শ্যাম বর্ণের মেয়েটি। পড়াশুনা শেষ হয়েছে দুবছর হয়ে এলো। সারাক্ষণ সে ভীষণ এক নিঃসঙ্গতা বোধ করে। চারপাশে সবাই আছে কিন্তু তারপরও সে বড় একা। সে জানে, তার একজন সঙ্গী প্রয়োজন—জীবনসঙ্গী। বয়ঃসন্ধির পর এতটা বছর কেটে গেছে—কিন্তু এমন নিঃসঙ্গতা সে কখনো বোধ করেনি। এখন যখন এক এক করে তার সব বান্ধবী ও ক্লাসমেটদের বিয়ে হয়ে গেল—তখন সে বুঝতে পারল, তার বিয়ে প্রয়োজন। ছেলেটা গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করছে কম করে হলেও তিন বছর! কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিয়ে, টিউশনী করে হাত খরচ চালাচ্ছে। বন্ধু মহলের সবাই বড় বড় পদে চাকরী করছে। এত দিনেও তার তেমন কোন গতি হলো না। এদিকে বাড়ির লোকদের কটু কথা শুনতে শুনতে সে বিরক্ত। মাঝে মাঝে মনে হয়, সব ছেড়ে দিয়ে এক দিকে চলে যাবে। কখনো কখনো মরার শখও জাগে তার। মেয়েটির বিয়ে হয়েছে পাচঁ বছর। এই পর্যন্ত সন্তানের মুখ দেখা হল না৷ বিয়ের পর পর অবশ্য সে সন্তান আশা করেনি। কিন্তু এখন দেখছে—আশেপাশে তাদের চেয়ে অনেক কমবয়সী মেয়েরা সন্তানের মা হয়ে গেছে। বড় সাধ জাগছে তার, সেও মা হবে। এটা হয়তো তার একটা জৈবিক চাহিদা যা এতদিন সে অনুভব করতে পারেনি। সবার জীবনেই এমন কত না পাওয়া থাকে! অনেকক্ষেত্রে নিছক সামাজিক বা জৈবিক কারনেই এই না পাওয়াগুলো আমাদের তাড়া করে বেড়ায়। খুব কম মানুষই পারে তার ইচ্ছা, কামনা-বাসনাকে আল্লাহর জন্য নিবেদিত করতে। যদি সেটা করা সম্ভব হতো, তবে না পাওয়ার বোঝাও হালকা হয়ে যেত। আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম বিনিয়মও আশা করা যেত। অবিবাহিত সেই মেয়েটির আশা তো এমন হতে পারত—আমি বিয়ে করব। তবে, সামাজিকতার কারণে নয়। বিয়ে আমাকে ফিতনা থেকে বাচিঁয়ে রাখবে। এর দ্বারা আমি বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন সংক্রান্ত আল্লাহর রাসূলের অনেক হাদিসের চর্চা করতে পারব। বেকার ছেলেটি পদমর্যাদা ও সামাজিকতার ধোঁয়ায় পড়ে না থেকে, ইসলামে বর্ণিত তার দায়িত্বের কথা স্মরণ রাখতে পারত! সে যদি মনে করত, আল্লাহ আমাকে পুরুষ করে সৃষ্টি করেছেন। অনেকের অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব বর্তায় আমার উপর। তখন সে বড় পদের চাকুরীর আশায় বসে না থেকে, যেকোন উপায়ে রিযিকের তালাশ করত! আবার চাকুরী না পাওয়ার হতাশায় আত্মহত্যা করার কথাও কখনো কল্পনায় আনত না। যে মেয়েটি মা হতে না পারার দুখে দিনাতিপাত করছে, সে যদি মানুষের কানকথা বা নিজের ইচ্ছার কথা না ভেবে, ইসলামের খেদমতে সন্তান কামনা করত! সে যদি ভাবত, আমার সন্তানকে আমি দ্বীনের বড় খাদেম, সৈনিক বানাব, মুজাদ্দিদ বানাব, তবে কত ভালোই না হতো! সন্তান তার তাকদীরে থাকলে সে আল্লাহর শুকরিয়া করত এবং নিজ পরিকল্পনা মোতাবেক তাকে বড় করার চেষ্টা করত। আর ভাগ্যে সন্তান না থাকলে, এটাকেই আল্লাহর ইচ্ছা গণ্য করে সে সন্তুষ্ট থাকত! তখন হয়ত কেবল এই নিয়তের কারণেই আল্লাহ তায়ালা তাকে সেই খাদেম সন্তান ও মুজাদ্দিদ সন্তানের মা হওয়ার সোয়াব দান করতেন।
Announcement
Collapse
No announcement yet.
সব কিছু আল্লাহর জন্যেই
Collapse
X
Comment