Announcement

Collapse
No announcement yet.

মাসআলা : সাদাকাতুল ফিতর

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মাসআলা : সাদাকাতুল ফিতর

    যাদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব

    মাসআলা : প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যার মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন অথবা বুঝমান-বালেগ হওয়া কিংবা মুকীম হওয়া শর্ত নয়। অবুঝ-নাবালেগ, মুসাফির এবং মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিও নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাদের ওপরও সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।

    হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট-বড় সকলের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। নাবালেগ, মানসিক ভারসাম্যহীনের সম্পদ থেকে তার অভিভাবক সদকায়ে ফিতর আদায় করবেন। –রদ্দুল মুহতার ২/৩৫৯

    মাসআলা : সাদাকাতুল ফিতরের নেসাবের ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা, সোনা- রুপা, অলংকার, ব্যবসায়িক পণ্যের সাথে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, বসবাসের অতিরিক্ত বাড়ি, অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র– এসব কিছুও হিসাবযোগ্য। এসব মিলে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তাহলেও সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।

    সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাবের ওপর বছরপূর্তি জরুরি নয়; ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। তবে কেউ যদি ঋণগ্রস্ত হলে সে ঋণ বাদ দিয়ে নেসাবের হিসাব করবে।

    মাসআলা : কেউ রমযানের রোযা রাখতে না পারলেও নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। –বাদায়েউস সানায়ে ২/১৯৯

    মাসআলা : ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। সুতরাং যে সন্তান ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পর জন্মগ্রহণ করবে, তার পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে না। অনুরূপ কেউ যদি ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের আগে মারা যায়, তাহলে তার ওপরও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় না। –বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৫


    যাদের পক্ষ থেকে ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব

    মাসআলা : সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব এমন প্রত্যেকে তার নিজের পক্ষ থেকে এবং নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে (যদি সন্তানের নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে) সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবে। –ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৩

    মাসআলা : পিতা-মাতা, স্ত্রী ও বালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়। তারা নিজেরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাদের ওপর সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হবে। –ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৩; মারাকিল ফালাহ, পৃ. ৩৯৫

    মাসআলা : মা সামর্থ্যবান হলেও নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করা তার ওপর ওয়াজিব নয়। –কিতাবুল আছল ২/১৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৩

    মাসআলা : সামর্থ্যবান দাদার ওপর নাতি-নাতনিদের সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়। পিতা জীবিত না থাকলে এবং দাদা নাতি-নাতনিদের ভরণপোষণের দায়িত্ব আঞ্জাম দিলেও দাদার ওপর তাদের সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা জরুরি নয়। অবশ্য কোনো কোনো আলেমের মতে, এক্ষেত্রে দাদার ওপর নাতির সদকা আদায় করা জরুরি। তাই এমন ক্ষেত্রে দাদা যদি নাতি-নাতনিদের সদকা আদায় করে দেন তাহলে সেটি ভালো হয়। –কিতাবুল আছল ২/১৭৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৩

    মাসআলা : বালেগ সন্তানাদি ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করে দিলে তা আদায় হয়ে যাবে।

    নাফে‘ রাহ. বলেন–

    كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُعْطِيهِ عَمَّنْ يَعُولُ مِنْ نِسَائِهِ.

    আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে সদাকাতুল ফিতর প্রদান করতেন। –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০৪৫৫

    বিষয়টি প্রচলিত হওয়ায় তাদের অনুমতি জরুরি নয়। তবে আদায়ের আগে তাদেরকে বলে নেওয়া ভালো। আর স্ত্রীর দায়িত্ব হল, সদাকাতুল ফিতর নিজেই আদায় করা অথবা তার পক্ষ থেকে আদায় করা হয়েছে কি না– এর খোঁজ রাখা। –আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৩

    মাসআলা : নেসাবের মালিক নাবালেগ ছেলে-মেয়ের সাদাকাতুল ফিতর তার সম্পদ থেকেই আদায় করা নিয়ম। তাই অভিভাবক বাচ্চার সম্পদ থেকে ফিতরা আদায় করে দেবে। তবে পিতা ইচ্ছা করলে নিজ সম্পদ থেকেও তা আদায় করে দিতে পারেন। –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৩/৬৩; সহীহ বুখারী ১/২০৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৩৯-৪৪০; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০৪; হেদায়া ২/২২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৩;


    সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ

    মাসআলা : হাদীসে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। যথা : ১. যব, ২. খেজুর, ৩. পনির, ৪. কিশমিশ ৫. গম।

    এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিশমিশ দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে চাইলে মাথাপিছু এক সা‘ পরিমাণ দিতে হবে। কেজির হিসাবে যা ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা সা‘ দিতে হবে। কেজির হিসাবে ১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম। এটা ওজনের দিক দিয়ে তফাৎ। আর মূল্যের পার্থক্য তো আছেই।

    উল্লেখ্য, হাদীসে এ পাঁচটি দ্রব্যের যে কোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যে কোনোটি দ্বারা তা আদায় করতে পারেন। তাই এক্ষেত্রে উচিত হল, যার উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার সামর্থ্য আছে, তার জন্য ওই হিসাবেই দেওয়া। যার সাধ্য পনির হিসাবে দেওয়ার, তিনি তাই দেবেন। এরচেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিশমিশের হিসাব গ্রহণ করতে পারেন। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেওয়া কঠিন, তিনি আদায় করবেন গম দ্বারা।

    আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে, কুরআনের নির্দেশনা–

    مَنْ تَطَوَّعَ خَیْرًا فَهُوَ خَیْرٌ لَّهٗ.

    [অবশ্য কেউ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো পুণ্যের কাজ করে (এবং নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে আরো বাড়িয়ে দেয়) তবে তার পক্ষে তা শ্রেয়। [সূরা বাকারা (০২) : ১৮৪]

    –এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বড় বড় বিত্তশালী ব্যক্তিগণ যদি সাধারণ সম্পদশালীদের মতো একই মানের সাদাকাতুল ফিতর আদায় না করে হাদীসে বর্ণিত খাদ্যদ্রব্য থেকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করেন, তবে তা-ই উত্তম হবে।

    তবে এটি ভিন্ন কথা যে, কোনো ব্যক্তি হাদীসে বর্ণিত যেকোনো খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করলে তার সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে।


    সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের পদ্ধতি

    মাসআলা : হাদীসে বর্ণিত দ্রব্যগুলো দ্বারা যেমন সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যায়, তেমনি এগুলোর মূল্য দ্বারাও আদায় করা যাবে।

    কুররা রাহ. বলেন–

    جَاءَنَا كِتَابُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ : نِصْفُ صَاعٍ عَنْ كُلِّ إنْسَانٍ ، أَوْ قِيمَتُهُ نِصْفُ دِرْهَمٍ.

    আমাদের কাছে উমর ইবনে আবদুল আযিয রাহ.-এর ফরমান পৌঁছেছে যে, সাদাকাতুল ফিতর হচ্ছে প্রত্যেক (সামর্থ্যবান) ব্যক্তির পক্ষ হতে অর্ধ সা‘ (গম) কিংবা তার মূল্য হিসাবে অর্ধ দিরহাম প্রদান করা। –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৪৭০

    বিশিষ্ট তাবেয়ী আবু ইসহাক রাহ., যিনি ত্রিশেরও অধিক সাহাবী থেকে সরাসরি হাদীস বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন–

    أَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ الدّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطّعَامِ.

    আমি তাদেরকে (সাহাবা-তাবেয়ীগণকে) খাবারের মূল্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে দেখেছি। –সহীহ বুখারী ১/১৯৪; উমদাতুল কারী ৯/৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৪৭২; কিতাবুল আছল ২/১৮০; ইখতিলাফুল উলামা, মারওয়াযী পৃ. ১০৯; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৫

    মাসআলা : চাল বা অন্যান্য খাদ্যশস্য দ্বারাও সদকায়ে ফিতর আদায় করা যায়। সেক্ষেত্রে ১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম গম অথবা ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম খেজুর বা যবের মূল্যের সমপরিমাণ চাল দিতে হবে। –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০৪৭২; কিতাবুল আছল ২/১৮০; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১১৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/২৪৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৫৫​


    সংগৃহীত
    আল্লাহ্‌ তাআলা লিখককে জাযায়ে খায়ের দান করুন, আমীন
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

  • #2
    আল্লাহ্‌ তাআলা লিখককে জাযায়ে খায়ের দান করুন, আমীন

    Comment


    • #3
      মা-শা-আল্লাহ,জাযাকাল্লাহু খইরান ভাই, ঈদের আগে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসআলা: সাদাকাতুল ফিতর ।

      Comment


      • #4
        মাশা আল্লাহ জাজাকাল্লাহ খাইরান
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment


        • #5
          Originally posted by Rafikul Islam View Post
          আল্লাহ্‌ তাআলা লিখককে জাযায়ে খায়ের দান করুন, আমীন
          আমীন ইয়া রব্বাল আলামিন

          বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

          Comment

          Working...
          X