প্রশ্ন নং: ৯২, বিষয়: আকিদা।
প্রকাশকাল: ৬/১০/২০০৯ ইং।
প্রশ্নের বিবরণ:প্রকাশকাল: ৬/১০/২০০৯ ইং।
আস-সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
ইরাকের তাগুত সরকারের বিদ্যালয়ে নিয়োগ হওয়া এবং শিক্ষক হিসাবে চাকুরী করার বিধান কি?
প্রশ্নকারী: আবু উবায়দা আস-সালাফী।
উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নবী ও সর্বশেষ রাসূলের উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবা ও যারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের যথাযথ অনুসরণ করবে তাদের উপর।
আম্মাবাদ!
প্রশ্নকারী ভাই! আল্লাহ আপনাকে ও আমাদেরকে সে কাজ করার তাওফিক দান করুন, যা তিনি ভালবাসেন এবং যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন।
জেনে রাখুন, তাগুতী শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন পদে চাকুরী করার বিধান- চাই সেটা ইরাকে হোক বা অন্য কোন মুসলিম দেশে হোক, যেখানে কুফরী বিধি-বিধান বিজয়ী এবং কুফরের কর্তারা নেতৃত্ব দেয়- তা তিনটি বিধানের যেকোন একটির বাইরে হবে না।
১. হয়তো কুফরী হবে,
২. নয়ত হারাম হবে,
৩. নয়ত মাকরূহ হবে।
প্রতিটি হুকুম সাব্যস্ত হবে হুকুমের ইল্লত ও কারণের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে।
যখন চাকুরির মধ্যে উক্ত হুকুমত ও তার কর্তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা, তাদের সমর্থন ও সহযোগীতা করা এবং তাদের আইন ও বিধানের সমর্থন ও সহযোগীতা করা পাওয়া যাবে- এটা চাই উক্ত শাসনব্যবস্থার প্রতি আহ্বান করার মাধ্যমে হোক বা তার দ্বারা শাসন পরিচালনা করার মাধ্যমে হোক বা সন্তুষ্টি ও গ্রহণের সাথে তার নিকট বিচার প্রার্থনা করার মাধ্যমে হোক- তাহলে কোন সন্দেহ নেই যে, এধরণের পদে চাকুরী করা প্রকাশ্য কুফর, স্পষ্ট শিরক্ এবং আল্লাহর দ্বীন থেকে স্পষ্ট ইরতিদাদ। যে এ ধরণের পদসমূহে চাকুরী করবে, সে তাগুতদেরকে বর্জন করার সেই আবশ্যকীয় রুকনটি ভঙ্গ করল, যেটা ব্যতিত কারো ইসলাম গ্রহণই সহীহ হয় না।
আর যখন চাকুরীতে উক্ত তাগুতী হুকুমতকে মানুষের উপর জুলুম করার ব্যাপারে অথবা অন্যায়ভাবে মানুষের মাল ভক্ষণ করার ব্যাপারে সাহায্য করা হবে- যেমন ট্যাক্স, টোল বা কোন কোন দেশে যেগুলোকে রাজস্ব বলে নামকরণ করা হয়, তা উসূলকারী হওয়া বা তাগুত সরকারকে সুদ খাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করা, যেমন তাগুতরা জনগণকে প্রথমে সংকীর্ণতায় ফেলে দেওয়ার পর ব্যবসার জন্য বা কৃষির জন্য সুদভিত্তিক যে ঋণ দেয়্ এবং এর ফলে জনগণ যা নিতে বাধ্য হয়, সেই সমস্ত মুআমালার লেখক বা সাক্ষী হওয়া- এ ধরণের পদে চাকুরী করা অকাট্যভাবে হারাম এবং কবিরাহ গুনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম কবিরাহ গুনাহ।
যে এ সমস্ত পদে চাকুরী করে, সে তাগুতকে পরিপূর্ণ বর্জন করার সেই ওয়াজিব হুকুমটি পালন করল না, যা উক্ত গুনাহের পরিমাণ অনুযায়ী ঈমানকে ত্রুটিপূর্ণ ও দুর্বল করে দেয়।
তবে যদি চাকুরীর মধ্যে পুর্বোক্ত দু’টি কারণের কোন কারণ না পাওয়া যায়- যেমন ওয়াকফের ইমাম, তাদের খতিব ও মুআয্যিন অথবা শিক্ষা ও তরবিয়ত মন্ত্রণালয়ে শিক্ষক বা অন্য কোন কর্মকর্তা; স্বাস্থ মন্ত্রণালয় বা পৌরসভার কর্মকর্তারা, কিংবা অন্যান্য ঐ সকল পদ যেগুলোতে চাকুরীকারী ব্যক্তির সর্বনিম্ন অবস্থা হয় এই যে, সে ঐ সরকারের দল ভারিকারী এবং তার পদতলে লাঞ্ছিত ও অবনত থাকে- তাহলে এ ধরণের চাকুরীতে যদি অন্য কোন গুনাহ না পাওয়া যায়, তবে এটা আমরা এক্ষণে যে হুকুমগুলো উল্লেখ করলাম তার মধ্যে তৃতীয় নম্বরটি হবে। অর্থাৎ মাকরুহ হবে। অতএব এ ধরণের চাকুরিকারী ব্যক্তি তাগুতকে পরিপূর্ণ বর্জন করার মুস্তাহাব অংশটি বাস্তবায়ন করল না।
আমাদের শায়খ আবু মুহাম্মদ আল-মাকদিসি (হাফিজাহুল্লাহ) তার পুস্তক “আলইশরাকাহ ফি সুওয়ালাতে সাওয়াকা” এর দ্বিতীয় মাসআলায় বলেন-
আমরা যেটা বলেছি এবং বলবো, তা হল: আমরা একজন তাওহিদবাদী ভাইয়ের জন্য এটাই চাই যে, তিনি এই তাগুতী শাসনব্যস্থাকে পরিপূর্ণ বর্জন করার জন্য তা থেকে পরিপূর্ণ দূরে থাকবেন। কোন সন্দেহ নেই যে, প্রতিটি তাওহিদবাদীর জীবন পরিচালনার নীতিমালা হল আল্লাহ তা’আলার বাণী-{أن اعبدوا الله واجتنبوا الطاغوت} “তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো আর তাগুত থেকে বেঁচে থাক।”
এটাই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ। কিন্তু এর থেকে (অর্থাৎ তাগুতকে বর্জন করার পর্যায়সমূহ থেকে) কিছু হল ঈমানের জন্য শর্ত, যা পরিত্যাগ করা ঈমানকে ভঙ্গ করে দেয়। যেমন তাগুতের ইবাদত করা থেকে দূরে থাকা, ইচ্ছাকৃতভাবে তাগুতদের নিকট বিচার প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকা, তাগুতদের কুফরী আইন ও বিধি-বিধানের প্রহরা দেওয়া বা তাকে শ্রদ্ধা করার ব্যাপারে শপথ করা বা এজাতীয় বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকা।
আর কিছু হল ঈমানের পূর্ণাঙ্গতার অংশ। এগুলো পরিত্যাগ করা ঈমানকে ত্রুটিপূর্ণ করে দেয়। কিন্তু ঈমানকে ভেঙ্গে দেয় না। যেমন তাগুতের প্রতি কিছুটা নতঝানু হওয়া, শৈথিল্য করা, তাদের জুলুমের ক্ষেত্রে তাদের দল ভারী করা বা এজাতীয় গুনাহগুলো।
অত:পর শায়খ (হাফিযাহুল্লাহ) এই মাসআলার টীকায় লিখেন:
এর দ্বারা এ সকল গুনাহর ব্যাপারে শৈথিল্যতা বুঝা উচিত নয়। কারণ এগুলোর মধ্যে কতিপয় আছে কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। তবে আমাদের কথার উদ্দেশ্য ছিল, এ সকল গুনাহকে কুফরী কাজ থেকে পৃথক করা। যার গ্রহণকারী অন্তর রয়েছে, তার জন্য আল্লাহ তা’আলার এই ধমকি বাণীই যথেষ্ট, যা আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে কাফেরদের প্রতি সামান্য ঝুঁকে যাওয়ার ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন-
ولولا أن ثبتناك لقد كدت تركن إليهم شيئاً قليلاً إذا لأذقناك ضعف الحياة والضعف الممات ثم لا تجد لك علينا نصيرا
“আমি যদি তোমাকে অবিচলিত না রাখতাম, তবে তুমিও তাদের দিকে খানিকটা ঝুঁকে পড়ার উপক্রম হতে। আর তাহলে আমি দুনিয়ায়ও তোমাকে দিগুণ শাস্তি দিতাম এবং মৃত্যুর পরেও দিগুণ। অত:পর আমার বিরুদ্ধে তুমি কোন সাহায্যকারী পেতে না।”
এ ছিল সাধারণভাবে সকল মুসলিম দেশে বিরাজমান তাগুতী শাসনব্যবস্থায় যোগ দেওয়া বা সেখানে চাকুরী করার ব্যাপারে। এবার আসি ইরাকের তাগুতী শাসনব্যবস্থায় যোগ দেওয়া ও তাতে চাকুরী করার প্রসঙ্গে। সেখানকার অবস্থা তো সকলের জানাশোনা। যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠেছে। আল্লাহর সাথে শরীককারী ক্রুসেডের পূজারী এবং ইসলামের রক্ষক ও তাওহিদের সৈনিকদের মাঝে ঘোরতর লড়াই চলছে। রহমানের বন্ধু আর শয়তানের বন্ধুদের মাঝে যুদ্ধের চাকা ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই যদি কিছু বৈধ বিষয় থাকার কারণে সেখানে অধ্যাপনাকারী কাফের সাব্যস্ত নাও হয় বা গুনাহগার নাও হয়, -যেমন অঙ্কশাস্ত্র বা এজাতীয় বিষয় যেগুলোতে তাগুতী আইন ও তার শাসকদেরকে সম্মান করা হয় না- তথাপিও সে গুনাহগার হবে, যদি এই আগ্রাসনের ছত্রছায়ায় থেকে তার মুজাহিদ ভাইদের সাহায্য পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ ছেড়ে দেয়, যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজে আইন। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: যে আগ্রাসী দুশমন দ্বীন-দুনিয়া সব বরবাদ করে দেয়, ঈমানের পর তাকে দমন করা থেকে বড় আবশ্যকীয় বিষয় আর কিছু নেই।
একারণে হে প্রশ্নকারী ভাই! আমি আপনাকে উপদেশ দিব, আপনি দাওলাতুল ইরাক আলইসলামিয়ার সেনাবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না, যারা তাওহিদ ও জিহাদের পতাকা সুউচ্চ করেছে। আপনি তাদের কর্মী, তাদের সাহায্যকারী ও তাদের দলভূক্ত হওয়ার প্রতি আগ্রহি হোন। এমনকি যদি শুধু তাদের দল ভারি করা ব্যতিত আর কিছুই না করতে পারেন, তবে এর মধ্যেও শৈথিল্য করবেন না।
আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের ঐ সকল বিষয়ে আগ্রহ বাড়িয়ে দিন, যা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করবে এবং আমাদের প্রতি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে। এ ছিল আমার কথা। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সর্বজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাশীল।
ওয়াসাল্লাল্লঅহু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদিও ওয়ালা আলিহি ওয়াসাহবিহি আজমাঈন।
উত্তর প্রদান করেছেন: আল-লাজনাতুশ শরইয়্যাহ এর সদস্য শায়খ আবুন নুর আল-ফিলিস্তিনী।
[বি.দ্র. এ প্রশ্ন করা হয়েছে ২০০৯ ইং সালে। দাওলাতুল ইরাক তখনোও এতোটা গুমরাহিতে লিপ্ত হয়নি, যেমনটা পরে হয়েছে। এ কারণে তখন দাওলাতুল ইরাকে যোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। বর্তমান অবস্থা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।]
Comment