Announcement

Collapse
No announcement yet.

বিপদে ধৈর্য্যধারণ (পর্ব:১)

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বিপদে ধৈর্য্যধারণ (পর্ব:১)

    কে আছে এমন, যে পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন কিংবা কোন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে শোকাহত হয়নি, চক্ষুদ্বয় অশ্রু বিসর্জন করেনি; ভর দুপুরেও গোটা পৃথিবী ঝাপসা হয়ে আসেনি; সুদীর্ঘ, সুপ্রশস্ত পথ সরু ও সংকীর্ণ হয়ে যায়নি; যৌবন সত্ত্বেও সুস্থ দেহ নিশ্চল হয়ে পড়েনি; অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপ্রতিরোধ্য ক্রন্দন ধ্বনি তুলতে তুলতে গলা শুকিয়ে আসেনি; অবিশ্বাস সত্ত্বেও মর্মন্তুদ কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়নি; এই বুঝি চলে গেল, চির দিনের জন্য; আর কোন দিন ফিরে আসবে না; কোন দিন তার সাথে দেখা হবে না; শত আফসোস ঠিকরে পড়ে, কেন তাকে কষ্ট দিয়েছি; কেন তার বাসনা পূর্ণ করিনি; কেন তার সাথে রাগ করেছি; কেন তার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি।
    আরো কত ভয়াবহ স্মৃতির তাড়না তাড়িয়ে বেড়ায়, শোকাতুর করে, কাঁদায়। কত ভর্ৎসনা থেমে থেমে হৃদয়ে অস্বস্তির জন্ম দেয়, কম্পনের সূচনা করে অন্তরাত্মায়। পুনঃপুন একই অভিব্যক্তি আন্দোলিত হয় মুখের ভাষা যা ব্যক্ত করতে অক্ষম। হাতের কলম যা লিখতে অপারগ।
    হ্যাঁ, এ কঠিনতম মুহূর্ত, হতাশাময় পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করে শক্তি, সাহস ও সুদৃঢ় মনোবল উপহার দেয়ার মানসে আমাদের এ প্রয়াস। আমরা মুসলমান। আমাদের মনোনীত রব আল্লাহ। আমাদের পছন্দনীয় ধর্ম ইসলাম। আমাদের একমাত্র আদর্শ মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পক্ষান্তরে কাফেরদের জীবন সংকীর্ণ, তারা হতাশাগ্রস্ত, কারণ, আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক, কাফেরদের কোনো অভিভাবক নেই।
    মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জগতে মুমিনদের অবস্থার একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। তিনি বলেন :
    “একজন মুমিনের উদাহরণ একটি শস্যের মত, থেকে থেকে বাতাস তাকে দোলায়। তদ্রুপ একের পর এক মুসিবত অবিরাম অস্থির করে রাখে মুমিনকে। পক্ষান্তরে একজন মুনাফিকের উদাহরণ একটি দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়, দুলে না, কাত হয়েও পড়ে না, যতক্ষণ না শিকড় থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয় তাকে।” [মুসলিম : ৫০২৪]
    আবু হুরায়রা (রা.)-র সূত্রে বর্ণিত আরেকটি উদাহরণে আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :


    “ইমানদার ব্যক্তির উদাহরণ শস্যের নরম ডগার ন্যায়, বাতাস যে দিকেই বয়ে চলে, সেদিকেই তার পত্র-পল্লব ঝুঁকে পড়ে। বাতাস যখন থেমে যায়, সেও স্থির হয়ে দাঁড়ায়। ইমানদারগণ বালা-মুসিবত দ্বারা এভাবেই পরীক্ষিত হন। কাফেরদের উদাহরণ দেবদারু (শক্ত পাইন) বৃক্ষের ন্যায়, যা একেবারেই কঠিন ও সোজা হয়। আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তা মূলসহ উপড়ে ফেলেন।” [বুখারী : ৬৯১২]
    শস্যের শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে। তার সাথে একাকার হয়ে যায়। যদিও বাতাস শস্যকে এদিক-সেদিক দোলায়মান রাখে। কিন্তু ছুঁড়ে মারতে, টুকরা করতে বা নীচে ফেলে দিতে পারে না। তদ্রুপ মুসিবত যদিও মুমিনকে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত ও চিন্তামগ্ন রাখে, কিন্তু সে তাকে হতবিহ্বল, নিরাশ কিংবা পরাস্ত করতে পারে না। কারণ, আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস তাকে প্রেরণা দেয়, তার মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে, সর্বোপরি তাকে হেফাজত করে।
    এ পার্থিব জগৎ দুঃখ-বেদনা, দুর্যোগ-দুর্ঘটনা, সংহার ও জীবন নাশকতায় পরিপূর্ণ। এক সময় প্রিয়জনকে পাওয়ার আনন্দ হয়, আরেক সময় তাকে হারানোর দুঃখ। এক সময় সুস্থ, সচ্ছল, নিরাপদ জীবন, আরেক সময় অসুস্থ, অভাবী ও অনিরাপদ জীবন। মুহূর্তে জীবনের পট পালটে যায়, ভবিষ্যৎ কল্পনার প্রাসাদ দুমড়ে-মুচড়ে মাটিতে মিশে যায়। অথবা এমন সংকট ও কর্মশূন্যতা দেখা দেয়, যার সামনে সমস্ত বাসনা নিঃশেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় সব উৎসাহ-উদ্দীপনা।
    কারণ এ দুনিয়ায় নেয়ামত-মুসিবত, হর্ষ-বিষাদ, হতাশা-প্রত্যাশা সব কিছুর অবস্থান পাশাপাশি। ফলে কোন এক অবস্থার স্থিরতা অসম্ভব। পরিচ্ছন্নতার অনুচর পঙ্কিলতা, সুখের সঙ্গী দুঃখ। হর্ষ-উৎফুল্ল ব্যক্তির ক্রন্দন করা, সচ্ছল ব্যক্তির অভাবগ্রস্ত হওয়া এবং সুখী ব্যক্তির দুঃখিত হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
    এ হলো দুনিয়া ও তার অবস্থা। প্রকৃত মোমিনের এতে ধৈর্যধারণ বৈ উপায় নেই। বরং এতেই রয়েছে দুনিয়ার উত্থান-পতনের নিরাময় তথা উত্তম প্রতিষেধক।
    হাদিসে এসেছে :
    “ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপকতর কল্যাণ কাউকে প্রদান করা হয়নি।” [বুখারী : ১৭৪৫]
    অন্যত্র এরশাদ হয়েছে :

    “মুমিনের ব্যাপারটি চমৎকার, নেয়ামত অর্জিত হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যা তার জন্য মঙ্গলজনক এতে কৃতজ্ঞতার সওয়াব অর্জিত হয়। মুসিবতে পতিত হলে ধৈর্যধারণ করে, তাও তার জন্য কল্যাণকর এতে ধৈর্যের সওয়াব লাভ হয়।” [মুসলিম : ৫৩১৮]
    আল্লাহ তাআলা আমাদের ধৈর্য্যধারণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং একে তার সাহায্য ও সান্নিধ্য লাভের উপায় ঘোষণা করেছেন। বলা হচ্ছে :

    “হে মুমিনগণ, ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” [সূরা আল-বাকারা : ১৫৩ ]
    আরো বিশেষভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পার্থিব জীবন একটি পরীক্ষাগার, আমি তোমাদেরকে ভয়-ভীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র, ধন-সম্পদ, জনবল ও ফল-মূলের স্বল্পতার মাধ্যমে পরীক্ষা করব। হে রাসূল! আপনি ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ দিন। এরশাদ হচ্ছে :

    “আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের উপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।” [সূরা আল-বাকারা : ১৫৫-১৫৭]
    বস্তুত নিজ দায়িত্বে আত্মোনিয়োগ, মনোবল অক্ষুণ্ন ও কর্ম চঞ্চলতার জন্য ধৈর্য অপরিহার্য। কেউ সাফল্য বিচ্যুত হলে, বুঝতে হবে ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার অভাব রয়েছে তার মধ্যে। কারণ ধৈর্য্যের মতো শক্তিশালী চাবির মাধ্যমে সাফল্যের সমস্ত বদ্ধ কপাট উম্মুক্ত হয়। পাহাড়সম বাধার সম্মুখেও কর্মমুখরতা চলমান থাকে।
    মানব জাতির জীবন প্রবাহের পদে পদে ধৈর্যের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য বিধায় এ নিবন্ধের সূচনা।
    কেন ধৈর্যধারণ করব?
    কী তার ফল?
    কীভাবে ধৈর্যধারণ করব?
    কী তার পদ্ধতি?
    …ইত্যাদি বিষয়ের উপর কিছু উপদেশ উল্লেখ করা হবে। যা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর বিশেষ উপকারে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মুসিবত আর প্রতিকূলতায় নিত্যদিনের মত স্বাভাবিক জীবন উপহার দিবে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাবে সাফল্যমণ্ডিত জীবন লাভে।
    collected
    ( গাজওয়া হিন্দের ট্রেনিং) https://dawahilallah.com/showthread.php?9883

  • #2
    জাযাকুমুল্লাহ ইখওয়াতি ।

    Comment

    Working...
    X