নিজেকেই উপমা হিসেবে উপস্থাপন করুন
হে সম্মানিত ভাই!
আমাদের সকলের আশা আমার সন্তানটি ভালো হবে। আমার ছাত্রটি যোগ্য হবে। আমার শাগরেদ হবে সুফিদের মত। যা বলবো তাই শুনবে। যা করতে বলবো তাই করবে। আমার ভাই হবে বীরের মত। মেয়ে আমার হবে মা আয়েশার মত। বোনের চরিত্র হবে ফুলের মত। প্রতিবেশীর আচরণ হবে নরম তুলার মত। ঘাড়ে ধাক্কা দিবো, পড়ে যাবে, আবার উঠে এসে আমার নাকে মুখে চুমো খাবে।
নাতি আমার সালাত পড়বে। কুরআন তিলাওয়াত করবে। বড়দের সালাম দিবে। সুন্নাতের পাবন্দী করবে। আর আমি দেখে দেখে আনন্দ উপভোগ করবো। সুযোগ বুঝে উঁচুনিচু গলায় গর্ব করবো। সম্মানের বাতাসে হেলবো-দুলবো। লোকমুখে প্রশংসা শুনবো। বাহ! কতই না চমৎকার ধ্যান ধারণা! কতই না সুন্দর কল্পনা-জল্পনা! মনে হচ্ছে চিন্তা-চেতনায় রসের হিরিক পড়েছে। অন্তর বাগানে পাখিদের মেলা জমেছে। দূর-দূরান্ত থেকে নিয়ে আসা নানা অচিন জিনিসের আয়োজন।
আপনার এ রুচিসম্মত ফিকিরকে শ্রদ্ধা জানাতে হয় কিন্তু ভাই আমার! রবের এ দুনিয়ায় একটা নিয়মের মধ্যে যে চলতে হয়! নিজেকে যে ভাঙা-গড়ার মধ্যে রাখতে হয়! চিরস্থায়ী পরকালের জন্য যে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হয়! নিয়মের হেরফের হলেই যে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়। বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠে। স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার বেদনায় ককিয়ে উঠতে হয়। সে খবর কি আমাদের আছে?
তাদের কাছ থেকে এত কিছু পাওয়ার জন্য আমাকেই হতে হবে প্রথম উপমা। আমাকেই হতে হবে প্রথম সারির ত্যাগী। আমাকেই হতে হবে প্রথম সারির প্রতিযোগি। অধিনস্থরা উপদেশ শুনতে চায় কম উস্তাদকে দেখে দেখে আমল করতে চায় বেশি। অনেক সময় উপদেশ উপমহাদেশে উড়ে যায় কিন্তু বাবা-মা-উস্তাদ-নেতা নিজে যা আমল করছে তা তাদের অন্তর মহলে স্থান পেয়ে যায়। তখন কাজগুলো করতে কুদরতি শক্তি পায়। আমলগুলো জীবনের পাতায় সাঁজাতে সাহস পায়।
বর্তমান সময়ে বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়ালো। বাবা নেশায় মত্ত ছেলেকে শিখায় ধূমপান সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মা সারাদিন ভারতীয় সিরিয়াল নিয়ে ডুবন্ত মেয়েকে বলে মা তুমি হিজাব পড়ে স্কুলে যাও। উস্তাদ নিজের তাহাজ্জুদের খবর নেই ছাত্রদের শিখাচ্ছে সালাফরা তাহাজ্জুদ পড়ে কত বড় মনীষি হয়েছেন। নেতারা খায় হারামের ভূরিভোজ শাগরেদদের বুঝায় সততার ওয়াজ।
মসজিদের সাথে আমার সম্পর্ক দশ মাইল দূরের অন্যকে বলি আমি তার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলো একেবারে কাছের। ভদ্রতাকে ধুয়ে আমি রৌদ্রে শুকাতে দেই অন্যকে বলি আমি ভাই তোমার মধ্যে ভদ্রতার লেশমাত্র নেই। জাকাতের হারাম মাল খাই আমি নিয়মিত অন্যকে বলি আমি দিতে প্রতিনিয়ত। মিরাস বন্টনের ক্ষেত্রে ভাষ্য আমার ইনসাফগার বোনের অংশ দেয়ার ক্ষেত্রে করি আমি বিষোদগার।
সম্মানিত ভাই!
উপরস্থরা হলো পরিবারের, গোত্রের, জাতির
রোল মডেল। বাবা-মায়েরা হলো ছোট্ট সন্তানের চোখে প্রথম নায়ক। তারা যা করবে সন্তান তাই করতে চাইবে। আপনি আলেম ফ্যামিলির এক সন্তানকে জিজ্ঞেস করুন-তুমি বড় হয়ে কি হবে? উত্তর আসতে দেরি হবে না- আমি একজন আলেম হবো। দ্বীনের খেদমত করবো। আবার একজন পুলিশের সন্তানকে জিজ্ঞাসা করুন-তুমি কি করবে? তারও উত্তর আসতে দেরি হবে না আমি জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পুলিশ হবো।
এমনটা কেন হলো ভাই! তাকে তো কেউ শিখিয়ে দেয়নি। ইশারা ইঙ্গিতও করেনি। তাহলে বুঝা গেলো সন্তান নিজ বাবা-মা, পরিবারকে মডেল বানিয়ে নিয়েছে। আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। সম্মানিত ভাই এখন নিজেকেই প্রশ্ন করুন! নিজে আদর্শ ব্যক্তি কিনা? আদর্শের গুণগুলো নিজের মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছে কিনা? যা দেখে দেখে তারা আমার আপনার মনের আশাগুলোর রুপ দাঁড় করাবে। মনের আয়নার নির্মাণের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠাবে।
২০১২ সালের কথা। হাতে একটি আরবী ম্যাগাজিন নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলাম। ভিতরে প্রচন্ড ভীড়। দাঁড়ানোর মত তিল পরিমাণ জায়গা নেই।
শূন্যের মধ্যে ভেসে আছি। শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। তারমধ্যে আবার শরীরের পঁচা ঘামের গন্ধ। অসহ্যকর এক অবস্থা। কি আর করার সাতপাঁচ ভেবে হাতে থাকা পত্রিকাটি টেনে নিচ থেকে উপরে তুললাম। তুলতে না তুলতেই চোখ পড়ে গেলো পত্রিকার বিশাল এক হেড লাইনের উপর। তাও আবার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে। চাপাকষ্ট সব ভুলে পড়তে শুরু করলাম।
الحياةُ في مدينةِ الرسولِ صلي للٰه عليهِ وسلمَ
আরবী এই প্রবন্ধটি পড়ে আমি বিমুগ্ধ, বিমোহিত হয়ে গেলাম। কখন যে আপন স্টেশনে চলে আসলাম টেরই পেলাম না।
মদিনার পাশ দিয়ে যখন ইহুদীরা কাফেলা নিয়ে যাত্রা করতো তখন ইহুদি সন্তানরা দেখতো মুহাম্মাদ নামের [জাদুঘরটা] আছে কিনা! নাউজুবিল্লাহ ] কিছু পথ অতিক্রম করার পরই তাদের চোখ ঠিকই মুহাম্মাদকে [ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আবিষ্কার করে ফেলতো। তারা যে অবস্থায় আল্লাহর হাবিবকে দেখতো সাথে সাথে তা করতে শুরু করতো।
তবে তাচ্ছিল্যের জন্য নয়। এ সম্মানিত ব্যক্তির প্রতিটি কাজ তাদের অন্তরে তীরের বেগে আঘাত করতো। আনন্দ খোঁজে পেতো। যেন কত বৎসর যাবৎ তাদের অন্তরে প্রশান্তি নেই! কাফেলাগুলো যখন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যাত্রা বিরতি দিতো বাচ্চারা তখন গ্রুপ গ্রুপ করে মুহাম্মাদের দেখানো পদ্ধতির চেষ্টা করতো। যা তাদের নেতাদের মাথায় প্রচন্ডরকম ব্যথা তুলতে শুরু করে। বাধ্য হয়ে শিশু কিশোরদের নিয়ে সফর না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। তবে এ সিদ্ধান্ত বেশিদিন টিকেয়ে রাখা সম্ভব হলো না।
বাপ-দাদাদের উপাসনা আর মুহাম্মাদের ইবাদাতে কত পার্থক্য এ নিয়ে প্রশ্ন থাকতো প্রতিটি শিশু কিশোরের মেধামননে অথচ তারা জাতিগত ইহুদি।তাদের কাছ থেকে তারা শুধু শিরকই শিখেছে অথচ একদিনের দেখা তাদের মধ্যে বিপুল পরিবর্তন সাধন করে দিতো। তাদের ফিতরীগুণ নাড়া দিয়ে উঠতো। কপাল গুণে যারা ইমানের জল খেয়েছে তাদের নসীব কতটা না বদলে গিয়েছে।
হে সম্মানিত ভাই!
নবীরা তো মাসূম, নিষ্পাপ। তাদের কোন গোনাহ নেই। তাদের কোন ভুলত্রুটি নেই। অথচ দেখুন তাদের জীবন চরিত্র। খোঁজে পড়ে নিন রবের সামনে তাদের রজনীগুলো। ঐশী পাতা থেকে সংগ্রহ করুন আদর্শ মানবের গল্পগুলো। কালের সুপ্ত প্রতিভায় চোখ ফিরিয়ে দেখুন তাদের আমলের জুড়িগুলো। চরিত্রগুলো সত্যিই অন্যরকম। গল্পগুলো সত্যিই হৃদয় বিগলিত।
নবীদের গুণ ছিলো-যা তাঁরা তাদের উম্মাহকে আদেশ করতেন দশবার নিজে আমল করে তারপর বলতেন আবার উম্মাহর সাথে নিজেও লাগাতার আমল করতেই থাকতেন। তাদের এ কাজগুলো মানবের চক্ষুকে শীতল করতো না শুধু বরং দেহমনকে ঠান্ডা সতেজ করে দিতো। দিকহারা মানবেরা তাদের অন্তরচক্ষুর সংযোগ লাগিয়ে রাখতো নবীদের আখলাক চরিত্রের সাথে।
এদিকে আসহাবে সুফফা ছিলো উপমা তৈরি করার জলন্ত এক কারখানা। একদিন ছাত্র আবু হুরায়রা রা. প্রিয় নবীজি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করে বসলো-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো মাসূম তাহলে কেন আপনি এত ইবাদত করেন? আল্লাহ হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-ও আবু হুরায়রা! তুমি কি জান না আমি আল্লাহ তা'আলাকে অধিক পরিমাণে ভালোবাসি! তাঁর মহব্বতে এত ইবাদত করি, গুণগান জপি। সাধারণত যে যাকে ভালোবাসে তার জন্য সে কত কিছুই না করে। আমি না হয় রবের জন্য একটু কষ্ট করলাম। তাঁর জন্য একটু ইবাদাতই করলাম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে উপমা হিসেবে তুলে ধরেছেন এমন অসংখ্য অগণন ঘটনা হাদিসের গ্রন্থমালায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। সুযোগ বুঝে তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
সম্মানিত ভাই!
নিজেকেই উপমা হিসেবে উপস্থাপন করার কথা মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম। কোন অপরাধ করিনি তো! করলে ক্ষমা করো দিও ভাই আমার। তুমি তো জানোই! সাহাবীরা নিজেকে উপমা হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে কখনো কখনো কিছু পাথর খন্ডের চাপা ভোগ করতে হয়েছে। সুতরাং তোমাকেও ভোগ করতে হবে।
হঠাৎ আকাশচুম্বী বিপদ এসে বলেছে ভাই আমাকে একটু নিরাপত্তা দিন। কিন্তু সেতো জানে না এদিকে তাঁদের অবস্থা বেগতিক হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং তোমার কাছেও এ প্রস্তাব আসবে। তোমার অবস্থা নাজুক হালতে পৌঁছাবে। প্রস্তাব কিছুতেই নাকচ করে দিতে পারবে না। কারণ তুমি যে নিজেকে উপমা হিসেবে গড়ে তুলছো।
সম্মানিত ভাই আমার!
তুমি মানুষটা আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক মূল্যবান। তোমার অনুতপ্ত হৃদয়ের একফোঁটা চোখের জল মহামহিয়ান রবের দরবারে অনেক প্রিয়। তোমার প্রতিটি কদম আরশে আজীমের মালিকের নিকট খুবই দামী।
সুতরাং জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে, প্রতিটি ধাপে, তোমার উপমা যেন হয় ইখলাসের তরে। তাকওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে উপমা পেশ করতে পারলে তো আরো ভালো। শুধুই ভালো না। অনেক ভালো। যার স্বপ্ন উচ্ছবিলাসি জান্নাতিরা করতে থাকে। যার স্বপ্ন শাহাদাত প্রেয়সী মুসাফিররা বুনতে থাকে। তুমি তার কিঞ্চিৎ আভাস দুনিয়ায় থাকতে পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!
তুমি ভাবছো সালাত-সালাম আর জাকাত আদায় করে উপমাকারীদের কাতারে চলে আসবে?এগুলো তো মুনাফিক সরদার উবাই ইবনে কাবও আদায় করতো। ভাই আমার এ ভুল কিন্তু করো না। এর মাশুল দিয়ে শেষ করতে পারবে না। বরং তোমাকে হতে হবে নমুনায়ে সাহাবা। তোমাকে হতে নমুনায়ে গুরাবা। তোমাকে হতে হবে জিন্দায়ে শুহাদা।
হে সম্মানিত ভাই!
আমাদের সকলের আশা আমার সন্তানটি ভালো হবে। আমার ছাত্রটি যোগ্য হবে। আমার শাগরেদ হবে সুফিদের মত। যা বলবো তাই শুনবে। যা করতে বলবো তাই করবে। আমার ভাই হবে বীরের মত। মেয়ে আমার হবে মা আয়েশার মত। বোনের চরিত্র হবে ফুলের মত। প্রতিবেশীর আচরণ হবে নরম তুলার মত। ঘাড়ে ধাক্কা দিবো, পড়ে যাবে, আবার উঠে এসে আমার নাকে মুখে চুমো খাবে।
নাতি আমার সালাত পড়বে। কুরআন তিলাওয়াত করবে। বড়দের সালাম দিবে। সুন্নাতের পাবন্দী করবে। আর আমি দেখে দেখে আনন্দ উপভোগ করবো। সুযোগ বুঝে উঁচুনিচু গলায় গর্ব করবো। সম্মানের বাতাসে হেলবো-দুলবো। লোকমুখে প্রশংসা শুনবো। বাহ! কতই না চমৎকার ধ্যান ধারণা! কতই না সুন্দর কল্পনা-জল্পনা! মনে হচ্ছে চিন্তা-চেতনায় রসের হিরিক পড়েছে। অন্তর বাগানে পাখিদের মেলা জমেছে। দূর-দূরান্ত থেকে নিয়ে আসা নানা অচিন জিনিসের আয়োজন।
আপনার এ রুচিসম্মত ফিকিরকে শ্রদ্ধা জানাতে হয় কিন্তু ভাই আমার! রবের এ দুনিয়ায় একটা নিয়মের মধ্যে যে চলতে হয়! নিজেকে যে ভাঙা-গড়ার মধ্যে রাখতে হয়! চিরস্থায়ী পরকালের জন্য যে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হয়! নিয়মের হেরফের হলেই যে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়। বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠে। স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার বেদনায় ককিয়ে উঠতে হয়। সে খবর কি আমাদের আছে?
তাদের কাছ থেকে এত কিছু পাওয়ার জন্য আমাকেই হতে হবে প্রথম উপমা। আমাকেই হতে হবে প্রথম সারির ত্যাগী। আমাকেই হতে হবে প্রথম সারির প্রতিযোগি। অধিনস্থরা উপদেশ শুনতে চায় কম উস্তাদকে দেখে দেখে আমল করতে চায় বেশি। অনেক সময় উপদেশ উপমহাদেশে উড়ে যায় কিন্তু বাবা-মা-উস্তাদ-নেতা নিজে যা আমল করছে তা তাদের অন্তর মহলে স্থান পেয়ে যায়। তখন কাজগুলো করতে কুদরতি শক্তি পায়। আমলগুলো জীবনের পাতায় সাঁজাতে সাহস পায়।
বর্তমান সময়ে বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়ালো। বাবা নেশায় মত্ত ছেলেকে শিখায় ধূমপান সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মা সারাদিন ভারতীয় সিরিয়াল নিয়ে ডুবন্ত মেয়েকে বলে মা তুমি হিজাব পড়ে স্কুলে যাও। উস্তাদ নিজের তাহাজ্জুদের খবর নেই ছাত্রদের শিখাচ্ছে সালাফরা তাহাজ্জুদ পড়ে কত বড় মনীষি হয়েছেন। নেতারা খায় হারামের ভূরিভোজ শাগরেদদের বুঝায় সততার ওয়াজ।
মসজিদের সাথে আমার সম্পর্ক দশ মাইল দূরের অন্যকে বলি আমি তার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলো একেবারে কাছের। ভদ্রতাকে ধুয়ে আমি রৌদ্রে শুকাতে দেই অন্যকে বলি আমি ভাই তোমার মধ্যে ভদ্রতার লেশমাত্র নেই। জাকাতের হারাম মাল খাই আমি নিয়মিত অন্যকে বলি আমি দিতে প্রতিনিয়ত। মিরাস বন্টনের ক্ষেত্রে ভাষ্য আমার ইনসাফগার বোনের অংশ দেয়ার ক্ষেত্রে করি আমি বিষোদগার।
সম্মানিত ভাই!
উপরস্থরা হলো পরিবারের, গোত্রের, জাতির
রোল মডেল। বাবা-মায়েরা হলো ছোট্ট সন্তানের চোখে প্রথম নায়ক। তারা যা করবে সন্তান তাই করতে চাইবে। আপনি আলেম ফ্যামিলির এক সন্তানকে জিজ্ঞেস করুন-তুমি বড় হয়ে কি হবে? উত্তর আসতে দেরি হবে না- আমি একজন আলেম হবো। দ্বীনের খেদমত করবো। আবার একজন পুলিশের সন্তানকে জিজ্ঞাসা করুন-তুমি কি করবে? তারও উত্তর আসতে দেরি হবে না আমি জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পুলিশ হবো।
এমনটা কেন হলো ভাই! তাকে তো কেউ শিখিয়ে দেয়নি। ইশারা ইঙ্গিতও করেনি। তাহলে বুঝা গেলো সন্তান নিজ বাবা-মা, পরিবারকে মডেল বানিয়ে নিয়েছে। আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। সম্মানিত ভাই এখন নিজেকেই প্রশ্ন করুন! নিজে আদর্শ ব্যক্তি কিনা? আদর্শের গুণগুলো নিজের মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছে কিনা? যা দেখে দেখে তারা আমার আপনার মনের আশাগুলোর রুপ দাঁড় করাবে। মনের আয়নার নির্মাণের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠাবে।
২০১২ সালের কথা। হাতে একটি আরবী ম্যাগাজিন নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলাম। ভিতরে প্রচন্ড ভীড়। দাঁড়ানোর মত তিল পরিমাণ জায়গা নেই।
শূন্যের মধ্যে ভেসে আছি। শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। তারমধ্যে আবার শরীরের পঁচা ঘামের গন্ধ। অসহ্যকর এক অবস্থা। কি আর করার সাতপাঁচ ভেবে হাতে থাকা পত্রিকাটি টেনে নিচ থেকে উপরে তুললাম। তুলতে না তুলতেই চোখ পড়ে গেলো পত্রিকার বিশাল এক হেড লাইনের উপর। তাও আবার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে। চাপাকষ্ট সব ভুলে পড়তে শুরু করলাম।
الحياةُ في مدينةِ الرسولِ صلي للٰه عليهِ وسلمَ
আরবী এই প্রবন্ধটি পড়ে আমি বিমুগ্ধ, বিমোহিত হয়ে গেলাম। কখন যে আপন স্টেশনে চলে আসলাম টেরই পেলাম না।
মদিনার পাশ দিয়ে যখন ইহুদীরা কাফেলা নিয়ে যাত্রা করতো তখন ইহুদি সন্তানরা দেখতো মুহাম্মাদ নামের [জাদুঘরটা] আছে কিনা! নাউজুবিল্লাহ ] কিছু পথ অতিক্রম করার পরই তাদের চোখ ঠিকই মুহাম্মাদকে [ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আবিষ্কার করে ফেলতো। তারা যে অবস্থায় আল্লাহর হাবিবকে দেখতো সাথে সাথে তা করতে শুরু করতো।
তবে তাচ্ছিল্যের জন্য নয়। এ সম্মানিত ব্যক্তির প্রতিটি কাজ তাদের অন্তরে তীরের বেগে আঘাত করতো। আনন্দ খোঁজে পেতো। যেন কত বৎসর যাবৎ তাদের অন্তরে প্রশান্তি নেই! কাফেলাগুলো যখন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যাত্রা বিরতি দিতো বাচ্চারা তখন গ্রুপ গ্রুপ করে মুহাম্মাদের দেখানো পদ্ধতির চেষ্টা করতো। যা তাদের নেতাদের মাথায় প্রচন্ডরকম ব্যথা তুলতে শুরু করে। বাধ্য হয়ে শিশু কিশোরদের নিয়ে সফর না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। তবে এ সিদ্ধান্ত বেশিদিন টিকেয়ে রাখা সম্ভব হলো না।
বাপ-দাদাদের উপাসনা আর মুহাম্মাদের ইবাদাতে কত পার্থক্য এ নিয়ে প্রশ্ন থাকতো প্রতিটি শিশু কিশোরের মেধামননে অথচ তারা জাতিগত ইহুদি।তাদের কাছ থেকে তারা শুধু শিরকই শিখেছে অথচ একদিনের দেখা তাদের মধ্যে বিপুল পরিবর্তন সাধন করে দিতো। তাদের ফিতরীগুণ নাড়া দিয়ে উঠতো। কপাল গুণে যারা ইমানের জল খেয়েছে তাদের নসীব কতটা না বদলে গিয়েছে।
হে সম্মানিত ভাই!
নবীরা তো মাসূম, নিষ্পাপ। তাদের কোন গোনাহ নেই। তাদের কোন ভুলত্রুটি নেই। অথচ দেখুন তাদের জীবন চরিত্র। খোঁজে পড়ে নিন রবের সামনে তাদের রজনীগুলো। ঐশী পাতা থেকে সংগ্রহ করুন আদর্শ মানবের গল্পগুলো। কালের সুপ্ত প্রতিভায় চোখ ফিরিয়ে দেখুন তাদের আমলের জুড়িগুলো। চরিত্রগুলো সত্যিই অন্যরকম। গল্পগুলো সত্যিই হৃদয় বিগলিত।
নবীদের গুণ ছিলো-যা তাঁরা তাদের উম্মাহকে আদেশ করতেন দশবার নিজে আমল করে তারপর বলতেন আবার উম্মাহর সাথে নিজেও লাগাতার আমল করতেই থাকতেন। তাদের এ কাজগুলো মানবের চক্ষুকে শীতল করতো না শুধু বরং দেহমনকে ঠান্ডা সতেজ করে দিতো। দিকহারা মানবেরা তাদের অন্তরচক্ষুর সংযোগ লাগিয়ে রাখতো নবীদের আখলাক চরিত্রের সাথে।
এদিকে আসহাবে সুফফা ছিলো উপমা তৈরি করার জলন্ত এক কারখানা। একদিন ছাত্র আবু হুরায়রা রা. প্রিয় নবীজি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করে বসলো-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো মাসূম তাহলে কেন আপনি এত ইবাদত করেন? আল্লাহ হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-ও আবু হুরায়রা! তুমি কি জান না আমি আল্লাহ তা'আলাকে অধিক পরিমাণে ভালোবাসি! তাঁর মহব্বতে এত ইবাদত করি, গুণগান জপি। সাধারণত যে যাকে ভালোবাসে তার জন্য সে কত কিছুই না করে। আমি না হয় রবের জন্য একটু কষ্ট করলাম। তাঁর জন্য একটু ইবাদাতই করলাম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে উপমা হিসেবে তুলে ধরেছেন এমন অসংখ্য অগণন ঘটনা হাদিসের গ্রন্থমালায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। সুযোগ বুঝে তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
সম্মানিত ভাই!
নিজেকেই উপমা হিসেবে উপস্থাপন করার কথা মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম। কোন অপরাধ করিনি তো! করলে ক্ষমা করো দিও ভাই আমার। তুমি তো জানোই! সাহাবীরা নিজেকে উপমা হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে কখনো কখনো কিছু পাথর খন্ডের চাপা ভোগ করতে হয়েছে। সুতরাং তোমাকেও ভোগ করতে হবে।
হঠাৎ আকাশচুম্বী বিপদ এসে বলেছে ভাই আমাকে একটু নিরাপত্তা দিন। কিন্তু সেতো জানে না এদিকে তাঁদের অবস্থা বেগতিক হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং তোমার কাছেও এ প্রস্তাব আসবে। তোমার অবস্থা নাজুক হালতে পৌঁছাবে। প্রস্তাব কিছুতেই নাকচ করে দিতে পারবে না। কারণ তুমি যে নিজেকে উপমা হিসেবে গড়ে তুলছো।
সম্মানিত ভাই আমার!
তুমি মানুষটা আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক মূল্যবান। তোমার অনুতপ্ত হৃদয়ের একফোঁটা চোখের জল মহামহিয়ান রবের দরবারে অনেক প্রিয়। তোমার প্রতিটি কদম আরশে আজীমের মালিকের নিকট খুবই দামী।
সুতরাং জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে, প্রতিটি ধাপে, তোমার উপমা যেন হয় ইখলাসের তরে। তাকওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে উপমা পেশ করতে পারলে তো আরো ভালো। শুধুই ভালো না। অনেক ভালো। যার স্বপ্ন উচ্ছবিলাসি জান্নাতিরা করতে থাকে। যার স্বপ্ন শাহাদাত প্রেয়সী মুসাফিররা বুনতে থাকে। তুমি তার কিঞ্চিৎ আভাস দুনিয়ায় থাকতে পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!
তুমি ভাবছো সালাত-সালাম আর জাকাত আদায় করে উপমাকারীদের কাতারে চলে আসবে?এগুলো তো মুনাফিক সরদার উবাই ইবনে কাবও আদায় করতো। ভাই আমার এ ভুল কিন্তু করো না। এর মাশুল দিয়ে শেষ করতে পারবে না। বরং তোমাকে হতে হবে নমুনায়ে সাহাবা। তোমাকে হতে নমুনায়ে গুরাবা। তোমাকে হতে হবে জিন্দায়ে শুহাদা।
Comment