বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন?
২য় পর্ব
বোন তুমি কি জানো? ফুলের গুণ অত্যন্ত উদার ও অভিজাত হয়ে থাকে। তার এ উদারতা ও অভিজাতের গুণেই সে এতটা মহৎ ও কোমল। সে নিজের প্রতি নেহাত সংবেদনশীল।এত সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও সে আকাশের রবের সমীপে তার নিজেকে বিলাতে কিঞ্চিৎ বিলম্ব করে না। সে নিজে নিজের প্রতি কখনোই অতি উৎসাহী হয়ে ওঠে না। ফলে রোদের উজ্জল দিপ্তী বিনে সে স্বীয় পাপড়ি ছড়ায় না। মেলে ধরবে তো দূরের কথা।
এখানেই তার প্রবল ব্যক্তীত্ববোধের পরিচয় মিলে।এটাই তার স্বতন্ত্র স্বকীয়তাবোধ। বোন তুমিও তো তাঁর মত এমন আভিজাত্য। তুমিও তো তার মত এমন প্রবল ব্যাক্তিত্বশীলা। আচ্ছা বোন! তুমি কি জানো? ফুলের আরেকটি অন্যতম গুণ হলো লজ্জা ও সংকোচ বোধ। সে এ লাজুকতার বশবর্তী হয়ে স্পর্শের অন্তরালে বেড়ে উঠে। লুকিয়ে লুকিয়ে তার পাঁপড়ি প্রস্ফুটিত করে। সবার সঙ্গোপনে নিজেকে তীলে তীলে গড়ে তুলে। অতপর বসন্ত আসা পর্যন্ত নিজেকে অতি সংযমশীলতার সাথে আড়াল করে রাখে।
একটা সময় তুমি দেখতে পাবে [০]
এ ফুলটিই হাসোজ্জ্যল ও স্পর্শকাতর আভা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে। সৌন্দর্যের গুণে কোন কমতি হয় না। প্রস্ফুটিত হওয়ার গুণে কোন আচড় পরে না। কিন্তু লজ্জা তার মধ্যে টুইটুম্বর থাকে। হাত দেয়ার সাথে সাথে কেমন যেন কাচুমাচু করে। একটু নতজানু হয়ে গোলাকৃতির হয়ে যায়। তবুও নিজের সতীত্ব বিলাতে চায় না।
বোন তোমার এ আঁচল ফুলের মতই মহৎ। তুমি এত গুণবতী! এত লজ্জাবতী! তোমার গুণের কথা বললে কম হয়ে যায়। আর লিখলে তুমি ছোট হয়ে যাও। তাই কি আর করার! ফুলের সাথেই তোমার তুলনা করেছি। ফুলের লজ্জা আর তোমার অস্তিত্ব জুড়ে লজ্জার হুবহু মিল পেয়েছি। ফুলের অভিজাত আর তোমার অস্তিত্বের আভিজাত্যের মধ্যে সমান্তরাল রেখা পেয়েছি। তা দেখে যে কেউ হতবিহ্বল না হয়ে পারবে না।
সূরা কাসাসের ঘটনাটি আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। আমার কাছে কুরআনে বর্ণিত মনোমুগ্ধকর ঘটনার মধ্যে এ হলো অন্যতম একটি ঘটনা। তোমার সামনে এ ঘটনাটি উপস্থাপন করলে তোমার আসল সৌন্দর্য আরো ফুটে উঠবে। অস্তিত্বের আঁচল আরো ফকফকা ও দবদবা দেখাবে।
মূসা আলাইহিস সালাম যখন মাদইয়ানে পালিয়ে এসে একটা গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন খানিক বাদে তিনি দেখতে পেলেন, অদূরে একটা কূপ থেকে কতিপয় লোক পানি উঠাচ্ছে আর তাদের দরকারি কাজ সেরে নিচ্ছে। আবার কিছু লোক আসা যাওয়ার মধ্যে রয়েছে।
আরো একটি জিনিস তিনি লক্ষ্য করলেন- কূপ থেকে একটু দূরে দুটো মেয়ে তাদের বকরীগুলোকে নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ পর্দাবৃত মনে হচ্ছে কিন্তু কূপের দিকে এগুচ্ছে না। মূসা আলাইহিস সালাস একটু এগিয়ে গিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলেন-কেনো তাঁরা তাঁদের বকরীকে পানি পান করাতে কূপের দিকে যাচ্ছে না। তখন তাঁরা যা জবাব দিয়েছিলো তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা পবিত্র কুরআনে তুলে ধরলেন।
মেয়ে দুটো বলেছিলো-[১]
আমরা আমাদের বকরীগুলোকে পানি পান করাতে পারি না যতোক্ষণ না কূপের পাশে থাকা রাখালেরা তাদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে যায়।
বোন আমার!
আধুনিক জামানা যেখানে নারীদেরকে পুরুষদের প্রতিযোগি বানাতে ব্যস্ত। যেখানে নারীদের শেখানো হচ্ছে পুরুষের সমান হওয়াটাই উন্নতি। পুরুষদের ট্রাই পড়া আর চেয়ার দখল করাটাই যখন প্রধান কর্ম। সমাজ সেবার নামে অর্ধলঙ্গ হয়ে পুরুষ এসিস্ট্যান্ট নিয়ে হাঁটা যুক্তিযুক্ত। সেখানে কুরআন এমন দুটো মেয়েকে মঞ্চে উপস্থাপন করেছে যারা কূপের দিকে পা বাড়াচ্ছে না। বরং নিজেদেরকে সর্বোচ্চ লজ্জার চাদরে আবৃত করে রেখেছে। তার কারণ এই যে, সেখানে পুরুষদের আনাগোনা ছিলো।
কেনো পুরুষদের দেখে নারী-দ্বয় সেদিন কূপের নিকটবর্তী হওয়া থেকে বিরত ছিলো? কারণ ওই পুরুষেরা তাদের বাবা নয়, ভাই নয়, স্বামী নয়, নয় মাহরাম। এমতাবস্থায় একদল পুরুষের মাঝে দুটো নারীর উপস্থিতি ঘটলে সেখানে যে ফিতনা তৈরি হওয়ার আশংকা ছিলো, সেটাকে ভয় করেছিলো তারা। নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও স্বাধীনতায় ফিতনা যে আজ থেকে তৈরি হচ্ছে না, এটা মানবজনমের সূচনালগ্ন থেকেই সমাজে বিদ্যমান। ওই নারী-দ্বয় এই ফিতনাকেই ভয় করেছিলো৷
তাঁদের মধ্যে তাকওয়ার পূর্ণ বিকাশ ছিলো বলেই সেদিন তারা তাঁদের বকরীগুলোকে নিয়ে কূপে থাকা পুরুষদের সাথে পানি পান করাতে যায়নি বরং প্রতিযোগিতা করার চাইতে দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাটাকে শ্রেয় মনে করেছে। ঠেলাঠেলি করে কাজ হাসিল করার চাইতে সময় অপচয় করাকে উপকার মনে করেছে।
মেয়ে দুটোর গল্প সেখানেই সমাপ্তি হয়নি। গল্পের পরের অংশে দেখা যায়- বকরীদের পানি পান করানো নিয়ে মেয়ে দুটোর অসহায়ত্ব দেখে মূসা আলাইহিস সালাম নিজ উদ্যোগে তাঁদের বকরীগুলোকে কূপ থেকে পানি পান করিয়ে দেন এবং তাদের নির্ধারিত সময়ের আগেই তাঁদের কাছে ফেরত দেন। এতে তারা খুবই অবাক হন। মেয়েদুটো ঘরে ফিরে যায় এবং একটু পরে তাঁদের একজন পুনরায় মূসা আলাইহিস সালামের কাছে ফেরত আসে। মেয়ে দুটোর একজনের ফিরে আসার বর্ণনাটাও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা কুরআনে তুলে ধরেছেন।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-[২]
অতঃপর নারীদ্বয়ের একজন সলজ্জ-পদে তাঁর [মুসা আলাইহিস সালামের ]কাছে এসে বললো- আমার আব্বা আপনাকে ডাকছেন। আপনি আমাদের বকরীগুলোকে পানি খাইয়েছেন, তাই আব্বা আপনাকে এর বিনিময় দিতে চান।
বোন আমার! প্রশ্ন আর উত্তরটাই এখানে-
একটা মেয়ে একজন পুরুষের সামনে যে সলজ্জ পদভারে এগিয়ে এসেছিলো, সেই কথা কুরআন আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। মহীয়ান সব সভ্যতাকে পৃথিবী ভুলে গেলেও, অনেক তেজস্বী বীরের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস কালের গর্ভ থেকে বিলীন হলেও, অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ইতিহাসের পাতায় ঠাই পেলেও একটা মেয়ের খুব সামান্য লজ্জার কথা, লজ্জা-ভরে এগিয়ে আসার কথা কুরআন যুগ যুগ সময়ের জন্য পৃথিবীবাসীকে জানিয়ে দিয়েছে।
প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও। কেউ না কেউ এ মেয়েটার কথা পড়ছে, জানছে কেউ আবার আমলে নিচ্ছে। একটুখানি লজ্জাকে, একটু সম্ভ্রমকে কুরআন কী অপার মর্যাদায় অবিস্মরণীয় করে রেখে দিলো। ভাবুন তো ! মন খোলে দিলটা দিয়ে একটু ভাবুন! মর্যাদার কতটা উঁচু সিঁড়িতে আল্লাহ তোমাদের আসিন করেছেন।
বোন! তোমরা যারা লজ্জাকে ইমানের ভূষন মনে করছো। লজ্জাকে নিজের সতীত্ব রক্ষার রেশমি চাদর ভাবছো। তোমরা যারা আল্লাহর বিধান পর্দাকে ভালোবেসে গ্রহণ করছো। তোমরা যারা পর-পুরুষের দৃষ্টি হতে, তাদের সংস্পর্শ, সংস্রব হতে নিজেদের বিরত রাখছো। অতিশয় দরকার আর প্রয়োজন ব্যতীত যারা পর-পুরুষের সাথে কথা বলো না, বলতে হলেও যারা শরীয়ার পর্দাটেনে বলছো, নিজের আব্রুকে হেফাযত করে কথা বলো, তাদের জন্য সুসংবাদ।
তোমাদের এই বেশ-ভূষা, চাল-চলন, এবং তোমাদের এই লজ্জাটুকু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা খুব পছন্দ করেছেন৷ সুবহানাল্লাহ! তোমরা সেই নারীদের উত্তরসূরী যারা পর-পুরুষ আছে বলে সেদিন কূপে যাওয়া থেকে বিরত ছিলো। তোমরা সেই নারীর পদচিহ্ন অনুসরণকারী, যে মূসা আলাইহিস সালামের সাথে প্রয়োজনীয় কথাটা বলতে এসেও যে নিজের লজ্জাটুকু ধরে রাখতে ভুলে যায়নি।
বোন আমার! এই সমাজ যতোই তোমাদের আলো হতে দূরের বাসিন্দা বলুক। যতোই তোমাদের জাহিলিয়্যাতের অধিবাসী বলে আখ্যায়িত করুক।
আনস্মার্ট, ব্যবলা, খ্যাত শব্দে চোখ টিপ্পনী কাটুক। আমরা তো জানি-প্রকৃত আলোর সন্ধানটা তোমরাই পেয়েছো। সুতরাং তোমাদেরকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। তোমাদেরকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
তথ্যাদি
________________
০.পুষ্পকলি
১.আল কাসাস ২৩
২.আল কাসাস ২৫
২য় পর্ব
বোন তুমি কি জানো? ফুলের গুণ অত্যন্ত উদার ও অভিজাত হয়ে থাকে। তার এ উদারতা ও অভিজাতের গুণেই সে এতটা মহৎ ও কোমল। সে নিজের প্রতি নেহাত সংবেদনশীল।এত সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও সে আকাশের রবের সমীপে তার নিজেকে বিলাতে কিঞ্চিৎ বিলম্ব করে না। সে নিজে নিজের প্রতি কখনোই অতি উৎসাহী হয়ে ওঠে না। ফলে রোদের উজ্জল দিপ্তী বিনে সে স্বীয় পাপড়ি ছড়ায় না। মেলে ধরবে তো দূরের কথা।
এখানেই তার প্রবল ব্যক্তীত্ববোধের পরিচয় মিলে।এটাই তার স্বতন্ত্র স্বকীয়তাবোধ। বোন তুমিও তো তাঁর মত এমন আভিজাত্য। তুমিও তো তার মত এমন প্রবল ব্যাক্তিত্বশীলা। আচ্ছা বোন! তুমি কি জানো? ফুলের আরেকটি অন্যতম গুণ হলো লজ্জা ও সংকোচ বোধ। সে এ লাজুকতার বশবর্তী হয়ে স্পর্শের অন্তরালে বেড়ে উঠে। লুকিয়ে লুকিয়ে তার পাঁপড়ি প্রস্ফুটিত করে। সবার সঙ্গোপনে নিজেকে তীলে তীলে গড়ে তুলে। অতপর বসন্ত আসা পর্যন্ত নিজেকে অতি সংযমশীলতার সাথে আড়াল করে রাখে।
একটা সময় তুমি দেখতে পাবে [০]
এ ফুলটিই হাসোজ্জ্যল ও স্পর্শকাতর আভা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে। সৌন্দর্যের গুণে কোন কমতি হয় না। প্রস্ফুটিত হওয়ার গুণে কোন আচড় পরে না। কিন্তু লজ্জা তার মধ্যে টুইটুম্বর থাকে। হাত দেয়ার সাথে সাথে কেমন যেন কাচুমাচু করে। একটু নতজানু হয়ে গোলাকৃতির হয়ে যায়। তবুও নিজের সতীত্ব বিলাতে চায় না।
বোন তোমার এ আঁচল ফুলের মতই মহৎ। তুমি এত গুণবতী! এত লজ্জাবতী! তোমার গুণের কথা বললে কম হয়ে যায়। আর লিখলে তুমি ছোট হয়ে যাও। তাই কি আর করার! ফুলের সাথেই তোমার তুলনা করেছি। ফুলের লজ্জা আর তোমার অস্তিত্ব জুড়ে লজ্জার হুবহু মিল পেয়েছি। ফুলের অভিজাত আর তোমার অস্তিত্বের আভিজাত্যের মধ্যে সমান্তরাল রেখা পেয়েছি। তা দেখে যে কেউ হতবিহ্বল না হয়ে পারবে না।
সূরা কাসাসের ঘটনাটি আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। আমার কাছে কুরআনে বর্ণিত মনোমুগ্ধকর ঘটনার মধ্যে এ হলো অন্যতম একটি ঘটনা। তোমার সামনে এ ঘটনাটি উপস্থাপন করলে তোমার আসল সৌন্দর্য আরো ফুটে উঠবে। অস্তিত্বের আঁচল আরো ফকফকা ও দবদবা দেখাবে।
মূসা আলাইহিস সালাম যখন মাদইয়ানে পালিয়ে এসে একটা গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন খানিক বাদে তিনি দেখতে পেলেন, অদূরে একটা কূপ থেকে কতিপয় লোক পানি উঠাচ্ছে আর তাদের দরকারি কাজ সেরে নিচ্ছে। আবার কিছু লোক আসা যাওয়ার মধ্যে রয়েছে।
আরো একটি জিনিস তিনি লক্ষ্য করলেন- কূপ থেকে একটু দূরে দুটো মেয়ে তাদের বকরীগুলোকে নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ পর্দাবৃত মনে হচ্ছে কিন্তু কূপের দিকে এগুচ্ছে না। মূসা আলাইহিস সালাস একটু এগিয়ে গিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলেন-কেনো তাঁরা তাঁদের বকরীকে পানি পান করাতে কূপের দিকে যাচ্ছে না। তখন তাঁরা যা জবাব দিয়েছিলো তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা পবিত্র কুরআনে তুলে ধরলেন।
মেয়ে দুটো বলেছিলো-[১]
আমরা আমাদের বকরীগুলোকে পানি পান করাতে পারি না যতোক্ষণ না কূপের পাশে থাকা রাখালেরা তাদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে যায়।
বোন আমার!
আধুনিক জামানা যেখানে নারীদেরকে পুরুষদের প্রতিযোগি বানাতে ব্যস্ত। যেখানে নারীদের শেখানো হচ্ছে পুরুষের সমান হওয়াটাই উন্নতি। পুরুষদের ট্রাই পড়া আর চেয়ার দখল করাটাই যখন প্রধান কর্ম। সমাজ সেবার নামে অর্ধলঙ্গ হয়ে পুরুষ এসিস্ট্যান্ট নিয়ে হাঁটা যুক্তিযুক্ত। সেখানে কুরআন এমন দুটো মেয়েকে মঞ্চে উপস্থাপন করেছে যারা কূপের দিকে পা বাড়াচ্ছে না। বরং নিজেদেরকে সর্বোচ্চ লজ্জার চাদরে আবৃত করে রেখেছে। তার কারণ এই যে, সেখানে পুরুষদের আনাগোনা ছিলো।
কেনো পুরুষদের দেখে নারী-দ্বয় সেদিন কূপের নিকটবর্তী হওয়া থেকে বিরত ছিলো? কারণ ওই পুরুষেরা তাদের বাবা নয়, ভাই নয়, স্বামী নয়, নয় মাহরাম। এমতাবস্থায় একদল পুরুষের মাঝে দুটো নারীর উপস্থিতি ঘটলে সেখানে যে ফিতনা তৈরি হওয়ার আশংকা ছিলো, সেটাকে ভয় করেছিলো তারা। নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও স্বাধীনতায় ফিতনা যে আজ থেকে তৈরি হচ্ছে না, এটা মানবজনমের সূচনালগ্ন থেকেই সমাজে বিদ্যমান। ওই নারী-দ্বয় এই ফিতনাকেই ভয় করেছিলো৷
তাঁদের মধ্যে তাকওয়ার পূর্ণ বিকাশ ছিলো বলেই সেদিন তারা তাঁদের বকরীগুলোকে নিয়ে কূপে থাকা পুরুষদের সাথে পানি পান করাতে যায়নি বরং প্রতিযোগিতা করার চাইতে দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাটাকে শ্রেয় মনে করেছে। ঠেলাঠেলি করে কাজ হাসিল করার চাইতে সময় অপচয় করাকে উপকার মনে করেছে।
মেয়ে দুটোর গল্প সেখানেই সমাপ্তি হয়নি। গল্পের পরের অংশে দেখা যায়- বকরীদের পানি পান করানো নিয়ে মেয়ে দুটোর অসহায়ত্ব দেখে মূসা আলাইহিস সালাম নিজ উদ্যোগে তাঁদের বকরীগুলোকে কূপ থেকে পানি পান করিয়ে দেন এবং তাদের নির্ধারিত সময়ের আগেই তাঁদের কাছে ফেরত দেন। এতে তারা খুবই অবাক হন। মেয়েদুটো ঘরে ফিরে যায় এবং একটু পরে তাঁদের একজন পুনরায় মূসা আলাইহিস সালামের কাছে ফেরত আসে। মেয়ে দুটোর একজনের ফিরে আসার বর্ণনাটাও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা কুরআনে তুলে ধরেছেন।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-[২]
অতঃপর নারীদ্বয়ের একজন সলজ্জ-পদে তাঁর [মুসা আলাইহিস সালামের ]কাছে এসে বললো- আমার আব্বা আপনাকে ডাকছেন। আপনি আমাদের বকরীগুলোকে পানি খাইয়েছেন, তাই আব্বা আপনাকে এর বিনিময় দিতে চান।
বোন আমার! প্রশ্ন আর উত্তরটাই এখানে-
একটা মেয়ে একজন পুরুষের সামনে যে সলজ্জ পদভারে এগিয়ে এসেছিলো, সেই কথা কুরআন আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। মহীয়ান সব সভ্যতাকে পৃথিবী ভুলে গেলেও, অনেক তেজস্বী বীরের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস কালের গর্ভ থেকে বিলীন হলেও, অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ইতিহাসের পাতায় ঠাই পেলেও একটা মেয়ের খুব সামান্য লজ্জার কথা, লজ্জা-ভরে এগিয়ে আসার কথা কুরআন যুগ যুগ সময়ের জন্য পৃথিবীবাসীকে জানিয়ে দিয়েছে।
প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও। কেউ না কেউ এ মেয়েটার কথা পড়ছে, জানছে কেউ আবার আমলে নিচ্ছে। একটুখানি লজ্জাকে, একটু সম্ভ্রমকে কুরআন কী অপার মর্যাদায় অবিস্মরণীয় করে রেখে দিলো। ভাবুন তো ! মন খোলে দিলটা দিয়ে একটু ভাবুন! মর্যাদার কতটা উঁচু সিঁড়িতে আল্লাহ তোমাদের আসিন করেছেন।
বোন! তোমরা যারা লজ্জাকে ইমানের ভূষন মনে করছো। লজ্জাকে নিজের সতীত্ব রক্ষার রেশমি চাদর ভাবছো। তোমরা যারা আল্লাহর বিধান পর্দাকে ভালোবেসে গ্রহণ করছো। তোমরা যারা পর-পুরুষের দৃষ্টি হতে, তাদের সংস্পর্শ, সংস্রব হতে নিজেদের বিরত রাখছো। অতিশয় দরকার আর প্রয়োজন ব্যতীত যারা পর-পুরুষের সাথে কথা বলো না, বলতে হলেও যারা শরীয়ার পর্দাটেনে বলছো, নিজের আব্রুকে হেফাযত করে কথা বলো, তাদের জন্য সুসংবাদ।
তোমাদের এই বেশ-ভূষা, চাল-চলন, এবং তোমাদের এই লজ্জাটুকু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা খুব পছন্দ করেছেন৷ সুবহানাল্লাহ! তোমরা সেই নারীদের উত্তরসূরী যারা পর-পুরুষ আছে বলে সেদিন কূপে যাওয়া থেকে বিরত ছিলো। তোমরা সেই নারীর পদচিহ্ন অনুসরণকারী, যে মূসা আলাইহিস সালামের সাথে প্রয়োজনীয় কথাটা বলতে এসেও যে নিজের লজ্জাটুকু ধরে রাখতে ভুলে যায়নি।
বোন আমার! এই সমাজ যতোই তোমাদের আলো হতে দূরের বাসিন্দা বলুক। যতোই তোমাদের জাহিলিয়্যাতের অধিবাসী বলে আখ্যায়িত করুক।
আনস্মার্ট, ব্যবলা, খ্যাত শব্দে চোখ টিপ্পনী কাটুক। আমরা তো জানি-প্রকৃত আলোর সন্ধানটা তোমরাই পেয়েছো। সুতরাং তোমাদেরকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। তোমাদেরকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
তথ্যাদি
________________
০.পুষ্পকলি
১.আল কাসাস ২৩
২.আল কাসাস ২৫
Comment