কেন সরকারী সন্ত্রাসী (সামরিক বাহিনী) এর কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়া যাবে না? (একটি পর্যালোচনা)
.
এই সন্ত্রাসীদের মুল সমস্যা:
১)"বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ কুফরি সংবিধান এর প্রতি আনুগত্যের শপথ পাঠ এবং বিশ্বস্ততা (ইমান) প্রদর্শনের অঙ্গীকার করা। " এবং "এই কুফরি বিধান রক্ষা করা "।
.
২)"ইসলাম প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়া এবং গণতন্ত্রে পক্ষ হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা "
.
এখন আসুন আমরা বোঝার চেষ্টা করি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হওয়া কেন কুফরি ??
.
[[ গণতন্ত্র হল জনগণের শাসন। যার অর্থ হল আইন প্রণয়ন এবং হালাল-হারাম নির্ধারণের অধিকার জনগণের। ইসা (আ) -এর জন্মের আগে প্রাচীন গ্রীসে এর অস্তিত্ব ছিল। ইংরেজ এবং ফরাসী বিপ্লবের সময় থেকে এ ধারণা আরো বিকশিত হতে হতে আজকের অবস্থায় পৌছেছে।
.
এটি নির্জলা কুফর, বিধান দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহ তা’আলার, যার কোন শরীক নেই। যেমনটা তিনি বলেন,
.
وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا
“হুকুম দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি কাউকে নিজের সাথে শরীক করেন না” [সূরা কাহাফ: ২৬]
.
- গণতন্ত্র ও সংসদে অংশগ্রহণের ব্যাপারে হুকুম – শায়খ নাসির আল ফাহদ.. ]]
.
গণতন্ত্রের মতো আরো একটি জঘন্য আকিদা হলো সেকুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ। আমি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ' বা সেক্যুলারিজমকে বলি গণতন্ত্রের প্রাণ। কারণ গণতন্ত্র এই সেকুলারিজম ছাড়া প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
.
সেকুলারিজমের মূল অর্থ হল রাষ্ট্র সব প্রকার ধর্ম থেকে আলাদা থাকবে, রাষ্ট্রের বিধিবিধান তৈরি করবে মানুষ অর্থাৎ মানুষই একমাত্র রাষ্ট্রপরিচালনা করবে তার নিজস্ব আইন কোন আইনের মাধ্যমে। যা গণতন্ত্রের মূল কথা।
.
যে ব্যক্তি গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ আকিদায় বিশ্বাসী হবে সে কাফের হয়ে যাবে। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। যে শাসক গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্র চালাবে সে তাগুত। তাগুত মানে সে নিজেকে মানুষের জন্য আইন প্রণেতা মনে করে। প্রণয়ন করা আল্লাহ তায়ালার হক। যে ব্যক্তি নিজেকে আইনপ্রণেতা মনে করে সে নিজেকে আল্লাহর পরিবর্তে রবের আসনে বসায় যেমন ফেরাউন বলেছিল আমি তোমাদের রব। তাই যে শাসক গোষ্ঠী গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ চালায় তারা অবশ্যই কাফের। এতে কোন সন্দেহ নাই।
.
[[ আলিমরা এব্যাপারে একমত যে, যে কেউ সেক্যুলারিজমকে আঁকড়ে ধরে রাখে সে কাফির।
.
কারন এই মতবাদ কুফর ও নাস্তিক্যবাদের অনুমোদন দেয়, এবং এতে নাস্তিকদের জন্য মুওয়ালাতকে বৈধ করা হয়, এবং ‘ইচ্ছা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র নামে তাদের কুফরির প্রসার ঘটাতে দেয় এবং তাদের কাছে এসবকিছুই প্রশংসনীয়। কারন ধর্মনিরপেক্ষতবাদীরা দাবি করে যতো বেশি যতো ধরনের মত, আকিদা ও কুফরের প্রসার হবে ততোই তা মানবজাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির পরিচায়ক হবে। আল্লাহ্* তাদের পাকড়াও করুন।
.
একইভাবে তারা আরো বিশ্বাস করে যে আল্লাহ্* তা’আলার আইনকে প্রতিহত করে, একে সরিয়ে দিয়ে সেখানে গণতন্ত্রকে আনা এক মহান কাজ। সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হল এমন একটি মতবাদ যা মানুষকে রব ও আইনপ্রণেতা (হাকিম) এর আসনে বসায়, তাকে আল্লাহ্* তা’আলার শরীয়াহ্ বাতিলের এবং এর স্থলে অন্য আইন প্রনয়ন ও প্রতিস্থাপনের অধিকার দেওয়া হয়। সেকুলারিজমের মাধ্যমে মানুষ তার প্রবৃত্তি ও খাহেশাতকে রব ও নিজের চিন্তাকে মালিক বানিয়ে নেয়। সেকুলারিজম অনুযায়ী আল্লাহ্* তা’আলার আনুগত্যের বদলে আনুগত্য করতে হবে মানবীয় প্রবৃত্তি, খাহেশাত ও চিন্তার। এ আনুগত্য হতে হবে সম্পূর্ণ এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চেয়েও এই আনুগত্য প্রাধান্য পাবে।
.
যে কেউ এসকল কুফরি মতাদর্শের ওপর ইমান আনবে, যা কিনা দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসলাম বিনস্টকারী বিশ্বাস, তারা কাফির – এমনকি যদিও তারা শাহাদাতের বাণীসমূহ উচ্চারণ করে। এই মৌখিক উচ্চারণ তাদের সামান্যতম উপকারেও আসবে না। তবে ঐ ব্যক্তির উপর তাকফির করা উচিত হবে না, যার কুফরিসমূহ এখনো কিছুটা লুকায়িত আছে, যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট হুজ্জাহ্ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাকে কাফির ঘোষণা দেবার প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর হয়ে যায়।
.
এটি সুবিদিত যে, যখন কারো কাছ থেকে ইসলামকে বাতিলকারী/বিনষ্টকারী কোন সুস্পষ্ট বিষয় প্রকাশিত হয় তখন তার উপর কুফরের হুকুম লাগানোর ক্ষেত্রে কোন শর্ত নেই।
.
যেমন, আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিংবা আল্লাহ্*র রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবমাননা, কিংবা আল্লাহ্*র দ্বীনের অবমাননা, কিংবা একাধিক ইলাহতে বিশ্বাস বা ওয়াহদাতুল ওজুদে বিশ্বাস, এবং এধরণের ইসলাম বাতিলকারী বিষয়সমূহ যা ইসলামের মূলের সাথে স্পষ্টভাবেই সাংঘর্ষিক হবার ব্যাপারটি গোপন না – এমন কাজ করা ব্যাক্তির উপর কুফরের হুকুম দেয়ার ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি উক্ত কাজকে কুফর হিসাবে জানে কি না বা কোন বা তাকফিরের অন্যান্য প্রতিবন্ধকের কোন শর্ত নেই। বরং এই শর্ত (কুফরকারীর এটা জানা যে সে যা করছে তা কুফর) কেবলমাত্র সূক্ষ্ম বিষয়সমূহের বেলায় প্রযোজ্য। আর এসব এমন ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হচ্ছে সে মুখে ইমানের সাক্ষ্যদ্বয় দেয়ার পর ঈমান বিনষ্টকারী কোন কাজ করে।
.
- সেকুলারিস্ট বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কি কাফির?--শায়খ ড. হামিদ বিন আব্দুল্লাহ আল-‘আলি। ]]
.
বাংলাদেশের সংবিধান কুফরের উপর প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশে সংবিধানে বলা আছে..
"দেশটি হবে প্রজাতান্ত্রিক, গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি, জনগণ হবে সকল ক্ষমতার উৎস এবং বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস হলেও দেশ আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা -কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।"
.
এই কুফরি সংবিধানকে মেনে নেয়ার জন্য কেউ যদি শপথ গ্রহন করে তার ইমান থাকবে না।
.
তাই এই সংবিধানের বিধিবিধান রক্ষা করা - এই সংবিধানের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এমনকি এই সংবিধানের আইন বাস্তবায়ন করার জন্য শপথ গ্রহন করা কুফর। যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
.
শাইখ নাসির আল ফাহাদ - বলেন:
"যে সংবিধানটি মূলত কুফর ছাড়া কিছুই নয়। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে আরো অনেক মুকাফফিরাত, আর এই সংবিধানকে সম্মান করাও কুফর। তাহলে কীভাবে আপনি এই সংবিধানের ওপর শপথ করেন? কীভাবে এ সংবিধানকে সম্মান ও বাস্তবায়নের শপথ করেন!"
.
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
.
وَمَاخَلَقْتُالْجِنَّوَالْإِنْسَإِلَّالِيَعْبُدُون ِ
“এবং আমি মানুষ ও জ্বিন জাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি”
(সূরা যারিয়াতঃ৫৬)
.
যার মানে হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহ তা’আলারই ইবাদত করতে হবে। তিনি আরো বলেন,
.
وَلَقَدْبَعَثْنَافِيكُلِّأُمَّةٍرَسُولًاأَنِاعْبُد ُوااللَّهَوَاجْتَنِبُواالطَّاغُوتَۖ
“এবং নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তারা যেন শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুতকে বর্জন করে…”
(সূরা নাহলঃ৩৬)
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“…এজন্য যে কেউ পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের বিধান ছাড়া ফায়সালা করে সে হচ্ছে তাগুত।” [মাজমূ আল ফাতাওয়া, খণ্ডঃ২৮, পৃষ্টাঃ২০১]
.
ইবনুল কাইয়্যুম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
.
“এমন প্রত্যেকেই তাগুত যারা সীমা অতিক্রম করে যা হতে পারে ইবাদত, অনুসরণ কিংবা ইবাদতের ক্ষেত্রে। সুতরাং, যেকোনো মানবগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তাগুত হচ্ছে সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবর্তে বিচারক হিসাবে মানা হয়, অথবা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয়, অথবা আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে যাকে অনুসরণ করা হয়, অথবা অজ্ঞতাবশত যার অনুগত্য করা হয় এমন বিষয়ে যেখানে অনুগত্য শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত।’’
.
তিনি আরো বলেন,
.
“আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিচার-ফায়সালা করার জন্য যে বিধ-বিধান নিয়ে এসেছেন তা অনুযায়ী যে ব্যক্তি বিচার-ফায়সালা করে না অথবা তার অনুসরণ করে না, সে নিশ্চিতভাবেই একটি তাগুতের অনুসরণ করছে।’’ [ইলাম আল মুওয়াকিঈন, খণ্ডঃ১,পৃষ্টাঃ৫০]
.
বর্তমান সময়ে ইবাদতকৃত এমন একটি তাগুত, যার প্রতি ও যার অনুসারীদের প্রতি প্রত্যেক তাওহীদপন্থী মানুষের অবিশ্বাস পোষণ করতে হবে যেন সে আল্লাহ প্রদত্ত সেই দৃঢ়তম মজবুত হাতলটি ধরার মাধ্যমে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারে, তা হচ্ছে এই ক্ষণস্থায়ী মানব সৃষ্ট দেব-দেবী যা হলো তথাকথিত আইনপ্রণেতা।
.
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
.
أَمْلَهُمْشُرَكَاءُشَرَعُوالَهُمْمِنَالدِّينِمَالَ مْيَأْذَنْبِهِاللَّهُۚوَلَوْلَاكَلِمَةُالْفَصْلِلَ قُضِيَ بَيْنَهُمْ ۗ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“অথবা তাদের কী আল্লাহর সাথে অংশীদার আছে যারা তাদের জন্য একটি দ্বীন নিয়ে এসেছে আল্লাহ যার অনুমতি দেন নি? ফায়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েই যেতো। এবং নিশ্চয়ই জালেমদের জন্য রয়েছে যান্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’’ (সূরা শূরাঃ ২১)
.
অনেক মানুষই এসব বিধানদাতাদের গ্রহণ করেছে এবং আইন প্রনয়নের বিষয়টিকে তাদের জন্য, তাদের সংসদের জন্য, এবং তাদের আঞ্চলিক, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শাসন কর্তৃত্বের জন্য একটি অধিকার ও বৈশিষ্ট্য হিসেবে মেনে নিয়েছে।
.
-[তাওহীদ এর দুই রুকন- শাইখ আসিম আল মাকদিসি ]
.
এই তাগুত সরকারের অধিনে চাকরি করা- এই তাগুতদের বিধান প্রতিষ্ঠার শপথ নেয়ার পর কোনো ব্যক্তি মুসলিম থাকতে পারে না। যেখানে ইমানের অন্যতম শর্ত হলো তাগুত বর্জন করা।তাই যারা সামরিক বিভাগে কাজ করছে তাদের ইমান গ্রহনযোগ্য না।
.
[[ সুতরাং চাকুরীর মাধ্যমে যদি সরকার ও সরকারি লোকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করা, তাদের এবং তাদের বিধিবিধান ও নীতিমালার সাহায্য-সহযোগিতা করা উদ্দেশ্য হয়; চাই তা দাওয়াতের মাধ্যমে হোক, পরিচালনার মাধ্যমে হোক অথবা স্বইচ্ছায় তাদের আদালতে গিয়ে হোক, তাহলে সন্দেহ নেই যে, এ জাতীয় চাকুরী সরাসরি শিরক, স্পষ্ট কুফুরী এবং আল্লাহর দ্বীন থেকে সরে যাওয়া।
.
যে এ জাতীয় চাকুরীতে লিপ্ত সে তাগুতদেরকে পরিত্যাগ করার মূলনীতি ভঙ্গ করেছে। প্রকৃত বিষয় যাচাই করা ছাড়া তার ইসলাম গ্রহণযোগ্য না।
.
সরকারি চাকুরির হুকুম।
--শায়খ আবুন নূর ফিলিস্তিনী হাফিজাহুল্লাহ ]]
.
তাই একজন মুসলিন নারীকে বুঝে শুনে কখনই কোনো তাগুতের ইবাদতকারীর কাছে বিয়ে দেওয়া বৈধ হবে না।
.
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
.
আর তোমরা (তোমাদের নারীদের) মুশরিক পুরুষদের কাছে বিয়ে দিয়ো না। যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।
.
নিঃসন্দেহে একজন মুমিন দাস যে কোনো মুশরিক পুরুষের চেয়ে অনেক উত্তম। যদিও সেই মুশরিক পুরুষকে তোমাদের বেশি ভালো লাগে।
.
কারণ তারা (মুশরিকরা) সকলে তো জাহান্নামের দিকে ডাকে আর আল্লাহ তার বিধানের মাধ্যমে জান্নাত ও মাগফিরাতের দিকে আহবান করেন। তিনি তার আয়াতসমূহ মানুষের উপকারার্থে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তা অনুসরণ করতে পারে।-
.
[সূরা বাকারা (২) : ২২১]
.
✔ লেখাটি শেয়ার করুন। অথবা কপি করে ছড়িয়ে দিন।
.
এই সন্ত্রাসীদের মুল সমস্যা:
১)"বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ কুফরি সংবিধান এর প্রতি আনুগত্যের শপথ পাঠ এবং বিশ্বস্ততা (ইমান) প্রদর্শনের অঙ্গীকার করা। " এবং "এই কুফরি বিধান রক্ষা করা "।
.
২)"ইসলাম প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়া এবং গণতন্ত্রে পক্ষ হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা "
.
এখন আসুন আমরা বোঝার চেষ্টা করি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হওয়া কেন কুফরি ??
.
[[ গণতন্ত্র হল জনগণের শাসন। যার অর্থ হল আইন প্রণয়ন এবং হালাল-হারাম নির্ধারণের অধিকার জনগণের। ইসা (আ) -এর জন্মের আগে প্রাচীন গ্রীসে এর অস্তিত্ব ছিল। ইংরেজ এবং ফরাসী বিপ্লবের সময় থেকে এ ধারণা আরো বিকশিত হতে হতে আজকের অবস্থায় পৌছেছে।
.
এটি নির্জলা কুফর, বিধান দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহ তা’আলার, যার কোন শরীক নেই। যেমনটা তিনি বলেন,
.
وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا
“হুকুম দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি কাউকে নিজের সাথে শরীক করেন না” [সূরা কাহাফ: ২৬]
.
- গণতন্ত্র ও সংসদে অংশগ্রহণের ব্যাপারে হুকুম – শায়খ নাসির আল ফাহদ.. ]]
.
গণতন্ত্রের মতো আরো একটি জঘন্য আকিদা হলো সেকুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ। আমি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ' বা সেক্যুলারিজমকে বলি গণতন্ত্রের প্রাণ। কারণ গণতন্ত্র এই সেকুলারিজম ছাড়া প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
.
সেকুলারিজমের মূল অর্থ হল রাষ্ট্র সব প্রকার ধর্ম থেকে আলাদা থাকবে, রাষ্ট্রের বিধিবিধান তৈরি করবে মানুষ অর্থাৎ মানুষই একমাত্র রাষ্ট্রপরিচালনা করবে তার নিজস্ব আইন কোন আইনের মাধ্যমে। যা গণতন্ত্রের মূল কথা।
.
যে ব্যক্তি গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ আকিদায় বিশ্বাসী হবে সে কাফের হয়ে যাবে। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। যে শাসক গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্র চালাবে সে তাগুত। তাগুত মানে সে নিজেকে মানুষের জন্য আইন প্রণেতা মনে করে। প্রণয়ন করা আল্লাহ তায়ালার হক। যে ব্যক্তি নিজেকে আইনপ্রণেতা মনে করে সে নিজেকে আল্লাহর পরিবর্তে রবের আসনে বসায় যেমন ফেরাউন বলেছিল আমি তোমাদের রব। তাই যে শাসক গোষ্ঠী গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ চালায় তারা অবশ্যই কাফের। এতে কোন সন্দেহ নাই।
.
[[ আলিমরা এব্যাপারে একমত যে, যে কেউ সেক্যুলারিজমকে আঁকড়ে ধরে রাখে সে কাফির।
.
কারন এই মতবাদ কুফর ও নাস্তিক্যবাদের অনুমোদন দেয়, এবং এতে নাস্তিকদের জন্য মুওয়ালাতকে বৈধ করা হয়, এবং ‘ইচ্ছা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র নামে তাদের কুফরির প্রসার ঘটাতে দেয় এবং তাদের কাছে এসবকিছুই প্রশংসনীয়। কারন ধর্মনিরপেক্ষতবাদীরা দাবি করে যতো বেশি যতো ধরনের মত, আকিদা ও কুফরের প্রসার হবে ততোই তা মানবজাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির পরিচায়ক হবে। আল্লাহ্* তাদের পাকড়াও করুন।
.
একইভাবে তারা আরো বিশ্বাস করে যে আল্লাহ্* তা’আলার আইনকে প্রতিহত করে, একে সরিয়ে দিয়ে সেখানে গণতন্ত্রকে আনা এক মহান কাজ। সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হল এমন একটি মতবাদ যা মানুষকে রব ও আইনপ্রণেতা (হাকিম) এর আসনে বসায়, তাকে আল্লাহ্* তা’আলার শরীয়াহ্ বাতিলের এবং এর স্থলে অন্য আইন প্রনয়ন ও প্রতিস্থাপনের অধিকার দেওয়া হয়। সেকুলারিজমের মাধ্যমে মানুষ তার প্রবৃত্তি ও খাহেশাতকে রব ও নিজের চিন্তাকে মালিক বানিয়ে নেয়। সেকুলারিজম অনুযায়ী আল্লাহ্* তা’আলার আনুগত্যের বদলে আনুগত্য করতে হবে মানবীয় প্রবৃত্তি, খাহেশাত ও চিন্তার। এ আনুগত্য হতে হবে সম্পূর্ণ এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চেয়েও এই আনুগত্য প্রাধান্য পাবে।
.
যে কেউ এসকল কুফরি মতাদর্শের ওপর ইমান আনবে, যা কিনা দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসলাম বিনস্টকারী বিশ্বাস, তারা কাফির – এমনকি যদিও তারা শাহাদাতের বাণীসমূহ উচ্চারণ করে। এই মৌখিক উচ্চারণ তাদের সামান্যতম উপকারেও আসবে না। তবে ঐ ব্যক্তির উপর তাকফির করা উচিত হবে না, যার কুফরিসমূহ এখনো কিছুটা লুকায়িত আছে, যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট হুজ্জাহ্ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাকে কাফির ঘোষণা দেবার প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর হয়ে যায়।
.
এটি সুবিদিত যে, যখন কারো কাছ থেকে ইসলামকে বাতিলকারী/বিনষ্টকারী কোন সুস্পষ্ট বিষয় প্রকাশিত হয় তখন তার উপর কুফরের হুকুম লাগানোর ক্ষেত্রে কোন শর্ত নেই।
.
যেমন, আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিংবা আল্লাহ্*র রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবমাননা, কিংবা আল্লাহ্*র দ্বীনের অবমাননা, কিংবা একাধিক ইলাহতে বিশ্বাস বা ওয়াহদাতুল ওজুদে বিশ্বাস, এবং এধরণের ইসলাম বাতিলকারী বিষয়সমূহ যা ইসলামের মূলের সাথে স্পষ্টভাবেই সাংঘর্ষিক হবার ব্যাপারটি গোপন না – এমন কাজ করা ব্যাক্তির উপর কুফরের হুকুম দেয়ার ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি উক্ত কাজকে কুফর হিসাবে জানে কি না বা কোন বা তাকফিরের অন্যান্য প্রতিবন্ধকের কোন শর্ত নেই। বরং এই শর্ত (কুফরকারীর এটা জানা যে সে যা করছে তা কুফর) কেবলমাত্র সূক্ষ্ম বিষয়সমূহের বেলায় প্রযোজ্য। আর এসব এমন ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হচ্ছে সে মুখে ইমানের সাক্ষ্যদ্বয় দেয়ার পর ঈমান বিনষ্টকারী কোন কাজ করে।
.
- সেকুলারিস্ট বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কি কাফির?--শায়খ ড. হামিদ বিন আব্দুল্লাহ আল-‘আলি। ]]
.
বাংলাদেশের সংবিধান কুফরের উপর প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশে সংবিধানে বলা আছে..
"দেশটি হবে প্রজাতান্ত্রিক, গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি, জনগণ হবে সকল ক্ষমতার উৎস এবং বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস হলেও দেশ আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা -কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।"
.
এই কুফরি সংবিধানকে মেনে নেয়ার জন্য কেউ যদি শপথ গ্রহন করে তার ইমান থাকবে না।
.
তাই এই সংবিধানের বিধিবিধান রক্ষা করা - এই সংবিধানের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এমনকি এই সংবিধানের আইন বাস্তবায়ন করার জন্য শপথ গ্রহন করা কুফর। যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
.
শাইখ নাসির আল ফাহাদ - বলেন:
"যে সংবিধানটি মূলত কুফর ছাড়া কিছুই নয়। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে আরো অনেক মুকাফফিরাত, আর এই সংবিধানকে সম্মান করাও কুফর। তাহলে কীভাবে আপনি এই সংবিধানের ওপর শপথ করেন? কীভাবে এ সংবিধানকে সম্মান ও বাস্তবায়নের শপথ করেন!"
.
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
.
وَمَاخَلَقْتُالْجِنَّوَالْإِنْسَإِلَّالِيَعْبُدُون ِ
“এবং আমি মানুষ ও জ্বিন জাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি”
(সূরা যারিয়াতঃ৫৬)
.
যার মানে হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহ তা’আলারই ইবাদত করতে হবে। তিনি আরো বলেন,
.
وَلَقَدْبَعَثْنَافِيكُلِّأُمَّةٍرَسُولًاأَنِاعْبُد ُوااللَّهَوَاجْتَنِبُواالطَّاغُوتَۖ
“এবং নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তারা যেন শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুতকে বর্জন করে…”
(সূরা নাহলঃ৩৬)
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“…এজন্য যে কেউ পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের বিধান ছাড়া ফায়সালা করে সে হচ্ছে তাগুত।” [মাজমূ আল ফাতাওয়া, খণ্ডঃ২৮, পৃষ্টাঃ২০১]
.
ইবনুল কাইয়্যুম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
.
“এমন প্রত্যেকেই তাগুত যারা সীমা অতিক্রম করে যা হতে পারে ইবাদত, অনুসরণ কিংবা ইবাদতের ক্ষেত্রে। সুতরাং, যেকোনো মানবগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তাগুত হচ্ছে সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবর্তে বিচারক হিসাবে মানা হয়, অথবা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয়, অথবা আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে যাকে অনুসরণ করা হয়, অথবা অজ্ঞতাবশত যার অনুগত্য করা হয় এমন বিষয়ে যেখানে অনুগত্য শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত।’’
.
তিনি আরো বলেন,
.
“আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিচার-ফায়সালা করার জন্য যে বিধ-বিধান নিয়ে এসেছেন তা অনুযায়ী যে ব্যক্তি বিচার-ফায়সালা করে না অথবা তার অনুসরণ করে না, সে নিশ্চিতভাবেই একটি তাগুতের অনুসরণ করছে।’’ [ইলাম আল মুওয়াকিঈন, খণ্ডঃ১,পৃষ্টাঃ৫০]
.
বর্তমান সময়ে ইবাদতকৃত এমন একটি তাগুত, যার প্রতি ও যার অনুসারীদের প্রতি প্রত্যেক তাওহীদপন্থী মানুষের অবিশ্বাস পোষণ করতে হবে যেন সে আল্লাহ প্রদত্ত সেই দৃঢ়তম মজবুত হাতলটি ধরার মাধ্যমে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারে, তা হচ্ছে এই ক্ষণস্থায়ী মানব সৃষ্ট দেব-দেবী যা হলো তথাকথিত আইনপ্রণেতা।
.
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
.
أَمْلَهُمْشُرَكَاءُشَرَعُوالَهُمْمِنَالدِّينِمَالَ مْيَأْذَنْبِهِاللَّهُۚوَلَوْلَاكَلِمَةُالْفَصْلِلَ قُضِيَ بَيْنَهُمْ ۗ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“অথবা তাদের কী আল্লাহর সাথে অংশীদার আছে যারা তাদের জন্য একটি দ্বীন নিয়ে এসেছে আল্লাহ যার অনুমতি দেন নি? ফায়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েই যেতো। এবং নিশ্চয়ই জালেমদের জন্য রয়েছে যান্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’’ (সূরা শূরাঃ ২১)
.
অনেক মানুষই এসব বিধানদাতাদের গ্রহণ করেছে এবং আইন প্রনয়নের বিষয়টিকে তাদের জন্য, তাদের সংসদের জন্য, এবং তাদের আঞ্চলিক, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শাসন কর্তৃত্বের জন্য একটি অধিকার ও বৈশিষ্ট্য হিসেবে মেনে নিয়েছে।
.
-[তাওহীদ এর দুই রুকন- শাইখ আসিম আল মাকদিসি ]
.
এই তাগুত সরকারের অধিনে চাকরি করা- এই তাগুতদের বিধান প্রতিষ্ঠার শপথ নেয়ার পর কোনো ব্যক্তি মুসলিম থাকতে পারে না। যেখানে ইমানের অন্যতম শর্ত হলো তাগুত বর্জন করা।তাই যারা সামরিক বিভাগে কাজ করছে তাদের ইমান গ্রহনযোগ্য না।
.
[[ সুতরাং চাকুরীর মাধ্যমে যদি সরকার ও সরকারি লোকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করা, তাদের এবং তাদের বিধিবিধান ও নীতিমালার সাহায্য-সহযোগিতা করা উদ্দেশ্য হয়; চাই তা দাওয়াতের মাধ্যমে হোক, পরিচালনার মাধ্যমে হোক অথবা স্বইচ্ছায় তাদের আদালতে গিয়ে হোক, তাহলে সন্দেহ নেই যে, এ জাতীয় চাকুরী সরাসরি শিরক, স্পষ্ট কুফুরী এবং আল্লাহর দ্বীন থেকে সরে যাওয়া।
.
যে এ জাতীয় চাকুরীতে লিপ্ত সে তাগুতদেরকে পরিত্যাগ করার মূলনীতি ভঙ্গ করেছে। প্রকৃত বিষয় যাচাই করা ছাড়া তার ইসলাম গ্রহণযোগ্য না।
.
সরকারি চাকুরির হুকুম।
--শায়খ আবুন নূর ফিলিস্তিনী হাফিজাহুল্লাহ ]]
.
তাই একজন মুসলিন নারীকে বুঝে শুনে কখনই কোনো তাগুতের ইবাদতকারীর কাছে বিয়ে দেওয়া বৈধ হবে না।
.
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
.
আর তোমরা (তোমাদের নারীদের) মুশরিক পুরুষদের কাছে বিয়ে দিয়ো না। যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।
.
নিঃসন্দেহে একজন মুমিন দাস যে কোনো মুশরিক পুরুষের চেয়ে অনেক উত্তম। যদিও সেই মুশরিক পুরুষকে তোমাদের বেশি ভালো লাগে।
.
কারণ তারা (মুশরিকরা) সকলে তো জাহান্নামের দিকে ডাকে আর আল্লাহ তার বিধানের মাধ্যমে জান্নাত ও মাগফিরাতের দিকে আহবান করেন। তিনি তার আয়াতসমূহ মানুষের উপকারার্থে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তা অনুসরণ করতে পারে।-
.
[সূরা বাকারা (২) : ২২১]
.
✔ লেখাটি শেয়ার করুন। অথবা কপি করে ছড়িয়ে দিন।
Comment