তোমার ভাবনাটুকু হোক সঠিক পথের ভিত্তিতে
প্রিয় যুবক ভাই!
তুমি জানো! কিছু অন্ধকার মানুষকে আতঙ্কিত করে আবার কিছু অন্ধকার আকর্ষণ করে। আবদ্ধ করে অবোধ্য অনতিক্রম্য লালসা আর কৌতুহলের জালে। গুটিগুটি পাঁয়ে তন্ময় মন্ত্রমুগ্ধ দ্রষ্টা যখন কিনারায় এসে দাঁড়ায় অতল গহ্বর তখন গ্রাস করে নেয়। অনিষ্ট দৃশ্য সৌন্দর্য যখন স্বপ্নীল বাণী ছড়ায় অবাধ্যতা তখন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। ঠিক তখনই মনে এই বাসা বাঁধে অসত্তাই আমার আসল সত্তা। রঙিন কাগজে মোড়ানো অপ্রয়োজনীয় জিনিসই আমার আসল জিনিস।
সত্য মিথ্যে যাঁচাইয়ের সুবোধ তার টুকরীপড়া মাথা থেকে বিদায় নেয়। ভালো নষ্ট বুঝার আকল তার বাড়ন্ত যৌবন থেকে এস্তেফাদা নেয়। সব মিথ্যেই সত্য আর সব সত্যই কিছু কিছু সত্য এমন মহা ধারণার জন্ম দেয়। শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই, সময়ের মূল্য বলতে কিছু আছে এমন কোনো উটবট জিনিস নেই। পাপের প্রায়শ্চিত্ত দিতে হবে এমনও কোনো কথা জীবন অভিধানে জায়গা নেই।
এক নিশ্বাসে কতগুলো সত্য বলে ফেলতাম তাই না? এজন্য তুমি যুবক ভাবছো-লোকটা এত কথা বলে! আমাদের নিয়ে এত মজা করে! এত হাসিঠাট্টা উনি কোথায় পায়? পাপের সাগরে আকর্ষণের মোহনায় আমাদের এভাবে ভাসিয়ে দিচ্ছে? এটা কোনো কথা? এটা কোনো যুক্তি? উনার বিবেকবুদ্ধি বলতে কিচ্ছু নেই। আবেগ দিয়ে সব দিয়ে কিছু যায়?
শুধু বাস্তবতা বাস্তবতা বলে চিল্লায়। কুরআন হাদিসের স্বরে ধমকায়। মুখে একফোঁটাও রস নেই। কথার ভাঁজে নমনীয়তা আর কোমলতার লেশমাত্রা নেই। বড় বড় নিষেধ আর ছোট ছোট আদেশে জীবনটাকে বিষাদময় করে তুলেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাসটুকু ফেলতে পারিনা। খাইতে গেলে শরীয়ত বসতে গেলে নসিহত ঘুমাইতে গেলে সুন্নাত। এক আজিব গরিময় লোক!
জিহাদই নাকি দ্বীনের পরশ পাথর! ইদাদই নাকি রিযিকের শক্ত হাতল! শাহাদাতই নাকি স্বার্থক জীবনের আসল সোপান। কই তিনি এগুলো পান? আর কেউ তো বলে না! কারো কাছ থেকে তো শুনিনা! আমাদের আল্লামারা কি কাণ্ডজ্ঞানহীন? কিতাবের পাতা আমরাও পড়েছি। দ্বীনের ঝান্ডা আমরাও ধরেছি। পথের কোনো শেষ নেই। মতের কোনো ভিত্তি নেই। যেকোনো পথ দিয়েই জান্নাতে যাওয়া যায়।
চাই সেটা পীরের পাঁ ধরে হোক বা কান। মসজিদ মসজিদ ঘুরে হোক বা ময়দান থেকে পিছুটান। হলেই হলো-আল্লাহ দয়ার সাগর। নিশ্চিত তিনি ক্ষমা করে দিবেন। কালেমার মাহাত্ম্য বুঝি আর না বুঝি। তাওহীদের হাকীকত মানতে পারি আর না পারি। জিহাদের ঝান্ডা ধরতে পারি আর না পারি। ভুল মানুষের দ্বারাই হবে। এত্ত কথা শুনতে চাই না। শান্তির ধর্মে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাই না। অরাজকতা করে দেশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে চাই না।
দেশকে ভালোবাসি। দেশের মানুষকে মহব্বত করি। হিন্দু মুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই। পূজামন্ডল আর মসজিদের জিলাপির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সবই বানায় কারিগর। সবই সৃষ্টির সেরা। গুণগত মান সবারই সমান। আমি মুসলিম আর সে হিন্দু। লিঙ্গের মাঝে নেই কোনো আলাদা আকার। পোশাকের মাঝে নেই কোনো চিহ্ন বিশেষ। তাহলে কেন এত মত প্রকারান্ত?
জ্বী ভাই আমার!
তোমার এই কথাগুলো শুনার জন্যই তোমার সাথে এত দিনের সম্পর্ক। তোমার তিক্ত রসের হাঁড়িটা দেখার জন্যই এই ক্ষণের অপেক্ষায় আছি। জানি আবেগাপ্লুত হয়ে বেশি দূর যাওয়া যায় না। গুরুজনদের কথা-তোমার হৃদয় রাজ্যে ভূমিকম্পন না হলে সেটা কোন উর্বর ভূমিই না। তুমিও যদি আমার কথার পৃষ্ঠে কথা বলতে না পারো সেটাও কোনো মূল্যবান কথা না।
যুবক ভাই! মুসলিম কাকে বলে তুমি জানো? ধর্মীয় অনুশাসন পুঙ্খানো পুঙ্খানো মেনে চলেন এমন প্রত্যেকজন ব্যক্তিকে বলে। নফসে আম্মারায় লাগাম লাগিয়ে আনুগত্যের সামনে আত্মসমর্পণ করে এমন প্রতিজন ব্যক্তিকে বলে। দ্বীনে ইলাহির তরে উপার্জিত মুঠো মুঠো সম্পদ কাতরে অকারতে বিলিয়ে দেন এমন প্রতিজন সালিহ ব্যক্তিকে বলে। আল্লাহর দেয়া যৌবনকে দ্বীন কায়েমের পথে কুরবান করে দেন এমন প্রতিজন বীরকে বলে।
সিংহ পুরুষ উমর পারতেন হাজারো প্রশ্ন ছুঁড়ে দ্বীনকে কোকোপাত করতে। এমন অসম জ্ঞান তার থলিতে ছিলো। তার ঝুড়িতে বাপ-দাদাদের উত্তরাধিকারী সমালোচনার তথ্যনথি রাখা ছিলো। তিনি বুঝতে পেরেছেন ইসলাম পাড়ায় এ প্রশ্নের কোনো ঠায় নেই। অতীত ইসলামে জায়গা নেই। কি আছে কি নেই সেটাই আগে বলো। ইসলাম কতটুকু দিয়েছে কতটুকু নিয়েছে সেটাই তুলে ধরো। এটাই জানার বিষয়। ফায়সালা দিবে কুরআন সিদ্ধান্ত নিবে অঙ্গ-পতঙ্গ। এ রায়ে অন্তরের অবস্থা ভালো না খাবার তার নামই ইমান।
আঁধারের জাল বুনলেওয়ালা উমর ইমানের সামনে নিমিষেই নত হয়ে গেলেন। যাকে আদেশ তো দূরের কথা আ শব্দটা উচ্চারণ করা যেতো না। সেই উমর বোনের কথায় গোসল করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। অহংকারকে মাটিচাপা দিয়ে সহজ সরল বোকা বনে গেলেন। ইমান গ্রহণ করতে যা করার তাই করবো। এ যেন মুহূর্তের মধ্যেই নিকষ কালো আকাশে চাঁদের উদয়ন। এ যেন মাস শুরু হওয়ার আগেই চাঁদে আলোর বিচ্ছুরণ।
তাহলে এবার বুঝুন! তোমার আর তাঁদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায় ফারাক কতটুকু? তোমার আর তাঁদের কলবি মিনারায় মানার মাদ্দা কতটুকু? বিস্তর ফারাক। জাহিলিয়্যাতের পুরো অস্থির ও নাজুক সময়টাতে বরেণ্য নেতাদের কাছে ধর্মের দাওয়াত পৌঁছাতে তাঁদের যতটুকু না কষ্ট হয়েছে তারচে বেশি অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেছেন মুসলিম লেবাসধারী মুনাফিকদের সেচ্ছাচারিতার কারণে। তাদের নকশা দিয়ে আমাদের ভিত্তি যেন স্থাপন না হয়। ওগো রব! আমরা তোমার কাছে পানাহ চাই! এই নীল দরীয়ায় আমাদের নিক্ষেপ করো না।
প্রিয় ভাই আমার!
তোমার ভাবনাটুকু যেন তোমার শরীরকে অশ্লীল ব্যাকটেরিয়ায় ছেয়ে না দেয়। মত প্রকারান্তর ফাক ফোকরের অজুহাত দেখিয়ে ফরসা দিলটাকে যেন কুৎসিত করে না দেয়। ভাবনাটুকু থাকুক সৎ ও সচ্ছল। আকষর্ণটুকু হোক সতেজ ও প্রাণবন্ত। দুনিয়ার অনতিক্রম্য লালসাটুকু হোক মলিন ও ঝাপসা। তুমি হয়ে উঠো একজন ধীরচেতা স্বাধীন সুপুরুষ। রবের দেয়া বিন বাঁশিতে বাজবে আর খেলাফাতের মানচিত্রে কালেমার পতাকা উড়াবে।
এতটুকুই আমার আশা। তোমার সফলতার হাসিটা দেখতে পারাটাই আমার শেষ ভরসা। এর আজর! নিশ্চয় আমার রবের নিকট। আর দায়িত্ববোধ তো আছেই! যা আমাকে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ায়। তোমরা হলে ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া। তাছাড়া প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে তোমাদের সামনে এই খুটিনাটি বিষয়ের উপস্থাপনা। ভূবনজয়ী ব্যক্তিদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দাও! সুখকর জীবন কিভাবে গড়বো?
উত্তর আসবে-গুঞ্জনে গুঞ্জনে মুখরিত করে তুলো রবের সুভ্র সুপ্রভাত। ছেড়ে দাও মিকিমায়া আর দুদিনেরই জলপ্রপাত। আঁকড়ে ধরো দ্বীনের রশি, ছড়িয়ে দাও ইদাদের বাণী, রব রব শব্দে তুলো স্বর, ঝর্ণা আর পাহাড় বাড়ি। তাতেই তুমি কামিয়াব। তাতেই ফুটবে তোমার মুখে চূড়ান্ত হাসি। শেষ পরিণতি তুমি যুবক মুত্তাকী।
ইরশাদ হয়েছে-
اَمۡ تَحۡسَبُ اَنَّ اَکۡثَرَہُمۡ یَسۡمَعُوۡنَ اَوۡ یَعۡقِلُوۡنَ ؕ اِنۡ ہُمۡ اِلَّا کَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ ہُمۡ اَضَلُّ سَبِیۡلًا
তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শোনে ও বুঝে? তারা তো পশুরই মত; বরং তারা আরও অধম।
কারণ তারা একটু সুখ পেতে নিজেকে বিকিয়ে বসেছে। দুধের সরলতা তাদের বুঝে আসেনা। সবকিছুতেই পানি মিশাতে চায়। সবকিছুই ঘিঁ দিয়ে ভাজতে চায়। যুগের চাহিদা থাকুক বা না। কারো পেটে হজম হোক বা না। একঘেয়েমি তাদের পশুর কাতারে শামিল করেছে। চতুরতা নিজের করায়েত্তে থাকলেও থাকেনা ইলমি তীক্ষ্মতার ছিটেফোঁটা। দুনিয়াবী মোহ তাকে রাজকীয় হালতে রাখলেও দেয়না ক্ষণিকের মিছেসুখ।
প্রিয় যুবক ভাই!
দ্বীনের পথে এই একঘেয়েমির অন্ধকার খুবই মারাত্মক। দ্বীন বদদ্বীন চিনা যায় না। হাশর-নাশর দেখা যায় না। অদৃশ্য পরকালে কিছু পাওয়ার আশা জাগে না। গায়েবী কোনো কিছুই সত্য বলে মনে হয় না। যা হয় তা শুধুই শিকড়হীন। অর্থাৎ তার মৃত্যুর মাঝেই সবকিছুর সমাপ্তি। তার ওয়াফাতের মাঝেই সব হিসেব নিকেশের পরিব্যপ্তি। অথচ এটা তোমার অনন্ত জীবন সামান্য ফটকমাত্র।
রসগোল্লা তোমার প্রিয় খাবার, সামনে আসলে না খাওয়ার লোভ সামলাতে পারবে? সুকেশিনী যুবতী তোমার বৈধ স্ত্রী, তার সাথে নির্জন না হয়ে থাকতে পারবে? কারি কারি অর্থের পাহাড়, বাড়ি গাড়ি না কিনে থাকতে পারবে? থামুন! তাহলে মুমিন কি করে থাকতে পারে রবের সান্নিধ্য হাসিলের পথকে উপেক্ষা করে? হাদিদ হাতে বাঘের গর্জন ছুঁড়তে?
তুমি কি চাও না মুমিনদের একজন হতে? মুজাহিদীন বাহিনীকে অস্ত্র হাতে সুসঁজ্জিত করে দিয়ে তাদের পায়ে পা রাখতে? তাহলে এ নাপাক ভাবনাটুকু আপাতত পাশে রেখে দাও। নেক ভাবনাটুকু তাকে ভষ্ম করে দিবে। সময়ের পালাবদলে দ্বীন তোমাকে নিজের মনে করে কাজে লাগাবে। হয়তো দায়ী হিসেবে হয়তো বাহিনী হিসেবে। রুখবে কে তোমাকে! আজাদীর মত ছুটবে। আবাবীলের মত কংকর ছুঁড়বে।
কার হয়ে জানো? সয়ং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের পরিবার হয়ে। সুবহানাল্লাহ! কত মর্যাদা তোমার হবে। আফসোস! তা ছেড়ে দিয়ে তুমি যুবক অন্য কিছুই ভেবো না। তার সাথে বেয়াদবি করে কোনো কিছুই তোমার হবে না। তার দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে জান্নাতের ঘ্রাণও তুমি নিতে পারবে না।
সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে স্রষ্টার প্রতি মনোযোগ কমিয়ে কতদূর তুমি যেতে পারবে যুবক ভাই? এর উত্তর আমি তোমার কাছে চাই!
প্রিয় যুবক ভাই!
তুমি জানো! কিছু অন্ধকার মানুষকে আতঙ্কিত করে আবার কিছু অন্ধকার আকর্ষণ করে। আবদ্ধ করে অবোধ্য অনতিক্রম্য লালসা আর কৌতুহলের জালে। গুটিগুটি পাঁয়ে তন্ময় মন্ত্রমুগ্ধ দ্রষ্টা যখন কিনারায় এসে দাঁড়ায় অতল গহ্বর তখন গ্রাস করে নেয়। অনিষ্ট দৃশ্য সৌন্দর্য যখন স্বপ্নীল বাণী ছড়ায় অবাধ্যতা তখন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। ঠিক তখনই মনে এই বাসা বাঁধে অসত্তাই আমার আসল সত্তা। রঙিন কাগজে মোড়ানো অপ্রয়োজনীয় জিনিসই আমার আসল জিনিস।
সত্য মিথ্যে যাঁচাইয়ের সুবোধ তার টুকরীপড়া মাথা থেকে বিদায় নেয়। ভালো নষ্ট বুঝার আকল তার বাড়ন্ত যৌবন থেকে এস্তেফাদা নেয়। সব মিথ্যেই সত্য আর সব সত্যই কিছু কিছু সত্য এমন মহা ধারণার জন্ম দেয়। শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই, সময়ের মূল্য বলতে কিছু আছে এমন কোনো উটবট জিনিস নেই। পাপের প্রায়শ্চিত্ত দিতে হবে এমনও কোনো কথা জীবন অভিধানে জায়গা নেই।
এক নিশ্বাসে কতগুলো সত্য বলে ফেলতাম তাই না? এজন্য তুমি যুবক ভাবছো-লোকটা এত কথা বলে! আমাদের নিয়ে এত মজা করে! এত হাসিঠাট্টা উনি কোথায় পায়? পাপের সাগরে আকর্ষণের মোহনায় আমাদের এভাবে ভাসিয়ে দিচ্ছে? এটা কোনো কথা? এটা কোনো যুক্তি? উনার বিবেকবুদ্ধি বলতে কিচ্ছু নেই। আবেগ দিয়ে সব দিয়ে কিছু যায়?
শুধু বাস্তবতা বাস্তবতা বলে চিল্লায়। কুরআন হাদিসের স্বরে ধমকায়। মুখে একফোঁটাও রস নেই। কথার ভাঁজে নমনীয়তা আর কোমলতার লেশমাত্রা নেই। বড় বড় নিষেধ আর ছোট ছোট আদেশে জীবনটাকে বিষাদময় করে তুলেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাসটুকু ফেলতে পারিনা। খাইতে গেলে শরীয়ত বসতে গেলে নসিহত ঘুমাইতে গেলে সুন্নাত। এক আজিব গরিময় লোক!
জিহাদই নাকি দ্বীনের পরশ পাথর! ইদাদই নাকি রিযিকের শক্ত হাতল! শাহাদাতই নাকি স্বার্থক জীবনের আসল সোপান। কই তিনি এগুলো পান? আর কেউ তো বলে না! কারো কাছ থেকে তো শুনিনা! আমাদের আল্লামারা কি কাণ্ডজ্ঞানহীন? কিতাবের পাতা আমরাও পড়েছি। দ্বীনের ঝান্ডা আমরাও ধরেছি। পথের কোনো শেষ নেই। মতের কোনো ভিত্তি নেই। যেকোনো পথ দিয়েই জান্নাতে যাওয়া যায়।
চাই সেটা পীরের পাঁ ধরে হোক বা কান। মসজিদ মসজিদ ঘুরে হোক বা ময়দান থেকে পিছুটান। হলেই হলো-আল্লাহ দয়ার সাগর। নিশ্চিত তিনি ক্ষমা করে দিবেন। কালেমার মাহাত্ম্য বুঝি আর না বুঝি। তাওহীদের হাকীকত মানতে পারি আর না পারি। জিহাদের ঝান্ডা ধরতে পারি আর না পারি। ভুল মানুষের দ্বারাই হবে। এত্ত কথা শুনতে চাই না। শান্তির ধর্মে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাই না। অরাজকতা করে দেশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে চাই না।
দেশকে ভালোবাসি। দেশের মানুষকে মহব্বত করি। হিন্দু মুসলিম কোনো ভেদাভেদ নেই। পূজামন্ডল আর মসজিদের জিলাপির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সবই বানায় কারিগর। সবই সৃষ্টির সেরা। গুণগত মান সবারই সমান। আমি মুসলিম আর সে হিন্দু। লিঙ্গের মাঝে নেই কোনো আলাদা আকার। পোশাকের মাঝে নেই কোনো চিহ্ন বিশেষ। তাহলে কেন এত মত প্রকারান্ত?
জ্বী ভাই আমার!
তোমার এই কথাগুলো শুনার জন্যই তোমার সাথে এত দিনের সম্পর্ক। তোমার তিক্ত রসের হাঁড়িটা দেখার জন্যই এই ক্ষণের অপেক্ষায় আছি। জানি আবেগাপ্লুত হয়ে বেশি দূর যাওয়া যায় না। গুরুজনদের কথা-তোমার হৃদয় রাজ্যে ভূমিকম্পন না হলে সেটা কোন উর্বর ভূমিই না। তুমিও যদি আমার কথার পৃষ্ঠে কথা বলতে না পারো সেটাও কোনো মূল্যবান কথা না।
যুবক ভাই! মুসলিম কাকে বলে তুমি জানো? ধর্মীয় অনুশাসন পুঙ্খানো পুঙ্খানো মেনে চলেন এমন প্রত্যেকজন ব্যক্তিকে বলে। নফসে আম্মারায় লাগাম লাগিয়ে আনুগত্যের সামনে আত্মসমর্পণ করে এমন প্রতিজন ব্যক্তিকে বলে। দ্বীনে ইলাহির তরে উপার্জিত মুঠো মুঠো সম্পদ কাতরে অকারতে বিলিয়ে দেন এমন প্রতিজন সালিহ ব্যক্তিকে বলে। আল্লাহর দেয়া যৌবনকে দ্বীন কায়েমের পথে কুরবান করে দেন এমন প্রতিজন বীরকে বলে।
সিংহ পুরুষ উমর পারতেন হাজারো প্রশ্ন ছুঁড়ে দ্বীনকে কোকোপাত করতে। এমন অসম জ্ঞান তার থলিতে ছিলো। তার ঝুড়িতে বাপ-দাদাদের উত্তরাধিকারী সমালোচনার তথ্যনথি রাখা ছিলো। তিনি বুঝতে পেরেছেন ইসলাম পাড়ায় এ প্রশ্নের কোনো ঠায় নেই। অতীত ইসলামে জায়গা নেই। কি আছে কি নেই সেটাই আগে বলো। ইসলাম কতটুকু দিয়েছে কতটুকু নিয়েছে সেটাই তুলে ধরো। এটাই জানার বিষয়। ফায়সালা দিবে কুরআন সিদ্ধান্ত নিবে অঙ্গ-পতঙ্গ। এ রায়ে অন্তরের অবস্থা ভালো না খাবার তার নামই ইমান।
আঁধারের জাল বুনলেওয়ালা উমর ইমানের সামনে নিমিষেই নত হয়ে গেলেন। যাকে আদেশ তো দূরের কথা আ শব্দটা উচ্চারণ করা যেতো না। সেই উমর বোনের কথায় গোসল করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। অহংকারকে মাটিচাপা দিয়ে সহজ সরল বোকা বনে গেলেন। ইমান গ্রহণ করতে যা করার তাই করবো। এ যেন মুহূর্তের মধ্যেই নিকষ কালো আকাশে চাঁদের উদয়ন। এ যেন মাস শুরু হওয়ার আগেই চাঁদে আলোর বিচ্ছুরণ।
তাহলে এবার বুঝুন! তোমার আর তাঁদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায় ফারাক কতটুকু? তোমার আর তাঁদের কলবি মিনারায় মানার মাদ্দা কতটুকু? বিস্তর ফারাক। জাহিলিয়্যাতের পুরো অস্থির ও নাজুক সময়টাতে বরেণ্য নেতাদের কাছে ধর্মের দাওয়াত পৌঁছাতে তাঁদের যতটুকু না কষ্ট হয়েছে তারচে বেশি অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেছেন মুসলিম লেবাসধারী মুনাফিকদের সেচ্ছাচারিতার কারণে। তাদের নকশা দিয়ে আমাদের ভিত্তি যেন স্থাপন না হয়। ওগো রব! আমরা তোমার কাছে পানাহ চাই! এই নীল দরীয়ায় আমাদের নিক্ষেপ করো না।
প্রিয় ভাই আমার!
তোমার ভাবনাটুকু যেন তোমার শরীরকে অশ্লীল ব্যাকটেরিয়ায় ছেয়ে না দেয়। মত প্রকারান্তর ফাক ফোকরের অজুহাত দেখিয়ে ফরসা দিলটাকে যেন কুৎসিত করে না দেয়। ভাবনাটুকু থাকুক সৎ ও সচ্ছল। আকষর্ণটুকু হোক সতেজ ও প্রাণবন্ত। দুনিয়ার অনতিক্রম্য লালসাটুকু হোক মলিন ও ঝাপসা। তুমি হয়ে উঠো একজন ধীরচেতা স্বাধীন সুপুরুষ। রবের দেয়া বিন বাঁশিতে বাজবে আর খেলাফাতের মানচিত্রে কালেমার পতাকা উড়াবে।
এতটুকুই আমার আশা। তোমার সফলতার হাসিটা দেখতে পারাটাই আমার শেষ ভরসা। এর আজর! নিশ্চয় আমার রবের নিকট। আর দায়িত্ববোধ তো আছেই! যা আমাকে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ায়। তোমরা হলে ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া। তাছাড়া প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে তোমাদের সামনে এই খুটিনাটি বিষয়ের উপস্থাপনা। ভূবনজয়ী ব্যক্তিদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দাও! সুখকর জীবন কিভাবে গড়বো?
উত্তর আসবে-গুঞ্জনে গুঞ্জনে মুখরিত করে তুলো রবের সুভ্র সুপ্রভাত। ছেড়ে দাও মিকিমায়া আর দুদিনেরই জলপ্রপাত। আঁকড়ে ধরো দ্বীনের রশি, ছড়িয়ে দাও ইদাদের বাণী, রব রব শব্দে তুলো স্বর, ঝর্ণা আর পাহাড় বাড়ি। তাতেই তুমি কামিয়াব। তাতেই ফুটবে তোমার মুখে চূড়ান্ত হাসি। শেষ পরিণতি তুমি যুবক মুত্তাকী।
ইরশাদ হয়েছে-
اَمۡ تَحۡسَبُ اَنَّ اَکۡثَرَہُمۡ یَسۡمَعُوۡنَ اَوۡ یَعۡقِلُوۡنَ ؕ اِنۡ ہُمۡ اِلَّا کَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ ہُمۡ اَضَلُّ سَبِیۡلًا
তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শোনে ও বুঝে? তারা তো পশুরই মত; বরং তারা আরও অধম।
কারণ তারা একটু সুখ পেতে নিজেকে বিকিয়ে বসেছে। দুধের সরলতা তাদের বুঝে আসেনা। সবকিছুতেই পানি মিশাতে চায়। সবকিছুই ঘিঁ দিয়ে ভাজতে চায়। যুগের চাহিদা থাকুক বা না। কারো পেটে হজম হোক বা না। একঘেয়েমি তাদের পশুর কাতারে শামিল করেছে। চতুরতা নিজের করায়েত্তে থাকলেও থাকেনা ইলমি তীক্ষ্মতার ছিটেফোঁটা। দুনিয়াবী মোহ তাকে রাজকীয় হালতে রাখলেও দেয়না ক্ষণিকের মিছেসুখ।
প্রিয় যুবক ভাই!
দ্বীনের পথে এই একঘেয়েমির অন্ধকার খুবই মারাত্মক। দ্বীন বদদ্বীন চিনা যায় না। হাশর-নাশর দেখা যায় না। অদৃশ্য পরকালে কিছু পাওয়ার আশা জাগে না। গায়েবী কোনো কিছুই সত্য বলে মনে হয় না। যা হয় তা শুধুই শিকড়হীন। অর্থাৎ তার মৃত্যুর মাঝেই সবকিছুর সমাপ্তি। তার ওয়াফাতের মাঝেই সব হিসেব নিকেশের পরিব্যপ্তি। অথচ এটা তোমার অনন্ত জীবন সামান্য ফটকমাত্র।
রসগোল্লা তোমার প্রিয় খাবার, সামনে আসলে না খাওয়ার লোভ সামলাতে পারবে? সুকেশিনী যুবতী তোমার বৈধ স্ত্রী, তার সাথে নির্জন না হয়ে থাকতে পারবে? কারি কারি অর্থের পাহাড়, বাড়ি গাড়ি না কিনে থাকতে পারবে? থামুন! তাহলে মুমিন কি করে থাকতে পারে রবের সান্নিধ্য হাসিলের পথকে উপেক্ষা করে? হাদিদ হাতে বাঘের গর্জন ছুঁড়তে?
তুমি কি চাও না মুমিনদের একজন হতে? মুজাহিদীন বাহিনীকে অস্ত্র হাতে সুসঁজ্জিত করে দিয়ে তাদের পায়ে পা রাখতে? তাহলে এ নাপাক ভাবনাটুকু আপাতত পাশে রেখে দাও। নেক ভাবনাটুকু তাকে ভষ্ম করে দিবে। সময়ের পালাবদলে দ্বীন তোমাকে নিজের মনে করে কাজে লাগাবে। হয়তো দায়ী হিসেবে হয়তো বাহিনী হিসেবে। রুখবে কে তোমাকে! আজাদীর মত ছুটবে। আবাবীলের মত কংকর ছুঁড়বে।
কার হয়ে জানো? সয়ং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের পরিবার হয়ে। সুবহানাল্লাহ! কত মর্যাদা তোমার হবে। আফসোস! তা ছেড়ে দিয়ে তুমি যুবক অন্য কিছুই ভেবো না। তার সাথে বেয়াদবি করে কোনো কিছুই তোমার হবে না। তার দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে জান্নাতের ঘ্রাণও তুমি নিতে পারবে না।
সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে স্রষ্টার প্রতি মনোযোগ কমিয়ে কতদূর তুমি যেতে পারবে যুবক ভাই? এর উত্তর আমি তোমার কাছে চাই!
Comment