আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ।
প্রিয় মুজাহিদীন মুসলমান ভাইয়েরা, আমাদের উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে/ এমনকি বাংলাদেশেও পঙ্গপাল হানা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তাই,বিভিন্ন সমাজিক মাধ্যমে পঙ্গপাল নিয়ে আলেমগণের দু'ধরণের আচরণ/ মাসয়ালা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উভয় পক্ষের দলীল সমুহ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
বিজ্ঞ মুফতি ভাইয়েরা এ সম্পর্কে আসল সহীহ বিধান আমাদেরকে জানবেন!
১ম পক্ষের মতঃ "পঙ্গপাল খাওয়া হারাম না।"
পঙ্গপাল ১০০% হালাল সুস্বাদু একটি পতঙ্গ । পঙ্গপাল বা ঘাসফড়িঙ খাওয়া সুন্নত।
আমাদের দেশে খাওয়ার প্রচলন নেই, তাই আমাদের রুচিতে বাধে। তাই বলে হালালকে হারাম বলা যাবেনা।
যদি আমাদের দেশে পঙ্গপাল হানা দেয়। তখন ইচ্ছা করলে এগুলো ধরে ফ্রিজে অনেকদিন সংরক্ষন করতে পারেন।
এগুলোর ভেতরে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন রয়েছে । এগুলো কাঁচা, ভাজি অথবা রান্না করে খেতে পারেন।
তবে কাঁচা খাওয়ার চেয়ে পা, আর পাখনা ফেলে দিয়ে ভালো করে রান্না অথবা ভাজি করে খেতে হবে। যাতে ভেতরের ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা যায়।
দলিলসমূহঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেনঃ খাদ্যরূপে ‘দু’প্রকারের মৃত প্রাণী এবং দু’প্রকার রক্তকে আমাদের মুসলিমদের জন্য হালাল করা হয়েছে। দু’প্রকার মৃত প্রাণী হচ্ছেঃ টিড্ডি (পঙ্গপাল) ও মাছ। এবং রক্তের দু’প্রকার হচ্ছে হালাল প্রাণীর কলিজা ও হৃৎপিণ্ড।
বুখারী ৫৪৯৫, মুসলিম ১৯৫২, মুসলিম ১৮২১, ১৮২২, নাসায়ী ৪৩৫৬, ৪৩৫৭, আবূ দাউদ ৩৮১২, আহমাদ ১৮৬৩৩, ১৮৬৬৯, দারেমী ২০১০। বুলুগুল মারাম: ১৩।
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমরা তাঁর সাথে পঙ্গপাল খেয়েছি।’ (বুখারী-মুসলিম) [1]
* [অর্থাৎ পঙ্গপাল খাওয়া হালাল এবং তা মাছের মত মৃতও হালাল।]
[1] সহীহুল বুখারী ৫৪৯৫, মুসলিম ১৯৫২, তিরমিযী ১৮২১, ১৮২২, নাসায়ী ৪৩৫৬, ৪৩৫৭, আবূ দাউদ ৩৮১২, আহমাদ ১৮৬৩৩, ১৮৬৬৯, ১৮৯০৮, দারেমী ২০১০
بَابُ اَحَادِيْثِ الدَّجَّالِ وَاَشْرَاطِ السَّاعَةِ وَغَىْرِهَا
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ أَبِي أَوْفَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم سَبْعَ غَزَوَاتٍ نَأكُلُ الجَرَادَ . وَفِي رِوَايةٍ : نَأكُلُ مَعَهُ الجَرَادَ . متفق عليه
পরিচ্ছেদঃ ৩৭০ : দাজ্জাল ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে
২৬/১৮৪২। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থেকে সাতটি যুদ্ধ করেছি, তাতে আমরা পঙ্গপাল খেয়েছি।’
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমরা তাঁর সাথে পঙ্গপাল খেয়েছি।’ (বুখারী-মুসলিম) [1]
* [অর্থাৎ পঙ্গপাল খাওয়া হালাল এবং তা মাছের মত মৃতও হালাল।]
[1] সহীহুল বুখারী ৫৪৯৫, মুসলিম ১৯৫২, তিরমিযী ১৮২১, ১৮২২, নাসায়ী ৪৩৫৬, ৪৩৫৭, আবূ দাউদ ৩৮১২, আহমাদ ১৮৬৩৩, ১৮৬৬৯, ১৮৯০৮, দারেমী ২০১০.
upload image
২য় পক্ষের মতঃ"পঙ্গপাল খাওয়া হারাম।"
প্রসিদ্ধ ছয় হাদীস গ্রন্থ এবং মুয়াত্তা মালিক, রিয়াদুস সলেহিন, বুলুগ আল মারাম এই মোট নয়টি হাদীস গ্রন্থে পঙ্গপাল সম্পর্কিত হাদীস বর্ণিত আছে মোট ৩৪ টি। ।
ইবনে মাজাহ শরীফের একটা হাদীসে পঙ্গপালকে মেটাফোর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সে হিসেব আমলে নিলে মোট ৩৫ টি হাদীস এই সম্পর্কিত।
কোরআনে 'جرادة' পঙ্গপাল (Locust) শব্দের উল্লেখ আছে দুবার। সূরা আরাফে এটাকে গযব হিসেবে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, - 'ঔদ্ধত্য ও পাপাচারে লিপ্ত জাতির বিরুদ্ধে।'
সূরা আল ক্বামারে ব্যবহার করা হয়েছে উপমা হিসেবে। হাশরের ময়দানে মানুষের উপস্থিতি বুঝাতে। কোরআন পঙ্গপাল নিয়ে এরচে' বেশি কিছু বলছে না।
বাইবেলে পঙ্গপালের উল্লেখ কোরআনের থেকে ১২ গুণ বেশি। কারণ পঙ্গপাল মূলত বনী ইজরায়েলের সময়কালে দূর্ভিক্ষ ও মহামারী হিসেবে বহুবার আবির্ভূত হয়েছে।
ইহুদি, খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থও তাদের জন্য পঙ্গপাল খাওয়াকে বৈধ করেছে। ফলে আলাদা করে পঙ্গপাল খাওয়া কোনও 'ইসলামিক রিউচুয়াল' না।
কোরআন ঔদ্ধত্য ও পাপাচারের পূর্ণ জাতি হিসেবে পূর্ববর্তী যে সমস্ত সম্প্রদায় ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে তাদেরকেই বুঝিয়েছে। ফলে পঙ্গপাল আল্লাহ্*র আযাব, কোনও আমোদিত হবার মত ব্যাপার না।
ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে, সাধারণত ইসলাম পোকামাকড় খাওয়ার অনুমতি দেয় নি। কেবলমাত্র পঙ্গপালকেই আলাদা করে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, পূর্ববর্তীদের জন্যও এই অনুমতি ছিল।
পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাব্য সঙ্কটের সঙ্গে যারা ধারণা রাখেন, তারা জানেন যে পঙ্গপালের আক্রমণ মানে অবশ্যম্ভাবীভাবে মনুষ্য ও পশুখাদ্য সঙ্কট তৈরি হবে।
ফলত মানুষ প্রাণিজ আমিষ এবং শস্য এই দুইয়েরই প্রকটতার মুখোমুখি হবে। তাই এ সময় পঙ্গপাল খাওয়া গেলে তা এই ভয়াবহ খাদ্য সংকটকে কিছুটা হলেও আশু উপশম করবে।
এই দিক থেকে পঙ্গপাল খাওয়ার অনুমতি প্রদান মানুষের জন্য একটা দয়া। হাদীসে পঙ্গপালকে সমুদ্রের কোনও প্রাণী শিকারের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
পঙ্গপাল সম্পর্কিত হাদীসগুলোর দিকে দেখলে বোঝা যায়, যেকোনও অবস্থাতেই পঙ্গপাল খাওয়া জায়েজ। এ নিয়ে দ্বিমতের সুযোগ নেই। এমনকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ পঙ্গপাল হাদিয়া দিয়েছেন এমন বর্ণনা আছে।
তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবলই পঙ্গপাল খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু এর কোনও প্রশংসা করেছেন কিম্বা এ সম্পর্কে উৎসাহব্যঞ্জক কিছু বলেছেন এমন পাওয়া যায় না।
এমনকি এমন কোনও স্বাভাবিক অবস্থার স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় না যে, তিনি নিজে তা খেয়েছেন। বরং সালমান রা. থেকে সুনানে আবু দাউদ এবং সুনানে ইবনে মাজাহ এই দুগ্রন্থে দুটো বর্ণনা পাওয়া যায়।
যেখানে আল্লাহ্*র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, 'আমি তা খাই না। কিন্তু এটা খাওয়াকে না জায়েজও বলি না।'
আবু দাউদ শরিফের বর্ণিত এক হাদিসে, 'গাছের জন্য ক্ষয়রোগ হিসেবে পঙ্গপালকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।'
ইবনে মাজাহ শরীফে জাবির রা. এবং আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে একটা হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে তাঁরা বলছেন, 'যখনই রাসুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পঙ্গপাল থেকে আশ্রয় চাইতেন তখন এই … দোয়া করতেন।'
এই হাদীস থেকে বুঝা যায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়শই পঙ্গপাল থেকে আশ্রয় চাইতেন। মানে এই দোয়া তিনি অনেকবার করেছেন।
দোয়ায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, ' আল্লাহ আপনি এই প্রজাতির বড়োগুলোকে ধ্বংস করুন । ছোটগুলোকেও মেরে ফেলুন। ডিমগুলো নষ্ট করে দিন এবং সমূলে নির্মূল করুন…।'
শস্য ও আবাদি ভূমি থেকে পঙ্গপাল বিতাড়নের জন্যও আল্লাহ্*র কাছে তিনি আশ্রয় চেয়েছেন। আল্লাহ্* রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কোনও প্রজাতির বিরুদ্ধে এইভাবে দোয়া করেন নি।
সুতরাং পঙ্গপাল নিয়ে উৎসাহিত হওয়াটা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মপন্থার পরিপন্থী। বরং পঙ্গপাল থেকে আশ্রয় চাওয়া, এর ধ্বংস কামনা করা সুন্নাহ। অথচ আশ্চর্য, ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টগুলো দেখলাম, পঙ্গপাল খাওয়াকে সুন্নাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোরআনে এটাকে গযব হিসেবে বলা হয়েছে, আল্লাহ্*র রাসুল এ থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। ধ্বংস কামনা করেছেন।
গজব নিয়েও তামাসা উম্মতের!
যে পঙ্গপাল নিয়ে ভীত হব। আল্লাহ্*র কাছে আশ্রয় চাইব, সেটা নিয়েও তামাশা চলছে। খোদ ইসলামের নামে, সুন্নাহ বলে চলছে। অথচ আমরা এভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছি।
(বিজ্ঞ ভাইয়েরা আমাদেরকে এ সম্পর্কে সহীহ মতামত জানানোর আবেদন জানাচ্ছি!)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের সহীহ সঠিক বুঝ দান করুন।আমিন।
প্রিয় মুজাহিদীন মুসলমান ভাইয়েরা, আমাদের উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে/ এমনকি বাংলাদেশেও পঙ্গপাল হানা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তাই,বিভিন্ন সমাজিক মাধ্যমে পঙ্গপাল নিয়ে আলেমগণের দু'ধরণের আচরণ/ মাসয়ালা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উভয় পক্ষের দলীল সমুহ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
বিজ্ঞ মুফতি ভাইয়েরা এ সম্পর্কে আসল সহীহ বিধান আমাদেরকে জানবেন!
১ম পক্ষের মতঃ "পঙ্গপাল খাওয়া হারাম না।"
পঙ্গপাল ১০০% হালাল সুস্বাদু একটি পতঙ্গ । পঙ্গপাল বা ঘাসফড়িঙ খাওয়া সুন্নত।
আমাদের দেশে খাওয়ার প্রচলন নেই, তাই আমাদের রুচিতে বাধে। তাই বলে হালালকে হারাম বলা যাবেনা।
যদি আমাদের দেশে পঙ্গপাল হানা দেয়। তখন ইচ্ছা করলে এগুলো ধরে ফ্রিজে অনেকদিন সংরক্ষন করতে পারেন।
এগুলোর ভেতরে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন রয়েছে । এগুলো কাঁচা, ভাজি অথবা রান্না করে খেতে পারেন।
তবে কাঁচা খাওয়ার চেয়ে পা, আর পাখনা ফেলে দিয়ে ভালো করে রান্না অথবা ভাজি করে খেতে হবে। যাতে ভেতরের ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা যায়।
দলিলসমূহঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেনঃ খাদ্যরূপে ‘দু’প্রকারের মৃত প্রাণী এবং দু’প্রকার রক্তকে আমাদের মুসলিমদের জন্য হালাল করা হয়েছে। দু’প্রকার মৃত প্রাণী হচ্ছেঃ টিড্ডি (পঙ্গপাল) ও মাছ। এবং রক্তের দু’প্রকার হচ্ছে হালাল প্রাণীর কলিজা ও হৃৎপিণ্ড।
বুখারী ৫৪৯৫, মুসলিম ১৯৫২, মুসলিম ১৮২১, ১৮২২, নাসায়ী ৪৩৫৬, ৪৩৫৭, আবূ দাউদ ৩৮১২, আহমাদ ১৮৬৩৩, ১৮৬৬৯, দারেমী ২০১০। বুলুগুল মারাম: ১৩।
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমরা তাঁর সাথে পঙ্গপাল খেয়েছি।’ (বুখারী-মুসলিম) [1]
* [অর্থাৎ পঙ্গপাল খাওয়া হালাল এবং তা মাছের মত মৃতও হালাল।]
[1] সহীহুল বুখারী ৫৪৯৫, মুসলিম ১৯৫২, তিরমিযী ১৮২১, ১৮২২, নাসায়ী ৪৩৫৬, ৪৩৫৭, আবূ দাউদ ৩৮১২, আহমাদ ১৮৬৩৩, ১৮৬৬৯, ১৮৯০৮, দারেমী ২০১০
بَابُ اَحَادِيْثِ الدَّجَّالِ وَاَشْرَاطِ السَّاعَةِ وَغَىْرِهَا
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ أَبِي أَوْفَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم سَبْعَ غَزَوَاتٍ نَأكُلُ الجَرَادَ . وَفِي رِوَايةٍ : نَأكُلُ مَعَهُ الجَرَادَ . متفق عليه
পরিচ্ছেদঃ ৩৭০ : দাজ্জাল ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে
২৬/১৮৪২। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থেকে সাতটি যুদ্ধ করেছি, তাতে আমরা পঙ্গপাল খেয়েছি।’
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমরা তাঁর সাথে পঙ্গপাল খেয়েছি।’ (বুখারী-মুসলিম) [1]
* [অর্থাৎ পঙ্গপাল খাওয়া হালাল এবং তা মাছের মত মৃতও হালাল।]
[1] সহীহুল বুখারী ৫৪৯৫, মুসলিম ১৯৫২, তিরমিযী ১৮২১, ১৮২২, নাসায়ী ৪৩৫৬, ৪৩৫৭, আবূ দাউদ ৩৮১২, আহমাদ ১৮৬৩৩, ১৮৬৬৯, ১৮৯০৮, দারেমী ২০১০.
upload image
২য় পক্ষের মতঃ"পঙ্গপাল খাওয়া হারাম।"
প্রসিদ্ধ ছয় হাদীস গ্রন্থ এবং মুয়াত্তা মালিক, রিয়াদুস সলেহিন, বুলুগ আল মারাম এই মোট নয়টি হাদীস গ্রন্থে পঙ্গপাল সম্পর্কিত হাদীস বর্ণিত আছে মোট ৩৪ টি। ।
ইবনে মাজাহ শরীফের একটা হাদীসে পঙ্গপালকে মেটাফোর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সে হিসেব আমলে নিলে মোট ৩৫ টি হাদীস এই সম্পর্কিত।
কোরআনে 'جرادة' পঙ্গপাল (Locust) শব্দের উল্লেখ আছে দুবার। সূরা আরাফে এটাকে গযব হিসেবে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, - 'ঔদ্ধত্য ও পাপাচারে লিপ্ত জাতির বিরুদ্ধে।'
সূরা আল ক্বামারে ব্যবহার করা হয়েছে উপমা হিসেবে। হাশরের ময়দানে মানুষের উপস্থিতি বুঝাতে। কোরআন পঙ্গপাল নিয়ে এরচে' বেশি কিছু বলছে না।
বাইবেলে পঙ্গপালের উল্লেখ কোরআনের থেকে ১২ গুণ বেশি। কারণ পঙ্গপাল মূলত বনী ইজরায়েলের সময়কালে দূর্ভিক্ষ ও মহামারী হিসেবে বহুবার আবির্ভূত হয়েছে।
ইহুদি, খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থও তাদের জন্য পঙ্গপাল খাওয়াকে বৈধ করেছে। ফলে আলাদা করে পঙ্গপাল খাওয়া কোনও 'ইসলামিক রিউচুয়াল' না।
কোরআন ঔদ্ধত্য ও পাপাচারের পূর্ণ জাতি হিসেবে পূর্ববর্তী যে সমস্ত সম্প্রদায় ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে তাদেরকেই বুঝিয়েছে। ফলে পঙ্গপাল আল্লাহ্*র আযাব, কোনও আমোদিত হবার মত ব্যাপার না।
ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে, সাধারণত ইসলাম পোকামাকড় খাওয়ার অনুমতি দেয় নি। কেবলমাত্র পঙ্গপালকেই আলাদা করে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, পূর্ববর্তীদের জন্যও এই অনুমতি ছিল।
পঙ্গপাল আক্রমণের সম্ভাব্য সঙ্কটের সঙ্গে যারা ধারণা রাখেন, তারা জানেন যে পঙ্গপালের আক্রমণ মানে অবশ্যম্ভাবীভাবে মনুষ্য ও পশুখাদ্য সঙ্কট তৈরি হবে।
ফলত মানুষ প্রাণিজ আমিষ এবং শস্য এই দুইয়েরই প্রকটতার মুখোমুখি হবে। তাই এ সময় পঙ্গপাল খাওয়া গেলে তা এই ভয়াবহ খাদ্য সংকটকে কিছুটা হলেও আশু উপশম করবে।
এই দিক থেকে পঙ্গপাল খাওয়ার অনুমতি প্রদান মানুষের জন্য একটা দয়া। হাদীসে পঙ্গপালকে সমুদ্রের কোনও প্রাণী শিকারের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
পঙ্গপাল সম্পর্কিত হাদীসগুলোর দিকে দেখলে বোঝা যায়, যেকোনও অবস্থাতেই পঙ্গপাল খাওয়া জায়েজ। এ নিয়ে দ্বিমতের সুযোগ নেই। এমনকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ পঙ্গপাল হাদিয়া দিয়েছেন এমন বর্ণনা আছে।
তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবলই পঙ্গপাল খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু এর কোনও প্রশংসা করেছেন কিম্বা এ সম্পর্কে উৎসাহব্যঞ্জক কিছু বলেছেন এমন পাওয়া যায় না।
এমনকি এমন কোনও স্বাভাবিক অবস্থার স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় না যে, তিনি নিজে তা খেয়েছেন। বরং সালমান রা. থেকে সুনানে আবু দাউদ এবং সুনানে ইবনে মাজাহ এই দুগ্রন্থে দুটো বর্ণনা পাওয়া যায়।
যেখানে আল্লাহ্*র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, 'আমি তা খাই না। কিন্তু এটা খাওয়াকে না জায়েজও বলি না।'
আবু দাউদ শরিফের বর্ণিত এক হাদিসে, 'গাছের জন্য ক্ষয়রোগ হিসেবে পঙ্গপালকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।'
ইবনে মাজাহ শরীফে জাবির রা. এবং আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে একটা হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে তাঁরা বলছেন, 'যখনই রাসুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পঙ্গপাল থেকে আশ্রয় চাইতেন তখন এই … দোয়া করতেন।'
এই হাদীস থেকে বুঝা যায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়শই পঙ্গপাল থেকে আশ্রয় চাইতেন। মানে এই দোয়া তিনি অনেকবার করেছেন।
দোয়ায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, ' আল্লাহ আপনি এই প্রজাতির বড়োগুলোকে ধ্বংস করুন । ছোটগুলোকেও মেরে ফেলুন। ডিমগুলো নষ্ট করে দিন এবং সমূলে নির্মূল করুন…।'
শস্য ও আবাদি ভূমি থেকে পঙ্গপাল বিতাড়নের জন্যও আল্লাহ্*র কাছে তিনি আশ্রয় চেয়েছেন। আল্লাহ্* রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কোনও প্রজাতির বিরুদ্ধে এইভাবে দোয়া করেন নি।
সুতরাং পঙ্গপাল নিয়ে উৎসাহিত হওয়াটা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মপন্থার পরিপন্থী। বরং পঙ্গপাল থেকে আশ্রয় চাওয়া, এর ধ্বংস কামনা করা সুন্নাহ। অথচ আশ্চর্য, ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টগুলো দেখলাম, পঙ্গপাল খাওয়াকে সুন্নাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোরআনে এটাকে গযব হিসেবে বলা হয়েছে, আল্লাহ্*র রাসুল এ থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। ধ্বংস কামনা করেছেন।
গজব নিয়েও তামাসা উম্মতের!
যে পঙ্গপাল নিয়ে ভীত হব। আল্লাহ্*র কাছে আশ্রয় চাইব, সেটা নিয়েও তামাশা চলছে। খোদ ইসলামের নামে, সুন্নাহ বলে চলছে। অথচ আমরা এভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছি।
(বিজ্ঞ ভাইয়েরা আমাদেরকে এ সম্পর্কে সহীহ মতামত জানানোর আবেদন জানাচ্ছি!)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের সহীহ সঠিক বুঝ দান করুন।আমিন।
Comment