বোন তোমার নারীত্বের আঁচল এত সুন্দর কেন?
১৪ তম পর্ব
প্রিয় বোন!
যে নারী তার বিনয়ের দোপাট্টা, আত্মামর্যাদার সক্ষমতা, বীরত্বের চাদর ও ত্যাগের মানসিকতা নিজ নারীত্বের ঢাল হিসেবে সাঁজিয়ে নিয়েছে, ইতিহাস বলে সে নারীর উদর কখনো অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়নি। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাহ নারীদের এ উদরকে ঔচিত্য ও সুরক্ষা বলয় দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কোনো কোনো নারী তার এ পেটকে দ্বীন কায়েমের প্রথম শক্ত ঘাঁটি মনে করেন। তার সুরক্ষা বলয় যত মজবুত হবে নুসরতের রশি তত দ্রুত ধরা যাবে। কালক্রমে কিন্তু এমনই ঘটেছে।
★পড়ে দেখুন ইতিহাস- একটু দূর অতীতে সালাউদ্দীন আইউবীর মায়ের কথা। তার মা হুমা-হাতুন সন্তান পেটে থাকা অবস্থায় কেমন যত্নবান ছিলেন! আদুরে সোহাগে অন্তরে লালন করা স্বপ্নগুলো কতটুকু শানদার ছিলো! সন্তান ভূপৃষ্ঠে পা রাখায় ক্ষুদে রাখা কলিগুলো কতটা প্রস্ফুটিত হয়েছিলো! তার আশার ছোট্ট ঝুড়িগুলো ছিলো দ্বীনি রৌশনে ভরপুর আর প্রত্যাশার আলোগুলো ছিলো নিভু নিভু তাই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় নিজেকে আটকিয়ে হলেও স্বপ্ন বুনেছেন রেশম পোকার ন্যায়।
★ফাতেমা বিনতে আইয়্যাশ-তার সাহসের প্রখরতা এত ধারালো ছিলো যে, যেকোনো জাতির বুক থেকে অতি মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে আনা তাঁর জন্য সময়ের ব্যাপার ছিলো মাত্র। কারণ মেধা, চরিত্র ও কৌশলে অসম সমন্বয়ক ছিলেন, যা নারী সাহাবীদের জীবনকে অনন্য করে তুলেছে, সেগুলোই ছিলো তাঁর নিত্য জীবনের আর্ট। রাশহীন নারীদের রুহকে রাশভারী করতে তাঁর দিবারাত্রির প্রচেষ্টা আগত জাতির মেরুদণ্ডকে সোজা করতে সহায়ক হতে পারে। তবে প্রয়োজন আমাদের বোনদের একটু অগ্রণী ভূমিকা পালন করা, যেন জীবনের আঁকাবাঁকা পথে তাঁদের রুখ ভুলে না যায়।
★সিত্তুল ওযারা-ইতিহাস যখন এ বোনদের নাম তার বুকে ঠাই দিয়েছে তখন থেকেই অতি সম্মানের সাথে তাদের জীবন-কর্মের নানা রঙধনু পাট পাট করে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। তুলবেই না কেন! কারণ তাঁরা আঁকা মদিনার অদৃশ্য স্পর্শে দেহকে করে নিয়েছে বট বৃক্ষের ন্যায় যা মানুষের মনকে ঠাণ্ডা করে কিন্তু উত্তপ্ত করে না। ঠিক তাঁদের এ জীবন-কর্ম নারী সমাজকে সুশীল হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যায় কিন্তু বাঁধার সম্মুখীন করে না এবং রপ্ততপ্ত জীবন আদর্শ যে নারীদের উ-শৃঙ্খলতা উপহার দেয় তা তাদের গল্প না শুনলে হয়তো জানাই হতো না।
★সকল সীরাত বিশেষজ্ঞরা আম্মাজান হযরত সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহার নৈতিক গুণাবলীর অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। বিশেষজ্ঞরা তাঁদের এ অভিজ্ঞতার আলো দিয়ে কাউকে চিনতে বুঝতে ভুল করেন না, সাফিয়্যা রাদিআল্লাহু আনহার বেলায়ও এমনই ঘটেছে। সুপ্ত থেকে সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়েও কোনো আকার প্রকারান্তর করেননি। বরং স্ব-বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
★আল্লামা ইবনে আবদালি বার লিখেছেন-সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন ধৈর্যশীল, বুদ্ধিমতী ও বিদুষী নারী।
★ইবনুল আসীর রাহিমাহুল্লাহ তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন- তিনি ছিলেন একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমতী মহিলা।
★আল্লামা জাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন- হযরত সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন অতি ভদ্র, বুদ্ধিমতী, উঁচু বংশীয়, রূপবতী ও দীনদার মহিলা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যান্য আহলিয়াদের মত হযরত সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহাও ছিলেন ইলম ও আখলাকের কেন্দ্রবিন্দু। প্রায়ই নারীরা তাঁর কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতো এবং তাঁরা জবাব পেয়ে তুষ্ট হয়ে যেতো। সুহায়রা বিনতে হায়কার এক মহিলা একবার হজ্জ আদায় করে হযরত সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে সাক্ষাৎ করতে মদীনায় আসেন। তিনি যখন তাঁর কাছে যান তখন দেখতে পান সেখানে কুফার বহু মহিলা বসে আছেন এবং তাঁকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করছেন। আর তিনি খুব সুন্দরভাবে গোছানো জবাব দিচ্ছেন। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ তনুমনে তুষ্ট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
প্রিয় বোন আমার! স্বামীগৃহে নারীর সমর্পণের সরলতা যদি আজকের পুরুষদের বিলাসিতায় একটু লাগাম টেনে ধরতো! আহা! কতই না সুন্দর হতো ইতিহাস! কতই না উজ্জ্বল হতো জীবন যাত্রা! কালকের নারীদের কুরবানি দেখে নির্ণয় করা মুশকিল যে, কার কোন্ ত্যাগটা বড়। কে মর্যাদায় এগিয়ে। আসমা রাদিআল্লাহু আনহা নিজ পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। ছেলে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলছেন-মা! আমি নিহত হওয়ার ভয় করছি না বরং ভয় হচ্ছে ওরা আমার লাশকে বিকৃত করবে।
এ কথা শুনে মা আসমা রাদিআল্লাহু আনহা বলেছেন-বোকা ছেলে নিহত হওয়ার পর কী হবে তা নিয়ে তুমি ভাবছো! আরে বেটা! জবাই-কৃত ছাগলের চামড়া ছোলার কি কষ্ট হয়? বিদায় বেলা ছেলে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু মাকে লক্ষ্য করে বলছিলেন-মা তুমি আমার জন্য কষ্ট পেয়ো না। মায়ের সরলমনা জবাব ছিলো-বাবা! কষ্ট তখনই পেতাম যখন তুমি অন্যায়ের পক্ষে লড়াই করে নিহত হতে। আল্লাহ আমাকে একজন শহীদের মা হিসেবে কবুল করুন। আল্লাহ আমাকে একজন শহীদের মা হিসেবে কবুল করুন। এ কথা বারবার তিনি মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে ছিলেন। মায়ের মুখে মধুর এ শব্দগুলো ছেলে যুবাইর রাদিআল্লাহু আনহুকে ময়দানে যেতে উচ্ছ্বাসিত করে তুলে।
প্রিয় বোন আমার! নারী যদি তাঁর মাতৃমমতা উপচে পড়া কোলে সন্তানকে আগলে রাখতে চায় তখন কি আর জগদ্বিখ্যাত মহীয়সী নারীর ভূমিকা পালন করা সম্ভব? নারী যদি তাঁর মাতৃ আঁচল দিয়ে সন্তানের চোখের অশ্রু মুছতে চায় তখন কি আর 'শহীদের মা, এ লকব পাওয়া সম্ভব? কল্পনা করা সহজ, কল্পনার ছক আঁকা আরো সহজ কিন্তু বাস্তবায়ন! তাতো দিল্লী বহুদূরের মতই। আল্লামা ইবনে শাতিবী বলতেন-ও যুবক! তুমি নিজের শরীর মন দুটিকেই ময়দানে নামাও। কারণ মন ছক আঁকে আর শরীর বাস্তবায়ন করে।
উস্তাদ আহমাদ বারী রাহিমাহুল্লাহ এর ঐতিহাসিক একটি বাণী হলো-একজন নারী যখন অন্য কোনো নারীকে সাহায্য করে তার স্বপ্ন ছুঁতে, আর যদি সেটা দ্বীনি হয় তখন দেখবে সে নারী তার স্বপ্নের কত কাছে চলে গেছে। আর এমন দু-একটা স্বপ্ন জান্নাতের পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। হতে পারে সেটা রবের দরবারে বেশি বেশি সিজদাহ বা শাহাদাতের অমিয় সুধা বা ইসলামের ঝাণ্ডা ধরতে গিয়ে নির্যাতনে পৃষ্ঠ হওয়া।
প্রিয় বোন আমার!
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাহ তোমার নারীত্বের আঁচলে ব্যক্তি, পরিবার, গোত্র, জাতিকে সংশোধনের অসামান্য ঐশী শক্তি দান করেছেন, যার সঠিক ব্যবহার প্রত্যেকের স্ব-অবস্থানকে সুদৃঢ় করে তুলতে পারে। বংশীয় হিংসা প্রতিহিংসার গাঢ় অন্ধকারকে দূর করে একই বন্ধনে আবদ্ধ হতে তোমার সহযোগিতা নিতান্তই প্রয়োজন। নারীদের আত্মাকে পবিত্রতার মূর্ত-প্রতীক বানাতে তোমার নিরলস চেষ্টা অত্যাবশ্যকীয়। যে পবিত্র আত্মা থেকে জন্ম নিতে পারে সৎ ও নিষ্ঠাবান কিছু প্রজন্ম। যারা যুগের চাহিদা ও ঘড়ির কাটাকে উল্টিয়ে দিতে পারে নিজ প্রত্যয়ে।
১৪ তম পর্ব
প্রিয় বোন!
যে নারী তার বিনয়ের দোপাট্টা, আত্মামর্যাদার সক্ষমতা, বীরত্বের চাদর ও ত্যাগের মানসিকতা নিজ নারীত্বের ঢাল হিসেবে সাঁজিয়ে নিয়েছে, ইতিহাস বলে সে নারীর উদর কখনো অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়নি। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাহ নারীদের এ উদরকে ঔচিত্য ও সুরক্ষা বলয় দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কোনো কোনো নারী তার এ পেটকে দ্বীন কায়েমের প্রথম শক্ত ঘাঁটি মনে করেন। তার সুরক্ষা বলয় যত মজবুত হবে নুসরতের রশি তত দ্রুত ধরা যাবে। কালক্রমে কিন্তু এমনই ঘটেছে।
★পড়ে দেখুন ইতিহাস- একটু দূর অতীতে সালাউদ্দীন আইউবীর মায়ের কথা। তার মা হুমা-হাতুন সন্তান পেটে থাকা অবস্থায় কেমন যত্নবান ছিলেন! আদুরে সোহাগে অন্তরে লালন করা স্বপ্নগুলো কতটুকু শানদার ছিলো! সন্তান ভূপৃষ্ঠে পা রাখায় ক্ষুদে রাখা কলিগুলো কতটা প্রস্ফুটিত হয়েছিলো! তার আশার ছোট্ট ঝুড়িগুলো ছিলো দ্বীনি রৌশনে ভরপুর আর প্রত্যাশার আলোগুলো ছিলো নিভু নিভু তাই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় নিজেকে আটকিয়ে হলেও স্বপ্ন বুনেছেন রেশম পোকার ন্যায়।
★ফাতেমা বিনতে আইয়্যাশ-তার সাহসের প্রখরতা এত ধারালো ছিলো যে, যেকোনো জাতির বুক থেকে অতি মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে আনা তাঁর জন্য সময়ের ব্যাপার ছিলো মাত্র। কারণ মেধা, চরিত্র ও কৌশলে অসম সমন্বয়ক ছিলেন, যা নারী সাহাবীদের জীবনকে অনন্য করে তুলেছে, সেগুলোই ছিলো তাঁর নিত্য জীবনের আর্ট। রাশহীন নারীদের রুহকে রাশভারী করতে তাঁর দিবারাত্রির প্রচেষ্টা আগত জাতির মেরুদণ্ডকে সোজা করতে সহায়ক হতে পারে। তবে প্রয়োজন আমাদের বোনদের একটু অগ্রণী ভূমিকা পালন করা, যেন জীবনের আঁকাবাঁকা পথে তাঁদের রুখ ভুলে না যায়।
★সিত্তুল ওযারা-ইতিহাস যখন এ বোনদের নাম তার বুকে ঠাই দিয়েছে তখন থেকেই অতি সম্মানের সাথে তাদের জীবন-কর্মের নানা রঙধনু পাট পাট করে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। তুলবেই না কেন! কারণ তাঁরা আঁকা মদিনার অদৃশ্য স্পর্শে দেহকে করে নিয়েছে বট বৃক্ষের ন্যায় যা মানুষের মনকে ঠাণ্ডা করে কিন্তু উত্তপ্ত করে না। ঠিক তাঁদের এ জীবন-কর্ম নারী সমাজকে সুশীল হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যায় কিন্তু বাঁধার সম্মুখীন করে না এবং রপ্ততপ্ত জীবন আদর্শ যে নারীদের উ-শৃঙ্খলতা উপহার দেয় তা তাদের গল্প না শুনলে হয়তো জানাই হতো না।
★সকল সীরাত বিশেষজ্ঞরা আম্মাজান হযরত সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহার নৈতিক গুণাবলীর অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। বিশেষজ্ঞরা তাঁদের এ অভিজ্ঞতার আলো দিয়ে কাউকে চিনতে বুঝতে ভুল করেন না, সাফিয়্যা রাদিআল্লাহু আনহার বেলায়ও এমনই ঘটেছে। সুপ্ত থেকে সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়েও কোনো আকার প্রকারান্তর করেননি। বরং স্ব-বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
★আল্লামা ইবনে আবদালি বার লিখেছেন-সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন ধৈর্যশীল, বুদ্ধিমতী ও বিদুষী নারী।
★ইবনুল আসীর রাহিমাহুল্লাহ তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন- তিনি ছিলেন একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমতী মহিলা।
★আল্লামা জাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন- হযরত সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন অতি ভদ্র, বুদ্ধিমতী, উঁচু বংশীয়, রূপবতী ও দীনদার মহিলা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যান্য আহলিয়াদের মত হযরত সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহাও ছিলেন ইলম ও আখলাকের কেন্দ্রবিন্দু। প্রায়ই নারীরা তাঁর কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতো এবং তাঁরা জবাব পেয়ে তুষ্ট হয়ে যেতো। সুহায়রা বিনতে হায়কার এক মহিলা একবার হজ্জ আদায় করে হযরত সাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে সাক্ষাৎ করতে মদীনায় আসেন। তিনি যখন তাঁর কাছে যান তখন দেখতে পান সেখানে কুফার বহু মহিলা বসে আছেন এবং তাঁকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করছেন। আর তিনি খুব সুন্দরভাবে গোছানো জবাব দিচ্ছেন। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ তনুমনে তুষ্ট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
প্রিয় বোন আমার! স্বামীগৃহে নারীর সমর্পণের সরলতা যদি আজকের পুরুষদের বিলাসিতায় একটু লাগাম টেনে ধরতো! আহা! কতই না সুন্দর হতো ইতিহাস! কতই না উজ্জ্বল হতো জীবন যাত্রা! কালকের নারীদের কুরবানি দেখে নির্ণয় করা মুশকিল যে, কার কোন্ ত্যাগটা বড়। কে মর্যাদায় এগিয়ে। আসমা রাদিআল্লাহু আনহা নিজ পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। ছেলে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলছেন-মা! আমি নিহত হওয়ার ভয় করছি না বরং ভয় হচ্ছে ওরা আমার লাশকে বিকৃত করবে।
এ কথা শুনে মা আসমা রাদিআল্লাহু আনহা বলেছেন-বোকা ছেলে নিহত হওয়ার পর কী হবে তা নিয়ে তুমি ভাবছো! আরে বেটা! জবাই-কৃত ছাগলের চামড়া ছোলার কি কষ্ট হয়? বিদায় বেলা ছেলে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু মাকে লক্ষ্য করে বলছিলেন-মা তুমি আমার জন্য কষ্ট পেয়ো না। মায়ের সরলমনা জবাব ছিলো-বাবা! কষ্ট তখনই পেতাম যখন তুমি অন্যায়ের পক্ষে লড়াই করে নিহত হতে। আল্লাহ আমাকে একজন শহীদের মা হিসেবে কবুল করুন। আল্লাহ আমাকে একজন শহীদের মা হিসেবে কবুল করুন। এ কথা বারবার তিনি মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে ছিলেন। মায়ের মুখে মধুর এ শব্দগুলো ছেলে যুবাইর রাদিআল্লাহু আনহুকে ময়দানে যেতে উচ্ছ্বাসিত করে তুলে।
প্রিয় বোন আমার! নারী যদি তাঁর মাতৃমমতা উপচে পড়া কোলে সন্তানকে আগলে রাখতে চায় তখন কি আর জগদ্বিখ্যাত মহীয়সী নারীর ভূমিকা পালন করা সম্ভব? নারী যদি তাঁর মাতৃ আঁচল দিয়ে সন্তানের চোখের অশ্রু মুছতে চায় তখন কি আর 'শহীদের মা, এ লকব পাওয়া সম্ভব? কল্পনা করা সহজ, কল্পনার ছক আঁকা আরো সহজ কিন্তু বাস্তবায়ন! তাতো দিল্লী বহুদূরের মতই। আল্লামা ইবনে শাতিবী বলতেন-ও যুবক! তুমি নিজের শরীর মন দুটিকেই ময়দানে নামাও। কারণ মন ছক আঁকে আর শরীর বাস্তবায়ন করে।
উস্তাদ আহমাদ বারী রাহিমাহুল্লাহ এর ঐতিহাসিক একটি বাণী হলো-একজন নারী যখন অন্য কোনো নারীকে সাহায্য করে তার স্বপ্ন ছুঁতে, আর যদি সেটা দ্বীনি হয় তখন দেখবে সে নারী তার স্বপ্নের কত কাছে চলে গেছে। আর এমন দু-একটা স্বপ্ন জান্নাতের পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। হতে পারে সেটা রবের দরবারে বেশি বেশি সিজদাহ বা শাহাদাতের অমিয় সুধা বা ইসলামের ঝাণ্ডা ধরতে গিয়ে নির্যাতনে পৃষ্ঠ হওয়া।
প্রিয় বোন আমার!
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাহ তোমার নারীত্বের আঁচলে ব্যক্তি, পরিবার, গোত্র, জাতিকে সংশোধনের অসামান্য ঐশী শক্তি দান করেছেন, যার সঠিক ব্যবহার প্রত্যেকের স্ব-অবস্থানকে সুদৃঢ় করে তুলতে পারে। বংশীয় হিংসা প্রতিহিংসার গাঢ় অন্ধকারকে দূর করে একই বন্ধনে আবদ্ধ হতে তোমার সহযোগিতা নিতান্তই প্রয়োজন। নারীদের আত্মাকে পবিত্রতার মূর্ত-প্রতীক বানাতে তোমার নিরলস চেষ্টা অত্যাবশ্যকীয়। যে পবিত্র আত্মা থেকে জন্ম নিতে পারে সৎ ও নিষ্ঠাবান কিছু প্রজন্ম। যারা যুগের চাহিদা ও ঘড়ির কাটাকে উল্টিয়ে দিতে পারে নিজ প্রত্যয়ে।
Comment