দ্বীন কায়েমের পথে সৃজনশীলতা
প্রিয় যুবক ভাই!
প্রজ্ঞাবান মানুষ ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে। ভুলকে সঠিকে পরিবর্তন করে। কষ্টের যাঁতাকলে পৃষ্ট হলেও সংশোধনের পথ বেঁছে নেয়। আর্থিক ঋণের বোঝা থাকলেও সমাধানের মত গ্রহণ করে নেয়। অভাবের সংসারে দ্বীনই একমাত্র আশার আলো। দুখিদের পরিবারে ধর্মই একমাত্র শান্তনা।
বিবেকবান ব্যক্তি শোনা কথাকে যাঁচাই করে। বলা কথাকে খোঁদাই করে। যদি মিথ্যার কোন রেশ পাওয়া যায় তাহলে যেন সহজেই সরে আসা যায়।
আর যদি সত্যের কোন ঘ্রাণ পাওয়া তাহলে যেন আঠার মত লেগে থাকা যায়।
পার্থিব উন্নতির জন্য শিষ্টাচার মেনে প্রতিযোগিতা করা এবং তাতে সফলতা লাভ করা প্রশংসনীয়। এটা জীবনকে গতিশীল করে। এটার বলার কারণটা কি যুবক ভাই! কারণ হলো আমরা অনেকেই ভাবি- ইতিহাস তৈরি করা শুধু মহান ব্যক্তিদের কাজ। বিজয়ের হাসি ফোটানো শুধু বীরদের সাঁজ। শিষ্টাচারের সুভাস ছড়ানো শুধু মুমিনদের লাজ।
এখন আসুন আসল কথায়- আমি আপনি যখন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলবো। তখন এর মানে এই না যে, আমি মহান ব্যক্তি হয়ে যাবো৷ আমি বীর হয়ে যাবো। প্রকৃত মুমিনে রুপান্তরিত হবো। সাধারণ মুসলমানও থাকতে পারি। তাই বলে কি আমরা বিভিন্ন কারণ দর্শিয়ে পার্থিব উন্নতি থেকে পিছিয়ে থাকবো?
এটা কোন যুক্তির কথা? এটা কোন মুক্তির উসুল? আকলওয়ালার আকলী কথা? বিশ্বাসীদের নিশ্চিত বার্তা? পরিবেশই আমাকে বলে দিবে। যেমর ধরুন-মোবাইলের ক্ষেত্রে, গাড়ির ক্ষেত্রে, বাড়ির ক্ষেত্রে এমনকি ছোট্ট বাচ্চার খেলনা কিনতে গিয়েও আমরা আপডেট ভার্সন খোঁজি। একটু হলেও নতুনত্ব চাই। লেটেস্ট মডেল নাকি আমাদের সাথে যায় না। ক্লাস টুতে পড়া ভাইটির পছন্দও এত জুতসই। অজপাড়া গায়ের মানুষগুলোর রুচিও এত মানানসই। মনের আয়নায় বাহারি আয়োজন।
সৃজনশীলতার অদ্ভুত এক সমাহার তাদের মাঝে বিদ্যমান তা কিন্তু বুঝতে আর বাকি রইলো না। আপডেট আর আপডেট। নতুনত্ব আর নতুনত্ব। স্টাইলিস আর স্টাইলিস। এ সৃজনশীলতাটা যদি আমরা দ্বীনের ক্ষেত্রে খাটাই তাহলে কেমন হবে? আসুন না প্রিয় যুবক ভাই সামান্য একটু পর্যালোচনা করি।
যেটা প্রথমেই ঘটবে তা হলো- উপচে পড়া পানি নদীর তীরে গিয়ে উঠবে। বর্ষার পানিতে ভেসে আসা কৈ মাছের আনন্দ ফিরে পাবে। বসন্ত আর হেমন্তের লাল পলশা ফুল আর কুকিলের মিষ্টি ডাক দ্বীনের মাঝেও শুনতে পাবে। পূবের হিমেল বাতাস আর সবুজের সমারোহ প্রতিটি বিধানের পরতে পরতে দৃশ্যায়িত হবে। মনের দুয়ারে লুকোচুরি খেলবে গোলামিত্বের ছাপ। ইমানের আয়নায ধরা পড়বে ইবাদতের লাজ্জাত।
প্রিয় যুবক ভাই!
আল্লাহ তাআলা সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রিয় নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিধানবলী জানিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহর হাবিব সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আমল করে সাহাবীদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহুমরা বাস্তবায়নের এ মজমায় মাশগুল ছিলেন।
এখন আপনিই বলুন-
এরচেয়ে সুন্দর সৃজনশীল কাজ আর কি হতে পারে? সবই বলে দিয়েছেন শুধু চেষ্টা করে উত্তরটা খোঁজে মিলাতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। কাল হাশরে ফলাফল পেপার হাতে আসলে দেখতে পাবো উত্তরগুলো যার যত সুন্দর হয়েছে নাজাতের রাস্তা তার ততটাই মুক্ত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে-
ان ال ربك الرجعي
নিশ্চয় তোমার রবের দিকেই তোমার প্রত্যাবর্তন।
এত কিছু শিখিয়ে দেওয়ার পরও এ কথা বলার উদ্দেশ্য কী? তা হলো- বান্দাকে সৃজনশীলতা শিখানো। আমি তোমার ভিতর রুহ ফোঁকে দিয়েছি আমার ইবাদতের জন্য। তোমাকে জিনিসের নাম শিখিয়ে সহজে আমল করার জন্য। তোমাকে পুরষ্কারের লোভ দেখিয়েছি জান্নাতী মানুষ হওয়ার জন্য।
এরপরও যদি না বুঝ এজন্য শেষে ছোট্ট একটি বাণী বার্তা হিসেবে রেখে দিয়েছি। বান্দা মনে রেখো-তোমার প্রত্যাবর্তন কিন্তু আমার দিকেই হবে। সুতরাং আমার কাছে আসতে হলে আমার দেয়া ফর্মুলা নিয়ে এসো।
নাজাতের সবগুলো পথ বলে দিয়েছি। এর জন্য দূরদর্শী-জ্ঞান-গুণে ভরপুর-আচার-আচরণে পরিপূর্ণ-বেশভূষায় তোমাদের মত একজন মানবকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। যার প্রতিদান আমি আল্লাহ সয়ং নিজ হাতে দিবো। তোমাদের কাছে তাঁর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। চাওয়া পাওয়া এতটুকুই তোমরা শুধু তাঁর কাছ থেকে দ্বীনটা শিখবে। পরকালের স্বাধীনতা তৈয়্যার করবে । এরপরও যদি না বুঝো তাহলে এর জন্যও একটা বাণী বার্তা হিসেবে রেখে দিয়েছি। তা হলো- যারা আমার পথে চলে না তাদের ঠিকানা হলো শয়তানের দলের সাথে ।
শয়তান কখনো কোন সময় কোনদিন চায় না আমরা শরীয়ার পরীক্ষায় পাশ করি। এ জন্য সে পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার সৃজনশীল কৌশলগুলো আমাদের সামনে দাঁড় করায়। যেমন ধরুন-প্রত্যেকটা বিধানের একটা সীমা রেখা বা সময় বেধে দেয়া আছে। নিয়মনীতি বাতলিয়ে দেয়া আছে। শয়তান এ সময়সীমা নিয়মনীতিতে সন্দেহ সৃষ্টি করবে। ওলট পালট করে দিবে।
যাতে বিধান ঠিকই পালন করে তবে সেটা যেন সময় মত না করে। তার সুক্ষ্ম এ কৌশলগুলোকে আমরা সৃজনশীল পদ্ধতি বলতে পারি।
যেমন ধরুন জিহাদ ফরযের কথা। শয়তানও জানে এখন বাঁধা দিলে সে মানবে না। তাই এক কাজ করা যাক। তার কাছে ইলমের গুরুত্ব। মা-বাবার খেতমতের গুরুত্ব। পরিবার চালানোর অসহায়ত্ব। তাবলীগের তাগিদ তুলে ধরি। তাহলে সে সহজেই আমার দেখানো পথে চলে আসবে। মনে মনে ভাববে আমিও তো একটা ফরয বিধান তলবেই আছি। আমিও তো তাবলীগের মত একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছি। সমস্যা কিসের! মনে মনে যে ভাবছে ফরযের ছায়াতলে সে আছে এটাকেই বলে সন্দেহ। অথচ সে সঠিক ফরযের ধারে কাছেও নেই।
বলুন তো! শয়তান সফল হলো কিনা? তার কৌশলটা সৃজনশীল হলো কিনা? আগের চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে জাতিকে নিয়ে সে ভাবে। সরাসরি ধোঁকায় এখন আর তারা সময় নষ্ট করে না। কারণ সে জানে জাতি এখন আর হাত দিয়ে খায় না বরং চামচ দিয়ে খেতে শিখেছে। তাই চামচের নীতি তাদের শুনাতে হবে। তা না হলে সফল হবে না।
সময়ের সালাত সময়ে আদায় করা। নির্দিষ্ট সময়ের রোযা নির্দিষ্ট সময়ে রাখা। যাকাতের বিধান বছরপূর্তি ঘুরে আসা। জিহাদ ফরযের কারণগুলো বিদ্যমান থাকা। হজ্ব পালন জিলহজ্বের ১০ তারিখেই করা। এইযে সময়গুলো প্রত্যেকটা জিনিসের সাথে লাগিয়ে দেয়া আছে বলেই এগুলোকে বিধান বলা হয়েছে।
যুবক ভাই!
শত্রু-মিত্র সবাই তো যার যার সৃজনশীলতার ধরণগুলো কাজে লাগাচ্ছে। তুমিও একটু দ্বীন কায়েমের পথে সৃজনশীলতা নিয়ে ভাবো। তোমার কাছ থেকে তা দেখতে উম্মাহর খুব সখ। আপন পর সবারই কোন না কোন সখ পূরণ তুমি করছো। সুতরাং উম্মাহর এ সখটাও তুমি পূরণ করে দাও !
খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিআল্লাহুর সৃজনশীলতার কথাই কিঞ্চিৎ বলি-যুদ্ধের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে সাথীদের সামনে এমনভাবে কিছু কথা উপস্থাপন করতেন যেন সবকিছু হাতের লাগালে। হাত দিয়ে ধরলে তুলোধুনো হয়ে যাবে আর ধরতে গিয়ে তা পড়ে গেলে কোমড় ভেঙে যাবে। সহজেই তারা যুদ্ধের কৌশল রপ্ত করে ফেলতেন সৃজনশীলতার ছোঁয়া পেয়ে। জেগে উঠতো নিস্তেজ প্রতিভা। আলো ছড়াতো নিভু নিভু বাতি। ময়দানকে চাঙা করার ব্যাপারে তাঁর সৃজনশীল পদ্ধতিগুলো ছিলো খুবই চমৎকার। তাই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁকে কমান্ডার বানিয়ে পাঠাতেন।
তাঁর পিছনে থাকতো সাহাবীদের সেনাবহর।
ফাতহুশ শামে বর্ণিত আছে
তিনি তাঁর সাথিদেরকে সবসময় তরবারী কাঁধে রাখার ফজিলত শোনাতেন। এমনকি তিনি নিজেও কোন রাজ-দরবারে গেলে তরবারি গর্দান থেকে নামাতেন না। তাঁর এ সমস্ত কাজগুলো সাধারণ সাহাবীদের মনোভাবকে চাঙা করতো।
মুসআব ইবনে উমায়ের রাদিআল্লাহু। তিনি দাওয়াতের পূর্বে প্রতিটি পরিবেশ মুতাআলা করতেন। প্রতিটি মানুষকে মনের চোখে মুখে পড়ে নিতেন। তার ভিতর কি ঝলক আছে! তার সৃজনশীল এ পদ্ধতিটি দাওয়াতের ময়দানে খুব ফলপ্রসূ হয়েছিলো। তাই গোত্রের নেতারাও মুগ্ধমনে তাঁর একত্ববাদের কথা শুনতো।
দ্বীনের কায়েমের পথে সৃজনশীলতা শত্রুদের মাথা ব্যথা তৈরি করে। তাদের সুস্থ শরীরে এলার্জি হয়ে যায়। নিজেই নিজের নক দিয়ে চুলকাতে থাকে। একটা সময় ক্ষত হতে শুরু করে। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম এর সাহিত্য অঙ্গনে আর শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ এর সমরনীতির সামনে তারা নত স্বীকার করে।
কারণ তাদের মেধামনন ছিলো সৃজনশীল রাজ্যের এক সেনানায়ক । এমন কিছু ফিকির করেছে যা ভবিষ্যত সম্ভাবনা ছিলো। এমন কিছু করেছে যা দশজন বীরের কাজ একাই পুষিয়ে দিয়েছে। এমন এক জাগরণ সৃষ্টি করেছে যা ঝর্ণার নহরের মত বইয়ে চলছে।
প্রিয় যুবক ভাই!
আপডেটের এ যামানায় তোমার ফিকিরগুলো হতে হবে সৃজনশীল। স্মার্টনেসের এ দুনিয়ায় তোমার গবেষণাগুলো হতে হবে মননশীল। নতুনত্বের চাহিদার ময়দানে তোমার প্রতিভাগুলো হতে হবে সুনিপুণ। পশ্চিমা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তুমি একাই একজন প্রতিপক্ষ। মেধার ধার যেমন হতে হবে কলমের আরেকটু বেশি। চলার শান যেমন হতে হবে আখলাকের আরেকটু বেশি। কথা বলার আর্ট যেমন হতে হবে বাচনভঙ্গি আরেকটু বেশি।
ইলমের তুলনায় হেলম হতে হবে দশগুন। শরয়ী মুতাআলার পাশাপাশি পরিবেশ পরিস্থিতিও মুতাআলা করতে হবে। লোহা লস্করের সাথে সাথে তা আবিষ্কার করার ধরণ জানতে হবে। তাহলে দ্বীন কায়েমের তরে তোমার সৃজনশীলতা হবে সার্থক। তোমাকে নিয়ে উম্মাহর এ ভাবনাগুলো হবে অর্থবোধক।
প্রিয় যুবক ভাই!
প্রজ্ঞাবান মানুষ ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে। ভুলকে সঠিকে পরিবর্তন করে। কষ্টের যাঁতাকলে পৃষ্ট হলেও সংশোধনের পথ বেঁছে নেয়। আর্থিক ঋণের বোঝা থাকলেও সমাধানের মত গ্রহণ করে নেয়। অভাবের সংসারে দ্বীনই একমাত্র আশার আলো। দুখিদের পরিবারে ধর্মই একমাত্র শান্তনা।
বিবেকবান ব্যক্তি শোনা কথাকে যাঁচাই করে। বলা কথাকে খোঁদাই করে। যদি মিথ্যার কোন রেশ পাওয়া যায় তাহলে যেন সহজেই সরে আসা যায়।
আর যদি সত্যের কোন ঘ্রাণ পাওয়া তাহলে যেন আঠার মত লেগে থাকা যায়।
পার্থিব উন্নতির জন্য শিষ্টাচার মেনে প্রতিযোগিতা করা এবং তাতে সফলতা লাভ করা প্রশংসনীয়। এটা জীবনকে গতিশীল করে। এটার বলার কারণটা কি যুবক ভাই! কারণ হলো আমরা অনেকেই ভাবি- ইতিহাস তৈরি করা শুধু মহান ব্যক্তিদের কাজ। বিজয়ের হাসি ফোটানো শুধু বীরদের সাঁজ। শিষ্টাচারের সুভাস ছড়ানো শুধু মুমিনদের লাজ।
এখন আসুন আসল কথায়- আমি আপনি যখন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলবো। তখন এর মানে এই না যে, আমি মহান ব্যক্তি হয়ে যাবো৷ আমি বীর হয়ে যাবো। প্রকৃত মুমিনে রুপান্তরিত হবো। সাধারণ মুসলমানও থাকতে পারি। তাই বলে কি আমরা বিভিন্ন কারণ দর্শিয়ে পার্থিব উন্নতি থেকে পিছিয়ে থাকবো?
এটা কোন যুক্তির কথা? এটা কোন মুক্তির উসুল? আকলওয়ালার আকলী কথা? বিশ্বাসীদের নিশ্চিত বার্তা? পরিবেশই আমাকে বলে দিবে। যেমর ধরুন-মোবাইলের ক্ষেত্রে, গাড়ির ক্ষেত্রে, বাড়ির ক্ষেত্রে এমনকি ছোট্ট বাচ্চার খেলনা কিনতে গিয়েও আমরা আপডেট ভার্সন খোঁজি। একটু হলেও নতুনত্ব চাই। লেটেস্ট মডেল নাকি আমাদের সাথে যায় না। ক্লাস টুতে পড়া ভাইটির পছন্দও এত জুতসই। অজপাড়া গায়ের মানুষগুলোর রুচিও এত মানানসই। মনের আয়নায় বাহারি আয়োজন।
সৃজনশীলতার অদ্ভুত এক সমাহার তাদের মাঝে বিদ্যমান তা কিন্তু বুঝতে আর বাকি রইলো না। আপডেট আর আপডেট। নতুনত্ব আর নতুনত্ব। স্টাইলিস আর স্টাইলিস। এ সৃজনশীলতাটা যদি আমরা দ্বীনের ক্ষেত্রে খাটাই তাহলে কেমন হবে? আসুন না প্রিয় যুবক ভাই সামান্য একটু পর্যালোচনা করি।
যেটা প্রথমেই ঘটবে তা হলো- উপচে পড়া পানি নদীর তীরে গিয়ে উঠবে। বর্ষার পানিতে ভেসে আসা কৈ মাছের আনন্দ ফিরে পাবে। বসন্ত আর হেমন্তের লাল পলশা ফুল আর কুকিলের মিষ্টি ডাক দ্বীনের মাঝেও শুনতে পাবে। পূবের হিমেল বাতাস আর সবুজের সমারোহ প্রতিটি বিধানের পরতে পরতে দৃশ্যায়িত হবে। মনের দুয়ারে লুকোচুরি খেলবে গোলামিত্বের ছাপ। ইমানের আয়নায ধরা পড়বে ইবাদতের লাজ্জাত।
প্রিয় যুবক ভাই!
আল্লাহ তাআলা সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রিয় নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিধানবলী জানিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহর হাবিব সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আমল করে সাহাবীদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহুমরা বাস্তবায়নের এ মজমায় মাশগুল ছিলেন।
এখন আপনিই বলুন-
এরচেয়ে সুন্দর সৃজনশীল কাজ আর কি হতে পারে? সবই বলে দিয়েছেন শুধু চেষ্টা করে উত্তরটা খোঁজে মিলাতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। কাল হাশরে ফলাফল পেপার হাতে আসলে দেখতে পাবো উত্তরগুলো যার যত সুন্দর হয়েছে নাজাতের রাস্তা তার ততটাই মুক্ত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে-
ان ال ربك الرجعي
নিশ্চয় তোমার রবের দিকেই তোমার প্রত্যাবর্তন।
এত কিছু শিখিয়ে দেওয়ার পরও এ কথা বলার উদ্দেশ্য কী? তা হলো- বান্দাকে সৃজনশীলতা শিখানো। আমি তোমার ভিতর রুহ ফোঁকে দিয়েছি আমার ইবাদতের জন্য। তোমাকে জিনিসের নাম শিখিয়ে সহজে আমল করার জন্য। তোমাকে পুরষ্কারের লোভ দেখিয়েছি জান্নাতী মানুষ হওয়ার জন্য।
এরপরও যদি না বুঝ এজন্য শেষে ছোট্ট একটি বাণী বার্তা হিসেবে রেখে দিয়েছি। বান্দা মনে রেখো-তোমার প্রত্যাবর্তন কিন্তু আমার দিকেই হবে। সুতরাং আমার কাছে আসতে হলে আমার দেয়া ফর্মুলা নিয়ে এসো।
নাজাতের সবগুলো পথ বলে দিয়েছি। এর জন্য দূরদর্শী-জ্ঞান-গুণে ভরপুর-আচার-আচরণে পরিপূর্ণ-বেশভূষায় তোমাদের মত একজন মানবকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। যার প্রতিদান আমি আল্লাহ সয়ং নিজ হাতে দিবো। তোমাদের কাছে তাঁর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। চাওয়া পাওয়া এতটুকুই তোমরা শুধু তাঁর কাছ থেকে দ্বীনটা শিখবে। পরকালের স্বাধীনতা তৈয়্যার করবে । এরপরও যদি না বুঝো তাহলে এর জন্যও একটা বাণী বার্তা হিসেবে রেখে দিয়েছি। তা হলো- যারা আমার পথে চলে না তাদের ঠিকানা হলো শয়তানের দলের সাথে ।
শয়তান কখনো কোন সময় কোনদিন চায় না আমরা শরীয়ার পরীক্ষায় পাশ করি। এ জন্য সে পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার সৃজনশীল কৌশলগুলো আমাদের সামনে দাঁড় করায়। যেমন ধরুন-প্রত্যেকটা বিধানের একটা সীমা রেখা বা সময় বেধে দেয়া আছে। নিয়মনীতি বাতলিয়ে দেয়া আছে। শয়তান এ সময়সীমা নিয়মনীতিতে সন্দেহ সৃষ্টি করবে। ওলট পালট করে দিবে।
যাতে বিধান ঠিকই পালন করে তবে সেটা যেন সময় মত না করে। তার সুক্ষ্ম এ কৌশলগুলোকে আমরা সৃজনশীল পদ্ধতি বলতে পারি।
যেমন ধরুন জিহাদ ফরযের কথা। শয়তানও জানে এখন বাঁধা দিলে সে মানবে না। তাই এক কাজ করা যাক। তার কাছে ইলমের গুরুত্ব। মা-বাবার খেতমতের গুরুত্ব। পরিবার চালানোর অসহায়ত্ব। তাবলীগের তাগিদ তুলে ধরি। তাহলে সে সহজেই আমার দেখানো পথে চলে আসবে। মনে মনে ভাববে আমিও তো একটা ফরয বিধান তলবেই আছি। আমিও তো তাবলীগের মত একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছি। সমস্যা কিসের! মনে মনে যে ভাবছে ফরযের ছায়াতলে সে আছে এটাকেই বলে সন্দেহ। অথচ সে সঠিক ফরযের ধারে কাছেও নেই।
বলুন তো! শয়তান সফল হলো কিনা? তার কৌশলটা সৃজনশীল হলো কিনা? আগের চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে জাতিকে নিয়ে সে ভাবে। সরাসরি ধোঁকায় এখন আর তারা সময় নষ্ট করে না। কারণ সে জানে জাতি এখন আর হাত দিয়ে খায় না বরং চামচ দিয়ে খেতে শিখেছে। তাই চামচের নীতি তাদের শুনাতে হবে। তা না হলে সফল হবে না।
সময়ের সালাত সময়ে আদায় করা। নির্দিষ্ট সময়ের রোযা নির্দিষ্ট সময়ে রাখা। যাকাতের বিধান বছরপূর্তি ঘুরে আসা। জিহাদ ফরযের কারণগুলো বিদ্যমান থাকা। হজ্ব পালন জিলহজ্বের ১০ তারিখেই করা। এইযে সময়গুলো প্রত্যেকটা জিনিসের সাথে লাগিয়ে দেয়া আছে বলেই এগুলোকে বিধান বলা হয়েছে।
যুবক ভাই!
শত্রু-মিত্র সবাই তো যার যার সৃজনশীলতার ধরণগুলো কাজে লাগাচ্ছে। তুমিও একটু দ্বীন কায়েমের পথে সৃজনশীলতা নিয়ে ভাবো। তোমার কাছ থেকে তা দেখতে উম্মাহর খুব সখ। আপন পর সবারই কোন না কোন সখ পূরণ তুমি করছো। সুতরাং উম্মাহর এ সখটাও তুমি পূরণ করে দাও !
খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিআল্লাহুর সৃজনশীলতার কথাই কিঞ্চিৎ বলি-যুদ্ধের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে সাথীদের সামনে এমনভাবে কিছু কথা উপস্থাপন করতেন যেন সবকিছু হাতের লাগালে। হাত দিয়ে ধরলে তুলোধুনো হয়ে যাবে আর ধরতে গিয়ে তা পড়ে গেলে কোমড় ভেঙে যাবে। সহজেই তারা যুদ্ধের কৌশল রপ্ত করে ফেলতেন সৃজনশীলতার ছোঁয়া পেয়ে। জেগে উঠতো নিস্তেজ প্রতিভা। আলো ছড়াতো নিভু নিভু বাতি। ময়দানকে চাঙা করার ব্যাপারে তাঁর সৃজনশীল পদ্ধতিগুলো ছিলো খুবই চমৎকার। তাই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাঁকে কমান্ডার বানিয়ে পাঠাতেন।
তাঁর পিছনে থাকতো সাহাবীদের সেনাবহর।
ফাতহুশ শামে বর্ণিত আছে
তিনি তাঁর সাথিদেরকে সবসময় তরবারী কাঁধে রাখার ফজিলত শোনাতেন। এমনকি তিনি নিজেও কোন রাজ-দরবারে গেলে তরবারি গর্দান থেকে নামাতেন না। তাঁর এ সমস্ত কাজগুলো সাধারণ সাহাবীদের মনোভাবকে চাঙা করতো।
মুসআব ইবনে উমায়ের রাদিআল্লাহু। তিনি দাওয়াতের পূর্বে প্রতিটি পরিবেশ মুতাআলা করতেন। প্রতিটি মানুষকে মনের চোখে মুখে পড়ে নিতেন। তার ভিতর কি ঝলক আছে! তার সৃজনশীল এ পদ্ধতিটি দাওয়াতের ময়দানে খুব ফলপ্রসূ হয়েছিলো। তাই গোত্রের নেতারাও মুগ্ধমনে তাঁর একত্ববাদের কথা শুনতো।
দ্বীনের কায়েমের পথে সৃজনশীলতা শত্রুদের মাথা ব্যথা তৈরি করে। তাদের সুস্থ শরীরে এলার্জি হয়ে যায়। নিজেই নিজের নক দিয়ে চুলকাতে থাকে। একটা সময় ক্ষত হতে শুরু করে। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম এর সাহিত্য অঙ্গনে আর শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ এর সমরনীতির সামনে তারা নত স্বীকার করে।
কারণ তাদের মেধামনন ছিলো সৃজনশীল রাজ্যের এক সেনানায়ক । এমন কিছু ফিকির করেছে যা ভবিষ্যত সম্ভাবনা ছিলো। এমন কিছু করেছে যা দশজন বীরের কাজ একাই পুষিয়ে দিয়েছে। এমন এক জাগরণ সৃষ্টি করেছে যা ঝর্ণার নহরের মত বইয়ে চলছে।
প্রিয় যুবক ভাই!
আপডেটের এ যামানায় তোমার ফিকিরগুলো হতে হবে সৃজনশীল। স্মার্টনেসের এ দুনিয়ায় তোমার গবেষণাগুলো হতে হবে মননশীল। নতুনত্বের চাহিদার ময়দানে তোমার প্রতিভাগুলো হতে হবে সুনিপুণ। পশ্চিমা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তুমি একাই একজন প্রতিপক্ষ। মেধার ধার যেমন হতে হবে কলমের আরেকটু বেশি। চলার শান যেমন হতে হবে আখলাকের আরেকটু বেশি। কথা বলার আর্ট যেমন হতে হবে বাচনভঙ্গি আরেকটু বেশি।
ইলমের তুলনায় হেলম হতে হবে দশগুন। শরয়ী মুতাআলার পাশাপাশি পরিবেশ পরিস্থিতিও মুতাআলা করতে হবে। লোহা লস্করের সাথে সাথে তা আবিষ্কার করার ধরণ জানতে হবে। তাহলে দ্বীন কায়েমের তরে তোমার সৃজনশীলতা হবে সার্থক। তোমাকে নিয়ে উম্মাহর এ ভাবনাগুলো হবে অর্থবোধক।
Comment