ওয়াসওয়াসা দূর করার পদ্ধতি:
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ.বলেন যে, ওয়াসওয়াসা দূর করার পদ্ধতি বেশ অনেক। তাঁর মধ্যে কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
(১) অন্তরে এ কথা ভালোভাবে গেঁথে নেওয়া যে, আমার অন্তরে যত রকমের চিন্তা আসে সব আল্লাহ তায়ালা জানেন এবং দেখেন।
(২) আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে নিজের মধ্যে লজ্জাবোধ রাখা।
(৩) আল্লাহ তাআলা যে মহাপরাক্রমশালী, এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে এ কথা চিন্তা করা যে, আমার অন্তরকে আল্লাহ তায়ালা বানিয়েছেন তাঁর ভালোবাসা এবং তাঁর মারেফাতের জন্য। আর সেই অন্তরে,খারাপ চিন্তা ভাবনা রাখা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
(৪) আমার এই খারাপ চিন্তার কারণে এই ভয় হওয়া উচিত যে, আমি যেন আল্লাহ তাআলার রহমতের দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত না হই।
(৫) দিলে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা এবং মুহাব্বাত আল্লাহ তাআলার জন্যই হওয়া।
(৬) নিজের দিলে এই ভয় হওয়া উচিত যে, এই খারাপ চিন্তা এবং খারাপ ওয়াসওয়াসা ও খারাপ খেয়ালের কারণে আমার দিলে যে আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান এবং আল্লাহ তা'আলার জন্য সে ভালোবাসা আছে সেটা যেন দূর না হয়ে যায়। সেটাকে যেন ওয়াসওয়াসার আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ না করে দেয়।
(৭) একটি বিষয় জানা থাকা উচিত। সেটি হচ্ছে, প্রতিটি ওয়াসওয়াসার উদাহরণ হল: পাখি শিকার করার জন্য যে দানা ব্যবহার করা হয় সেই দানার মত। অর্থাৎ প্রতিটি ওয়াসওয়াসার দ্বারা আমাকে শিকার করা হচ্ছে। যেমনিভাবে দানা দ্বারা পাখি শিকার করা হয়।
(৮) নিজের এই অনুভূতি হওয়া উচিত যে, আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা এবং আল্লাহ তায়ালার দিকে ধাবিত হওয়ার অবস্থা এবং ঈমানী চিন্তা-চেতনা আর খারাপ চিন্তা-চেতনা কোনদিন এক জায়গায় একত্র হতে পারে না।
কারণ হচ্ছে একটি অপরটির পরস্পর বিপরীত। যখন খারাপ চিন্তা চেতনা দিলে আসবে তখনই ঈমানী চিন্তা-চেতনা অন্তর থেকে চলে যাবে। এমন একটি দিলের কল্পনা করা, যে দিল ছিল ঈমান, আল্লাহর ভালোবাসা, এবং তাঁর মারেফাতে টইটুম্বুর। তারপর সেই দিলে খারাপ খেয়াল এবং ওয়াসওয়াসা এসে বাসা বাঁধলো। তাঁর দিল যদি সত্যিই পবিত্র হয়ে থাকে। তাহলে সে অবশ্যই কষ্ট অনুভব করবে আগত খারাপ খেয়ালের জন্যে।
(৯) মানুষের আরও একটি বিষয়, জেনে রাখা উচিত। তা হলো, এই সমস্ত ওয়াসওয়াসা আর খেয়াল, সমুদ্রের মতো। যে এই সমস্ত ওয়াসওয়াসার দিক মনোনিবেশ করবে, সে যেন অকুল সমুদ্রের ভিতর ডুবে গেল। এবং সে তাঁর তলদেশে হারিয়ে গেল। সেখান থেকে আর বাঁচার কোন রাস্তা পেল না। তেমনিভাবে মানুষ যখন এই সমস্ত খেয়াল আর ওয়াসওয়াসার পিছনে পড়ে। তখন সে নিজেকে অনর্থক কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেনা। পাশাপাশি সে সফলতা থেকে বঞ্চিত হয়। আর বিভিন্ন রকমের আযাবে গ্রেফতার হয়।।
(১০) খারাপ চিন্তা-চেতনা লালনকারী ব্যক্তিরা সর্বদা অপদস্থতার শিকার হয়ে থাকে। আর খারাপ চিন্তা-চেতনার উদাহরণ হচ্ছে, একটি উপত্যকায়ের ন্যায়, যেখানে এসে ভিড় করে নানা রকমের খারাপ ওয়াসওয়াসা। যার প্রভাব তাঁর দিলের গভীরে পৌঁছে, তাঁকে পেরেশান করে তোলে। এগুলো হচ্ছে খারাপ চিন্তা অন্তরে লালন করার পরিণাম।
এর বিপরীত হচ্ছে ইতিবাচক চিন্তা-চেতনা লালন করা। আল্লাহ প্রদত্ত ধ্যান খেয়াল অন্তরে জাগ্রত রাখা। এগুলো হচ্ছে সমস্ত কল্যাণের মূল উৎস। হৃদয় জমিনে যখন রোপন করা হবে ঈমান, আল্লাহর ভয়, এবং তাঁর ভালবাসার বীজ। এবং জমিনকে সিঞ্চিত করা হবে নেক আমল দ্বারা। পাশাপাশি তাঁর মালিক তাঁকে সংরক্ষণ করবে, সর্বদা কড়া নজরদারির মাধ্যমে। তখনই সেই জমিনে ফুটে উঠবে উৎকৃষ্টমানের রকমারি ফুলের বাহার। নেকিসমূহ দ্বারা তাঁর দিল ভরে টইটুম্বুর হয়ে যাবে। তাঁর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আনুগত্যের দিক ধাবিত হতে থাকবে।
Collected
Comment