লেখাটি নেয়া হয়েছে তফসীরে মা'আরেফুল-কোরআন-এর ষষ্ঠ খণ্ডের পৃষ্ঠা ৬৯০ থেকে।
وكز - فَوَكَزَهُ مُوْسَى শব্দের অর্থ ঘুষি মারা।
فَقَضَى عَلَيْهِ - বাক পদ্ধতিতে قضى عليه ও قضاه তখন বলা হয়, যখন কারও ভবলীলা সম্পূর্ণ সাঙ্গ করে দেওয়া হয়। তাই এখানে এর অর্থ হত্যা করা। (মাযহারী)
قَالَ رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْلِي فَغَفَرَ لَهُ - এই আয়াতের সারমর্ম এই যে, মূসা (আ) থেকে অনিচ্ছায় প্রকাশিত কিবতী-হত্যার ঘটনাকেও তিনি তাঁর নবুয়ত ও রিসালতের পদমর্যাদার পরিপন্থী এবং তাঁর পয়গম্বরসুলভ মাহায্যের দিক দিয়ে তার গোনাহ্ সাব্যস্ত করে আল্লাহ্ তা'আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ্ তা'আলা ক্ষমা করেছেন। এখানে প্রথম প্রশ্ন এই যে, এই কিবতী কাফির শরীয়তের পরিভাষায় হরবী কাফির ছিল, যাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করাও বৈধ ছিল। কেননা, সে কোন ইসলামী রাষ্ট্রের যিম্মী তথা আশ্রিত ছিল না এবং মূসা (আ)-র সাথেও তার কোন চুক্তি ছিল না। এমতাবস্থায় মূসা (আ) একে "শয়তানের কাজ ও গোনাহ কেন সাব্যস্ত করেছেন? এর হত্যা তো বাহ্যত সওয়াবের কাজ হওয়া উচিত ছিল। কারণ সে একজন মুসলমানের উপর জুলুম করেছিল। তাকে বাঁচানোর জন্য এই হত্যা সংঘটিত হয়েছিল।
উত্তর এই যে, চুক্তি কোন সময় লিখিত হয় এবং কোন সময় কার্যগতও হয়। লিখিত চুক্তি যেমন সাধারণত মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে যিম্মীদের সাথে চুক্তি অথবা অমুসলিম রাষ্ট্রের সাথে শান্তি-চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই ধরনের চুক্তি সর্বসম্পমতিক্রমে অবশ্য পালনীয় এবং বিরুদ্ধাচরণ বিশ্বাসঘাতকতার কারণে হারাম হয়ে থাকে। এমনিভাবে কার্যগত চুক্তিও অবশ্যপালনীয় এবং বিরুদ্ধাচরণ বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
কার্যগত চুক্তি এরূপঃ যে স্থানে মুসলমান এবং কিছুসংখ্যক অমুসলিম অন্য কোন রাষ্ট্রে পরস্পর শান্তিতে বসবাস করে, একে অপরের উপর হামলা করা অথবা লুটতরাজ করাকে উভয় পক্ষে বিশ্বাসঘাতকতা মনে করে, সেই স্থানে এ ধরনের জীবন যাপন ও আদান-প্রদানও এক প্রকার কার্যগত চুক্তি গণ্য হয়ে থাকে। এর বিরুদ্ধাচরণ বৈধ নয়। হযরত মুগীরা হবনে শো’বার একটি দীর্ঘ হাদীস এর প্রমাণ। হাদীসটি ইমাম বুখারী شروط অধ্যায়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। হাদীসের ঘটনা এই যে, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে হযরত মুগীরা ইবনে শো'বা একদল কাফিরের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবন যাপন করতেন । কিছুদিন পর তিনি তাদেরকে হত্যা করে তাদের ধনসম্পত্তি অধিকার করে নেন এবং রসূলুল্লাহ্ (সা)-র কাছে উপস্থিত হয়ে মুসলমান হয়ে যান। তিনি কাফিরদের কাছ থেকে যে ধন-সম্পত্তি হস্তগত করেছিলেন, তা রসূলুল্লাহ (সা)-র খিদমতে পেশ করে দেন। তখন রসূলুল্লাহ্ (সা) বললেনঃ
اما الاسلام فاقبله واما المال فلست منه في شيء - আবু দাঊদের ভাষা এরূপঃ اما المال فما لغدر لا حاجة لنا فيه তোমার ইসলাম তো আমি গ্রহণ করলাম, এখন তুমি একজন মুসলমান , কিন্তু এই ধন-সম্পদ বিশ্বাসঘাতকতা ও অঙ্গীকার ভঙ্গের পথে অর্জিত হয়েছে। কাজেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। বুখারীর টীকাকার হাফেয ইবনে হজর বলেন, এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কাফিরদের ধন-সম্পদ শান্তির অবস্থায় লুটে নেওয়া জায়েয নয়। কেননা, এক জনপদের অধিবাসী অথবা যারা এক সাথে কাজ করে, তারা একে অপরের কাছ থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। তাদের এই কার্যগত চুক্তি একটি অামানত। এই আমানত আমানতকারীকে অর্পণ করা ফরয, সে কাফির হোক কিংবা মুসলিম। একমাত্র লড়াই ও জয়লাভের আকারেই কাফিরদের ধন-সম্পদ মুসলমানদের জন্য হালাল হয়। শান্তিকালে যখন একে অপরের কাছ থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করে, তখন কাফিরদের ধন-সম্পদ লুটে নেওয়া জায়েয নয়। বুখারীর টীকাকার কুন্তলানী বলেন ;
إن أموال المشركين إن كانت مغنومة عند القهر فلا يحل أخذها عند الأمن فإذا كان الإنسان مصاحبا لهم فقد أمن كل و أحد منهم صاحبه فسفك الدماء وأخذ المال مع ذلك غدر حرام إلا أن ينبذ إليبهم عهدهم علی سواء -
অর্থাৎ—নিশ্চয় মুশরিকদের ধন-সম্পদ যুদ্ধাবস্থায় হালাল ; কিন্তু শান্তির অবস্থায় হালাল নয়। কাজেই যে মুসলমান কাফিরদের সাথে বসবাস করে এবং কার্যগতভাবে একে অপরের কাছ থেকে নিরাপদ থাকে, তদবস্থায় কোন কাফিরকে হত্যা করা কিংবা জোর প্রয়োগে অর্থ-সম্পদ নেওয়া বিশ্বাসঘাতকতা ও হারাম, যে পর্যন্ত তাদের এই কার্যগত চুক্তি প্রত্যাহার করার ঘোষণা না করা হয়। ।
সারকথা এই যে, এই কার্যগত চুক্তির কারণে কিবতীকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হলে তা জায়েয হত না, কিন্তু হযরত মূসা (আ) তাকে প্রাণে মারার ইচ্ছ। করেন নি। বরং ইসরাঈলী লোকটিকে তার জুলুম থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে হাতে প্রহার করেছিলেন। এটা স্বভাবত হত্যার কারণ হয় না। কিন্তু কিবতী এতেই মারা গেল। মূসা (আ) অনুভব করলেন যে, তাকে প্রতিরোধ করার জন্য আরও কম মাত্রার প্রহারও যথেস্ট ছিল। কাজেই এই বাড়াবাড়ি আমার জন্য জায়েয ছিল না। এ কারণেই তিনি একে শয়তানের কাজ আখ্যা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
জ্ঞাতব্যঃ এটা হাকীমুল উম্মত, মুজাদিদে মিল্লাত হযরত মওলানা আশরাফ আলী থানভী (র)-র সুচিন্তিত অভিমত, যা তিনি আরবী ভাষায় ‘আহকামুল কোরআন’ —-সূরা কাসাস লেখার সময় ব্যক্ত করেছিলেন। এটা তাঁর সর্বশেষ গবেষণার ফল। কেননা, ১৩৬২ হিজরীর ২রা রজব তারিখে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ।
وكز - فَوَكَزَهُ مُوْسَى শব্দের অর্থ ঘুষি মারা।
فَقَضَى عَلَيْهِ - বাক পদ্ধতিতে قضى عليه ও قضاه তখন বলা হয়, যখন কারও ভবলীলা সম্পূর্ণ সাঙ্গ করে দেওয়া হয়। তাই এখানে এর অর্থ হত্যা করা। (মাযহারী)
قَالَ رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْلِي فَغَفَرَ لَهُ - এই আয়াতের সারমর্ম এই যে, মূসা (আ) থেকে অনিচ্ছায় প্রকাশিত কিবতী-হত্যার ঘটনাকেও তিনি তাঁর নবুয়ত ও রিসালতের পদমর্যাদার পরিপন্থী এবং তাঁর পয়গম্বরসুলভ মাহায্যের দিক দিয়ে তার গোনাহ্ সাব্যস্ত করে আল্লাহ্ তা'আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ্ তা'আলা ক্ষমা করেছেন। এখানে প্রথম প্রশ্ন এই যে, এই কিবতী কাফির শরীয়তের পরিভাষায় হরবী কাফির ছিল, যাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করাও বৈধ ছিল। কেননা, সে কোন ইসলামী রাষ্ট্রের যিম্মী তথা আশ্রিত ছিল না এবং মূসা (আ)-র সাথেও তার কোন চুক্তি ছিল না। এমতাবস্থায় মূসা (আ) একে "শয়তানের কাজ ও গোনাহ কেন সাব্যস্ত করেছেন? এর হত্যা তো বাহ্যত সওয়াবের কাজ হওয়া উচিত ছিল। কারণ সে একজন মুসলমানের উপর জুলুম করেছিল। তাকে বাঁচানোর জন্য এই হত্যা সংঘটিত হয়েছিল।
উত্তর এই যে, চুক্তি কোন সময় লিখিত হয় এবং কোন সময় কার্যগতও হয়। লিখিত চুক্তি যেমন সাধারণত মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে যিম্মীদের সাথে চুক্তি অথবা অমুসলিম রাষ্ট্রের সাথে শান্তি-চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই ধরনের চুক্তি সর্বসম্পমতিক্রমে অবশ্য পালনীয় এবং বিরুদ্ধাচরণ বিশ্বাসঘাতকতার কারণে হারাম হয়ে থাকে। এমনিভাবে কার্যগত চুক্তিও অবশ্যপালনীয় এবং বিরুদ্ধাচরণ বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
কার্যগত চুক্তি এরূপঃ যে স্থানে মুসলমান এবং কিছুসংখ্যক অমুসলিম অন্য কোন রাষ্ট্রে পরস্পর শান্তিতে বসবাস করে, একে অপরের উপর হামলা করা অথবা লুটতরাজ করাকে উভয় পক্ষে বিশ্বাসঘাতকতা মনে করে, সেই স্থানে এ ধরনের জীবন যাপন ও আদান-প্রদানও এক প্রকার কার্যগত চুক্তি গণ্য হয়ে থাকে। এর বিরুদ্ধাচরণ বৈধ নয়। হযরত মুগীরা হবনে শো’বার একটি দীর্ঘ হাদীস এর প্রমাণ। হাদীসটি ইমাম বুখারী شروط অধ্যায়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। হাদীসের ঘটনা এই যে, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে হযরত মুগীরা ইবনে শো'বা একদল কাফিরের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবন যাপন করতেন । কিছুদিন পর তিনি তাদেরকে হত্যা করে তাদের ধনসম্পত্তি অধিকার করে নেন এবং রসূলুল্লাহ্ (সা)-র কাছে উপস্থিত হয়ে মুসলমান হয়ে যান। তিনি কাফিরদের কাছ থেকে যে ধন-সম্পত্তি হস্তগত করেছিলেন, তা রসূলুল্লাহ (সা)-র খিদমতে পেশ করে দেন। তখন রসূলুল্লাহ্ (সা) বললেনঃ
اما الاسلام فاقبله واما المال فلست منه في شيء - আবু দাঊদের ভাষা এরূপঃ اما المال فما لغدر لا حاجة لنا فيه তোমার ইসলাম তো আমি গ্রহণ করলাম, এখন তুমি একজন মুসলমান , কিন্তু এই ধন-সম্পদ বিশ্বাসঘাতকতা ও অঙ্গীকার ভঙ্গের পথে অর্জিত হয়েছে। কাজেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। বুখারীর টীকাকার হাফেয ইবনে হজর বলেন, এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কাফিরদের ধন-সম্পদ শান্তির অবস্থায় লুটে নেওয়া জায়েয নয়। কেননা, এক জনপদের অধিবাসী অথবা যারা এক সাথে কাজ করে, তারা একে অপরের কাছ থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। তাদের এই কার্যগত চুক্তি একটি অামানত। এই আমানত আমানতকারীকে অর্পণ করা ফরয, সে কাফির হোক কিংবা মুসলিম। একমাত্র লড়াই ও জয়লাভের আকারেই কাফিরদের ধন-সম্পদ মুসলমানদের জন্য হালাল হয়। শান্তিকালে যখন একে অপরের কাছ থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করে, তখন কাফিরদের ধন-সম্পদ লুটে নেওয়া জায়েয নয়। বুখারীর টীকাকার কুন্তলানী বলেন ;
إن أموال المشركين إن كانت مغنومة عند القهر فلا يحل أخذها عند الأمن فإذا كان الإنسان مصاحبا لهم فقد أمن كل و أحد منهم صاحبه فسفك الدماء وأخذ المال مع ذلك غدر حرام إلا أن ينبذ إليبهم عهدهم علی سواء -
অর্থাৎ—নিশ্চয় মুশরিকদের ধন-সম্পদ যুদ্ধাবস্থায় হালাল ; কিন্তু শান্তির অবস্থায় হালাল নয়। কাজেই যে মুসলমান কাফিরদের সাথে বসবাস করে এবং কার্যগতভাবে একে অপরের কাছ থেকে নিরাপদ থাকে, তদবস্থায় কোন কাফিরকে হত্যা করা কিংবা জোর প্রয়োগে অর্থ-সম্পদ নেওয়া বিশ্বাসঘাতকতা ও হারাম, যে পর্যন্ত তাদের এই কার্যগত চুক্তি প্রত্যাহার করার ঘোষণা না করা হয়। ।
সারকথা এই যে, এই কার্যগত চুক্তির কারণে কিবতীকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হলে তা জায়েয হত না, কিন্তু হযরত মূসা (আ) তাকে প্রাণে মারার ইচ্ছ। করেন নি। বরং ইসরাঈলী লোকটিকে তার জুলুম থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে হাতে প্রহার করেছিলেন। এটা স্বভাবত হত্যার কারণ হয় না। কিন্তু কিবতী এতেই মারা গেল। মূসা (আ) অনুভব করলেন যে, তাকে প্রতিরোধ করার জন্য আরও কম মাত্রার প্রহারও যথেস্ট ছিল। কাজেই এই বাড়াবাড়ি আমার জন্য জায়েয ছিল না। এ কারণেই তিনি একে শয়তানের কাজ আখ্যা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
জ্ঞাতব্যঃ এটা হাকীমুল উম্মত, মুজাদিদে মিল্লাত হযরত মওলানা আশরাফ আলী থানভী (র)-র সুচিন্তিত অভিমত, যা তিনি আরবী ভাষায় ‘আহকামুল কোরআন’ —-সূরা কাসাস লেখার সময় ব্যক্ত করেছিলেন। এটা তাঁর সর্বশেষ গবেষণার ফল। কেননা, ১৩৬২ হিজরীর ২রা রজব তারিখে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ।
Comment