ঈমনদীপ্ত কিশোর কাহিনী
আমি তখন হিফজ খানায় পড়ি। বাংলা তেমন পড়তে যানি না, যেহেতো স্কুলে পড়িনি। তারপরও ঠেলেঠুলে অন্যদের তুলনায় ভালোই পড়তে পারি। বড় বোনের কাছ থেকে শিখেছি। যেই মাদরাসায় পড়তাম সেখানের নিয়ম ছিল, কোন ছাত্রের যদি পুরো বছর মাদরাসায় উপস্থিতি থাকে, একদিনের জন্যও অনুপুস্থিতি না থাকে, তাহলে তাকে মাদরাসার পক্ষ থেকে পুরস্কার দেয়া হয়। নিয়মুনাযায়ী আমিও সে বছর পুরস্কৃীত হলাম। আমার উস্তাদ ছিলেন আমার ভগ্নিপতী। আত্মীয় হওয়ার সুবাদে তিনি আমার জন্য সুন্দর একটা বই বাছাই করলেন। বইয়ের নাম ছিল ‘ঈমানদীপ্ত কিশোর কাহিনী’। লেখেকের নাম আমার মনে নেই। কারন, কোন বই পড়তে হলে লেখকের নাম দেখতে হয়, মনে রাখেতে হয়, এটাই বুঝতাম না। বই পড়ার নিয়ম কানুনই জানতাম না। শুধু পড়তাম। এই বইটি আমি পড়লাম। একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। অনেক কষ্ট হয়েছিল পড়তে। কারন বাংলায় দুর্বল। তবু আমাকে বইটি পড়ে শেষ করতে হবে। কারন যতই পড়ছিলাম ততই ভালো লাগছিল। যতই পড়ছিলাম হ্রদয়ের গহীনে শুপ্ত বিপ্লবী চেতনা ততই উদ্বেলিত হচ্ছিল। আমার বিপ্লবী চেতনা জাগিয়ে তোলার অগ্রপথিক হিসাবে কাজ করেছে এই বইটি। এই বইটি আমার অনেক উপকারে এসেছে। আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এতো ছোট বয়সে তো আমার জীবনের কোন মোড়ই ছিল না, ঘুরাবে কি? বরং বলা যায়, জীবন চলার শুরুতে এটা ছিল আমার পথের দিশারী। হাই ওয়েতে উঠার আগেই শতর্ক বার্তা দেল দেমাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে, তোমার জীবন চলার পথে সামনে আকাবাকা অনেক রাস্তা আসবে। ডানে বামে মোড় নিয়ে অনেক রাস্তা তোমার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। সেগুলোকে তোমার কাছে সহজ, সরল, সান্তিপুর্ণ এবং সঠিক পথ মনে হবে। এবং বাস্তবিক পক্ষে এই পথগুলো দুনিয়ার বিভিন্ন নায-নিয়ামত দ্বারা সুসজ্জিত থাকবে। পথ চলতে বেস আরাম লাগবে। পথের দু ধারে শারি শারি ফল, ফুল আর ছায়াদার গাছের সমাহার। মাঝে মাঝেই সুমিষ্ট পানির ঝর্ণা। মনজোড়ানো সুশীতল বাতাস। কন্টকবীহিন মশ্রিণ পথ। চলতে বেস আরাম। কিন্তু এ পথে চলা যাবে না। চিরোস্থায়ী শান্তি পেতে হলে ডানে বামে তাকানো যাবে না। চলতে হবে সোজা পথে। যে পথে রয়েছে শুধু কষ্ট আর কষ্ট। যে পথে নেই আরাম করার একটু সুব্যবস্থা। যে পথে নেই বিশ্রামের কোন সুযোগ। যে পথে নেই ফল, মুল আর ছায়াদার গাছের সমাহার। নেই সুমিষ্ট পানির ঝর্ণাধারা। পরকালে মুক্তি পেতে হলে চলতে হবে কন্টকাকির্ণ, উচু-নিচু এই পিচ্ছিল পথে। পাড়ি দিতে হবে টিলা, উপত্যকা, আকশছুঁয়া পাহাড়ের উচ্চ শ্রিঙ্গকে। চলতে হবে অনর্গল, অনবরত, অবিরাম। বিশ্রামের কোন সুযোগ নেই। আরামের কোন সুযোগ নেই। নেই একটু দাড়িয়ে কপালের ঘামটা মুছে নেয়ার সুযোগ। অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাওয়া ব্যক্তির জীবন রক্ষার অবীরাম সাঁতারের ন্যয় দীর্ঘ সাঁতার কাটতে হবে। রাসুলের আদর্শে আদর্শবান হতে হবে। ছাহাবীদের আদর্শে আদর্শবান হতে হবে। প্রতিচ্ছবি হতে হবে দিনের বেলা শত্রদের বিরুদ্ধে উন্মুক্ত তরবারী হাতে ঘোড়ছোওয়ার আর রাতের বেলা মাওলার পাক দরবারে ভিকারীর মত হাত পেতে অশ্রুসজল চোখে দণ্ডায়মান ব্যক্তিদের। যারা সারাদিন শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাতের বেলা ক্লান্ত দেহকে একটু আরাম দেয়ার পরিবর্তে সারা রাত মাওলা পাকের দরবারে সিজদায় পড়ে থাকতো। মাওলার এশক আর মুহাব্বাতে তাদের হ্রদয়ে উনুনে চড়ানো পাতিলের পানির টগবগের ন্যয় টগবগ শব্দ হত। হতে হবে আল্লাহর তরবারী খালেদ বিন ওয়লিদ, কিশোর ছাহাবী মায়াজ আর মুয়াজের মত। মৃত্যুর মুখে দাড়িয়েও বলতে হবে হযরত খুবায়েব রা: এর মত দীপ্ত কন্ঠে, • পরোয়া করি না আমি যদি আমার মৃত্যু হয় মুসলিম অবস্থায়, যে দিকেই ফিরে হোক সে মৃত্যু তাতে কোন সমস্যা নাই।
• কারন, তা তো আল্লাহ তায়ালার জন্য, তিনি যদি চান, প্রত্যেক শিরায় শিরায় করবেন তিনি বরকত দান।
এসব আবেগ-অনুভুতি চিন্তা-চেতনা সব হয়েছে ছোটকালের পড়া ঐ বই থেকে। কচি হ্রদয়ে গেথে গিয়েছিল ঐ বইয়ের অনুভুতিগুলো। সেগুলোই আজ কাজ করছে আমার মধ্যে ইঞ্জিনের তেল, মবিল হিসাবে।
তাই আমার পক্ষ থেকে সকল ভাইয়ের কাছে আবেদন, আপনাদের ছোট ছেলে, ভাই, বোন, অন্যান্য আত্মীয়স্বজন সকলকে ছোটকাল থেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। এই ধরণের বিপ্লবী চেতনার বই পড়তে দিবনে। তাতে তাদের জীবন গড়বে। এক একজন বীর সৈনিক হবে। আল্লাহ তায়ালা সকলকে তাওফিক দান করুন।
Comment