আমির নিযুক্ত করা কি ফরজ?
শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব ও শাইখ হামদ বিন নাসির রহিমাহুমুল্লাহ এর উত্তরসূরি আলেম ও ফকিহদের কাছে প্রশ্ন করা হলো— মানুষের জন্য আমির নিযুক্ত করা কি ফরজ?
উত্তর:
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর রায় হলো, আমির নিযুক্ত করা ফরজ। কেননা ইসলামের বিধিবিধানগুলো ইমাম ছাড়া পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা যায় না। যেমন, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, আমর বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকার তথা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ, ইসলামি দ-বিধি হুদুদ-কিসাস কার্যকর, ধনী-গরিবের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা ইমামের আনুগত্য ফরজ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর ও রাসুলের আনুগত্য করো তোমাদের (ন্যায়বান) শাসকবৃন্দের কথা মেনে চল। আর যদি কখনো কোন ব্যাপারে তোমাদের মধ্যে বিরোধ লেগে যায় তাহলে তা মীমাংসার ভার আল্লাহ ও রাসুলের কাছে ছেড়ে দিও । যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনে (পরকালে) বিশ্বাসী হও।’ (সুরা নিসা, ৪:৫৯)
তিনি আরও বলেন:
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ করো আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সুরা আলে ইমরান, ৩:১০৩)
‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ করো আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সুরা আলে ইমরান, ৩:১০৩)
হাদিসে এসেছে:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى المَرْءِ المُسْلِمِ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ، فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ
‘আব্দুল্লাহ র. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: ‘যতক্ষণ আল্লাহর নাফরমানির নির্দেশ দেয়া না হয়, পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় সকল বিষয়ে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ইমামের আনুগত্য করা জরুরি। তবে নাফরমানির নির্দেশ দেয়া হলে আনুগত্য করা যাবে না।’ (সহিহুল বুখারি: ৭১৪৪; সুনানু আবি দাউদ: ২৬২৬ )
ইরবাদ বিন সারিয়া র. এর হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ স. বলেন:
أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
‘আমি তোমাদেরকে তাকওয়া ও আমিরের আনুগত্যের উপদেশ দিচ্ছি, যদিও আমির একজন হাবশি গোলাম হয়। কারণ তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাহ এবং আমার হেদায়তপ্রাপ্ত খলিফাগণের সুন্নাহ অনুসরণ করবে আর তা প্রাণপণে আঁকড়ে ধরবে। সাবধান! প্রতিটি নব আবিষ্কৃত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কৃত বিষয় বিদ’আত এবং প্রতিটি বিদ’আত গোমরাহি ও ভ্রষ্টতা। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৬০৭)
আমির ব্যতীত দ্বীনে ইসলাম চলতে পারে না। তাই আলি র. বলেন:
لَا بُدَّ لِلنَّاسِ مِنْ إِمَارَةٍ بَرَّةً كَانَتْ أوْ فَاجِرةً
‘মানুষের জন্য আমির থাকা জরুরি, চাই সে ন্যায়পরায়ণ হোক অথবা জালিম। উপস্থিত লোকেরা বলল, হে আমিরুল মুমিনিন! ন্যায়পরায়ণ আমিরের বিষয়টি তো বুঝলাম, কিন্তু জালেম আমিরের বিষয়টি কেমন? তিনি উত্তর দিলেন:
يُقَامُ بِهَا الْحُدُوْدُ وَيُؤْمَنُ بِهَا السُّبُل
‘তার দ্বারা শরিয়া আইন কার্যকর হবে এবং দেশের নিরাপত্তা বজায় থাকবে।’
গোলামের কাছে যদি আমির হওয়ার শর্তাবলি পাওয়া যায় তবে আলিমদের রায় হলো, যদি গোলামভিন্ন অন্য কাউকে ইমাম নিযুক্ত করার সুযোগ থাকে এবং সে মানুষের ওপর ইতিমধ্যে কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে না বসে, তবে তার ইমামত বৈধ নয়। কিন্তু সে যদি মানুষের ওপর কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলে এবং আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদও যদি তার ইমামতের ব্যাপারে একমত হয়ে যায়, তবে তার কর্তৃত্ব মেনে নেওয়া ফরজ হয়ে যাবে এবং তার বিরোধিতা করা হারাম সাব্যস্ত হবে। যেমনটি পূর্বে উল্লিখিত ইরবাদ র. এর হাদিসে বলা হয়েছে—( وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا) ‘যদিও সে হাবশি গোলাম হয়।’
যদি সম্ভব হয় আমির কুরাইশ বংশ থেকে হওয়া উত্তম। যেমনটি সহিহ হাদিসে এসছে।
মূল: আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ ফিল আজওয়িবাতিন নাজদিয়াহ, ৯ম খণ্ড, ৭-৮ পৃষ্ঠা।
সংগ্রহসূত্র: মিম্বারুত তাওহিদ ওয়াল জিহাদ
মূল আরবি
সংগ্রহসূত্র: মিম্বারুত তাওহিদ ওয়াল জিহাদ
মূল আরবি
سُئل أبناء الشيخ محمد بن عبد الوهاب وحمد بن ناصر رحمهم الله؛ هل نصب الإمام فرض على الناس أم لا؟
* * *
الجواب:
الذي عليه أهل السنة والجماعة؛ أن الإمام يجب نصبه على الناس.
وذلك أن أمور الإسلام لا تتم إلا بذلك، كالجهاد في سبيل الله، والأمر بالمعروف والنهي عن المنكر، وإقامة الحدود، وإنصاف الضعيف من القوي، وغير ذلك من أمور الدين.
ولهذا أوجب الله طاعة أولي الأمر، فقال تعالى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ}، وقال تعالى: {وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعاً وَلا تَفَرَّقُوا{.
وفي الحديث؛ أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: (على المرء السمع والطاعة فيما أحب وكره، ما لم يؤمر بمعصية، فإذا أمر بمعصية فلا سمع ولا طاعة(.
وفي حديث العرباض بن سارية، أنه قال عليه السلام: (أوصيكم بتقوى الله تعالى والسمع والطاعة، وإن تأمر عليكم عبد حبشي، وعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي، تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ، وإياكم ومحدثات الأمور، فإن كل بدعة ضلالة(.
ولا يستقيم الدين إلا بإمام.
ولهذا قال علي رضي الله عنه: (لا بد للناس من إمارة برة كانت أو فاجرة)، قالوا: يا أمير المؤمنين هذه البرة قد عرفناها، فما بال الفاجرة؟! قال: (يقام بها الحدود، ويؤمن بها السبل).
وأما العبد إذا اجتمعت فيه شروط الإمامة؛
فالذي عليه أهل العلم؛ أن العبد لا تجوز إمامته إذا أمكن، ولم يقهر الناس بسلطانه، وأما إذا قهر الناس واجتمع عليه أهل الحل والعقد؛ وجبت طاعته وحرمت مخالفته، كما في حديث العرباض المتقدم: (وإن تأمر عليكم عبد حبشي).
وإذا أمكن كون الإمام من قريش؛ فهو أولى، كما في الحديث الصحيح.
الدرر السنية في الأجوبة النجدية: ج9/ص 7 –8
Comment