بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام علي محمد و اله وصحابته اجمعين
আমাদের এক ভাই আল্লাহ রব্বুল আলামিনকে স্বপ্নে দেখা সম্ভব কি-না এ ব্যপারে একটি প্রশ্ন করেছেন। তিনি তিনি ইমাম আবু হানিফা রহ. স্বপ্নে আল্লাহ তায়ালাকে ৯৯ বার দেখেছেন, এটি কিভাবে সম্ভব হলো। যা ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জিবনীতে বর্নিত হয়েছে। সেটির উত্তর দিতে কিছু মুতালায়া করতে হয়। অন্যভাইদের উপকারার্থে আমার তাহকীক এখানে উল্লেখ করেছি। কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে আলেম ভাইগন সংসোধন করে দিবেন।
যাজাকুমুল্লাহ ও খাইরান।
প্রশ্ন: আল্লাহ সুবহানাহুকে স্বপনে দেখা কি সম্ভব?
উত্তর: জাগ্রত অবস্থায় পৃথিবীতে আল্লাহ পাক রব্বুল ইজ্জাতের দর্শন সম্ভব নয়। তবে সপ্নযোগে আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ সম্ভব। এবং সেটি কি পদ্ধতিতে বা কি আকৃতিতে তা জানা সম্ভব নয়। কেননা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্য কোন আকৃতি সাব্যস্থ করা সঠিক নয়।
প্রমাণ:
১## হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. বর্ণনা করেন: একদিন ফজরের নামাযে রাসূল সা: অনেক দেরি করে আসলেন, এমনকি আমরা যেন সূর্যের কোন দেখতে পাচ্ছিলাম। তখন তিনি দ্রুত বেড়িয়ে আসলেন, এবং নামাযের ইক্কামত প্রদান করা হলে তিনি নমায শেষ করলেন। অত:পর রাসূল সাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম, নামযের সালামন্তে আমাদের কে বললেন তোমরা তোমাদের কাতারেই থাকো। এবং আমাদের দিকে ফিরলেন।
অত:পর তিন বললেন: আমি তোমারেদ নিকট আমার নামাযে বিলম্বে আসার কারণ বলব। আমি রাত্রে উঠে ওজু করলাম, অত:পর আল্লাহ তায়ালার তাওফীক অনুযায়ী নামায আদায় করলাম। এক পর্যায়ে আমি নামাযে ঘুমের ভাব অনুভব করলাম ও ঘুমিয়ে পরলাম।
আমি সপ্নে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন কে উত্তম আকৃতিতে দেখতে পেলাম।
আল্লাহ সুবহানাহু আমাকে বললেন; হে মুহাম্মাদ!
আমি উত্তর দিলাম, লাব্বাইক।
আল্লাহ সুবহানাহু আমাকে বললেন; কোন জিনিষ নিয়ে উর্দ্ধতন ফেরেশতারা প্রতিযোগিতা করে? আমি তিনবার বললাম, আমি জানিনা। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি আমার কাধের মাঝে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাফ্ফ (হাত) দেখতে পাই এবং আমার বুকের মধ্যে তার আনামিল (আঙ্গুলির) শিতলতা অনুবভ করি। অত:পর সকল বস্তু আমার সামনে উধভাষিত হয়ে যায়, এবং আমি বুঝতে পারি।
অত:পর আল্লাহ সুবহানাহু বলেন: হে মুহাম্মাদ! কোন বিষয় নিয়ে উর্দ্ধজগতের ফেরেশতাগণ প্রতিযোগীতা করে থাকে?
আমি বললাম: কাফফারাত (সম্পূরক/ গুনাহ মার্জানাকারী) বিষয় নিয়ে।
আল্লাহ তায়ালা বললেন: সে গুলো কি?
আমি বললাম: (ক) পায়ে হেটে নেক কাজে গমন করা।
(খ) নামাযের পর মসজিদে বসে থাকা।
(গ) কষ্টের সময় অত্যান্ত সুন্দর করে ওজু করা।
আল্লাহ তায়ালা বললেন: নেক কাজ কি?
আমি বললাম: ক্ষুদার্ত কে অন্য দেওয়া। নরম ভাষায় কথা বলা। মানুষের নিদ্রারত অবস্থায় নামায পাড়া। (তাহাজ্জুদ পড়া)
আল্লাহ তায়াল বললেন: আমার কাছে চাও।
আমি বললাম: হে আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে ভালো কাজ কারার এবং মন্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফীক কামনা করি। এবং দরিদ্রদের ভালো বাসতে পারি। ও আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন ও আমার প্রতি দয়া করবেন। আর কোনো সম্প্রদায় কে যদি আযাবের ইচ্ছা করেন, আমাকে আযাব থেকে মুক্ত রেখে মৃত্যু দান করেন। আমি আপনার নিকট আপনার ভালোবাসা, আপনার প্রিয় বস্তুর ভালোবাসা ও ঐসকল আ‘মালের প্রতি ভালোবাসা কামনা কারি যা আমাকে আপনার নৈকট্যবান করবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এগুলো সত্য, এ গুলো তোমরা পাঠ দাও ও শিখ।
সুনানে তিরমিযী: হাদীস ৩৩৩৫, হাসান সহীহ, মুসনাদে আহমাদ; ২২১৬২ সহীহ।
>> এ হাদীস দ্বারা আমরা এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালাকে স্বপ্নযোগ দেখেছেন।
২## হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. এ হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন; স্বপ্নযোগে আল্লাহ তায়ালাকে দেখার বিষয়ে এ হাদিস প্রসিদ্ধ, যারা এটি যাগ্রত অবস্থার সাথে সপৃক্ত করে তারা ভুল করেছে। এবং কাজী ইয়াজ রহ. স্বপ্নযোগে আল্লাহ তায়ালাকে দেখা সম্ভব এটি যে সঠিক মত। এর উপর ইজমা রয়েছে উল্লেখ করেছেন। (ইকমালু মু‘লিম, ২২০/৭)
এমনি ভাবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারীতে, ইমাম নববী রহ. শরহুল মুসলিমে কাজী ইয়াজ রহ. থেকে ইজমা বর্ণনা করেছেন।
৩## শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: মুমিনগণ তার আমল অনুযায়ী আল্লাহ পাক রব্বুল ইজ্জাত কে স্বপ্নযোগে বিভিন্ন ভাবে দেখে থাকে। যখন তার ঈমান সহীহ থাকে তখন আল্লাহ তায়ালে উত্তম আকৃতিতে দেখতে পাই। আর যখন তার ঈমান ত্রুটি যুক্ত থাকে তার ঈমানের অবস্থা অনুযায়ী দেখে থাকে। (মাজমায়ুল ফাতাওয়া ৩৯০/৩)
৪## ইমাম বগভী রহ. শরহুস সুন্নাহ তে, ইমাম কাজী হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ থেকে বর্ণনা করেন, যিনি নিজ যোগে শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম ছিলেন। তিনি বলেন; স্বপ্নযোগে আল্লাহ তায়ালার দর্শন সম্ভব। যদি কেউ আল্লাহ তায়ালাকে দেখে, এবং আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাত, ক্ষমা ও মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। তাহলে আল্লাহর ওয়াদ সত্য। যদি সে আল্লাহ তায়ালাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, তাহলে এটি তার প্রতি আল্লাহর দায়ার নিদর্শন। আর যদি তার থেকে বিমুখ দেখতে পায় তাহলে এটি তার পাপের কারণে সর্তকি করণ। আর যদি দুনিয়ার কোন বস্তু দিতে দেখতে পায়, তাহলে তা হবে, কোন রোগ, বিপাদ-আপদ, দু:খ-কষ্ট, যার সম্মুখিন সে দুনিয়াতে হবে যেগুলোরজন্য সে সাওয়াব পাবে এবং ঈমানের সাথে মৃত্যু হবে। (শরহুসসুন্নাহ ২৭৭/১২)
৫## আব্দুল আজিজ সাদহান হাফিজাহুল্লাহ (প্রসিদ্ধ সালাফী শাইখ) বলেন; আমি আব্দুল্লাহ বিন বাজ রহ. কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ তায়ালাকে স্বপ্নে দেখা কি সম্ভব? তখন তিনি বললেন আল্লাহ তায়ালাকে স্বরূপে দেখা সম্ভব নই, কোন নূর/আলো দেখতে পাওয়া এবং অন্তরে এ ধারণ হওয়া এটি তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তা সম্ভব।
৬## শাইখ সালেহ আল-উসাইমিন রহ. বলেন: রাসূল সাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন, অন্য মানুষের জন্য দেখা সম্ভব কি-না? বর্ণনা করা হয়, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন। এবং উলামগণ বলেছেন সেটি সম্ভব। আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
সালাফদের মধ্য হতে যারা স্বপ্নে আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন তাদের কয়েকটি বর্ণনা:
ইমাম তাবরানী রহ. মু‘জামুল আওসাতে উল্লেখ করেন:
রাক্বাবাহ বিন মাসকালাহ (রহঃ) বলেন- আমি স্বপ্নে আল্লাহকে দেখলাম ও তাঁর সাথে কথা বললাম। আল্লাহ আমাকে বললেন- আমার ইজ্জত ও জালালিয়তের কসম আমি ইব্রাহিম তায়িমী (রহঃ) এর স্বাগতম করবো।
(মু'জামুল আওসাত ৩য় খণ্ড ৩৭৯ পৃষ্ঠা, হাদিস-২৪৫৪)
## ঈমাম শামসুদ্দিন আয যাহাবী (রহঃ) সিয়ারু আ'লামিন নুবালা তে উল্লেখ করেন:
আব্দুল্লাহ বিন আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) [ঈমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর ছেলে] বলেন- আমি আমার পিতা ঈমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) কে বলতে শুনলাম "আমি ( আহমদ বিন হাম্বল) যখন স্বপ্নে আমার রবের সাথে সাক্ষাৎ করলাম তখন জিজ্ঞেস করলাম - ও আমার রব!! কি এমন কাজ আছে যা দ্বারা আমি তোমার নৈকট্য অর্জন করতে পারি?
উত্তর পেলাম - হে আহমদ!! আমার কালাম।
আমি আবার প্রশ্ন করলাম- ইয়া রব!! বুঝে পড়লে নাকি না বুঝে পড়লে?
উত্তর পেলাম- বুঝে পড়লেও অথবা না বুঝে পড়লেও।
(সিয়ারু আ'লামিন নুবালা- ১১ খণ্ড ৩৪৭)
##আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. আল-বেদায়া ওয়ান-নিহায়া কিতাবে উল্লেখ করেন:
ঈমাম আওযায়ী (রহঃ) বলেন- আমি যখন স্বপ্নে আল্লাহকে দেখলাম তখন আমাকে আল্লাহ প্রশ্ন করলেন- "তুমিই তো সে যে ভালো কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজের নিষেধ করে থাকো?
ঈমাম আওযায়ী (রহঃ) বললেন "হে আমার রব!! সব আপনার দয়া।
এরপর আমি বললাম- " হে আমার রব!! আমাকে ইসলামের উপর মৃত্যু দিয়েন।
তখন আমাকে আল্লাহ বললেন- "এবং সুন্নাতের উপরেও।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ১৩ খণ্ড ৪৪৭)
আমরা উপরোল্লিখত দলিল প্রামনের ভিত্তিতে আলহামদুলিল্লাহ স্পষ্ট বুঝতে পারছি, সালাফে সালিহিনের নিকট “কোনো মুত্তাকী পরহেজগার বান্দা আল্লাহকে স্বপ্নে দেখেছেন” এটি স্বভাবিক ব্যপার ছিল। এ ব্যপারে তারা কোন আপত্তি করেন নি। হাদীস ও সীরাতের কিতাবে স্বভাবিক ভাবেই উল্লেখ করেছেন। এবং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিনকে স্বপ্নে দেখা কুরআন সুন্নাহর কোন বিপরিত ও নই। তাই মুসলিমদের মাঝে এসকল বিষয় নিয়ে মতবিরোধ করা, একে অপরকে এ জন্য শত্রু জ্ঞান করা উনুচিৎ। বিশেষ করে মুজাহিদীনকে এ সকল সাধারণ ফুরুয়ী ইখতেলাফে পড়ে থেকে, মূল কাজ থেকে দুরে সরে থাকা খুবই অপছন্দনিয় কাজ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে এ ধরনের ফুরুয়ী বিষয়ের পিছনে মতবিরোধ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে সঠিক বিষয় বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন।
আমিন।
(আপনাদের নেক দুআতে ভুলবেন না)
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام علي محمد و اله وصحابته اجمعين
আমাদের এক ভাই আল্লাহ রব্বুল আলামিনকে স্বপ্নে দেখা সম্ভব কি-না এ ব্যপারে একটি প্রশ্ন করেছেন। তিনি তিনি ইমাম আবু হানিফা রহ. স্বপ্নে আল্লাহ তায়ালাকে ৯৯ বার দেখেছেন, এটি কিভাবে সম্ভব হলো। যা ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জিবনীতে বর্নিত হয়েছে। সেটির উত্তর দিতে কিছু মুতালায়া করতে হয়। অন্যভাইদের উপকারার্থে আমার তাহকীক এখানে উল্লেখ করেছি। কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে আলেম ভাইগন সংসোধন করে দিবেন।
যাজাকুমুল্লাহ ও খাইরান।
প্রশ্ন: আল্লাহ সুবহানাহুকে স্বপনে দেখা কি সম্ভব?
উত্তর: জাগ্রত অবস্থায় পৃথিবীতে আল্লাহ পাক রব্বুল ইজ্জাতের দর্শন সম্ভব নয়। তবে সপ্নযোগে আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ সম্ভব। এবং সেটি কি পদ্ধতিতে বা কি আকৃতিতে তা জানা সম্ভব নয়। কেননা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্য কোন আকৃতি সাব্যস্থ করা সঠিক নয়।
প্রমাণ:
১## হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. বর্ণনা করেন: একদিন ফজরের নামাযে রাসূল সা: অনেক দেরি করে আসলেন, এমনকি আমরা যেন সূর্যের কোন দেখতে পাচ্ছিলাম। তখন তিনি দ্রুত বেড়িয়ে আসলেন, এবং নামাযের ইক্কামত প্রদান করা হলে তিনি নমায শেষ করলেন। অত:পর রাসূল সাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম, নামযের সালামন্তে আমাদের কে বললেন তোমরা তোমাদের কাতারেই থাকো। এবং আমাদের দিকে ফিরলেন।
অত:পর তিন বললেন: আমি তোমারেদ নিকট আমার নামাযে বিলম্বে আসার কারণ বলব। আমি রাত্রে উঠে ওজু করলাম, অত:পর আল্লাহ তায়ালার তাওফীক অনুযায়ী নামায আদায় করলাম। এক পর্যায়ে আমি নামাযে ঘুমের ভাব অনুভব করলাম ও ঘুমিয়ে পরলাম।
আমি সপ্নে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন কে উত্তম আকৃতিতে দেখতে পেলাম।
আল্লাহ সুবহানাহু আমাকে বললেন; হে মুহাম্মাদ!
আমি উত্তর দিলাম, লাব্বাইক।
আল্লাহ সুবহানাহু আমাকে বললেন; কোন জিনিষ নিয়ে উর্দ্ধতন ফেরেশতারা প্রতিযোগিতা করে? আমি তিনবার বললাম, আমি জানিনা। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি আমার কাধের মাঝে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাফ্ফ (হাত) দেখতে পাই এবং আমার বুকের মধ্যে তার আনামিল (আঙ্গুলির) শিতলতা অনুবভ করি। অত:পর সকল বস্তু আমার সামনে উধভাষিত হয়ে যায়, এবং আমি বুঝতে পারি।
অত:পর আল্লাহ সুবহানাহু বলেন: হে মুহাম্মাদ! কোন বিষয় নিয়ে উর্দ্ধজগতের ফেরেশতাগণ প্রতিযোগীতা করে থাকে?
আমি বললাম: কাফফারাত (সম্পূরক/ গুনাহ মার্জানাকারী) বিষয় নিয়ে।
আল্লাহ তায়ালা বললেন: সে গুলো কি?
আমি বললাম: (ক) পায়ে হেটে নেক কাজে গমন করা।
(খ) নামাযের পর মসজিদে বসে থাকা।
(গ) কষ্টের সময় অত্যান্ত সুন্দর করে ওজু করা।
আল্লাহ তায়ালা বললেন: নেক কাজ কি?
আমি বললাম: ক্ষুদার্ত কে অন্য দেওয়া। নরম ভাষায় কথা বলা। মানুষের নিদ্রারত অবস্থায় নামায পাড়া। (তাহাজ্জুদ পড়া)
আল্লাহ তায়াল বললেন: আমার কাছে চাও।
আমি বললাম: হে আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে ভালো কাজ কারার এবং মন্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফীক কামনা করি। এবং দরিদ্রদের ভালো বাসতে পারি। ও আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন ও আমার প্রতি দয়া করবেন। আর কোনো সম্প্রদায় কে যদি আযাবের ইচ্ছা করেন, আমাকে আযাব থেকে মুক্ত রেখে মৃত্যু দান করেন। আমি আপনার নিকট আপনার ভালোবাসা, আপনার প্রিয় বস্তুর ভালোবাসা ও ঐসকল আ‘মালের প্রতি ভালোবাসা কামনা কারি যা আমাকে আপনার নৈকট্যবান করবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এগুলো সত্য, এ গুলো তোমরা পাঠ দাও ও শিখ।
সুনানে তিরমিযী: হাদীস ৩৩৩৫, হাসান সহীহ, মুসনাদে আহমাদ; ২২১৬২ সহীহ।
>> এ হাদীস দ্বারা আমরা এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালাকে স্বপ্নযোগ দেখেছেন।
২## হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. এ হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন; স্বপ্নযোগে আল্লাহ তায়ালাকে দেখার বিষয়ে এ হাদিস প্রসিদ্ধ, যারা এটি যাগ্রত অবস্থার সাথে সপৃক্ত করে তারা ভুল করেছে। এবং কাজী ইয়াজ রহ. স্বপ্নযোগে আল্লাহ তায়ালাকে দেখা সম্ভব এটি যে সঠিক মত। এর উপর ইজমা রয়েছে উল্লেখ করেছেন। (ইকমালু মু‘লিম, ২২০/৭)
এমনি ভাবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারীতে, ইমাম নববী রহ. শরহুল মুসলিমে কাজী ইয়াজ রহ. থেকে ইজমা বর্ণনা করেছেন।
৩## শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: মুমিনগণ তার আমল অনুযায়ী আল্লাহ পাক রব্বুল ইজ্জাত কে স্বপ্নযোগে বিভিন্ন ভাবে দেখে থাকে। যখন তার ঈমান সহীহ থাকে তখন আল্লাহ তায়ালে উত্তম আকৃতিতে দেখতে পাই। আর যখন তার ঈমান ত্রুটি যুক্ত থাকে তার ঈমানের অবস্থা অনুযায়ী দেখে থাকে। (মাজমায়ুল ফাতাওয়া ৩৯০/৩)
৪## ইমাম বগভী রহ. শরহুস সুন্নাহ তে, ইমাম কাজী হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ থেকে বর্ণনা করেন, যিনি নিজ যোগে শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম ছিলেন। তিনি বলেন; স্বপ্নযোগে আল্লাহ তায়ালার দর্শন সম্ভব। যদি কেউ আল্লাহ তায়ালাকে দেখে, এবং আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাত, ক্ষমা ও মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। তাহলে আল্লাহর ওয়াদ সত্য। যদি সে আল্লাহ তায়ালাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, তাহলে এটি তার প্রতি আল্লাহর দায়ার নিদর্শন। আর যদি তার থেকে বিমুখ দেখতে পায় তাহলে এটি তার পাপের কারণে সর্তকি করণ। আর যদি দুনিয়ার কোন বস্তু দিতে দেখতে পায়, তাহলে তা হবে, কোন রোগ, বিপাদ-আপদ, দু:খ-কষ্ট, যার সম্মুখিন সে দুনিয়াতে হবে যেগুলোরজন্য সে সাওয়াব পাবে এবং ঈমানের সাথে মৃত্যু হবে। (শরহুসসুন্নাহ ২৭৭/১২)
৫## আব্দুল আজিজ সাদহান হাফিজাহুল্লাহ (প্রসিদ্ধ সালাফী শাইখ) বলেন; আমি আব্দুল্লাহ বিন বাজ রহ. কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ তায়ালাকে স্বপ্নে দেখা কি সম্ভব? তখন তিনি বললেন আল্লাহ তায়ালাকে স্বরূপে দেখা সম্ভব নই, কোন নূর/আলো দেখতে পাওয়া এবং অন্তরে এ ধারণ হওয়া এটি তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তা সম্ভব।
৬## শাইখ সালেহ আল-উসাইমিন রহ. বলেন: রাসূল সাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন, অন্য মানুষের জন্য দেখা সম্ভব কি-না? বর্ণনা করা হয়, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন। এবং উলামগণ বলেছেন সেটি সম্ভব। আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
সালাফদের মধ্য হতে যারা স্বপ্নে আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন তাদের কয়েকটি বর্ণনা:
ইমাম তাবরানী রহ. মু‘জামুল আওসাতে উল্লেখ করেন:
রাক্বাবাহ বিন মাসকালাহ (রহঃ) বলেন- আমি স্বপ্নে আল্লাহকে দেখলাম ও তাঁর সাথে কথা বললাম। আল্লাহ আমাকে বললেন- আমার ইজ্জত ও জালালিয়তের কসম আমি ইব্রাহিম তায়িমী (রহঃ) এর স্বাগতম করবো।
(মু'জামুল আওসাত ৩য় খণ্ড ৩৭৯ পৃষ্ঠা, হাদিস-২৪৫৪)
## ঈমাম শামসুদ্দিন আয যাহাবী (রহঃ) সিয়ারু আ'লামিন নুবালা তে উল্লেখ করেন:
আব্দুল্লাহ বিন আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) [ঈমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর ছেলে] বলেন- আমি আমার পিতা ঈমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) কে বলতে শুনলাম "আমি ( আহমদ বিন হাম্বল) যখন স্বপ্নে আমার রবের সাথে সাক্ষাৎ করলাম তখন জিজ্ঞেস করলাম - ও আমার রব!! কি এমন কাজ আছে যা দ্বারা আমি তোমার নৈকট্য অর্জন করতে পারি?
উত্তর পেলাম - হে আহমদ!! আমার কালাম।
আমি আবার প্রশ্ন করলাম- ইয়া রব!! বুঝে পড়লে নাকি না বুঝে পড়লে?
উত্তর পেলাম- বুঝে পড়লেও অথবা না বুঝে পড়লেও।
(সিয়ারু আ'লামিন নুবালা- ১১ খণ্ড ৩৪৭)
##আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. আল-বেদায়া ওয়ান-নিহায়া কিতাবে উল্লেখ করেন:
ঈমাম আওযায়ী (রহঃ) বলেন- আমি যখন স্বপ্নে আল্লাহকে দেখলাম তখন আমাকে আল্লাহ প্রশ্ন করলেন- "তুমিই তো সে যে ভালো কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজের নিষেধ করে থাকো?
ঈমাম আওযায়ী (রহঃ) বললেন "হে আমার রব!! সব আপনার দয়া।
এরপর আমি বললাম- " হে আমার রব!! আমাকে ইসলামের উপর মৃত্যু দিয়েন।
তখন আমাকে আল্লাহ বললেন- "এবং সুন্নাতের উপরেও।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ১৩ খণ্ড ৪৪৭)
আমরা উপরোল্লিখত দলিল প্রামনের ভিত্তিতে আলহামদুলিল্লাহ স্পষ্ট বুঝতে পারছি, সালাফে সালিহিনের নিকট “কোনো মুত্তাকী পরহেজগার বান্দা আল্লাহকে স্বপ্নে দেখেছেন” এটি স্বভাবিক ব্যপার ছিল। এ ব্যপারে তারা কোন আপত্তি করেন নি। হাদীস ও সীরাতের কিতাবে স্বভাবিক ভাবেই উল্লেখ করেছেন। এবং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিনকে স্বপ্নে দেখা কুরআন সুন্নাহর কোন বিপরিত ও নই। তাই মুসলিমদের মাঝে এসকল বিষয় নিয়ে মতবিরোধ করা, একে অপরকে এ জন্য শত্রু জ্ঞান করা উনুচিৎ। বিশেষ করে মুজাহিদীনকে এ সকল সাধারণ ফুরুয়ী ইখতেলাফে পড়ে থেকে, মূল কাজ থেকে দুরে সরে থাকা খুবই অপছন্দনিয় কাজ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে এ ধরনের ফুরুয়ী বিষয়ের পিছনে মতবিরোধ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে সঠিক বিষয় বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন।
আমিন।
(আপনাদের নেক দুআতে ভুলবেন না)
Comment