গুনাহ থেকে পরহেযকারী এক যুবকের ঘটনা
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ:
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ:
কুফাতে এক যুবক ছিল। যে খুবই সুন্দর এবং সুশ্রী ছিল। সে খুব ইবাদতগুজার এবং কর্মঠ ছিল। একবার সে তার প্রতিবেশীদের বাড়িতে গেল। অত:পর সেখানকার এক মেয়ের দিকে তার দৃষ্টি পড়ল। মেয়েটি খুবই সুন্দর ছিল। ফলে সে তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লো এবং তাকে পাওয়ার ইচ্ছা করলো।
তাই সে মেয়ের বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠালো। কিন্তু মেয়ের বাবা তার প্রস্তাবকে এই বলে বাতিল করে দিল যে, মেয়েকে মেয়ের চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত হয়ে গেছে।
কিন্তু এদিকে তাদের উভয়ের ভালোবাসা তীব্রতা লাভ করলো। তাই মেয়ে এই যুবকের কাছে এক দূত মারফত চিঠি পাঠাল। আমার অন্তরে তোমার মহব্বত অনেক বেড়ে গেছে। তোমাকে ছাড়া আমার একাকী থাকা অনেক কষ্টকর হয়ে গেছে। এখন যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমার সাথে সাক্ষাত করবো। আর যদি চাও যে আমার কাছে তুমি আসবে তাহলে আমি তা তোমার জন্য আমার ঘরে আসা সহজ করে দিবো।
যুবক তার দূতকে বলল, এই দুইটার কোনটাই হবে না। আমি নাফরমানির কারণে ভয়ানক কিয়ামতের দিবসের আযাবকে ভয় করছি। আমি এমন আগুনকে ভয় করছি যার শিখা কখনো নিবে না এবং যার স্ফুলিঙ্গ কখনো স্তমিত হবে না।
যখন তার দূত তার কাছে এই কথা পৌঁছিয়ে দিল সে বলল, সে আমার মহব্বত সত্ত্বেও আল্লাহকে ভয় করছে। আল্লাহর কসম! ভালোবাসার ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে বেশী উপযোগী আর কেউ হতে পারে না। অথচ বান্দার এক্ষেত্রে তার সাথে শিরক করে।
অত:পর সে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল এবং দুনিয়াবী সম্পর্ক তার পশ্চাতে ছুড়ে মারল। সে আল্লাহর ইবাদাতে লেগে গেল। এতদা সত্ত্বেও তার অন্তর দিন দিন যুবকের প্রতি নরম হতে লাগল এবং তার অন্তরে যুবকের মহব্বত ঢুকতেই থাকল। এই অবস্থায় একদিন তার মৃত্যু হয়ে গেল।
তার মৃত্যুর পর যুবক তার কবরে আসতো এবং ক্রন্দন করতো আর তার জন্য দোয়া করতো। একদিন কবরস্থানে থাকাকালীনই তার প্রবল ঘুম আসল এবং সে কবরের উপরই ঘুমিয়ে গেল। অত:পর সে ঘুমের মাঝে মেয়ের সুন্দর চেহারাটা দেখল।
সে তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কেমন আছো? আমার পর তুমি কি পেয়েছো?
উত্তরে সে বলল, হে আমার প্রশ্নকারী! কতই না উত্তম তোমার মহব্বত! তোমার মহব্বত এমন মহব্বত যা কল্যাণের দিকে নিয়ে যায়!
যুবক তাকে জিজ্ঞেস করলো, তাহলে তুমি কোথায় চলে গেলে?
সে বলল, আমি এমন আরাম ও স্বাচ্ছন্দের দিকে এসেছি যার কোন ধ্বংস নেই। চিরস্থায়ী জান্নাতে এমন রাজত্ব রয়েছে যার কোন পতন নেই।
যুবক জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি সেখানে আমাকে স্মরণ করো? আমিতো তোমাকে ভুলতে পারিনি।
মেয়ে বলল, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে ভুলিনি। আমি আমার এবং তোমার মনিবের কাছে এই আকাঙ্খা করেছি যে, তিনি যেন আমাদেরকে একত্রিত করে দেন। সুতরাং তুমি তোমার নফসকে ইবাদতের উপর আটকিয়ে রাখো!
যুবক বলল, কতক্ষণ আমি নিজেকে আটকিয়ে রাখবো?
তখন সে বলল, অচিরেই তুমি আমার কাছে চলে আসবে । তারপর আমাকে উপভোগ করবে।
এই যুবক এই স্বপ্ন দেখার পর মাত্র সাত দিন জীবিত ছিল।
(রাওজাতুল মুহিব্বীব)
Comment