আসসালামুওয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমি একজন প্রবাসী। ইউরোপে বসবাস করি। ব্যবসায়িক একটি সার্ভিস নিয়ে আমার ও আমার সাথিদের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। এই সার্ভিসটি প্রায় প্রতিনিয়ত আমাদের প্রদান করতে হয়। এক্ষেত্রে দলিলভিত্তিক লিখিত ফতোয়া চেয়ে ফকীহ ভাইদের সাহায্য কমনা করছি।
সার্ভিসটির বর্ণনা
আমরা এদেশে এমন দুইটি অফিস চালাই, যার মাধ্যমে লোকেরা এদেশের বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধাসহ অফিসিয়াল সাহায্য পেয়ে থাকে। যেমন:- বাৎসরিক কর মওকোফ, সন্তান জন্মের পর পিতামাতার বিভিন্ন সরকারি প্রণোদনা, ব্যাকার ভাতার জন্য আবেদন ইত্যাদি আরো নানান সার্ভিস।
ইউরোপে বৈধ ডকুমেন্টস্ এর সাথে একটা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করার পর (৫ কিংবা ১০ বছর) লোকেরা এদেশে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে। আমরা এই সার্ভিসটি প্রদান করে থাকি। বিনিময়ে সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করি।
সার্ভিসটি করার জন্য প্রথমে লোকেরা তাদের যাবতীয় ডকুমেন্টস্ আমাদের কাছে জমা দিয়ে যায়। আমরা ১ সপ্তাহের মধ্যে সরকারি ওয়েবসাইটে তাদের পক্ষ থেকে তাদের জন্য নাগরিকত্বের আবেদন করে দেই। আবেদন করার পর আরো ৪ বছর সরকারি কর্মকর্তাগণ আবেদনকারীর ব্যাপারে নানান তদন্ত করে, যাচাই-বাছাই করে দেখে যে সে এই রাষ্ট্রের জন্য নিরাপদ কিনা। তদন্তের ফলাফল নেতিবাচক হলে অথবা আবেদন করতে গিয়ে কোনো ভুল বা জটিলতার সৃষ্টি হলে আবেদনকারীর নামে সরকারি ওয়েবসাইটে সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা আসে। ফলে আবেদনকারী আমাদের মাধ্যমেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে। তদন্তের ফলাফল ইতিবাচক হলে আবেদনের ৪ বছর পর আবেদনকারীকে সরকারি কার্যালয় থেকে বার্তা পাঠানো হয়, যাতে আবেদনকারী নিজে গিয়ে তার ইউরোপিয়ান পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব গ্রহণ করে।
তারা যখন নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট গ্রহণ করতে যায়, তাদের এই দেশের সংবিধানের শপথ করানো হয়। শপথটি অনেকটা এমন যে, “আমি এই রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকিব। এদেশের সংবিধান মেনে চলব...ইত্যাদি” নাঊযুবিল্লাহ। মোটকথা, কুফরী সংবিধানের শপথ করানো হয় এবং লোকটিও সাচ্ছন্দে, নাগরিকত্ব পাওয়ার আনন্দে এই শপথ করে আসে। অথচ সে জানেও না সে কুফরী শপথ করলো। প্রায় ৯৫ শতাংশ লোক যারা পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করে, তারা এদেশের ভাষা ভালোভাবে পারে না। অনেকে খুবই কম পারে। অনেকে মোটামোটি পারে। পূর্ণভাবে কেউই পারে না। আবার যতটুকু পারে, তার দ্বারা শপথ করার সময় তারা কি বলছে তা পরিপূর্ণ না বোঝলেও মোটামোটি বোঝে আসে। অথ্যাৎ, কুফরী শপথ করার সময় তারা কি বলছে মোটামোটি বোঝে শুনেই বলছে।
আমাদের পক্ষে নিরাপত্তার খাতিরে তাদেরকে এই কুফর সম্পর্কে জানানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বেশিরভাগ মানুষ এখানে দ্বীন সম্পর্কে গাফেল, হালাল-হারাম সম্পর্কে গাফেল। অনেকে তো আবার হারামের পক্ষাবলম্বন করে গায়ে পরে এসে ঝগড়া-বিবাধ সৃষ্টি করে। এরা এমন লোক যারা এদেশের কুফরী প্রশাসনকে কুফরী মনে করে না এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের উপর নির্ভরতার পরিচয় দেয়। এমন ব্যক্তিদের এই রাষ্ট্রীয় কুফর সম্পর্কে ব্যাপকভাবে দাওয়াত দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এমনটা করলে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। কোনো কারণে এদেশের প্রশাসন আমাদের এই আকীদা সম্পর্কে জানতে পারলে জঙ্গিবাদের মামলায় ফাসিয়ে জেল-জুলুম থেকে শুরু করে যার পর আর নাই তা করবে।
পাসপোর্টধারীদের সুযোগ-সুবিধা
যারা ইউরোপিয়ান পাসপোর্টধারী এবং যাদের ইউরোপিয়ান পাসপোর্ট নেই, তাদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। সুযোগ-সুবিধা বলতে তেমন কোনো সুবিধা না। পাসপোর্টধারীরা রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। যেমন- ভোট দিতে পারা বা রাজনৈতিক কোনো পদপ্রার্থী হতে পারা, যেটা আমরা বাংলাতে বলে থাকি ভোটে দাড়ানো। যাদের ইউরোপিয়ান পাসপোর্ট নেই তারা এই রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধাগুলো পায় না।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হচ্ছে, ইউরোপিয়ান পাসপোর্টধারীরা ইউরোপের বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে। যাদের ইউরোপিয়ান পাসপোর্ট নেই তারা এই সুবিধাটা পায়না, বরং ইউরোপের মাত্র কয়েকটি দেশে বৈধভাবে তাদের থাকার অনুমতি থাকে। মূলত এই সুবিধাটা পাওয়ার জন্যই সিংহভাগ মানুষ পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করে থাকে। এছাড়া পাসপোর্টধারী এবং যাদের ইউরোপিয়ান পাসপোর্ট নেই, তাদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হচ্ছে, ইউরোপিয়ান পাসপোর্টধারীরা ইউরোপের বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে। যাদের ইউরোপিয়ান পাসপোর্ট নেই তারা এই সুবিধাটা পায়না, বরং ইউরোপের মাত্র কয়েকটি দেশে বৈধভাবে তাদের থাকার অনুমতি থাকে। মূলত এই সুবিধাটা পাওয়ার জন্যই সিংহভাগ মানুষ পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করে থাকে। এছাড়া পাসপোর্টধারী এবং যাদের ইউরোপিয়ান পাসপোর্ট নেই, তাদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
আমাদের প্রশ্ন
আমরা যে নাগরিকত্ব আবেদনের এই সার্ভিসটি প্রদান করে থাকি, এতে কি কোনোভাবে কুফরীতে সহায়তা করা হচ্ছে? এটা কি আমাদের জন্য জায়েজ হবে? এর সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করা কি আমাদের জন্য হালাল হবে?
Comment