একটা মৃত লাশের সাথে গল্প করতে হয়ত আপনাদের বিরক্ত লাগতে পারে, কিংবা মৃত্যুর বিভীষিকার কথা মনে করে আপনাদের মনে ঘৃণাও চলে আসতে পারে আমার প্রতি, কিন্তু হে প্রিয় ভাইয়েরা! আমি যে আপনাদের বড় বেশী ভালবাসি, আমি চাই না আমার মত আপনারাও জীবন্ত লাশে পরিণত হন, আমি চাই! আমার প্রিয় ভাইয়েরা যেন নির্মল ও সতেজভাবে জীবনটা যাপন করে যায়। কী বিশ্বাস হচ্ছে না আমি মৃত! তাহলে নিচের হাদিস টা একটু পড়ুন। তারপর আবার গল্প শুরু করি;
وَعَنْ أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: مَثَلُ الَّذِي يَذْكُرُ رَبَّهُ وَالَّذِي لاَ يَذْكُرُهُ مَثَلُ الحَيِّ وَالمَيِّتِ . رواه البخاري . ورواه مسلم فَقَالَ: مَثَلُ البَيْتِ الَّذِي يُذْكَرُ اللهُ فِيهِ، وَالبَيْتِ الَّذِي لاَ يُذْكَرُ اللهُ فِيهِ، مَثَلُ الحَيِّ والمَيِّتِ
আবূ মুসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে আল্লাহর যিক্র করে আর যে যিক্র করে না, উভয়ের উদাহরণ মৃত ও জীবন্ত মানুষের মত।”
(সহীহুল বুখারী ৬৪০৭, মুসলিম ৭৭৯)
রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৪৪২
এবার বিশ্বাস হলো তো! এখন আমি আপনাদেরকে আমার দুঃখের কাহিনীগুলো শোনাব; আগেই মাফ চেয়ে নিচ্ছি, কারণ মরা মানুষের কথা অগোছালো হওয়াই স্বাভাবিক, তবুও মন না চাইলেও ২ টা মিনিট একটু ধৈর্য ধরে আমার অবস্থা টা দেখে যান, হয়ত এর দ্বারা নিজের হালতের উপর শুকরিয়া আদায় করতে পারবেন।
ভাইয়েরা আসলেই আল্লাহর স্মরণবিহীন এই জীবন কাটানোর চেয়ে আল্লাহকে স্মরণ করা অবস্থায় আরও বহু আগেই যদি আমি মারা যেতে পারতাম! তাহলে তা কতই না আরামদায়ক হত!
আল্লাহর স্মরণ ছাড়া জীবন কাটানোর চেয়ে মারা যাওয়ার কষ্টও অনেক ভালো!
প্রিয় ভাইয়েরা! দুনিয়ার সাথে চলতে গিয়ে দেখালাম; এই দুনিয়ার সবাই স্বার্থপর, সকলেই নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে আগে ভাবে , তারপর যদি আমাকে তার জন্য ক্ষতিকর মনে না করে তাহলে কেউ কেউ একটু ভালবাসে, আর কেউ তো তাও ভালবাসে না, নিজের সার্থ উদ্ধারই যেন সবার মাক্বসাদ, সে যতই আপন হন না কেন! কিন্তু আল্লাহই শুধু এমন, যার আমাকে দিয়ে কোন লাভ হবে না, আমি অধমকে ভালবাসলে তাঁর মহান সত্তার কোন ইজ্জত বাড়বে না বা আমাকে শাস্তি দিলেও তাঁকে প্রশ্ন করতে অথবা কিছু বলতে পারব না!
আর আমার সবকিছু যখন তার নিয়ন্ত্রণে, তখন আমি দিনরাত তাঁকে ভুলে তার শত্রুর সাথে মিলিয়ে অনবরত পাপাচার করেই যাচ্ছি, তবুও তিনি আমাকে খাবার দিচ্ছেন, লাঞ্চিত না করে মানুষের মাঝে দিয়ে রেখেছেন সম্মান। এগুলো জানা ও বোঝা সত্তেও আমি পাপ করেই যাচ্ছি, আর তিনি আমার প্রতি সহনশীল হয়ে আছেন!
আমি যদি এখন তাকে বলি হে আল্লাহ! আর কোন নাফরমানি করব না আপনার সাথে, আপনি আমাকে মাফ করে দিন! ওয়াল্লাহি!! তিঁনি এত খুশি হবেন! তিনি এত খুশি হবেন! আমার মা-বাবা আমার বাঘের মুখ থেকে বেঁচে ফেরার কথা শুনলেও এত খুশি হবে না,
তাহলে বুঝুন! আমি সেই দয়াময় রবকে ভুলে স্বার্থপর দুনিয়ার পিছে ছুটে কী নিদারুন যন্ত্রনাতে দিন কাটাচ্ছি!
আরও শুনুন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মনে আর কোন আরামই পাই না, নফসকে খুশি করার জন্য কত কিছুই যে করে যাই, ও যা চায় তাই দিতে পাগলপারা হয়ে যাই কিন্তু এতকিছুর পরেও নফসের মন ভরে না, জাহান্নামের আগুনের মত সারাদিন শুধু বলে; আরও দাও আরও! আরও দাও আরও! আমার পাগলপ্রায় দশা এখন, আর দিনশেষে প্রতিরাতে এক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা নিয়ে ঘুমাতে যাই।
একটা সময় নামাজ ও তিলাওয়াতে কত প্রশান্তি লাগত, মনে হত! পুরো দুনিয়ার সব টাকা-পয়সা , রূপ-লালসা , ক্ষমতা ও বিলাসিতা যদি আমার সামনে এনে হাজির করা হয় তবুও ইবাদাতের ভিতর যে মজা আছে তা দেখলে এসব ভোগসামগ্রী লজ্জায় ও কান্নায় বিষপানে অথবা সমুদ্রে ডুবে আত্মহতা করে ফেলবে।
কিন্তু নাফরমানির ফলে আজ কী যে হলো! সারাদিন গুনাহের অনলে জ্বলতে থাকি, ফুটন্ত পানির ন্যায় টগবগ করতে থাকে আমার অন্তর তবুও রবের ইবাদাতে রবের স্মরণে আর যে কিঞ্চিত সময়ের জন্যও তৃপ্ত হতে পারি না, রবের দিকে ফিরতে পারছি না, জাহান্নামের সেই সত্তর গজ শিকল যেন এখনই বেঁধে ফেলেছে আমাকে।
সত্যি বলছি হে ভাইয়েরা! আমি আর পারছি, না সালাত! না তিলাওয়াত! আর কোন ইবাদাতে মন বসাতে পারি না, কুকুরের মত সবসময় শুধু হাঁপাতেই থাকি কিন্তু এই অস্থিরতা কিছুতেই দূর হয় না।
ভাই আমার! আপনাদের পায়ে ধরে বলি, কিছুতেই আপনারা সামান্য সময়ের জন্যেও আপনাদের রবের স্মরণ করা ভুলে যাবেন না, গুনাহের একটা ফোঁটাও জিহ্বায় ছোঁয়াবেন না, এর জন্যে যদি জীবন দেয়া লাগে তবুও! হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহ ভোলা এ জীবন যে বড়ই যাতনার! শয়তান ওৎ পেতে বসে আছে আপনারও মাথার উপর, আপনি যেই হন না কেন! আপনার ভিতরেও তো নফস আছে, তাই সামান্য সময়ের জন্যেও প্রশ্রয় দিলে ওই সময়ই শয়তান তার বাহিনী নিয়ে আপনাকে আল্লাহর মারিফাত থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইবে।
মনে রাখবেন হে ভাই! আমি অনেক ঘোরাঘুরি করে দেখেছি, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ আপন নেই! আল্লাহ ছাড়া আর কোথাও সুখ নেই, আল্লাহর স্মরণ ব্যতিত কোন প্রশান্তি নেই। ক্বলবের সৃষ্টিকর্তা শুধু তাঁর স্মরণের মধ্যেই যে প্রশান্তি রেখেছেন! তার অবাধ্যতায় নয়!
আল্লাহ তাআলা বলেন:
اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰہِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ
স্মরণ রেখ, কেবল আল্লাহর যিকিরেই অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।
—আর রা'দ - ২৮
আর কোন ভাই যদি আমার মত গুনাহের সাগরের অতল গহ্বরে হারিয়ে গিয়ে থাকেন, তার কাছে আমার ব্যথিত মনের দয়াদ্র নিবেদন: হে আমার ভাই! আমার জান! আমার বন্ধু! আর কতকাল তুমি এভাবে কাটাবে! গুনাহের নর্দমায় তুমি পঁচা-গন্ধ খাদ্য ও বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ ব্যতিত আর কিছু কি পেয়েছ? আমি তো পাইনি।
প্রিয় হে! আল্লাহর ক্রোধকে আর কত বাঁড়াবে? কতটুকু ক্রোধ সহ্য করতে পারবে তুমি?
ভাই আমার! তুমি কি বুঝতেছ না! আমার-তোমার গুনাহের কারণে আল্লাহর রহমতের হাওয়া বন্ধ হয়েছে, ফলে পশুপাখির লানতের আওয়াজ কি তুমি শুনতে পাচ্ছ!
ভাই আমার! তোমার-আমার গুনাহের জন্যেই আল্লাহ তাআলার নুসরাত আসতে দেরী হচ্ছে আর উম্মতে মুসলিমা দূর্দশাই দিন কাটাচ্ছে, ভাইরে! তোমার মা-বোনদের আহাজারী যা আরশ কাঁপিয়ে দিচ্ছে তা কী তোমার কানে পৌঁছে! সত্যি করে বলো! মজলুম ভাইবোনের চিৎকার তোমার কানে যাচ্ছে!
আর কত বিলম্ব করবে তুমি হে ভাই আমার! আর কত!
নফসকে যতই খুশি কর ভাই, রাস্তা ওটা জাহান্নামের , কোন সুখ নেই ওদিকে!
থামবে না তুমি! অনেক হয়েছে এবার তো থাম! তুমি থামলে আমিও থামবো, আর দুজনে একসাথে ফিরদাউসের মাঠে একসাথে খেলব। কী বলো! খেলবে না তুমি!
তাহলেচলো, আমরা এখনই গুনাহের পথে এই যাত্রা থামিয়ে দেই, নফসের বুকে পাঁ দিয়ে নিজের কলিজা দাঁতে পিষে বীরদর্পে উঠে দাঁড়ায় দয়াময়ের হিদায়াহ'র পথে!
আমি দাঁড়ালাম! তুমি দাঁড়িয়েছ তো বন্ধু!
আর শোন আরেকটা গোপন কথা, আমরা যা করেছি, তা মুছতে পারে শুধু একটা জিনিস আর তা হলো আশ-শাহাদাহ
চলো খুঁজি...............!!
Comment