হৃদয়ের ভূমিতেও প্রয়োজন দরদী একজন কৃষকের
প্রিয় যুবক ভাই!
আকাশ থেকে যখন বৃষ্টি নামে তখন প্রতিটি ভূখন্ডে তা একই রকম করে বর্ষিত হয়। বৃষ্টি কোন পার্থক্য করে না ভূখণ্ডে ভূখণ্ডে। বৃষ্টি কামনা করে প্রতিটি ভূখন্ড যেন তাকে গ্রহণ করে সমাদরে এবং সুসিক্ত হয় একইভাবে। সেটা পৃথিবীর মানচিত্রের কোনায় কোণায় হোক বা আনাচে-কানাচে । সমতল ভূমিতে হোক কিংবা টিলার উঁচুতে।
কিন্তু বৃষ্টি যা কামনা করে তা ঘটে না। প্রতিটি ভূখন্ড একইভাবে বৃষ্টিকে গ্রহণ করতে পারে না। কারণ প্রতিটি ভূখন্ডের হুবহু যোগ্যতা থাকে না। যে ভূখণ্ড একটু গভীর, যার রয়েছে কিছু না কিছু পানি ধারণ করার সামর্থ্য। সে সহজেই নিজের বুকে পানি ধারণ করে। পানি দ্বারা উপকৃত হয়। উর্বরতার গুণ অর্জন করে। তার উদর থেকে জন্ম নেয় উৎকৃষ্ট মানের প্রজন্ম। সুমিষ্ট ফল-সোনালী ফসল আর সবুজ তরুলতা। মুগ্ধ হয় মানবকূল আর ক্ষুধা মিটায় সৃষ্টিকূল।
আবার কিছু ভূখণ্ড সমতল বা উঁচু। বৃষ্টির পানি কিন্তু সেখানেও বর্ষিত হয়। তবে পানি সেখানে অবস্থান করতে পারে না। পানি সেখান থেকে অন্যত্র চলে যায়। বৃষ্টির পানি দ্বারা এ ভূমিগুলো ঐ একই রকম উপকৃত হতে পারে না এবং পারে না তেমন উর্বরতার গুণও অর্জন করতে। এ ভূমি থেকে যে কোন কিছু জন্ম নেয় না তা কিন্তু নয়। অবশ্যই নেয় তবে সেগুলো হলো আগাছা। আনারি লতাপাতা।
প্রিয় যুবক ভাই!
পৃথিবীর ভূমির মত আমাদের হৃদয়েও কিন্তু একটি ভূমি আছে। যে ভূমিটাকে আল্লাহ নিজ কুদরতে সাঁজিয়েছেন তাঁর আনুগত্যের বারিধারা জারি করার জন্য। যে ভূমিটাতে আল্লাহ নূর পয়দা করতে চাচ্ছেন তাঁর ইবাদতের মাত্রা বাড়ানোর জন্য। তাঁর রুবুবিয়্যাত ও ওয়াহনিয়্যাতের মূলমন্ত্র ইমানকে খাঁটি করানোর জন্য।
সবার হৃদয়ের ভূমির উর্বরতা কি সমান? রব যে চাচ্ছেন বান্দাকে ভালোবেসে এত বড় বড় নিয়ামত দান করতে? মর্যাদাপূর্ণ রত্নগুলো বান্দার ভিতর ফুঁকে দিতে? তুচ্ছ নাখান্দা সকল বান্দা কি পারবে এগুলোকে আগলে রাখতে? রব যে পরম যত্নের সাথে এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন? মমতার পরশ বুলিয়ে দিয়ে দায়িত্ববান হতে আহ্বান করেছেন?
যুবক ভাই সেটাই তো বলছি। গ্রহণ করার যোগ্যতা সবার এক না। ধারণ করার সামর্থ্য সকলের সমান না। এটাই সৃষ্টির অমোঘ বিধান। তাই সাবধান! চেষ্টা আর মিনতিই হলো সৃষ্টির সেরা আরাধন।
আকাশ থেকে করুণার বৃষ্টি তো সকলের উপরই বর্ষিত হয়। যার হৃদয়ের ভূমির গভীরতা যেমন তাতে করুণার বৃষ্টির পানি জমা হয় তেমন। কিন্তু যাদের হৃদয়ের ভূমি সমতল বা উঁচু তাদের অবস্থা কি হবে? তারা কি করুণার এ শিশিরে সুসিক্ত হতে পারবে না? তারা কি বিশেষ এ নেয়ামতের ভাগিদার হতে পারবে না? না না যুবক ভাই! বিষয়টা এমন নয়! শোন তুমি দুনিয়ার রীতির কথা। পৃথিবীর যে সমস্ত ভূমিগুলো সমতল কিংবা উঁচু সেগুলোতে পাড় বেঁধে দেয় দরদী কৃষক, পরম যন্তের সঙ্গে, পরম মমতার সঙ্গে।
সুতরাং আমাদের হৃদয়ের ভূমির জন্যও প্রয়োজন একজন দরদী কৃষকের। যিনি কিনা সচ্ছতার সাথে, মায়ার সাথে, পাড় বেঁধে দিবেন। পরিচর্যার সযত্নে দ্বীনের সতেজতা বাড়িয়ে দিবেন। কর্ষণ করে করে পাপের আগাছাগুলোকে দূর করে উর্বর উপযোগী করে তুলবেন। যেন যেকোন আমলের বীজ তাতে রোপণ করা যায়।
এমন যেন না হয়ে যায় হৃদয়ের ভূমিতে সালাত উৎপাদিত হয় কিন্তু জাকাত উৎপাদিত হয় না!যিকির আযকারের ফলন বেশি হয় কিতালের ফলন একটুও হয় না! তাহলে তো এ ভূমি উর্বর হলো না।
যুবক ভাই! একজন দরদী কৃষকের মেধা ও রুচি হতে হবে তাযকিয়ার মানশায়। ঝোঁক ও প্রবণতা হতে হবে তারবিয়াতের ইনশায়। পরিবেশ পরিস্থিতি লক্ষ্য রাখতে হবে যুগের অবস্থায়। তাআল্লুম ও তাফাক্কুর করতে হবে রবের ইচ্ছায়। কারণ কুরআনে বর্ণিত আয়াতে-ويزكيهم و يعليهم এর বার্তা এ গুণই বহন করে।
এ গুণ অর্জন করা ছাড়া কৃষক হওয়া যাবে তবে সেটা শস্য ক্ষেতের। হৃদয়ের কৃষক নয়। এ সিফাতের মূল্যায়ন ছাড়া জনদরদী আর সমাজসেবক হওয়া যাবে তবে সেটা পঁচাগান্ধা সমাজের। ইসলামী সমাজের নয়। তাহলে বুঝা গেলো-এ গুণ অর্জন ছাড়া নিজ সত্তা ও উম্মাহর প্রকৃত কোন কল্যাণে নিয়জিত হওয়া একেবারেই অসাধ্যকর।
প্রিয় যুবক ভাই!
আজকে এমন একজন দরদী মালির কথা শুনাবো যিনি সর্বমহলে সর্বহালতে সকল সম্প্রদায়ের নিকট দূত হিসেবে প্রেরিত। যিনি তাঁর হৃদয়ের ভূমিতে চাষাবাদ করেছেন সকল প্রকারের নেক আমল। এ ভূমিকে এতই উর্বর করেছিলেন তাঁর ফসল নষ্টকরার পোকা শয়তানও মুসলমান হতে বাধ্য হয়েছে। তাঁর মোবারক বাণী শোনার জন্য কঠিন খরতাপে চুপটি মেরে বসা ছিলো হাজারো যুবক। ঐশীগ্রন্থের তিলাওয়াত শুনতে ঘন্টার পর ঘন্টা আঁধার রাতে কাটিয়ে দিয়েছিলো হাজারো তরুণ।
সেই মোবারকময় বরকতপূর্ণ নামটি হলো পেয়ারে হাবিব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জীবনের প্রথম চল্লিশ বছরে তাঁর হৃদয়ের চাষাবাদ এতটাই নিখুঁত হয়েছিলো যার উপর ভিত্তি করে রব তাঁকে প্রমোশন দিতে সম্মত হয়েছেন। দান করেছেন তেইশ বছরের এক জলন্ত অগ্নিলাভা তাতে শুধু বিদ্যমান ছিলো মুক্তির এক উৎকৃষ্ট সভা। যে বিধানকে আবশ্যক বলে আখ্যায়িত করেছেন ফরযদাতা। যে জিহাদকে কল্যাণকর বলেছেন রব সে বিধানকেই ক্ষতিকর দিক বলেছি আমরা সব।
যে সভার মূল নায়কের নামের পাশে যুক্ত হয়েছে নাবীয়্যূল মালহামা। নাবীয়্যূর রাহমাহ। নাবীয়্যূত তাওবাহ। সে সভার মূল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে আমি হয়েছি ফিসকুম মিনাল ফুসুক। যে সভার সভাপতি জীবন চাষাবাদে ঘোষণা করেছেন শাহাদাহ তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আমরা হয়েছি হালাক। যে জাতির জনক কাঁধে তুলে দিতে চেয়েছেন আসলিহাহ তা আমরা না উঠিয়ে হয়েছি নাপাক।
প্রিয় যুবক ভাই!
এমন একজন দরদী কৃষক খোঁজে পাবে পৃথিবীর কোথাও? মরুভূমির ছোট্ট জাওলাতলার পাশে? কল্পনার আলো আঁধারির জটলার মাঝে? হাতেম তাঈ আর সাখীদেন পরিবারে? না যুবক ভাই! কক্ষনো না। তাহলে কেন এ দরদী কৃষকের আহবান তোমাদের কাছে এতই বিতৃষ্ণা লাগে? এতই বিষুদ মনে হয়? কর্ণকুহরে ব্যথা উঠায়?
তোমাদের কাছে আছে কি এর সঠিক উত্তর? যা দিয়ে আমি আর তুমি ক্ষণিকের জন্যে পার পাবো! অল্প কিছু দিনের জন্যে পাপের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হবো! আছে এমন কিছু উপাদান যা দিয়ে আমি আর তুমি পরকালে নিঃশেষ হয়ে যাবো! রবের সাক্ষাতে হাজির হবো না! বিচারের কাটগড়ায় দাঁড়াবো না। জানি তোমার কাছে কোন উত্তর নেই।
মৃত্যুর আজাল তাড়া করার আগেই হৃদয়ের ভূমির চাষাবাদ শুরু করা একান্ত কাম্য। হুফরতিম মিনান-নারে পতিত হওয়ার আগেই পাপ মোছন করে প্রভুর দিকে ফিরে আসা রাসূলের বক্তব্য। প্রভুর সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে উন্নত চাষাবাদ করাও অবশ্য কর্তব্য।
সেই চাষাবাদ সালাতের হোক বা জাকাতের। ইদাদের হোক বা জিহাদের। ইলমের হোক বা হেলমের। তাযকিয়ার হোক বা তারবিয়াতের।
তাওহীদের হোক বা আসলিহার। প্রয়োজন অনুপাতে চাষাবাদের মাত্রা বাড়াতে হবে। বাকির তালিকায় রাখা যাবে কোনটাই। তখন দেখবে মুমিনের কাতার উঠে গেছে তোমার নামটাই।
শস্যের চাষাবাদ সবাই করতে পারে। আমলের চাষাবাদ সবার ভাগ্যে জোটে না। ক্ষেতের কৃষক সবাই হতে পারে। হৃদয়ের কৃষক সবার নসিবে লিখা থাকে না। অথচ হাশরের পরীক্ষার মানই যাঁচাই করা হবে হৃদয়ের ফসল দিয়ে। পুলসিরাতে আটকানোই হবে ফলসের জাত দেখে। হাওযে কাওসারে পানি পান করানোই হবে শস্যের বীজ দেখে। ক্ষমা পাওয়া বা না পাওয়ার প্রশ্ন তখনই আসবে হৃদয়ের ভূমির উর্বরতা দেখে। অথচ এ ভূমির চাষাবাদ থেকে আমরা কতই না গাফেল!
الي الله المشتكي
প্রিয় যুবক ভাই!
পরিত্যক্ত অনুর্বর ভূমির যেমন কোন মূল্য নেই ঠিক তেমনি মানুষের পাপকৃষ্ট মোহারাংকিত হৃদয়ের ভূমিরও কোন স্বার্থকতা নেই। এ হলো বিরাট ভূমি তবে শুধু বিরান। এ হলো মরুভূমি তবে শুধু বালুকণার। যার মাধ্যমে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয় । ভালো কাজের চেয়ে নিকৃষ্ট কাজের আগ্রহই বেশি জাগ্রত হয়। উম্মাহর কল্যাণে শুভাকাঙ্ক্ষিত হওয়ার পরিবর্তে পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারীতে পরিণত হয়। রবের আনুগত্য করার বিপরীতে নফসের আনুগত্য প্রাধান্য পায়।
কোথা যেন [এ লেখাটা] পড়েছি। ঠিক মনে করতে পারছিনা। আফওয়ান! এজন্য কি তোমাদের শুনাবো না এটা কি করে হয়? অথচ তোমরা হলে উম্মাহর কলিজার এক অংশ। যার নিহিতার্থ ভালোবাসা তাকওয়াশূন্য ব্যক্তিরা বুঝতে পারে না।
[মাঝে মধ্যে বসন্তের আগমন হৃদয়ের উর্বর ভূমিতে কিছু কিছু উন্নত রুচির উঁকিঝুঁকি দেয়। হৃদয়কাননে ফোটে শুদ্ধতার[ জিহাদের] ফুল। অন্তরমননে জাগে শুভ্রতার[শাহাদাতের] শিহরন। এই বসন্তের ছোঁয়ায় অন্তরে জ্বলে উঠে আলোর[ ইমানের নূর] মশাল। সেই আলোতে দূরিভূত হয় জাহিলিয়াতের ফাসাদ। হৃদয়গহীনে প্রস্ফুটিত হয় নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন। আমিও হবো আমার হৃদয় ভূমির একজন দরদী কৃষক।]
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
*هُوَ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ فِى قُلُوبِ ٱلْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوٓاْ إِيمَٰنًا مَّعَ إِيمَٰنِهِمْ ۗ وَلِلَّهِ جُنُودُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا*
অর্থঃ আর তিনি ঐ সত্ত্বা যিনি মু’মিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন যেন তারা তাদের ঈমানের সাথে ঈমান বৃদ্ধি করে নেয়। আসমান ও জমিনের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
প্রিয় যুবক ভাই!
আয়াতটিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের কলবে সাকিনাহ নাযিল করেন। যেন তারা তাদের বিদ্যমান ইমানকে নবায়ন করে। ধারালো করে। শানিত করে। মজবুত করে। পাকাপোক্ত করে। শয়তানের ওয়াসওসা যেন তাদের ঘায়েল করতে না পারে। কলবের উর্বর ভূমিতে ফরয বিধান থেকে শুরু করে মোস্তাহাব আমলগুলো রুপন করার পর যেন পুষ্টির অভাবে সে আমলগুলো দুর্বল হয়ে না পড়ে। সতেজতা হারিয়ে না বসে। ফসলের বাড়ন্ত যৌবনে পোঁকাদের চোখ না পড়ে।
সুতরাং কলবের এ ভূমিকে উর্বর রাখার জন্য প্রভুর পক্ষ হতে আসমানী সাকিনার বিকল্প নেই। যে অক্সিজেন আর ভিটামিন দরদী কৃষকের মুখে শুকরিয়ার হাসি ফোঁটায়। তৃপ্তির ঢেঁকুর ছোঁড়ায়। আমলের লাজ্জাত বাড়িয়ে দেয়। জান্নাতের স্বপ্ন দেখায়। তা থেকে দূরে সরে থাকা প্রত্যেকজন দরদী কৃষকের অকৃতজ্ঞতার বৈ ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রিয় যুবক ভাই!
আকাশ থেকে যখন বৃষ্টি নামে তখন প্রতিটি ভূখন্ডে তা একই রকম করে বর্ষিত হয়। বৃষ্টি কোন পার্থক্য করে না ভূখণ্ডে ভূখণ্ডে। বৃষ্টি কামনা করে প্রতিটি ভূখন্ড যেন তাকে গ্রহণ করে সমাদরে এবং সুসিক্ত হয় একইভাবে। সেটা পৃথিবীর মানচিত্রের কোনায় কোণায় হোক বা আনাচে-কানাচে । সমতল ভূমিতে হোক কিংবা টিলার উঁচুতে।
কিন্তু বৃষ্টি যা কামনা করে তা ঘটে না। প্রতিটি ভূখন্ড একইভাবে বৃষ্টিকে গ্রহণ করতে পারে না। কারণ প্রতিটি ভূখন্ডের হুবহু যোগ্যতা থাকে না। যে ভূখণ্ড একটু গভীর, যার রয়েছে কিছু না কিছু পানি ধারণ করার সামর্থ্য। সে সহজেই নিজের বুকে পানি ধারণ করে। পানি দ্বারা উপকৃত হয়। উর্বরতার গুণ অর্জন করে। তার উদর থেকে জন্ম নেয় উৎকৃষ্ট মানের প্রজন্ম। সুমিষ্ট ফল-সোনালী ফসল আর সবুজ তরুলতা। মুগ্ধ হয় মানবকূল আর ক্ষুধা মিটায় সৃষ্টিকূল।
আবার কিছু ভূখণ্ড সমতল বা উঁচু। বৃষ্টির পানি কিন্তু সেখানেও বর্ষিত হয়। তবে পানি সেখানে অবস্থান করতে পারে না। পানি সেখান থেকে অন্যত্র চলে যায়। বৃষ্টির পানি দ্বারা এ ভূমিগুলো ঐ একই রকম উপকৃত হতে পারে না এবং পারে না তেমন উর্বরতার গুণও অর্জন করতে। এ ভূমি থেকে যে কোন কিছু জন্ম নেয় না তা কিন্তু নয়। অবশ্যই নেয় তবে সেগুলো হলো আগাছা। আনারি লতাপাতা।
প্রিয় যুবক ভাই!
পৃথিবীর ভূমির মত আমাদের হৃদয়েও কিন্তু একটি ভূমি আছে। যে ভূমিটাকে আল্লাহ নিজ কুদরতে সাঁজিয়েছেন তাঁর আনুগত্যের বারিধারা জারি করার জন্য। যে ভূমিটাতে আল্লাহ নূর পয়দা করতে চাচ্ছেন তাঁর ইবাদতের মাত্রা বাড়ানোর জন্য। তাঁর রুবুবিয়্যাত ও ওয়াহনিয়্যাতের মূলমন্ত্র ইমানকে খাঁটি করানোর জন্য।
সবার হৃদয়ের ভূমির উর্বরতা কি সমান? রব যে চাচ্ছেন বান্দাকে ভালোবেসে এত বড় বড় নিয়ামত দান করতে? মর্যাদাপূর্ণ রত্নগুলো বান্দার ভিতর ফুঁকে দিতে? তুচ্ছ নাখান্দা সকল বান্দা কি পারবে এগুলোকে আগলে রাখতে? রব যে পরম যত্নের সাথে এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন? মমতার পরশ বুলিয়ে দিয়ে দায়িত্ববান হতে আহ্বান করেছেন?
যুবক ভাই সেটাই তো বলছি। গ্রহণ করার যোগ্যতা সবার এক না। ধারণ করার সামর্থ্য সকলের সমান না। এটাই সৃষ্টির অমোঘ বিধান। তাই সাবধান! চেষ্টা আর মিনতিই হলো সৃষ্টির সেরা আরাধন।
আকাশ থেকে করুণার বৃষ্টি তো সকলের উপরই বর্ষিত হয়। যার হৃদয়ের ভূমির গভীরতা যেমন তাতে করুণার বৃষ্টির পানি জমা হয় তেমন। কিন্তু যাদের হৃদয়ের ভূমি সমতল বা উঁচু তাদের অবস্থা কি হবে? তারা কি করুণার এ শিশিরে সুসিক্ত হতে পারবে না? তারা কি বিশেষ এ নেয়ামতের ভাগিদার হতে পারবে না? না না যুবক ভাই! বিষয়টা এমন নয়! শোন তুমি দুনিয়ার রীতির কথা। পৃথিবীর যে সমস্ত ভূমিগুলো সমতল কিংবা উঁচু সেগুলোতে পাড় বেঁধে দেয় দরদী কৃষক, পরম যন্তের সঙ্গে, পরম মমতার সঙ্গে।
সুতরাং আমাদের হৃদয়ের ভূমির জন্যও প্রয়োজন একজন দরদী কৃষকের। যিনি কিনা সচ্ছতার সাথে, মায়ার সাথে, পাড় বেঁধে দিবেন। পরিচর্যার সযত্নে দ্বীনের সতেজতা বাড়িয়ে দিবেন। কর্ষণ করে করে পাপের আগাছাগুলোকে দূর করে উর্বর উপযোগী করে তুলবেন। যেন যেকোন আমলের বীজ তাতে রোপণ করা যায়।
এমন যেন না হয়ে যায় হৃদয়ের ভূমিতে সালাত উৎপাদিত হয় কিন্তু জাকাত উৎপাদিত হয় না!যিকির আযকারের ফলন বেশি হয় কিতালের ফলন একটুও হয় না! তাহলে তো এ ভূমি উর্বর হলো না।
যুবক ভাই! একজন দরদী কৃষকের মেধা ও রুচি হতে হবে তাযকিয়ার মানশায়। ঝোঁক ও প্রবণতা হতে হবে তারবিয়াতের ইনশায়। পরিবেশ পরিস্থিতি লক্ষ্য রাখতে হবে যুগের অবস্থায়। তাআল্লুম ও তাফাক্কুর করতে হবে রবের ইচ্ছায়। কারণ কুরআনে বর্ণিত আয়াতে-ويزكيهم و يعليهم এর বার্তা এ গুণই বহন করে।
এ গুণ অর্জন করা ছাড়া কৃষক হওয়া যাবে তবে সেটা শস্য ক্ষেতের। হৃদয়ের কৃষক নয়। এ সিফাতের মূল্যায়ন ছাড়া জনদরদী আর সমাজসেবক হওয়া যাবে তবে সেটা পঁচাগান্ধা সমাজের। ইসলামী সমাজের নয়। তাহলে বুঝা গেলো-এ গুণ অর্জন ছাড়া নিজ সত্তা ও উম্মাহর প্রকৃত কোন কল্যাণে নিয়জিত হওয়া একেবারেই অসাধ্যকর।
প্রিয় যুবক ভাই!
আজকে এমন একজন দরদী মালির কথা শুনাবো যিনি সর্বমহলে সর্বহালতে সকল সম্প্রদায়ের নিকট দূত হিসেবে প্রেরিত। যিনি তাঁর হৃদয়ের ভূমিতে চাষাবাদ করেছেন সকল প্রকারের নেক আমল। এ ভূমিকে এতই উর্বর করেছিলেন তাঁর ফসল নষ্টকরার পোকা শয়তানও মুসলমান হতে বাধ্য হয়েছে। তাঁর মোবারক বাণী শোনার জন্য কঠিন খরতাপে চুপটি মেরে বসা ছিলো হাজারো যুবক। ঐশীগ্রন্থের তিলাওয়াত শুনতে ঘন্টার পর ঘন্টা আঁধার রাতে কাটিয়ে দিয়েছিলো হাজারো তরুণ।
সেই মোবারকময় বরকতপূর্ণ নামটি হলো পেয়ারে হাবিব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জীবনের প্রথম চল্লিশ বছরে তাঁর হৃদয়ের চাষাবাদ এতটাই নিখুঁত হয়েছিলো যার উপর ভিত্তি করে রব তাঁকে প্রমোশন দিতে সম্মত হয়েছেন। দান করেছেন তেইশ বছরের এক জলন্ত অগ্নিলাভা তাতে শুধু বিদ্যমান ছিলো মুক্তির এক উৎকৃষ্ট সভা। যে বিধানকে আবশ্যক বলে আখ্যায়িত করেছেন ফরযদাতা। যে জিহাদকে কল্যাণকর বলেছেন রব সে বিধানকেই ক্ষতিকর দিক বলেছি আমরা সব।
যে সভার মূল নায়কের নামের পাশে যুক্ত হয়েছে নাবীয়্যূল মালহামা। নাবীয়্যূর রাহমাহ। নাবীয়্যূত তাওবাহ। সে সভার মূল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে আমি হয়েছি ফিসকুম মিনাল ফুসুক। যে সভার সভাপতি জীবন চাষাবাদে ঘোষণা করেছেন শাহাদাহ তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আমরা হয়েছি হালাক। যে জাতির জনক কাঁধে তুলে দিতে চেয়েছেন আসলিহাহ তা আমরা না উঠিয়ে হয়েছি নাপাক।
প্রিয় যুবক ভাই!
এমন একজন দরদী কৃষক খোঁজে পাবে পৃথিবীর কোথাও? মরুভূমির ছোট্ট জাওলাতলার পাশে? কল্পনার আলো আঁধারির জটলার মাঝে? হাতেম তাঈ আর সাখীদেন পরিবারে? না যুবক ভাই! কক্ষনো না। তাহলে কেন এ দরদী কৃষকের আহবান তোমাদের কাছে এতই বিতৃষ্ণা লাগে? এতই বিষুদ মনে হয়? কর্ণকুহরে ব্যথা উঠায়?
তোমাদের কাছে আছে কি এর সঠিক উত্তর? যা দিয়ে আমি আর তুমি ক্ষণিকের জন্যে পার পাবো! অল্প কিছু দিনের জন্যে পাপের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হবো! আছে এমন কিছু উপাদান যা দিয়ে আমি আর তুমি পরকালে নিঃশেষ হয়ে যাবো! রবের সাক্ষাতে হাজির হবো না! বিচারের কাটগড়ায় দাঁড়াবো না। জানি তোমার কাছে কোন উত্তর নেই।
মৃত্যুর আজাল তাড়া করার আগেই হৃদয়ের ভূমির চাষাবাদ শুরু করা একান্ত কাম্য। হুফরতিম মিনান-নারে পতিত হওয়ার আগেই পাপ মোছন করে প্রভুর দিকে ফিরে আসা রাসূলের বক্তব্য। প্রভুর সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে উন্নত চাষাবাদ করাও অবশ্য কর্তব্য।
সেই চাষাবাদ সালাতের হোক বা জাকাতের। ইদাদের হোক বা জিহাদের। ইলমের হোক বা হেলমের। তাযকিয়ার হোক বা তারবিয়াতের।
তাওহীদের হোক বা আসলিহার। প্রয়োজন অনুপাতে চাষাবাদের মাত্রা বাড়াতে হবে। বাকির তালিকায় রাখা যাবে কোনটাই। তখন দেখবে মুমিনের কাতার উঠে গেছে তোমার নামটাই।
শস্যের চাষাবাদ সবাই করতে পারে। আমলের চাষাবাদ সবার ভাগ্যে জোটে না। ক্ষেতের কৃষক সবাই হতে পারে। হৃদয়ের কৃষক সবার নসিবে লিখা থাকে না। অথচ হাশরের পরীক্ষার মানই যাঁচাই করা হবে হৃদয়ের ফসল দিয়ে। পুলসিরাতে আটকানোই হবে ফলসের জাত দেখে। হাওযে কাওসারে পানি পান করানোই হবে শস্যের বীজ দেখে। ক্ষমা পাওয়া বা না পাওয়ার প্রশ্ন তখনই আসবে হৃদয়ের ভূমির উর্বরতা দেখে। অথচ এ ভূমির চাষাবাদ থেকে আমরা কতই না গাফেল!
الي الله المشتكي
প্রিয় যুবক ভাই!
পরিত্যক্ত অনুর্বর ভূমির যেমন কোন মূল্য নেই ঠিক তেমনি মানুষের পাপকৃষ্ট মোহারাংকিত হৃদয়ের ভূমিরও কোন স্বার্থকতা নেই। এ হলো বিরাট ভূমি তবে শুধু বিরান। এ হলো মরুভূমি তবে শুধু বালুকণার। যার মাধ্যমে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয় । ভালো কাজের চেয়ে নিকৃষ্ট কাজের আগ্রহই বেশি জাগ্রত হয়। উম্মাহর কল্যাণে শুভাকাঙ্ক্ষিত হওয়ার পরিবর্তে পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারীতে পরিণত হয়। রবের আনুগত্য করার বিপরীতে নফসের আনুগত্য প্রাধান্য পায়।
কোথা যেন [এ লেখাটা] পড়েছি। ঠিক মনে করতে পারছিনা। আফওয়ান! এজন্য কি তোমাদের শুনাবো না এটা কি করে হয়? অথচ তোমরা হলে উম্মাহর কলিজার এক অংশ। যার নিহিতার্থ ভালোবাসা তাকওয়াশূন্য ব্যক্তিরা বুঝতে পারে না।
[মাঝে মধ্যে বসন্তের আগমন হৃদয়ের উর্বর ভূমিতে কিছু কিছু উন্নত রুচির উঁকিঝুঁকি দেয়। হৃদয়কাননে ফোটে শুদ্ধতার[ জিহাদের] ফুল। অন্তরমননে জাগে শুভ্রতার[শাহাদাতের] শিহরন। এই বসন্তের ছোঁয়ায় অন্তরে জ্বলে উঠে আলোর[ ইমানের নূর] মশাল। সেই আলোতে দূরিভূত হয় জাহিলিয়াতের ফাসাদ। হৃদয়গহীনে প্রস্ফুটিত হয় নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন। আমিও হবো আমার হৃদয় ভূমির একজন দরদী কৃষক।]
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
*هُوَ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ فِى قُلُوبِ ٱلْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوٓاْ إِيمَٰنًا مَّعَ إِيمَٰنِهِمْ ۗ وَلِلَّهِ جُنُودُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا*
অর্থঃ আর তিনি ঐ সত্ত্বা যিনি মু’মিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন যেন তারা তাদের ঈমানের সাথে ঈমান বৃদ্ধি করে নেয়। আসমান ও জমিনের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
প্রিয় যুবক ভাই!
আয়াতটিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের কলবে সাকিনাহ নাযিল করেন। যেন তারা তাদের বিদ্যমান ইমানকে নবায়ন করে। ধারালো করে। শানিত করে। মজবুত করে। পাকাপোক্ত করে। শয়তানের ওয়াসওসা যেন তাদের ঘায়েল করতে না পারে। কলবের উর্বর ভূমিতে ফরয বিধান থেকে শুরু করে মোস্তাহাব আমলগুলো রুপন করার পর যেন পুষ্টির অভাবে সে আমলগুলো দুর্বল হয়ে না পড়ে। সতেজতা হারিয়ে না বসে। ফসলের বাড়ন্ত যৌবনে পোঁকাদের চোখ না পড়ে।
সুতরাং কলবের এ ভূমিকে উর্বর রাখার জন্য প্রভুর পক্ষ হতে আসমানী সাকিনার বিকল্প নেই। যে অক্সিজেন আর ভিটামিন দরদী কৃষকের মুখে শুকরিয়ার হাসি ফোঁটায়। তৃপ্তির ঢেঁকুর ছোঁড়ায়। আমলের লাজ্জাত বাড়িয়ে দেয়। জান্নাতের স্বপ্ন দেখায়। তা থেকে দূরে সরে থাকা প্রত্যেকজন দরদী কৃষকের অকৃতজ্ঞতার বৈ ছাড়া আর কিছুই নয়।
Comment