বিধর্মীদের উৎসবসংশ্লিষ্ট উপহারসামগ্রী বিক্রি করার চাকরি করা কি জায়িয?
প্রশ্ন : একটা ফ্যাক্টরি কাঁচের তৈরি উপহারসামগ্রী উৎপাদন করে (যেমন, আতরের বোতল, মোমবাতিদানি) এবং এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানিও করে। এ ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে আমাকে রপ্তানি সেকশনের ‘তত্ত্বাবধায়ক’ পদে চাকরির প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু, খ্রিষ্টানদের উৎসব (বড়দিন) উপলক্ষে ফ্যাক্টরি আমাকে তাদের উৎসবসংক্রান্ত কাঁচের তৈরি নানারকম উপহারসামগ্রী উৎপাদন করার নির্দেশ দেবে, যেমন ক্রুশ ও মূর্তি। এই চাকরি করা কি জায়িয হবে? কারণ, আল্লাহ আমাকে কিছু ইলম ও কিতাবুল্লাহ মুখস্থ করার নিয়ামত দেওয়ায় আমি আল্লাহকে ভয় করছি।
উত্তর : আল-হামদুলিল্লাহ। কোনো মুসলিমের জন্য বিধর্মীদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা জায়িয নেই, সেটা সরাসরি উপস্থিত থাকার মাধ্যমে হোক কিংবা তাদেরকে এ উৎসব প্রতিষ্ঠা করা বা উৎসবসংশ্লিষ্ট উপহারসামগ্রী বিক্রি করার সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমেই হোক না কেন। শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম বাণিজ্যমন্ত্রীকে লিখেছিলেন, মুহাম্মাদ ইবরাহিমের পক্ষ থেকে মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতি (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন)। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আমরা জানতে পেরেছি যে, গতবছর কিছু কিছু ব্যবসায়ী খ্রিষ্টবর্ষের শুরুতে খ্রিষ্টানদের উৎসবকেন্দ্রিক কিছু উপহারসামগ্রী আমদানি করেছে। আমদানিকৃত উপহারসামগ্রীর মাঝে রয়েছে ‘ক্রিসমাস ট্রি’। কিছু কিছু সৌদি নাগরিক এ উৎসবে অংশগ্রহণস্বরূপ আমাদের দেশে অবস্থানরত বিদেশি খ্রিষ্টানদের এসব উপহারসামগ্রী কিনে উপহার দিয়েছে। এটা গর্হিত কাজ; এটা তাদের উচিত হয়নি। আমাদের কোনো সন্দেহ নেই আপনারা জানেন এটা নাজায়িয এবং উলামা কিরাম আহলুল কিতাব ও মুশরিক প্রমুখ বিধর্মীদের উৎসবে অংশ নেওয়া হারাম হওয়ার ব্যাপারে যে ইজমা উল্লেখ করেছেন, সেটিও আপনার জানা রয়েছে। অতএব, আমরা আশা করব আমাদের দেশে এসব উপহারসামগ্রী আমদানি করা এবং বিধর্মীদের উৎসবসংশ্লিষ্ট অন্য যেসব উপহারসামগ্রী একই বিধানের আওতায় পড়ে, সেগুলো আমদানি করা নিষিদ্ধ করবেন। [ফাতাওয়াশ-শাইখ মুহাম্মাদ ইবনি ইবরাহিম : ৩/১০৫]।
শাইখ আবদুল আযিয ইবনু বাযকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘কিছু মুসলিম খ্রিষ্টানদের সাথে তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এ ব্যাপারে আপনার দিকনির্দেশনা কী?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো মুসলিম নর-নারীর জন্য ইহুদি-খ্রিষ্টান কিংবা অন্য কোনো বিধর্মীর উৎসবে যোগদান করা জায়িয নয়; বরং এগুলো বর্জন করা ফরয। কারণ, “যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই দলভুক্ত।” রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা কিংবা তাদের বেশ ধরা থেকে সাবধান করেছেন। তাই প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য এ ব্যাপারে সাবধান থাকা। আর মুসলিম নর-নারীর জন্য এসব কাজে বিধর্মীদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করা নাজায়িয। কারণ, এসব উৎসব ইসলামি শরিয়াহবিরোধী। তাই এগুলোতে অংশগ্রহণ করা কিংবা তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া নাজায়িয। এমনকি চা, কফি, কিংবা অন্য কিছু যেমন পাত্র ইত্যাদি দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করাও নাজায়িয। আল্লাহ বলেন,
وَتَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلْبِرِّ وَٱلتَّقْوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلْإِثْمِ وَٱلْعُدْوَٰنِۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعِقَابِ
“তোমরা নেকি ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করো; পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কেউ কাউকে সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।” [সুরা আল-মায়িদাহ, ৫ : ২]
বিধর্মীদের সাথে তাদের উৎসবে যোগ দেওয়া পাপ ও সীমালঙ্ঘনে তাদের সহযোগিতা করারই নামান্তর।’ [মাজমুয়ু ফাতাওয়াশ-শাইখ ইবনি বায : ৬/৪০৬]।
‘মিলেনিয়াম উৎসব’ পালন বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বিবৃতিতে এসেছে, ‘ষষ্ঠ : কাফেরদেরকে তাদের উৎসবপালনে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা কোনো মুসলিমের জন্য জায়িয নয়। যেমন, তাদের উৎসবের খবর প্রচার করা, ঘোষণা করা, যেকোনো মাধ্যমে এসব উৎসবের দাওয়াত দেওয়া—সেটা মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে হোক, ঘড়ি স্থাপন করা ও বিভিন্ন ডিজিটাল বিল-বোর্ড স্থাপন করার মাধ্যমে হোক, স্মৃতিমূলক পোশাক বা সামগ্রী উৎপাদন করা, কার্ড-স্টিকার ছাপানো, এ উপলক্ষে বিপণীকেন্দ্রগুলোতে ছাড় ঘোষণা করা, এ উপলক্ষে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করা, খেলাধূলার আয়োজন করা, এসব উৎসবের প্রতীক প্রচার করা ইত্যাদি যে মাধ্যমেই হোক না কেন। এ ধরনের উৎসবের মাঝে উল্লিখিত মিলেনিয়াম উৎসবও পড়বে।’
প্রিয় ভাই, আপনার জন্য বিধর্মীদের উৎসবসংশ্লিষ্ট কোনো জিনিস উৎপাদনে অংশগ্রহণ করা জায়িয হবে না। আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ চাকরিটা ছেড়ে দিন। ইনশাআল্লাহ এর বদলে আল্লাহ আপনাকে অন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
________
ফাতওয়াসূত্র : ইসলামকিউএ (১০৯১৯৮)
Comment