নিজেকে পরিবর্তন করে দ্বীনের জন্য যোগ্য করে তুলার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে আজ থেকেই।
অনেক দিন পর মসজিদে এক ভাইয়ের সাথে দেখা। সে আগে একটা গণতান্ত্রিক ইসলামি দলের সাথে যুক্ত ছিল, এখনও সেখানেই আছে। এই কয়েক বছরে অন্তত বাহ্যিক নজরে তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসে নি। সেই আগের মতোই একমুষ্টির কম দাড়ি, তাড়াহুড়ো করে সালাত আদায়, মোবাইলে মিউজিকযুক্ত রিং টোন। এমন হতে পারত, আজ এই ভাইটা সুন্নাহসম্মত দাড়ি রাখেন, খুশু-খুজুর সাথে সালাত আদায় করেন, মিউজিক থেকে নিজেকে হিফাজতে রাখেন; সাথে সুন্নাহসম্মত লিবাসও ধারণ করেছেন। উনাকে একদম একই রকম অবস্থায় দেখে কেন যেন আমার একটু দুঃখ বোধই কাজ করলো...
এই লেখায় উনাকে "বিচার" করা আমার উদ্দেশ্য না, বরং নিজের জন্যই এই চিন্তা। জীবনের চলার পথে আশেপাশের অনেক সামান্য ব্যাপারেও মাঝে মাঝে মনের ভেতর গভীর বোধের সৃষ্টি হয়। আজও যা বলব, সেগুলো আমার উপলব্ধি মাত্র।
একজন মুমিনের জীবন কখনো 'স্ট্যাগন্যান্ট' হতে পারে না, হওয়া উচিত নয়। স্ট্যাগন্যান্ট শব্দের ভালো অনুবাদ এই মুহূর্তে মাথায় আসছে না। নদীর পানি চলমান। কখনো যদি সেই পানি চলা বন্ধ করে দেয়, তাকে বলা হবে স্ট্যাগন্যান্ট। বদ্ধ জলাশয়ে পানি যেমন জমে স্থির হয়ে থাকে, সেরকম একটা অবস্থা। মুসলিমদের অবস্থা কখনও তেমন হতে পারবে না।
একজন মুসলিমকে সারাক্ষণ পরিবর্তনের মধ্যে থাকতে হবে-- অবশ্যই ভালোর দিকে। ইলম অর্জন করে, নিজের জীবনে সুন্নাহ আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে, দাওয়াহ দিয়ে, দ্বীনের জন্য আরও বেশি যোগ্য হয়ে উঠে, খেদমত করে, কিংবা অন্য কোনোভাবে।
এমন যেন না হয়, পাঁচ বছর আগে আমি শুধু একজন পাঠক ছিলাম এখনো শুধু পাঠকই রয়ে গেছি!! দ্বীনের তাকাজা অনুযায়ী অভিজ্ঞদের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে যেসব খেদমত আঞ্জাম দেওয় বর্তমানে অত্যন্ত জরুরি • [https://gazwah.net/?p=32007] সেসব খেদমতের জন্য তিন বছর আগে নিজের মাঝে কোনো যোগ্যতা ছিলো না, এখন তিন বছর পরও বিশেষ কোনো যোগ্যতা অর্জন করা হয়নি!!
যে জীবনে এগোতে পারছে না, সে আসলে পিছিয়ে পড়ছে। এই যে আগামী পাঁচ বছর পর, আপনি পেছনে ফিরে অবাক হয়ে আবিষ্কার করবেন, আপনি পাঁচ বছর আগে যেখানে ছিলেন, এখনও সেখানেই পড়ে আছেন, ইসলামিক দিকে একটুও উন্নতি করতে পারেন নি, এটা আপনার জন্য একটা পরাজয়-- একটা বিরাট পরাজয়।
সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হয় তাদের সাথে, যারা সারাজীবন দুনিয়াটাকেই প্রাধান্য দিতে থাকে, আর মরার সময় একরাশ বিস্ময় নিয়ে বুঝতে পারে জীবনে আসলে কাজের কাজ কিছুই হয় নি। কিন্তু তখন আর কিচ্ছু করার থাকে না।
আমাদের জীবন যেন কখনো হেরে যাওয়া জীবন না হয়। ঘড়িকে কখনো উল্টোদিকে ঘোরানো যায় না। যে সময় চলে গেছে, তার হাহাকার না করে বরং আজ থেকেই নতুন কিছু শুরু করুন। একটি ছোট্টো পদক্ষেপ হলেও নিন। মাসে অন্তত একবার নিজেকে সেল্ফ-চেক করুন। আপনি কি এগোচ্ছেন, নাকি পিছাচ্ছেন? এরপর আবার চেষ্টা করুন। কখনো থেমে যাবেন না। আমাদের লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, জান্নাতুল ফিরদাউস। নবী-রাসূল, সাহাবীরা হলেন আমাদের রোল-মডেল। আমরা কি তাদের মতো হতে পেরেছি? আমাদের জীবন কি তাদের জীবনকে প্রতিফলন করে? যদি না করে, তাহলে চেষ্টা করে যান। যতক্ষণ শ্বাস আছে, যতক্ষণ প্রাণ আছে, যতক্ষণ মাথার মধ্যের এই আমিটা কথা বলে যাচ্ছে, ততক্ষণ।
দুনিয়া আখিরাতের পাথেয়। মৃত্যু পর্যন্ত যত বেশি সম্ভব কামাই করে নিন। জান্নাতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্তরের দিকে ছুটে চলুন। কিয়ামতের দিবসকে বলা হয় আফসোসের দিন। সেই দিন মানুষ নিজের হাত কামড়াবে। চুল ছিড়বে। হায়-হায় করে বলবে, একবার- মাত্র একবার আমাকে দুনিয়াতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। কী শোচনীয় পরিণাম, কী ভীতিকর পরিণতি! সারাজীবন সুযোগ পেয়েও এই যদি হয় ফলাফল...! আমার কাছে কিয়ামতের দিনে আফসোস করাকে খুব ভয় হয়। মনে হয় আমি যথেষ্ট বদলাতে পারিনি। সেই দিনটায় যে নিরাপদে থাকতে চায়, তার জন্য দুনিয়ার প্রত্যেকটা মুহূর্তকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজে লাগানো ছাড়া আর কোনো উপায় আছে বলে জানা নেই।
==============
Collected
[লেখাটিতে কোনো ভুল থাকলে অভিজ্ঞ ভাইদের নিকট শুদরে দেওয়ায় আবদার, এডিট করে নিবো, ইনশা আল্লাহ]
Comment