শয়তান দুই প্রকার। জিন শয়তান ও মানুষ শয়তান।
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন: ‘ওয়াসওয়াসা দানকারী জিন ও মানুষ থেকে আশ্রয় চাই।’ (সূরা নাস:৬)
জিন শয়তানকে বাঁধা হলেও মানুষ শয়তানকে বাঁধার কথা বলা হয়নি। তাই রমযান মাসে মানুষ শয়তানসহ ছোট ছোট জিন শয়তানগুলো অপকর্মে লিপ্ত থাকার ফলে রমযানের পাপ কাজ অব্যাহত থাকে। কিন্তু কেউ নেক কাজ করতে চাইলে আসমানের রহমতের দরজা ও জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত এবং সেদিকে আকর্ষণের পথে বাধা কম।
রমযান হচ্ছে ধৈর্যের মাস এবং ধৈর্যের সওয়াব হচ্ছে জান্নাত। রমযান সহানুভূতির মাস। এই মাসে মুমিনের রিযিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোযাদারকে ইফতার করায় তা তার গুনাহের ক্ষমা ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির উপায় হবে। সেও রোযাদারের সমান সওয়াব পাবে, কিন্তু তাই বলে রোযাদারের সওয়াবের কোনো কমতি হবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ হচ্ছে, যদি মেঘের কারণে ২৯শে শাবানের রাতে চাঁদ দেখা না যেতো, তাহলে শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করেই রমযানের রোযা রাখতেন। (আবু দাউদ)
বিভিন্ন ধর্মে রোযা
যুগে যুগে এই তাকওয়া অর্জনের সুযোগ ও চেষ্টা বিদ্যমান ছিল। তাই আমরা দেখি, অন্যান্য আসমানী কিতাবের অনুসারীদের উপরও রোযা ফরয ছিল। একথাই আল্লাহ বলেছেন:
﴿ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ ﴾ [البقرة: ١٨٣]
‘যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছিল।’ সূরা আল বাকারাহ: ১৮৩।
অন্যান্য উম্মতের উপর কি আমাদের মতই রোযা ফরয করা হয়েছিল, না অন্যভাবে, তা আমাদের জানা নেই। হাদীসে এসেছে, দাউদ (আ) রোযা রাখতেন। তিনি একদিন পর পর বছরের ৬ মাস রোযা রাখতেন। তবে তাঁর রোযার ধরন আমাদের জানা নেই। ইহুদীরা ১০ই মুহররমে আশুরার রোযা রাখে। সেই দিন আল্লাহ মূসা (আ) কে পানিতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন এবং ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছেন।
অতীতের বহু জাতি রোযা রেখেছে। পারস্য, রোমার, হিন্দু, গ্রীক, ব্যাবিলনীয় ও পুরাতন মিসরীয়রা রোযা রাখত। ক্যাথলিক গীর্জা রোযার কোনো নির্দেশ ও নীতিমালা জারি করেনি। তবে গীর্জার দৃষ্টিতে কোনো কোন সময় পূর্ণ উপবাস কিংবা আংশিক উপবাসের মাধ্যমে কিছু গুণাহ মাফ হয় এবং তা এক প্রকারের তাওবা হিসেবে গণ্য হয়। রোমান গীর্জা, মাঝে মধ্যে দিনে এক বেলা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আংশিক রোযার উপদেশ দেয়।
প্রাচীন খৃষ্টানরা বুধবার, শুক্রবার ও শনিবারে রোযা রাখত। তারা তাদের উপর আপতিত বিপদ মুক্তির জন্য রোযা রাখত। ৪র্থ খৃষ্টাব্দের শুরুতে খৃষ্টানদের উপর মারাত্মক নির্যাতন নেমে আসে। সে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য নবী মূসা (আ) এর অনুকরণে তারা ৪০ দিন ব্যাপী বড় রোযা রাখত।
এছাড়াও ঐ সময়ে মানুষের মধ্যে এ ধারণা বিরাজ করে যে, মানুষের খাওয়ার সময় শয়তান শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করা জরুরী, যেন শয়তানকে তাড়িয়ে নফসকে পবিত্র করা যায়। সে জন্য তারা রোযা রাখত। মথি লিখিত সুসমাচারে আছে, নামায ও রোযা দ্বারা শয়তান বেরিয়ে যায়।
প্রাচীন হিব্রুরা শোক কিংবা বিপদের মুহূর্তে রোযা রাখত। বিপদ দূর হয়ে গেলে আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রাখত। হিব্রু ক্যালেন্ডারে আজও ক্ষমা দিবসে ইহুদীদের রোযা রাখার নিয়ম আছে। প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা বছরে কয়েকদিন একাধারে রোযা রাখত। তাদের মতে, এটা আত্মাকে বিশুদ্ধ করার উত্তম পদ্ধতি। দার্শনিক পিথাগোথ ৪০ দিন রোযা রাখতেন। তার মতে, রোযা চিন্তার সহায়ক। সক্রেটিস এবং আফলাতুনও ১০ দিন রোযা রাখতেন। প্রাচীন সিরিয়ানরা প্রতি ৭ম দিনে রোযা রাখত। আর মঙ্গোলিয়ানরা রাখত প্রতি ১০ম দিবসে। সর্বযুগেই রোযার প্রচলন ছিল।
অনুরূপভাবে, বৌদ্ধ, হিন্দু, তারকা পূজারী ও আধ্যাত্মবাদীদেরও উপবাস সাধনার নিয়ম রয়েছে। তারা বিশেষ কিছু খাবার পরিহার করে আত্মাকে উন্নত করার চেষ্টা করে। তাদের ধারণা, দেহকে দূর্বল করার মাধ্যমে আত্মা শক্তিশালী হয়। আত্মাকে সবল করার জন্য তাদের এই উপবাস প্রথার আবিষ্কার হয়েছে। মূলকথা, রোযা প্রায় সকল জাতি ও ধর্মের মধ্যে রয়েছে। যদিও তার ধরণ-প্রকৃতি আমাদের জানা নেই।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রোযা
এতক্ষণ আমরা রোযার ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, রোযার ফযীলত ও মর্যাদা কত অসীম। এখন আমরা এর পাশাপাশি ব্যাপকার্থে রোযার ধারণা সম্পর্কে আরেকটি হাদীস আলোচনা করবো যা প্রতিটি রোযাদার মুসলিমের চিন্তার বিষয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«رب صائم حظه من صيامه الجوع والعطش ورب قائم حظه من قيامه السهر»
“বহু রোযাদার রোযার মাধ্যমে ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া আর কিছুই লাভ করে না এবং রাত্রের বহু নামাযী রাত্রী জাগরণ ছাড়া আর কিছুই পায় না। মুসনাদে আহমদ,খ২,পৃ.৩৭৩।
চিন্তার বিষয় হলো, রোযার এতো অগণিত পুরস্কার ও মর্যাদা সত্ত্বেও বহু রোযাদার এবং তারাবী ও তাহাজ্জুদ গুজারের ভাগ্যে ক্ষুধা-পিপাসা এবং রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছু জোটে না। রমযান মাসে আল্লাহর সকল মাখলুক আল্লাহর রহমতের স্পর্শ লাভ করে, সেখানে বহু রোযাদারের এই দুরবস্থা কেন? এর কারণ ও প্রতিকার জানা না থাকলে আমরাও সেই দুর্ভাগ্যের মিছিলের অংশীদার হয়ে যেতে পারি। মোটেও বিচিত্র নয় যে, এতদিন আমরা আমাদের রোযার মাধ্যমে ক্ষুধা-পিপাসা ও রাত্রি জাগরণের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ করতে পারিনি।
তাই রমযানের রোযা সম্পর্কে আজ আমাদেরকে আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মসমালোচনা করতে হবে। আসলে রোযা বলতে শুধু সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ হতে বিরত থাকা নয়, বরং রোযাদারকে অবশ্যই তার বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকেও রোযার আওতায় আনতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের রোযাকে সফল করে তুলতে পারবো ইনশাল্লাহ। আর এক্ষেত্রে অন্তর,পেট,জিহ্ব্বা ,কান প্রভৃতিরও রোযা থাকা আবশ্যক।
ক. অন্তরের রোযা
দেহের রোযার ভিত্তি হচ্ছে অন্তরের রোযা। শুধু তাই নয়, যে কোনো ইবাদতে অন্তরের স্থান সবার আগে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَن يُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ يَهۡدِ قَلۡبَهُۥۚ ١١ ﴾ [التغابن: ١١]
“যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে হেদায়াত করেন।”
অন্তরের হেদায়াত সকল ইবাদতের মূল কথা। তাই রোযার জন্য মন-মানসিকতা, চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা এবং প্রবৃত্তিকে পবিত্র ও কলুষমুক্ত হতে হবে। সৎ নিয়ত, সৎ চিন্তা, পরিকল্পনা, একনিষ্ঠতা কিংবা এখলাস হচ্ছে অন্তরের মূল কথা। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنما الأعمال بالنيات»
“সকল আমলের মূল ভিত্তি হচ্ছে নিয়ত।”[ বোখারী,খ.১,হাদীস নং ১।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
«أَلاَ وَإِنَّ فِي الجَسَدِ مُضْغَةً: إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الجَسَدُ كُلُّهُ، أَلاَ وَهِيَ القَلْبُ»
“হুশিয়ার! শরীরের মধ্যে এক টুকরা গোশত এমন আছে যা ঠিক ও সংশোধিত হলে, গোটা শরীর ঠিক ও সংশোধিত থাকে এবং তা খারাপ হলে গোটা শরীর খারাপ হয়ে যায়। হুশিয়ার! সেটি হচ্ছে অন্তর। বুখারী,খ১,হাদীস নং ৫২।
মন বা অন্তর দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক ধরনের অন্তর হচ্ছে, ঈমানের রসে সিক্ত ও আল্লাহ ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ। তা দ্বীন ও ঈমানের প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহর প্রতি সকল ত্যাগ তিতিক্ষার জন্য নিবেদিত। সেই মন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ নিষেধ মানার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে এবং বাতিল ও অনইসলামী কাজের প্রতি তার থাকে প্রচন্ড ঘৃণা ও বিদ্রোহের মনোভাব। আরেক ধরনের অন্তর হচ্ছে, মৃত ও অসুস্থ্য। তাকে পাপী অন্তরও বলা যায়। এই অন্তরের প্রধান কাজ হলো, দ্বীন ও ঈমান এবং নেক কাজে অনীহা, অনাগ্রহ ও ইসলাম বিরোধী কাজে উৎসাহবোধ করা। শেষোক্ত ধরনের অন্তর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন:
﴿ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ فَزَادَهُمُ ٱللَّهُ مَرَضٗاۖ ﴾ [البقرة: ١٠]
‘তাদের অন্তরে রয়েছে রোগ এবং আল্লাহ সে রোগ আরো বাড়িয়ে দেন” [সূরা আল বাকারা:১০]
﴿ أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ أَمۡ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقۡفَالُهَآ ٢٤ ﴾ [محمد: ٢٤]
“তারা কি কুরআনকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তরে তালা লাগানো” (সূরা মোহাম্মদ: ২৪)
সে জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি করে নিম্নের এই দো‘আ পড়তেন।
«يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك»
“হে অন্তর পরিবর্তনকারী। আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত করে দাও।”[ তিরমিযী, কিতাবুল কদর,খ.১৩পৃ.২১, হাদীস নং ৩৮৬৪। 15]
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অন্তরের রোযা বলতে কি বুঝায়? অন্তরের রোযা বলতে বুঝায় অন্তরকে শির্ক থেকে মুক্ত, বাতিল আকীদা বিশ্বাস থেকে দূরে এবং খারাপ ও নিকৃষ্ট ওসওয়াসা মনোভাব ও নিয়ত থেকে খালি রাখা। মনকে গর্ব অহংকার থেকে দূরে, হিংসা-বিদ্বেষ ও লোক দেখানোর মনোবৃত্তি থেকে মুক্ত রাখা। কেননা, তা নেক আমলকে ধ্বংস করে ও জ্বালিয়ে দেয়। তখন গুনাহের কাজের প্রতি কোনো আগ্রহ উদ্দীপনা থাকবে না।
মনকে এ সকল খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখলেই অন্তরের রোযা হয়ে যায়। তখন রোযাদারের মন আল্লাহর ভালোবাসা পূর্ণ থাকে এবং তাকে তাঁর নাম ও গুণাবলীসহ স্মরণ করতে থাকে। অন্তর সর্বদা আল্লাহর সৃষ্ট জগত ও বিচিত্র কুদরত সম্পর্কে ধ্যানে থাকে এবং মন্দ ও খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে।
মুমিনের অন্তরে ঈমানের রোশনী বা আলো থাকে। এর সাথে অন্ধকার সহ-অবস্থান করতে পারে না। ঈমানী নূর বা আলো বলতে বুঝায়, চিরন্তন পয়গাম, আসমানী শিক্ষা ও আল্লাহর আইনের আলোকবর্তিকা। ঐ নূরের সাথে আল্লাহর তৈরি ফিতরাত বা স্বভাব-প্রকৃতির নূরও যোগ হয়। তখন দুই নূর এক সাথে হয়- এ কথাই মহান আল্লাহ বলেছেন:
﴿ نُّورٌ عَلَىٰ نُورٖۚ يَهۡدِي ٱللَّهُ لِنُورِهِۦ مَن يَشَآءُۚ ﴾ [النور: ٣٥]
‘নূরের উপরে নূর, আল্লাহ যাকে চান তাকে নিজ নূরের দিকে হেদায়াত দান করেন।’ (সূরা নূর: ৩৫)
অন্তর রোযা রাখলে তা আল্লাহর ভালোবাসায় আবাদ হয়। তখন তা বাতির মতো মিটমিট করে জ্বলতে শুরু করে। দিনে তা সূর্যের মতো আলো দান করে এবং ভোর রাতে সোবহে সাদিকের লালিমার মতো জ্বলতে থাকে। অন্তরকে হিংসা বিদ্বেষ, ঘৃণা ও ধোঁকাবাজি থেকে দূরে রাখতে পারলে জান্নাতে প্রবেশের রাস্তা প্রশস্ত হবে। অন্তরের রোযার এটাও একটা বিশেষ উদ্দেশ্য। আল্লাহ রোযার মাধ্যমে আমাদের অন্তরকে পূত পবিত্র ও নিষ্কলুষ করুন।
খ. পেটের রোযা
পেটের রোযা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর উপর দেহের রোযার বিশুদ্ধতা নির্ভর করে। মানুষের জীবন, কাজ-কর্ম, চরিত্র ও আচরণের উপর হালাল ও হারাম খাদ্যের প্রভাব পড়ে। তাই হালাল খাবার খেলে ভাল ও নেক কাজ করার প্রেরণা জাগে। পক্ষান্তরে হারাম খাবার খেলে গুনাহ ও নিষিদ্ধ কাজ করার প্রেরণা জাগে। সে জন্য হালাল খাদ্য গ্রহণের জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ ﴾ [المؤمنون: ٥١]
‘হে রাসূলেরা! তোমরা পবিত্র জিনিস থেকে খাবার গ্রহণ কর এবং নেক কাজ কর।’
এখানে পবিত্র খাবারের সাথে নেক আমলকে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র ও হালাল খাবারের অনিবার্য দাবী হচ্ছে নেক কাজ করা। (সূরা আল-মোমিনুন: ৫১)
মহান আল্লাহ আরো বলেছেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ وَٱشۡكُرُواْ لِلَّهِ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ١٧٢ ﴾ [البقرة: ١٧٢]
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার প্রদত্ত পবিত্র রিযিক খাও এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত কর।’ (সূরা আল বাকারা: ১৭২)
আল্লাহ পবিত্র জিনিসকে হালাল ও অপবিত্র জিনিসকে হারাম করেছেন। তিনি বলেছেন:
﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ١٥٧ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
‘আল্লাহ পবিত্র জিনিসসমূহকে হালাল ও অপবিত্র জিনিসসমূহকে হারাম করেছেন।’ (সূরা আ‘রাফ: ১৫৭)
পেটের রোযা বলতে বুঝায় পেটকে হারাম খাদ্য ও পানীয় থেকে বাঁচানো। ভুঁড়িভোজ বা অতিরিক্ত আহার না করা, রোযার সময় দিনে পানাহার থেকে বিরত থাকা এবং হারাম জিনিস দিয়ে ইফতার না করা। হারাম খাবার যেমন:
আল্লাহ অনেক খাবার হারাম ঘোষণা করেছেন। যেমন- শুকরের গোশত, হাতী, কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণী, চিল, বাজ ও কাকসহ পা দিয়ে ছোঁ মেরে শিকার করা বিভিন্ন পাখী, মদ, মলমূত্রসহ যাবতীয় অপবিত্র জিনিস।
হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ খাওয়াও হারাম। হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ অনেক। সেগুলো ………
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন: ‘ওয়াসওয়াসা দানকারী জিন ও মানুষ থেকে আশ্রয় চাই।’ (সূরা নাস:৬)
জিন শয়তানকে বাঁধা হলেও মানুষ শয়তানকে বাঁধার কথা বলা হয়নি। তাই রমযান মাসে মানুষ শয়তানসহ ছোট ছোট জিন শয়তানগুলো অপকর্মে লিপ্ত থাকার ফলে রমযানের পাপ কাজ অব্যাহত থাকে। কিন্তু কেউ নেক কাজ করতে চাইলে আসমানের রহমতের দরজা ও জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত এবং সেদিকে আকর্ষণের পথে বাধা কম।
রমযান হচ্ছে ধৈর্যের মাস এবং ধৈর্যের সওয়াব হচ্ছে জান্নাত। রমযান সহানুভূতির মাস। এই মাসে মুমিনের রিযিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোযাদারকে ইফতার করায় তা তার গুনাহের ক্ষমা ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির উপায় হবে। সেও রোযাদারের সমান সওয়াব পাবে, কিন্তু তাই বলে রোযাদারের সওয়াবের কোনো কমতি হবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ হচ্ছে, যদি মেঘের কারণে ২৯শে শাবানের রাতে চাঁদ দেখা না যেতো, তাহলে শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করেই রমযানের রোযা রাখতেন। (আবু দাউদ)
বিভিন্ন ধর্মে রোযা
যুগে যুগে এই তাকওয়া অর্জনের সুযোগ ও চেষ্টা বিদ্যমান ছিল। তাই আমরা দেখি, অন্যান্য আসমানী কিতাবের অনুসারীদের উপরও রোযা ফরয ছিল। একথাই আল্লাহ বলেছেন:
﴿ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ ﴾ [البقرة: ١٨٣]
‘যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছিল।’ সূরা আল বাকারাহ: ১৮৩।
অন্যান্য উম্মতের উপর কি আমাদের মতই রোযা ফরয করা হয়েছিল, না অন্যভাবে, তা আমাদের জানা নেই। হাদীসে এসেছে, দাউদ (আ) রোযা রাখতেন। তিনি একদিন পর পর বছরের ৬ মাস রোযা রাখতেন। তবে তাঁর রোযার ধরন আমাদের জানা নেই। ইহুদীরা ১০ই মুহররমে আশুরার রোযা রাখে। সেই দিন আল্লাহ মূসা (আ) কে পানিতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন এবং ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছেন।
অতীতের বহু জাতি রোযা রেখেছে। পারস্য, রোমার, হিন্দু, গ্রীক, ব্যাবিলনীয় ও পুরাতন মিসরীয়রা রোযা রাখত। ক্যাথলিক গীর্জা রোযার কোনো নির্দেশ ও নীতিমালা জারি করেনি। তবে গীর্জার দৃষ্টিতে কোনো কোন সময় পূর্ণ উপবাস কিংবা আংশিক উপবাসের মাধ্যমে কিছু গুণাহ মাফ হয় এবং তা এক প্রকারের তাওবা হিসেবে গণ্য হয়। রোমান গীর্জা, মাঝে মধ্যে দিনে এক বেলা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আংশিক রোযার উপদেশ দেয়।
প্রাচীন খৃষ্টানরা বুধবার, শুক্রবার ও শনিবারে রোযা রাখত। তারা তাদের উপর আপতিত বিপদ মুক্তির জন্য রোযা রাখত। ৪র্থ খৃষ্টাব্দের শুরুতে খৃষ্টানদের উপর মারাত্মক নির্যাতন নেমে আসে। সে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য নবী মূসা (আ) এর অনুকরণে তারা ৪০ দিন ব্যাপী বড় রোযা রাখত।
এছাড়াও ঐ সময়ে মানুষের মধ্যে এ ধারণা বিরাজ করে যে, মানুষের খাওয়ার সময় শয়তান শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করা জরুরী, যেন শয়তানকে তাড়িয়ে নফসকে পবিত্র করা যায়। সে জন্য তারা রোযা রাখত। মথি লিখিত সুসমাচারে আছে, নামায ও রোযা দ্বারা শয়তান বেরিয়ে যায়।
প্রাচীন হিব্রুরা শোক কিংবা বিপদের মুহূর্তে রোযা রাখত। বিপদ দূর হয়ে গেলে আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রাখত। হিব্রু ক্যালেন্ডারে আজও ক্ষমা দিবসে ইহুদীদের রোযা রাখার নিয়ম আছে। প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা বছরে কয়েকদিন একাধারে রোযা রাখত। তাদের মতে, এটা আত্মাকে বিশুদ্ধ করার উত্তম পদ্ধতি। দার্শনিক পিথাগোথ ৪০ দিন রোযা রাখতেন। তার মতে, রোযা চিন্তার সহায়ক। সক্রেটিস এবং আফলাতুনও ১০ দিন রোযা রাখতেন। প্রাচীন সিরিয়ানরা প্রতি ৭ম দিনে রোযা রাখত। আর মঙ্গোলিয়ানরা রাখত প্রতি ১০ম দিবসে। সর্বযুগেই রোযার প্রচলন ছিল।
অনুরূপভাবে, বৌদ্ধ, হিন্দু, তারকা পূজারী ও আধ্যাত্মবাদীদেরও উপবাস সাধনার নিয়ম রয়েছে। তারা বিশেষ কিছু খাবার পরিহার করে আত্মাকে উন্নত করার চেষ্টা করে। তাদের ধারণা, দেহকে দূর্বল করার মাধ্যমে আত্মা শক্তিশালী হয়। আত্মাকে সবল করার জন্য তাদের এই উপবাস প্রথার আবিষ্কার হয়েছে। মূলকথা, রোযা প্রায় সকল জাতি ও ধর্মের মধ্যে রয়েছে। যদিও তার ধরণ-প্রকৃতি আমাদের জানা নেই।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রোযা
এতক্ষণ আমরা রোযার ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, রোযার ফযীলত ও মর্যাদা কত অসীম। এখন আমরা এর পাশাপাশি ব্যাপকার্থে রোযার ধারণা সম্পর্কে আরেকটি হাদীস আলোচনা করবো যা প্রতিটি রোযাদার মুসলিমের চিন্তার বিষয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«رب صائم حظه من صيامه الجوع والعطش ورب قائم حظه من قيامه السهر»
“বহু রোযাদার রোযার মাধ্যমে ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া আর কিছুই লাভ করে না এবং রাত্রের বহু নামাযী রাত্রী জাগরণ ছাড়া আর কিছুই পায় না। মুসনাদে আহমদ,খ২,পৃ.৩৭৩।
চিন্তার বিষয় হলো, রোযার এতো অগণিত পুরস্কার ও মর্যাদা সত্ত্বেও বহু রোযাদার এবং তারাবী ও তাহাজ্জুদ গুজারের ভাগ্যে ক্ষুধা-পিপাসা এবং রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছু জোটে না। রমযান মাসে আল্লাহর সকল মাখলুক আল্লাহর রহমতের স্পর্শ লাভ করে, সেখানে বহু রোযাদারের এই দুরবস্থা কেন? এর কারণ ও প্রতিকার জানা না থাকলে আমরাও সেই দুর্ভাগ্যের মিছিলের অংশীদার হয়ে যেতে পারি। মোটেও বিচিত্র নয় যে, এতদিন আমরা আমাদের রোযার মাধ্যমে ক্ষুধা-পিপাসা ও রাত্রি জাগরণের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ করতে পারিনি।
তাই রমযানের রোযা সম্পর্কে আজ আমাদেরকে আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মসমালোচনা করতে হবে। আসলে রোযা বলতে শুধু সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ হতে বিরত থাকা নয়, বরং রোযাদারকে অবশ্যই তার বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকেও রোযার আওতায় আনতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের রোযাকে সফল করে তুলতে পারবো ইনশাল্লাহ। আর এক্ষেত্রে অন্তর,পেট,জিহ্ব্বা ,কান প্রভৃতিরও রোযা থাকা আবশ্যক।
ক. অন্তরের রোযা
দেহের রোযার ভিত্তি হচ্ছে অন্তরের রোযা। শুধু তাই নয়, যে কোনো ইবাদতে অন্তরের স্থান সবার আগে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَن يُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ يَهۡدِ قَلۡبَهُۥۚ ١١ ﴾ [التغابن: ١١]
“যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে হেদায়াত করেন।”
অন্তরের হেদায়াত সকল ইবাদতের মূল কথা। তাই রোযার জন্য মন-মানসিকতা, চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা এবং প্রবৃত্তিকে পবিত্র ও কলুষমুক্ত হতে হবে। সৎ নিয়ত, সৎ চিন্তা, পরিকল্পনা, একনিষ্ঠতা কিংবা এখলাস হচ্ছে অন্তরের মূল কথা। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنما الأعمال بالنيات»
“সকল আমলের মূল ভিত্তি হচ্ছে নিয়ত।”[ বোখারী,খ.১,হাদীস নং ১।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
«أَلاَ وَإِنَّ فِي الجَسَدِ مُضْغَةً: إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الجَسَدُ كُلُّهُ، أَلاَ وَهِيَ القَلْبُ»
“হুশিয়ার! শরীরের মধ্যে এক টুকরা গোশত এমন আছে যা ঠিক ও সংশোধিত হলে, গোটা শরীর ঠিক ও সংশোধিত থাকে এবং তা খারাপ হলে গোটা শরীর খারাপ হয়ে যায়। হুশিয়ার! সেটি হচ্ছে অন্তর। বুখারী,খ১,হাদীস নং ৫২।
মন বা অন্তর দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক ধরনের অন্তর হচ্ছে, ঈমানের রসে সিক্ত ও আল্লাহ ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ। তা দ্বীন ও ঈমানের প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহর প্রতি সকল ত্যাগ তিতিক্ষার জন্য নিবেদিত। সেই মন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ নিষেধ মানার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে এবং বাতিল ও অনইসলামী কাজের প্রতি তার থাকে প্রচন্ড ঘৃণা ও বিদ্রোহের মনোভাব। আরেক ধরনের অন্তর হচ্ছে, মৃত ও অসুস্থ্য। তাকে পাপী অন্তরও বলা যায়। এই অন্তরের প্রধান কাজ হলো, দ্বীন ও ঈমান এবং নেক কাজে অনীহা, অনাগ্রহ ও ইসলাম বিরোধী কাজে উৎসাহবোধ করা। শেষোক্ত ধরনের অন্তর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন:
﴿ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ فَزَادَهُمُ ٱللَّهُ مَرَضٗاۖ ﴾ [البقرة: ١٠]
‘তাদের অন্তরে রয়েছে রোগ এবং আল্লাহ সে রোগ আরো বাড়িয়ে দেন” [সূরা আল বাকারা:১০]
﴿ أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَ أَمۡ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقۡفَالُهَآ ٢٤ ﴾ [محمد: ٢٤]
“তারা কি কুরআনকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তরে তালা লাগানো” (সূরা মোহাম্মদ: ২৪)
সে জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি করে নিম্নের এই দো‘আ পড়তেন।
«يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك»
“হে অন্তর পরিবর্তনকারী। আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত করে দাও।”[ তিরমিযী, কিতাবুল কদর,খ.১৩পৃ.২১, হাদীস নং ৩৮৬৪। 15]
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অন্তরের রোযা বলতে কি বুঝায়? অন্তরের রোযা বলতে বুঝায় অন্তরকে শির্ক থেকে মুক্ত, বাতিল আকীদা বিশ্বাস থেকে দূরে এবং খারাপ ও নিকৃষ্ট ওসওয়াসা মনোভাব ও নিয়ত থেকে খালি রাখা। মনকে গর্ব অহংকার থেকে দূরে, হিংসা-বিদ্বেষ ও লোক দেখানোর মনোবৃত্তি থেকে মুক্ত রাখা। কেননা, তা নেক আমলকে ধ্বংস করে ও জ্বালিয়ে দেয়। তখন গুনাহের কাজের প্রতি কোনো আগ্রহ উদ্দীপনা থাকবে না।
মনকে এ সকল খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখলেই অন্তরের রোযা হয়ে যায়। তখন রোযাদারের মন আল্লাহর ভালোবাসা পূর্ণ থাকে এবং তাকে তাঁর নাম ও গুণাবলীসহ স্মরণ করতে থাকে। অন্তর সর্বদা আল্লাহর সৃষ্ট জগত ও বিচিত্র কুদরত সম্পর্কে ধ্যানে থাকে এবং মন্দ ও খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে।
মুমিনের অন্তরে ঈমানের রোশনী বা আলো থাকে। এর সাথে অন্ধকার সহ-অবস্থান করতে পারে না। ঈমানী নূর বা আলো বলতে বুঝায়, চিরন্তন পয়গাম, আসমানী শিক্ষা ও আল্লাহর আইনের আলোকবর্তিকা। ঐ নূরের সাথে আল্লাহর তৈরি ফিতরাত বা স্বভাব-প্রকৃতির নূরও যোগ হয়। তখন দুই নূর এক সাথে হয়- এ কথাই মহান আল্লাহ বলেছেন:
﴿ نُّورٌ عَلَىٰ نُورٖۚ يَهۡدِي ٱللَّهُ لِنُورِهِۦ مَن يَشَآءُۚ ﴾ [النور: ٣٥]
‘নূরের উপরে নূর, আল্লাহ যাকে চান তাকে নিজ নূরের দিকে হেদায়াত দান করেন।’ (সূরা নূর: ৩৫)
অন্তর রোযা রাখলে তা আল্লাহর ভালোবাসায় আবাদ হয়। তখন তা বাতির মতো মিটমিট করে জ্বলতে শুরু করে। দিনে তা সূর্যের মতো আলো দান করে এবং ভোর রাতে সোবহে সাদিকের লালিমার মতো জ্বলতে থাকে। অন্তরকে হিংসা বিদ্বেষ, ঘৃণা ও ধোঁকাবাজি থেকে দূরে রাখতে পারলে জান্নাতে প্রবেশের রাস্তা প্রশস্ত হবে। অন্তরের রোযার এটাও একটা বিশেষ উদ্দেশ্য। আল্লাহ রোযার মাধ্যমে আমাদের অন্তরকে পূত পবিত্র ও নিষ্কলুষ করুন।
খ. পেটের রোযা
পেটের রোযা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর উপর দেহের রোযার বিশুদ্ধতা নির্ভর করে। মানুষের জীবন, কাজ-কর্ম, চরিত্র ও আচরণের উপর হালাল ও হারাম খাদ্যের প্রভাব পড়ে। তাই হালাল খাবার খেলে ভাল ও নেক কাজ করার প্রেরণা জাগে। পক্ষান্তরে হারাম খাবার খেলে গুনাহ ও নিষিদ্ধ কাজ করার প্রেরণা জাগে। সে জন্য হালাল খাদ্য গ্রহণের জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ ﴾ [المؤمنون: ٥١]
‘হে রাসূলেরা! তোমরা পবিত্র জিনিস থেকে খাবার গ্রহণ কর এবং নেক কাজ কর।’
এখানে পবিত্র খাবারের সাথে নেক আমলকে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র ও হালাল খাবারের অনিবার্য দাবী হচ্ছে নেক কাজ করা। (সূরা আল-মোমিনুন: ৫১)
মহান আল্লাহ আরো বলেছেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ وَٱشۡكُرُواْ لِلَّهِ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ١٧٢ ﴾ [البقرة: ١٧٢]
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার প্রদত্ত পবিত্র রিযিক খাও এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত কর।’ (সূরা আল বাকারা: ১৭২)
আল্লাহ পবিত্র জিনিসকে হালাল ও অপবিত্র জিনিসকে হারাম করেছেন। তিনি বলেছেন:
﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ١٥٧ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
‘আল্লাহ পবিত্র জিনিসসমূহকে হালাল ও অপবিত্র জিনিসসমূহকে হারাম করেছেন।’ (সূরা আ‘রাফ: ১৫৭)
পেটের রোযা বলতে বুঝায় পেটকে হারাম খাদ্য ও পানীয় থেকে বাঁচানো। ভুঁড়িভোজ বা অতিরিক্ত আহার না করা, রোযার সময় দিনে পানাহার থেকে বিরত থাকা এবং হারাম জিনিস দিয়ে ইফতার না করা। হারাম খাবার যেমন:
আল্লাহ অনেক খাবার হারাম ঘোষণা করেছেন। যেমন- শুকরের গোশত, হাতী, কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণী, চিল, বাজ ও কাকসহ পা দিয়ে ছোঁ মেরে শিকার করা বিভিন্ন পাখী, মদ, মলমূত্রসহ যাবতীয় অপবিত্র জিনিস।
হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ খাওয়াও হারাম। হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ অনেক। সেগুলো ………
Comment