Announcement

Collapse
No announcement yet.

বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? {৭ম পর্ব}

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? {৭ম পর্ব}

    বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন?
    {৭ম পর্ব}

    বোন! তুমি তো মায়ের জাতি। তোমাকে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে মর্যাদাবান করে সৃষ্টি করেছেন। তুমি একাই অনেকের সৌভাগ্যের কারণ হয়ে থাকো। জনৈক কবি সত্যিই বলেছেন- নারীরা যদি পুরুষ সংখ্যক জ্ঞানী ও আদর্শবান হতো তাহলে তারা তাদের গুণবলে সহসায়ই পুরুষদের ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে চলে যেতো।

    তোমার একার সাথে বহু জনের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। তুমি যদি মা হও তবে তোমার সন্তানের জান্নাত তোমার পদতলে। যদি মেয়ে হও তবে তোমার পিতা মাতার জান্নাত তোমাকেই কেন্দ্র করে। আর যদি বোন হও তাহলে তোমার ভাইয়ের ভালো খারাপ তোমাকেই ভাবতে হবে। কল্যাণ অকল্যাণের চিন্তা তোমাকেই করতে হবে।

    বোন! তুমি কি দেখোনা পৃথিবীর ইতিহাসে দেদীপ্যমান হয়ে আছে এর কতো বাস্তবতা! কতো আলোকিত নারী তার স্বীয় আলোক বিভায় তার আশপাশের কতো মানুষকে আলোকিত করেছে! সে আলো সিঞ্চন করে কতো বিরল ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়েছে! তুমি কি তাঁর হিসাব রেখেছো? খোঁজ নাও দেখবে নিজেদের প্রসংশায় নিজেরাই অভিভূত হয়ে যাবে।

    একজন নারী তাঁর ছেলের অনুপম ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে, তাঁর ভাইয়ের অনুপম ব্যক্তিত্ব গঠনে সাক্ষী হয়ে থাকে, তাঁর স্বামীর অনুপম ব্যক্তিত্ব গঠনে যে মহব্বত তৈরি হয় এর নজির ইতিহাসে মোটেও কম নয়। বহু সাহাবী তাঁদের মায়ের অবদানে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে ইসলামের পক্ষে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন। নিজেও আলোকিত হয়েছেন এবং পুরো পরিবারকেও আলোকিত করেছেন।

    সে ইতিহাস আমরা জানি। এখানে শুধু হাসসান বিন ছাবেত রাযি. এর একটি উক্তি উল্লেখ করবো। তিনি এভাবে বলেছিলেন- যে ইসলামের পক্ষে অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক দেখতে চায় সে যেন যুবাইর ইবনুল আওয়াম রাযি. তৈরী হওয়ার পেছনে স্বীয় মাতা সাফিইয়্যা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব রাযি. এর জীবন কর্মের দিকে সুনজর দেয়।

    প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম যাহাবী রাহি. বলেন- শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করা এবং তা ধৈর্যের সাথে সয়ে নিয়ে রণাঙ্গণে অটল থাকার যে পারঙ্গমতা তাঁর মা তাঁকে সেই ছোট্ট শিশুকাল থেকেই অনুশীলন করাতেন। অভ্যস্ত হওয়ার জন্য মাঝে মাঝে তাঁকে তিনি প্রবলভাবে প্রহারও করতেন। তার ফলাফল কি দাঁড়ালো- তিনি সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে ইয়ারমুকের মত ভয়াবহ যুদ্ধে দুই লাখ রোমান সৈন্যের কাতার ভেঙ্গে তরবারী চালাতে চালাতে একদম প্রথম সারি থেকে শেষ সারি পর্যন্ত পৌঁছেছেন। আল্লাহু আকবার!

    এর মধ্যে অজস্র আঘাতে জর্জরিত হয়েও তিনি অটল অবিচল ছিলেন। এটাই হলো একজন শ্রেষ্ঠ সাহসী বীর যোদ্ধা সাহাবীর বীরত্বের পেছনের ঘটনা। তাঁর এ বীরত্ব দেকে বহু সাহাবীর হৃদয় জগতে দ্বীনের মহব্বত বেড়ে গিয়েছে। দুর্বল চিন্তার সাহাবীদের মনোবল সুদৃঢ় হয়ে গিয়েছে। হোঁচট খাওয়া মুমিনদের মনের সকল নিরাশা দুরাশা দূর হয়ে সম্মুখপানে এগিয়ে যেতে প্রবল ভরসা ফিরে পেয়েছে।

    প্রিয় বোন আমার! আর যদি একজন শ্রেষ্ঠ তাবেয়ীর বেড়ে উঠার গল্প বলি- তাহলে বলবো ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রাহি. এর কথা। যার ব্যাপারে ইমাম ইবনে উয়াইনা রহ. মন্তব্য করে বলেছিলেন যে, আমি আমার জীবনে হালাল হারাম সম্পর্কে সুফিয়ান ছাওরী থেকে অধিক জ্ঞাত আর কাউকে দেখিনাই। কারণ তাঁর মা ছিলেন একজন বড় আলেমা বরং একজন বিশিষ্ট ফকীহা।

    তিনি তাঁর ছেলের প্রতি সব সময়ই বিশেষ দৃষ্টি রাখতেন। তাঁকে প্রতিটি পদে পদে শিক্ষা দিতেন।তিনি তাঁর ছেলে সুফিয়ান ছাওরী রাহি. কে বলতেন- হে আমার ছেলে সুফিয়ান! তুমি প্রতি দশটা হাদিস লিখবে আর নিজের অন্তরকে জিজ্ঞেস করবে যে, সে আগের থেকে আরো সংশোধিত হয়েছে কিনা! আরো সমৃদ্ধ হয়েছে কিনা! যদি তা হয় তাহলে আগে বাড়বে। নয়তো পুনরায় পিছনের কর্মের ব্যর্থতার জন্য রবের দরবারে রোনাজারি করবে।

    বোন! ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহি. এতো বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হলেন কিভাবে? এর পেছনের নেপথ্য কারণ তিনি নিজেই বলেছেন- তিনি বলেন, এই যে আমি! এটা আমার মায়ের অবদান। আমার মা আমাকে বলতেন- হে আমার বৎস! তুমি আমার সঙ্গ দান করার চেয়ে আমার কাছে শতগুণে প্রিয় যে, তুমি আল্লাহর দ্বীনের এবং ইসলামের সঙ্গ দান করবে।

    ইমাম আওযায়ী রাহি. তৈরী হওয়ার পিছনে আল্লাহর অনুগ্রহের পর তাঁর মায়ের অনুগ্রহই সবচেয়ে বেশী ছিলো। এজন্যেই বলা হয়-একজন সন্তানের জন্যে তার মা হলো তাঁর প্রথম মাদ্রাসা।তার সুশিক্ষিত মাই হলো তাঁর প্রধান শিক্ষা সূতিকাগার। জীবন চরণে এর চেয়ে উত্তম শিক্ষাগার আর কোথাও হতে পারে না।

    বোন! আর যদি ব্যক্তিত্ব গঠনে তোমার অবদানের কথা বলি- তাহলে কার কথা বলবো জানো? প্রসঙ্গক্রমে হযরত উমরে ফারুক রাযি. এর কথা সর্বাগ্রে চলে আসে। তিনি হলেন তোমার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। বোনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায় তাঁর ইসলাম গ্রহণ। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে তাঁর আশ্রয়স্থল।

    হযরত উমর রাযি. তাঁর বোনের ইসলাম গ্রহণ করার সংবাদ শুনে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ছুঁটে এসেছিলেন। দরজার পাশে দাঁড়াতেই ভিতর থেকে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের সুমধুর কন্ঠ ভেসে আসছে। এতে তিনি আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন ।এরপর যা হবার তাই হলো। এক পর্যায়ে তাঁর সত্য বুঝে আসে এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।

    এ ঘটনা সত্য তবে এটাও সত্য যে এর সাথে পূর্বের ছোট্ট একটি যোগ সূত্র ছিলো। যেটা ইতিহাসে প্রমাণিত, হযরত ওমরে ফারুক রা. এর বোন ফাতেমা এবং বোন জামাই সাঈদ তার আগ থেকেই প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সুকৌশলে তার সত্য গ্রহণ করার মানস তৈরী করাতে সচেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। ভায়ের অত্যাচারের কথা মাথায় নিয়েই অধিক সুমিষ্ট ইমানকে তাঁরা অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ফলে আল্লাহ তাআলা তাঁর বোনের মাধ্যমে কত উত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজই না হাসিল করিয়েছেন।

    ইসলামের ঐ সময়টাতে এমন একজন ব্যক্তির কতটা যে প্রয়োজন ছিলো তা আজ ইতিহাসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে আছে। কারো বুকেই এ সাহস ছিলো না পবিত্র কাবায় দাঁড়িয়ে এক ইলাহের ঘোষণা আযানের ধ্বনিতে মুখরিত করবে। তিনিই সেই সৌভাগ্যবান স্পর্দাওয়ালা সাহসী ব্যক্তি। কারো মনেই এ কথা উঁকি দিতো না, প্রকাশ্যে রুবুবিয়্যাতের ঘোষণা দেয়ার। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললেন- ওগো আল্লাহর হাবিব! আজ থেকে আমরা প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিবো।

    বোন! তোমার মাধ্যমে যদি কোন এক পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী দ্বীনের হেদায়েত পেয়ে যায় তাহলে হাদিসে বর্ণিত ফুটফুটে তরতাজা লাল উটনী তার বাচ্চাসহ এরচেয়ে বেশি দামী ও উত্তম তোমার এ কাজটাকে মনে করা হবে। এখন চিন্তা করুন! ঐ সমস্ত নারীদের কী পরিমাণ সওয়াব ও প্রতিদান দেওয়া হবে যারা দ্বীনকে দিন ভাবেনি বরং দিনরাত একসার করে ত্যাগের সর্বোচ্চটা বিসর্জন দিয়েছেন।

  • #2
    প্রিয় শায়খ! আপনার উপদেশ নিরব(নীরব) ভালবাসা এবং সচ্চ(স্বচ্ছ) মাধুরিকতার সৌরভ ছড়াচ্ছে।

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তায়ালা আপনার ইলম,আমল ও লেখায় বারাকাহ দান করুন।আমিন

      আঁখি, পূর্ববর্তী পর্বগুলোর লিঙ্ক মূল পোষ্টে কিংবা কমেন্টে যোগ করে দিলে ভালো হয়।

      Comment


      • #4
        রব! ভাইদের মনের নেক দুআ ও নেক আমলগুলোকে ওজনের পাল্লায় ওজন দিওনা বরং তোমার মানশা অনুযায়ী যেন হয়।

        Comment


        • #5
          আমিন! আমিন! ইয়া রাব্বাল আলামিন।

          Comment


          • #6
            বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন?
            {১ম পর্ব}


            বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? {২য় পর্ব}


            বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? {৩য় পর্ব}


            বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? {৪র্থ পর্ব}


            বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? {৫ম পর্ব}


            বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন? {৬ষ্ঠ-পর্ব}

            Comment

            Working...
            X