তারুণ্য হলো জীবন যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময়
প্রিয় যুবক ভাই!
তারুণ্য হচ্ছে কাঁচা বয়সের একটি উদ্দীপনার নাম। তারুণ্য হচ্ছে তীব্র স্রোতে উজান সাঁতারে পাড়ি দেয়ার একটি আর্ট । তারুণ্য একটি অদম্য শক্তি। এটি অপ্রতিরোধ্য ঝড়। একটি দৃপ্ত শপথ। একটি অপারেজয় দুর্জয় ঘাঁটি। তারুণ্য এক অসাধ্য সাধনের কারিগর। অফুরন্ত প্রাণশক্তির বাতিঘর।
আমার মুহতারাম উস্তাদ .... হাফিজাহুল্লাহর মুখে শুনা।[১] তিনি বলতেন-তারুণ্যতাকে তুমি কয়েকভাবে সংঙ্গায়িত করতে পারবে। যেমন ধরো-
১.সৃষ্টিগত বাহ্যিক তারুণ্যতা-
যার বয়স, যৌবনশক্তি, মেধাশক্তি ১৮ থেকে ৩০ পর্যন্ত তুঙ্গে পৌঁছে। ব্যক্তি, সমাজ, জাতি তাদের সৌন্দর্য মেধামননে মুগ্ধ হয়। এটাই হাকিকতান তারুণ্যতা সৃষ্টিগত দিক থেকে। কিন্তু শরীয়ার দিক থেকে তারুণ্যতার ঘোষণা তখনই আসে যখন একজন যুবকের চিন্তা-চেতনায়-চেহারায় দ্বীনের লাবণ্যতার চিন্হ বিশেষের দেখা মিলে। জন্মগতভাবে সকল মানুষ সৃষ্টিগত উপাদান নিয়ে জন্মায়। কিন্তু একটা উপাদান যুবক বয়সটাতে নিয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ করতে হয় সেটা হলো দ্বীনের রুপ লাবণ্যতা। তাছাড়া সে মানব হতে পারে। যুবক হতে পারে। তরুণ হতে পারে। তবে সেটা লেজ কাটা পশুর মত। কতটা সুন্দর দেখাবে বলুন তো? একদম বিশ্রী! তাই তো...এই শ্রেণীর মাঝে শরীয়ার তারুণ্যতা না আসা পর্যন্ত এরা মুনাফিক ও গাফেলদের কাতারে থেকে যায়।
২.সৃষ্টিগত বাহ্যিক তারুণ্যতাহীন-
যেমন কুশ্রী ও বিশ্রী মানুষ। কিন্তু শরীয়ার দিক থেকে পূর্ণ লাবণ্যতা তার মাঝে উপচে পড়ছে। আবার বয়স বাড়ে কিন্তু শরীরের গঠনের কোন পরিবর্তন নেই। দেখতে খারাপ দেখায়। বাহ্যিক তারুণ্যতা বিদ্যমান নেই। কিন্তু শরীয়ার রুপ লাবণ্য তাকে ঘিরে রেখেছে। পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় ঝলটলমল করছে। এ ব্যক্তি মুফলিহুনদের কাতারে শামিল হচ্ছে ।
৩.সৃষ্টিগত ও দ্বীনগত দিক থেকে তারুণ্যতা বিদ্যমান। তাদের নিয়েই আমার মূল আলোচনা।
এসব তরুণদের তারুণ্যতা নিয়ন্ত্রিত থাকে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে হারিয়ে যায় না। গতিময় হয়ে আস্তে চলতে ভুলে যায় না। আবার পাশ্ব রাস্তায়ও চলে তবে দিকবেদিক তাকিয়ে নয়। পূর্ণ সজাগ থেকে। মাইন্ডকন্টল ঠিক রেখে। কারণ একটু ভুল করে দিবে অন্যের শত দিনের মাশুল। তাই চোখ কান খোলা রেখে নাকটা আরেকটু খাড়া করে তারপর চলে। আইনাল একিন ও ইলমাল একিনের কিঞ্চিৎ নমুনা চলে আসে। এদেরকে বলা হয় নুরুন আলা নুর। এরাই সফল।
প্রিয় যুবক ভাই!
এই শ্রেণীর তরুণরা যদি রবের একটু যিকির করে। উম্মাহর একটু ফিকির করে। তাহলে আল্লাহ ভিষণ খুশি হন। শুধুই খুশি না বরং সাথে সাথে পুরষ্কারের ঘোষণা। কেন যুবক ভাই আপনি কি শুনেননি! হাদিসে ইরশাদ হয়েছে -কেয়ামতের কঠিন ময়দানে সাত শ্রেণির মানুষ আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া পাবে। তার মধ্যে অন্যতম একদল হলো ঐ সমস্ত তরুণরা যারা তাদের জীবন যৌবন আল্লাহর রাস্তায় কাটিয়েছে। তাহলে কিসের ভয়? কিসের ডর? কোন জিনিসের দুরাশা। কোথথেকে আসলো এত হতাশা?
এই সমস্ত তরুণদের সামান্য উদ্দামতা সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো দুঃসাহস যেমন অন্তরে জাগে ঠিক তেমনি এ বয়সে হিমালয় পর্বত জয় করার মতো অসীম শক্তিও রাখে। তারা যেমন তাবুক উহুদ আর বদরে রণ কৌশলী ঠিক তেমনি শাম আর হিন্দের ভূমিতে অস্ত্র চালনায় পারদর্শী। তাদের কালের গর্ভে যেমন ধারণ করেছিলো খালিদ কাসিম আর তারিক আমাদের কালও তো গর্ভে ধারণ করেছে আইমান ইমরান আর আসেম। তাহলে তো আর হীনমন্যতার কোন কারণ দেখছি না! পিছিয়ে থাকার কোন ভূমিকা পাচ্ছিনা।
প্রিয় যুবক ভাই!
তুমি কষ্ট করে ইতিহাসের আয়নায় একটু তাকাও। আরে কি বলছি! ইতিহাসের পাতায়। দেখতে পাবে না জল, স্থল, আকাশ, মহাকাশ, পর্বত কোথায় নেই তারুণ্যের ছাপ। যেখানেই চোখ পড়বে সেখানেই দেখবে তারুণ্যের জয়গান। বিজয়ের শ্লোগান! আল্লাহু আকবার কাবি'রা। আল্লাহু আকবার কাবি'রা।
আপনি তারুণ্য উচ্ছ্বাসের কথা বলছেন?
তা কখনো কখনো সময়ের সঙ্গে বা নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমার সাথে বেঁধে রেখে বর্ণনা করা যায় না। অসম্ভবকে সম্ভব করতে ঝুঁকি নেয়ার বয়স হলো তারুণ্যের সময়সীমাতে। শরয়ী হুটহাট আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠার বয়স হলো তারুণ্যের বয়সটাতে। তারুণ্যের জীবনটা সত্যিই মধুর, সুখকর। যদিও তাতে বেশি পাওয়া যায় নিম পাতার তিক্ত রস। কষ্টের ছোট্ট বড় খালবিল। নির্যাতনের সাগর মহাসাগর। তবুও তো লাভবান। কারণ এরপরই যে মানযিলে মাকসাদ। রাহে জান্নাত।
আরেকটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলি-
এখানে নেই কোনো সাংসারিক বড় কোন জটিলতা। নেই কোনো ভাবনার অবকাশ। জীবন এখানে দীপ্তকণ্ঠে গেয়ে ওঠে- প্রত্যয় আর চেতনার উৎস হচ্ছে তারুণ্যতা। অনুপ্রেরণার অজেয় শক্তি। যারা নিজ প্রতিভায়, উদ্যমে, কর্মযজ্ঞে বদলে দেয় তারাই ফা'ইজিন। তাদের নিয়েই কবিতা লিখেছেন ইবনে রুশদ আর খালদুন আর দ্রোহের-বিপ্লবের হাজারো নাশিদ।
তরুণ বয়সটাই হচ্ছে শরয়ী নানা রোমাঞ্চকর কাজে পা বাড়ানোর শ্রেষ্ঠ সময়। যেমন অস্ত্র হাতে তরবারি কাঁধে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো। তাসবীহ হাতে জায়নামাজ কাঁধে সালাতের কাতারে গিয়ে নতজানু হয়ে দাঁড়ানো।
আস্থার হাতটা ধরে অজানাকে জানতে বেরিয়ে পড়ার মুখ্যম সুযোগ। ইলম অন্বেষণের। ইলম বিলানোর। ইলম বাস্তবায়ন করানোর। সে অনুযায়ী আমল করানোর। বিধান মানবে তো কল্লা ঘাড়ে থাকবে। অমান্য করবে তো কল্লা ফাওত হয়ে যাবে। দ্বীনের আনুগত্য করবে তো একে অপরের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন বেড়ে যাবে। দেয়া নেয়ার সখ্যতা গড়ে উঠবে। নাফরমানি করবে তো হুদুদ কিসাস কায়েম হয়ে যাবে।
তারুণ্যতা জয়কে হাতের মুঠোয় আনার বয়স। অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রাণ চঞ্চলে একটি কেন্দ্রবিন্দু। এ বয়সটাতে যেমন নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে কাজ করা উচিত ঠিক তেমনি দেশ দশের ভবিষ্যতের জন্যও ভালো কাজে আত্মনিয়োগ করা অত্যাবশ্যকীয়।
প্রিয় যুবক ভাই!
ইসলামে তারুণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তারুণ্য মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। এটা জীবন মহীরুহের বিকশিত চারাগাছ। তারুণ্য তথা যৌবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ইহকালে কল্যাণ ও পরকালীন জীবনে মুক্তির বিশাল বাগিচায় উপনীত হবে। মানবজীবন মানুষের মহামূল্যবান এক সম্পদ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে তারুণ্য তথা যৌবন।
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন সেসব তরুণদের ইবাদাতে যারা তাদের জীবন যৌবন আল্লাহর রাজি খুশিতে কাটিয়েছে।[২] অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- হাশরের ময়দানে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে। তার মধ্যে একটি হচ্ছেঃ একজন যুবক তার যৌবনকাল কিভাবে কাটিয়েছে।[৩]
তরুণকাল অত্যন্ত মূল্যবান ও মর্যাদাপূর্ণ। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটি আন্দোলনে বিজয়ের সাফ্যলের পেছনে রয়েছে তরুণ সমাজের আত্মত্যাগ। এই তরুণদের রক্তের বিনিময়ে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে অসংখ্য রক্তচোষা রাজ্যসীমা। ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে আছে তরুণদের আত্মত্যাগের স্মৃতি।
রাহমাতাল লিল আলামিন হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বমানবতার কল্যাণে তরুণদের নিয়েই তাঁর তরুণ বয়সে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংগঠন হিলফুল ফুজুল যুব সংগঠের নজীর সৃষ্টি করেছিলেন।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে মাঠে নেমেছেন তখন সর্বাগ্রে তরুণরাই এগিয়ে এসেছেন। হযরত উমর, আলি, উসমান, মুসআব রাদিআল্লাহুদের মত তাগড়া নওজোয়ানরা এগিয়ে এসেছেন। অনেক সাহাবী তরুণ বয়সে ইসলাম কবুল করেছেন। আসহাবে কাহাফে যারা ছিলেন তারাও ছিলেন সাত তরুণ। আসহাবে উখদুদের ঘটনাও তরুণকে কেন্দ্র করে। তাদের কাজগুলো আল্লাহর কাছে এতই পছন্দ হয়েছে তিনি স্ববিস্তারিত তাঁর প্রিয় বন্ধুকে ফেরেশতা জিবরাইলের মাধ্যমে শুনিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
হে নবী! আপনার কাছে আমি তাদের (আসহাবে কাহাফ) ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি, তারা ছিল কয়েকজন তরুণ। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছিলো এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছি। [৪]
প্রিয় যুবক ভাই!
এ সমস্ত যুবকদের ইমান আর হিজরত করাই যদি আল্লাহর কাছে এত দামী হয় তাহলে একটু চিন্তা করুন তো-যারা ইমান আনার পাশাপাশি হিজরত করেছে এবং জিহাদ করছে তাদের মর্যাদা কেমন হবে? চিন্তা করা লাগবে না আল্লাহ সূরা তাওবাতে বলেই দিয়েছেন-
اعظم درجة عند الله ☆
তাদের মর্যাদা আল্লাহর নিকট অধিকগুণ বেশি।
তাছাড়া ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলাল রা. ছিলেন তরুণ। হযরত ইব্রাহিম আ. যখন মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পাষণ্ড নমরুদের তৈরীকৃত আগুনে নিক্ষিপ্ত হন তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হযরত ইউসুফ আ. যখন কারাগারে ছিলেন তখন তিনি ছিলেন তরুণ । হযরত ইউনুস আ.কে যখন সমুদ্রের মাছ গিলে ফেলে তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হযরত দাউদ আ. যখন জালিম শাসক জালুতকে হত্যা করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ।[৫]
দাওয়াতের ময়দানে তরুণেরা যেমন সক্রিয় ছিলেন যুদ্ধের ময়দানেও তারা ছিলেন সক্রিয়। বদরের যুদ্ধে মুআজ ও মুআওয়্যিজ নামে দু’জন তরুণ সাহাবি ইসলামের ঘোর দুশমন আবু জাহেলকে হত্যা করেন। তখন তারাও ছিলেন তরুণ।
খায়বার বিজয়ী বীর সেনানী শেরে খোদা হযরত আলী রা. যিনি কামুছ দুর্গের লৌহকপাট উপড়িয়ে ফেলে এক মুষ্টিতে নিয়ে যুদ্ধের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। মু’তার যুদ্ধে সেনাপতি ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। তিনিও ছিলেন তরুণ। স্পেন বিজয়ী সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ। তিনিও ছিলেন তরুণ।
এ ছাড়া অন্যান্য যুদ্ধের সেনাপতি হযরত জাফর তৈয়্যার রা. হযরত যায়েদ ইবনে হারিস রা. হযরত যুবায়ের রা. হযরত তালহা রা. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. হযরত আবদুল্লা ইবনে মাসউদ রা. সহ প্রায় সাহবায়ে কেরামি রা. ছিলেন তরুণ। [৬]
এমনিভাবে ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে তরুণদের আত্মত্যাগের কথা। ভারত বিজয়ী সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিম যখন ভারতে ইসলাম প্রচার করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। কুতাইবা বিন মুসলিম যিনি এশিয়ার মধ্যে ইসলামের বিস্তার ঘটান তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। বাংলাদেশেও অনেক আলেম-উলামা, ওলী-আউলিয়া ইসলামের প্রচার-প্রসার করেন তাদের প্রায় সবাই ছিলেন তরুণ।
১৯২৯ সালে যখন ভারতের কুখ্যাত কাফির রাজপাল রঙ্গিলা রাসূল নামে একটি বই প্রকাশ করে এবং এ বইটিতে মহানবী সা:-এর চরিত্র হনন ও রাসূল সা সম্পর্কে কটূক্তি করে। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আলিম উদ্দিন নামে এক ভাই শহীদ হন। তিনিও ছিলেন তরুণ।
বাংলার মাটিতে দীপ্তকন্ঠে শির উঁচু করে নবীন প্রবীন আলেমদের পেছনে ফেলে যারা শাতিমে রাসূল হত্যার দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়ে নিয়েছেন তারাও কিন্তু তরুণ। কসাই মোদি বিরোধী আন্দোলনে যে বিশজন ভাই শহীদ হয়েছেন তারাও কিন্তু তরুণ। শাতিম হত্যার দায়ে ফাসির রায় শুনে যে পাঁচজন ভাই হেসে খেলে আদালত প্রাঙ্গন থেকে বেরিয়ে এসেছেন তারা হলো তাগড়া বীর নওজোয়ান।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার অগ্রনায়ক
শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন তরুণ। বামিয়ান প্রদেশে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংসকালে আমিরুল মুজাহিদীন মোল্লা উমর রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন তরুণ। ১৯৯২ এর বাবরী মসজিদ রার আন্দোলন। ১৯৯৪ এর নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী আন্দোলন। মুফতি আমিনী রাহিমাহুল্লাহ এর ফাতওয়াবিরোধী আন্দোলন। ২০১১ এর কুরআনবিরোধী রায় বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন। সবশেষে চলমান ২০১৩ নব্য নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলনেই তরুণ আলেমরা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। [৭]
এ ধরনের আরো অসংখ্য উপমা পেশ করা যাবে। সবগুলোর পেছনে রয়েছে তরুণদের বলিষ্ঠ ভূমিকা। এখনো তরুণেরাই ইসলাম ও মুসলমানদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে তরুণ মুজাহিদীনদের পদচারণায় আজ মুখরিত। বিশ্বে চলছে আজ তরুণদের জয় জয়কার। জাতির প্রাণের স্পন্দন তরুণসমাজ। উম্মাহর হৃদয়খন্ড তরুণ মুজাহিদীন। এরা যে উদ্দেশ্যেই জেগেছে সে উদ্দেশই হাসিল করেছে। তারা যে আন্দোলনে নেমেছে সে আন্দোলনেরই সফলতা এনেছে। তবে তাদের আন্দোলন অস্ত্রের আন্দোলন। তাদের আন্দোলন তরবারির আন্দোলন। তাদের আন্দোলন নাস্তিক মুরতাদের কল্লা ফওত করার আন্দোলন। তাদের আন্দোলন অস্ত্র কাঁধে তুলার আন্দোলন। রবের বিধান কায়েমের আন্দোলন। ব্যানার আর প্যাকাডের আন্দোলন নয়। মানববন্ধন আর কাতারবদ্ধের আন্দোলন নয়। স্বর উঁচু করা আর তরবারি নিচু করার আন্দোলন নয়।
প্রিয় যুবক ভাই!
মুসলিম উম্মাহর এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লাহ রাসূল ও ইসলামের দুশমনদের উৎখাত করে শান্তির সমাজ তথা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণদেরই ভাবতে হবে। তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। দাঁড়িয়ে-বসে, ঘুমিয়ে-শুয়ে চিন্তার মিনারায় কালেমার পতাকা উড়াতে হবে। আজ চার দিকে শুধু মাজলুমানের বুকফাটা কান্না, করুণ আর্তনাদ। ইসলামের সব তরুণ শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ইসলাম ও মুসলমানদের নস্যাৎ করে দিতে। তাই তরুণদের মায়ের আঁচলে লুকিয়ে নয়। বোনের স্নেহের বাধায় আটকে নয়। বাবার নিরিহ চাহনির আড়ালে লুকিয়ে নয়। বরং নরম কোমল মায়ামিশ্রিত কর্কষ ভাষার সকল আহবানকে প্রত্যাখান করে সবরকম চড়াই-উতরাই পথ পাড়ি দিয়ে শাহাদাতের তামান্না নিয়ে ছুটে আসতেই হবে।
তথ্যাদিঃ
১.কাসাসুন নাবিয়্যিন ঘন্টায় শুনা।
২.সহীহ বোখারী।
৩.সহীহ বোখারী।
৪.সূরা কাহাফ ১৩
৫.আস-সিরাত লিল আতফাল ১ খন্ড।
৬.গযওয়াতুর রাসূল।
৭.আদর্শ যুবককের গল্প। ছোট্ট পুস্তিকা।
প্রিয় যুবক ভাই!
তারুণ্য হচ্ছে কাঁচা বয়সের একটি উদ্দীপনার নাম। তারুণ্য হচ্ছে তীব্র স্রোতে উজান সাঁতারে পাড়ি দেয়ার একটি আর্ট । তারুণ্য একটি অদম্য শক্তি। এটি অপ্রতিরোধ্য ঝড়। একটি দৃপ্ত শপথ। একটি অপারেজয় দুর্জয় ঘাঁটি। তারুণ্য এক অসাধ্য সাধনের কারিগর। অফুরন্ত প্রাণশক্তির বাতিঘর।
আমার মুহতারাম উস্তাদ .... হাফিজাহুল্লাহর মুখে শুনা।[১] তিনি বলতেন-তারুণ্যতাকে তুমি কয়েকভাবে সংঙ্গায়িত করতে পারবে। যেমন ধরো-
১.সৃষ্টিগত বাহ্যিক তারুণ্যতা-
যার বয়স, যৌবনশক্তি, মেধাশক্তি ১৮ থেকে ৩০ পর্যন্ত তুঙ্গে পৌঁছে। ব্যক্তি, সমাজ, জাতি তাদের সৌন্দর্য মেধামননে মুগ্ধ হয়। এটাই হাকিকতান তারুণ্যতা সৃষ্টিগত দিক থেকে। কিন্তু শরীয়ার দিক থেকে তারুণ্যতার ঘোষণা তখনই আসে যখন একজন যুবকের চিন্তা-চেতনায়-চেহারায় দ্বীনের লাবণ্যতার চিন্হ বিশেষের দেখা মিলে। জন্মগতভাবে সকল মানুষ সৃষ্টিগত উপাদান নিয়ে জন্মায়। কিন্তু একটা উপাদান যুবক বয়সটাতে নিয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ করতে হয় সেটা হলো দ্বীনের রুপ লাবণ্যতা। তাছাড়া সে মানব হতে পারে। যুবক হতে পারে। তরুণ হতে পারে। তবে সেটা লেজ কাটা পশুর মত। কতটা সুন্দর দেখাবে বলুন তো? একদম বিশ্রী! তাই তো...এই শ্রেণীর মাঝে শরীয়ার তারুণ্যতা না আসা পর্যন্ত এরা মুনাফিক ও গাফেলদের কাতারে থেকে যায়।
২.সৃষ্টিগত বাহ্যিক তারুণ্যতাহীন-
যেমন কুশ্রী ও বিশ্রী মানুষ। কিন্তু শরীয়ার দিক থেকে পূর্ণ লাবণ্যতা তার মাঝে উপচে পড়ছে। আবার বয়স বাড়ে কিন্তু শরীরের গঠনের কোন পরিবর্তন নেই। দেখতে খারাপ দেখায়। বাহ্যিক তারুণ্যতা বিদ্যমান নেই। কিন্তু শরীয়ার রুপ লাবণ্য তাকে ঘিরে রেখেছে। পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় ঝলটলমল করছে। এ ব্যক্তি মুফলিহুনদের কাতারে শামিল হচ্ছে ।
৩.সৃষ্টিগত ও দ্বীনগত দিক থেকে তারুণ্যতা বিদ্যমান। তাদের নিয়েই আমার মূল আলোচনা।
এসব তরুণদের তারুণ্যতা নিয়ন্ত্রিত থাকে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে হারিয়ে যায় না। গতিময় হয়ে আস্তে চলতে ভুলে যায় না। আবার পাশ্ব রাস্তায়ও চলে তবে দিকবেদিক তাকিয়ে নয়। পূর্ণ সজাগ থেকে। মাইন্ডকন্টল ঠিক রেখে। কারণ একটু ভুল করে দিবে অন্যের শত দিনের মাশুল। তাই চোখ কান খোলা রেখে নাকটা আরেকটু খাড়া করে তারপর চলে। আইনাল একিন ও ইলমাল একিনের কিঞ্চিৎ নমুনা চলে আসে। এদেরকে বলা হয় নুরুন আলা নুর। এরাই সফল।
প্রিয় যুবক ভাই!
এই শ্রেণীর তরুণরা যদি রবের একটু যিকির করে। উম্মাহর একটু ফিকির করে। তাহলে আল্লাহ ভিষণ খুশি হন। শুধুই খুশি না বরং সাথে সাথে পুরষ্কারের ঘোষণা। কেন যুবক ভাই আপনি কি শুনেননি! হাদিসে ইরশাদ হয়েছে -কেয়ামতের কঠিন ময়দানে সাত শ্রেণির মানুষ আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া পাবে। তার মধ্যে অন্যতম একদল হলো ঐ সমস্ত তরুণরা যারা তাদের জীবন যৌবন আল্লাহর রাস্তায় কাটিয়েছে। তাহলে কিসের ভয়? কিসের ডর? কোন জিনিসের দুরাশা। কোথথেকে আসলো এত হতাশা?
এই সমস্ত তরুণদের সামান্য উদ্দামতা সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো দুঃসাহস যেমন অন্তরে জাগে ঠিক তেমনি এ বয়সে হিমালয় পর্বত জয় করার মতো অসীম শক্তিও রাখে। তারা যেমন তাবুক উহুদ আর বদরে রণ কৌশলী ঠিক তেমনি শাম আর হিন্দের ভূমিতে অস্ত্র চালনায় পারদর্শী। তাদের কালের গর্ভে যেমন ধারণ করেছিলো খালিদ কাসিম আর তারিক আমাদের কালও তো গর্ভে ধারণ করেছে আইমান ইমরান আর আসেম। তাহলে তো আর হীনমন্যতার কোন কারণ দেখছি না! পিছিয়ে থাকার কোন ভূমিকা পাচ্ছিনা।
প্রিয় যুবক ভাই!
তুমি কষ্ট করে ইতিহাসের আয়নায় একটু তাকাও। আরে কি বলছি! ইতিহাসের পাতায়। দেখতে পাবে না জল, স্থল, আকাশ, মহাকাশ, পর্বত কোথায় নেই তারুণ্যের ছাপ। যেখানেই চোখ পড়বে সেখানেই দেখবে তারুণ্যের জয়গান। বিজয়ের শ্লোগান! আল্লাহু আকবার কাবি'রা। আল্লাহু আকবার কাবি'রা।
আপনি তারুণ্য উচ্ছ্বাসের কথা বলছেন?
তা কখনো কখনো সময়ের সঙ্গে বা নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমার সাথে বেঁধে রেখে বর্ণনা করা যায় না। অসম্ভবকে সম্ভব করতে ঝুঁকি নেয়ার বয়স হলো তারুণ্যের সময়সীমাতে। শরয়ী হুটহাট আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠার বয়স হলো তারুণ্যের বয়সটাতে। তারুণ্যের জীবনটা সত্যিই মধুর, সুখকর। যদিও তাতে বেশি পাওয়া যায় নিম পাতার তিক্ত রস। কষ্টের ছোট্ট বড় খালবিল। নির্যাতনের সাগর মহাসাগর। তবুও তো লাভবান। কারণ এরপরই যে মানযিলে মাকসাদ। রাহে জান্নাত।
আরেকটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলি-
এখানে নেই কোনো সাংসারিক বড় কোন জটিলতা। নেই কোনো ভাবনার অবকাশ। জীবন এখানে দীপ্তকণ্ঠে গেয়ে ওঠে- প্রত্যয় আর চেতনার উৎস হচ্ছে তারুণ্যতা। অনুপ্রেরণার অজেয় শক্তি। যারা নিজ প্রতিভায়, উদ্যমে, কর্মযজ্ঞে বদলে দেয় তারাই ফা'ইজিন। তাদের নিয়েই কবিতা লিখেছেন ইবনে রুশদ আর খালদুন আর দ্রোহের-বিপ্লবের হাজারো নাশিদ।
তরুণ বয়সটাই হচ্ছে শরয়ী নানা রোমাঞ্চকর কাজে পা বাড়ানোর শ্রেষ্ঠ সময়। যেমন অস্ত্র হাতে তরবারি কাঁধে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো। তাসবীহ হাতে জায়নামাজ কাঁধে সালাতের কাতারে গিয়ে নতজানু হয়ে দাঁড়ানো।
আস্থার হাতটা ধরে অজানাকে জানতে বেরিয়ে পড়ার মুখ্যম সুযোগ। ইলম অন্বেষণের। ইলম বিলানোর। ইলম বাস্তবায়ন করানোর। সে অনুযায়ী আমল করানোর। বিধান মানবে তো কল্লা ঘাড়ে থাকবে। অমান্য করবে তো কল্লা ফাওত হয়ে যাবে। দ্বীনের আনুগত্য করবে তো একে অপরের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন বেড়ে যাবে। দেয়া নেয়ার সখ্যতা গড়ে উঠবে। নাফরমানি করবে তো হুদুদ কিসাস কায়েম হয়ে যাবে।
তারুণ্যতা জয়কে হাতের মুঠোয় আনার বয়স। অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রাণ চঞ্চলে একটি কেন্দ্রবিন্দু। এ বয়সটাতে যেমন নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে কাজ করা উচিত ঠিক তেমনি দেশ দশের ভবিষ্যতের জন্যও ভালো কাজে আত্মনিয়োগ করা অত্যাবশ্যকীয়।
প্রিয় যুবক ভাই!
ইসলামে তারুণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তারুণ্য মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। এটা জীবন মহীরুহের বিকশিত চারাগাছ। তারুণ্য তথা যৌবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ইহকালে কল্যাণ ও পরকালীন জীবনে মুক্তির বিশাল বাগিচায় উপনীত হবে। মানবজীবন মানুষের মহামূল্যবান এক সম্পদ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে তারুণ্য তথা যৌবন।
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন সেসব তরুণদের ইবাদাতে যারা তাদের জীবন যৌবন আল্লাহর রাজি খুশিতে কাটিয়েছে।[২] অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- হাশরের ময়দানে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে। তার মধ্যে একটি হচ্ছেঃ একজন যুবক তার যৌবনকাল কিভাবে কাটিয়েছে।[৩]
তরুণকাল অত্যন্ত মূল্যবান ও মর্যাদাপূর্ণ। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটি আন্দোলনে বিজয়ের সাফ্যলের পেছনে রয়েছে তরুণ সমাজের আত্মত্যাগ। এই তরুণদের রক্তের বিনিময়ে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে অসংখ্য রক্তচোষা রাজ্যসীমা। ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে আছে তরুণদের আত্মত্যাগের স্মৃতি।
রাহমাতাল লিল আলামিন হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বমানবতার কল্যাণে তরুণদের নিয়েই তাঁর তরুণ বয়সে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংগঠন হিলফুল ফুজুল যুব সংগঠের নজীর সৃষ্টি করেছিলেন।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে মাঠে নেমেছেন তখন সর্বাগ্রে তরুণরাই এগিয়ে এসেছেন। হযরত উমর, আলি, উসমান, মুসআব রাদিআল্লাহুদের মত তাগড়া নওজোয়ানরা এগিয়ে এসেছেন। অনেক সাহাবী তরুণ বয়সে ইসলাম কবুল করেছেন। আসহাবে কাহাফে যারা ছিলেন তারাও ছিলেন সাত তরুণ। আসহাবে উখদুদের ঘটনাও তরুণকে কেন্দ্র করে। তাদের কাজগুলো আল্লাহর কাছে এতই পছন্দ হয়েছে তিনি স্ববিস্তারিত তাঁর প্রিয় বন্ধুকে ফেরেশতা জিবরাইলের মাধ্যমে শুনিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
হে নবী! আপনার কাছে আমি তাদের (আসহাবে কাহাফ) ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি, তারা ছিল কয়েকজন তরুণ। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছিলো এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছি। [৪]
প্রিয় যুবক ভাই!
এ সমস্ত যুবকদের ইমান আর হিজরত করাই যদি আল্লাহর কাছে এত দামী হয় তাহলে একটু চিন্তা করুন তো-যারা ইমান আনার পাশাপাশি হিজরত করেছে এবং জিহাদ করছে তাদের মর্যাদা কেমন হবে? চিন্তা করা লাগবে না আল্লাহ সূরা তাওবাতে বলেই দিয়েছেন-
اعظم درجة عند الله ☆
তাদের মর্যাদা আল্লাহর নিকট অধিকগুণ বেশি।
তাছাড়া ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলাল রা. ছিলেন তরুণ। হযরত ইব্রাহিম আ. যখন মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পাষণ্ড নমরুদের তৈরীকৃত আগুনে নিক্ষিপ্ত হন তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হযরত ইউসুফ আ. যখন কারাগারে ছিলেন তখন তিনি ছিলেন তরুণ । হযরত ইউনুস আ.কে যখন সমুদ্রের মাছ গিলে ফেলে তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হযরত দাউদ আ. যখন জালিম শাসক জালুতকে হত্যা করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ।[৫]
দাওয়াতের ময়দানে তরুণেরা যেমন সক্রিয় ছিলেন যুদ্ধের ময়দানেও তারা ছিলেন সক্রিয়। বদরের যুদ্ধে মুআজ ও মুআওয়্যিজ নামে দু’জন তরুণ সাহাবি ইসলামের ঘোর দুশমন আবু জাহেলকে হত্যা করেন। তখন তারাও ছিলেন তরুণ।
খায়বার বিজয়ী বীর সেনানী শেরে খোদা হযরত আলী রা. যিনি কামুছ দুর্গের লৌহকপাট উপড়িয়ে ফেলে এক মুষ্টিতে নিয়ে যুদ্ধের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। মু’তার যুদ্ধে সেনাপতি ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। তিনিও ছিলেন তরুণ। স্পেন বিজয়ী সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ। তিনিও ছিলেন তরুণ।
এ ছাড়া অন্যান্য যুদ্ধের সেনাপতি হযরত জাফর তৈয়্যার রা. হযরত যায়েদ ইবনে হারিস রা. হযরত যুবায়ের রা. হযরত তালহা রা. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. হযরত আবদুল্লা ইবনে মাসউদ রা. সহ প্রায় সাহবায়ে কেরামি রা. ছিলেন তরুণ। [৬]
এমনিভাবে ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে তরুণদের আত্মত্যাগের কথা। ভারত বিজয়ী সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিম যখন ভারতে ইসলাম প্রচার করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। কুতাইবা বিন মুসলিম যিনি এশিয়ার মধ্যে ইসলামের বিস্তার ঘটান তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। বাংলাদেশেও অনেক আলেম-উলামা, ওলী-আউলিয়া ইসলামের প্রচার-প্রসার করেন তাদের প্রায় সবাই ছিলেন তরুণ।
১৯২৯ সালে যখন ভারতের কুখ্যাত কাফির রাজপাল রঙ্গিলা রাসূল নামে একটি বই প্রকাশ করে এবং এ বইটিতে মহানবী সা:-এর চরিত্র হনন ও রাসূল সা সম্পর্কে কটূক্তি করে। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আলিম উদ্দিন নামে এক ভাই শহীদ হন। তিনিও ছিলেন তরুণ।
বাংলার মাটিতে দীপ্তকন্ঠে শির উঁচু করে নবীন প্রবীন আলেমদের পেছনে ফেলে যারা শাতিমে রাসূল হত্যার দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়ে নিয়েছেন তারাও কিন্তু তরুণ। কসাই মোদি বিরোধী আন্দোলনে যে বিশজন ভাই শহীদ হয়েছেন তারাও কিন্তু তরুণ। শাতিম হত্যার দায়ে ফাসির রায় শুনে যে পাঁচজন ভাই হেসে খেলে আদালত প্রাঙ্গন থেকে বেরিয়ে এসেছেন তারা হলো তাগড়া বীর নওজোয়ান।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার অগ্রনায়ক
শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন তরুণ। বামিয়ান প্রদেশে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংসকালে আমিরুল মুজাহিদীন মোল্লা উমর রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন তরুণ। ১৯৯২ এর বাবরী মসজিদ রার আন্দোলন। ১৯৯৪ এর নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী আন্দোলন। মুফতি আমিনী রাহিমাহুল্লাহ এর ফাতওয়াবিরোধী আন্দোলন। ২০১১ এর কুরআনবিরোধী রায় বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন। সবশেষে চলমান ২০১৩ নব্য নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলনেই তরুণ আলেমরা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। [৭]
এ ধরনের আরো অসংখ্য উপমা পেশ করা যাবে। সবগুলোর পেছনে রয়েছে তরুণদের বলিষ্ঠ ভূমিকা। এখনো তরুণেরাই ইসলাম ও মুসলমানদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে তরুণ মুজাহিদীনদের পদচারণায় আজ মুখরিত। বিশ্বে চলছে আজ তরুণদের জয় জয়কার। জাতির প্রাণের স্পন্দন তরুণসমাজ। উম্মাহর হৃদয়খন্ড তরুণ মুজাহিদীন। এরা যে উদ্দেশ্যেই জেগেছে সে উদ্দেশই হাসিল করেছে। তারা যে আন্দোলনে নেমেছে সে আন্দোলনেরই সফলতা এনেছে। তবে তাদের আন্দোলন অস্ত্রের আন্দোলন। তাদের আন্দোলন তরবারির আন্দোলন। তাদের আন্দোলন নাস্তিক মুরতাদের কল্লা ফওত করার আন্দোলন। তাদের আন্দোলন অস্ত্র কাঁধে তুলার আন্দোলন। রবের বিধান কায়েমের আন্দোলন। ব্যানার আর প্যাকাডের আন্দোলন নয়। মানববন্ধন আর কাতারবদ্ধের আন্দোলন নয়। স্বর উঁচু করা আর তরবারি নিচু করার আন্দোলন নয়।
প্রিয় যুবক ভাই!
মুসলিম উম্মাহর এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আল্লাহ রাসূল ও ইসলামের দুশমনদের উৎখাত করে শান্তির সমাজ তথা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণদেরই ভাবতে হবে। তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। দাঁড়িয়ে-বসে, ঘুমিয়ে-শুয়ে চিন্তার মিনারায় কালেমার পতাকা উড়াতে হবে। আজ চার দিকে শুধু মাজলুমানের বুকফাটা কান্না, করুণ আর্তনাদ। ইসলামের সব তরুণ শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ইসলাম ও মুসলমানদের নস্যাৎ করে দিতে। তাই তরুণদের মায়ের আঁচলে লুকিয়ে নয়। বোনের স্নেহের বাধায় আটকে নয়। বাবার নিরিহ চাহনির আড়ালে লুকিয়ে নয়। বরং নরম কোমল মায়ামিশ্রিত কর্কষ ভাষার সকল আহবানকে প্রত্যাখান করে সবরকম চড়াই-উতরাই পথ পাড়ি দিয়ে শাহাদাতের তামান্না নিয়ে ছুটে আসতেই হবে।
তথ্যাদিঃ
১.কাসাসুন নাবিয়্যিন ঘন্টায় শুনা।
২.সহীহ বোখারী।
৩.সহীহ বোখারী।
৪.সূরা কাহাফ ১৩
৫.আস-সিরাত লিল আতফাল ১ খন্ড।
৬.গযওয়াতুর রাসূল।
৭.আদর্শ যুবককের গল্প। ছোট্ট পুস্তিকা।
Comment