হে বোন! যে গুণগুলো আপনাকে অর্জন করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মহান রব্বুল আলামিন প্রথমে আদম আ. কে সৃষ্টি করেছেন। এরপর হাওয়া আ.কে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের আদি পিতা আদম আ. ও আদি মাতা হাওয়া আ. এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টির সূচনা করেন। আল্লাহ তাঁদের দুজনকে জান্নাতে রাখেন এবং একটা সময় তাঁদের কৃতকর্মের কারণ তাঁদের দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেন। দুনিয়াতে এসে তাঁরা বসবাস করতে থাকেন এবং তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহ দুনিয়াতে অসংখ্য মানুষ সৃষ্টির ধারা চালু করেন। সে ধারাবাহিকতায় আজ আমরা দুনিয়াতে এসে বসবাস করছি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন-তা আল্লাহ কুরআনে বলে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের খলিফা বা আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। আমরা দুনিয়াতে নেক আমল করে অফুরন্ত জান্নাতের ফসল জমা করবো। দুনিয়াতে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করবো।
কিন্তু আমাদের জান্নাতের পথে ও নেক আমল করতে সর্বদা শয়তান আমাদের ওয়াসওয়াসা দিবে। শয়তান ও নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে আল্লাহর দিকে আমাদের ধাবিত হতে হবে। তাহলে-ই আমরা কামিয়াব হতে পারবো। ইনশাআল্লাহ
আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। কোন পুরুষ বা নারী একাকী তাঁর জীবন অতিবাহিত করতে পারে না। উভয়েরই উত্তম জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন হয়। আর বিয়ের মাধ্যমে বৈধভাবে পুরুষ ও নারী একে অপরের জীবনসঙ্গী হয।
আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বিবাহ করেছেন এবং বিবাহ করতে আদেশ দিয়েছেন।
বিবাহ করা নবী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নাত
وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ - رضي الله عنه - أَنَّ النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - حَمِدَ اللَّهَ، وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَقَالَ:
«لَكِنِّي أَنَا أُصَلِّي وَأَنَامُ، وَأَصُومُ وَأُفْطِرُ، وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ (1)
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা আল্লাহর জন্য সন্তুষ্টি বর্ণনা ও প্রশংসা করলেন, আর বললেন- আমি তো সলাত আদায় করি, ঘুমাই, সওম পালন করি, সওম (নফল) রাখি কোন সময়ে ত্যাগও করি, মহিলাদের বিবাহ করি (এসবই আমার আদর্শভুক্ত)। ফলে যে ব্যক্তি আমার তরীকাহ (জীবনযাপন পদ্ধতি) হতে বিমুখ হবে সে আমার উম্মাতের মধ্যে নয়। [১০৬১]
[১০৬১] বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ১৪০১, নাসায়ী ৩২১৩, আহমাদ ১৩১২২, ১৩৩১৬। বুখারী এবং মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে- আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ‘ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ‘ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের পরের সকল গুনাহ্ ক্ষমা ক’রে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সলাত আদায় করতে থাকব। অপরজন বলল, আমি সব সময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহ্*র কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি………….. অতঃপর উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু বিয়ে করতে আদেশ করেই ক্ষ্রান্ত হননি। বরং কেমন মেয়েকে বিবাহ করতে হবে-তাও বলে দিয়েছেন।
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - يَأْمُرُ بِالْبَاءَةِ، وَيَنْهَى عَنِ التَّبَتُّلِ نَهْيًا شَدِيدًا، وَيَقُولُ: «تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ، إِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأَنْبِيَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَصَحَّحَهُ ابْنُ حِبَّانَ (1).
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বিবাহের দায়িত্ব নিতে আদেশ করতেন আর অবিবাহিত থাকাকে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। তিনি আরো বলতেন, তোমরা এমন সব মহিলাদেরকে বিবাহ কর যারা প্রেম প্রিয়া ও বেশী সন্তান প্রসবিনী হয়। কেননা তোমাদেরকে নিয়ে আমি কিয়ামাতের দিনে আমার উম্মাতের আধিক্যের গর্ব প্রকাশ করব। -ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন। [১০৬২]
[১০৬২] ইবনু হিব্বান ১২২৮। আহমাদ ১২২০২, ১৩১৫৭।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رضي الله عنه - عَنِ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا، وَلِحَسَبِهَا، وَلِجَمَالِهَا، وَلِدِينِهَا (1)، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ مَعَ بَقِيَّةِ السَّبْعَةِ (2).
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [১০৬৪]
[১০৬৪] বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাউদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ২৮৫৮, আহমাদ ৯২৩৭, দারেমী ২১৭০।
হে বোন আমার! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়েদের চারটি গুন(গুণ) দেখে বিয়ে করতে বলেছেন।
তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে রাসূল সাল্লাসাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আর দ্বীনদারীর পাশাপাশি অন্য গুণ যদি থাকে তবে তো সোনায় সোহাগা।
হে বোন আমার! আপনাকে আমি যা বুঝাতে চাচ্ছি-
দুনিয়াতে কত যুবক-ই আছে। আপনি তো নিশ্চয়ই চাইবেন যে,একজন নেককার যুবক আপনার জীবনসঙ্গী হোক। তাইনা!
আপনি) উত্তর দিবেন,হ্যাঁ।
তাহলে বোন! নেককার যুবক তো নেককার মেয়ে খুঁজবে। এটাই স্বাভাবিক। এবং রাসূলের হাদিসে বর্ণিত চারটি গুণ সে দেখবে এবং দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দিবে। আপনার কোন গুণ নেই। কিন্তু দ্বীনদারী আছে-এই গুণই যথেষ্ট।
এজন্য বোন আপনাকে দ্বীনদারীর গুণটি অর্জন করতে হবে। আপনাকে নেককার হতে হবে। পরহেযগার হতে হবে। ইসলামের মহান নারীদের মত্ আপনাকেও হতে হবে। আপনাকে আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে-হে আল্লাহ! আমার জন্য একজন নেককার যুবকের ব্যবস্থা করে দাও।
তাহলে আশা করা যায়-আল্লাহ আপনার জন্য নেককার যুবকের ব্যবস্থা করে দিবেন। আর নেককার যুবকের চেয়ে উত্তম জীবনসঙ্গী আর কে হতে পারে!
আরো ভালোভাবে বুঝুন! নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে গুণগুলোর কথা বলেছেন। আপনি কি সে গুণগুলো অর্জন করবেন না। অবশ্যই আপনাকে অর্জন করতে হবে। এ গুণের অধিকারী এক মহান নারী আপনাকে হতে হবে।
আজ আপনাকে এ কথাটি বুঝাতে চাচ্ছি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। দুআ করি-আল্লাহ আপনাকে ইসলামের মহান নারীদের কাতারে শামিল করুন। আমিন। ইয়া রব্বাল আলামিন।
Comment