৯/১১ ত্থেকেই সারা বিশ্বব্যাপী আর বাংলাদেশে গুলশান অভিযানের পর থেকে সাধারন মুসলিম ও উলামাদের পক্ষ থেকে মুযাহিদিনদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ উত্থাপণ করা হচ্ছে যে, জিহাদি জামাতগুলো কাফিরদের সাধারন ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে যা ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম। তখন মুযাহিদিনদের পক্ষ থেকে সাধারনত উত্তর দেওয়া হয়, “
তখন ওই সমস্ত মুসলিমদের পক্ষ থেকে সাধারণত জবাব দেওয়া হয়,
ইসলাম দারুল হারবের (মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত দেশ) অধিবাসীদের সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকে বিভক্ত করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ইসলাম প্রদত্ত বেসামরিক নাগরিকের সংজ্ঞা আর পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রদত্ত বেসামরিক নাগরিকের সংজ্ঞার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। তদুপরি এবিষয়ে ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রেও রয়েছে যথেষ্ট ইখতিলাফ (মতবিরোধ)। আমরা সবাই জানি ফ্বিকহি বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে গড়ে উঠেছে চার মাযহাব। আবার ফ্বুকাহাদের কেউ কেউ একক কোন মাযহাব অনুসরণ না করে সরাসরি হাদীস থেকে মাসায়ালা গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে যারা সরাসরি হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করেন তারা নিজেদের আহলে হাদীস বা সালাফী পরিচয় দেন। একক মাযহাব থেকে সকল মাসায়ালা গ্রহণের কিছু জটিলতা রয়েছে আবার সরাসরি হাদীস থেকে দলীল নেওয়ার মধ্যেও কিছু জটিলতা রয়েছে। মূলত মাযহাবের সীমাবদ্ধতা দূর করতেই সরাসরি হাদীস থেকে দলীল নেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সরাসরি হাদীস অনুসরণ মাযহাব অনুসরণের জটিলতা কমায় নি, বরং আরো বৃদ্ধি করেছে। তবে অনেকেই আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবেন, তাদের মতে মাযহাব অনুসরণের চেয়ে সরাসরি হাদীস অনুসরণ করা অধিকতর সহীহ পন্থা। আমি মাযহাব ও লা-মাযহাব বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করতে আগ্রহী নয়, কারণ এ বিতর্কের কোন পরিসমাপ্তি নেই। আর বিতর্কে জয়ী হওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, বরং একটা গ্রহণযোগ্য উপসংহারে পৌছান আমার উদ্দেশ্য যেন কেউ জিহাদের নামে নিরীহ কাফির হত্যা না করে। আবার সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী একজন মুযাহিদকে যেন কেউ জঙ্গী, সন্ত্রাসী, বিপথগামী বলে অপবাদ না দেয়।
যারা মাযহাব অনুসরণ করেন তাদের সরাসরি হাদীস থেকে দলীল দিয়ে কোন ফায়দা নেই, তেমনি যারা 'আহলে হাদীস' তাদেরকে মাযহাবের কিতাব থেকে দলীল দিয়েও কোন ফায়দা নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। এক, কওমী মাদ্রাসা বা হেফাযতে ইসলাম, জামাতে ইসলামী এবং আহলে হাদীস বা সালাফি আন্দোলন। কওমী মাদ্রাসা এবং তাবলীগ জামাতের ভাইয়েরা হানাফী মাযহাব অনুসরণ করেন আর জামাতে ইসলামী ও আহলে হাদিসের ভাইয়েরা সুনির্দিষ্ট কোন মাযহাব অনুসরণ করেন না। তারা সহিহ হাদীস ও কোরআন থেকে সরাসরি দলীল গ্রহণ করেন। কওমী মাদ্রাসা ও তাদের অনুসারীদের উদ্দেশ্যে আমি হানাফী মাযহাব থেকে সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকের সংজ্ঞা দিব, অতঃপর জামাতে ইসলামী ও আহলে হাদীস ভাইদের উদ্দেশ্যে হাদীস ও কোরআন থেকে দলীল দিব ইনশাল্লাহ। অতিরিক্ত হিসাবে জামাতে ইসলামীর ভাইদের জন্য মাওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ থেকেও কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া হবে।
কওমী মাদ্রসার ছাত্র শিক্ষক সকলেরই জানা আছে যে ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ নিজে হানাফী মাযহাবের কোন কিতাব রচনা করে যান নি। ইমাম আবু হানিফা রহঃ মৌখিকভাবে যেসব মাসআলা শিক্ষা দিতেন উনার ছাত্রদের মাধ্যমে সেগুলোই পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে হানাফী মাযহাবের যতগুলো প্রামাণ্য গ্রন্থ রয়েছে তার সবগুলো ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর অনেক পরে রচিত। কওমী মাদ্রসায় দাওরায়ে হাদীস সিলেবাসে হানাফী মাযহাবের প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসাবে ‘আল হিদায়া’ পাঠ করা হয়। উচ্চতর সিলেবাসে ‘বাদাউস সানায়ে’, ‘ফাতহুল কাদীর’, ‘ফতোয়া এ আলমগীরি’, ‘আল মাবসুত’, ‘ফতয়ায়ে শামী’ কিতাবগুলো পাঠ করা হয়। কওমী মাদ্রাসা ফারেগ সকল ছাত্র শিক্ষক জানেন যে, এই কিতাবগুলো লেখকের নিজের কোন রচনা বা ফতোয়া সমগ্র নয়, বরং এ কিতাবগুলোতে সংকলক ইমাম আবু হানিফা রহঃ ও তার ছাত্রদের দেওয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফতোয়া গুলো সংগ্রহ করে কিতাব আকারে প্রকাশ করেছেন মাত্র। তাই এই কিতাব সমূহে যে রায় দেওয়া হয়েছে তাকেই হানাফী মাযহাবের স্বীকৃত রায় হিসাবে গ্রহণ করা হয়। হানাফী মাযহাবের এক কিতাবের ফতোয়ার সঙ্গে আরেক কিতাবের ফতোয়ার খুব বেশী ইখতিলাফ নেই। যেমন নিচে হানাফী মাযহাবের দুইটি কিতাব থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে এবং উভয় কিতাবের ইবারতের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই।
কওমী মাদ্রাসার দাওরাহ হাদীসের সিলেবাসভুক্ত কিতাব ‘আল হিদায়া’ থেকে আমরা প্রথমে সামরিক ও বেসামরিক লোকের সংজ্ঞা দেখব ইনশাল্লাহ। উক্ত কিতাবটি আবু তাহের মেসবাহ সাহেব অনুবাদ করেছেন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেসন প্রকাশ করেছে। তাই বাংলা ভাষাভাষী যে কেউ চাইলে মূল কিতাবটি পড়ে দেখতে পারেন। ডাউনলোড লিঙ্কঃ http://www.islameralobd.com/2014/10/Al-Hidaya.html আমি এখানে ‘আল হিদায়া’ কিতাব থেকে কিতাল সংক্রান্ত অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণটাই হুবুহু তুলে ধরা হল। লাল রঙয় ডাবল কোটেশনের মধ্যে কিতাবের ইবারত আর ব্র্যাকেটে কালো রঙয়ে আমার ব্যাখ্যা।
(কোন আমান বা নিরাপত্তা চুক্তি না থাকলে অমুসলিম নারী ও শিশুদের ইচ্ছাকৃত ভাবে হত্যা করলে হত্যাকারী গোনাহগার হবেন, তবে এ জন্য তাকে রক্তপণ বা কাফফারা দিতে হবে না। শুধু তওবাহ ইস্তিগফারই যথেষ্ট। এরকম দাওয়াত ছাড়াই যুদ্ধ শুরু করলে গোনাহগার হবেন কিন্তু দিয়ত বা কাফফারা ওয়াজিব হবে না।)
(আক্রমণাত্মক যুদ্ধের সময় দাওয়াত বা জিজিয়া দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এখানে। কাফেররা যদি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দেয় তবে দাওয়াত বা জিজিয়া কোনটাই চাওয়ার আর অবকাশ থাকে না। বর্তমানে আমেরিকা, ইউরোপ মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ করছে তাই তাদের দাওয়াত দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।)
“ইমাম কুদুরী বলেন, যদি তারা প্রত্যাখ্যান করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য প্রর্থণা করবে এবং লড়াইয়ে অবতীর্ন হবে।
কেননা সোলায়মান বিন বুরায়দা (রাঃ) সম্পর্কিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তারা দাওয়াত অস্বীকার করে তবে তাদেরকে জিজিয়া প্রদানের আহ্বান জানাও। এরপর তিনি বলেছেন, যদি তারা তা প্রত্যাখ্যান করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য প্রর্থণা কর এবং লড়াইয়ে অবতীর্ণ হও।
আর যেহেতু আল্লাহই তার প্রিয় বান্দাদের সাহায্যকারী এবং তার শত্রুদের ধবংশকারী। সুতারাং সকল বিষয়ে তারই সাহায্য প্রর্থণা করা কর্তব্য। আর তাদের বিরুদ্ধে মিনজানিক (কামান) মোতায়েন করবে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তায়েফের বিরুদ্ধে করেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে জ্বালাও পোড়াও চালাবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বোরায়রা অঞ্চল জ্বালিয়ে (প্রয়োজনে) দিয়েছিলেন।”
(মিনজানিক হচ্ছে এক ধরনের কামান বা গুলতি যা থেকে আগুনের গোলা বা পাথর ছোরা হয়। তায়েফের সীমানা প্রাচীর থেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কামানের অগ্নি গোলা নিক্ষেপ করেছিলেন। এই গোলা সামরিক বেসামরিক সকল নাগরিকের উপর পতিত হত। ইচ্ছাকৃত ভাবে কাফিরদের বেসামরিক নাগরিক হত্যা করা জায়েজ নেই। কিন্তু এমন পদ্ধতি অবলম্বন করা জায়েজ যেখানে সামরিক বেসামরিক পৃথক করা যায় না অর্থাৎ যে কেউ নিহত হতে পারে। ফিলিস্তিনের হামাস ইসরায়েলে ভূমি লক্ষ করে গাযা থেকে রকেট ছুরে মারে যেটা সামরিক বেসামরিক যেকারো উপর পতিত হতে পারে। এই পদ্ধতি জায়েজ। একইভাবে কাফিরদের পাবলিক প্লেস (জনবহুল স্থান) যেমন মেট্রো রেল, বাস ষ্টেশন, বিমান বন্দর, শপিং মল ইত্যাদি জায়গায় আক্রমণ করলে সামরিক বেসামরিক উভয় শ্রেণির মানুষ নিহত হতে পারে। দারুল হারবের বাচ্চাদের স্কুলে আক্রমণ করা আর রেল স্টেশনে আক্রমণ করার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। বাচ্চাদের স্কুলে বাচ্চা থাকে এটা সবার জানা আছে। তাই সেখানে আক্রমণ করা নাজায়েজ। একইভাবে বালিকা বিদ্যালয়, মহিলা কলেজ, বৃদ্ধাশ্রম, পঙ্গু হাস্পাতাল ইত্যাদি স্থানে হামলা করা জায়েজ হবে না। বাস স্টেশনে হামলা হলেও কিছু বাচ্চা মারা যেতে পারে কিন্তু সেটা হামাসের রকেট ছোরার মতই। শত শত রকেট ইসরাইলের শহরে পতিত হলে সেগুলো যে কিছু বেসামরিক নাগরিক হত্যা করবে সেটা নিশ্চিত। পরিসংখ্যান ঘাটলেও দেখা যায় হামাসের রকেট হামলায় অনেক ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ঠিক তেমনি বিমান বন্দরে হামলা করলে কিছু বেসামরিক নাগরিক নিহত হবে তাই বলে সে হামলা থেকে বিরত থাকার কোন দরকার নেই। অনেকের ধারণা বিমান বন্দরে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ সদস্য যারা থাকে তারাও তো নীরিহ! যুদ্ধ সক্ষম সকল পুরুষ সামরিক লোক বিবেচিত হবে যা আমরা এই অনুচ্ছেদের পরবর্তী অংশে দেখতে পাব। বেসামরিক বলতে নারী, শিশু, অন্ধ, পঙ্গু এরকম কতক লোককে বুঝান হচ্ছে। বিমান বন্দরে এরকম অল্প কিছু বেসামরিক নাগরিক থাকবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তারা নিহত হলেও সেখানে হামলা করা যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হিস সাল্লামের সময় নিক্ষিপ্ত কামানের গোলায় বা হামাসের নিক্ষিপ্ত রকেটে যেমন সামরিক বেসামরিক সবাই নিহত হয়, তেমনি বিমান বন্দরে, বাস স্টেশনে হামলা করলেও সামরিক বেসামরিক সবাই নিহত হয়। তাই এই দুইয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই এবং উভয় পদ্ধতি জায়েজ। বেলজিয়ামের বিমানবন্দরে আইএসের হামলা, আল কায়দয়ার লন্ডন মেট্রো রেলে হামলা, স্পেনের মাদ্রিদে ট্রেন স্টেশনে হামলা তাই হানাফী মাযহাবের মাসআলা অনুসারে জায়েজ।)
(এখানে খেয়াল করুন দারুল হারবে পানি ছেড়ে তার অধিবাসীদের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া যাবে। পানি ছেড়ে দিলে সামরিক ও বেসামরিক উভয় নাগরিক নিহত হবে। একই ভাবে বৃক্ষ নিধন করে, ফসল নষ্ট করে তাদের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া যাবে। আর খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিলে সামরিক বেসামরিক সকল লোকই নিহত হবে। খাদ্য পানীয় বন্ধ করে দিয়ে যদি দারুল হারবে আক্রমণ করা বৈধ হয়, তবে ট্রাক চাপা দিয়ে তাদের হত্যা করা বৈধ হবে না কেন? একইভাবে দারুল হারবে জীবাণু অস্ত্র বা রাসায়নিক অস্ত্র দিয়েও হামলা করা যাবে। কারণ বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার সঙ্গে এই পদ্ধতির তেমন কোন পার্থক্য নেই। বর্তমানে কাফির গোষ্টী রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। সলফে সালেহীনদের বাদ দিয়ে নিশ্চয় মুসলিম মুযাহিদিনরা জেনেভা সনদ থেকে মাসআলা গ্রহণ করবে না। তাই মুযাহিদিনরা যদি আমেরিকা বা ইউরোপে জীবাণু অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে তবে সেটা হালাল হবে উক্ত মাসআলা অনুসারে।)
কাফির দেশের কোন জনবহুল এলাকা (পাবলিক প্লেসে) বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় যখন হামলা করা হয় তখন তাদের মধ্যে লাঞ্ছনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যেমনটা নাইন এলেভেনের পরে তাদের মধ্যে হয়েছিল। আমেরিকা নিজের সামরিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি নিয়ে বড়াই করত। এই হামলার ফলে তাদের সে “প্রতিপত্তি” কি ভেঙ্গে যায় নি? হ্যা, তারা তাদের সে প্রতিপত্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আফগানিস্থানকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে দিয়েছে কিন্তু এখন সেখানে তাদের প্রতিপত্তি চূড়ান্তভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনেকের ধারণা এসব হামলা করে তো আর কাফিরদের পরাজিত করা যায় না, তাই এরকম হামলা করার মধ্যে উম্মাহ’র জন্য কোন খায়ের নেই। কিন্তু আমরা মাযহাবের কিতাবে দেখতে পাচ্ছি চূড়ান্ত বিজয় না হলেও কাফিররা যে লাঞ্ছিত হয় এটাই একটা বিজয় এবং এই উদ্দেশ্যে সেখানে হামলা করা যাবে।)
(আমেরিকার নাইন ইলেভেন বা ফ্রান্সের নিস শহরে হামলায় বেশ কিছু মুসলিম নিহত হওয়ায় যারা আপত্তি তুলেছেন তাদের এ মাসআলা দ্রষ্টব্য। তবে মুসলিমদের যদি পৃথক করা যায় তবে অবশ্যই তা করতে হবে। কিন্তু যখন পৃথক করা যায় না তখন মুসলিমদের কথা বিবেচনা করে হামলা থেকে বিরত থাকা যাবে না।)
(কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে যদি মুসলিম নিহত হলে কোন কাফফারা বা রক্তপণ ওয়াজিব হবে না, সুতারাং নাইন ইলেভেন বা ফ্রান্সের নিস শহরে আক্রমণে যে সমস্ত মুসলিম নিহত হয়েছে তাদের জন্য মুযাহিদিনদের কাফফারা বা দিয়ত (রক্তমূল্য) দিতে হবে না। এবং মুসলিম নিহত হতে পারে এই আশংকায় কোন হামলা পরিচালনা থেকেও বিরত থাকা যাবে না।)
(প্রতিরক্ষামূলক জিহাদে স্ত্রী তার স্বামীর অনুমতি এবং দাস তার মনিবের অনুমতি ছাড়া জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। জিহাদে যখনই ফারদুল আইন হবে তখনই এই বিধান প্রযোজ্য হবে।)
(এখানে নয় প্রকারের কাফিরকে বেসামরিক নাগরিক হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
১। নারী ২। বালক (শিশু) ৩। অতি বৃদ্ধ ৪। প্রতিবন্ধী ৫। অন্ধ ৬। এক পাশ অবশ (পক্ষাঘাতগ্রস্থ) ৭। ডান হাত কর্তিত ৮। বিপরীতদিক থেকে হাত ও পা কাটা (ডান হাত বাম পা অথবা বাম হাত ডান পা) ৯। পাগল বা উন্মাদ
আল্লামা কাসানী তার বাদাউস সানায়ে গ্রন্থে আরও তিন প্রকারের কাফিরকে বেসামরিক লোক হিসাবে উল্লেখ করেছেন। (উক্ত গ্রন্থের পূর্ণ ইবারত নিচে দেওয়া হয়েছে)
১০। গীর্জাতে অবস্থানরত সন্ন্যাসী ১১। মানুষ থেকে বিচ্ছিন হয়ে পাহাড়ে ভ্রমণকারী পর্যটক ১২। কোন ঘর কিংবা উপসনালয়ে দরজা বন্ধ করে অবস্থানরত দুনিয়াত্যাগী
সুতারাং হানাফী মাযহাবের রায় অনুসারে উক্ত বার প্রকার কাফির বেসামরিক নাগরিক বলে গন্য হবে। অবশিষ্ট যত লোক আছে (অর্থাৎ সকল যুদ্ধসক্ষম পুরুষ নাগরিক) তারা সকলে সামরিক লোক বিবেচিত হবে এবং তাদের যুদ্ধের সময় হত্যা করা যাবে, বন্দী অবস্থায়ও হত্যা করা যাবে। আইএস কর্তৃক ২০১৪ সালে দুই জন আমেরিকান, দুই জন ব্রিটিশ ও একজন জাপানী নাগরিককে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। তিন জন ফরাসী নাগরিক ও কয়েকজন ইতালীয়, স্প্যানিশ নাগরিককে তারা মোটা অংকের মুক্তিপণ নিয়ে মুক্তি দেয়। মুক্তিপণ না পেলে তাদেরকেও হত্যা করা হত। আল কায়দা ইয়েমেন শাখা একজন ব্রিটিশ নাগরিককে বন্দী করে এবং মুক্তিপণ দাবী করে। পরে আমেরিকা সেখানে অভিযান চালাতে গেলে আল কায়দার মুযাহিদিনরা তাকে হত্যা করে। একিউএপি ও একিউআইএম বেশ কিছু ইউরোপীয় নাগরিক আটক করে তাদের সরকার থেকে ১২৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ আদায় করে। যেসব দেশ মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করেছে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এই সমস্ত হার্বি কাফিরদের হত্যা বা বন্দী করার সময় তারা শুধু বিবেচনা করেছে সে কোন দেশের নাগরিক। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লিপ্ত কিনা সেটা তাদের বিবেচ্য বিষয় ছিল না। এই জন্য অনেক মুসলিম আল কায়দা এবং আইএসের সমালোচনা করেছে। তাদের অভিযোগ, এই সমস্ত সংগঠন ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। ইসলাম নীরিহ মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। কারণ কোরআনে বলা হয়েছে যে একজন নীরিহ মানুষ হত্যা করল সে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করল। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি হানাফী মাযহাবের মাসআলা অনুসারে দারুল হারবের যে কোন কাফির নাগরিক হত্যা করা বৈধ। আইএস যাদের শিরশ্ছেদ করেছিল তাদের মধ্যে একজন ব্রিটিশকে মুসলিমদের থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, তাই তাকে হত্যা করা জায়েজ হয় নি। অবশিষ্ট সকল কাফিরকে হানাফী মাযহাবের মাসআলা অনুসারে হত্যা করা বৈধ ছিল। কারণ তারা কেউই পঙ্গু ছিল না, বৃদ্ধ ছিল না, শিশু ছিল না, অন্ধ ছিল না, পাগল ছিল না, পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিল না, হাত পা কাটা ছিল না, জনমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন পর্যটকও ছিল না। তারা ঘরের দরজা বন্ধ করে সন্ন্যাসব্রতও পালন করছিল না। তাই তাদেরকে হানাফী মাযহাব অনুসারে হত্যা করা বৈধ হয়েছিল।
২য় জুলায় ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে আইএস জাপানি ও ইটালি নাগরিকদের হত্যা করে। এদের মধ্যে যারা নারী ছিল তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ হয় নি উপরে বর্ণিত মাসআলা অনুসারে। তবে পুরুষদের হত্যা করা জায়েজ হয়েছে। কারণ সেখানে সবাই যুদ্ধ সক্ষম পুরুষ ছিল। একজন অতি বৃদ্ধ ছিল। তবে কিতাবে অতি বৃদ্ধ বলতে এমন বৃদ্ধকে বুঝান হয়েছে যে হাটতে চলতে পারে না। জাপান থেকে বাংলাদেশে এসেছে এবং কাজ করতে সক্ষম এমন বৃদ্ধের কথা এখানে বলা হয় নি। হানাফী মাযহাবের কিতাবে কোথাও নেই ডাক্তার বা প্রকৌশলী হলে তাকে হত্যা করা যাবে না। কে ক্রিকেট খেলে আর কে ফুটবল খেলে তাও বিবেচনায় নেওয়া হয় নি। কে কৃষক আর কে শ্রমিক, কে ধনী আর কে গরীব কোন কিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয় নি। সামরিক বেসামরিক নাগরিকের সংজ্ঞা নির্ধারণের সময় কে কোন পেশায় নিয়জিত তা বিবেচনায় করা হয় নি। সামরিক বেসামরিকের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে শারিরিক ও মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে।
মারকাযুদ দাওয়া আল ইসলামিয়া এর প্রধান মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব বলেছেন গুলশান হামলায় নিহত সবাই মুসলিমদের থেকে নিরাপত্তা (আমান) প্রাপ্ত ছিল। কারণ তারা সবাই ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। তিনি বলেছেন ভিসা হচ্ছে নিরাপত্তা চুক্তি এ ব্যাপারে ইজমা আছে। কোথায় কবে ইজমা হল তিনি উল্লেখ করেন নাই। মুযাহিদ উলামাগণ যারা আছেন তাদের অধিকাংশই ভিসাকে নিরাপত্তা চুক্তি মানেন না। অথচ একজন মুসলিমও দ্বিমত করলে সে বিষয়ে ইজমা হয় না। তাই উনার দাবী সম্পুর্ন অগ্রহণযোগ্য। ভিসা প্রথা চালু হয়েছে মাত্র কয়েক দশক আগে। ফলে এ বিষয়ে পুর্ববর্তী ফ্বুকাহাদের কোন মতামতও নেই। সুতারাং এ বিষয়ে বর্তমানে কিয়াস করা ছাড়া অন্য কোন উপাই নেই। ভিসা বিষয়ে বিস্তারিত আলাদা অনুচ্ছেদে লিখার প্রয়োজন রয়েছে। তবে গুলশান হামলার বৈধতার বিষয়ে স্বল্প কথায় বলা যায় যে, ভিসাকে নিরাপত্তা চুক্তি হিসাবে গ্রহণ করলেও গুলশানে নিহত কাফিররা নিরাপত্তা প্রাপ্ত ছিল না। কারণ মুসলিমদের নিকট কোন মুরতাদের প্রদত্ত ভিসার সামান্যতম মূল্যও নেই। শেখ হাসিনা ও তার সরকারের লোকজন ত্বগুত ও মুরতাদ। শেখ হাসিনার মতে বাংলাদেশে আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে যে কারও কটূক্তি করার অধিকার আছে। যে রাসুলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে কটূক্তি করার অধিকার স্বীকার করে সে মুসলিম থাকতে পারে না। বাংলাদেশের মুসলিমদের বড় অংশ শেখ হাসিনাকে মুরতাদ মনে করে। যারা করে না তারা হয় সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী নতুবা তার হাতে তসবীহ, মাথার পট্টি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে তাকে মুসলিম মনে করেছে। শেখ হাসিনার উচ্ছ্বিষ্টভোগী যে কারো বিরুদ্ধে মুযাহিদিনরা যুদ্ধ করতে সংকল্পবদ্ধ হোক সে বড় আলিম বা বড় জালিম। (ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলাদা অনুচ্ছেদে আলোচনা করার ইচ্ছা রয়েছে)
গুলশান হামলায় নিহত নারীদের ব্যাপারে কিছু কথা না বললেই নয়। পূর্ববর্তী যুগে সকল ধর্মের নারীরাই ঘরের কাজে নিয়োজিত থাকত। তারা সাধারণত ঘরের বাহিরের কাজে জড়িত হত না। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমা দেশের নারী ও পুরুষের কাজের ধরণের মধ্যে পার্থক্য করা খুবই কঠিন। পশ্চিমা বিশ্ব নারীদের পুরুষের সমানাধিকার দিয়েছে। তাদের দেশে নারী যে কাজ করে পুরুষও সে কাজ করে। পুরুষ রজনীতি করে, নারীও করে। পুরুষ ফুটবল খেলে, নারীও খেলে। পুরুষ ভোট দেয়, নারীও দেয়। পুরুষ ট্যাক্স দেয়, নারীও দেয়। পুরুষ সাংবাদিকতা করে, নারীও করে। মুযাহিদিনরা যদি কাফির পুরুষের সাথে যে আচারণ করে তার সমান আচারণ কাফির নারীদের সাথে না করে তবে সে দেশের নারীদের সমানাধিকার ক্ষুন্ন হবে। তাই বর্তমান যুগে কিয়াস করার অবকাশ আছে যে নারীরাও পুরুষের মত সামরিক লোকের অধিকার ভোগ করবে। সুতারাং তাদের হত্যাও বৈধ। তবে হারাম থেকে নিরাপদ দুরুত্বে অবস্থান করার জন্য কাফির নারীদের হত্যা না করাই উত্তম। তবে কেউ যদি কিয়াস করে তাদের সামরিক নাগরিকের অধিকার দেওয়ার মাধ্যমে নারী সমানাধিকার নিশ্চিত করে তবে আমাদের উচিত হবে না সে হত্যাকে নাজায়েজ বলা। তাই আমি গুলশানে নিহত নারীদের হত্যাকে নাজায়েজ বলতে অপরাগ। গুলশানে নিহত নারীরা এমন কাজে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল যা সাধারণত পুরুষদেরই শোভা পাই।
ইমাম শাফেই এর একটি কওল এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উদ্ধৃত হয়েছে। উনি মনে করতেন অতি বৃদ্ধ, পঙ্গু ও অন্ধ সামরিক লোক। শাফেই মাযহাবে বৃদ্ধ, পঙ্গু ও অন্ধ যদি সামরিক লোক হয় তবে যুদ্ধসক্ষম পুরুষরা তো অবশ্যই সামরিক লোক হবে। শাফেই মাযহাব যারা অনুসরণ করেন তারা যদি অন্ধ বা পঙ্গু কোন কাফিরকে হত্যা করে তবে নিশ্চয়ই সে এই জন্য জঙ্গী, সন্ত্রাসী হবেন না। আর হত্যাকারী যদি জঙ্গী, সন্ত্রাসী হন তবে ইমাম শাফেই তার আদর্শিক গুরু হিসাবে কি হবেন? ঐতিহাসিকভাবে মুসলিমদের মধ্যে এই ধারা চালু হয়ে আসছে যে এক মাযহাবের অনুসারীরা অন্য মাযহাবের অনুসারীদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন কিন্তু তাদের বাতিল আখ্যায়িত করেন না। সুতারাং হানাফিদেরও উচিত হবে না শাফেই মাযহাবের অনুসারীদের সমালোচনা করা যদিও বা তারা অন্ধ বা পঙ্গু কাফিরকে হত্যা করে।)
(এখানে খেয়াল করুন পাগল যদি কখনও সুস্থ হয় তবে সুস্থ হওয়ার পরে তাকে হত্যা করা যাবে। পাগল অবস্থায় নিশ্চয় সে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল না। এখন সে সুস্থ হওয়া মাত্রই তাকে হত্যা করা জায়েজ। এখান থেকে বুঝা যায় কাউকে হত্যা করার কারণ তার যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা নয়, বরং তার যুদ্ধ করার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা থাকা। যখন সে পাগল ছিল তখন সে মানসিকভাবে ভাবে যুদ্ধে অক্ষম ছিল তাই তাকে হত্যা করা হারাম ছিল আর যখন সে সুস্থ হল তখন সে যুদ্ধ করার সক্ষমতা অর্জন করল। তাই তাকে হত্যা করাও জায়েজ হয়ে গেল।)
হানাফী মাযহাবের আরেকটি প্রামাণ্য গ্রন্থ বাদাউস সানায়ে থেকে সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকের সংজ্ঞা, লড়াইয়ের পদ্ধতি সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ তুলে ধরছি। আল হিদায়ার সঙ্গে খুব বেশী পার্থক্য নেই, তবে এই কিতাবে আরও বিস্তারিতভাবে হানাফী মাযহাবের মাসআলা বর্ণিত আছে।
“কুফরের কারণে কাকে হত্যা করা বৈধ আর কাকে হত্যা করা বৈধ নয়” এই ব্যাপারে আমরা বলবো- এখানে অবস্থা নিম্নের সুরত সমূহের মধ্য হতে কোন একটি সুরত থেকে খালি নয়।
১/ হয়তো তা যুদ্ধের সময় হবে।
২/ অথবা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরবর্তী অবস্থা হবে। আর তা হল কাফেরকে গ্রেফতার ও বন্দী করার পর হত্যা করা।
১ম সুরতঃ যদি পরিস্থিতি যুদ্ধকালীন হয়, তবে এ পরিস্থিতিতে (১) নারী (২) শিশু (৩) অতিবৃদ্ধ (৪) পঙ্গু (৫) পক্ষাঘাতগ্রস্থ (৬) অন্ধ (৭) বিপরীত দিক থেকে হাত পা কর্তিত (৮) ডান হাত কর্তিত (৯) পাগল (১০) গীর্জাতে অবস্থানরত সন্ন্যাসী (১১) মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড়ে ভ্রমণকারী পর্যটক (১২) কোন ঘর কিংবা উপসানালয়ে দরজা বন্ধ করে অবস্থানরত দুনিয়াত্যাগীদের হত্যা করা বৈধ নয়।
মহিলা ও শিশুদের হত্যা করা না জায়েজ হওয়ার দলীল-
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- «لَا تَقْتُلُوا امْرَأَةً وَلَا وَلَيَدًا»
“তোমরা মহিলা ও সন্তানকে হত্যা করোনা!”
আরও বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক যুদ্ধে একজন নিহত মহিলাকে দেখতে পেলেন। অতঃপর এমনটি করতে নিষেধ করেছেন। রাসুল বললেন-
«هَاهْ مَا أُرَاهَا قَاتَلَتْ، فَلِمَ قُتِلَتْ؟ وَنَهَى عَنْ قَتْلِ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ»
“আমি একজন নিহত মহিলা দেখতে পাচ্ছি, তাঁকে কেন হত্যা করা হয়েছে? রাসুল মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন”। কেননা এরা যুদ্ধকারী নয়। সুতরাং তাঁদেরকে হত্যা করা হবেনা। তবে যদি তাঁদের মধ্য থেকে কেউ লড়াই করে, তাঁকে হত্যা করা হবে। এমনিভাবে কেউ যদি লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করে, মুসলমানদের গোপন তথ্য প্রকাশ করে, যদি তাঁর পরামর্শ বা রায়ের দ্বারা কুফর উপকৃত হয়, অথবা কাফেরদের অনুসৃত হয় (নেত্রী হয়), তাকেও হত্যা করা হবে। যদিও সে মহিলা বা শিশু হয়, কারণ তার থেকে পরোক্ষভাবে লড়াই পাওয়া যাচ্ছে।
যুদ্ধ সক্ষম সকল কাফির পুরুষকে তো এমনিতেই হত্যা করা যাবে। উপরন্তু নারী, শিশু বা অন্য যাদেরকে বেসামরিক লোক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে তারাও হত্যার যোগ্য যদি তারা পরামর্শ, মতামত, উৎসাহ বা উস্কানি দিয়ে কুফর শক্তিকে সাহায্য করে। কোন নারী সাংবাদিক বা বুদ্ধিজীবি যদি যদি তার লেখনীর মাধ্যমে কাফিরদের সহায়তা করে তবে তাকে হত্যা করা যাবে। বলা হয়েছে নারীদের পরামর্শ বা রায়ের মাধ্যমে যদি কুফর উপকৃত হয় তবে তাকে হত্যা করা হবে। বর্তমান যুগের ভোট হচ্ছে একটা মতামত। তাই কোন নারী যদি বারাক ওবামা বা জর্জ বুশকে ভোট দিয়ে থাকে তবে তার মতামত কুফরকে সহায়তা করেছে বলে কিয়াস করার অবকাশ রয়েছে। সব দেশেই একজন নারীর ভোট আর একজন পুরুষের ভোট সমান গুরুত্ববহন করে। ইউরোপে মধ্যযুগে নারীদের রাজনীতিতে কোন অধিকার ছিল না। তাই যদি জানা যায় যে কোন নারী বা অতি বৃদ্ধ বা পঙ্গু যাকে বেসামরিক লোক হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল সে ভোট দিয়েছে এমন কাউকে যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তবে ওই নারী বা বৃদ্ধ বা পঙ্গু হত্যার যোগ্য হবে উপরিক্ত মাসআলা অনুসারে।
১২ প্রকারের লোক ছাড়া অর্থাৎ সকল যুদ্ধ সক্ষম পুরুষ লোক যাদের সামরিক লোক হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তাদের সবাইকে হত্যা করা বৈধ। তাদের যুদ্ধে অংশগ্রহন করা এক্ষেত্রে কোন শর্ত না। যাদের সামরিক লোক হিসাবে সংগায়িত করা হয়েছে তাদের কেউ সারা জীবনেও যদি যুদ্ধ না করে বা কেউ সদ্য বালেগ হয়েছে তবুও তাকে হত্যা করা যাবে। ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী বালেগ হতে আঠার বছর বয়স হওয়ার প্রয়োজন নেই। নাভির নিচে গোপন পশম গজান অথবা পনের বছর বয়স- যেটি আগে হবে সেটিই তার বালেগ হওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে।
পুরোহিত বা যাজক (priest) সামরিক লোক হিসাবে বিবেচিত হানাফী মাযহাবে। তাই হানাফী ফ্বিকহ অনুসারে যাজক বা পুরোহিত হত্যা করা জায়েজ। কেউ সন্ন্যাসী (Monk) আর যাজকের (priest) মধ্যে পার্থক্য গুলিয়ে ফেলবেন না। সন্ন্যাসীরা সাধারণত দুনিয়াত্যাগী হয়, কিন্তু যাজক বা পুরোহিত দুনিয়া ত্যাগি হয় না। ১২ প্রকারের বেসামরিক লোকের মধ্যে সান্ন্যাসী অনর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাজক নয়। বাংলার আইএস অনেকগুলো হিন্দু পুরোহিত হত্যা করেছে। হানাফী মাযহাবের রায় অনুসারে আইএস বা নব্য জেএমবি’র হিন্দু পুরোহিত হত্যা জায়েজ হয়েছে। গুলশানে নিহতদের ক্ষেত্রে ভিসার যে অযুহাত দেওয়া হয়েছিল এখানে সে অযুহাত অনুপস্থিত। বাংলাদেশের হিন্দুরা জিজিয়া দেয় না বা মুসলিমদের সাথে কোনরূপ সন্ধিচুক্তিও নেই তাদের। ফ্রান্সে, বেলজিয়ামে কিছু খৃস্টান যাজককে হতা করেছে আইএসের সৈনিকরা। হানাফী মাযহাবের এই মাসআলা অনুসারে খ্রিস্টান যাজক হত্যা শরিয়াহ সম্মত হয়েছে। সন্ন্যাসীরা বেসামরিক লোক হিসাবে বিবেচিত হবে তবে শর্ত হচ্ছে তাদের জনমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধ্যান বা ইবাদতে মগ্ন থাকতে হবে। যদি তারা সমাজের সাথে মেলামিশা করে তবে তারা সামরিক লোক হিসাবে বিবেচিত হবে। পাগল যখন পাগল থাকবে তখন তাকে হত্যা করা যাবে না, কিন্তু যখন সে সুস্থ হবে তখন তাকে হত্যা করা যাবে। বধির বা বোবা অর্থাৎ যে কানে শোনে না বা যে কথা বলতে পারে না তাকে হানাফী মাযহাব সামরিক লোক হিসাবে রায় দিয়েছে। তাই বধির বা বোবা লোক হত্যা করা যাবে। দুনিয়ার কোন সেনাবাহিনী বধির বা বোবা লোককে চাকরী দেয় না, তারপরেও তাদেরকে হানাফী ফ্বিকহ আহলুল ক্বিতাল বা সামরিক লোক বিবেচনা করে। সুতারাং বুঝায় যাচ্ছে সেনাবাহিনীতে চাকরী করা বা যুদ্ধ করা সামরিক লোক হওয়ার শর্ত না। বধির বা বোবা লোক যুদ্ধ করতে সক্ষম, তাই তাকে সামরিক লোক হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে হানাফী ফিকাহশাস্ত্র। ডান হাত কর্তিত ব্যাক্তিকে হত্যা করা যাবে না, তবে বাম হাত কর্তিত ব্যাক্তিকে হত্যা করা যাবে। দুই পা কাটা লোককে হত্যা করা যাবে না, তবে যে কোন এক পা কাটা লোককে হত্যা কর যাবে। এই সকল লোকদের (যাজক, বোবা, বধির, বাম হাত কাটা, এক পা কাটা) হত্যা করা বৈধ, যদিও তারা লড়াই না করে থাকে। কেননা তারা যুদ্ধকারীদের- ই অন্তর্ভুক্ত। হানাফী ফ্বিকহ অনুসারে কাউকে হত্যা করার জন্য তার সামরিক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হওয়াই যথেষ্ট। তার বাস্তবে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করার কোন শর্ত নেই।
বেসামরিক লোক যাদের হত্যা করা হারাম তাদের যদি ইচ্ছাকৃতভাকবে হত্যা করা হয় তবে হত্যাকারী গোনাহগার হবে এবং তাকে এই জন্য তওবাহ ইস্তিগফার করতে হবে। তওবাহ ইস্তিগফার করলে ইনশাল্লাহ সে গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। আর এই জন্য তাকে দুনিয়াতে কাফফারাহ বা রক্তমুল্য দিতে হবে না। সুতারাং গুলশানের হত্যাকারীরা নারীদের হত্যা করে যদি গোনাহ করে থাকে তবে সেটা ছগীরাহ গুনাহ করেছে। তওবাহ ইস্তিগফার করলেই তারা মাফ পেয়ে যেত, কিন্তু তারা সে সুযোগ পায় নি। তবে শহীদের রক্তের প্রথম ফোটা মাটিতে পরার আগেই তার সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয় তাই তাদের নারী হত্যার মাধ্যমে ছগীরাহ গোনাহ হলেও তা মাফ হয়ে গেছে ইনশাল্লাহ। আমান বা নিরাপত্তা প্রাপ্ত কাউকে হত্যা করা হলে সেটা অনেক বড় গোনাহের কাজ। আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন, যে মুআহিদ (জিম্মি বা আমান প্রাপ্ত কাফির) হত্যা করলো সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ চল্লিশ বছর দূর থেকেও পাওয়া যায়। গুলশানের হত্যাকারীরা শেখ হাসিনাকে মুরতাদ মনে করত, এবং আমরা যারা শেখ হাসিনাকে মুরতাদ মনে করি, তাদের মতে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেওয়া ভিসা আমান হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রাসংগিক ভাবে একটা কথা বলা জরুরী যে, মুরতাদ বারাক ওবামা সহ প্রায় সকল মডারেট মুসলিম কোরআনের একটা আয়াত উদ্ধৃত করে থাকে। সূরাহ মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াত যেখানে বলা হয়েছে একজন মানুষ হত্যা করলে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করা হয়। কাফির নারী শিশু যাদের সাথে মুসলিমদের কোন রূপ নিরাপত্তা চুক্তি নেই তাদের হত্যা করলে দুনিয়াতে কোন কাফফারা বা রক্তমূল্য দিতে হবে না। শুধু তওবাহ ইস্তিগফার করলেই যথেষ্ট হবে। সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করার জন্য কোন কাফফারাও নেই, রক্তমূল্যও নেই! তওবাহ ইস্তিগফারই যথেষ্ট! অথচ শপথ ভঙ্গ করলেও কাফফারা দিতে হয়। একজন মুসলিমকে অনিচ্ছাকৃত হত্যা করলেও রক্তপণ দিতে হয়। সুতারাং বোঝায় যাচ্ছে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যার বিধানটি অচুক্তি বদ্ধ কাফিরের জন্য প্রযোজ্য নয়। হানাফী মাযহাবের ফ্বিকহ হতে অন্তত আমরা এটাই জানতে পারি।
অনেক মুযাহিদের পিতা ত্বগুত বা মুর্তাদ। তাদের উচিত হবে না নিজের পিতাকে হত্যা করার মাধ্যমে নিজের ঘর থেকেই জিহাদ শুরু করা।
এখানে আলোচনা হচ্ছে আক্রমানাত্মক জিহাদের। বর্তমানে মুসলিমরা আক্রান্ত, তাই এখন কাফিরদের দাওয়াত দেওয়ার সামান্যতম প্রয়োজনও নেই।
মুসলিম বন্দী বা ব্যবসায়ী থাকলেও যুদ্ধ থেকে বিরত থাকা যাবে না। সেখানে কাফিরদের বেসামরিক লোকের কারণে যুদ্ধ বন্ধ করার তো কোন প্রশ্নই আসে না। এখানে কাফিরদের ঘর বাড়ি ধ্বংস করারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কেননা এইসবগুলোই কিতাল বা যুদ্ধের অন্তর্ভুক্ত। এই কারণে যে, এতে শত্রুকে রাগান্বিত, অপমানিত ও অপদস্ত করা হয়ে থাকে। আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা উক্ত মাসআলা অনুসারে জায়েজ ছিল। হানাফী মাযহাবে ঘর বাড়ি ধ্বংস করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর ঘর বাড়িতে তো সামরিক বেসামরিক উভয় শ্রেণীর লোক থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। সাধারণ ঘর বাড়িতে নারী শিশু থাকে, অপরদিকে টুইন টাওয়ারে কোন শিশু ছিল না তবে নারী ছিল। কিন্তু এই সব নারীরা সেখানে অবস্থান করছিল এমন কিছু কাজের উদ্দেশ্যে যে কাজগুলো পুরুষের জন্যই শোভা পাই। সুতারাং ইসলাম যখন নারীদের বেসামরিক নাগরিকের মর্যাদা দিয়েছিল তখনকার যুগের নারীদের ভূমিকা আর বর্তমান যুগের টূইন টাওয়ারের নারীদের ভূমিকার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। নারীদের বেসামরিক বিবেচনা করলেও হামলা করতে সমস্যা নেই কারণ যেখানে আলাদা করা যায় না সেখানে হামলার অনুমতি আছে। পরের লাইনে আছে মুসলিম শিশু আছে জানা থাকলেও হামলা থেকে বিরত থাকা যাবে না, সেখানে কাফির নারীদের কথা চিন্তা করে কিভাবে হামলা থেকে বিরত থাকা যাবে?
মুসলিমদের উচিত নয় এক কাফিরের বিরুদ্ধে আরেক কাফিরের সাহায্য কামনা করা। তবে যদি অপারগ হয় তবে সাহায্য গ্রহণ করতে পারে।
(প্রবন্ধের অবশিষ্ট অংশ পরের পোস্টে)
তোমরা কি দেখছ না কুফফাররা কিভাবে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, চেচনিয়াতে লক্ষ লক্ষ নীরিহ মুসলিম হত্যা করছে? আমরা তার বিপরীতে সামান্য জবাবই দিয়েছি মাত্র!”
তখন ওই সমস্ত মুসলিমদের পক্ষ থেকে সাধারণত জবাব দেওয়া হয়,
“হ্যা, কুফফাররা মুসলিমদের হত্যা করছে এটা ঠিক। এজন্য আমাদের কষ্টে বুক ভেঙ্গে যায়, দুঃখে কষ্টে চোখে পানি চলে আসে, রক্তে আগুন ধরে যায় কিন্তু তাই বলে কি আমরাও তাদের মত নিষ্ঠুর, অমানবিক হতে পারি? তারা তো কাফের, তাই তারা যা খুশি করতে পারে কিন্তু আমাদের তো শরীয়াহ এর বিধি বিধান মেনে চলতে হয়। আমরা যদি শরীয়াহ’র বিধি বিধান না মেনে জিহাদ করতে যেয়ে নিহত হয় তবে তো জাহান্নামে যাব। তাই তারা আমাদের কোটি কোটি নীরিহ মানুষ হত্যা করলেও বিনিময়ে আমরা শুধু তাদের কয়েক লক্ষ সামরিক বাহীনির সদস্যদেরই হত্যা করতে পারব। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা বলেছেন, একজনের পাপের দায় আরেকজন বহন করবে না। আমরা যদি তাদের সামরিক সদস্যদের হত্যা করতে সমর্থ না হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের আল্লাহ’র কাছে বেশী বেশী দোয়া করতে হবে যেন আল্লাহ ঐ সব জালিমদের ধবংস করে দেন। আর আমাদের লক্ষ লক্ষ নিহত মুসলিমদের জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেন, যারা বেচে আছেন তাদেরকে সবর করা তৌফিক দেন। কিন্তু কখনই আমাদের নিরীহ মানুষ হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তাদের একজন নীরিহ মানুষকেও হত্যা করা যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেছেন যে একজন মানুষ হত্যা করল সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করল।”
ইসলাম দারুল হারবের (মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত দেশ) অধিবাসীদের সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকে বিভক্ত করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ইসলাম প্রদত্ত বেসামরিক নাগরিকের সংজ্ঞা আর পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রদত্ত বেসামরিক নাগরিকের সংজ্ঞার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। তদুপরি এবিষয়ে ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রেও রয়েছে যথেষ্ট ইখতিলাফ (মতবিরোধ)। আমরা সবাই জানি ফ্বিকহি বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে গড়ে উঠেছে চার মাযহাব। আবার ফ্বুকাহাদের কেউ কেউ একক কোন মাযহাব অনুসরণ না করে সরাসরি হাদীস থেকে মাসায়ালা গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে যারা সরাসরি হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করেন তারা নিজেদের আহলে হাদীস বা সালাফী পরিচয় দেন। একক মাযহাব থেকে সকল মাসায়ালা গ্রহণের কিছু জটিলতা রয়েছে আবার সরাসরি হাদীস থেকে দলীল নেওয়ার মধ্যেও কিছু জটিলতা রয়েছে। মূলত মাযহাবের সীমাবদ্ধতা দূর করতেই সরাসরি হাদীস থেকে দলীল নেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সরাসরি হাদীস অনুসরণ মাযহাব অনুসরণের জটিলতা কমায় নি, বরং আরো বৃদ্ধি করেছে। তবে অনেকেই আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবেন, তাদের মতে মাযহাব অনুসরণের চেয়ে সরাসরি হাদীস অনুসরণ করা অধিকতর সহীহ পন্থা। আমি মাযহাব ও লা-মাযহাব বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করতে আগ্রহী নয়, কারণ এ বিতর্কের কোন পরিসমাপ্তি নেই। আর বিতর্কে জয়ী হওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, বরং একটা গ্রহণযোগ্য উপসংহারে পৌছান আমার উদ্দেশ্য যেন কেউ জিহাদের নামে নিরীহ কাফির হত্যা না করে। আবার সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী একজন মুযাহিদকে যেন কেউ জঙ্গী, সন্ত্রাসী, বিপথগামী বলে অপবাদ না দেয়।
যারা মাযহাব অনুসরণ করেন তাদের সরাসরি হাদীস থেকে দলীল দিয়ে কোন ফায়দা নেই, তেমনি যারা 'আহলে হাদীস' তাদেরকে মাযহাবের কিতাব থেকে দলীল দিয়েও কোন ফায়দা নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। এক, কওমী মাদ্রাসা বা হেফাযতে ইসলাম, জামাতে ইসলামী এবং আহলে হাদীস বা সালাফি আন্দোলন। কওমী মাদ্রাসা এবং তাবলীগ জামাতের ভাইয়েরা হানাফী মাযহাব অনুসরণ করেন আর জামাতে ইসলামী ও আহলে হাদিসের ভাইয়েরা সুনির্দিষ্ট কোন মাযহাব অনুসরণ করেন না। তারা সহিহ হাদীস ও কোরআন থেকে সরাসরি দলীল গ্রহণ করেন। কওমী মাদ্রাসা ও তাদের অনুসারীদের উদ্দেশ্যে আমি হানাফী মাযহাব থেকে সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকের সংজ্ঞা দিব, অতঃপর জামাতে ইসলামী ও আহলে হাদীস ভাইদের উদ্দেশ্যে হাদীস ও কোরআন থেকে দলীল দিব ইনশাল্লাহ। অতিরিক্ত হিসাবে জামাতে ইসলামীর ভাইদের জন্য মাওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ থেকেও কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া হবে।
হানাফী মাযহাব থেকে দলীল
কওমী মাদ্রসার ছাত্র শিক্ষক সকলেরই জানা আছে যে ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ নিজে হানাফী মাযহাবের কোন কিতাব রচনা করে যান নি। ইমাম আবু হানিফা রহঃ মৌখিকভাবে যেসব মাসআলা শিক্ষা দিতেন উনার ছাত্রদের মাধ্যমে সেগুলোই পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে হানাফী মাযহাবের যতগুলো প্রামাণ্য গ্রন্থ রয়েছে তার সবগুলো ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর অনেক পরে রচিত। কওমী মাদ্রসায় দাওরায়ে হাদীস সিলেবাসে হানাফী মাযহাবের প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসাবে ‘আল হিদায়া’ পাঠ করা হয়। উচ্চতর সিলেবাসে ‘বাদাউস সানায়ে’, ‘ফাতহুল কাদীর’, ‘ফতোয়া এ আলমগীরি’, ‘আল মাবসুত’, ‘ফতয়ায়ে শামী’ কিতাবগুলো পাঠ করা হয়। কওমী মাদ্রাসা ফারেগ সকল ছাত্র শিক্ষক জানেন যে, এই কিতাবগুলো লেখকের নিজের কোন রচনা বা ফতোয়া সমগ্র নয়, বরং এ কিতাবগুলোতে সংকলক ইমাম আবু হানিফা রহঃ ও তার ছাত্রদের দেওয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফতোয়া গুলো সংগ্রহ করে কিতাব আকারে প্রকাশ করেছেন মাত্র। তাই এই কিতাব সমূহে যে রায় দেওয়া হয়েছে তাকেই হানাফী মাযহাবের স্বীকৃত রায় হিসাবে গ্রহণ করা হয়। হানাফী মাযহাবের এক কিতাবের ফতোয়ার সঙ্গে আরেক কিতাবের ফতোয়ার খুব বেশী ইখতিলাফ নেই। যেমন নিচে হানাফী মাযহাবের দুইটি কিতাব থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে এবং উভয় কিতাবের ইবারতের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই।
কওমী মাদ্রাসার দাওরাহ হাদীসের সিলেবাসভুক্ত কিতাব ‘আল হিদায়া’ থেকে আমরা প্রথমে সামরিক ও বেসামরিক লোকের সংজ্ঞা দেখব ইনশাল্লাহ। উক্ত কিতাবটি আবু তাহের মেসবাহ সাহেব অনুবাদ করেছেন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেসন প্রকাশ করেছে। তাই বাংলা ভাষাভাষী যে কেউ চাইলে মূল কিতাবটি পড়ে দেখতে পারেন। ডাউনলোড লিঙ্কঃ http://www.islameralobd.com/2014/10/Al-Hidaya.html আমি এখানে ‘আল হিদায়া’ কিতাব থেকে কিতাল সংক্রান্ত অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণটাই হুবুহু তুলে ধরা হল। লাল রঙয় ডাবল কোটেশনের মধ্যে কিতাবের ইবারত আর ব্র্যাকেটে কালো রঙয়ে আমার ব্যাখ্যা।
কিতাবঃ আল হিদায়া
সংকলনেঃ বুরহান উদ্দিন আলি ইবনে আবু বকর আল মারগিনানী রহিমাহুল্লাহ
অনুচ্ছেদঃ ‘জিহাদ ও লড়ায়ের পদ্ধতি’
২য় খণ্ড ৪৩০ পৃষ্ঠা
সংকলনেঃ বুরহান উদ্দিন আলি ইবনে আবু বকর আল মারগিনানী রহিমাহুল্লাহ
অনুচ্ছেদঃ ‘জিহাদ ও লড়ায়ের পদ্ধতি’
২য় খণ্ড ৪৩০ পৃষ্ঠা
“মুসলিম বাহিনী যখন দারুল হারবে প্রবেশ করে কোন শহর বা দুর্গ অবরোধ করবে তখন তাদের ইসলামের প্রতি দাওয়াহ দিবে। কেননা, হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের প্রতি দাওয়াহ না দিয়ে কোন কওমের বিরুদ্ধে লড়াই করেন নি। যদি তারা দাওয়াতে সাড়া দেই তাহলে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে বিরত থাকবে। কেননা উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ না করা পর্যন্ত লড়াই করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি।’
আর যদি তারা সাড়া দানে বিরত থাকে তাহলে তাদেরকে জিযিয়া প্রদানে আহ্বান জানাবে। প্রেরিত বিভিন্ন বাহিনীর অধিনায়কদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই আদেশ করেছেন। আর তাছাড়া আয়াতের ভাষ্য অনুসারে জিজিয়া হচ্ছে লড়াই থেকে বিরত থাকার পন্থা সমূহের অন্যতম।
এটা হল তাদের বেলায়, যাদের থেকে জিজিয়া গ্রহণের বিধান রয়েছে। পক্ষান্তরে মোরতাদ ও আরব মূর্তি পূজারক যাদের থেকে জিজিয়া গ্রহণের বিধান নেই, তাদের থেকে জিজিয়া গ্রহণের আহ্বান জানানোর মধ্যে কোন ফায়দা নেই। কেননা তাদের থেকে তো ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করা হবে না। আল্লাহ বলেছেন “ইসলাম গ্রহণ করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর”
যদি তারা জিজিয়া দিতে সম্মত হয় তাহলে মুসলমানদের উপর যাবতীয় সুবিধা তাদের জন্য হবে এবং মুসলমানদের উপর আরোপিত যাবতীয় দায় তাদের উপর হবে।
কেননা, হযরত আলী রাঃ বলেছেন যে, তারা জিজিয়া এজন্যই ব্যয় করেছে যে তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মতই (নিরাপদ) হয়ে যায় এবং তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মতই (নিরাপদ) হয়ে যায়।
মতনে যে ‘বদল’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে এবং কুরআনে যে এ’ত শব্দের উল্লেখ রয়েছে, এ উভয়টির দ্বারা ‘জিজিয়া প্রদান’ গ্রহণ করা উদ্দেশ্য। আল্লহই অধিক সমগত। যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে নি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া ছাড়াই লড়াই শুরু করা জায়েজ নেই।
কেননা বিভিন্ন বাহীনির অধিনায়কদের উপদেশ প্রদানকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন্, তখন আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এ সাক্ষ্য প্রদানের দাওয়াত দাও।
তাছাড়া ইসলামের দাওয়াত প্রদানের মাধ্যমেই তারা জানতে পারবে যে, দীনের বিষয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, সম্পদ লুন্ঠন ও পরিবার পরিজনকে দাস বানানোর উদ্দেশ্যে নয়। তাতে হয়ত তারা দাওয়াতে সাড়া দিবে। আর আমরাও লড়াইয়ের পরিশ্রম থেকে বেচে যাব।
যদি দাওয়াতের পুর্বেই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে তবে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে গোনাহগার হবে। তবে কোন ক্ষতিপূরণ আসবে না। কেননা প্রাণ রক্ষা কারী এখানে অনুপস্থিত, আর তা হল দীন গ্রহণ কিংবা দারুল ইসলামে আশ্রয় গ্রহণ। সুতারাং অমুসলিম নারী বা শিশুদের হত্যার মত হল।”
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ না করা পর্যন্ত লড়াই করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি।’
আর যদি তারা সাড়া দানে বিরত থাকে তাহলে তাদেরকে জিযিয়া প্রদানে আহ্বান জানাবে। প্রেরিত বিভিন্ন বাহিনীর অধিনায়কদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই আদেশ করেছেন। আর তাছাড়া আয়াতের ভাষ্য অনুসারে জিজিয়া হচ্ছে লড়াই থেকে বিরত থাকার পন্থা সমূহের অন্যতম।
এটা হল তাদের বেলায়, যাদের থেকে জিজিয়া গ্রহণের বিধান রয়েছে। পক্ষান্তরে মোরতাদ ও আরব মূর্তি পূজারক যাদের থেকে জিজিয়া গ্রহণের বিধান নেই, তাদের থেকে জিজিয়া গ্রহণের আহ্বান জানানোর মধ্যে কোন ফায়দা নেই। কেননা তাদের থেকে তো ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করা হবে না। আল্লাহ বলেছেন “ইসলাম গ্রহণ করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর”
যদি তারা জিজিয়া দিতে সম্মত হয় তাহলে মুসলমানদের উপর যাবতীয় সুবিধা তাদের জন্য হবে এবং মুসলমানদের উপর আরোপিত যাবতীয় দায় তাদের উপর হবে।
কেননা, হযরত আলী রাঃ বলেছেন যে, তারা জিজিয়া এজন্যই ব্যয় করেছে যে তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মতই (নিরাপদ) হয়ে যায় এবং তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মতই (নিরাপদ) হয়ে যায়।
মতনে যে ‘বদল’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে এবং কুরআনে যে এ’ত শব্দের উল্লেখ রয়েছে, এ উভয়টির দ্বারা ‘জিজিয়া প্রদান’ গ্রহণ করা উদ্দেশ্য। আল্লহই অধিক সমগত। যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে নি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া ছাড়াই লড়াই শুরু করা জায়েজ নেই।
কেননা বিভিন্ন বাহীনির অধিনায়কদের উপদেশ প্রদানকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন্, তখন আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এ সাক্ষ্য প্রদানের দাওয়াত দাও।
তাছাড়া ইসলামের দাওয়াত প্রদানের মাধ্যমেই তারা জানতে পারবে যে, দীনের বিষয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, সম্পদ লুন্ঠন ও পরিবার পরিজনকে দাস বানানোর উদ্দেশ্যে নয়। তাতে হয়ত তারা দাওয়াতে সাড়া দিবে। আর আমরাও লড়াইয়ের পরিশ্রম থেকে বেচে যাব।
যদি দাওয়াতের পুর্বেই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে তবে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে গোনাহগার হবে। তবে কোন ক্ষতিপূরণ আসবে না। কেননা প্রাণ রক্ষা কারী এখানে অনুপস্থিত, আর তা হল দীন গ্রহণ কিংবা দারুল ইসলামে আশ্রয় গ্রহণ। সুতারাং অমুসলিম নারী বা শিশুদের হত্যার মত হল।”
“আর যাদের কাছে ইতিপূর্বে দাওয়াত পৌছেছে, তাদেরও দাওয়াত দেওয়া মুস্তাহাব। অতিরিক্ত সতর্কীকরণ হিসাবে; তবে তা ওয়াজিব নয়। কেননা বিশুদ্ধ বর্ননায় প্রমাণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম অসতর্ক অবস্থায় বনী মুস্তালিকের উপর হামলা করেছিলেন এবং উসামা (রাঃ) কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন উবনা বস্তিতে খুব জোরে হামলা চালানোর এবং বস্তি জ্বালীয়ে দেয়ার। আর অসতর্ক হানা দাওয়াত দিয়ে হয় না।”
“ইমাম কুদুরী বলেন, যদি তারা প্রত্যাখ্যান করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য প্রর্থণা করবে এবং লড়াইয়ে অবতীর্ন হবে।
কেননা সোলায়মান বিন বুরায়দা (রাঃ) সম্পর্কিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তারা দাওয়াত অস্বীকার করে তবে তাদেরকে জিজিয়া প্রদানের আহ্বান জানাও। এরপর তিনি বলেছেন, যদি তারা তা প্রত্যাখ্যান করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য প্রর্থণা কর এবং লড়াইয়ে অবতীর্ণ হও।
আর যেহেতু আল্লাহই তার প্রিয় বান্দাদের সাহায্যকারী এবং তার শত্রুদের ধবংশকারী। সুতারাং সকল বিষয়ে তারই সাহায্য প্রর্থণা করা কর্তব্য। আর তাদের বিরুদ্ধে মিনজানিক (কামান) মোতায়েন করবে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তায়েফের বিরুদ্ধে করেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে জ্বালাও পোড়াও চালাবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বোরায়রা অঞ্চল জ্বালিয়ে (প্রয়োজনে) দিয়েছিলেন।”
“ইমাম কুদুরি রহ; বলেন, (বাধ ভেঙ্গে বা অন্য উপায়ে) তাদের উপর পানি ছেড়ে দেবে এবং তাদের বৃক্ষ নিধন করবে এবং তাদের ফসল নষ্ট করবে।”
“কেননা এসব দ্বারা তাদের লাঞ্ছিত করা হয়, তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করা হয়, তাদের প্রতিপত্তি ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং তাদের সংহতি বিচ্ছিন্ন করা হয়। সুতারাং তা বৈধ হবে।”
“তাদের মাঝে মুসলিম বন্দী বা ব্যবসায়ী থাকলেও তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে বাধা নেই। কেননা তীর বর্ষণে ইসলামের কেন্দ্র থেকে প্রতিরোধের মাধ্যমে বৃহৎ ক্ষতিরোধ করা হয়। পক্ষান্তরে মুসলিম বন্দী ও ব্যবসায়ী নিহত হওয়ায় সীমিত ক্ষতি। তাছাড়া খুব কম দুর্গই কিছু সংখ্যক মুসলিম থেকে খালি হয়। সুতারাং তা বিবেচনা করে যদি বিরত থাকতে হয় তবে জিহাদের দরজাই বন্ধ হয়ে যাবে।”
(আমেরিকার নাইন ইলেভেন বা ফ্রান্সের নিস শহরে হামলায় বেশ কিছু মুসলিম নিহত হওয়ায় যারা আপত্তি তুলেছেন তাদের এ মাসআলা দ্রষ্টব্য। তবে মুসলিমদের যদি পৃথক করা যায় তবে অবশ্যই তা করতে হবে। কিন্তু যখন পৃথক করা যায় না তখন মুসলিমদের কথা বিবেচনা করে হামলা থেকে বিরত থাকা যাবে না।)
“যদি তারা মুসলিম বালকদের কিংবা বন্দিদের ঢাল রূপে ব্যবহার করে তবে (আমাদের বর্ণিত কারণে) তাদের প্রতি তীর বর্ষণ থেকে বিরত থাকবে না। অবশ্য কাফিরদের প্রতি তীর বর্ষণের নিয়ত করবে। কেনন কার্যতঃ পার্থক্য করা অসম্ভব হলেও উদ্দেশ্যগত ভাবে তা সম্ভব। আর আদেশ পালনের দায়িত্ব সাধ্য অনযায়ী। আর ওই মুসলমানদের যে কজন তাদের তীর বর্ষণের শিকার হবে তাদের দিয়ত মুসলমানদের উপর ওয়াজিব হবে না। আর কাফফারাও ওয়াজিব হবে না।
কেননা জিহাদ হল ফরয, আর ফরয পালনের সাথে দন্ড যুক্ত হতে পারে না। জীবনাশংকাপূর্ন ক্ষুধার সময় অন্যের মাল গ্রহণের বিষয়টা ভিন্ন। কেননা ক্ষতিপূরণের ভয়ে কেউ তা থেকে বিরত থাকে না। কারণ তাতে নিজের জীবন বাচানোর বিষয় আছে। পক্ষান্তরে জিহাদের ভিত্তি হল প্রাণ নাশ করার উপর। সুতারাং ক্ষতিপূরণের ভয়ে তা থেকে বিরত থাকতে পারে।
ইমাম কুদুরি রহঃ বলেন, মুসলিম বাহীনির সাথে নারীদেরকে এবং কোরআন শরীফ নিয়ে যাওয়াই বাধা নেই, যদি এমন বড় বাহিনী হয় যার নিরাপত্তার উপর নির্ভর করা যায়। কেননা এক্ষেত্রে নিরাপত্তাই প্রবল, আর যা প্রবাল তা সুনিশ্চিতের মত। কিন্তু নিরাপদ নয় এমন ক্ষুদ্র বাহীনির সাথে নিয়ে যাওয়া মাকরুহ।
কেননা এতে তাদের জান ও মান সম্মান বিনষ্ট করার সম্মুখীন করা হয়। আর কোরআন শরীফকে অসম্মানের মুখে ফেলা হয়। কেননাঃ মুসলমানদের প্রতি ক্রোধঃবসত তারা কোরআনের অবমাননা করে বসবে। আর এটাই হল নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত নিষেধ বাণির সঠিক ব্যাখ্যা। ‘শত্রু ভূমিতে কোরআন নিয়ে সফর কর না’
পক্ষান্তরে কোন মুসলমান যদি নিরাপত্তা নিয়ে তাদের দেশে প্রবেশ করে এবং তারা যদি প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী হয়, তাহলে সাথে কোরআন শরীফ বহন করাই কোন দোষ নেই।
কেননা এক্ষেত্রে হস্তেক্ষেপ না করাই স্বাভাবিক।
বড় বাহীনিতে বয়স্কা নারীদের তাদের উপযোগী সেবাকর্মে অংশ নেওয়ার জন্য বের হওয়াতে বাধা নেই। যেমন, রান্না, পানি পান করান, শুশ্রসা করা। পক্ষান্তরে যুবতীদের ক্ষেত্রে গৃহে অবস্থান করাই অধিক ফেতনা রোধক।
আর বিনা প্রয়োজনে বয়স্কা নারীরাও প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করবে না। কেননা এটা দ্বারা মুসলমানদের দুর্বলতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু সহবাস ও খিদমতের উদ্দেশ্যে তাদের সাথে নেওয়া ভাল নয়। যদি একাজে নিতেই চাই তবে স্বাধীন নারীদের চাইতে দাসীদের নেওয়া ভাল।
স্ত্রী তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া এবং দাস তার মনিবের অনুমতি ছাড়া লড়াই করবে না। এর কারণ আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি। তবে শত্রু যদি কোন শহরের উপর চড়াও হয়; প্রয়োজনের তাগিদে।”
ইমাম কুদুরি রহঃ বলেন, মুসলিম বাহীনির সাথে নারীদেরকে এবং কোরআন শরীফ নিয়ে যাওয়াই বাধা নেই, যদি এমন বড় বাহিনী হয় যার নিরাপত্তার উপর নির্ভর করা যায়। কেননা এক্ষেত্রে নিরাপত্তাই প্রবল, আর যা প্রবাল তা সুনিশ্চিতের মত। কিন্তু নিরাপদ নয় এমন ক্ষুদ্র বাহীনির সাথে নিয়ে যাওয়া মাকরুহ।
কেননা এতে তাদের জান ও মান সম্মান বিনষ্ট করার সম্মুখীন করা হয়। আর কোরআন শরীফকে অসম্মানের মুখে ফেলা হয়। কেননাঃ মুসলমানদের প্রতি ক্রোধঃবসত তারা কোরআনের অবমাননা করে বসবে। আর এটাই হল নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত নিষেধ বাণির সঠিক ব্যাখ্যা। ‘শত্রু ভূমিতে কোরআন নিয়ে সফর কর না’
পক্ষান্তরে কোন মুসলমান যদি নিরাপত্তা নিয়ে তাদের দেশে প্রবেশ করে এবং তারা যদি প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী হয়, তাহলে সাথে কোরআন শরীফ বহন করাই কোন দোষ নেই।
কেননা এক্ষেত্রে হস্তেক্ষেপ না করাই স্বাভাবিক।
বড় বাহীনিতে বয়স্কা নারীদের তাদের উপযোগী সেবাকর্মে অংশ নেওয়ার জন্য বের হওয়াতে বাধা নেই। যেমন, রান্না, পানি পান করান, শুশ্রসা করা। পক্ষান্তরে যুবতীদের ক্ষেত্রে গৃহে অবস্থান করাই অধিক ফেতনা রোধক।
আর বিনা প্রয়োজনে বয়স্কা নারীরাও প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করবে না। কেননা এটা দ্বারা মুসলমানদের দুর্বলতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু সহবাস ও খিদমতের উদ্দেশ্যে তাদের সাথে নেওয়া ভাল নয়। যদি একাজে নিতেই চাই তবে স্বাধীন নারীদের চাইতে দাসীদের নেওয়া ভাল।
স্ত্রী তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া এবং দাস তার মনিবের অনুমতি ছাড়া লড়াই করবে না। এর কারণ আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি। তবে শত্রু যদি কোন শহরের উপর চড়াও হয়; প্রয়োজনের তাগিদে।”
“মুসলিমদের উচিত তারা যেন বিশ্বাস ভঙ্গ না করে, গনিমতের মাল চুরি না করে এবং লাস বিকৃত না করে। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘তোমরা গনিমতের খেয়ানত কর না, বিশ্বাস ভঙ্গ করো না এবং লাস বিকৃত কর না।’
এর অর্থ হল গনিমতের মাল থেকে চুরি করা আর হক খেয়ানত করা এবং চুক্তি ভঙ্গ করা।
আর উপরোক্ত ঘটনায় লাস বিকৃতের যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, তা পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা দ্বারা রহিত। এরূপই বর্ণিত হয়েছে।”
“আর স্ত্রীলোক, বালক, অতিবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অন্ধকে হত্যা করবে না। কেননা আমাদের মতে লড়াই হচ্ছে হত্যার বৈধতা দান কারী। আর তাদের দ্বারা তো লড়াই হয় না। একারণে এক পাশ যাদের অবশ এবং যাদের ডান হাত কর্তিত এবং যাদের হাত ও পা বিপরীতভাবে কাটা, তাদের হত্যা করা যায় না।
অতি বৃদ্ধ, পঙ্গু ও অন্ধ সম্পর্কে ইমাম শাফেঈ (র) আমাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন। কেননা তার মতে কুফর হল হত্যার বৈধতা দানকারী। আমরা যা বর্ণনা করেছি তাই হল এর বিপক্ষ প্রমাণ।
আর বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বালক ও নারীদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন এবং একবার এক নিহত নারীকে দেখতে পেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আহা, এতো লড়াইকারী ছিল না। তাহলে কেন একে হত্যা করা হল?
গ্রন্থকার বলেন, তবে কেউ যদি যুদ্ধে বুদ্ধি বা পরামর্শদারা হয় কিংবা স্ত্রীলোক যদি অধিপতি হয়।
কেননা তার অনিষ্ট অন্য লোকদের পর্যন্ত সংক্রমিত হয়। তদ্রুপ এদের কেউ যদি লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করে তাহলে তাদের অনিষ্ট রোধ করার জন্য তাদের হত্যা করা যাবে। তাছাড়া কারণ এই যে, তাদের পক্ষ থেকে লড়াই মূলত কতলকে বৈধতা দান করে।
আর কোন পাগলকে হত্যা করবে না। কেননা সে শরিয়াতের সম্বোধন পাত্র নয়। তবে সে যদি লড়াই করে তবে তার অনিষ্ট রোধ করার জন্য তাকে হত্যা করা হবে।”
‘তোমরা গনিমতের খেয়ানত কর না, বিশ্বাস ভঙ্গ করো না এবং লাস বিকৃত কর না।’
এর অর্থ হল গনিমতের মাল থেকে চুরি করা আর হক খেয়ানত করা এবং চুক্তি ভঙ্গ করা।
আর উপরোক্ত ঘটনায় লাস বিকৃতের যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, তা পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা দ্বারা রহিত। এরূপই বর্ণিত হয়েছে।”
“আর স্ত্রীলোক, বালক, অতিবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অন্ধকে হত্যা করবে না। কেননা আমাদের মতে লড়াই হচ্ছে হত্যার বৈধতা দান কারী। আর তাদের দ্বারা তো লড়াই হয় না। একারণে এক পাশ যাদের অবশ এবং যাদের ডান হাত কর্তিত এবং যাদের হাত ও পা বিপরীতভাবে কাটা, তাদের হত্যা করা যায় না।
অতি বৃদ্ধ, পঙ্গু ও অন্ধ সম্পর্কে ইমাম শাফেঈ (র) আমাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন। কেননা তার মতে কুফর হল হত্যার বৈধতা দানকারী। আমরা যা বর্ণনা করেছি তাই হল এর বিপক্ষ প্রমাণ।
আর বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বালক ও নারীদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন এবং একবার এক নিহত নারীকে দেখতে পেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আহা, এতো লড়াইকারী ছিল না। তাহলে কেন একে হত্যা করা হল?
গ্রন্থকার বলেন, তবে কেউ যদি যুদ্ধে বুদ্ধি বা পরামর্শদারা হয় কিংবা স্ত্রীলোক যদি অধিপতি হয়।
কেননা তার অনিষ্ট অন্য লোকদের পর্যন্ত সংক্রমিত হয়। তদ্রুপ এদের কেউ যদি লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করে তাহলে তাদের অনিষ্ট রোধ করার জন্য তাদের হত্যা করা যাবে। তাছাড়া কারণ এই যে, তাদের পক্ষ থেকে লড়াই মূলত কতলকে বৈধতা দান করে।
আর কোন পাগলকে হত্যা করবে না। কেননা সে শরিয়াতের সম্বোধন পাত্র নয়। তবে সে যদি লড়াই করে তবে তার অনিষ্ট রোধ করার জন্য তাকে হত্যা করা হবে।”
১। নারী ২। বালক (শিশু) ৩। অতি বৃদ্ধ ৪। প্রতিবন্ধী ৫। অন্ধ ৬। এক পাশ অবশ (পক্ষাঘাতগ্রস্থ) ৭। ডান হাত কর্তিত ৮। বিপরীতদিক থেকে হাত ও পা কাটা (ডান হাত বাম পা অথবা বাম হাত ডান পা) ৯। পাগল বা উন্মাদ
আল্লামা কাসানী তার বাদাউস সানায়ে গ্রন্থে আরও তিন প্রকারের কাফিরকে বেসামরিক লোক হিসাবে উল্লেখ করেছেন। (উক্ত গ্রন্থের পূর্ণ ইবারত নিচে দেওয়া হয়েছে)
১০। গীর্জাতে অবস্থানরত সন্ন্যাসী ১১। মানুষ থেকে বিচ্ছিন হয়ে পাহাড়ে ভ্রমণকারী পর্যটক ১২। কোন ঘর কিংবা উপসনালয়ে দরজা বন্ধ করে অবস্থানরত দুনিয়াত্যাগী
সুতারাং হানাফী মাযহাবের রায় অনুসারে উক্ত বার প্রকার কাফির বেসামরিক নাগরিক বলে গন্য হবে। অবশিষ্ট যত লোক আছে (অর্থাৎ সকল যুদ্ধসক্ষম পুরুষ নাগরিক) তারা সকলে সামরিক লোক বিবেচিত হবে এবং তাদের যুদ্ধের সময় হত্যা করা যাবে, বন্দী অবস্থায়ও হত্যা করা যাবে। আইএস কর্তৃক ২০১৪ সালে দুই জন আমেরিকান, দুই জন ব্রিটিশ ও একজন জাপানী নাগরিককে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। তিন জন ফরাসী নাগরিক ও কয়েকজন ইতালীয়, স্প্যানিশ নাগরিককে তারা মোটা অংকের মুক্তিপণ নিয়ে মুক্তি দেয়। মুক্তিপণ না পেলে তাদেরকেও হত্যা করা হত। আল কায়দা ইয়েমেন শাখা একজন ব্রিটিশ নাগরিককে বন্দী করে এবং মুক্তিপণ দাবী করে। পরে আমেরিকা সেখানে অভিযান চালাতে গেলে আল কায়দার মুযাহিদিনরা তাকে হত্যা করে। একিউএপি ও একিউআইএম বেশ কিছু ইউরোপীয় নাগরিক আটক করে তাদের সরকার থেকে ১২৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ আদায় করে। যেসব দেশ মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করেছে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এই সমস্ত হার্বি কাফিরদের হত্যা বা বন্দী করার সময় তারা শুধু বিবেচনা করেছে সে কোন দেশের নাগরিক। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লিপ্ত কিনা সেটা তাদের বিবেচ্য বিষয় ছিল না। এই জন্য অনেক মুসলিম আল কায়দা এবং আইএসের সমালোচনা করেছে। তাদের অভিযোগ, এই সমস্ত সংগঠন ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। ইসলাম নীরিহ মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। কারণ কোরআনে বলা হয়েছে যে একজন নীরিহ মানুষ হত্যা করল সে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করল। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি হানাফী মাযহাবের মাসআলা অনুসারে দারুল হারবের যে কোন কাফির নাগরিক হত্যা করা বৈধ। আইএস যাদের শিরশ্ছেদ করেছিল তাদের মধ্যে একজন ব্রিটিশকে মুসলিমদের থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, তাই তাকে হত্যা করা জায়েজ হয় নি। অবশিষ্ট সকল কাফিরকে হানাফী মাযহাবের মাসআলা অনুসারে হত্যা করা বৈধ ছিল। কারণ তারা কেউই পঙ্গু ছিল না, বৃদ্ধ ছিল না, শিশু ছিল না, অন্ধ ছিল না, পাগল ছিল না, পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিল না, হাত পা কাটা ছিল না, জনমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন পর্যটকও ছিল না। তারা ঘরের দরজা বন্ধ করে সন্ন্যাসব্রতও পালন করছিল না। তাই তাদেরকে হানাফী মাযহাব অনুসারে হত্যা করা বৈধ হয়েছিল।
২য় জুলায় ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে আইএস জাপানি ও ইটালি নাগরিকদের হত্যা করে। এদের মধ্যে যারা নারী ছিল তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ হয় নি উপরে বর্ণিত মাসআলা অনুসারে। তবে পুরুষদের হত্যা করা জায়েজ হয়েছে। কারণ সেখানে সবাই যুদ্ধ সক্ষম পুরুষ ছিল। একজন অতি বৃদ্ধ ছিল। তবে কিতাবে অতি বৃদ্ধ বলতে এমন বৃদ্ধকে বুঝান হয়েছে যে হাটতে চলতে পারে না। জাপান থেকে বাংলাদেশে এসেছে এবং কাজ করতে সক্ষম এমন বৃদ্ধের কথা এখানে বলা হয় নি। হানাফী মাযহাবের কিতাবে কোথাও নেই ডাক্তার বা প্রকৌশলী হলে তাকে হত্যা করা যাবে না। কে ক্রিকেট খেলে আর কে ফুটবল খেলে তাও বিবেচনায় নেওয়া হয় নি। কে কৃষক আর কে শ্রমিক, কে ধনী আর কে গরীব কোন কিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয় নি। সামরিক বেসামরিক নাগরিকের সংজ্ঞা নির্ধারণের সময় কে কোন পেশায় নিয়জিত তা বিবেচনায় করা হয় নি। সামরিক বেসামরিকের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে শারিরিক ও মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে।
মারকাযুদ দাওয়া আল ইসলামিয়া এর প্রধান মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব বলেছেন গুলশান হামলায় নিহত সবাই মুসলিমদের থেকে নিরাপত্তা (আমান) প্রাপ্ত ছিল। কারণ তারা সবাই ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। তিনি বলেছেন ভিসা হচ্ছে নিরাপত্তা চুক্তি এ ব্যাপারে ইজমা আছে। কোথায় কবে ইজমা হল তিনি উল্লেখ করেন নাই। মুযাহিদ উলামাগণ যারা আছেন তাদের অধিকাংশই ভিসাকে নিরাপত্তা চুক্তি মানেন না। অথচ একজন মুসলিমও দ্বিমত করলে সে বিষয়ে ইজমা হয় না। তাই উনার দাবী সম্পুর্ন অগ্রহণযোগ্য। ভিসা প্রথা চালু হয়েছে মাত্র কয়েক দশক আগে। ফলে এ বিষয়ে পুর্ববর্তী ফ্বুকাহাদের কোন মতামতও নেই। সুতারাং এ বিষয়ে বর্তমানে কিয়াস করা ছাড়া অন্য কোন উপাই নেই। ভিসা বিষয়ে বিস্তারিত আলাদা অনুচ্ছেদে লিখার প্রয়োজন রয়েছে। তবে গুলশান হামলার বৈধতার বিষয়ে স্বল্প কথায় বলা যায় যে, ভিসাকে নিরাপত্তা চুক্তি হিসাবে গ্রহণ করলেও গুলশানে নিহত কাফিররা নিরাপত্তা প্রাপ্ত ছিল না। কারণ মুসলিমদের নিকট কোন মুরতাদের প্রদত্ত ভিসার সামান্যতম মূল্যও নেই। শেখ হাসিনা ও তার সরকারের লোকজন ত্বগুত ও মুরতাদ। শেখ হাসিনার মতে বাংলাদেশে আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে যে কারও কটূক্তি করার অধিকার আছে। যে রাসুলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে কটূক্তি করার অধিকার স্বীকার করে সে মুসলিম থাকতে পারে না। বাংলাদেশের মুসলিমদের বড় অংশ শেখ হাসিনাকে মুরতাদ মনে করে। যারা করে না তারা হয় সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী নতুবা তার হাতে তসবীহ, মাথার পট্টি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে তাকে মুসলিম মনে করেছে। শেখ হাসিনার উচ্ছ্বিষ্টভোগী যে কারো বিরুদ্ধে মুযাহিদিনরা যুদ্ধ করতে সংকল্পবদ্ধ হোক সে বড় আলিম বা বড় জালিম। (ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলাদা অনুচ্ছেদে আলোচনা করার ইচ্ছা রয়েছে)
গুলশান হামলায় নিহত নারীদের ব্যাপারে কিছু কথা না বললেই নয়। পূর্ববর্তী যুগে সকল ধর্মের নারীরাই ঘরের কাজে নিয়োজিত থাকত। তারা সাধারণত ঘরের বাহিরের কাজে জড়িত হত না। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমা দেশের নারী ও পুরুষের কাজের ধরণের মধ্যে পার্থক্য করা খুবই কঠিন। পশ্চিমা বিশ্ব নারীদের পুরুষের সমানাধিকার দিয়েছে। তাদের দেশে নারী যে কাজ করে পুরুষও সে কাজ করে। পুরুষ রজনীতি করে, নারীও করে। পুরুষ ফুটবল খেলে, নারীও খেলে। পুরুষ ভোট দেয়, নারীও দেয়। পুরুষ ট্যাক্স দেয়, নারীও দেয়। পুরুষ সাংবাদিকতা করে, নারীও করে। মুযাহিদিনরা যদি কাফির পুরুষের সাথে যে আচারণ করে তার সমান আচারণ কাফির নারীদের সাথে না করে তবে সে দেশের নারীদের সমানাধিকার ক্ষুন্ন হবে। তাই বর্তমান যুগে কিয়াস করার অবকাশ আছে যে নারীরাও পুরুষের মত সামরিক লোকের অধিকার ভোগ করবে। সুতারাং তাদের হত্যাও বৈধ। তবে হারাম থেকে নিরাপদ দুরুত্বে অবস্থান করার জন্য কাফির নারীদের হত্যা না করাই উত্তম। তবে কেউ যদি কিয়াস করে তাদের সামরিক নাগরিকের অধিকার দেওয়ার মাধ্যমে নারী সমানাধিকার নিশ্চিত করে তবে আমাদের উচিত হবে না সে হত্যাকে নাজায়েজ বলা। তাই আমি গুলশানে নিহত নারীদের হত্যাকে নাজায়েজ বলতে অপরাগ। গুলশানে নিহত নারীরা এমন কাজে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল যা সাধারণত পুরুষদেরই শোভা পাই।
ইমাম শাফেই এর একটি কওল এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উদ্ধৃত হয়েছে। উনি মনে করতেন অতি বৃদ্ধ, পঙ্গু ও অন্ধ সামরিক লোক। শাফেই মাযহাবে বৃদ্ধ, পঙ্গু ও অন্ধ যদি সামরিক লোক হয় তবে যুদ্ধসক্ষম পুরুষরা তো অবশ্যই সামরিক লোক হবে। শাফেই মাযহাব যারা অনুসরণ করেন তারা যদি অন্ধ বা পঙ্গু কোন কাফিরকে হত্যা করে তবে নিশ্চয়ই সে এই জন্য জঙ্গী, সন্ত্রাসী হবেন না। আর হত্যাকারী যদি জঙ্গী, সন্ত্রাসী হন তবে ইমাম শাফেই তার আদর্শিক গুরু হিসাবে কি হবেন? ঐতিহাসিকভাবে মুসলিমদের মধ্যে এই ধারা চালু হয়ে আসছে যে এক মাযহাবের অনুসারীরা অন্য মাযহাবের অনুসারীদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন কিন্তু তাদের বাতিল আখ্যায়িত করেন না। সুতারাং হানাফিদেরও উচিত হবে না শাফেই মাযহাবের অনুসারীদের সমালোচনা করা যদিও বা তারা অন্ধ বা পঙ্গু কাফিরকে হত্যা করে।)
“অবশ্য বালক ও পাগলকে যতক্ষন তারা লড়াইরত থাকে ততক্ষন হত্যা করা যাবে। পক্ষান্তরে অন্যদের বন্দী করার পরেও হত্যা করতে বাধা নেই। কেননা শরীয়াতের সম্ভোধন তাদের অভিমুখী হওয়ার কারণে সে শাস্তির পাত্র।
যদি কখনও সুস্থ থাকে আবার কখনও মস্তিষ্ক বিকৃত ঘটে তাহলে সুস্থ অবস্থায় সে সুস্থ ব্যাক্তির সমতুল্য।”
যদি কখনও সুস্থ থাকে আবার কখনও মস্তিষ্ক বিকৃত ঘটে তাহলে সুস্থ অবস্থায় সে সুস্থ ব্যাক্তির সমতুল্য।”
মুশরিক পিতাকে নিজে অগ্রগামী হয়ে হত্যা করা মাকরুহ হবে।
কেনন আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন,
‘দুনিয়ার জীবনে সদাচারণের সাথে তাদের সংগ দান কর।’
তাছাড়া এজন্য যে, পুত্রের তো কর্তব্য হলো ভরণ পোষণের মাধ্যমে পিতার জীবন রক্ষা করা। সুতারাং তার প্রাণ নাশের নিঃশর্ত অনুমতি প্রদান করা এর পরিপন্থী। যদি সে তাকে সামনে পেয়ে যায় তাহলে নিজে এমনভাবে বাধাগ্রস্থ করতে যাবে, যাতে অন্য কেউ হত্যা করতে পারে। কেননা নিজে গোনাহে লিপ্ত না হয়ে অন্যের দ্বারাই উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে।
আর পিতা যদি তাকে হত্যা করতে এমনভাবে উদ্যত হয় যে, হত্যা করা ছাড়া তাকে রোধ করা সম্ভব না হয় তবে তাকে হত্যা করায় কোন দোষ নেই। কেননা তার উদ্দেশ্য তো হল আত্মরক্ষা করা।
কেনন আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন,
‘দুনিয়ার জীবনে সদাচারণের সাথে তাদের সংগ দান কর।’
তাছাড়া এজন্য যে, পুত্রের তো কর্তব্য হলো ভরণ পোষণের মাধ্যমে পিতার জীবন রক্ষা করা। সুতারাং তার প্রাণ নাশের নিঃশর্ত অনুমতি প্রদান করা এর পরিপন্থী। যদি সে তাকে সামনে পেয়ে যায় তাহলে নিজে এমনভাবে বাধাগ্রস্থ করতে যাবে, যাতে অন্য কেউ হত্যা করতে পারে। কেননা নিজে গোনাহে লিপ্ত না হয়ে অন্যের দ্বারাই উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে।
আর পিতা যদি তাকে হত্যা করতে এমনভাবে উদ্যত হয় যে, হত্যা করা ছাড়া তাকে রোধ করা সম্ভব না হয় তবে তাকে হত্যা করায় কোন দোষ নেই। কেননা তার উদ্দেশ্য তো হল আত্মরক্ষা করা।
কিতাবঃ বাদায়েউস সানায়ে’ ফি তারতিবুশ শারায়ে’
সংকলকঃ ইমাম আবু বকর আলা আল দ্বীন কাসানী
পরিচ্ছেদঃ কাফিরদের মধ্য থেকে কাকে হত্যা করা বৈধ আর কাকে হত্যা করা বৈধ নয়। খণ্ড ৭ প্রিষ্টা ১০১
সংকলকঃ ইমাম আবু বকর আলা আল দ্বীন কাসানী
পরিচ্ছেদঃ কাফিরদের মধ্য থেকে কাকে হত্যা করা বৈধ আর কাকে হত্যা করা বৈধ নয়। খণ্ড ৭ প্রিষ্টা ১০১
“কুফরের কারণে কাকে হত্যা করা বৈধ আর কাকে হত্যা করা বৈধ নয়” এই ব্যাপারে আমরা বলবো- এখানে অবস্থা নিম্নের সুরত সমূহের মধ্য হতে কোন একটি সুরত থেকে খালি নয়।
১/ হয়তো তা যুদ্ধের সময় হবে।
২/ অথবা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরবর্তী অবস্থা হবে। আর তা হল কাফেরকে গ্রেফতার ও বন্দী করার পর হত্যা করা।
১ম সুরতঃ যদি পরিস্থিতি যুদ্ধকালীন হয়, তবে এ পরিস্থিতিতে (১) নারী (২) শিশু (৩) অতিবৃদ্ধ (৪) পঙ্গু (৫) পক্ষাঘাতগ্রস্থ (৬) অন্ধ (৭) বিপরীত দিক থেকে হাত পা কর্তিত (৮) ডান হাত কর্তিত (৯) পাগল (১০) গীর্জাতে অবস্থানরত সন্ন্যাসী (১১) মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড়ে ভ্রমণকারী পর্যটক (১২) কোন ঘর কিংবা উপসানালয়ে দরজা বন্ধ করে অবস্থানরত দুনিয়াত্যাগীদের হত্যা করা বৈধ নয়।
মহিলা ও শিশুদের হত্যা করা না জায়েজ হওয়ার দলীল-
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- «لَا تَقْتُلُوا امْرَأَةً وَلَا وَلَيَدًا»
“তোমরা মহিলা ও সন্তানকে হত্যা করোনা!”
আরও বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক যুদ্ধে একজন নিহত মহিলাকে দেখতে পেলেন। অতঃপর এমনটি করতে নিষেধ করেছেন। রাসুল বললেন-
«هَاهْ مَا أُرَاهَا قَاتَلَتْ، فَلِمَ قُتِلَتْ؟ وَنَهَى عَنْ قَتْلِ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ»
“আমি একজন নিহত মহিলা দেখতে পাচ্ছি, তাঁকে কেন হত্যা করা হয়েছে? রাসুল মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন”। কেননা এরা যুদ্ধকারী নয়। সুতরাং তাঁদেরকে হত্যা করা হবেনা। তবে যদি তাঁদের মধ্য থেকে কেউ লড়াই করে, তাঁকে হত্যা করা হবে। এমনিভাবে কেউ যদি লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করে, মুসলমানদের গোপন তথ্য প্রকাশ করে, যদি তাঁর পরামর্শ বা রায়ের দ্বারা কুফর উপকৃত হয়, অথবা কাফেরদের অনুসৃত হয় (নেত্রী হয়), তাকেও হত্যা করা হবে। যদিও সে মহিলা বা শিশু হয়, কারণ তার থেকে পরোক্ষভাবে লড়াই পাওয়া যাচ্ছে।
বর্ণিত রয়েছে-
«أَنَّ رَبِيعَةَ بْنَ رَفِيعٍ السُّلَمِيَّ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَدْرَكَ دُرَيْدَ بْنَ الصِّمَّةِ يَوْمَ حُنَيْنٌ، فَقَتَلَهُ وَهُوَ شَيْخٌ كَبِيرٌ كَالْقَفَّةِ، لَا يَنْفَعُ إلَّا بِرَأْيِهِ، فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَلَمْ يُنْكِرْ عَلَيْهِ»
রবি’ ইবনে সালামিয়াহ রাদিঃ হুনাইনের যুদ্ধের দিন দুরাইদ ইবনে সিম্মাহকে নিহত পেলেন, অথচ সে ছিল দুর্বল এক বৃদ্ধ, যার পরামর্শ বা রায় দিয়ে কাফেরদের উপকৃত হওয়া ছাড়া আর কোন লাভ ছিলনা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এই সংবাদ পৌঁছালে রাসুল নিষেধ করেননি”। এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হল- প্রত্যেক ওই ব্যক্তি, যে যুদ্ধকারীদের অন্তর্ভুক্ত, তাকে হত্যা করা বৈধ। চাই সে লড়াই করুক বা না করুক। আর প্রত্যকে ওই ব্যক্তি, যে যুদ্ধকারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাকে হত্যা করা বৈধ নয়, তবে যদি সে বাস্তবে বা সশরীরে লড়াই করে, অথবা রায় বা পরামর্শ প্রদান, অনুসৃত হয়ে বা উদ্বুদ্ধ করে বা এই জাতীয় কোন কাজের দ্বারা পরোক্ষভাবে লড়াই করে, তাহলে তাকে হত্যা করা বৈধ।
«أَنَّ رَبِيعَةَ بْنَ رَفِيعٍ السُّلَمِيَّ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَدْرَكَ دُرَيْدَ بْنَ الصِّمَّةِ يَوْمَ حُنَيْنٌ، فَقَتَلَهُ وَهُوَ شَيْخٌ كَبِيرٌ كَالْقَفَّةِ، لَا يَنْفَعُ إلَّا بِرَأْيِهِ، فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَلَمْ يُنْكِرْ عَلَيْهِ»
রবি’ ইবনে সালামিয়াহ রাদিঃ হুনাইনের যুদ্ধের দিন দুরাইদ ইবনে সিম্মাহকে নিহত পেলেন, অথচ সে ছিল দুর্বল এক বৃদ্ধ, যার পরামর্শ বা রায় দিয়ে কাফেরদের উপকৃত হওয়া ছাড়া আর কোন লাভ ছিলনা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এই সংবাদ পৌঁছালে রাসুল নিষেধ করেননি”। এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হল- প্রত্যেক ওই ব্যক্তি, যে যুদ্ধকারীদের অন্তর্ভুক্ত, তাকে হত্যা করা বৈধ। চাই সে লড়াই করুক বা না করুক। আর প্রত্যকে ওই ব্যক্তি, যে যুদ্ধকারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাকে হত্যা করা বৈধ নয়, তবে যদি সে বাস্তবে বা সশরীরে লড়াই করে, অথবা রায় বা পরামর্শ প্রদান, অনুসৃত হয়ে বা উদ্বুদ্ধ করে বা এই জাতীয় কোন কাজের দ্বারা পরোক্ষভাবে লড়াই করে, তাহলে তাকে হত্যা করা বৈধ।
সুতরাং পুরোহিত বা যাজক (الْقِسِّيسُ), ওই সন্ন্যাসী যে মানুষের সাথে মিলামিশা করে, এবং যে কখনো পাগল থাকে আবার কখনো সুস্থ থাকে, বধির বা বোবা, বাম হাত কর্তিত ব্যক্তি, দুই পায়ের কোন এক পা কর্তিত ব্যক্তি, এই সকল লোকদের হত্যা করা বৈধ, যদিও তারা লড়াই না করে থাকে। কেননা তারা যুদ্ধকারীদের- ই অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং উল্লেখিত কাউকে যদি হত্যা করা হয়, যাকে হত্যা করা বৈধ নয়, তাহলে কোন দিয়্যত বা কাফফারা দিতে হবেনা। তবে তাওবা ও ইস্তেগফার করতে হবে। কেননা কাফেরের রক্ত কোন মুল্য রাখেনা, তবে যদি সে আমানপ্রাপ্ত হয় তাহলে মুল্য রাখে, কিন্তু এই সুরতে তার আমান পাওয়া যায়নি।
প্রাসংগিক ভাবে একটা কথা বলা জরুরী যে, মুরতাদ বারাক ওবামা সহ প্রায় সকল মডারেট মুসলিম কোরআনের একটা আয়াত উদ্ধৃত করে থাকে। সূরাহ মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াত যেখানে বলা হয়েছে একজন মানুষ হত্যা করলে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করা হয়। কাফির নারী শিশু যাদের সাথে মুসলিমদের কোন রূপ নিরাপত্তা চুক্তি নেই তাদের হত্যা করলে দুনিয়াতে কোন কাফফারা বা রক্তমূল্য দিতে হবে না। শুধু তওবাহ ইস্তিগফার করলেই যথেষ্ট হবে। সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করার জন্য কোন কাফফারাও নেই, রক্তমূল্যও নেই! তওবাহ ইস্তিগফারই যথেষ্ট! অথচ শপথ ভঙ্গ করলেও কাফফারা দিতে হয়। একজন মুসলিমকে অনিচ্ছাকৃত হত্যা করলেও রক্তপণ দিতে হয়। সুতারাং বোঝায় যাচ্ছে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যার বিধানটি অচুক্তি বদ্ধ কাফিরের জন্য প্রযোজ্য নয়। হানাফী মাযহাবের ফ্বিকহ হতে অন্তত আমরা এটাই জানতে পারি।
২য় সুরতঃ যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কাফেরকে হত্যা করা। আর সেটা হল গ্রেফতার বা বন্দী করার পর হত্যা করা। এক্ষেত্রেও মূলনীতি হল যাকে যুদ্ধ চলাকালীন হত্যা করা জায়েজ নয়, তাকে যুদ্ধের পরও হত্যা করা জায়েজ নয়। আর যাকে যুদ্ধ চলাকালীন তার সশরীরে বা পরোক্ষভাবে লড়াইয়ের কারণে হত্যা করা জায়েজ, তাকে বন্দী বা গ্রেফতারের পরও হত্যা করা জায়েজ। তবে শিশু, এমন বিকলাঙ্গ, যার আকল নেই, তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। তাদেরকে যুদ্ধ চলাকালীন তাদের সশরীরে বা পরোক্ষভাবে লড়াইয়ের কারণে হত্যা করা বৈধ। যুদ্ধের পর বন্দী অবস্থায় তাদের হত্যা করা বৈধ নয়। যদিও তারা যুদ্ধ চলাকালীন মুসলমানদের একটি জামাআতকে হত্যা করে। কেননা বন্দি করার পর হত্যা করা হচ্ছে শাস্তিস্বরূপ। আর এরা শাস্তিগ্রহনের উপযুক্ত নয়। আর যদি তাদের যুদ্ধের ময়দানে হত্যা করা হয়, তাহলে সেটা হবে যুদ্ধের ক্ষতি দূর করার জন্য। আর যখন তাদের থেকে ক্ষতি পাওয়া গেল, সুতরাং ক্ষতি দূর করার জন্য, তাদের হত্যা করা বৈধ। আর বন্দী করার দ্বারা ক্ষতির আশংকা দূর হয়ে যায়। সুতরাং এর পর হত্যা করা হবে শাস্তিস্বরূপ আর সে শাস্তির উপযুক্ত নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অধিক জানেন।
আর মুসলিমের জন্য অনুচিত যে তার হারবি (যুদ্ধকারী) পিতাকে যুদ্ধে প্রথমে হত্যা করবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- {وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا} [لقمان: 15]
দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। সুরা লুকমান-১৫
আল্লাহ তায়ালা কাফের পিতামাতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আর প্রথমেই হত্যা করা সদাচরণ নয়।
বর্ণিত আছে,
«أَنَّ حَنْظَلَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - غَسِيلَ الْمَلَائِكَةِ - عَلَيْهِمْ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - اسْتَأْذَنَ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فِي قَتْلِ أَبِيهِ، فَنَهَاهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ -»
“হানজালা রাদিঃ –তিনি ফেরেশতা কর্তৃক গোসলপ্রাপ্ত।– রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তার পিতাকে হত্যা করার অনুমতি চেয়েছেন। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নিষেধ করেছেন”। কেননা শরীয়ত তাকে জীবন ধারণের জন্য সন্তানের উপর ভরণপোষণের নির্দেশ দিয়েছে, এক্ষেত্রে তাকে হত্যার নির্দেশ তা নষ্ট করে দেয়। আর একটি আরেকটির বিপরীত। যদি পিতা তাঁকে হত্যা করতে চায়, তাহলে সে তা প্রতিহত করবে। যদি পিতা তাঁর উপর বিজয়ী হয়ে যায়, তাহলে এ ক্ষেত্রে সে হত্যা করতে পারবে। কেননা এটা আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয়তার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু প্রতিহত করতে গিয়ে হত্যা করার ইচ্ছা করবেনা, কেননা এটার প্রয়োজনীয়তা নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অধিক ভালো জানেন।
আর মুসলিমের জন্য অনুচিত যে তার হারবি (যুদ্ধকারী) পিতাকে যুদ্ধে প্রথমে হত্যা করবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- {وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا} [لقمان: 15]
দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। সুরা লুকমান-১৫
আল্লাহ তায়ালা কাফের পিতামাতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আর প্রথমেই হত্যা করা সদাচরণ নয়।
বর্ণিত আছে,
«أَنَّ حَنْظَلَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - غَسِيلَ الْمَلَائِكَةِ - عَلَيْهِمْ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - اسْتَأْذَنَ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فِي قَتْلِ أَبِيهِ، فَنَهَاهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ -»
“হানজালা রাদিঃ –তিনি ফেরেশতা কর্তৃক গোসলপ্রাপ্ত।– রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তার পিতাকে হত্যা করার অনুমতি চেয়েছেন। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নিষেধ করেছেন”। কেননা শরীয়ত তাকে জীবন ধারণের জন্য সন্তানের উপর ভরণপোষণের নির্দেশ দিয়েছে, এক্ষেত্রে তাকে হত্যার নির্দেশ তা নষ্ট করে দেয়। আর একটি আরেকটির বিপরীত। যদি পিতা তাঁকে হত্যা করতে চায়, তাহলে সে তা প্রতিহত করবে। যদি পিতা তাঁর উপর বিজয়ী হয়ে যায়, তাহলে এ ক্ষেত্রে সে হত্যা করতে পারবে। কেননা এটা আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয়তার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু প্রতিহত করতে গিয়ে হত্যা করার ইচ্ছা করবেনা, কেননা এটার প্রয়োজনীয়তা নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অধিক ভালো জানেন।
পরিচ্ছেদঃ যুদ্ধ ও শত্রু মুখোমুখি হওয়ার সময় যুদ্ধ শুরু করতে যে বিষয় গুলো একজন যোদ্ধার উপর ওয়াজিব, তার বর্ণনা।
যাই হোক যুদ্ধ ও শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার পর যুদ্ধ শুরু করতে যে বিষয় গুলো একজন যোদ্ধার উপর ওয়াজিব, তার সম্পর্কে আমরা বলবো- আল্লাহ তায়ালার তাওফিকে- এক্ষেত্রে বিষয়টি দুটি অবস্থার কোন একটি থেকে খালি নয়।
১/ হয়তো শত্রুদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে থাকবে।
২/ অথবা তাঁদের কাছে দাওয়াত পৌছবে না।
যদি তাদের কাছে দাওয়াত না পৌঁছে, তাহলে মুসলিমদের উপর ওয়াজিব হল প্রথমে তাদেরকে যবান দ্বারা ইসলামের দিকে আহবান করা।
দলিলঃ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ-
{ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ} [النحل: 125]
অর্থঃ আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। সুরা নাহল-১২৫
মুসলমানদের জন্য দাওয়াতের পূর্বে যুদ্ধ করা জায়েজ নয়। কেননা ঈমান আনয়ন যদিও দাওয়াতের পূর্বে শুধুমাত্র আকলের দ্বারাই ওয়াজিব। ফলে ঈমান না আনার কারণে তারা হত্যার উপযুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাসুল (সাঃ) প্রেরণের পূর্বে তাদের সাথে যুদ্ধকে হারাম করেছেন। এবং তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছানো হচ্ছে এটার অতিরিক্ত একটি বিষয় ও অনুগ্রহ করা, যাতে তাদের ওজর পেশ করার কোন অবস্থা না থাকে। যদিও বাস্তবে তাদের কোন ওজর নেই। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য ওই সকল আকলি দলীল কায়েম করেছেন, সেগুলো নিয়ে যদি তারা যথাযথ চিন্তা করে এবং সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়, তাহলে তারা প্রকৃতই আল্লাহ তায়ালাকে চিনতে পারবে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের নিকট রাসুল প্রেরণ করে তাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন। যাতে তাদের ওজর পেশ করার সামান্যতম অবকাশও না থাকে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
{فَيَقُولُوا رَبَّنَا لَوْلا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ} [القصص: 47
অর্থঃ তারা বলত, হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি আমাদের কাছে কোন রসূল প্রেরণ করলে না কেন? করলে আমরা তোমার আয়াতসমূহের অনুসরণ করতাম । সুরা কাসাস-৪৭
যদিও বাস্তবে তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছানো না হয়, যা আমরা পূর্বে স্পষ্ট করেছি।
কেননা যুদ্ধ শুধুমাত্র যুদ্ধের জন্য ফরজ করা হয়নি বরং ইসলামের দাওয়াতের জন্য ফরজ করা হয়েছে।
আর দাওয়াত হচ্ছে দুই প্রকারঃ
১/ দাওয়াত বিল বানান। আর সেটা হচ্ছে যুদ্ধ।
২/ দাওয়াত বিল লিসান। আর তা হয় তাবলীগ বা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে। আর দ্বিতীয়টি প্রথমটির চাইতে সহজ। কেননা যুদ্ধের মধ্যে দেহ, মাল ও জানের আশংকা থাকে। আর তাবলীগ বা পৌঁছে দেওয়ার মধ্যে এগুলোর কিছুই থাকেনা। সুতরাং যখন দুই দাওয়াতের সহজটির মাধ্যমে মাকসাদ অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন শুরুতে সেটা গ্রহণ করাই উত্তম। এই আলোচনা হচ্ছে যখন তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছায়নি এমন সুরতের সাথে সংশ্লিষ্ট।
আর যদি তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে থাকে, তাহলে দাওয়াতের নবায়ন ব্যতীতই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা জায়েজ। যার দলীল আমরা পূর্বে স্পষ্ট করেছি। কেননা হুজ্জত বা প্রমাণ হচ্ছে আবশ্যকীয় বিষয়। আর বাস্তবে ওজর পেশ করার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। আর একবার দাওয়াত দেওয়ার দ্বারা ওজর পেশ করার সামান্যতম অবকাশও শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এতদাসত্তেও উত্তম হল দাওয়াত নবায়ন করার পরই যুদ্ধ শুরু করা হবে। যাতে সব দিক থেকে তাদের সাড়া দেওয়ার সুযোগ থাকে।
১/ হয়তো শত্রুদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে থাকবে।
২/ অথবা তাঁদের কাছে দাওয়াত পৌছবে না।
যদি তাদের কাছে দাওয়াত না পৌঁছে, তাহলে মুসলিমদের উপর ওয়াজিব হল প্রথমে তাদেরকে যবান দ্বারা ইসলামের দিকে আহবান করা।
দলিলঃ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ-
{ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ} [النحل: 125]
অর্থঃ আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। সুরা নাহল-১২৫
মুসলমানদের জন্য দাওয়াতের পূর্বে যুদ্ধ করা জায়েজ নয়। কেননা ঈমান আনয়ন যদিও দাওয়াতের পূর্বে শুধুমাত্র আকলের দ্বারাই ওয়াজিব। ফলে ঈমান না আনার কারণে তারা হত্যার উপযুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাসুল (সাঃ) প্রেরণের পূর্বে তাদের সাথে যুদ্ধকে হারাম করেছেন। এবং তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছানো হচ্ছে এটার অতিরিক্ত একটি বিষয় ও অনুগ্রহ করা, যাতে তাদের ওজর পেশ করার কোন অবস্থা না থাকে। যদিও বাস্তবে তাদের কোন ওজর নেই। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য ওই সকল আকলি দলীল কায়েম করেছেন, সেগুলো নিয়ে যদি তারা যথাযথ চিন্তা করে এবং সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়, তাহলে তারা প্রকৃতই আল্লাহ তায়ালাকে চিনতে পারবে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের নিকট রাসুল প্রেরণ করে তাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন। যাতে তাদের ওজর পেশ করার সামান্যতম অবকাশও না থাকে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
{فَيَقُولُوا رَبَّنَا لَوْلا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ} [القصص: 47
অর্থঃ তারা বলত, হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি আমাদের কাছে কোন রসূল প্রেরণ করলে না কেন? করলে আমরা তোমার আয়াতসমূহের অনুসরণ করতাম । সুরা কাসাস-৪৭
যদিও বাস্তবে তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছানো না হয়, যা আমরা পূর্বে স্পষ্ট করেছি।
কেননা যুদ্ধ শুধুমাত্র যুদ্ধের জন্য ফরজ করা হয়নি বরং ইসলামের দাওয়াতের জন্য ফরজ করা হয়েছে।
আর দাওয়াত হচ্ছে দুই প্রকারঃ
১/ দাওয়াত বিল বানান। আর সেটা হচ্ছে যুদ্ধ।
২/ দাওয়াত বিল লিসান। আর তা হয় তাবলীগ বা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে। আর দ্বিতীয়টি প্রথমটির চাইতে সহজ। কেননা যুদ্ধের মধ্যে দেহ, মাল ও জানের আশংকা থাকে। আর তাবলীগ বা পৌঁছে দেওয়ার মধ্যে এগুলোর কিছুই থাকেনা। সুতরাং যখন দুই দাওয়াতের সহজটির মাধ্যমে মাকসাদ অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন শুরুতে সেটা গ্রহণ করাই উত্তম। এই আলোচনা হচ্ছে যখন তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছায়নি এমন সুরতের সাথে সংশ্লিষ্ট।
আর যদি তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে থাকে, তাহলে দাওয়াতের নবায়ন ব্যতীতই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা জায়েজ। যার দলীল আমরা পূর্বে স্পষ্ট করেছি। কেননা হুজ্জত বা প্রমাণ হচ্ছে আবশ্যকীয় বিষয়। আর বাস্তবে ওজর পেশ করার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। আর একবার দাওয়াত দেওয়ার দ্বারা ওজর পেশ করার সামান্যতম অবকাশও শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এতদাসত্তেও উত্তম হল দাওয়াত নবায়ন করার পরই যুদ্ধ শুরু করা হবে। যাতে সব দিক থেকে তাদের সাড়া দেওয়ার সুযোগ থাকে।
বর্ণিত আছে যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের সাথে তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করা পর্যন্ত যুদ্ধ করতেন না। তিনি তাদের একাধিকবার দাওয়াত দিতেন। এই বর্ণনা এই কথা বুঝায় যে, দাওয়াত নবায়ন করার পর যুদ্ধ শুরু করা উত্তম। অতঃপর যখন তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করা হবে, যদি তারা মেনে নেয়, তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকা হবে। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
«أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ، فَإِذَا قَالُوهَا عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إلَّا بِحَقِّهَا»
অর্থঃ আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, যখন তারা ইহা বলে ফেলবে, তখন তাদের রক্ত ও মাল আমার থেকে নিরাপদ হয়ে যাবে, তবে শরীয়তের কোন হক নয়।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন-
«مَنْ قَالَ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي دَمَهُ وَمَالَهُ»
অর্থঃ যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, আমার থেকে তার রক্ত ও মাল নিরাপদ হয়ে যাবে।
যদি তারা ইসলামের দিকে সাড়া না দেয়, তাদেরকে জিম্মাহ তথা ট্যাক্সের দিকে আহবান করা হবে, তবে আরবের মুশরিক ও মুরতাদদের জন্য এই সুযোগ নেই। আমরা পরবর্তীতে এই বিষয়ে আলোচনা করবো।
যদি তারা সাড়া দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকা হবে। তার দলীল হচ্ছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
«فَإِنْ قَبِلُوا عَقْدَ الذِّمَّةِ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ لَهُمْ مَا لِلْمُسْلِمِينَ، وَعَلَيْهِمْ مَا عَلَى الْمُسْلِمِينَ وَإِنْ أَبَوْا، اسْتَعَانُوا بِاَللَّهِ - سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى - عَلَى قِتَالِهِمْ»
অর্থঃ যদি তারা জিম্মাহর চুক্তি গ্রহণ করে নেয়, তাহলে তাদের জানিয়ে দাও যে, মুসলিমদের যেই অধিকার, তাদেরও সেই অধিকার রয়েছে, মুসলিমদের উপর যা ওয়াজিব, তাদের উপর তা ওয়াজিব। যদি তারা অস্বীকার করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া হবে”।
মুসলিমরা কাফেরদের বিরুদ্ধে নিজেদের চেষ্টা প্রচেষ্টার, ও সর্বোচ্ছ সামর্থ ব্যয় করার পর কাফেরদের বিরুদ্ধে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাহায্যের উপর দৃঢ় বিশ্বাস করবে। এবং অটল থাকবে ও আল্লাহ তায়াল ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করবে। এবং বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালা ওই সকল জিকির করবে, যেগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
- {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} [الأنفال: 45]
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কোন বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা উদ্দেশ্যে কৃতকার্য হতে পার। সুরা আনফাল-৪৫
{وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ} [الأنفال: 46]
অর্থঃ আর আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা`আলা রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে। সুরা আনফাল-৪৬
এবং তাদের প্রতি নির্দেশ হল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যদিও দাওয়াতের দ্বারা শুরু না করে। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
{فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ} [التوبة: 5]
অর্থঃ মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, সুরা তাওবা-৫
এবং চাই তারা নিষিদ্ধ মাসসমূহে থাকুক বা না থাকুক, কেননা নিষিদ্ধ মাসসমূহে যুদ্ধ হারাম হওয়াটা “সাইফের আয়াতের” দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে। আর নিষিদ্ধ মাস সমূহের বাহিরে যুদ্ধ হারাম হওয়াটা “কিতালের আয়াতের” দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে। তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করা এবং নৈশ আক্রমণ করাতে কোন সমস্যা নেই। তাদের ফলদার ও ফলবিহিন গাছগাছালি কেটে ফেলা ও তাদের ক্ষেতখামার নষ্ট করাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
- {مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ} [الحشر: 5]
অর্থঃ তোমরা যে কিছু কিছু খর্জুর বৃক্ষ কেটে দিয়েছ এবং কতক না কেটে ছেড়ে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই আদেশ এবং যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন। সুরা হাশর-৫
এই আয়াতের মাঝে আল্লাহ তায়াল খেজুর বৃক্ষের কর্তনের অনুমতি দিয়েছেন। আর আয়াতের শেষের দিকে সতর্ক করেছেন যে, এটা হল শত্রুদেরকে অপমানিত করা ও ক্রোধান্বিত করার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
{وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ} [الحشر: 5
অর্থঃ যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন। সুরা হাশর-৫
তাদের দুর্গসমূহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া, তাদের দুর্গ বা ঘরবাড়ি পানিতে ডুবানো, তাদের দুর্গসমূহ নষ্ট করা ও ধ্বংস করা, এবং তাদের দুর্গসমূহে মিঞ্জানিক দিয়ে আঘাত করাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
{يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُمْ بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ} [الحشر: 2]
তারা তাদের বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং মুসলমানদের হাতে ধ্বংস করছিল। সুরা হাশর-২
কেননা এইসবগুলোই কিতাল বা যুদ্ধের অন্তর্ভুক্ত। এই কারণে যে, এতে শত্রুকে রাগান্বিত, অপমানিত ও অপদস্ত করা হয়ে থাকে। কেননা মালের হুরমত সাব্যস্থ হয় মালিকদের হুরমতের কারণে। আর এক্ষেত্রে নফস তথা মালিকের হুরমত নেই, এমনকি তাকে যুদ্ধে হত্যা করা হয়, সুতরাং মালের হুরমত আর কিইবা থাকবে? তাদের বিরুদ্ধে তীর নিক্ষেপ করাতেও কোন সমস্যা নেই। যদিও জানা থাকে যে, তাদের মাঝে মুসলিম বন্দী ও ব্যবসায়ীরা রয়েছে। কেননা এখানে জরুরত বা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যখন কাফেরদের থেকে খুব কম সংখ্যক মুসলিম বন্দী ও ব্যবসায়ী বাঁচতে পারবে। সুতরাং তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করলে জিহাদের পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। কিন্তু তারা সেই কাফেরদের হত্যা করার ইচ্ছা করবেন, মুসলিমদের নয়। কেননা অন্যায়ভাবে মুসলিমদের হত্যা করার ক্ষেত্রে ইচ্ছা করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
«أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ، فَإِذَا قَالُوهَا عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إلَّا بِحَقِّهَا»
অর্থঃ আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, যখন তারা ইহা বলে ফেলবে, তখন তাদের রক্ত ও মাল আমার থেকে নিরাপদ হয়ে যাবে, তবে শরীয়তের কোন হক নয়।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন-
«مَنْ قَالَ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي دَمَهُ وَمَالَهُ»
অর্থঃ যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, আমার থেকে তার রক্ত ও মাল নিরাপদ হয়ে যাবে।
যদি তারা ইসলামের দিকে সাড়া না দেয়, তাদেরকে জিম্মাহ তথা ট্যাক্সের দিকে আহবান করা হবে, তবে আরবের মুশরিক ও মুরতাদদের জন্য এই সুযোগ নেই। আমরা পরবর্তীতে এই বিষয়ে আলোচনা করবো।
যদি তারা সাড়া দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকা হবে। তার দলীল হচ্ছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
«فَإِنْ قَبِلُوا عَقْدَ الذِّمَّةِ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ لَهُمْ مَا لِلْمُسْلِمِينَ، وَعَلَيْهِمْ مَا عَلَى الْمُسْلِمِينَ وَإِنْ أَبَوْا، اسْتَعَانُوا بِاَللَّهِ - سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى - عَلَى قِتَالِهِمْ»
অর্থঃ যদি তারা জিম্মাহর চুক্তি গ্রহণ করে নেয়, তাহলে তাদের জানিয়ে দাও যে, মুসলিমদের যেই অধিকার, তাদেরও সেই অধিকার রয়েছে, মুসলিমদের উপর যা ওয়াজিব, তাদের উপর তা ওয়াজিব। যদি তারা অস্বীকার করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া হবে”।
মুসলিমরা কাফেরদের বিরুদ্ধে নিজেদের চেষ্টা প্রচেষ্টার, ও সর্বোচ্ছ সামর্থ ব্যয় করার পর কাফেরদের বিরুদ্ধে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাহায্যের উপর দৃঢ় বিশ্বাস করবে। এবং অটল থাকবে ও আল্লাহ তায়াল ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করবে। এবং বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালা ওই সকল জিকির করবে, যেগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
- {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} [الأنفال: 45]
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কোন বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা উদ্দেশ্যে কৃতকার্য হতে পার। সুরা আনফাল-৪৫
{وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ} [الأنفال: 46]
অর্থঃ আর আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা`আলা রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে। সুরা আনফাল-৪৬
এবং তাদের প্রতি নির্দেশ হল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যদিও দাওয়াতের দ্বারা শুরু না করে। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
{فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ} [التوبة: 5]
অর্থঃ মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, সুরা তাওবা-৫
এবং চাই তারা নিষিদ্ধ মাসসমূহে থাকুক বা না থাকুক, কেননা নিষিদ্ধ মাসসমূহে যুদ্ধ হারাম হওয়াটা “সাইফের আয়াতের” দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে। আর নিষিদ্ধ মাস সমূহের বাহিরে যুদ্ধ হারাম হওয়াটা “কিতালের আয়াতের” দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে। তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করা এবং নৈশ আক্রমণ করাতে কোন সমস্যা নেই। তাদের ফলদার ও ফলবিহিন গাছগাছালি কেটে ফেলা ও তাদের ক্ষেতখামার নষ্ট করাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
- {مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ} [الحشر: 5]
অর্থঃ তোমরা যে কিছু কিছু খর্জুর বৃক্ষ কেটে দিয়েছ এবং কতক না কেটে ছেড়ে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই আদেশ এবং যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন। সুরা হাশর-৫
এই আয়াতের মাঝে আল্লাহ তায়াল খেজুর বৃক্ষের কর্তনের অনুমতি দিয়েছেন। আর আয়াতের শেষের দিকে সতর্ক করেছেন যে, এটা হল শত্রুদেরকে অপমানিত করা ও ক্রোধান্বিত করার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
{وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ} [الحشر: 5
অর্থঃ যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন। সুরা হাশর-৫
তাদের দুর্গসমূহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া, তাদের দুর্গ বা ঘরবাড়ি পানিতে ডুবানো, তাদের দুর্গসমূহ নষ্ট করা ও ধ্বংস করা, এবং তাদের দুর্গসমূহে মিঞ্জানিক দিয়ে আঘাত করাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
{يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُمْ بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ} [الحشر: 2]
তারা তাদের বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং মুসলমানদের হাতে ধ্বংস করছিল। সুরা হাশর-২
কেননা এইসবগুলোই কিতাল বা যুদ্ধের অন্তর্ভুক্ত। এই কারণে যে, এতে শত্রুকে রাগান্বিত, অপমানিত ও অপদস্ত করা হয়ে থাকে। কেননা মালের হুরমত সাব্যস্থ হয় মালিকদের হুরমতের কারণে। আর এক্ষেত্রে নফস তথা মালিকের হুরমত নেই, এমনকি তাকে যুদ্ধে হত্যা করা হয়, সুতরাং মালের হুরমত আর কিইবা থাকবে? তাদের বিরুদ্ধে তীর নিক্ষেপ করাতেও কোন সমস্যা নেই। যদিও জানা থাকে যে, তাদের মাঝে মুসলিম বন্দী ও ব্যবসায়ীরা রয়েছে। কেননা এখানে জরুরত বা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যখন কাফেরদের থেকে খুব কম সংখ্যক মুসলিম বন্দী ও ব্যবসায়ী বাঁচতে পারবে। সুতরাং তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করলে জিহাদের পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। কিন্তু তারা সেই কাফেরদের হত্যা করার ইচ্ছা করবেন, মুসলিমদের নয়। কেননা অন্যায়ভাবে মুসলিমদের হত্যা করার ক্ষেত্রে ইচ্ছা করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
এমনিভাবে যদি তারা মুসলিম শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, তবুও তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপে কোন সমস্যা নেই ফরজ প্রতিষ্ঠার জরুরতের কারণে। কিন্তু তাঁরা কাফেরদেরকেই ইচ্ছা করবে, মুসলিম শিশুদের নয়। যদি তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে, এবং তা কোন মুসলমানের শরীরে বিদ্ধ হয়, তাহলে কোন দিয়ত নেই, কোন কাফফারাহ নেই। হাসান ইবনে জিহাদ রহিমাহুল্লাহ বলেন- দিয়ত ও কাফফারাহ ওয়াজিব হবে। এটা শাফিঈ রহিমাহুল্লাহর দুই কউলের একটি।
হাসান এর উক্তি হল মুসলিমদের রক্ত নিষ্পাপ। সুতরাং নিক্ষেপ থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে ফরজ প্রতিষ্ঠার জরুরতের কারণে তা নিষিদ্ধ নয়, তাই তিনি জরুরত বা প্রয়োজনীয়তার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
“জরুরত এটা জবাদিহিতা দূর হওয়ার ক্ষেত্রে সাব্যস্ত হবে, জরিমানা বাতিল হওয়ার ক্ষেত্রে নয়, যেমন পিপাসিত অবস্থায় কারো পানি পান করে ফেলা, তার জন্য এই পান করাটা বৈধ করা হবে কিন্তু জরিমানা দিতে হবে, যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। এখানেও সেই রকমই হবে।”
আর বিষয় হল যেমনিভাবে কিতালের ফরজকে প্রতিষ্ঠার জন্য জবাবদিহিতাকে দূর করার প্রয়োজন সাব্যস্ত হয়, তেমনিভাবে জরিমানা বাতিলের প্রয়োজনীয়তাও সাব্যস্ত হয়। (আমাদের মতে) কেননা জরিমানা ওয়াজিব হওয়া এটা কিতালের ইকামতে ফরজের প্রতিবন্ধক হয়। কেননা এতে তাঁরা জরিমানা আবশ্যক হয়ে যাওয়ার ভয়ে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে। আর ওই বস্তুকে ওয়াজিব করা, যা ওয়াজিব কায়েমের প্রতিবন্ধক হয়, এটা বিপরীতমুখী একটি বিষয়। আর যুদ্ধের ফরজ বাতিল হবে না। এটা এই কথা প্রমাণিত করে যে, জরিমানা বাতিল হয়ে যাবে তবে পিপাসার্ত অবস্থা এর বিপরীত। কেননা জরিমানা ওয়াজিব হওয়াটা সেখানে পান করা বা ভোগ করা থেকে বাঁধা প্রদান করে না। কেননা যদি সে পানি পান না করে, তাহলে সে মারা যাবে। এমনিভাবে তার উপর যা ওয়াজিব হয়েছে, সে তা অর্জন বা আদায় করতে পারবে। সুতরাং তার পান করতে কোন বাঁধা নেই। আর এটা বিপরীতমুখী হবে না।
আর কোন মুসলিমের জন্য উচিত নয় যে, সে কাফেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে কোন কাফেরের সাহায্য কামনা করবে। কেননা তাদের গাদ্দারি বিশ্বাস করা যায়না। যেহেতু এই ক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় শত্রুতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যদি মুসলিমগণ সাহায্য গ্রহণে অপরাগ হয়, তাহলে গ্রহণ করতে পারবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অধিক ভালো জানেন।
হাসান এর উক্তি হল মুসলিমদের রক্ত নিষ্পাপ। সুতরাং নিক্ষেপ থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে ফরজ প্রতিষ্ঠার জরুরতের কারণে তা নিষিদ্ধ নয়, তাই তিনি জরুরত বা প্রয়োজনীয়তার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
“জরুরত এটা জবাদিহিতা দূর হওয়ার ক্ষেত্রে সাব্যস্ত হবে, জরিমানা বাতিল হওয়ার ক্ষেত্রে নয়, যেমন পিপাসিত অবস্থায় কারো পানি পান করে ফেলা, তার জন্য এই পান করাটা বৈধ করা হবে কিন্তু জরিমানা দিতে হবে, যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। এখানেও সেই রকমই হবে।”
আর বিষয় হল যেমনিভাবে কিতালের ফরজকে প্রতিষ্ঠার জন্য জবাবদিহিতাকে দূর করার প্রয়োজন সাব্যস্ত হয়, তেমনিভাবে জরিমানা বাতিলের প্রয়োজনীয়তাও সাব্যস্ত হয়। (আমাদের মতে) কেননা জরিমানা ওয়াজিব হওয়া এটা কিতালের ইকামতে ফরজের প্রতিবন্ধক হয়। কেননা এতে তাঁরা জরিমানা আবশ্যক হয়ে যাওয়ার ভয়ে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে। আর ওই বস্তুকে ওয়াজিব করা, যা ওয়াজিব কায়েমের প্রতিবন্ধক হয়, এটা বিপরীতমুখী একটি বিষয়। আর যুদ্ধের ফরজ বাতিল হবে না। এটা এই কথা প্রমাণিত করে যে, জরিমানা বাতিল হয়ে যাবে তবে পিপাসার্ত অবস্থা এর বিপরীত। কেননা জরিমানা ওয়াজিব হওয়াটা সেখানে পান করা বা ভোগ করা থেকে বাঁধা প্রদান করে না। কেননা যদি সে পানি পান না করে, তাহলে সে মারা যাবে। এমনিভাবে তার উপর যা ওয়াজিব হয়েছে, সে তা অর্জন বা আদায় করতে পারবে। সুতরাং তার পান করতে কোন বাঁধা নেই। আর এটা বিপরীতমুখী হবে না।
আর কোন মুসলিমের জন্য উচিত নয় যে, সে কাফেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে কোন কাফেরের সাহায্য কামনা করবে। কেননা তাদের গাদ্দারি বিশ্বাস করা যায়না। যেহেতু এই ক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় শত্রুতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যদি মুসলিমগণ সাহায্য গ্রহণে অপরাগ হয়, তাহলে গ্রহণ করতে পারবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অধিক ভালো জানেন।
মুসলিমদের উচিত নয় এক কাফিরের বিরুদ্ধে আরেক কাফিরের সাহায্য কামনা করা। তবে যদি অপারগ হয় তবে সাহায্য গ্রহণ করতে পারে।
(প্রবন্ধের অবশিষ্ট অংশ পরের পোস্টে)
Comment