكَ أَنْ تَسْتَحِيَ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ كَمَا تَسْتَحِي مِنَ الرَّجُلِ الصَّالِحِ .
সাঈদ বিন ইয়াযীদ রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল) আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি কোনো নেককার ব্যক্তিকে যেমন লজ্জা করো, আল্লাহকে (কমপক্ষে) তেমন লজ্জা করো। কিতাবুয যুহদ-ইমাম আহমাদ ৪৬; মু'জামে কাবীর, তাবারানি ৭৭৩৪ (হাদীসটি সহীহ)
এ কথা চিন্তা করা, যদি এ মুহুর্তে মৃত্যু এসে যায়
১০ম কাজ, এ কথা চিন্তা করা, এই গুনাহ করা অবস্থায় হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু এসে যায় তাহলে আমার পরিবার ও পরিচিতরা আমার ব্যাপারে কী ধারণা করবে? আমার হাতে থাকা মোবাইল দেখে কিংবা সামনে থাকা ল্যাপটপ দেখে তারা আমার ব্যাপারে কী ধারনা করবে?
আল্লাহর কাছেই বা আমি কীভাবে মুখ দেখাব? এ অবস্থায় মারা গেলে এ অবস্থায়ই তো আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে।
হাদীসে এসেছে,
يبعث كل عبد على ما مات عليه
(কেয়ামতের দিন) প্রত্যেককে ওই অবস্থায় উঠানো হবে যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে। সহী মুসলিম ২২০৬
একটু চিন্তা করুন, কেউ যদি গুনাহ করা অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে কেয়ামতের দিন পরিচিত অপরিচিত কোটি কোটি মানুষের সামনে ওই অবস্থায়ই উঠবে। তখন যে সে কী পরিমাণ লজ্জা পাবে, তা এখন আমরা কল্পনাও করতে পারব না।
জাহান্নামের আযাব এবং জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখের কথা কল্পনা করা
১১তম কাজ, গুনাহের কুমন্ত্রণা মনে এলে সংগে সংগে জাহান্নামের আযাব এবং ভয়ানক শাস্তির কথা কল্পনা করা, পাশাপাশি জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা কল্পনা করা। এতে ইনশাআল্লাহ খারাপ কাজের চিন্তা মনে থেকে দূর হয়ে যাবে।
সবশেষে এ প্রসংগে সালাফদের কয়েকটি বাণী এবং শাইখ খালেদ হুসাইনান রহ. এর বলা কিছু দোয়া বলেই আজকের কথা শেষ করছি।
প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত বেলাল বিন সাদ রহ. বলতেন,
لا تكن لله وليا في العلانية وعدوه في السر
তুমি প্রকাশ্যে আল্লাহর ওলি আর গোপনে তাঁর দুশমন হয়ো না।
সালাফদের মধ্যে কোনো এক বুযুর্গ বলতেন,
إياك أن تكون عدوا لابليس في العلانية، وصديقا له في السر
সাবধান! এমন যেন না হয় যে, তুমি প্রকাশ্যে ইবলিসের দুশমন আর গোপনে তার বন্ধু ।
ইবনুল আরাবি রহ. বলতেন,
أخسر الخاسرين من أبدى لِلنَّاسِ صَالِح أعماله، وبارز بالقبيح من هُوَ أقرب إِلَيْهِ من حبل الوريد
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হল সে, যে মানুষের সামনে তার ভালো আমলগুলো প্রকাশ আর আল্লাহর সামনে -যিনি তার শাহরগ অপেক্ষাও কাছে- খারাপ আমলগুলো প্রকাশ করে।
শাইখ খালেদ হুসাইনান রহ. তাঁর 'কাইফা নারতাকী' কিতাবে আল্লাহর পথের পথিকের রুহানি খাদ্য শিরোনামে কিছু আমলের কথা বলেছেন। ওখান থেকে শুধু প্রথম তিনটি আমলের কথা উল্লেখ করছি।
শাইখ বলেন, এক. খুব অনুনয় বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা। তাঁর যিকির, শোকর এবং উত্তমরূপে ইবাদত করার জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া।
হাদীসে আসা দোয়াটি পড়া-
اللَّهُمَّ أعِنِّي عَلى ذِكْرِكَ، وشُكْرِكَ، وحُسْنِ عِبادَتِكَ
দুই. নিচের দোয়াগুলো বেশি বেশি করে করা-
رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيَ كُلَّهُ وَلاَ تَكِلْنِيْ إِلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
لا حَوْلَ ولا قوَّةَ إلّا باللهِ
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِين
তিন. বেশি বেশি ইস্তিগফার করা।
ওপরের আমল ও দোয়াগুলোর সাথে এ দোয়াগুলোও আমরা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
শাইখ রহ . ওই কিতাবের অন্য এক জায়গায় উল্লেখ করেন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে কেউ কোনো কাজে অভ্যস্ত হতে চাইলে সে যদি একটানা ২১ দিন পর্যন্ত কাজটি করতে পারে তাহলে সেটি তার জন্য এত সহজ হয়ে যাবে, যা সে কল্পনাও করেনি। এটি করণীয় কাজ কিংবা বর্জনীয় কাজ, উভয় ক্ষেত্রেই।
আজ কথা এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কথাগুলোর ওপর আমল করার তাওফিক দান করেন এবং আমাদের সবাইকে সব ধরণের গুনাহ থেকে, বিশেষভাবে গোপন গুনাহ থেকে হেফাজত করেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর দীনের জন্য কবুল করেন, শাহাদাত পর্যন্ত জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফীক দান করেন এবং আমাদের সবাইকে সর্বোচ্চ জান্নাত জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন আমীন।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وأصحابه أجمعين
وآخردعوانا أن الحمد لله رب
اَلْحَمْدُ لله رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى أَشْرَفِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ، وَعَلَى آله وَأَصْحَابِهِ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ، أَمَّا بَعْدُ
فأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم، بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
يَسْتَخْفُونَ مِنَ النَّاسِ وَلَا يَسْتَخْفُونَ مِنَ اللَّهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرْضَى مِنَ الْقَوْلِ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطًا
وقال تعالى إِنَّ اللّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللّهِ فَاسْتَبْشِرُواْ بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
মুহতারাম ভাইয়েরা, দুনিয়ার সাধারণ একটি নিয়ম, যা আমরা সব সময়ই দেখে থাকি, উন্নত রুচির অধিকারী কোনো ক্রেতা ত্রুটি যুক্ত পণ্য কখনোই কিনে না। পণ্যে সামান্যতম খুঁত থাকলে তা দেখতে বাহ্যত যত সুন্দর আর আকর্ষনীয়ই হোক তা সে কিনতে কিছুতেই রাজি হয় না।
মুহতারাম ভাই, আমরা সবাই তো আসলে এক একটি পণ্য। আমাদের ক্রেতা হলেন খোদ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। যখন দুনিয়ার সাধারণ কোনো ব্যক্তি ত্রুটি যুক্ত পণ্য কিনতে চায় না তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কীভাবে ত্রুটিযুক্ত পণ্য কিনবেন, তা তো কল্পনাই করা যায় না।
আমরা সবাই জানি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দৃষ্টিতে বান্দার মাঝে থাকা একমাত্র খুঁত ও ত্রুটি হল, তার মাঝে থাকা গুনাহগুলো। তার বাহ্যিক আকৃতি যেমনই হোক। তার গুনাহই হল তার মাঝে থাকা একমাত্র খুঁত। এ খুঁত যার মাঝে যত বেশি থাকে সে আল্লাহর দৃষ্টিতে তত বেশি অচল পণ্য বলে গণ্য হয়। বাহ্যত সে যতই আকর্ষনীয় হোক। তার মেধা ও বুদ্ধি যতই প্রখর হোক। এমনকি তার জাহেরি আমল যতই সুন্দর হোক।
বান্দার মাঝে থাকা বড় বড় খুঁতের মধ্যে অন্যতম একটি খুঁত হল, তার গোপন গুনাহ। আরবিতে যাকে বলে, ذُنوبُ الخَلَوَات
আল্লাহ তাআলা তাওফিক দিলে আজ এ বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা মুযাকারা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। এ প্রসঙ্গে দুই আড়াই বছর আগে ভাইদের খেদমতে মুখতাসার কিছু কথা আরজ করেছিলাম, এ বিষয়ে সালাফদের কিছু বাণীও পেশ করেছিলাম। আপনাদের কারো মনেও থাকতে পারে। ওই কথাগুলোই আরেকটু খুলে বলার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইখলাস ও ইতকানের সাথে কথাগুলো বলার এবং আমাদের সবাইকে সে মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
মুহতারাম ভাই, আমাদের ওপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কত বড় ইহসান ও দয়া যে, এমন একটা যুগে যখন কিনা চারদিকে শুধু ফেতনা আর ফেতনা, আল্লাহ তাআলা আমাদের মতো কিছু কমযোর বান্দাকে দ্বীন কায়েমের নববী মেহনতের সাথে যুক্ত হওয়ার এবং টুটা ফাটা কিছু খেদমত করার তাওফিক দিচ্ছেন, আমরা এ নেয়ামতের যত শুকরিয়াই আদায় করি না কেন তা কমই হবে।
মুহতারাম ভাই, আমাদের প্রত্যেকের দিলের আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ যেন আমাকে তাঁর দীনের জন্য কবুল করেন। আমার আমলগুলো যেন আল্লাহ কবুল করে নেন। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আমি যেন দীনের পথে অবিচল থাকতে পারি, এ আকাঙ্ক্ষা আমার, আপনার, আমাদের সবার। আমাদের কেউই হয়তো এর ব্যতিক্রম হবে না।
প্রিয় ভাই আমার! আমাদের দিলের এ আকাঙ্ক্ষাটা কখন পূর্ণ হবে? এর জন্য বাহ্যিক কিছু জিনিস তো অবশ্যই লাগবে। দুনিয়া যেহেতু দারুল আসবাব-বাহ্যিক উপকরণের স্থান তাই এখানে বাহ্যিক কিছু আসবাব তো অবশ্যই লাগবে। তাই না?
আল্লাহ যেন আমাকে আপনাকে তাঁর দীনের জন্য কবুল করেন। আমার, আপনার ছোট বড় সকল আমল কবুল করেন এবং জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত দীনের পথে অবিচল রাখেন, এ সবের জন্য অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে, নিজেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে একদম নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত রাখা।
মামুর ভাইদের কাছে নিখুঁত রাখা? না।
মাসউল ভাইদের কাছে নিখুঁত রাখা? না, তাও না।
বরং আলিমুল গাইবি ওয়াশ শাহাদাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে নিখুঁত রাখা।
আর এটি জানা কথা, যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে নিখুঁত থাকবে সে সবার কাছেই নিখুঁত থাকবে।
প্রিয় ভাই আমার! ছোট বড় প্রতিটি গুনাহ বান্দার মাঝে থাকা এক একটি খুঁত। গুনাহ যত বড় হয় সেই খুঁতের আকার তত বড় হয়। আল্লাহর কাছে তার জঘন্যতা তত বেশি হয়।
এ জন্য আমাদের কর্তব্য, প্রতি মুহুর্তে সতর্ক থাকা, ছোট বড় কোনো ধরণের খুঁত যেন আমার মধ্যে না পড়ে। বড় খুঁত তো না-ই, ছোট থেকে ছোট কোনো খুঁতও যেন আমার মধ্যে না পড়ে সারাক্ষণ সেই চেষ্টা আমাকে করতে হবে।
আল্লাহ না করেন, আল্লাহ না করেন, শয়তানের ধোকায় পড়ে যদি কখনো কোনো খুঁত আমার মধ্যে পড়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা দূরে করে ফেলব। একটুও যেন দেরি না হয়।
প্রিয় ভাই আমার! একটু বলুন তো, আমার মালিক যখন আমার ত্রুটি যুক্ত বকরির কুরবানি গ্রহণ করেন না, তো আমি নিজে যদি ত্রুটি যুক্ত হই তাহলে 'ত্রুটি যুক্ত আমাকে' তিনি কীভাবে গ্রহণ করবেন?
এ জন্য ভাই যদি কখনো আমাদের থেকে কোনো ভুল হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে নেব। অন্তর থেকে তাওবা করব। মুখের তাওবা না। অন্তর থেকে তাওবা। কাজটি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে সেই কাজের জন্য অন্তর থেকে অনুতপ্ত হয়ে, সামনে না করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করব ইনশাআল্লাহ।
এর সাথে হযরত থানবি রহ.-এর বলা আরও একটি কাজ করার চেষ্টা করব। তা হল, নফসের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য কিছু জরিমানা ধার্য করা। কয়েক রাকাত নামায, কিংবা কয়েকটা রোযা। কিংবা কিছু সাদাকা। এর পরিমাণটা যেন এমন হয় যা দ্বারা নফসের ওপর চাপ পড়ে। একদম হালকা কিছু হলে চাপ পড়বে না ফলে ফায়েদাও তেমন হবে না। বাঁকা নফসকে সোজা করার জন্য এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি।
ভাই, আমি আপনি কাজ যা-ই করি না কেন, সবার আগে যে কাজটি সবচেয়ে বেশি জরুরি তা হল, নিজেকে নিখুঁত রাখা। গুনাহ মুক্ত রাখা। ছোট বড় সব ধরণের গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। জাহেরি-বাতেনি, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরণের গুনাহ ও আত্মিক ব্যাধি থেকে নিজে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র রাখা।
আল্লাহ হেফাজত করেন, আমাদের কারো কারো মাঝে 'ইউটিউব ব্যাধি' আছে। কারো মাঝে আছে 'ফেসবুক ব্যাধি'। বিনা প্রয়োজনে কিংবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত এসবের ব্যবহার কেবল আমাদের জন্য না বরং সকল মুমিনের জন্যই আত্মিক অনেক বড় ব্যাধি।
এগুলোকে শুধু ব্যাধি বললে ভুল হবে, বলতে হবে ব্যাধির জননী। শুধু মরয না বরং উম্মুল আমরায।
'ফেসবুক আর ইউটিউব ব্যাধি' থেকেই জন্ম নেয় কুনজরের ব্যাধি, মুমিন ভাইদের প্রতি কুধারনার ব্যাধি, গিবত-শেকায়েতের ব্যাধি, হিংসা-বিদ্বেষসহ আরও নানা রকমের আত্মিক ব্যাধি। যা ধীরে ধীরে আমাদের ঈমান-আমল একদম ছারখার করে ছাড়ে।
এ জন্য ভাই, আমাদের সবার কর্তব্য, এসবের ব্যাপারে নিজেকে পূর্ণ সতর্ক রাখা। ফেসবুকের ব্যাপারে আপনার মাসউল ভাইয়ের পক্ষ থেকে দেয়া আপনার খাস কোনো যিম্মাদারি না থাকলে ওটা একদম ওপেনই করবে না।
ইউটিউবে জরুরি কিছু দেখতে হলে খুবই সতর্কতার সাথে দেখবেন। জরুরি জিনিস দেখা শেষ, তো সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে যাবেন। অযথা একটা মুহুর্তও ওখানে থাকবেন না। তা না হলে নিজের অজান্তেই আপনি শয়তানের ফাঁদে ফেঁসে যেতে পারেন।
সর্তকতার একটা উপায় এমন হতে পারে, ইউটিউবে কিছু দেখার সময় অল্প আওয়াজে অন্য কোনো একটা অডিও অন করে রাখলেন। যার আওয়াজ হালকা হালকা কানে আসতে থাকবে। এতে শয়তান আপনাকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। উদাহরণত, শাইখ খালেদ রাশেদ ফাক্কাল্লাহু আসরাহু-এর رئيتُ النبيَّ يبكي 'নবিজীকে আমি কাঁদতে দেখেছি' নামের আরবি খুতবাটা। কিংবা এ ধরণের কোনো কিছু। যার আওয়াজ হালকা হালকা কানে এলেও শয়তান অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়ার সুযোগ পাবে না ইনশাআল্লাহ।
মনে রাখবেন ভাই, খুঁত যদিও সবার জন্যই খুঁত। তবে আমার আপনার জন্য ছোট খুঁতও অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে যেতে পারে। ছোট একটা খুঁতও আমার আপনার জন্য এ পথ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়ে যেতে পারে।
যিম্মাদারির দিক দিয়ে যিনি যত উঁচুতে আছেন তার মাঝে থাকা খুঁতের ক্ষতি তত বেশি হবে। ময়লা দেয়ালের যত ওপরে থাকে চারপাশে দুর্গন্ধও তত বেশি ছড়ায়। বৃষ্টি হলে সেই ময়লা দেয়ালের তত বেশি অংশ নষ্ট করে ফেলে। এজন্য সাবধান ভাই! সাবধান!
'আমার আপনার জন্য ছোট খুঁতও অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে যেতে পারে', এ কথাটি বুঝার জন্য মুহতারাম শাইখুল হাদিস আবু ইমরান হাফি.-এর একটি উক্তি আপনাদের শোনাচ্ছি।
একবার শাইখ বললেন, কোনো পুকুর যখন আকারে ছোট থাকে তখন সেখানে সামান্য ময়লা (অপবিত্র জিনিস) পড়লেই গোটা পুকুর অপবিত্র হয়ে যায়। কিন্তু সেই পুকুরটিই যখন একসময় বড়সড় হয়ে যায় তখন অনেক ময়লা পড়লেও তেমন কিছুই হয় না।
আমাদের জামাতটিকেও বর্তমানে ছোট একটা পুকুরের মতো ধরা যায়। এখন যদি কারো মাঝে সামান্য ময়লাও থাকে তাহলে সেই সামান্য ময়লার কারণে পুরো জামাত ময়লাযুক্ত হয়ে যেতে পারে।
শাইখের কথার সাথে আরেকটু কথা যুক্ত করা যায়।
পুকুর যতদিন ছোট থাকে তত দিন পুকুরের মালিক সেখানে সামান্য ময়লা পড়লেই দ্রুত উঠিয়ে ফেলে। ময়লাটি সেখানে পড়ে থাকতে দেয় না। যেন এর কারণে গোটা পুকুর ময়লা না হয়ে যায়। ঠিক তেমনিভাবে শতভাগ সহী নববী মানহাজের ওপর অটল অবিচল কোনো দীনী জামাতের আসল মালিক তো হলেন আল্লাহ। তাই এখন যদি আমাদের কারো মাঝে সামান্য ময়লাও থাকে তাহলে এ জামাতের মালিক তাকে অবশ্যই এখানে থেকে সরিয়ে দেবেন। যেন তার ময়লার কারণে পুরো জামাত ময়লাযুক্ত না হয়ে যায়।
গোপন গুনাহের কুফল
প্রিয় ভাই আমার! গুনাহ তো গুনাহই, বাহ্যত তা যতই ছোট হোক এবং তা যেভাবেই করা হোক। প্রকাশ্যে করা হোক কিংবা গোপনে। কিন্তু কোনো গুনাহ যখন গোপনে করা হয় তখন সেই গুনাহের জঘন্যতা সাধারণ গুনাহের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে যায়। কারণ, তখন বান্দার সামনে থাকে একমাত্র আল্লাহ। আর কেউ থাকে না। গোপনে গুনাহ করার অর্থই হল, তার কাছে নাউযুবিল্লাহ আল্লাহর কোনো মূল্যেই নেই। সে আল্লাহকে কোনো দামই দিচ্ছে না।
মানুষের দৃষ্টির আড়ালে, গোপনে গুনাহ করা অন্তরে নিফাক থাকার অন্যতম একটি লক্ষণ।
মুনাফিকদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
يَسْتَخْفُونَ مِنَ النَّاسِ وَلَا يَسْتَخْفُونَ مِنَ اللَّهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرْضَى مِنَ الْقَوْلِ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطًا
তারা মানুষের কাছ থেকে নিজেকে গোপন করে আর আল্লাহর কাছ থেকে গোপন করে না অথচ তিনি তাদের সাথেই থাকেন, যখন তারা রাতের বেলা এমন কথার পরিকল্পনা করে যা আল্লাহ পছন্দ করেন না। তারা যা করছে আল্লাহ সবই বেষ্টন করে আছেন। -সূরা নিসা (০৪) : ১০৮
গোপন গুনাহের কারণে বান্দার সকল নেক আমল একদম বরবাদ হয়ে যেতে পারে।
সুনানে ইবনে মাজাহতে সহী সনদে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে,
عَنْ ثَوْبَانَ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَنَّهُ قَالَ : لأَعْلَمَنَّ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِحَسَنَاتٍ أَمْثَالِ جِبَالِ تِهَامَةَ بِيضًا فَيَجْعَلُهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ هَبَاءً مَنْثُورًا . قَالَ ثَوْبَانُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا جَلِّهِمْ لَنَا أَنْ لاَ نَكُونَ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لاَ نَعْلَمُ . قَالَ : أَمَا إِنَّهُمْ إِخْوَانُكُمْ وَمِنْ جِلْدَتِكُمْ وَيَأْخُذُونَ مِنَ اللَّيْلِ كَمَا تَأْخُذُونَ وَلَكِنَّهُمْ أَقْوَامٌ إِذَا خَلَوْا بِمَحَارِمِ اللَّهِ انْتَهَكُوهَا .
সাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আমার উম্মতের এমন কিছু লোক সম্পর্কে জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালা সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সকল নেকআমল বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেবেন।
সাওবান রাযি. বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় আমাদেরকে দিন, পরিস্কারভাবে বলুন, তারা কারা? যেন নিজের অজান্তে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই। তিনি বলেন, তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে, নির্জনে আল্লাহর হারামকৃত কাজে লিপ্ত হবে। সুনানে ইবনে মাজাহ ৪২৪৫ (হাদিসটি সহীহ)
বর্তমান সময়ে গোপন গুনাহের সরঞ্জাম অনেক সহজলভ্য হয়ে গেছে আর এ কারণে এ গুনাহ বর্তমানে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যাপক ভাবে মানুষ গোপন গুনাহে জড়িয়ে পড়ছে। কী যুবক আর কী বৃদ্ধ, কী ছেলে আর কী মেয়ে, সবাই এতে লিপ্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যুবক তরুণদের মধ্যে এ গুনাহে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
বাহ্যত দীনদার এমন অনেকেও এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আমাদের মতো যারা আছে, মানুষ যাদেরকে একটু ভালো মানুষ ভাবে, ভালো মানুষের বেশধারী এই আমরাও মাঝে মধ্যে এই জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়ে যাই।
যাদের বাহ্যিক আকৃতি নেকলোকদের মতো, যারা মানুষের সামনে ইচ্ছেকৃত ভাবে কোনো গুনাহ করে না এমন লোকেরা যখন মানুষের দৃষ্টির আড়ালে গুনাহে লিপ্ত হয় তখন তাদের অবস্থা হয় সবচেয়ে ভয়াবহ।
প্রকাশ্য গুনাহের চেয়ে গোপন গুনাহ অনেক বেশি ভয়াবহ। কারণ, গোপন গুনাহ করা হয় জেনে বুঝে, আয়োজন করে, ইচ্ছাকৃতভাবে। ভুলে কেউ গোপন গুনাহতে লিপ্ত হয় না। গোপন গুনাহ মানুষ জেনে বুঝেই করে থাকে।
কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো এমন হতে পারে যে, সে তুলনামূলক ছোট একটা গুনাহ দিয়ে শুরু করেছে, পরে নিজের অজান্তে ধীরে ধীরে শয়তানের জালে ফেঁসে গেছে। এ ক্ষেত্রেও শুরুটা কিন্তু সে নিজেই করে এবং ইচ্ছে করেই করে।
কেউ যখন গোপন গুনাহে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন এই গুনাহ তাকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। তাকে একদম ধবংস করে ছাড়ে।
শুরুটা ছোট ছোট গুনাহ দিয়ে হলেও পরবর্তীতে শয়তান তাকে অনায়াসেই বড় বড় গুনাহতে লিপ্ত করে ফেলে।
একবার যদি কারো এ জঘন্য অভ্যাস হয়ে যায় তাহলে তার জন্য তা থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
এ জন্য সব সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা, কোনো ভাবেই যেন এ জঘন্য অভ্যাস নিজের মাঝে না আসতে পারে।
কেউ যখন কোনো গোপন গুনাহতে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং বার বার তা করতে থাকে তখন ধীরে ধীরে তার অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় একদম উঠে যায়। অন্তর শক্ত হয়ে যায়। অন্তরে নেক আমলের প্রতি আগ্রহ থাকে না। ইবাদতে স্বাদ পায় না। তেলাওয়াত, নামায ইত্যাদি ভালো লাগে না। চোখে পানি আসার মতো অবস্থা দেখলেও চোখে পানি আসে না।এগুলো হল, গোপন গুনাহের কিছু কুফল।
গোপন গুনাহের আরেকটি কুফল হল, গোপন গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি দীনের পথে অবিচল থাকতে পারে না। গোপন গুনাহ তাকে ধীরে ধীরে দীনের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন,
أجمع العارفون بالله ان ذنوب الخلوات هي أصل الانتكاسات، وأن عبادات الخفاء هي أعظم أسباب الثبات .
সকল আউলিয়ায়ে কেরাম একমত যে, বান্দার গোপন গুনাহ দ্বীনের পথে তার পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ এবং গোপন ইবাদত দ্বীনের পথে অবিচল থাকার অন্যতম উপায়।
গোপন গুনাহের সবচেয়ে জঘন্য পরিণতি হল, এর কারণে ঈমানহারা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার আশংকা আছে।
একটি হাদীস থেকে এ বিষয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হাদীসটি সহী মুসলিমে এসেছে,
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ . وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ " .
সাহ্*ল বিন সা‘দ আস্ সায়েদী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি বাহ্যিক ভাবে জান্নাতীদের মতো আমল করবে; অথচ সে জাহান্নামী। আর কোন ব্যক্তি বাহ্যিক ভাবে জাহান্নামীদের মতো আমল করবে, অথচ সে জান্নাতী। সহী মুসলিম ৬৬৩৪
লক্ষ করুন, শুরুতে বলা হচ্ছে, إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ - সে জান্নাতীদের মতো আমল করবে। তার মানে বাহ্যিক ভাবে সে দীনদার। কিন্তু তার পরিণাম বলা হচ্ছে, هُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ - সে জাহান্নামী।
তার জাহান্নামী হওয়ার কারণটা বুঝা যায়, নবিজীর এ কথা থেকে, فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ - বাহ্যিক ভাবে, মানুষের সামনে তার যে অবস্থা প্রকাশ পেত সে হিসেবে দেখা যেত, সে জান্নাতীদের মতো আমল করছে। এ থেকে বুঝা যায়, জাহেরি ভাবে সে ভালো মানুষ হলেও আসলে সে ছিল গুনাহগার। গোপন গুনাহে লিপ্ত। যা সম্পর্কে মানুষ জানত না। এ কারণেই তার এ পরিণতি।
তাই তো ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেন,
خاتمة السوء تكون بسبب دسيسة باطنة للعبد لا يطلع عليها الناس
মৃত্যুর সময় অশুভ পরিণতির কারণ বান্দার 'গোপন গুনাহ' যা সম্পর্কে মানুষ জানত না।
গোপন গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়
গোপন গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় কী, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বেশ কিছু করণীয় কাজের কথা বলেছেন।
দৃঢ় সংকল্প করা
১ম কাজ, গুনাহ ছাড়ার জন্য হিম্মত করা, দৃঢ় সংকল্প করা। যে কোনো গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য কিংবা অভ্যস্ত হয়ে গেলে ছাড়ার জন্য সর্ব প্রথম যে কাজটি জরুরি তা হল, সেই গুনাহ ছাড়ার প্রবল ইচ্ছা, দৃঢ় প্রত্যয়। এটি আমি ছাড়বোই ছাড়ব। করণীয় কোনো কাজের ক্ষেত্রেও একই কথা। সবার আগে কাজটি করার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। তবেই আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করবেন। তো প্রথম কাজ হল, গোপন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় সংকল্প করা।
আল্লাহর কাছে দোয়া করা
২য় কাজ হল, খুব অনুনয় বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া করা, আল্লাহ যেন গোপন গুনাহ বেঁচে থাকার তাওফিক দান করেন। ওসব গুনাহ থেকে তিনি যেন সম্পূর্ণ রূপে হেফাজত করেন, এ জন্য খুব দোয়া করা।
হাদীসে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু দোয়া এসেছে ওগুলো মনযোগ সহকারে বেশি বেশি পড়া।
اللَّهمَّ إنِّي أَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে গোপনে ও প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আপনার ভয় কামনা করি। (মুসনাদে আহমদ : ১৮৩২৫)
اللهُمَّ اقْسِمْ لَنا مِنْ خَشيَتِكَ مَا يَحُوْلُ بَيْنَنا وَبَيْنَ مَعاصِيْكَ
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার এ পরিমাণ ভয় দান করুন যা আমাদের মাঝে এবং আপনার নাফরমানির মাঝে অন্তরায় হবে। (জামে তিরমিযী : 3502)
اللهمَّ اجعَلْني أخشاك كأنّي أراكَ أبدًا حتّى ألقاك وأسعِدْني بتقواك ولا تُشْقِني بمعصيتِك
হে আল্লাহ, আমি যেন আপনাকে এমনভাবে ভয় করি, যেন আপনাকে দেখতে পাচ্ছি। আপনার সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত যেন আমার এ অবস্থা থাকে। (হে আল্লাহ) আপনার ভয় ও তাকওয়ার মাধ্যমে আমাকে সৌভাগ্যবান বানান। আপনার অবাধ্যতার মাধ্যমে আমাকে হতভাগা বানাবেন না। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ :10/181)
اللَّهُمَّ إنِّي أَسْأَلُكَ الهُدى والتُّقى، والْعَفافَ والْغِنى
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কামনা করি হেদায়েত, তাকওয়া, চারিত্রিক পবিত্রতা ও স্বচ্ছলতা। (সহী মুসলিম : 2721)
اللهمَّ طهِّرْ قلبي من النفاقِ وعملي من الرياءِ ولساني من الكذبِ وعيني من الخيانةِ، فإنك تعلمُ خائنةَ الأعيُنِ وما تُخفي الصدورُ
হে আল্লাহ, আপনি আমার অন্তরকে নিফাক থেকে, আমার আমলকে রিয়া থেকে, আমার জিহবাকে মিথ্যাচার থেকে এবং চোখকে খেয়ানত থেকে পবিত্র রাখুন। আপনি চোখের খেয়ানত এবং অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে জানেন।
তো গোপন গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য ২য় কাজ হল আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
গুনাহের কারণগুলো চিহ্নিত করে নিজেকে তা থেকে দূরে রাখা
৩য় কাজ, যে যে কারণে গোপন গুনাহ হচ্ছে সেই কারণগুলো চিহ্নিত করা। এরপর নিজেকে ওগুলো থেকে দূরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। যে কোনো গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করার অন্যতম উপায় হল, গুনাহের উপকরণ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। এটি একেক জনের ক্ষেত্রে একেকটা হতে পারে। যিনি যে কারণে গুনাহতে লিপ্ত হচ্ছেন তাকে ওই কারণটা দূর করতে হবে। গুনাহের কারণ বা উপকরণ দূর না করা হলে শুধু গুনাহ ছাড়ার ইচ্ছা করলে শুরুতে হয়তো কিছু দিন সেই গুনাহ থেকে দূরে থাকা যাবে কিন্তু এরপর আবার গুনাহ হয়ে যাবে। এ জন্য গুনাহের উপকরণ দূর করা অত্যন্ত জরুরি।
অনেকের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে, বিয়ে না করার কারণে গোপন গুনাহতে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তো তাদের জন্য জরুরি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে নেয়া। কোনো কারণে বিয়ে হতে একটু দেরি হলে এ সময় হাদীসে যা করার কথা এসেছে তা করতে থাকা। অর্থাৎ রোযার আমল করতে থাকা। এতেও ইনশাআল্লাহ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে।
যথাসম্ভব একাকী না থাকা
৪র্থ কাজ, যথাসম্ভব একাকী না থাকা। কারো না কারো সংগে থাকা। একাকী থাকলেই শয়তান এসে হাজির হয়। কখনো যদি সঙ্গে থাকার মতো কেউ না থাকে তাহলে কমপক্ষে এতটুকু করুন, রূমে কোনো শাইখের বয়ান চালু করে রাখুন। বাংলা, উরদু কিংবা আরবি। মনযোগ দিয়ে না শুনতে পারলেও চালু রাখুন। যদি মনযোগ দিয়ে শুনতে পারেন তাহলে আপনার কাছে ভালো লাগে এমন কারো তেলাওয়াত চালু করে রাখুন এবং মনযোগ সহকারে তেলাওয়াত শুনুন। অর্থের প্রতি খেয়াল করে শুনুন। কারো অর্থ জানা না থাকলে তিনি অনুবাদসহ তেলাওয়াত শুনতে পারেন। যতক্ষণ মনযোগ সহকারে শুনতে পারবেন ততক্ষণ তেলাওয়াত শুনুন। মনযোগ দিতে না পারলে বয়ান চালু করে রাখুন। এটি একদম একাকী থাকার চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো হবে।
অবসর না থাকা
৫ম কাজ, অবসর না থাকা। কোনো না কোনো কাজে লিপ্ত থাকা। অবসর থাকলেই শয়তান ভিতরে এসে ফিসফিস করার সুযোগ পায়। করার মতো তেমন কোনো কাজ না থাকলে দীনী যে কোনো বই পড়তে পারেন। তেলাওয়াত শুনতে পারেন। কারো বয়ান শুনতে পারেন। যে কোনো একটা কাজে নিজেকে লাগিয়ে রাখুন। কারণ কেউ যখন কাজে ব্যস্ত থাকে তখন নফস ও শয়তান খারাপ কিছু করার কথা অন্তরে জাগাতেই পারে না। অবসর থাকলে এটি তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. এর একটি প্রসিদ্ধ উক্তি-
هي النفس إذا لم تشغلها بالحق شغلتك بالباطل
নফসকে আপনি ভালো কাজে ব্যস্ত না রাখলে সে আপনাকে খারাপ কাজে ব্যস্ত করে দেবে।
আজেবাজে কল্পনা মনে একদম না আনা
৬ষ্ট কাজ, কোনো ধরণের খারাপ চিন্তা, আজেবাজে কল্পনা মনে একদম না আনা। শয়তান ওসবের কুমন্ত্রণা দিলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে পানাহ চাওয়া। অর্থের প্রতি খেয়াল করে কয়েক বার
أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ পড়ুন। একটু আওয়াজ করে পড়ুন। কমপক্ষে নিজে শুনতে পান এটুকু আওয়াজে পড়ুন। দেখবেন এতে শয়তানের কুমন্ত্রণা কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ ।
এর সাথে হাদিসে আসা আরেকটি দোয়াও পড়ুন,
آمَنْتُ بِاللّٰهِ وَرُسُلِهِ
মুরাকাবার আমল করা
৭ম কাজ, মুরাকাবার আমল করা। আল্লাহ প্রতি মুহুর্তে আমাকে দেখছেন। আমার সব কিছু রেকর্ড হচ্ছে। কেয়ামতের দিন সবার সামনে আমার সব কিছু প্রকাশ করে দেয়া হবে, এ কথাগুলো চিন্তা করা।
আল্লাহ তাআলা এ কথাগুলো সব সময় মনে হাজির রাখার চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন,
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ .
আল্লাহ চোখের খেয়ানত এবং অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত। সূরা গাফির : ১৯
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ .
আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি। তার নফস তাকে যে কুমন্ত্রনা দেয় তা আমি জানি। আর আমি তার গলার শিরা থেকেও নিকটবর্তী। সূরা কাফ : ১৬
'মুরাকাবা ফাইল'টা কিছু কিছু দিন পর পরই পড়বেন। এতে যে কোনো গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য অন্তরে অন্য রকম এক শক্তি অনুভব করবেন ইনশাআল্লাহ।
সব আমল নষ্ট হয়ে যাবে, এ কথা বার বার চিন্তা করা
৮ম কাজ, গোপন গুনাহের কারণে আমার সব আমল নষ্ট হয়ে যাবে, এ কথা বার বার চিন্তা করা।
নিজের মধ্যে লজ্জাবোধ জাগ্রত করা
৯ম কাজ, গুনাহ করার খেয়াল হলে, মনে মনে এ কথা চিন্তা করা, এখন যদি পরিচিত কেউ আমাকে দেখে ফেলে তাহলে কি আমি এই গুনাহ করব? নিশ্চয়ই না। তাহলে আল্লাহ দেখছেন, এ অবস্থায় আমি কীভাবে গুনাহ করি? এভাবে নিজের মধ্যে লজ্জাবোধ জাগ্রত করা। এ বিষয়ে একটি হাদীস এসেছে।
عَنْ سَعِيدِ بن يَزِيدَ الأَزْدِيِّ، أَنَّهُ قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَوْصِنِي ، قَالَ : أُوصِيكَ أَنْ تَسْتَحِيَ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ كَمَا تَسْتَحِي مِنَ الرَّجُلِ الصَّالِحِ .
সাঈদ বিন ইয়াযীদ রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল) আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি কোনো নেককার ব্যক্তিকে যেমন লজ্জা করো, আল্লাহকে (কমপক্ষে) তেমন লজ্জা করো। কিতাবুয যুহদ-ইমাম আহমাদ ৪৬; মু'জামে কাবীর, তাবারানি ৭৭৩৪ (হাদীসটি সহীহ)
এ কথা চিন্তা করা, যদি এ মুহুর্তে মৃত্যু এসে যায়
১০ম কাজ, এ কথা চিন্তা করা, এই গুনাহ করা অবস্থায় হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু এসে যায় তাহলে আমার পরিবার ও পরিচিতরা আমার ব্যাপারে কী ধারণা করবে? আমার হাতে থাকা মোবাইল দেখে কিংবা সামনে থাকা ল্যাপটপ দেখে তারা আমার ব্যাপারে কী ধারনা করবে?
আল্লাহর কাছেই বা আমি কীভাবে মুখ দেখাব? এ অবস্থায় মারা গেলে এ অবস্থায়ই তো আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে।
হাদীসে এসেছে,
يبعث كل عبد على ما مات عليه
(কেয়ামতের দিন) প্রত্যেককে ওই অবস্থায় উঠানো হবে যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে। সহী মুসলিম ২২০৬
একটু চিন্তা করুন, কেউ যদি গুনাহ করা অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে কেয়ামতের দিন পরিচিত অপরিচিত কোটি কোটি মানুষের সামনে ওই অবস্থায়ই উঠবে। তখন যে সে কী পরিমাণ লজ্জা পাবে, তা এখন আমরা কল্পনাও করতে পারব না।
জাহান্নামের আযাব এবং জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখের কথা কল্পনা করা
১১তম কাজ, গুনাহের কুমন্ত্রণা মনে এলে সংগে সংগে জাহান্নামের আযাব এবং ভয়ানক শাস্তির কথা কল্পনা করা, পাশাপাশি জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা কল্পনা করা। এতে ইনশাআল্লাহ খারাপ কাজের চিন্তা মনে থেকে দূর হয়ে যাবে।
সবশেষে এ প্রসংগে সালাফদের কয়েকটি বাণী এবং শাইখ খালেদ হুসাইনান রহ. এর বলা কিছু দোয়া বলেই আজকের কথা শেষ করছি।
প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত বেলাল বিন সাদ রহ. বলতেন,
لا تكن لله وليا في العلانية وعدوه في السر
তুমি প্রকাশ্যে আল্লাহর ওলি আর গোপনে তাঁর দুশমন হয়ো না।
সালাফদের মধ্যে কোনো এক বুযুর্গ বলতেন,
إياك أن تكون عدوا لابليس في العلانية، وصديقا له في السر
সাবধান! এমন যেন না হয় যে, তুমি প্রকাশ্যে ইবলিসের দুশমন আর গোপনে তার বন্ধু ।
ইবনুল আরাবি রহ. বলতেন,
أخسر الخاسرين من أبدى لِلنَّاسِ صَالِح أعماله، وبارز بالقبيح من هُوَ أقرب إِلَيْهِ من حبل الوريد
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হল সে, যে মানুষের সামনে তার ভালো আমলগুলো প্রকাশ আর আল্লাহর সামনে -যিনি তার শাহরগ অপেক্ষাও কাছে- খারাপ আমলগুলো প্রকাশ করে।
শাইখ খালেদ হুসাইনান রহ. তাঁর 'কাইফা নারতাকী' কিতাবে আল্লাহর পথের পথিকের রুহানি খাদ্য শিরোনামে কিছু আমলের কথা বলেছেন। ওখান থেকে শুধু প্রথম তিনটি আমলের কথা উল্লেখ করছি।
শাইখ বলেন, এক. খুব অনুনয় বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা। তাঁর যিকির, শোকর এবং উত্তমরূপে ইবাদত করার জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া।
হাদীসে আসা দোয়াটি পড়া-
اللَّهُمَّ أعِنِّي عَلى ذِكْرِكَ، وشُكْرِكَ، وحُسْنِ عِبادَتِكَ
দুই. নিচের দোয়াগুলো বেশি বেশি করে করা-
رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيَ كُلَّهُ وَلاَ تَكِلْنِيْ إِلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
لا حَوْلَ ولا قوَّةَ إلّا باللهِ
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِين
তিন. বেশি বেশি ইস্তিগফার করা।
ওপরের আমল ও দোয়াগুলোর সাথে এ দোয়াগুলোও আমরা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
শাইখ রহ . ওই কিতাবের অন্য এক জায়গায় উল্লেখ করেন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে কেউ কোনো কাজে অভ্যস্ত হতে চাইলে সে যদি একটানা ২১ দিন পর্যন্ত কাজটি করতে পারে তাহলে সেটি তার জন্য এত সহজ হয়ে যাবে, যা সে কল্পনাও করেনি। এটি করণীয় কাজ কিংবা বর্জনীয় কাজ, উভয় ক্ষেত্রেই।
আজ কথা এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কথাগুলোর ওপর আমল করার তাওফিক দান করেন এবং আমাদের সবাইকে সব ধরণের গুনাহ থেকে, বিশেষভাবে গোপন গুনাহ থেকে হেফাজত করেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর দীনের জন্য কবুল করেন, শাহাদাত পর্যন্ত জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফীক দান করেন এবং আমাদের সবাইকে সর্বোচ্চ জান্নাত জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন আমীন।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وأصحابه أجمعين
وآخردعوانا أن الحمد لله رب
Comment