সুখের সন্ধানে মরিচীকার নিচে চাপা পড়ছি না তো!
প্রিয় যুবক ভাই!
আজকের দুনিয়ায় যুবকগুলো অসুখী হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো দুনিয়াপূজা। পশ্চিমা ফিটনেসে বড়লোক হওয়ার দৌঁড়। অসৎ উপায়ে সম্পদ উপার্জনে বিভোর। দক্ষিণা স্মার্টনেসে শরীর বাড়ানো প্রতিযোগিতায় উৎসুক। পশ্চিমা সিম্বাল রোশান ব্যান্ডের ন্যাড়া কাটিংয়ে মাশগুল।
আমার প্রতিবেশী যুবক দিনের পর দিন সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে সুতরাং আমাকে সম্পদের ছোট্ট একটি টিলা হলেও বানাতে হবে। আমার প্রতিষ্ঠানের কলিগ আইফোন চালায় সুতরাং আমাকে এমআই হলেও চালাতে হবে। আমার সাথী ব্যান্ডের পাজারু গাড়ি কিনেছে আমাকে লোন নিয়ে হলেও একটি হান্ডেট গাড়ি কিনতে হবে।
অর্জনটা হারাম হোক বা হালাল। আপডেটের যামানায় এ দেখার বিষয় নয়। দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলো। যেখান থেকে পাও সেখান থেকেই সঞ্চয় করো। ধনী গরিব পরের কথা। টাকা পেলাম কিনা সেটা বলো। মুসলমানদের রক্তের বিনিময়ে আসলো বা লাশের বিনিয়োগে। সেটা তো আরো হাস্যকর কথা। আমার কিছু হলো কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
অমুক চ্যাম্পিয়্যান! তবে বাড়ন্ত যৌবন দেখাতে। অমুক মর্ডান! ছোট ছোট কাপড় পড়ে উত্তেজনা ছড়াতে। অমুক গায়ক! তবে শিরকের বাণী শোনাতে। অমুক নায়ক! অশ্লীলতার টুপি পড়াতে। সুতরাং আমিও তো তাদের মত মানুষ। রক্তে মাংসে, হাতে-পাঁয়ে, নাকে মুখে কোন অংশেই কম নই। সুতরাং সে কেন এগিয়ে যাবে আর আমি কেন পিছিয়ে থাকবো? তাই চল চল চল! ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল। নিম্নে উতলা তরুণ দল অরুণ প্রাতের তরুণ দল। চলরে চলরে চল দাজ্জালের বাহিনী হলো আমাদের দল।
অমুক বিশ্রী তারপরও কাপল। আমি সুন্দর কিন্তু সিংগেল। এ আবার কেমন কথা। হতেই পারে না। তাই গলায় মালা। হাতে চুড়ি। হাঁটুতে ছিঁড়া। মুখে দুতারা বাশি। বাঁধতে হবে নিজের রশিতে পতিতা নারীর শাড়ি।
এইযে অসুস্থ এ প্রতিযোগিতা, এইযে নাপাক এ চিন্তা চেতনা যুবকদেরকে আল্লাহর রাস্তা থেকে বিচ্যুত করে দেয়। ছিটকে পড়ে সুখের রাস্তা থেকে।
হাত ছুটে যায় নূরের বন্ধন থেকে, যে রাস্তায়, যে নূরে দেহ মন প্রশান্তি লাভ করে। এজন্যই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তুলনা এড়িয়ে চলতে বলেছেন। যারা দুনিয়াপূজায় মত্ত হয়ে আছে তাদের দিকে ফিরে তাঁকাতে নিষেধ করেছেন। আবার এও বলেছেন-কেবল তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের রিযিক হিসেবে দান করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে-
ولا تمدن عينيك الا ما متعنا به ازواج منهم زهرة الحياة الدنيا لنفتنهم فيه ورزق ربك خير و وابقي
কখনোই সে-সমস্ত বস্তুর দিকে তাকাবে না, যা আমি তাদের [দুনিয়াপূজারীদের ভোগের জন্য দিয়েছি ] এসব দিয়ে আমি তাদের পরীক্ষা করি। বস্তুত! আপনার প্রতিপালকের দেওয়া রিযিকই হলো সবচেয়ে উত্তম ও স্থায়ী। [১]
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
كُلُّ نَفسٍ ذائِقَةُ المَوتِ ۗ وَإِنَّما تُوَفَّونَ أُجورَكُم يَومَ القِيٰمَةِ ۖ فَمَن زُحزِحَ عَنِ النّارِ وَأُدخِلَ الجَنَّةَ فَقَد فازَ ۗ وَمَا الحَيوٰةُ الدُّنيا إِلّا مَتٰعُ الغُرور
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।
ما يُجٰدِلُ فى ءايٰتِ اللَّهِ إِلَّا الَّذينَ كَفَروا فَلا يَغرُركَ تَقَلُّبُهُم فِى البِلٰدِ
কাফেররাই কেবল আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করে। কাজেই নগরীসমূহে তাদের বিচরণ যেন আপনাকে বিভ্রান্তিতে না ফেলে।
যুবক ভাই! মহামহিয়ান রবের পক্ষ হতে এ বার্তা নাকচ করে দেয়ার পরিণাম বড়ই অশুভ হবে। শাস্তির কীট আজালের মত ছুটে আসবে। ফিরে তাঁকানোর সুযোগ হবে কিনা আল্লাহ মালুম! সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই আসবাব পত্র গুছানো শুরু করো। রব রব সাঁজে আকাশ বাতাস ভারি করে তুলো।
সুখের পিছনে ছুটতে গিয়ে যুবকরা হতোদ্যম হয়ে পড়ে। এই সুখ আসলে শারীরিক নয়, আত্মিক। আত্মার পরিতৃপ্তিই হলো সুখের কারণ। আর আত্মাই যদি প্রশান্ত না হয় তাহলে এ চাকচিক্য দিয়ে সুখি হওয়াটা নিছকই অভিনয় মাত্র। সুখ নয়।
সুখের ব্যাপারে কুরআনের আলাদা ভাষ্য আছে- কুরআন সুখকে অর্থবিত্ত ধনাঢ্য প্রতাপশালীদের ঝলকানি দ্বারা সংজ্ঞায়িত করেনি। সুখ বলতে বুঝিয়েছে আল্লাহর নিকট নিজেকে একান্ত সঁপে দেয়াকে। সুখ বলতে বুঝিয়েছে নির্জনে চোখের অশ্রু ঝরানোকে।
প্রিয় ভাই!
অশান্ত যুবকদের হৃদয়ে প্রয়োজন সাকিনাহ। উৎকন্ঠা তরুণদের কাজ-কর্মে প্রয়োজন বারাকাহ। প্রাণবন্তহীন কিশোরদের দেহ-মনে প্রয়োজন স্থিরতা। জ্যোতিহীন কিশোরদের চোখে-মুখে প্রয়োজন আসমানী নূরানিয়তা।
তাই কলবকে পরিষ্কার করতে হবে ইলমে ওহীর স্বচ্ছ পানি দ্বারা। কলবকে শানিত করতে হবে ইলমে মাতলুর জ্ঞান দ্বারা। মুছে নিতে হবে ইলমে নববীর সফেদ পাথর দ্বারা। কলবের পরিচর্যা করতে হবে আসহাবে সুফফার পাথেয় দ্বারা। আরো ঝাঁঝালো ও উচ্চ মাকামে তুলে নিতে হলে করতে হবে হিজরতের আমল। আরো পাকাপোক্ত ও উচ্চ শীখড়ে(শিখরে) উঠতে হলে করতে হবে মুসাফিরের সফর। মর্যাদার সুউচ্চ মিনারে আসিন হতে হলে করতে হবে ইদাদ ও জিহাদের তালীম।
এতদিন তো সুখের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলে পঁচাগান্ধা জিনিসের পিছনে। এখন একটু থামো না যুবক ভাই! একটু ভাবো! সময় নিয়ে আবার শুরু করো এবং দেখো এর ভিতর পেঁয়ে যাও কিনা সত্যিকারের সুখের ঠিকানা।
ও যুবক ভাই! রব তোমাকে কি বলছেন শুনবে না? তিনি তো বলছেন- যারা তাদাব্বুর তাফাক্কুর করে তারা সত্যিই পেয়ে যায় সুখের ঠিকানা। বাস্তব কুঁড়েঘরের আস্তানা। যেখানে তার মুহিব্বীনরা সুখ কুড়ায়। দুখ মুছায়। ঘোষণা দিয়ে দিয়ে সত্যান্বেষী যুবকদের ধারে ধারে সুখের বাণী পৌঁছায়।
সত্যিকারের সুখ তো হলো আল্লাহর রাজি খুশিতে। প্রিয় হাবিবের রেজামন্দিতে। তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে শোন একজন সুখী মানুষের গল্প যিনি কোথায় সুখ খোঁজে পেয়েছেন-
সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিআল্লাহু একজন ইমানদীপ্তওয়ালা সাহাবী অথচ তারঁ সহোদরা ভাই উতবা বিন আবি ওয়াক্কাস একজন কট্টরপন্থী কাফের। উহুদ যুদ্ধে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর হামলা চালিয়ে দান্দান মোবারক ভেঙ্গে ফেলেছিলো এবং ঠোঁটের নিচে জখম করে দিয়েছিলো। এর প্রেক্ষিতে হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিআল্লাহু বলেন-
فما حرصت علي قتل احد حرصي علي قتل اخي عتبة بن ابي وقاص لما فعل رسول الله صلي الله عليه وسلم
আমি কাউকে হত্যা করার জন্য এতটা উদগ্রীব হয়নি যতটা উদগ্রীব হয়েছি আমি আমার সহোদরা ভাই উতবা বিন আবি ওয়াক্কাসকে হত্যা করার জন্য। উহুদের যুদ্ধে যে আচরণ সে রাসুলুল্লাহর সাথে করেছে। সুবহানাল্লাহ! [২]
যুবক ভাই দেখলে তো তাঁর সুখের জায়গাটা। তাঁর লক্ষ্যবেধ ভুল হয়নি তো! তিনি সুখের সঠিক স্থানটি চিনতে কোনরকম ভুল করেনি তো!সেই সাথে তিনি তাঁর কদর করতেও ভুলে যাননি।কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতেও সময় নেননি।
কালের সুপ্ত প্রতিভা বলে বেড়ায়-সাহাবীদের সুখের এ সংসার দেখলে আমরা আফসোস করতাম শ্রেষ্ঠ মানব হওয়ার। সাহাবীদের মুখে সুখের সংঙ্গা শুনতে কান খোলে আড়িপাততাম প্রাণভরে তৃপ্তি নেওয়ার। তাঁদের সুখের জায়গায়গুলো দেখলে ইচ্ছা হতো তাঁদের সাথে শরীক হওয়ার।
কি এক অদ্ভুত মায়া ছিলো তাঁদের চোখে। তবে সেটা কষ্টের সুখ। কি এক দরদী ঝলক ছিলো তাঁদের মুখে। তবে সেটা শান্তনার সুখ। হৃদয়কোণে যদি আশা না থাকে, অদৃশ্যপাত্রে যদি পরম একটা ভরসার স্থল না থাকে, হৃদয়তন্ত্রীতে যদি নির্ভরতার কেন্দ্র না থাকে তাহলে সে মানুষ প্রচন্ড হতাশায় ডুবে যায়।
তাঁদের হৃদয়কোণে আশা ছিলো রবের ভালোবাসা। অদৃশ্যপাত্রে ভরসার স্থল হলো প্রভুর নেশা। হৃদয়তন্ত্রীতে নির্ভরতার কেন্দ্র ছিলো প্রিয় রাসূলের মায়া। এ সবই হলো স্রষ্টার পক্ষ থেকে পাঠানো বিশেষ সুখ। যা আমি তুমি কুড়ানোর প্রতিযোগিতায় বিমুখ।
প্রিয় ভাই!
যুবকদের বর্তমান অবস্থা নিছক চোরাবালির মত। খাদের কিনারায় পা ফসকালে যেমন তলিয়ে যেতে হয় অতল গহ্বরে। এই দুনিয়া ঠিক তেমনই- খাদে পা ফসকালেই বিপদ। দুনিয়ার মরিচীকার নিচে চাপা পড়লেই ধ্বংস অনিবার্য। ইরশাদ হয়েছে-
وما الحياة الدنيا الا لعب ولهو
এই দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।[৩]
প্রিয় যুবক ভাই!
সুখদাতা রব বলছেন-এ দুনিয়া নিছক খেলতামাশার ক্ষেত্র। ধোঁকার এক ভান্ডার। ধোঁয়াশার এক আকার। ই কার নয় কিন্তু। অ আকার। ছলনার কূপ। যার নিচে তাঁকালে তলদেশ দেখা যায় না। ধ্বংসের এক অদ্ভুত ফাঁদ। নিশ্চয় এগুলোও সুখ তবে মরিচীকা। এ সুখ মুমিনের জন্য নয়। এ আরাম আয়েশ সাদিকীনদের জন্য নয়। এ ভোগ-বিলাস আল্লাহর ঘোষণাকৃত শাবাবদের জন্য নয়।
তবে সুখ কার জন্য? কাফের বে-ইমানদের জন্য। তাগুত-মুরতাদদের জন্য। ফেড়াউন হামানের উত্তরসূরীদের জন্য। উবাই ইবনে কাব এর বংশধরের প্রয়োজনে। শয়তান ও তার শাগরেদের জন্যে । দাজ্জাল ও তার চেলাচামুন্ডাদের দরকারে।
জামে তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে-
العاجز من اتبع نفسه هواها وتمني علي الله
ঐ ব্যক্তি পরাজিত যে প্রবৃত্তির কামনার পিছনে ধাবমান এবং আল্লাহ তাআলার উপর এই আশা নিয়ে বসে আছে, তিনি বড়ই দয়ালু, এ সমস্ত বান্দাদের ক্ষমা করে দেবেন। এ আশা মুর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
যুবক ভাই! সময় থাকতে ফিরে এসো সুখের নীড়ে। যে সুখ রবের পক্ষ থেকে স্বীকৃত। যে আনন্দ কষ্ট মোজাহাদায় লুকায়িত। যে আরাম আয়েশ নবীদের সীরাতে দৃশ্যায়িত। তবেই তোমার সুখ অর্থবহ।
তথ্যায়াদি
১.সূরা ত্বহা.আয়াত নং১৩১
২.শাতিমদের বিচার
৩.সূরা আনআম.আয়াত নং ৩২
প্রিয় যুবক ভাই!
আজকের দুনিয়ায় যুবকগুলো অসুখী হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো দুনিয়াপূজা। পশ্চিমা ফিটনেসে বড়লোক হওয়ার দৌঁড়। অসৎ উপায়ে সম্পদ উপার্জনে বিভোর। দক্ষিণা স্মার্টনেসে শরীর বাড়ানো প্রতিযোগিতায় উৎসুক। পশ্চিমা সিম্বাল রোশান ব্যান্ডের ন্যাড়া কাটিংয়ে মাশগুল।
আমার প্রতিবেশী যুবক দিনের পর দিন সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে সুতরাং আমাকে সম্পদের ছোট্ট একটি টিলা হলেও বানাতে হবে। আমার প্রতিষ্ঠানের কলিগ আইফোন চালায় সুতরাং আমাকে এমআই হলেও চালাতে হবে। আমার সাথী ব্যান্ডের পাজারু গাড়ি কিনেছে আমাকে লোন নিয়ে হলেও একটি হান্ডেট গাড়ি কিনতে হবে।
অর্জনটা হারাম হোক বা হালাল। আপডেটের যামানায় এ দেখার বিষয় নয়। দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলো। যেখান থেকে পাও সেখান থেকেই সঞ্চয় করো। ধনী গরিব পরের কথা। টাকা পেলাম কিনা সেটা বলো। মুসলমানদের রক্তের বিনিময়ে আসলো বা লাশের বিনিয়োগে। সেটা তো আরো হাস্যকর কথা। আমার কিছু হলো কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
অমুক চ্যাম্পিয়্যান! তবে বাড়ন্ত যৌবন দেখাতে। অমুক মর্ডান! ছোট ছোট কাপড় পড়ে উত্তেজনা ছড়াতে। অমুক গায়ক! তবে শিরকের বাণী শোনাতে। অমুক নায়ক! অশ্লীলতার টুপি পড়াতে। সুতরাং আমিও তো তাদের মত মানুষ। রক্তে মাংসে, হাতে-পাঁয়ে, নাকে মুখে কোন অংশেই কম নই। সুতরাং সে কেন এগিয়ে যাবে আর আমি কেন পিছিয়ে থাকবো? তাই চল চল চল! ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল। নিম্নে উতলা তরুণ দল অরুণ প্রাতের তরুণ দল। চলরে চলরে চল দাজ্জালের বাহিনী হলো আমাদের দল।
অমুক বিশ্রী তারপরও কাপল। আমি সুন্দর কিন্তু সিংগেল। এ আবার কেমন কথা। হতেই পারে না। তাই গলায় মালা। হাতে চুড়ি। হাঁটুতে ছিঁড়া। মুখে দুতারা বাশি। বাঁধতে হবে নিজের রশিতে পতিতা নারীর শাড়ি।
এইযে অসুস্থ এ প্রতিযোগিতা, এইযে নাপাক এ চিন্তা চেতনা যুবকদেরকে আল্লাহর রাস্তা থেকে বিচ্যুত করে দেয়। ছিটকে পড়ে সুখের রাস্তা থেকে।
হাত ছুটে যায় নূরের বন্ধন থেকে, যে রাস্তায়, যে নূরে দেহ মন প্রশান্তি লাভ করে। এজন্যই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তুলনা এড়িয়ে চলতে বলেছেন। যারা দুনিয়াপূজায় মত্ত হয়ে আছে তাদের দিকে ফিরে তাঁকাতে নিষেধ করেছেন। আবার এও বলেছেন-কেবল তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের রিযিক হিসেবে দান করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে-
ولا تمدن عينيك الا ما متعنا به ازواج منهم زهرة الحياة الدنيا لنفتنهم فيه ورزق ربك خير و وابقي
কখনোই সে-সমস্ত বস্তুর দিকে তাকাবে না, যা আমি তাদের [দুনিয়াপূজারীদের ভোগের জন্য দিয়েছি ] এসব দিয়ে আমি তাদের পরীক্ষা করি। বস্তুত! আপনার প্রতিপালকের দেওয়া রিযিকই হলো সবচেয়ে উত্তম ও স্থায়ী। [১]
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
كُلُّ نَفسٍ ذائِقَةُ المَوتِ ۗ وَإِنَّما تُوَفَّونَ أُجورَكُم يَومَ القِيٰمَةِ ۖ فَمَن زُحزِحَ عَنِ النّارِ وَأُدخِلَ الجَنَّةَ فَقَد فازَ ۗ وَمَا الحَيوٰةُ الدُّنيا إِلّا مَتٰعُ الغُرور
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।
ما يُجٰدِلُ فى ءايٰتِ اللَّهِ إِلَّا الَّذينَ كَفَروا فَلا يَغرُركَ تَقَلُّبُهُم فِى البِلٰدِ
কাফেররাই কেবল আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করে। কাজেই নগরীসমূহে তাদের বিচরণ যেন আপনাকে বিভ্রান্তিতে না ফেলে।
যুবক ভাই! মহামহিয়ান রবের পক্ষ হতে এ বার্তা নাকচ করে দেয়ার পরিণাম বড়ই অশুভ হবে। শাস্তির কীট আজালের মত ছুটে আসবে। ফিরে তাঁকানোর সুযোগ হবে কিনা আল্লাহ মালুম! সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই আসবাব পত্র গুছানো শুরু করো। রব রব সাঁজে আকাশ বাতাস ভারি করে তুলো।
সুখের পিছনে ছুটতে গিয়ে যুবকরা হতোদ্যম হয়ে পড়ে। এই সুখ আসলে শারীরিক নয়, আত্মিক। আত্মার পরিতৃপ্তিই হলো সুখের কারণ। আর আত্মাই যদি প্রশান্ত না হয় তাহলে এ চাকচিক্য দিয়ে সুখি হওয়াটা নিছকই অভিনয় মাত্র। সুখ নয়।
সুখের ব্যাপারে কুরআনের আলাদা ভাষ্য আছে- কুরআন সুখকে অর্থবিত্ত ধনাঢ্য প্রতাপশালীদের ঝলকানি দ্বারা সংজ্ঞায়িত করেনি। সুখ বলতে বুঝিয়েছে আল্লাহর নিকট নিজেকে একান্ত সঁপে দেয়াকে। সুখ বলতে বুঝিয়েছে নির্জনে চোখের অশ্রু ঝরানোকে।
প্রিয় ভাই!
অশান্ত যুবকদের হৃদয়ে প্রয়োজন সাকিনাহ। উৎকন্ঠা তরুণদের কাজ-কর্মে প্রয়োজন বারাকাহ। প্রাণবন্তহীন কিশোরদের দেহ-মনে প্রয়োজন স্থিরতা। জ্যোতিহীন কিশোরদের চোখে-মুখে প্রয়োজন আসমানী নূরানিয়তা।
তাই কলবকে পরিষ্কার করতে হবে ইলমে ওহীর স্বচ্ছ পানি দ্বারা। কলবকে শানিত করতে হবে ইলমে মাতলুর জ্ঞান দ্বারা। মুছে নিতে হবে ইলমে নববীর সফেদ পাথর দ্বারা। কলবের পরিচর্যা করতে হবে আসহাবে সুফফার পাথেয় দ্বারা। আরো ঝাঁঝালো ও উচ্চ মাকামে তুলে নিতে হলে করতে হবে হিজরতের আমল। আরো পাকাপোক্ত ও উচ্চ শীখড়ে(শিখরে) উঠতে হলে করতে হবে মুসাফিরের সফর। মর্যাদার সুউচ্চ মিনারে আসিন হতে হলে করতে হবে ইদাদ ও জিহাদের তালীম।
এতদিন তো সুখের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলে পঁচাগান্ধা জিনিসের পিছনে। এখন একটু থামো না যুবক ভাই! একটু ভাবো! সময় নিয়ে আবার শুরু করো এবং দেখো এর ভিতর পেঁয়ে যাও কিনা সত্যিকারের সুখের ঠিকানা।
ও যুবক ভাই! রব তোমাকে কি বলছেন শুনবে না? তিনি তো বলছেন- যারা তাদাব্বুর তাফাক্কুর করে তারা সত্যিই পেয়ে যায় সুখের ঠিকানা। বাস্তব কুঁড়েঘরের আস্তানা। যেখানে তার মুহিব্বীনরা সুখ কুড়ায়। দুখ মুছায়। ঘোষণা দিয়ে দিয়ে সত্যান্বেষী যুবকদের ধারে ধারে সুখের বাণী পৌঁছায়।
সত্যিকারের সুখ তো হলো আল্লাহর রাজি খুশিতে। প্রিয় হাবিবের রেজামন্দিতে। তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে শোন একজন সুখী মানুষের গল্প যিনি কোথায় সুখ খোঁজে পেয়েছেন-
সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিআল্লাহু একজন ইমানদীপ্তওয়ালা সাহাবী অথচ তারঁ সহোদরা ভাই উতবা বিন আবি ওয়াক্কাস একজন কট্টরপন্থী কাফের। উহুদ যুদ্ধে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর হামলা চালিয়ে দান্দান মোবারক ভেঙ্গে ফেলেছিলো এবং ঠোঁটের নিচে জখম করে দিয়েছিলো। এর প্রেক্ষিতে হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিআল্লাহু বলেন-
فما حرصت علي قتل احد حرصي علي قتل اخي عتبة بن ابي وقاص لما فعل رسول الله صلي الله عليه وسلم
আমি কাউকে হত্যা করার জন্য এতটা উদগ্রীব হয়নি যতটা উদগ্রীব হয়েছি আমি আমার সহোদরা ভাই উতবা বিন আবি ওয়াক্কাসকে হত্যা করার জন্য। উহুদের যুদ্ধে যে আচরণ সে রাসুলুল্লাহর সাথে করেছে। সুবহানাল্লাহ! [২]
যুবক ভাই দেখলে তো তাঁর সুখের জায়গাটা। তাঁর লক্ষ্যবেধ ভুল হয়নি তো! তিনি সুখের সঠিক স্থানটি চিনতে কোনরকম ভুল করেনি তো!সেই সাথে তিনি তাঁর কদর করতেও ভুলে যাননি।কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতেও সময় নেননি।
কালের সুপ্ত প্রতিভা বলে বেড়ায়-সাহাবীদের সুখের এ সংসার দেখলে আমরা আফসোস করতাম শ্রেষ্ঠ মানব হওয়ার। সাহাবীদের মুখে সুখের সংঙ্গা শুনতে কান খোলে আড়িপাততাম প্রাণভরে তৃপ্তি নেওয়ার। তাঁদের সুখের জায়গায়গুলো দেখলে ইচ্ছা হতো তাঁদের সাথে শরীক হওয়ার।
কি এক অদ্ভুত মায়া ছিলো তাঁদের চোখে। তবে সেটা কষ্টের সুখ। কি এক দরদী ঝলক ছিলো তাঁদের মুখে। তবে সেটা শান্তনার সুখ। হৃদয়কোণে যদি আশা না থাকে, অদৃশ্যপাত্রে যদি পরম একটা ভরসার স্থল না থাকে, হৃদয়তন্ত্রীতে যদি নির্ভরতার কেন্দ্র না থাকে তাহলে সে মানুষ প্রচন্ড হতাশায় ডুবে যায়।
তাঁদের হৃদয়কোণে আশা ছিলো রবের ভালোবাসা। অদৃশ্যপাত্রে ভরসার স্থল হলো প্রভুর নেশা। হৃদয়তন্ত্রীতে নির্ভরতার কেন্দ্র ছিলো প্রিয় রাসূলের মায়া। এ সবই হলো স্রষ্টার পক্ষ থেকে পাঠানো বিশেষ সুখ। যা আমি তুমি কুড়ানোর প্রতিযোগিতায় বিমুখ।
প্রিয় ভাই!
যুবকদের বর্তমান অবস্থা নিছক চোরাবালির মত। খাদের কিনারায় পা ফসকালে যেমন তলিয়ে যেতে হয় অতল গহ্বরে। এই দুনিয়া ঠিক তেমনই- খাদে পা ফসকালেই বিপদ। দুনিয়ার মরিচীকার নিচে চাপা পড়লেই ধ্বংস অনিবার্য। ইরশাদ হয়েছে-
وما الحياة الدنيا الا لعب ولهو
এই দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।[৩]
প্রিয় যুবক ভাই!
সুখদাতা রব বলছেন-এ দুনিয়া নিছক খেলতামাশার ক্ষেত্র। ধোঁকার এক ভান্ডার। ধোঁয়াশার এক আকার। ই কার নয় কিন্তু। অ আকার। ছলনার কূপ। যার নিচে তাঁকালে তলদেশ দেখা যায় না। ধ্বংসের এক অদ্ভুত ফাঁদ। নিশ্চয় এগুলোও সুখ তবে মরিচীকা। এ সুখ মুমিনের জন্য নয়। এ আরাম আয়েশ সাদিকীনদের জন্য নয়। এ ভোগ-বিলাস আল্লাহর ঘোষণাকৃত শাবাবদের জন্য নয়।
তবে সুখ কার জন্য? কাফের বে-ইমানদের জন্য। তাগুত-মুরতাদদের জন্য। ফেড়াউন হামানের উত্তরসূরীদের জন্য। উবাই ইবনে কাব এর বংশধরের প্রয়োজনে। শয়তান ও তার শাগরেদের জন্যে । দাজ্জাল ও তার চেলাচামুন্ডাদের দরকারে।
জামে তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে-
العاجز من اتبع نفسه هواها وتمني علي الله
ঐ ব্যক্তি পরাজিত যে প্রবৃত্তির কামনার পিছনে ধাবমান এবং আল্লাহ তাআলার উপর এই আশা নিয়ে বসে আছে, তিনি বড়ই দয়ালু, এ সমস্ত বান্দাদের ক্ষমা করে দেবেন। এ আশা মুর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
যুবক ভাই! সময় থাকতে ফিরে এসো সুখের নীড়ে। যে সুখ রবের পক্ষ থেকে স্বীকৃত। যে আনন্দ কষ্ট মোজাহাদায় লুকায়িত। যে আরাম আয়েশ নবীদের সীরাতে দৃশ্যায়িত। তবেই তোমার সুখ অর্থবহ।
তথ্যায়াদি
১.সূরা ত্বহা.আয়াত নং১৩১
২.শাতিমদের বিচার
৩.সূরা আনআম.আয়াত নং ৩২
Comment