Announcement

Collapse
No announcement yet.

যোগ্য আলেম কে? কার কাছ থেকে ফতওয়া নিতে হবে? ফুটপাথের ফতওয়া নেয়া যাবে কিনা?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • যোগ্য আলেম কে? কার কাছ থেকে ফতওয়া নিতে হবে? ফুটপাথের ফতওয়া নেয়া যাবে কিনা?

    যারা দ্বীন শেখার প্রচন্ড তাগিদ ও উত্সাহ নিয়ে বিভিন্ন ইমাম, খতিব বা দেশীয় ভাষায় হুজুরদের পেছনে পেছনে ঘুরেছেন তারা হয়ত বুঝে থাকবেন, আমাদের দেশে দ্বীন শেখার সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ভাল আলেম নির্বাচন।

    কারন এই আলেমদের কথায় কেউ মাজারে সিজদা দিচ্ছে, কেউ বায়তুল মোকাররমে জুতা ছুড়াছুড়ি করছে, কেউ বা পীর সাহেবের নামে মুরগী জবাই করছে, কেউ চিল্লা দিয়ে জান্নাতের সার্টিফিকেট নিচ্ছে, কেউ ক্লিন সেভ করা যায়েজ মনে করছে, কেউ বা মিলাদ পড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায় করছে, কেউ বা জিহাদের ডাক না দেওয়া সকল আলেম কে জালেম/কাফের/গোমরাহ মনে করছে, কেউ বা ইসলামের মধ্যে হরতাল-গনতন্ত্র ইত্যাদী আবিস্কার করছে। এ অবস্হায় কোনদিকে যাব বা কার কথা মানব এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বড় কঠিন ব্যাপার। বিশেষ করে এ ধরনের প্রশ্ন তো থেকেই যায় যে, ‘আমার পছন্দের আলেম অন্যের পছন্দ নাও হতে পারে’। আর সমস্যাটা চুড়ায় পৌছে যখন মানুষ এ অবস্হান নেয় – “আমার হুজুর কি কম জানেন? উনি ভুল করলে আমিও করব“। অনেক হুজুর অবশ্য আর একটু এগিয়ে যেয়ে জান্নাতের ঠিকা নিয়ে নেন এবং বলে বসেন “ আমি জান্নাতে একা যাব না“।

    এ সমস্যার একটা বড় কারন হলো ফুটপাথের ফতওয়া। আমরা ফুটপাথের খোলা খাবার বন্ধ করেছি, হাতুরে ডাক্তারের চিকিত্সা নেয়া বন্ধ করেছি, কিন্তু ফুটপাথের ফতওয়া নেওয়া বন্ধ করিনি। অনেক হ্মেত্রে যে হুজুর আমার মতের সপহ্মে রায় দিবেন তিনিই বড় হুজুর হয়ে যান। দ্বীনের সঠিক ঞ্জান না থাকায় তাদের কারও কাছে হুজুর বাছাই করার criteria হল বড় দাড়ি, কারও কাছে অন্ধ অনুসারির সংখ্যা, কারও কাছে কত বড় বা কয়তলা মসজিদের ইমাম/খতিব, অথবা কারও কাছে কে কত সুন্দর সুর করে ওয়াজ করতে পারল, অথবা কার নামে কত বেশি কেরামতির কল্পকাহিনী প্রচলিত আছে ইত্যাদী ইত্যাদী।

    কিন্তু আসলে কি তাই? ইসলামে কি যেকোন হুজুর/ইমাম সাহেব/খতিব সাহেব/দায়ী/ অথবা ক্বারী সাহেবই ফতওয়া দিতে পারেন? আসুন মুজতাহীদ আলেমদের কাছ থেকে জেনে নেই ‘কোন আলেমের কাছ থেকে ফতওয়া নেয়া যাবে’ :

    ====================================
    সকল প্রশংসা আল্লাহর.

    ‘আলেম (পণ্ডিত), ফকিহ এবং মুজতাহীদ শব্দগুলি মোটামুটি একই অর্থ বহন করে। এগুলো বলতে আসলে তাদেরকেই বুঝায় যারা শরীয়ার সিদ্ধান্ত বের করার জন্য প্রচেষ্টা করেন এবং যাদের দলিল থেকে শরীয়ার সিদ্ধান্ত আহরণ করার সহ্মমতা আছে।

    এর মানে এই যে, তাকে ইজতিহাদ করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এই অপরিহার্য বিষয়গুলি পূরণ ছাড়া কাউকেই (‘আলেম, মুজতাহীদ বা ফকিহ) হিসাবে আখ্যায়িত করা উচিত হবে না।

    পণ্ডিতদের ইজতিহাদের এই অপরিহার্য বিষয়গুলির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যাতে সবার জন্য দরজা খুলে না যায় এবং যে কেউ বৃদ্ধ অথবা অল্পবয়সী- আল্লাহর দেয়া বিধান নিয়ে এমন মন্তব্য করে না বসেন যার সম্পর্কে তার সম্মোক ঞ্জান নেই।

    দুইটি রিপোর্ট থেকে যা আমরা বিষয়গুলি বুঝানোর চেষ্টা করব:

    প্রথম রিপোর্ট :

    প্রথম রিপোর্টটি আল শাওকানী (রহ) থেকে বর্ণিত এবং তিনি যা বলেছেন তা পাঁচটা ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। মুজতাহিদের যোগ্যতার এই পাঁচ অপরিহার্য বিষয়গুলি হল:

    (ক) কুরআন এবং সুন্নাহ সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান থাকতে হবে।

    এটা বলতে আসলে এটা বুঝায় না যে, তার সকল সুন্নাহ কণ্ঠস্থ থাকতে হবে; বরং এই যোগ্যতা থাকা যথেষ্ট যে, তিনি সুন্নাহগুলিকে তাদের বইগুলিতে খুঁজে পেতে সহ্মম এবং সুন্নাহগুলির ভাষ্য এবং বিষয়বস্তুর সঙ্গে সুপরিচিত, বিশেষ করে প্রধানতম হাদীসের সংকলন সমুহ (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদ, সুনান আল তিরমিজি, সুনান আল নাসায়ী এবং সুনান ইবনে মাজাহ) ইত্যাদি।
    এছাড়াও তার, হাদীসের সহীহ যয়ীফের ঞ্জান থাকতে হবে।

    (খ) ইজমার (ঐক্যমত্য) বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।

    (গ) আরবি ভাষায় ভাল দখল থাকতে হবে।
    এর মানে এটা নয় যে, আরবী মুখস্হ থাকলেই হবে। বরং তাকে আরবী ভাষা এবং তার গঠন বুঝতে পারার যোগ্যতা থাকতে হবে।

    (ঘ) উসুলে ফীক (ইসলামী আইনশাস্ত্র এর মূলনীতি) ও কিয়াসের এর ঞ্জান থাকতে হবে, কারণ এগুলো হল শরীয়ী সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য ভিত্তি হবে।

    (ঙ) মানসুখ সম্পর্কে ঞ্জান থাকতে হবে এবং কি কি বিষয় মানসুখ হয়েছে তা জানতে হবে।

    দেখুন: Irshaad আল Fuhool, 2/297-303

    ২য় রিপোর্ট

    দ্বিতীয় রিপোর্টটি শায়খ মুহাম্মদ ইবনে উসায়মিন (রহ: ) থেকে বর্ণিত হয়েছে:

    তিনি মুজতাহীদের যোগ্যতা প্রসংগে আল শাওকানী (রহ: ) উল্লিখিত বিষয় থেকে বিশেষ কোন ভিন্ন মত পোষন না করে কয়েকটি বিষয় আরো স্পষ্ট করেছেন।

    ইজতিহাদ করার জন্য কতগুলি শর্তের পুরন আবশ্যক, তা হল :

    (ক) তার (মুজতাহীদ) শরীয়ার দলিল সম্পর্কে সম্মোক ঞ্জান থাকতে হবে, যা তার ইজতিহাদের জন্য আবশ্যক; যেমন কুরআনের আয়াত এবং হাদীস সমুহ, যেখানে বিষয়টি সম্পর্কে বলা হয়েছে।

    (খ) হাদীসের সহীহ যয়ীফের পার্থক্য সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো (যেমন ইসনাদ এবং এ সম্পর্কীত বিষয় সমুহ) সম্পর্কে সম্মোক ঞ্জান থাকতে হবে।

    (গ) মানসুখ (আল naasikh wa’l-mansookh) এবং ইজমা (ঐক্যমত্য) সম্পর্কে সম্মোক ঞ্জান থাকতে হবে। যাতে তিনি এমন কিছু বিষয়ে রায় প্রদান না করেন যা মানসুখ হয়ে গেছে অথবা যার বিপরীতে আলেমদের ইজমা রয়েছে।

    (ঘ) ফতওয়াকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়াদী সম্পর্কে ঞ্জান থাকতে হবে (যেমন reports of specific meanings, reports that set limits, and so on), যাতে তিনি যেন এমন সিদ্ধান্ত প্রদান না করেন যা তার বিপরীত/ভিন্ন।

    (ঙ) তার ঞ্জান থাকতে হবে -আরবি ভাষা এবং উসুলে ফিক এর উপর, বিশেষ করে যা মৌখিক/বর্ননাযুক্ত প্রমানাদির সাথে সংশ্লিষ্ট (যেমন কোনটা সাধারন হুকুম আর কোনটা আপেহ্মিক, কোনটা মৌলিক/শর্তহীন আর কোনটা শর্তযুক্ত, কোনটা সংহ্মিপ্ত বর্ননা এবং কোনটা বিস্তারিত এবং এ সম্পর্কীত অন্যান্ন বিষয়াদি); যাতে তার সিদ্ধান্ত সে অনুযায়ী হয়, যা দলিলের বর্ননায় বুঝানো হয়েছে।

    (চ) দলিল থেকে সিদ্ধান্ত নিষ্পন্ন করার ক্ষমতা থাকতে হবে।

    al-Usool fi ‘Ilm al-Usool, p. 85, 86; Sharh (commentary thereon), p. 584-590.

    এটা নির্দিষ্ট করা উচিত যে বর্তমানে সুন্নাহর উল্লেখ করা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে, যার অন্যতম কারণ হল, সুন্নাহ ওপর লিখিত বই সমুহ।

    যার মধ্যে উপরে বর্নিত যোগ্যতাগুলি বিদ্যমান তিনিই scholar বা ‘আলেম, যারা দলিল থেকে শরীয়ার সিদ্ধান্ত আহরণ এবং প্রদানের হ্মমতা রাখেন। এবং যাদের মধ্যে উপরে বর্নিত যোগ্যতাগুলি বিদ্যমান থাকবে না তাদের কে scholar বা ‘আলেম বা মুজতাহীদ বা ফকীহ বলা উচিত হবে না।

    আরও বলে রাখা দরকার এই শব্দগুলি (‘আলেম, মুজতাহীদ এবং ফকিহ) প্রায়োগিক বিষয়ের পরিভাষাগত শব্দ, যেগুলো স্কলারদের মাধ্যমে এভাবেই নিরধারিত হয়ে আছে। সুতরাং এই শব্দগুলি যত্রতত্র ভাবে তাদের হ্মেত্রে ব্যাবহার করা উচিত নয়, যারা শুধুমাত্র অন্যের ফতওয়া পৌছে থাকে, অথবা স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যলয়ে ইসলামের কোন বিশেষ বিষয় পড়িয়ে থাকেন, অথবা যিনি শুধুমাত্র একজন দায়ী (দাওয়াতের কাজ করে থাকেন), অথবা যিনি শুধুমাত্র একজন ভাল ইসলমী বক্তা, অথবা যিনি শুধুমাত্র একজন ভাল ক্বারী। একজন মানুষ স্কলার না হয়েও একজন বড় দায়ী হতে পারেন (যার ডাকে হাজার হাহার মুসলিম দ্বীনে আসতে পারে), একজন বড় ইসলামী বক্তা হতে পারেন, বা একজন বড় ইসলামী নেতা হতে পারেন।

    আল্লাহ আমাদের আরও জানা ও বোঝার তাওফীক দান করুন। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

    —সুত্রঃ http://islamqa.com/en/ref/145071

    এবং অত্যান্ত দুঃখের বিষয় এই যে আমাদের দেশে এই শ্রেনীর আলেম খুব কমই আছেন।

    ================================================== ==

    কাজেই এটা আমাদের খুব ভাল করে বুঝতে হবে

    ১. শুধু বড় দাড়ি আর টুপি থাকলেই বড় আলেম হওয়া যায় না। অথবা অনেকবার চিল্লা দিলেই যোগ্য আলেম হওয়া যায় না।

    ২. শুধু মাদ্রাসা থেকে পাশ করে আসলেই তিনি ফতওয়া দিতে পারেন না।

    ৩. বড় মসজিদের ইমাম/খতিব সাহেব হলেই তিনি বড়/যোগ্য আলেম নাও হতে পারেন

    ৪. কোন হুজুরের বিশাল অনুসারি গোষ্ঠী থাকলেই তিনি বড় আলেম হয়ে যাবেন না

    ৫. শুধু দুই বছরের ইফতা কোর্স করে নামের আগে মুফতি লাগালেই যোগ্য আলেম হওয়া যায় না।

    ৫. আবার কোন সাধারন মানুষের মধ্যেই যদি উপরে বর্ণিত যোগ্যতাগুলি বিদ্যমান থাকে তাহলে তিনি যোগ্য আলেম হতে পারেন।

  • #2
    শায়খুল ইসলাম কাকে বলে?

    দ্বীন ইসলামের সকল শাখায় যে আলিমের গভীর বিচক্ষনতা ও প্রায়োগিক দক্ষতা থাকে এমন ব্যক্তিই প্রকৃত অর্থে একজন শায়খুল ইসলাম। যিনি হাদিসের শুদ্ধাশুদ্ধি ও জারহ-তাদীলে অভিজ্ঞ, উলুমুত তাফসির সম্পর্কে সম্যক অবগত, ফিকহী ক্ষেত্রে সকল মত ও পথ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ, ব্যাকরনে যার জ্ঞান আলিমদেরও পাথেয়, সীরাহ বা তারীখে যার ইলম মানদন্ড স্বরূপ, ফাতাওয়া ও মাসাইলের ক্ষেত্রে নিজ মাযহাব তো বটেই অপরাপর মাযহাবের আলিমদের নিকটও যিনি ব্যাপকভাবে গ্রহনযোগ্য; সর্বোপরি যার ইলম থেকে উলামা-ত্বলাবা, আওয়াম-আওসাত সকলেই উপকৃত হন এমন লোককেই শায়খুল ইসলাম বলা হয়ে থাকে।

    ইসলামের ইতিহাসে অনেক বড় বড় উলামা এসেছেন তাদের সকলকেই শায়খুল ইসলাম নামে ডাকা হয়নি। এর অন্যতম কারন যে তাদের অনেকেই নিজের জন্যে একটা কর্মক্ষেত্র তৈরী করে নিয়েছিলেন এবং সেটাকেই অত্যধিক প্রাধান্য দিয়ে নিজেকে ঐ ময়দানে সবার চেয়ে উপরে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পেয়েছিলেন। যেমন হাদিসের ময়দানে ইমাম বুখারি বা মুসলিম, ফিকহের জগতে ইবনুল কুদামা আল মাকদিসী বা ইমাম ইবনুল আবেদীন, ব্যাকরনের ক্ষেত্রে ইমাম সিবাওয়াইহ, তাফসীরের ক্ষেত্রে ইমাম ত্বাবারী প্রমুখ। আবার ইমাম ইযযিদ্দিন ইবনু আব্দিস সালাম, ইমাম ইবনুল জাওযী, ইমাম ইবনু তাইমিয়া, ইমাম ইবনু আব্দুল অহহাব প্রমুখ মহামনীষীর নামের সাথে ইতিহাস যোগ করে দিয়েছে শায়খুল ইসলাম উপাধি। রাহিমাহুমুল্লাহ।

    ইসলামী আক্বীদার সাথে এই বিষয়টার কিছু পর্যালোচনা হয়ে যাক। নাবীগন ছাড়া কেউই মাসুম নন, সর্বস্মতিক্রমে এটিই আহলুস সুন্নাহর আক্বীদা। সেই হিসাবে কোন শায়খুল ইসলামকে পাপ বা ভূল ত্রূটির উর্ধ্বে জ্ঞান করা যাবে না। তার মাঝে যতই ভাল ও বড়ত্বের সমাবেশ ঘটুক না কেন, তার থেকে প্রাপ্ত মন্দকে মন্দ বলেই গণ্য করতে হবে। যদিও এর দ্বারা তার বিন্দুমাত্র অসম্মান বা মর্যাদায় কমতি ঘটানো যাবে না।

    (collected)

    Comment

    Working...
    X