Announcement

Collapse
No announcement yet.

ছাত্রজীবনের তিনটি মৌলিক বিষয়

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ছাত্রজীবনের তিনটি মৌলিক বিষয়

    ছাত্রজীবনের তিনটি মৌলিক বিষয়





    একজন ছাত্রকে অবশ্যই শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তাহলে সে পরবর্তীতে একজন ভালো ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। কেউ সারাজীবন ভুল পথে কাটালে তার ভিত্তি নরম হয়, যেকোন সময় নুয়ে পরতে পারে। অন্যদিকে যে ছাত্রজীবন থেকেই পরিচর্যার মধ্যে দিয়ে যায় সে একজন ভারসাম্যপূর্ণ ও শক্তিশালী মুমিন হিসেবে গড়ে ওঠে। সে সংগ্রামের উপযোগী ও তার চিন্তার জগত পরিষ্কার। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা ছাড়া একজন মানুষ অন্যের জন্য ভালো প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে না। তার প্রস্তুতিতে ছেদ থেকে যায়।

    প্রথমত, একজন ছাত্রকে অবশ্যই নিজের পাঠ্যবই ও প্রয়োজনীয় সকল বই নিয়মিত অধ্যয়ন করে যেতে হবে। বই মানুষের জন্য একটা জানালা যা দিয়ে জ্ঞান তার মধ্যে প্রবেশ করে। নিয়মিত অধ্যয়নই তাকে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রস্তুত করে। তাই আমাদের পাঠ্যবইয়ে আগে পাকাপোক্ত হতে হবে। মাদ্রাসা বা জেনারেল উভয় শিক্ষাব্যাবস্থার ছাত্রদেরই তুখোড় পড়ালেখা করা চাই। জেনারেলের মধ্যে বিশেষভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলো এবং গণিত বেশি গুরত্বপূর্ণ, এই বিষয়গুলো ভালোভাবে শিখে নেওয়া চাই। আর এর পাশাপাশি দ্বীনি বিষয় শেখার জন্য নিয়মিত ইসলামী বইও পড়তে হবে। একইভাবে যারা মাদ্রাসার ছাত্র তাদেরও নিজ শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও ইংরেজী সম্পর্কেও ভালো দখল রাখতে হবে।

    এখানেই আসে স্বশিক্ষার গুরত্ব। নিজ পড়ালেখার পাশাপাশি অপর সেক্টরের সাবজেক্ট সম্পর্কেও নিজে নিজে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এর জন্য মেন্টর কালচার ও লাইব্রেরী কালচার খুবই গুরত্বপূর্ণ [গুরুত্বপূর্ণ]। ছাত্ররা মিলে পরামর্শের ভিত্তিতে স্টাডি করবে। আর এক্ষেত্রে সিনিয়র ছাত্রদেরও বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। এর বিপরীতে কেউ বললে ধরে নিতে হবে যে সে আলোচ্য বিষয়ে বেশি কিছু জানে না। নিরুৎসাহিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে একজন জেনারেলের ছাত্র যদি দ্বীনি বই না পড়ে তাহলে সে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যাবে। আর একজন মাদ্রাসার ফারেগ ছাত্র যদি বিজ্ঞান বা বিদেশী ভাষা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ না করে তাহলে সে বর্তমান জমানায় ইলমী ও দাওয়াতী কাজ আঞ্জাম দিতে ব্যর্থ। এখন যার নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে টেনশন নেই সে তো বুঝবে না আউট পড়ালেখার গুরত্ব [গুরুত্ব]। অনেকেই আছে যারা এমন মানসিকতা রাখে যে তার ক্যারিয়ারের জন্য যে বই যতটুকু পড়তে হয় শুধু ততটুকুই পড়বে, এর বেশি পড়ালেখা হলো বোকামী বা সময় নষ্ট। নিঃসন্দেহে এটি একটি পুঁজিবাদী চিন্তা। আমি এই চিন্তাধারাকে খুব কঠোরভাবে বিরোধিতা করি। আবার কেউ কেউ মনে করে নিজ সিলেবাসের পড়ালেখার বাইরে অন্য কিছু পড়লে পড়ালেখার ক্ষতি হবে। এটি সম্পূর্ণ অমূলক চিন্তা। যারা কখনো নিষ্প্রাণ 'বিদ্যা গেলা ও উগড়ে দেওয়া' তত্ত্বের বাইরে যেতে পারেনি তাদের জন্য এটা উপলব্ধি করা মুশকিল।

    আমি চাই আমাদের দেশে পড়ালেখার আলোচনা বৃদ্ধি হোক, পাঁচজন যুবক একত্রিত হলে সিনেমা, ভিডিও গেম, মোবাইল, মোটর সাইকেল ইত্যাদি বেহুদা বিষয়ের পরিবর্তে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি নিয়ে আলোচনা করুক।​ আমি চাই ছাত্ররা যেমনভাবে আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করে একইভাবে তারা যেন আত্মোন্নয়ন মূলক বিষয়েও আলোচনা করে। তারা যেন প্রোডাক্টিভ কাজে একে অপরের সহযোগী হয়। মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য সম্পূরক হিসেবে দুনিয়াবী কিছু সাবজেক্ট ও জেনারেলের ছাত্রদের জন্য সম্পূরক হিসেবে দ্বীনি বিষয়ের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এর পাশাপাশি চাই বর্তমান যুগের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক এলেম। এটিও একটি আবশ্যক বিষয়। আইটি বিষয়ক জ্ঞান ব্যাতিত বর্তমান যুগে জ্ঞানের জগতে পাল্লা দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের সময় বড় ভাইয়েরা আমাদেরকে নিয়ে ভয় পেতেন, যেন আমরা ইন্টারনেটের বিষাক্ত ছোঁয়ায় পথভ্রষ্ট হয়ে না যাই। তাই তারা আমাদেরকে ডিজিটাল জগত থেকে সম্পূর্ণ বিরত রেখেছিলেন। তবে বর্তমানে আমি ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করি। বিশেষভাবে রোবটিক্স, অটোমেশন, মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ইত্যাদি আয়ত্ব করা আমাদের জন্য জরুরী।

    দ্বিতীয়ত, একজন ছাত্রকে অবশ্যই শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। একজন সুস্থ ও সবল দেহের অধিকারী মানুষই লড়াইয়ের উপযুক্ত। শারীরিক স্বাস্থ্য ব্যাতিত [ব্যতীত] কোন কিছুই ভালোভাবে আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব হয় না। যে ছাত্র কঠোর পড়ালেখা করে কিন্তু সে নিজ স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত নয় তার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করতে পারে যে ছাত্র কঠোর পড়ালেখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও যত্ন নেয়। মানুষের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো তার দেহ। এই অস্ত্র অচল হলে পৃথিবীর সব অস্ত্র অচল হয়ে যায়। যে ফিজিক্যালি ফিট নয় সে কোন প্রকার লড়াইয়েরই ক্ষমতা রাখে না।

    সুস্বাস্থ্য অর্জনের জন্য প্রথমেই চাই শরীরচর্চা ও অনুশীলন। যেকোন মানুষেরই আসলে ছাত্রজীবন থেকে ফিটনেস চর্চা করে আসা উচিত। হেভি ওয়েট লিফটিং এখানে বাধ্যতামূলক নয়। ফাংশনাল স্ট্রেংথ তৈরির জন্য বডিওয়েট ওয়ার্কআউট, জিমন্যাস্টিকস বা
    calisthenics চর্চা করাই যথেষ্ট। এই বিষয়ে কোন ছাড় নেই, কোন শিথিলতার সুযোগ নেই। একজন মুমিন কখনোই চাবে না যে আমাদের জেনারেশনটা ফার্মের মুরগীতে পরিণত হোক। একটি উশৃঙ্খল ছেলে, যে সারা রাত জেগে ভিডিও গেম খেলে ফজরের ওয়াক্তে ঘুমাতে যায় সে যে কুযুক্তিতে শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকে, কিছু ভদ্র মানুষও সেই সব একই ধরনের কুযুক্তি দিয়ে শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকে। আসলে এদের মধ্যে শৃঙ্খলা নেই, ডিসিপ্লিন নেই। এরাই কোন এক বয়সে গিয়ে 'মোটা হন, লম্বা হন' ওষুধ খায়। এরা হলো জীবনের আল্টিমেট পরাজিত মানুষ। তাদের থিওরি অনুযায়ী চললে আমাদেরও চল্লিশ বছর বয়সের সাথে সাথে ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার, হাড়ক্ষয়, বাতের ব্যাথা এসব রোগে আক্রান্ত হতে হবে। কেউ যদি কখনো শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের ব্যাপারে ঔদাসিন্য প্রদর্শন করে অথবা আপনাকে এর বিপরীতে পরামর্শ দেয় তাকে সন্দেহ করুন। সে সুনিশ্চিতভাবেই ভুল পথে আছে। কারণ পুরুষ হলো জেনেটিক্সের দিক থেকেই একজন যোদ্ধা। তাকে যুগ যুগ ধরে লড়াই করেই টিকে থাকতে হয়েছে। আজকের এই মেট্রো জীবনে এসে হয়তো আমাদের আর আগের মত কষ্ট করা লাগে না, কিন্তু এখানেই শুরু হয়েছে সব সমস্যার গোড়া।

    পৃথিবীর দেশে দেশে বর্তমানে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। বৈশ্বিকভাবে যুবকদের মানসিকতায়ও এসেছে পরিবর্তন। অতীতের হারিয়ে যাওয়া সব সাম্রাজ্য নিজ নিজ গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য মাঠে নেমেছে। তাই দুনিয়া নতুনভাবে সাম্রাজ্যবাদের প্রতিযোগিতার স্থলে পরিণত হয়েছে। তাই এখন বিশ্বের প্রোডাক্টিভ যুবকরা মডেলিং বা অভিনয় জগতের প্রতিযোগিতায় তেমন আর নামে না। এর পরিবর্তে যুবক শ্রেণীর মধ্যে বিভিন্ন লড়াইমূলক খেলার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এখন অনেকেই আগের মত সিনেমা বা গানের জগতে যুক্ত হতে চাচ্ছে না, তার বদলে সবাই হাইপার ম্যাসকুলিনিটির সাথে এংগেজ হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে জিমের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনিভাবে বাড়ছে মিক্সড মার্শাল আর্ট, জুজুৎসু বা কিকবক্সিংয়ের প্রচলন। সবাই রিংয়ের মধ্যে পরখ করে নিতে চাচ্ছে নিজের শক্তিমত্তা।​


    তাই যেসব ভাইয়েরা সালতানাতে বাঙ্গালাহ বা গ্লোবাল খেলাফতের কথা বলেন তারা যদি এই কালচার প্রোমট করতেন তাহলে হয়তো তা যুবমাজের [সমাজের] জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হত। কিন্তু দেখা যায় আমাদের মধ্যে যারা দিনরাত খেলাফতের আলোচনা করেন তারাও এমনকি এই বিষয়ে বেশি নলেজ রাখেন না, কখনো এসব নিয়ে কথা হলেও দায়সারা ভাবে আলোচনা শেষ করেন। বিষয়টি সঠিক নয়। আজকের যুবকরা খেলাফত নিয়ে পাঁচটা
    meme তৈরি করলেও পাঁচ মিনিট শরীরচর্চা করতে পারে না। দিনরাত বিভিন্ন দ্বীনি বিষয় নিয়ে অনলাইনে ডিবেট করলেও তাদের physique ভালো না। আমি জানি না এদের মাধ্যমে কী দ্বীন কায়েম হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা তো করতেই হবে, তার পাশাপাশি বেশি বেশি শাকসবজি, মাছ মাংস, ফলের শরবত ইত্যাদি খাওয়া উচিত। এক্সারসাইজের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যও প্রয়োজন। সম্ভব হলে নিয়মিত প্রাকৃতিক মধু ও কাঁচা ছোলা খাওয়া উচিত সাপ্লিমেন্ট হিসেবে। স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিতে হবে। নয়তো ডিসিপ্লিন মেইন্টেইন করা সম্ভব নয়।

    তৃতীয়ত, ছাত্রজীবনে চাই নিরবিচ্ছিন্ন ও উপযুক্ত তারবিয়াত। তাই তাযকিয়াহর মেহনতও করতে হবে। আত্মশুদ্ধি ব্যাতিত [ব্যতীত] দ্বীনের উপর অটল থাকা যায় না। হাকিমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মতে, তাযকিয়াহর সারকথা হলো দুটি। একটি হলো, যখন কোন নেক কাজে অলসতা হয়, তা আমল করতে পারা। আর দ্বিতীয়টি হলো, কোন গুনাহের কাজে মন প্রলুব্ধ হলে তা বর্জন করতে পারা।

    ব্যাস, এতটকুই হলো তাযকিয়াহর মেহনত। এর জন্য মেথডিকেল কার্যক্রম আছে। তবে ছাত্রজীবনে গভীর অধ্যয়নের জন্য চাই একাগ্রতা। তাই সরাসরি খানকা ভিত্তিক মুজাহাদায় যুক্ত হতে না পারলেও বিভিন্ন দাওয়াতী সংগঠনের সাথে থাকা ইতিমধ্যে ছাত্রদের জন্য লাভজনক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। বিশেষভাবে তাবলীগ জামাআত বা এই জাতীয় অন্যান্য সংগঠনের মেহনতও ছাত্রদের মধ্যে ও ছাত্রদের জন্য খুবই ফলপ্রসু। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, যে সকল ছেলেরা ছাত্রজীবন থেকেই তাবলীগ করে তারা পরবর্তীতে মানুষের মত মানুষ হয়ে ওঠে। যারা ছোটবেলা থেকেই তাবলীগের শিক্ষা অর্জন করে তারা মুআমালাত , মুআশারাত সব দিকে থেকেই যোগ্য হিসেবে গড়ে ওঠে। বিশেষভাবে এটি ছাত্রদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের মনোভাব বাড়ায়। এই ধরনের ছেলেরা ইমম্যাচিউরড হয় না, সামাজিক দক্ষতা ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করার যোগ্যতা অর্জন করে। তার চেয়েও বড় কথা হলো তাবলীগ মানুষকে জামায়াতবদ্ধতা শেখায়, জীবনে ডিসিপ্লিন শেখায়, সময় মেইন্টেইন করা শেখায়, খেদমতের দায়িত্ব পালন করা, আমীর সাহেবকে মানা ও সব কাজে মাশোওয়ারা করে চলার অভ্যাস তৈরি করে যা বাস্তব ময়দানের একটি প্র্যাকটিকেল অভিজ্ঞতা দেয়। এই ধরনের ছেলেরা ইমম্যাচিউরড হয় না ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করার যোগ্যতা অর্জন করে। তাই ছাত্রজীবনে তাবলীগ বা এই জাতীয় অন্যান্য দাওয়াতী সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকা আমি একটি আবশ্যকীয় কাজ বলে মনে করি।

    তবে একটি বিষয় যা আমাকে কষ্ট দেয় তা হলো আমাদেরই কিছু ভাই আছে এমন যারা না বুঝে দ্বীনের অন্য মেহনতকে খাটো করে দেখে। এরকম মানুষ প্রায় সব সেক্টরেই কিছু না কিছু আছে। যে বিষয়টি নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাইনি, কিন্তু প্রয়োজনের খাতিরে বলতেই হচ্ছে যে অনেকেই দেখি বলে, তাবলীগ তো আংশিক দ্বীন পালন করে (নাউজুবিল্লাহ), তাদের মধ্যে তো বিদআত আছে। অথচ অনুসন্ধান করলে দেখা যায় এসব কথার সূত্রপাত হয়েছে এমন এক শ্রেণীর আলেমদের থেকে যারা হলো তাগুতের অনুসারী। তারা যেকোন দ্বীনি মেহনতেরই বিরোধিতা করে। শুধু তাবলীগই নয়, জিহাদীরাও তাদের চক্ষুশূল। তাদের কাজই হলো দ্বীনের প্রত্যেকটি হক্ব মেহনতের ব্যাপারে বিষদগার [বিষোদগার] করা। তারা যখন জিহাদীদেরকে কুরআন হাদিসের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তাদেরকে খারেজী হিসেবে আখ্যায়িত করে, তখন জিহাদীরা ঠিকই সেটার বিরোধিতা করে, কিন্তু তারাই যখন আবার অন্য কোন দ্বীনি সংগঠনের ব্যাপারে অপব্যাখ্যামূলক কথা বলে তখন আবার জিহাদীরা ঠিকই সেটা বিশ্বাস করে নেয়। কেউ কেউ তো এমনও বলে যে, অমুক অমুক শায়েখদেরকে বিশ্বাস করবেন যখন দেখবেন তারা মুশরিক, বেদাতি, কুফরি আকিদার অনুসারী, জাহমী নিয়ে কথা বলে। কিন্তু যখন দেখবেন তারা খারেজী, তাকফিরী, সন্ত্রাসী ইত্যাদি নিয়ে কথা বলে তখন আর বিশ্বাস করবেন না! আসলে বাস্তবতা হলো কেউ যখন উম্মাহর বীর সন্তানদেরকে খারেজী (জাহান্নামের কুকুর) বলে আখ্যায়িত করে তখন আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না যে এটা হলো কোন একটি ইসলাম বিরোধী এজেন্ডা। আর শুধু কোন এক পক্ষের মেহনতই তো ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়, তারা ইসলামের প্রতিটি হক্বপন্থী মেহনতেরই বিরোধিতা করে।

    সর্বশেষ একটি কথা বলতে চাই, কেউ যদি এখন অভিযোগ করে যে বিভিন্ন জিহাদী জামায়াতের পক্ষ থেকে কয়টি তাফসীরগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে বা তারা কয়টি হাদিসগ্রন্থের শরাহ লিখেছে অথবা সাধারণ মানুষের মাসয়ালা মাসায়েলের জরুরত কবে পূরণ করেছে, কর্জে হাসানাহ প্রজেক্ট চালিয়েছে কিনা অথবা অমুসলিমদের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছে কিনা, হজ্বের ময়দানে মুসল্লিদের খেদমত করেছে কিনা তাহলে তো প্রশ্নগুলো অযৌক্তিক হয়ে যায়। এখন যদি কেউ বলে জিহাদীরা শুধু জিহাদের কথাই বলে, অতএব এটা একটা আংশিক দ্বীন। এখন কেমন হয়ে গেল বিষয়টা?

    তাবলীগে এক চিল্লা, তিন চিল্লা সিস্টেম আছে বলে কোন কোন শায়েখ এগুলোকে বিদআত বলে আখ্যা দেন। এখন বর্তমান যুগে ইলমী সেক্টরের স্ট্রাকচার, দাওয়াতের স্ট্রাকচার বা জিহাদের স্ট্রাকচার রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের যুগে ছিল না। তাই বলে এখন এগুলোও কি বিদআত হয়ে গেল? কেউ যদি বলে জিহাদ সমর্থকরা গেরিলা যুদ্ধ পেয়েছে কোথায়, বন্দুক কামানের মাধ্যমে জিহাদ করতে হবে এটা পেয়েছে কোথায়, অতএব এগুলো বিদআত। তাহলে তো আর দ্বীনের কোন সেক্টরই বিদআত থেকে বাকি থাকে না। তাই আমি মনে করি সর্বোপরি, দ্বীনের অন্যান্য মেহনতের প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত, আমাদের আচরণ পরস্পর বিরোধিতামূলক না হয়ে কল্যাণকামনা ও সহযোগিতা মূলক হওয়া উচিত।

    আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে আসি। একজন দ্বীনদার ও দেশপ্রেমিক ছাত্র কিভাবে তার ছাত্রজীবন পরিচালনা করবে তা আলোচনা করাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। ছাত্রজীবনের মৌলিক তিনটি কাজ কী ও শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য কী করা উচিত সে সম্পর্কে আলোকপাত করাই এই আলোচনার লক্ষ্য।

    তবে এই প্রতিটি কাজকে সঠিক করার জন্য সবার আগে চাই সময়মত ও পরিমিত ঘুম। কেউ যদি ঘুমের সময়য়ে ওলট পালট করে তার জন্য শারীরিক হোক, মানসিক হোক অথবা আধ্যাত্মিক কোন ক্ষেত্রেই কামিয়াবী অর্জন করা সম্ভব নয়। যেকোন পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে যদি কারো ঘুমের সময়ের ঠিক না থাকে। তাই সকল মুজাহাদার আগে ঘুমের সাইকেল ঠিক করা চাই। তাহলে সারাদিন ডিসিপ্লিনের উপর চলা সহজ হবে। প্রায় প্রতিটি মানুষই এক সময় না এক সময় পরিবর্তন হতে চায়, সেই অনুযায়ী উদ্যোগও নেয়। কিন্তু একবার যদি সে ঘুমের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তখন সে আবার সেই গাফিলতির দুষ্টচক্রে ফেঁসে যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক। আমীন।
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 3 weeks ago.

  • #2
    মাদ্রাসায় পড়ে বিজ্ঞানে কিভাবে দখল রাখা যায়? মাদ্রাসায় পড়ে ত আর ইঞ্জেনিয়ার হওয়া যায় না।

    Comment


    • #3
      "যারা কখনো নিষ্প্রাণ 'বিদ্যা গেলা ও উগড়ে দেওয়া' তত্ত্বের বাইরে যেতে পারেনি তাদের জন্য এটা উপলব্ধি করা মুশকিল।​"
      মাশাআল্লাহ ভাই! অনেক গভীর কথা। এটাকে অন্য শব্দে অক্ষরবাদীও বলা যেতে পারে।এটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানসীকতার অনেক বড় ধ্বস। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এই ফ্রেম থেকে বের হওয়ার তৌফিক দান করুন।

      Comment


      • #4
        Originally posted by ইয়ামিন মাহমুদ View Post
        মাদ্রাসায় পড়ে বিজ্ঞানে কিভাবে দখল রাখা যায়? মাদ্রাসায় পড়ে ত আর ইঞ্জেনিয়ার হওয়া যায় না।
        ভাই এখানে কোন লাইনে মাদ্রাসায় পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা বলা হয়েছে তা আমি খুঁজে পাচ্ছি না, অথবা এমন কিছু আগে লিখেছি কিনা সেটাও খেয়াল হচ্ছে না। একজন দ্বীনদার ছেলে যে জেনারেলে পড়ে সে যেমন বিভিন্ন সোর্স থেকে দ্বীন সম্পর্কে জানে, সেভাবেই বিজ্ঞান সম্পর্কেও বেসিক ধারণা রাখা যায়। এটা মাদ্রাসা বা জেনারেল সবাই চাইলে করতে পারে। বর্তমানে ফ্রি সোর্সের যুগে ভাই এগুলো নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোন মানে হয় না। অসংখ্য বিজ্ঞান সাময়িকী, ইউটিউব চ্যানেল, আর্টিকেল, নিউজলেটার ইত্যাদি আছে আপনার উপকারের জন্য।

        Comment


        • #5
          Originally posted by umayer mussab View Post
          "যারা কখনো নিষ্প্রাণ 'বিদ্যা গেলা ও উগড়ে দেওয়া' তত্ত্বের বাইরে যেতে পারেনি তাদের জন্য এটা উপলব্ধি করা মুশকিল।​"
          মাশাআল্লাহ ভাই! অনেক গভীর কথা। এটাকে অন্য শব্দে অক্ষরবাদীও বলা যেতে পারে।এটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানসীকতার অনেক বড় ধ্বস। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এই ফ্রেম থেকে বের হওয়ার তৌফিক দান করুন।
          আসলে ভাই যখন কোন একটি দেশে কুফরী নেযাম চালু থাকে সেখানে প্রতিটি সেক্টরেই এমন অবস্থা হয়। যতদিন এই এস্টাব্লিশমেন্ট থাকবে ততদিন পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ দিকেই যেতে থাকবে। তবে এখন আমাদের যুবসমাজের উচিত রাষ্ট্র ও সমাজের এই পচনকে উপলব্ধি করা এবং এই নেযামকে গুড়িয়ে দিয়ে শরীয়তভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের জন্য কাজ করা।

          তবে এর জন্যও চাই জ্ঞান অর্জন। একটি বিদ্যমান ব্যাবস্থাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতেই বা সংস্কার করার জন্যই শুধু নয়, এমনকি সেই ব্যাবস্থাকে ধ্বংস করার জন্যও চাই জ্ঞান। তাই প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গী ও যুবসমাজকে আমরা যে পথে আহবান জানাই উভয়ের মধ্যে ফারাক আছে। জ্ঞান অর্জনের প্রচলিত উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান ব্যবস্থায় সংস্কার আনা, আর আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো বিদ্যমান ব্যাবস্থাকে পরিত্যাগ করে শরীয়তভিত্তিক নেযাম কায়েম করা। তাই আমরাও প্রচলিত শিক্ষাব্যাবস্থা থেকে ততটুকু লাভবান হতে চাই যার দ্বারা আমরা এর রূপকে চিনে নিতে পারবো এবং একটি অল্টারনেট ব্যাবস্থার জন্য কাজ করে যেতে পারবো।

          সামগ্রিকভাবে যুবকদের উচিত জ্ঞান অর্জনে ব্রতী হওয়া, বিদ্যমান ব্যাবস্থার সুফলটুকু সম্পূর্ণভাবে অর্জন করা এবং একে আল্লাহর শরীয়ত দ্বারা প্রতিস্থাপন করাকেই সমাধান বল্যে গণ্য করা। আর তাদের সামনে এই বাস্তবতা তুলে ধরতে হবে আমাদেরই।​

          Comment

          Working...
          X