বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন?
(৪র্থ পর্ব)
আজ মনের একটা কথা বলি!
বোন তোমাদের গর্ব করলে কেন জানি নিজের মধ্যে প্রশান্তি খোঁজে পাই। দ্বীনি সুখ কুঁড়ানোর বল ভরসার হাতছানি দেখতে পাই। পশ্চিম দিগন্তে
ডুবন্ত সূর্যের মাঝে তোমাদের ত্যাগের নাযরানায় নতুন প্রভাতের চিহ্ন বিশেষের সন্ধান পাই। তারার মাঝে তোমাদের মাথায় পরানো মুতির মুকুটের আলো দেখতে পাই। বোন তুমি তোমার সহজাত বোনের এ সন্তানকে জিজ্ঞাসা করবে না! কেন? কারণ তোমাদের এ পবিত্র পেটের যে কোন তুলনা হয় না। দুনিয়ার এ বাহারি সৌন্দর্য তোমাদের অস্তিত্বের কাছে তুচ্ছ, একেবারে নগন্য।
তোমাদের এ কৃতিত্বগুলো ভুলে যাবে মুসলিম জাতি! এর মূল্য দিয়ে শেষ করতে পারবে উম্মাতে মুসলিমা! কাল তার গর্ভে শুধু ঠাই দিয়ে মর্যাদার পরিসমাপ্তির ঘোষণা দিতে পারবে! ইতিহাস তার পাতায় আবদ্ধ না করে এর ক্ষমা মুছে নিতে পারবে! কক্ষনো না।
প্রিয় বোন আমার!
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এত বড় হওয়ার পিছনে তাঁর বোন সিত্তুর রাকব এর অনেক প্রভাব ছিলো যা ইবনে হাজার রহ. এর গোটা কর্মময় মহান জীবনিতে ফোটে উঠেছে। তিনি অবস্থা ও কৌশলের বিন্যাস করে করে স্ববিস্তারে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বোন ছিলেন একজন আলেমা কারী এবং আবেদা সালেহা নারী। তিনি তীলে তীলে তাঁর ভাইকে গড়ে তুলেছিলেন। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন- আমার বোন আমার কাছে আমার মায়ের তুলনাতুল্য। আমি ইবনে হাজার হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাঁরই।
নুরিয়া সাঈদাহ রহ. তাঁর কি অবদান ছিলো যে অবদানের কারণে বদিউজ্জামান নুরসী তৈরি হয়েছে। তিনি তাঁর ছেলেকে ওযু ছাড়া একফোঁটা দুধ পর্যন্ত পান করাতেন না। এত নিষ্ঠা সতর্কতা ও যত্নের সাথে তাকে গড়ে তুলেছেন। যার কারণে এ পৃথিবী একজন বদিউজ্জামান পেয়েছে। আর সে তাঁর মুখের অরণ্য ছড়িয়ে মানুষের হৃদয়কোণে জায়গা করে নিয়েছে! অধিকাংশ মহান ব্যাক্তিদের মহান হওয়ার পিছনে তো মহান নারীদের ভূমিকা
অতুলনীয়।
ইমাম মালেক রহ. এত সূউচ্চ চরিত্র মাধুরীর অধিকারী হলেন কিভাবে?এর নেপথ্য কারণ তিনি নিজেই জানান দিয়েছেন। তিনি বলেন- আমার মা আলিয়া বিনতে শারিক আমার গায়ে কাপড় জড়িয়ে, মাথায় পাগড়ি পরিয়ে দিয়ে আমাকে বলেছেন- হে আমার বৎস! তুমি ইমাম রাবিয়ার কাছে যাও। তবে মনে রাখবে! তার কাছ থেকে ইলম শিখার আগে আদব শিখবে। সুবহানাল্লাহ।
কত সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি! কত সুউচ্চ মানসিকতা!
যে দৃষ্টিভঙ্গি আর যে মানসিকতা পোষণ করে ইমাম শাফি রহ. এর মা ফাতেমা বিনতে আবদুল্লাহ তাঁকে লালন পালন করেছেন। নিজ জন্মভূমিকে ত্যাগ দিয়ে ছেলে শাফীকে তীরন্দাজি শিখানোর উদ্দেশ্যে দূর মক্কায় পাড়ি জমিয়েছেন। কি হলো শেষে-চোখের অনুমান আর হাতের নিশানা বাঁজ পাখির নখরথাবা থেকেও একটু বেশি অর্জিত হয়েছিলো। বোন! এর পিছনে কার অবদান রয়েছে? শুধুই তোমার।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর মা সাফিয়া বিনতে মাইমুনা তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার পরও সন্তানের কল্যাণ ভাবনায় আর বিয়ে না করে এভাবেই পুরা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন আর আমৃত্যু নিজের ছেলেকে ইলমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। ঘরে ভালো মন্দ খেতে পেতেন না তবুও ছেলেকে কাজ করতে দিতেন না।
তিনি বলতেন- তোমার প্রতি আমার আদেশ হলো তুমি সংসারের সব ঝামেলা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে এক মনে এক ধ্যানে হাদিসের দরসে গিয়ে শাইখের সাথে লেগে থাকো। যেখানে সূযোগ পাও সেখানেই ছুটে যাও। আমাকে দেখাশোনার কোন দরকার নেই। আমি তোমার কাছ থেকে এটা চাই না। বরং আমি যেটা চাই সেটাই করো। এই হলো ছেলের কাছে একজন বয়োবৃদ্ধ বিধবা মায়ের আকুতি, আশা ও প্রত্যাশা। অবশেষে ফলাফল প্যাপারে কি আসলো? যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম। যুগ শ্রেষ্ঠ আহলে হাদিস।
ইমাম বুখারী রহ. তার মায়ের কোলে বেড়ে উঠার গল্প তো স্বতঃসিদ্ধ। সেটা না হয় আর নাই বললাম।আরবীতে একটা প্রসিদ্ধ প্রবাদ আছে তার ভাবার্থ হলো এরকম যে, ঘরের মহিলাই পারে সে ঘরের যে কাউকে জাগিয়ে তুলতে আবার সেই পারে তাকে বিভ্রান্ত করতে। যখন কোন ঘরের মহিলা সে ঘরের সদস্যদের থেকে উদাসীন হয়ে যায় তখন তাদের মধ্যে অধঃপতন নেমে আসে। এবার চাই সে মা হোক, চাই বোন অথবা স্ত্রী।
এজন্য ইতিহাস স্বাক্ষী যখন হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হিজরত করে মক্কা থেকে মদিনায় গিয়েছিলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে তাঁর স্ত্রীকে যেতে বলেছিলেন। যাতে সেই কঠিন মুহুর্তের সময়টাকে দুজন মিলে সহজ করে নেওয়া যায়। এটা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও আদত ছিলো। তাছাড়া রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাউকে স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বলেছেন “তোমরা মেয়ের ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দাও” ইমাম নববী রহ. এর কারণ দর্শাতে গিয়ে বলেন কেননা একজন স্ত্রীর সাথে ঐ বাড়ীর বহু মানুষের শুদ্ধতা অশুদ্ধতার সম্ভাবনা জড়িয়ে থাকে।
বোন আমার! তোমার একার অবাধ্যতার দরূন, তুমি একা বিপথে চলার কারণে, তুমি অশুদ্ধতার ময়দান পাকাপোক্ত হওয়ায় সবাইকে পস্তাতে হবে, সবাইকে এর জবাবদিহিতা করতে হবে। এর মাশুল পুরো পরিবারকে গুণতে হবে। যেমন এই দুনিয়ার আদালতে তেমন হাশরের কাঠগড়ায়ও।
বোন তোমাকে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, তুমি কিন্তু ফুলের মত জগত সেরা। তোমার মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ তোমাকে অনেক মহৎ উদ্দেশ্যে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। সুতরাং তোমার জীবনটা অনেক মহৎ ও নেহাত । আর এ জীবনে আপাত মোহনীয় পার্থিব সাজ সজ্জা ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে। এ জীবনে আছে তোমার অধিকার। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রাপ্তির ন্যায়ানুগ সে অধিকার। আছে তোমার পছন্দ। জীবনোপকরণ বেছে নেয়ার সে পছন্দ।আছে তোমার সুউচ্চ রুচিবোধের মূল্যায়ন। যা তুমি অর্জন করে নিতে পারো।
তবে তোমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো তাঁর অবাধ্যতা বর্জন। এতেই তোমার সর্ব কালের সর্বতো সুখ নিশ্চিত হবে। এতেই তোমার প্রকৃত সফলতা হাসিল হবে। সুতরাং হে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানব সম্প্রদায়, সৃষ্টির শোভা নারী জাতি তোমাকে খুব করে মনে রাখতে হবে যে, এ জীবন শুধু সাজসজ্জা খাওয়া-দাওয়া আর আনন্দ-ফুর্তি করার নাম নয়। বরং জীবন হলো সুখ দুঃখের অনুভূতি, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সমন্বয়।
এটা নিছক ভোগ আর বিলাসিতার ঠিকানা নয়। এই পথে কখনো চিরসুখ আসা সম্ভব নয়। এটা তো বাস্তবতার সাথে চরম হেঁয়ালি। বরং বাস্তব কথা হলো আমাদের পুরো জীবনটাই একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের গন্ডিতে আবদ্ধ। আমাদের জীবনের প্রতিটি প্রসঙ্গ, প্রতিটি অনুষঙ্গ, এক একটা অতিব গুরুত্বপূর্ণ। যা ছাড়া একে উপরে বিকল।
আমাদের জীবন গড়ে ওঠা, আমাদের সভ্যতা সংস্কৃতি, আচার ব্যবহার এবং আমাদের শিক্ষা- দীক্ষা সবকিছুই মুখ্যত আল্লাহ অভিমুখী হতে হবে। পুরোপুরি তাঁর এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্যে নিবেদিত হতে হবে এবং পরিপূর্ণ তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনে পরিচালিত হতে হবে। আর এটাই আমাদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য। কেননা এর মাধ্যমেই আমাদের চূড়ান্ত সফলতা অর্জিত হবে।
সুতরাং বোন আমার! তুমি তোমার জীবনের অনুষদগুলোকে অতি সুন্দর অবকাঠামোতে গড়ে তোলো। তুমি সদা সর্বদা পুতপবিত্র, স্বচ্ছ শুভ্র ফুল হয়ে বেঁচে থাকো এবং তোমার থেকে ছড়ানো তোমার একান্ত সুগন্ধি ততক্ষণ পর্যন্ত সংরক্ষন করে রাখো যতক্ষণ না তোমার জীবনে সেই [দ্বীন] বসন্তটি আসে। যা দিয়ে মোহিত করবে পুরো উম্মাহকে। উম্মাহর সৃষ্টিকর্তাকে। উম্মাদর দরদী রাহবার প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে।
(৪র্থ পর্ব)
আজ মনের একটা কথা বলি!
বোন তোমাদের গর্ব করলে কেন জানি নিজের মধ্যে প্রশান্তি খোঁজে পাই। দ্বীনি সুখ কুঁড়ানোর বল ভরসার হাতছানি দেখতে পাই। পশ্চিম দিগন্তে
ডুবন্ত সূর্যের মাঝে তোমাদের ত্যাগের নাযরানায় নতুন প্রভাতের চিহ্ন বিশেষের সন্ধান পাই। তারার মাঝে তোমাদের মাথায় পরানো মুতির মুকুটের আলো দেখতে পাই। বোন তুমি তোমার সহজাত বোনের এ সন্তানকে জিজ্ঞাসা করবে না! কেন? কারণ তোমাদের এ পবিত্র পেটের যে কোন তুলনা হয় না। দুনিয়ার এ বাহারি সৌন্দর্য তোমাদের অস্তিত্বের কাছে তুচ্ছ, একেবারে নগন্য।
তোমাদের এ কৃতিত্বগুলো ভুলে যাবে মুসলিম জাতি! এর মূল্য দিয়ে শেষ করতে পারবে উম্মাতে মুসলিমা! কাল তার গর্ভে শুধু ঠাই দিয়ে মর্যাদার পরিসমাপ্তির ঘোষণা দিতে পারবে! ইতিহাস তার পাতায় আবদ্ধ না করে এর ক্ষমা মুছে নিতে পারবে! কক্ষনো না।
প্রিয় বোন আমার!
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এত বড় হওয়ার পিছনে তাঁর বোন সিত্তুর রাকব এর অনেক প্রভাব ছিলো যা ইবনে হাজার রহ. এর গোটা কর্মময় মহান জীবনিতে ফোটে উঠেছে। তিনি অবস্থা ও কৌশলের বিন্যাস করে করে স্ববিস্তারে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বোন ছিলেন একজন আলেমা কারী এবং আবেদা সালেহা নারী। তিনি তীলে তীলে তাঁর ভাইকে গড়ে তুলেছিলেন। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন- আমার বোন আমার কাছে আমার মায়ের তুলনাতুল্য। আমি ইবনে হাজার হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাঁরই।
নুরিয়া সাঈদাহ রহ. তাঁর কি অবদান ছিলো যে অবদানের কারণে বদিউজ্জামান নুরসী তৈরি হয়েছে। তিনি তাঁর ছেলেকে ওযু ছাড়া একফোঁটা দুধ পর্যন্ত পান করাতেন না। এত নিষ্ঠা সতর্কতা ও যত্নের সাথে তাকে গড়ে তুলেছেন। যার কারণে এ পৃথিবী একজন বদিউজ্জামান পেয়েছে। আর সে তাঁর মুখের অরণ্য ছড়িয়ে মানুষের হৃদয়কোণে জায়গা করে নিয়েছে! অধিকাংশ মহান ব্যাক্তিদের মহান হওয়ার পিছনে তো মহান নারীদের ভূমিকা
অতুলনীয়।
ইমাম মালেক রহ. এত সূউচ্চ চরিত্র মাধুরীর অধিকারী হলেন কিভাবে?এর নেপথ্য কারণ তিনি নিজেই জানান দিয়েছেন। তিনি বলেন- আমার মা আলিয়া বিনতে শারিক আমার গায়ে কাপড় জড়িয়ে, মাথায় পাগড়ি পরিয়ে দিয়ে আমাকে বলেছেন- হে আমার বৎস! তুমি ইমাম রাবিয়ার কাছে যাও। তবে মনে রাখবে! তার কাছ থেকে ইলম শিখার আগে আদব শিখবে। সুবহানাল্লাহ।
কত সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি! কত সুউচ্চ মানসিকতা!
যে দৃষ্টিভঙ্গি আর যে মানসিকতা পোষণ করে ইমাম শাফি রহ. এর মা ফাতেমা বিনতে আবদুল্লাহ তাঁকে লালন পালন করেছেন। নিজ জন্মভূমিকে ত্যাগ দিয়ে ছেলে শাফীকে তীরন্দাজি শিখানোর উদ্দেশ্যে দূর মক্কায় পাড়ি জমিয়েছেন। কি হলো শেষে-চোখের অনুমান আর হাতের নিশানা বাঁজ পাখির নখরথাবা থেকেও একটু বেশি অর্জিত হয়েছিলো। বোন! এর পিছনে কার অবদান রয়েছে? শুধুই তোমার।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর মা সাফিয়া বিনতে মাইমুনা তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার পরও সন্তানের কল্যাণ ভাবনায় আর বিয়ে না করে এভাবেই পুরা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন আর আমৃত্যু নিজের ছেলেকে ইলমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। ঘরে ভালো মন্দ খেতে পেতেন না তবুও ছেলেকে কাজ করতে দিতেন না।
তিনি বলতেন- তোমার প্রতি আমার আদেশ হলো তুমি সংসারের সব ঝামেলা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে এক মনে এক ধ্যানে হাদিসের দরসে গিয়ে শাইখের সাথে লেগে থাকো। যেখানে সূযোগ পাও সেখানেই ছুটে যাও। আমাকে দেখাশোনার কোন দরকার নেই। আমি তোমার কাছ থেকে এটা চাই না। বরং আমি যেটা চাই সেটাই করো। এই হলো ছেলের কাছে একজন বয়োবৃদ্ধ বিধবা মায়ের আকুতি, আশা ও প্রত্যাশা। অবশেষে ফলাফল প্যাপারে কি আসলো? যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম। যুগ শ্রেষ্ঠ আহলে হাদিস।
ইমাম বুখারী রহ. তার মায়ের কোলে বেড়ে উঠার গল্প তো স্বতঃসিদ্ধ। সেটা না হয় আর নাই বললাম।আরবীতে একটা প্রসিদ্ধ প্রবাদ আছে তার ভাবার্থ হলো এরকম যে, ঘরের মহিলাই পারে সে ঘরের যে কাউকে জাগিয়ে তুলতে আবার সেই পারে তাকে বিভ্রান্ত করতে। যখন কোন ঘরের মহিলা সে ঘরের সদস্যদের থেকে উদাসীন হয়ে যায় তখন তাদের মধ্যে অধঃপতন নেমে আসে। এবার চাই সে মা হোক, চাই বোন অথবা স্ত্রী।
এজন্য ইতিহাস স্বাক্ষী যখন হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হিজরত করে মক্কা থেকে মদিনায় গিয়েছিলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে তাঁর স্ত্রীকে যেতে বলেছিলেন। যাতে সেই কঠিন মুহুর্তের সময়টাকে দুজন মিলে সহজ করে নেওয়া যায়। এটা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও আদত ছিলো। তাছাড়া রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাউকে স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বলেছেন “তোমরা মেয়ের ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দাও” ইমাম নববী রহ. এর কারণ দর্শাতে গিয়ে বলেন কেননা একজন স্ত্রীর সাথে ঐ বাড়ীর বহু মানুষের শুদ্ধতা অশুদ্ধতার সম্ভাবনা জড়িয়ে থাকে।
বোন আমার! তোমার একার অবাধ্যতার দরূন, তুমি একা বিপথে চলার কারণে, তুমি অশুদ্ধতার ময়দান পাকাপোক্ত হওয়ায় সবাইকে পস্তাতে হবে, সবাইকে এর জবাবদিহিতা করতে হবে। এর মাশুল পুরো পরিবারকে গুণতে হবে। যেমন এই দুনিয়ার আদালতে তেমন হাশরের কাঠগড়ায়ও।
বোন তোমাকে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, তুমি কিন্তু ফুলের মত জগত সেরা। তোমার মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ তোমাকে অনেক মহৎ উদ্দেশ্যে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। সুতরাং তোমার জীবনটা অনেক মহৎ ও নেহাত । আর এ জীবনে আপাত মোহনীয় পার্থিব সাজ সজ্জা ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে। এ জীবনে আছে তোমার অধিকার। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রাপ্তির ন্যায়ানুগ সে অধিকার। আছে তোমার পছন্দ। জীবনোপকরণ বেছে নেয়ার সে পছন্দ।আছে তোমার সুউচ্চ রুচিবোধের মূল্যায়ন। যা তুমি অর্জন করে নিতে পারো।
তবে তোমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো তাঁর অবাধ্যতা বর্জন। এতেই তোমার সর্ব কালের সর্বতো সুখ নিশ্চিত হবে। এতেই তোমার প্রকৃত সফলতা হাসিল হবে। সুতরাং হে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানব সম্প্রদায়, সৃষ্টির শোভা নারী জাতি তোমাকে খুব করে মনে রাখতে হবে যে, এ জীবন শুধু সাজসজ্জা খাওয়া-দাওয়া আর আনন্দ-ফুর্তি করার নাম নয়। বরং জীবন হলো সুখ দুঃখের অনুভূতি, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সমন্বয়।
এটা নিছক ভোগ আর বিলাসিতার ঠিকানা নয়। এই পথে কখনো চিরসুখ আসা সম্ভব নয়। এটা তো বাস্তবতার সাথে চরম হেঁয়ালি। বরং বাস্তব কথা হলো আমাদের পুরো জীবনটাই একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের গন্ডিতে আবদ্ধ। আমাদের জীবনের প্রতিটি প্রসঙ্গ, প্রতিটি অনুষঙ্গ, এক একটা অতিব গুরুত্বপূর্ণ। যা ছাড়া একে উপরে বিকল।
আমাদের জীবন গড়ে ওঠা, আমাদের সভ্যতা সংস্কৃতি, আচার ব্যবহার এবং আমাদের শিক্ষা- দীক্ষা সবকিছুই মুখ্যত আল্লাহ অভিমুখী হতে হবে। পুরোপুরি তাঁর এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্যে নিবেদিত হতে হবে এবং পরিপূর্ণ তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনে পরিচালিত হতে হবে। আর এটাই আমাদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য। কেননা এর মাধ্যমেই আমাদের চূড়ান্ত সফলতা অর্জিত হবে।
সুতরাং বোন আমার! তুমি তোমার জীবনের অনুষদগুলোকে অতি সুন্দর অবকাঠামোতে গড়ে তোলো। তুমি সদা সর্বদা পুতপবিত্র, স্বচ্ছ শুভ্র ফুল হয়ে বেঁচে থাকো এবং তোমার থেকে ছড়ানো তোমার একান্ত সুগন্ধি ততক্ষণ পর্যন্ত সংরক্ষন করে রাখো যতক্ষণ না তোমার জীবনে সেই [দ্বীন] বসন্তটি আসে। যা দিয়ে মোহিত করবে পুরো উম্মাহকে। উম্মাহর সৃষ্টিকর্তাকে। উম্মাদর দরদী রাহবার প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে।
Comment