জীবন থেকে জীবনের জন্য নেয়া
আল_ক্বায়েদা_মুজাহিদ
জোহরের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরলাম। দেখি মোবাইলটা বাজতেছে, সবুজ বাটন চাপতেই ওপার থেকে কান্নার আওয়াজ! ভিতরটা দুমড়ে-মুচড়ে উঠল! ভয় লাগল,যদি এমন হয়।
যা ভাবলাম তাই বললো, তোর 'দুলাভাই' আর নাই! আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম।
মনে হচ্ছিলে পায়ের নিচে পাটাতন সরে যাচ্ছে। মা বললো, কি হয়েছে? নিজেকে সামলিয়ে নিলাম। তেমন কিছু না, 'দুলাভাই' ভালোই আছে। এখানে দুলাভাইয়ের সঙ্গে ভালোই আছে কথাটি শুনতে কেমন যেনো শোনায়। আরো ভালো মানুষ! এখন সম্পাদনার সময় নয়, সবকিছুরই রয়েছে নিজস্ব সময় ও মুনাসিব ওয়াক্ত। বাড়ির সবাইকে তো জানাতে হবে, নিজেকে শক্ত হতে হবে, কথা এবং চেহারার অবয়বে কেউ যেনো কিছুই বুঝতে না পারে।
মায়ের গোসল ও নামাজ শেষ। দস্তরখানায় সবাইকে বসালাম, খানা শেষে সবাইকে বসিয়ে বল্লাম। মা তো কেঁদে ফেললেন এবং অনেকটা পাগলের মতো হয়ে বারান্দায় হাঁটাচলা শুরু করেন। মাকে সান্ত্বনা দিয়ে পাশে বসে দুলাভাইয়ের ছিফত-গুন বর্ণনা শুরু করলাম কিন্তু কে শোনে কার কথা! এরি মধ্যে পাড়ার সকল মহিলাদের জটলা পেকে বসলো। একেকজনের একেকরকম মন্তব্য। কেউ বলে জামাইটা ভালো ছিলো। আবার কেউ বলে সবার কথা চিন্তা করত। আবার কেউ বলে, থাক সবার কথা লিখতে গেলো, তাদের আর আমাদের পার্থক্য কি থাকলো?
এক্ষেত্রে আমার সারগর্ব মন্তব্য হলো-
আমাদের সবার নাসিকা ও জিহ্বাকে সংযমে রাখা দরকার। আর তানাহলে নিজেদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে! একজন মুর্দা বা 'বরযোখ'-এর যাত্রীর কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে তিনি যে পথে যাত্রা শুরু করেছেন, আমাকেও দু'দিন আগেপিছে সেই পথ বায়ে যেতে হবে। এই ভয়ে তো আমাদের কণ্ঠনালী শুকিয়ে আসবে, লোমগুচছ দাঁড়িয়ে যাবে, চক্ষু বন্যা ডাকবে! অথচ আমরা কিনা গীবতা-শেকায়েত নিয়ে ব্যস্ত।
যাহোক, আমি কিন্তু বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললাম, আমাদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। কেননা 'মউতের-আজাল' আমাকেও ধরবে। আমিও এই অসহায় অবস্থায় নিপতিত হবে। আমার দেহকে মৃত্তিকা গ্রাস করবে। 'যদি দুনিয়াতে কুরআন সুন্নাহভিত্তিক জীবন অতিবাহিত করে থাকি, তাহলে কবর হবে জান্নাতের ফুলবাগান; আর তানা হলে হবে জাহান্নামের গর্ত'। আর আমরা কিন্ত ভুলে যাই 'বিলকুল' ভুলে যাই।
অনেকজনের বিভিন্ন মত। সিদ্ধান্ত হলো মা আর আমি যাবো। কেননা আমাদের পরিবারের অনেকেই বড়ইতলিতে থাকে। এখানে একটা কথা আগেই বলে রাখি, তাগুতের যাদু-টোনা ও মাকড়সার জাল থেকে বাঁচার জন্য জায়গার নামগুলো কুনিয়াত উল্লেখ করলাম। আর বাকি যাদের আসার কথা ছিলো, তারা সবাই না আসার কারণ...। আবার কি বলবো, সদাশয় সরকার লগডাউন দিয়ে রেখেছে। দূর পাল্লার কোনো যাত্রীবাহী গাড়ি চলবেনা। এটাও আমাদের দু'হাতের কামাই! স্হির হলো প্রাইভেট কারে যাবো। রাত আটটায় কাউন্টারে আসলাম। কাউন্টার থেকে সাড়ে আটটা রওনা দিয়ে আমাদের উপর যেনো দয়া করল। রাতের আকাশ কালো চাদরের আবরণে ঢাকা। জানালা দিয়ে দূর আকাশে তাকালে হয়তো 'সুখতারা' দেখা যেতে কিন্তু ইচ্ছে ছিলো না। মাঝে মাঝে মালবাহী ট্রাকগুলো দেখা যাচ্ছে, ছুটে চলেছে আপন গন্তব্যে। এমনি করে আমারও একেকটা দিন ছুটে চলেছে অতিত মুখী মহাসাগরের স্রোতের টানে। কিন্তু আমি কি পারতেছি, আমার ঐ দিনটিকে আমলের কালি দিয়ে সাদা-শুভ্র সবুজ-সতেজ করে ধরে রাখতে।
জানালা খোলা ছিলো, বাহিরে তাকালে দেখা যায় কালো চাদরে যেনো সব ঢেকে রেখেছে। মাঝেমধ্যে দু'একটি আলো মানে প্রদীপ কিন্তু অতি আধুনিকরনের কারণে বলা যায় বিদুতিক বাল্ব! যেনো আমার মনে আশার সঞ্চালন সৃষ্টি করে। ঠিক যেনো তরবিয়ত দেওয়া হচ্ছে, বান্দা জাহেলিয়াতের 'জুলমাত-অন্ধকারের' মধ্যে তোমাকে কুরআন এবং সুন্নাহের আলো দিয়ে পথ চলতে হবে!
এই কল্পনার রাজ্যে কখন যে কাশবাগান পার হয়ে এসেছি টেরই পেলামনা, দেখলাম মাফিয়া-পুলিশ গাড়ি থামানোর জন্য ইসারা করলেন। সবার 'টনক' নড়ে গেলো। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, এমন একটি দেশ পাবে নাকো কোথাও! যে দেশের গ্রামপুলিশ থেকে সরকার মহাশয় পর্যন্ত প্রত্যকেই 'জেব-পকেট' ভারী করার কাজে মহাব্যস্ত।
যাহোক, দেখলাম আমাদের সহ অন্যান্য গাড়ি থেকে 'উৎকোচ' বাবদ দু'তিনটি করে 'মুজিব' মার্কা লাল নোট নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে!। মনে হচ্ছিলো লজ্জায় আমারই নাসিকা কাটা পড়ল। সহযাত্রীদের মধ্যে থেকে তো একজন বলেই ফেললেন শালারা...নাহ থাক! কলমকে সংযমে রাখলাম। এখানে যে চিত্রকল্পটি অঙ্কন করলাম, যার মাথা আছে তার বুঝার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট।
তবে আমাদের ড্রাইভার বেশি সেয়ানা হওয়াই ঝামেলা পোহাতে হয়েছে বেশি এবং বিলম্বে ছেড়েছে। মনে হচ্ছিলো, "ঠিক যেনো ভুনা করা কাবাব তাদের সামনে উপবেশন করা হয়েছে"।
আমরা আবারও দ্বিতীয়বার বড়ইতলির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। সামনে কিছুদুর অগ্রসর হওয়ার পর ড্রাইভার যে আনাড়ি-সেয়ানা তা বুঝালেন। হাইওয়ে থেকে তিনি শাখা রাস্তায় নেমে পড়লেন এবং বললেন ঝিলাম নদী পর্যন্ত রাস্তা পরিস্কার শুধু একজায়গা ব্যতীতো। একটু আগে বাড়তেই দেখা গেলো 'টোল-ভিক্ষা' নেওয়ার জন্য ভদ্রলোকেরা চেয়ার-টেবিল নিয়ে আছেন।
এখানে ফকির ও ভদ্রলোকদের মধ্যে পার্থক্য শুধু এতোটুকু ফকিরকে যাদের ইচ্ছা তারা দান করেন, আর এখানে ভদ্রলোকেরা টোলের আবরণে গাড়িওয়ালাদের ভিক্ষা দিতে বাধ্য করেন। শুধুএখানে না! বামপন্থী হাতের কালো 'আচর' রাষ্ট্রের শিরা-উপশিরায় পৌঁছে গেছে।
যাহোক, গাড়ি সামনে ছুটে চলছে। কিছুক্ষন পর মা বললো, আমারা কোথায়? বললাম বকুল তলায়। এরিমাঝে কয়েকজনের সঙ্গে ফোনো কথা হলো, আমরা কোথায় আর কতক্ষণ লাগবে ইত্যাদি। কখনো কাছের মানুষ কতদূরে, আবার কখনো দূরের মানুষ কত কাছে। এই দূরের এবং কাছের রহস্যটা এখনো রহস্যয় রয়ে গেলো।
ওহ বলায় হয়নি! আমার পিছনের তিন সিটে কাউন্টারওয়ালা ভদ্রলোক পাঁচজনকে বসিয়েছে। আমাদেরকেও চারজনকে বসিয়েছেন। আরো বলা হয়েছিলো প্রাইভেট কার এসি! এমনি থেকে তো শ্রাবন মাসের গরম, লম্বাসময় সফর আবার সিট নিয়ে ঝামেলা। হয়ত সীটের জায়গা নিয়ে ছোটোমোটো একটা কলহ লেগে যেতে আল্লাহ! হেফাজত করেছেন। পিছনের সীটের ভদ্রমহিলা বমি করে ফেললেন। আমি পানি ফু দিয়ে দেলাম দাওয়াতের নিয়তে। আর বললাম বিসমিল্লাহ বলে তিনবারে পান করবেন শেষে আলহামদুলিল্লাহ! বলবেন। জানিনা তাদের হৃদয়দর্পনে কতটুকু আচর কেটেছে দো'আ করি আল্লাহ! যেনো সকল মুসলিমানের ঈমান-আকিদা আমান ও হেফজ করো।
আমার বামপাশের ছেলেটা ভদ্র। আসলে ভদ্রকে তো ভদ্রই বলতে হবে তাইনা? আর তানা হলে হয়ত কলহ লেগে যেতো। বেচারা 'এসারমেন্টের' জন্য বড়ই তলিতে যাচ্ছে। মায়া লাগলো ছেলেগুলো ইউরোপিয়ান ধাচে পরিতুষ্ট হচ্ছে। যে কারনে আধুনিক জাহেলিয়াতের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে। আর সামান্য দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাতকে নষ্ট করছে। এর জন্য আমাদের সমাজ ব্যবস্হাই যে শুধু দায়ী তা নয়; আমাদের আলেম সমাজ! দুনিয়াবি শিক্ষার কুফল এবং আসমানী ইলমের সুফল জনন্যে প্রচার-প্রসার ও মানুষের চিন্তার মধ্যে প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলস্বরূপ বর্তমান প্রজন্মের সফলতা ও ব্যর্থতা আমাদের সামনে স্পষ্ট। অথচ আখিরাতের সফলতায় হলো মানবজীবনের মূল সফলতা।
ফিরে আসি আগের কথায়, বেচারা পা লম্বা করে টান হয়ে ঘুমাচ্ছিলেন, আল্লাহর শোকর! ছেলেটার সঙ্গে তার নাসিকাও ঘুমাচ্ছিলো। কিন্তু অনেকে আছে ঘুমান ঠিকই খুবই ভালো করেই ঘুমান, আর ওনার নাসিকা জেগে জেগে সবাইকে পাহারা দেয়।
আমি শত চেষ্টা করেও নিজেকে ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করাতে পরছিলাম না! কিন্তু হঠাৎ করে গুমটা গুমটা ভাব ও সফরের ক্লান্তিতে কখন যে চোখ দু'টো নেমে এলে টেরই পেলামনা। যখন ঘুম ভাঙলো তখন পোড়ামাটি এসে পড়েছে। রাতের বেলাভুমিতে বড়ইতলি হয়ে উঠেছিলো আলো ঝলমলে এক পর্যটন কেন্দ্র কিন্তু নেই কোনো পর্যটক! নেই কোনো ব্যস্ততা। আরও আজনবী ব্যাপার হলো নেই কোনো শব্দ কিংবা বায়ু দুষন! আর পুলিশ নামের হায়েনাগুলোও খুবই কম। আর বড়ইতলি-শহরও যেনো তার যৌবনকে বার্ধ্যকের ছোঁয়ায় হারানোর উপক্রম হয়েছে। আসল ব্যাপারটা হলো প্রত্যেক 'চিজ'-এর আছে মুনাসিব ওয়াক্ত।
বড়ইতলি শহর মানেই! কর্মজীবি মানুষের কর্মব্যস্তা। প্রত্যঃসমীরনেও 'গাড়ি' নামক জন্তুটির শব্দ ও বায়ুদূষণ থেকে যেনো রেহাই নেই কারো। ঠিক যেনো বড়ইতলি শহর ভোগবাদী ও বস্তুবাদীদের বুনা পিঞ্জরা! আর লোকগুলো হলো পিঞ্জরায় বন্দী পাখি। কিন্তু আজকের বড়ইতলি-শহর যেনো বিরানভূমি। না আছে সরগোল না আছে কলাহল।
তবে মাঝে মাঝে কিছু লোক দেখা যাচ্ছে যারা 'আজিমুন-বতন' বড় পেটওয়ালা, তাদের 'কবরের' মাটি ছাড়া কখনো পেট ভরবে না! ঠিক যেনো 'হালমিম মাজিদ' আরো চাই আরো চাই! আবার এমনও কিছু অসহায় মানুষ আছে, যাদেরকে পেটের 'গেজা' ও লকডাউনের 'ধকল' নশ্যজাগরণে বাধ্য করেছে।
এরি মাঝে আরও কয়েকবার কথা হয়েছে, আমরা কোথায় আর কতক্ষণ লাগবে।
কথ্য ভাষায় আছে 'বিপদে রাস্তা আগায় না' হঠাৎ কি যেনো যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়ায় ইঞ্জিন আর পিকাব নেয় না! এই ভাবে কোনো রকমে উল্টামারা, মাষ্টারপাড়া পার হয়ে বোয়ালধরি এলাকায় প্রবেশ করে, ড্রাইভার বললেন ইঞ্জিনে সমস্যা গাড়ি আর সামনে যাবেনা!
ব্যস, কথাটা কত সস্তায় বলে দিলেন! অথচ আমাদের 'শিউলি হাট' পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো। ড্রাইভারের উচিত ছিলো আমাদের পৌঁছানোর ব্যবস্হা করে দেওয়া, কিন্তু বেচারার কথার...। আমিও 'ডানপিটে' রাহাখরচ উসুল করে নিয়ে ছেড়ে দিতাম, কিন্তু বলতে 'লজ্জা' হয় আমাদের দেশে কিছু লোক আছে যাদের বিমার-রোগ হলো হুজুর-মাওলানা দেখলেই তাদের ললাটে ভাজ পরে। আল্লাহ! আমাদের সবাইকে হেফাজত করুক, আর যে আমিন বলবে তাকেও যেনো মাহরুম না করে।
আরে ভাই, আপনিই বলেন? আপনি হলে কি করতেন? এমনিতেই লগডাউনের বাজার! আবার যদি ড্রাইভার 'বলে' আপনারা চলে যান! কেমন লাগত ঐ সময়। ভদ্রতার খাতিরে হলেও ওখান থেকে বোয়ালধরি যাওয়ার রাহাখরচ ফেরত দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিতো। কিন্তু ড্রাইভার ব্যাটা...।
একটা পিকাব আসলো ইশারা করায় থামলো। ভাড়া চাইলো পাঁচগুন! সাহস করে যদি দশগুন চাইতো, তা-ও পেয়ে যেতে! এই তো আমাদের হালত, আবার আমরা মুসলিম জাতি। অন্যের বিপদে এগিয়ে আসি; বরং এমন গূঢ় লাগায়, না থাক বলতে আমারই লজ্জা লাগে! বোয়ালধরি ইস্টার্নে আমরা নামলাম, তখন সোয়া তিনটা বাজে; সঙ্গে আরো দু'জন ছিলো। তারাও হয়ত দুনিয়াকে সুন্দর করে সাজিয়ে জীবনকে আড়ম্বর উপভোগ করার জন্য কয়েকঘন্টার সফরসঙ্গী হয়েছিলো।
রাতভারী হয়ে এসেছে, অন্ধকার আরও গাঢ় হয়েছে কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই, সবাই ঘুমের মধ্যে বিভোর। পক্কীকুল ও প্রানীকুল হয়ত জেগে জেগে খালিক-মালিকের শুকরিয়া, তাজবিহ পাঠে মগ্ন। সংখ্যায় দূর্বল হলেও হয়তো দু'একজন আল্লাহর! পেয়ারা বান্দা শেষরাতের 'রাত্রিজল' থেকে আগামীকে আলোকিত-উজ্জ্বল সাদা-শুভ্রতা শান্তি-প্রশান্তি সবুজ-সজীবতায় ভরপুর করার জন্য জায়নামাজ, তেলাওয়াতে, জিকির-আসকার দোআ-এস্তেগফারে নিমগ্ন।
মা আর আমি বোনের বাড়ি থেকে 'মাত্র' বিশ মিনিটের দূরত্বে 'রাত্রিচর' তিনটি মিশুক আসলো, একজনের সাথে কথা হলো অবশ্য নেহ্য ভাড়া চাইলেন। ভালো লাগলো! আমরা উঠলাম। আর একটু পরেই আমরা বোনের বাড়ি।
যখন ছোট ছিলাম, বুঝতামনা যখন বড় হলাম তখন একটু বুঝতাম কিন্তু উপলব্ধি করতে পারিনি দুটো কারনে-
এক, 'ইলমেনাফে-উপকরীজ্ঞান' না থাকা। দুই, কাছের কেউ ইন্তেকাল না করার কারণে
জানতাম না, মৃতুবাড়ির অভ্যন্তরীন ব্যাপার কেমন হয়।
যাইহোক, আসলাম কয়েকদিন অবস্থান করলাম। কাছ থেকে দেখলাম, যা বুঝার খুবই ভালো করে বুঝলাম। নিজের জন্য শিক্ষা নিলাম। আর শকতা ও সমর্পিত হৃদয়ে দো'আ করলাম 'আল্লাহ জেনে কোনো শত্রুরও এমন দিন না করে'। আমরা যাদের জন্য এতোকিছু করি আসলে কেউ আমার না! আমার যা সামানাপত্র আমাকেই গুছাতে হবে। আমি যা সঞ্চয় করব তাই পাবো কিঞ্চিৎ বেশিও না কমও না। ভালো-মন্দের হিসাব আমাকেই দিতে হবে। আমার কেউ সাথী হবেনা। আর আল্লাহ তা'য়ালা! মুমিন বান্দাকে সাবধান করে! কুরআন-এর আয়াতে আয়াতে উল্লেখ করেছেন, কাকে মহব্বত করতে হবে, কিভাবে মহববত করতে হবে, কতটুকু পরিমান করতে হবে তাও উল্লেখ করেছেন। এখানে শুধু দুটি আয়াতই উল্লেখ করলাম। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় করো এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ করো, আল্লাহ! তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর! বিধান আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ! ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না। (সূরা তওবা ৯ঃ২৪)
আল্লাহ তা'য়ালা! অন্যত্রে বলেন-
যারা কুফরি করে, তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর! সামনে কখনো কাজে আসবে না। আর তারাই হচ্ছে দোজখের ইন্ধন। (আল ইমরান ৩ঃ৫২)
এখানে লিখার ইচ্ছে আরো ছিলো কিন্তু আদীব হুজুরের ভাষায়-
এখানে কলম ও কলবের প্রবাহ জারী ছিলো। আল্লাহর শোকর লিখার ইচ্ছে উপর না লিখার ইচ্ছে বিজয় হয়েছে, হয়তো নাহলে কাছের লোকেরাও সমালোচনা শুরু করত।
পরিশেষে, শুধু একটি কথায় বলি প্রত্যেকটা মৃতু হলো বেদনার। তবে এখানেও আছে কিছু না কিছু সুখের ছিটাফোঁটা! আরও আছে জীবনগ্রন্হ সমৃদ্ধ করার মতো অনেক কাঁচমাল। যা কেবলমাত্র মুমিনরাই গ্রহন করে থাকে।
পহেলা মহররম, ১৪৪৩ হিজরী
আল_ক্বায়েদা_মুজাহিদ
জোহরের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরলাম। দেখি মোবাইলটা বাজতেছে, সবুজ বাটন চাপতেই ওপার থেকে কান্নার আওয়াজ! ভিতরটা দুমড়ে-মুচড়ে উঠল! ভয় লাগল,যদি এমন হয়।
যা ভাবলাম তাই বললো, তোর 'দুলাভাই' আর নাই! আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম।
মনে হচ্ছিলে পায়ের নিচে পাটাতন সরে যাচ্ছে। মা বললো, কি হয়েছে? নিজেকে সামলিয়ে নিলাম। তেমন কিছু না, 'দুলাভাই' ভালোই আছে। এখানে দুলাভাইয়ের সঙ্গে ভালোই আছে কথাটি শুনতে কেমন যেনো শোনায়। আরো ভালো মানুষ! এখন সম্পাদনার সময় নয়, সবকিছুরই রয়েছে নিজস্ব সময় ও মুনাসিব ওয়াক্ত। বাড়ির সবাইকে তো জানাতে হবে, নিজেকে শক্ত হতে হবে, কথা এবং চেহারার অবয়বে কেউ যেনো কিছুই বুঝতে না পারে।
মায়ের গোসল ও নামাজ শেষ। দস্তরখানায় সবাইকে বসালাম, খানা শেষে সবাইকে বসিয়ে বল্লাম। মা তো কেঁদে ফেললেন এবং অনেকটা পাগলের মতো হয়ে বারান্দায় হাঁটাচলা শুরু করেন। মাকে সান্ত্বনা দিয়ে পাশে বসে দুলাভাইয়ের ছিফত-গুন বর্ণনা শুরু করলাম কিন্তু কে শোনে কার কথা! এরি মধ্যে পাড়ার সকল মহিলাদের জটলা পেকে বসলো। একেকজনের একেকরকম মন্তব্য। কেউ বলে জামাইটা ভালো ছিলো। আবার কেউ বলে সবার কথা চিন্তা করত। আবার কেউ বলে, থাক সবার কথা লিখতে গেলো, তাদের আর আমাদের পার্থক্য কি থাকলো?
এক্ষেত্রে আমার সারগর্ব মন্তব্য হলো-
আমাদের সবার নাসিকা ও জিহ্বাকে সংযমে রাখা দরকার। আর তানাহলে নিজেদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে! একজন মুর্দা বা 'বরযোখ'-এর যাত্রীর কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে তিনি যে পথে যাত্রা শুরু করেছেন, আমাকেও দু'দিন আগেপিছে সেই পথ বায়ে যেতে হবে। এই ভয়ে তো আমাদের কণ্ঠনালী শুকিয়ে আসবে, লোমগুচছ দাঁড়িয়ে যাবে, চক্ষু বন্যা ডাকবে! অথচ আমরা কিনা গীবতা-শেকায়েত নিয়ে ব্যস্ত।
যাহোক, আমি কিন্তু বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললাম, আমাদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। কেননা 'মউতের-আজাল' আমাকেও ধরবে। আমিও এই অসহায় অবস্থায় নিপতিত হবে। আমার দেহকে মৃত্তিকা গ্রাস করবে। 'যদি দুনিয়াতে কুরআন সুন্নাহভিত্তিক জীবন অতিবাহিত করে থাকি, তাহলে কবর হবে জান্নাতের ফুলবাগান; আর তানা হলে হবে জাহান্নামের গর্ত'। আর আমরা কিন্ত ভুলে যাই 'বিলকুল' ভুলে যাই।
অনেকজনের বিভিন্ন মত। সিদ্ধান্ত হলো মা আর আমি যাবো। কেননা আমাদের পরিবারের অনেকেই বড়ইতলিতে থাকে। এখানে একটা কথা আগেই বলে রাখি, তাগুতের যাদু-টোনা ও মাকড়সার জাল থেকে বাঁচার জন্য জায়গার নামগুলো কুনিয়াত উল্লেখ করলাম। আর বাকি যাদের আসার কথা ছিলো, তারা সবাই না আসার কারণ...। আবার কি বলবো, সদাশয় সরকার লগডাউন দিয়ে রেখেছে। দূর পাল্লার কোনো যাত্রীবাহী গাড়ি চলবেনা। এটাও আমাদের দু'হাতের কামাই! স্হির হলো প্রাইভেট কারে যাবো। রাত আটটায় কাউন্টারে আসলাম। কাউন্টার থেকে সাড়ে আটটা রওনা দিয়ে আমাদের উপর যেনো দয়া করল। রাতের আকাশ কালো চাদরের আবরণে ঢাকা। জানালা দিয়ে দূর আকাশে তাকালে হয়তো 'সুখতারা' দেখা যেতে কিন্তু ইচ্ছে ছিলো না। মাঝে মাঝে মালবাহী ট্রাকগুলো দেখা যাচ্ছে, ছুটে চলেছে আপন গন্তব্যে। এমনি করে আমারও একেকটা দিন ছুটে চলেছে অতিত মুখী মহাসাগরের স্রোতের টানে। কিন্তু আমি কি পারতেছি, আমার ঐ দিনটিকে আমলের কালি দিয়ে সাদা-শুভ্র সবুজ-সতেজ করে ধরে রাখতে।
জানালা খোলা ছিলো, বাহিরে তাকালে দেখা যায় কালো চাদরে যেনো সব ঢেকে রেখেছে। মাঝেমধ্যে দু'একটি আলো মানে প্রদীপ কিন্তু অতি আধুনিকরনের কারণে বলা যায় বিদুতিক বাল্ব! যেনো আমার মনে আশার সঞ্চালন সৃষ্টি করে। ঠিক যেনো তরবিয়ত দেওয়া হচ্ছে, বান্দা জাহেলিয়াতের 'জুলমাত-অন্ধকারের' মধ্যে তোমাকে কুরআন এবং সুন্নাহের আলো দিয়ে পথ চলতে হবে!
এই কল্পনার রাজ্যে কখন যে কাশবাগান পার হয়ে এসেছি টেরই পেলামনা, দেখলাম মাফিয়া-পুলিশ গাড়ি থামানোর জন্য ইসারা করলেন। সবার 'টনক' নড়ে গেলো। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, এমন একটি দেশ পাবে নাকো কোথাও! যে দেশের গ্রামপুলিশ থেকে সরকার মহাশয় পর্যন্ত প্রত্যকেই 'জেব-পকেট' ভারী করার কাজে মহাব্যস্ত।
যাহোক, দেখলাম আমাদের সহ অন্যান্য গাড়ি থেকে 'উৎকোচ' বাবদ দু'তিনটি করে 'মুজিব' মার্কা লাল নোট নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে!। মনে হচ্ছিলো লজ্জায় আমারই নাসিকা কাটা পড়ল। সহযাত্রীদের মধ্যে থেকে তো একজন বলেই ফেললেন শালারা...নাহ থাক! কলমকে সংযমে রাখলাম। এখানে যে চিত্রকল্পটি অঙ্কন করলাম, যার মাথা আছে তার বুঝার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট।
তবে আমাদের ড্রাইভার বেশি সেয়ানা হওয়াই ঝামেলা পোহাতে হয়েছে বেশি এবং বিলম্বে ছেড়েছে। মনে হচ্ছিলো, "ঠিক যেনো ভুনা করা কাবাব তাদের সামনে উপবেশন করা হয়েছে"।
আমরা আবারও দ্বিতীয়বার বড়ইতলির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। সামনে কিছুদুর অগ্রসর হওয়ার পর ড্রাইভার যে আনাড়ি-সেয়ানা তা বুঝালেন। হাইওয়ে থেকে তিনি শাখা রাস্তায় নেমে পড়লেন এবং বললেন ঝিলাম নদী পর্যন্ত রাস্তা পরিস্কার শুধু একজায়গা ব্যতীতো। একটু আগে বাড়তেই দেখা গেলো 'টোল-ভিক্ষা' নেওয়ার জন্য ভদ্রলোকেরা চেয়ার-টেবিল নিয়ে আছেন।
এখানে ফকির ও ভদ্রলোকদের মধ্যে পার্থক্য শুধু এতোটুকু ফকিরকে যাদের ইচ্ছা তারা দান করেন, আর এখানে ভদ্রলোকেরা টোলের আবরণে গাড়িওয়ালাদের ভিক্ষা দিতে বাধ্য করেন। শুধুএখানে না! বামপন্থী হাতের কালো 'আচর' রাষ্ট্রের শিরা-উপশিরায় পৌঁছে গেছে।
যাহোক, গাড়ি সামনে ছুটে চলছে। কিছুক্ষন পর মা বললো, আমারা কোথায়? বললাম বকুল তলায়। এরিমাঝে কয়েকজনের সঙ্গে ফোনো কথা হলো, আমরা কোথায় আর কতক্ষণ লাগবে ইত্যাদি। কখনো কাছের মানুষ কতদূরে, আবার কখনো দূরের মানুষ কত কাছে। এই দূরের এবং কাছের রহস্যটা এখনো রহস্যয় রয়ে গেলো।
ওহ বলায় হয়নি! আমার পিছনের তিন সিটে কাউন্টারওয়ালা ভদ্রলোক পাঁচজনকে বসিয়েছে। আমাদেরকেও চারজনকে বসিয়েছেন। আরো বলা হয়েছিলো প্রাইভেট কার এসি! এমনি থেকে তো শ্রাবন মাসের গরম, লম্বাসময় সফর আবার সিট নিয়ে ঝামেলা। হয়ত সীটের জায়গা নিয়ে ছোটোমোটো একটা কলহ লেগে যেতে আল্লাহ! হেফাজত করেছেন। পিছনের সীটের ভদ্রমহিলা বমি করে ফেললেন। আমি পানি ফু দিয়ে দেলাম দাওয়াতের নিয়তে। আর বললাম বিসমিল্লাহ বলে তিনবারে পান করবেন শেষে আলহামদুলিল্লাহ! বলবেন। জানিনা তাদের হৃদয়দর্পনে কতটুকু আচর কেটেছে দো'আ করি আল্লাহ! যেনো সকল মুসলিমানের ঈমান-আকিদা আমান ও হেফজ করো।
আমার বামপাশের ছেলেটা ভদ্র। আসলে ভদ্রকে তো ভদ্রই বলতে হবে তাইনা? আর তানা হলে হয়ত কলহ লেগে যেতো। বেচারা 'এসারমেন্টের' জন্য বড়ই তলিতে যাচ্ছে। মায়া লাগলো ছেলেগুলো ইউরোপিয়ান ধাচে পরিতুষ্ট হচ্ছে। যে কারনে আধুনিক জাহেলিয়াতের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে। আর সামান্য দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাতকে নষ্ট করছে। এর জন্য আমাদের সমাজ ব্যবস্হাই যে শুধু দায়ী তা নয়; আমাদের আলেম সমাজ! দুনিয়াবি শিক্ষার কুফল এবং আসমানী ইলমের সুফল জনন্যে প্রচার-প্রসার ও মানুষের চিন্তার মধ্যে প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলস্বরূপ বর্তমান প্রজন্মের সফলতা ও ব্যর্থতা আমাদের সামনে স্পষ্ট। অথচ আখিরাতের সফলতায় হলো মানবজীবনের মূল সফলতা।
ফিরে আসি আগের কথায়, বেচারা পা লম্বা করে টান হয়ে ঘুমাচ্ছিলেন, আল্লাহর শোকর! ছেলেটার সঙ্গে তার নাসিকাও ঘুমাচ্ছিলো। কিন্তু অনেকে আছে ঘুমান ঠিকই খুবই ভালো করেই ঘুমান, আর ওনার নাসিকা জেগে জেগে সবাইকে পাহারা দেয়।
আমি শত চেষ্টা করেও নিজেকে ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করাতে পরছিলাম না! কিন্তু হঠাৎ করে গুমটা গুমটা ভাব ও সফরের ক্লান্তিতে কখন যে চোখ দু'টো নেমে এলে টেরই পেলামনা। যখন ঘুম ভাঙলো তখন পোড়ামাটি এসে পড়েছে। রাতের বেলাভুমিতে বড়ইতলি হয়ে উঠেছিলো আলো ঝলমলে এক পর্যটন কেন্দ্র কিন্তু নেই কোনো পর্যটক! নেই কোনো ব্যস্ততা। আরও আজনবী ব্যাপার হলো নেই কোনো শব্দ কিংবা বায়ু দুষন! আর পুলিশ নামের হায়েনাগুলোও খুবই কম। আর বড়ইতলি-শহরও যেনো তার যৌবনকে বার্ধ্যকের ছোঁয়ায় হারানোর উপক্রম হয়েছে। আসল ব্যাপারটা হলো প্রত্যেক 'চিজ'-এর আছে মুনাসিব ওয়াক্ত।
বড়ইতলি শহর মানেই! কর্মজীবি মানুষের কর্মব্যস্তা। প্রত্যঃসমীরনেও 'গাড়ি' নামক জন্তুটির শব্দ ও বায়ুদূষণ থেকে যেনো রেহাই নেই কারো। ঠিক যেনো বড়ইতলি শহর ভোগবাদী ও বস্তুবাদীদের বুনা পিঞ্জরা! আর লোকগুলো হলো পিঞ্জরায় বন্দী পাখি। কিন্তু আজকের বড়ইতলি-শহর যেনো বিরানভূমি। না আছে সরগোল না আছে কলাহল।
তবে মাঝে মাঝে কিছু লোক দেখা যাচ্ছে যারা 'আজিমুন-বতন' বড় পেটওয়ালা, তাদের 'কবরের' মাটি ছাড়া কখনো পেট ভরবে না! ঠিক যেনো 'হালমিম মাজিদ' আরো চাই আরো চাই! আবার এমনও কিছু অসহায় মানুষ আছে, যাদেরকে পেটের 'গেজা' ও লকডাউনের 'ধকল' নশ্যজাগরণে বাধ্য করেছে।
এরি মাঝে আরও কয়েকবার কথা হয়েছে, আমরা কোথায় আর কতক্ষণ লাগবে।
কথ্য ভাষায় আছে 'বিপদে রাস্তা আগায় না' হঠাৎ কি যেনো যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়ায় ইঞ্জিন আর পিকাব নেয় না! এই ভাবে কোনো রকমে উল্টামারা, মাষ্টারপাড়া পার হয়ে বোয়ালধরি এলাকায় প্রবেশ করে, ড্রাইভার বললেন ইঞ্জিনে সমস্যা গাড়ি আর সামনে যাবেনা!
ব্যস, কথাটা কত সস্তায় বলে দিলেন! অথচ আমাদের 'শিউলি হাট' পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো। ড্রাইভারের উচিত ছিলো আমাদের পৌঁছানোর ব্যবস্হা করে দেওয়া, কিন্তু বেচারার কথার...। আমিও 'ডানপিটে' রাহাখরচ উসুল করে নিয়ে ছেড়ে দিতাম, কিন্তু বলতে 'লজ্জা' হয় আমাদের দেশে কিছু লোক আছে যাদের বিমার-রোগ হলো হুজুর-মাওলানা দেখলেই তাদের ললাটে ভাজ পরে। আল্লাহ! আমাদের সবাইকে হেফাজত করুক, আর যে আমিন বলবে তাকেও যেনো মাহরুম না করে।
আরে ভাই, আপনিই বলেন? আপনি হলে কি করতেন? এমনিতেই লগডাউনের বাজার! আবার যদি ড্রাইভার 'বলে' আপনারা চলে যান! কেমন লাগত ঐ সময়। ভদ্রতার খাতিরে হলেও ওখান থেকে বোয়ালধরি যাওয়ার রাহাখরচ ফেরত দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিতো। কিন্তু ড্রাইভার ব্যাটা...।
একটা পিকাব আসলো ইশারা করায় থামলো। ভাড়া চাইলো পাঁচগুন! সাহস করে যদি দশগুন চাইতো, তা-ও পেয়ে যেতে! এই তো আমাদের হালত, আবার আমরা মুসলিম জাতি। অন্যের বিপদে এগিয়ে আসি; বরং এমন গূঢ় লাগায়, না থাক বলতে আমারই লজ্জা লাগে! বোয়ালধরি ইস্টার্নে আমরা নামলাম, তখন সোয়া তিনটা বাজে; সঙ্গে আরো দু'জন ছিলো। তারাও হয়ত দুনিয়াকে সুন্দর করে সাজিয়ে জীবনকে আড়ম্বর উপভোগ করার জন্য কয়েকঘন্টার সফরসঙ্গী হয়েছিলো।
রাতভারী হয়ে এসেছে, অন্ধকার আরও গাঢ় হয়েছে কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই, সবাই ঘুমের মধ্যে বিভোর। পক্কীকুল ও প্রানীকুল হয়ত জেগে জেগে খালিক-মালিকের শুকরিয়া, তাজবিহ পাঠে মগ্ন। সংখ্যায় দূর্বল হলেও হয়তো দু'একজন আল্লাহর! পেয়ারা বান্দা শেষরাতের 'রাত্রিজল' থেকে আগামীকে আলোকিত-উজ্জ্বল সাদা-শুভ্রতা শান্তি-প্রশান্তি সবুজ-সজীবতায় ভরপুর করার জন্য জায়নামাজ, তেলাওয়াতে, জিকির-আসকার দোআ-এস্তেগফারে নিমগ্ন।
মা আর আমি বোনের বাড়ি থেকে 'মাত্র' বিশ মিনিটের দূরত্বে 'রাত্রিচর' তিনটি মিশুক আসলো, একজনের সাথে কথা হলো অবশ্য নেহ্য ভাড়া চাইলেন। ভালো লাগলো! আমরা উঠলাম। আর একটু পরেই আমরা বোনের বাড়ি।
যখন ছোট ছিলাম, বুঝতামনা যখন বড় হলাম তখন একটু বুঝতাম কিন্তু উপলব্ধি করতে পারিনি দুটো কারনে-
এক, 'ইলমেনাফে-উপকরীজ্ঞান' না থাকা। দুই, কাছের কেউ ইন্তেকাল না করার কারণে
জানতাম না, মৃতুবাড়ির অভ্যন্তরীন ব্যাপার কেমন হয়।
যাইহোক, আসলাম কয়েকদিন অবস্থান করলাম। কাছ থেকে দেখলাম, যা বুঝার খুবই ভালো করে বুঝলাম। নিজের জন্য শিক্ষা নিলাম। আর শকতা ও সমর্পিত হৃদয়ে দো'আ করলাম 'আল্লাহ জেনে কোনো শত্রুরও এমন দিন না করে'। আমরা যাদের জন্য এতোকিছু করি আসলে কেউ আমার না! আমার যা সামানাপত্র আমাকেই গুছাতে হবে। আমি যা সঞ্চয় করব তাই পাবো কিঞ্চিৎ বেশিও না কমও না। ভালো-মন্দের হিসাব আমাকেই দিতে হবে। আমার কেউ সাথী হবেনা। আর আল্লাহ তা'য়ালা! মুমিন বান্দাকে সাবধান করে! কুরআন-এর আয়াতে আয়াতে উল্লেখ করেছেন, কাকে মহব্বত করতে হবে, কিভাবে মহববত করতে হবে, কতটুকু পরিমান করতে হবে তাও উল্লেখ করেছেন। এখানে শুধু দুটি আয়াতই উল্লেখ করলাম। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় করো এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ করো, আল্লাহ! তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর! বিধান আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ! ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না। (সূরা তওবা ৯ঃ২৪)
আল্লাহ তা'য়ালা! অন্যত্রে বলেন-
যারা কুফরি করে, তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর! সামনে কখনো কাজে আসবে না। আর তারাই হচ্ছে দোজখের ইন্ধন। (আল ইমরান ৩ঃ৫২)
এখানে লিখার ইচ্ছে আরো ছিলো কিন্তু আদীব হুজুরের ভাষায়-
এখানে কলম ও কলবের প্রবাহ জারী ছিলো। আল্লাহর শোকর লিখার ইচ্ছে উপর না লিখার ইচ্ছে বিজয় হয়েছে, হয়তো নাহলে কাছের লোকেরাও সমালোচনা শুরু করত।
পরিশেষে, শুধু একটি কথায় বলি প্রত্যেকটা মৃতু হলো বেদনার। তবে এখানেও আছে কিছু না কিছু সুখের ছিটাফোঁটা! আরও আছে জীবনগ্রন্হ সমৃদ্ধ করার মতো অনেক কাঁচমাল। যা কেবলমাত্র মুমিনরাই গ্রহন করে থাকে।
পহেলা মহররম, ১৪৪৩ হিজরী
Comment