খারেজীদের সম্পর্কে ....
by Mdsirajul Islam
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
নামকরণঃ খারেজী আরবি শব্দ যা এসেছে খারাজা থেকে,যার অর্থ বেরিয়ে পড়া অর্থাৎ তারা বেরিয়ে পড়েছে হত্যার উদ্দেশে তৎকালীন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষকে (হযরত আলি রঃ)।
মূলত তারা কোরআন ও হাদিসের পথ থেকে বেরিয়ে পড়েছে সেই জন্য তাদেরকে খারেজী বলা হয়।
খারেজীঃ যারা ( লোক বা গুষ্টি বা দল ) ইসলামের পক্ষে কাজ করে বা করার জন্য চেষ্টা করে ,কিংবা ইসলামকে পূর্ণ বা আংশিক ভাবে মেনে চলে তাদের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার (কথা / কলমের মাধ্যমে বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে ) তাদের কে খারেজী বলা হয়।ইসলামের প্রথম থেকে শুরু করে তারা এখন পর্যন্ত তারা বিদ্যমান । ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের কোন কথা নাই কিংবা কোন কর্ম পরিকল্পনা নাই । তারা শুধু বিরোধীটা করে তাদেরকে যারা ইসলামের আদেশ ও নিষেধ মেনে চলে বা চলার চেষ্টা করে। তারা কুরআন থেকে সেই সব আয়াত নেয় যেগুলো কাফেরদের জন্য নাযিল হইয়াছে এবং সেই সব আয়াত মুসলিম শাসক কিংবা মুসলিম দলের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের হত্যা করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়।
খারেজীদের চিনার উপায়ঃ খারেজী সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে ,তার কিছু উল্লেখ করলাম,
যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণীত ,এক লোক রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) এর কাছে জেরানা নামক স্থানে দেখা করেন। জেরানা নামক স্থানটি হল সেই জায়গা যেখানে রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) হুনায়নের যুদ্ধে প্রাপ্ত গনিমতের মাল বণ্টন করছিলেন ।সাহাবী বেলাল (রঃ) এর কাপড়ের উপর রুপার টুকরা গুলো রাখা ছিল। নবীজি সেইখান থেকে মুষ্টি বদ্ধ ভাবে মানুষকে দান করছিলেন। তখন উপস্থিত ঐ লোক বললঃ- “হে মুহাম্মদ আপনি আল্লাহ্*কে ভয় করুন ও ইনসাফ করুন”
রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ ধ্বংস তোমার জন্য ।আমি যদি ইনসাফ না করি তবে কে ইনসাফ করবে? সাথে সাথে ওমর (রঃ) (মতান্তরে খালিদ বিন ওয়ালিদ ) বলেন হে রাসুল আপনি অনুমতি দিন আমি এই মুনাফিককে হত্যা করি। রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ না, আমি আল্লাহ্*র কাছে আশ্রয় চাই । যদি এমন কর তবে মানুষ বলবে আমি আমার সাহাবীদের হত্যা করি ।ঐ লোক চলে যাওয়ার পর ,তিনি আরও বলেন, এই লোকটা ও তার কিছু সঙ্গী থাকবে যারা কোরআন পড়বে কিন্তু কোরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমন ভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়।[মুসলিম শরীফ]
অন্য বর্ণনায় আছে,হযরত আব্দুর রহমান ইবনে নইম হতে বর্ণিত , রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ এই লোকের বংশধর থেকে এমন কিছু লোক বের হবে যারা যারা কোরআন পড়বে কিন্তু কোরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমন ভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়।তারা মুসলিমদের (আহলে ইসলাম ) হত্যা করবে কিন্তু কাফের,মুশরিকদের ছেড়ে দিবে। তাদের সত্রুতা হবে শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে।
রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) আরও বলেনঃ নিশ্চয়ই তারা এমন ভাবে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে যেমনি একটি তীর শিকারকে ভেদ করে বের হয়ে যায় ।আমি যদি এদেরকে পাই, তবে আদ সম্প্রদায়কে যে ভাবে হত্যা করা হইয়াছে সেই ভাবে হত্যা করব। [মুসলিম শরীফ]
মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) বলেন, ‘শেষ যামানায় একদল তরুণ বয়সী নির্বোধ লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সর্বোত্তম কথা বলবে। তারা ইসলাম থেকে এত দ্রুত গতিতে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে সেখানেই হত্যা করবে। কারণ যে তাদেরকে হত্যা করবে তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট নেকী রয়েছে’।
[বুখারী হা/৩৬১১, ৫০৫৭, ৬৯৩০; মুসলিম হা/২৫১১; আবূদাঊদ হা/৪৭৬৭; নাসাঈ হা/৪১০২; মিশকাতহা/৩৫৩৫]
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) বলেন, ‘তোমরা তাদের সালাতের তুলনায় তোমাদের সালাতকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের সিয়ামের তুলনায় তোমাদের সিয়ামকে এবং তাদের আমলের তুলনায় তোমাদের আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে...। তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করবে এবং মূর্তিপূজকদের ছেড়ে দিবে...’। [বুখারী হা/৫০৫৮; মুসলিম হা/২৪৫৩ ও ২৪৪৮; মিশকাত হা/৫৮৯৪]
হিজরি ৩৭ সালে একটি কাহিনী খারেজীদের সম্পর্কে আরও পরিস্কার ধারণা পাওয়া যায়।
হযরত আলী (রঃ) শাসনের সময় ইসলামের খলিফার নির্ধারণের মুসলমানরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে ।একটি দল হল হযরত আলী (রঃ) এবং অন্য দল হল মুয়াবিয়া । ক্রমে অবস্থা রক্তক্ষয়ীতে রুপ লাভ করে (৬৫৭ সালের জুলাই মাসে আলীর সাথে মুয়াবিয়ার ‘সিফফিন’ নামক স্থানে যুদ্ধ হয়) , তখন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধের জন্য হযরত আলী (রঃ) দুই জন বিচারক নিয়োগ দিলেন ,একজন হযরত আলী (রঃ) পক্ষ থেকে অন্য জন মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে হযরত আলী (রঃ) এর একটি দল চরম প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে, এবং তারা হযরত আলী (রঃ) কে কাফির বলে সম্বোধন করেন ।তারা দাবি করে , হযরত আলী (রঃ) কে তওবা করে পুনরাই ইসলাম গ্রহন করতে হবে।(তারা মনে করে হযরত আলী (রঃ)কে হত্যা করা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো কাজ ও এর দারা আল্লাহ্* খুশি হবে এবং ফলস্বরূপ তারা জান্নাত লাভ করবে)।
কিন্তু কেন তারা তাঁকে কাফির বলেছেন ?
তাদের (খারেজীদের) বক্তব্য , “হযরত আলী (রঃ) বিচারের দায়িত্ব মানুষের উপর নেস্ত করেছেন, কিন্তু বিচারের মালিক আল্লাহ্*।আল্লাহ্* ছাড়া কারোও ফয়সালা মানা যাবে না ।“সিদ্ধান্ত তো আল্লাহ্ ছাড়া কারোর নয়” (إِنِالْحُكْمُإِلَّالِلَّهِ ৬:৫৭)।
এই আয়াতের হুকুম ভংগ করেছেন। তাই বিচারক নিয়োগ কুরআন পরিপন্থী । সুতরাং আপনি কুফরি করেছেন এবং আপনি কাফের হয়ে গেছেন ,আপনাকে তওবা করে পুনরাই ইসলাম গ্রহন করতে হবে। ”।
অথচ সত্য হল মানুষের মধ্যে ফয়সালার জন্য মানুষকেই বিচারক হতে হবে।আর ফয়সালা হবে আল্লাহ্*র আইন অনুসারে ।এই খারিজীরা নিজেদের নির্বুদ্ধিতা ধর্মীয় গোঁড়ামিতে রূপদান করে এবং মুসলমানদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা করে।
তাদের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছেঃ
#> মুসলমানদেরকে যেকোনো গুনাহের (বিশেষ করে গুনাহে কবিরা ) জন্য কাফের বলে সম্বোধন করা।এবং সামান্য ব্যাপারে কুফরের ফতোয়া দেয় । খারেজী মনে করে কবিরা গুনাহকারীরা তওবা না করা পর্যন্ত কাফির বলেই গন্য হবেন।
#> মুসলিম সাম্রাজ্যের নেতাদের [হযরত আলী (রঃ),মুয়াবিয়া (রঃ)] বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে (তাদের হত্যা ফরজ বলে ফতোয়া দেয়) এবং আর নাম দেয় জিহাদ।
#> তারা মুসলমানদের হত্যা করবে শুধু মাত্র ধর্মীয় মতের অমিলের (কিভাবে ইবাদত / শাসন করা হবে এই বিষয়ে ) কারনে। কিন্তু তারা কাফের , মুশরিক , কবর ও মূর্তি পূজারী দের ছেড়ে দিবে এবং তাদের (খারেজীদের) কথা শুনলে মনে হয় ঐ মুসলিম দলটাই ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু।
#> তারা হাদিস মানে না ,কুরআন মানে কিন্তু কুরআনের অপব্যাখ্যা দেয় ।
#> তারা নিজেদের অনেক জ্ঞানী ভাবে, এবং নিজেদেরকে সৎ পথে থাকার দাবি করে। আর ইবাদতের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করে ।
#> তারা নিজেরা ইসলামের সঠিক পথে আছে বলে দাবি করে। অন্য ইসলামিক দলকে আক্রমনারত্তক ভাবে দেখে।
[১.কবীরা গুনাহ: যিনা-ব্যভিচার করা , লাওয়াতাত বা সমকামিতা করা,শিরক করা,মানুষ হত্যা করা,জাদুটোনা করা, সুদের আদান-প্রদা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া, রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা, জুয়া খেলা, মদ্যপান, পোশাক-পরিচ্ছদে নারী-পুরুষের সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা, আমানতের খেয়ানত,বিশ্বাসঘাতকতা, বিচারকার্যে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া,দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা এবং সত্য গোপন করা,মুসলমানদের কষ্ট ও গালিদেয়া ইত্যাদি।এইসব বড় গুনা কোন মুসলমান করলে তার জন্য পরিষ্কার আইন রয়েছে । শাস্তি ভোগ ও তাওবার মাধ্যমে কবিরা গুনাহ থেকে মাপ পাওয়া যায় (যদি আল্লাহ্* চান)। সুতরাং কবিরা গুনাহ করলে কাফির হয়ে যাবে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা . ]
by Mdsirajul Islam
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
নামকরণঃ খারেজী আরবি শব্দ যা এসেছে খারাজা থেকে,যার অর্থ বেরিয়ে পড়া অর্থাৎ তারা বেরিয়ে পড়েছে হত্যার উদ্দেশে তৎকালীন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষকে (হযরত আলি রঃ)।
মূলত তারা কোরআন ও হাদিসের পথ থেকে বেরিয়ে পড়েছে সেই জন্য তাদেরকে খারেজী বলা হয়।
খারেজীঃ যারা ( লোক বা গুষ্টি বা দল ) ইসলামের পক্ষে কাজ করে বা করার জন্য চেষ্টা করে ,কিংবা ইসলামকে পূর্ণ বা আংশিক ভাবে মেনে চলে তাদের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার (কথা / কলমের মাধ্যমে বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে ) তাদের কে খারেজী বলা হয়।ইসলামের প্রথম থেকে শুরু করে তারা এখন পর্যন্ত তারা বিদ্যমান । ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের কোন কথা নাই কিংবা কোন কর্ম পরিকল্পনা নাই । তারা শুধু বিরোধীটা করে তাদেরকে যারা ইসলামের আদেশ ও নিষেধ মেনে চলে বা চলার চেষ্টা করে। তারা কুরআন থেকে সেই সব আয়াত নেয় যেগুলো কাফেরদের জন্য নাযিল হইয়াছে এবং সেই সব আয়াত মুসলিম শাসক কিংবা মুসলিম দলের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের হত্যা করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়।
খারেজীদের চিনার উপায়ঃ খারেজী সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে ,তার কিছু উল্লেখ করলাম,
যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণীত ,এক লোক রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) এর কাছে জেরানা নামক স্থানে দেখা করেন। জেরানা নামক স্থানটি হল সেই জায়গা যেখানে রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) হুনায়নের যুদ্ধে প্রাপ্ত গনিমতের মাল বণ্টন করছিলেন ।সাহাবী বেলাল (রঃ) এর কাপড়ের উপর রুপার টুকরা গুলো রাখা ছিল। নবীজি সেইখান থেকে মুষ্টি বদ্ধ ভাবে মানুষকে দান করছিলেন। তখন উপস্থিত ঐ লোক বললঃ- “হে মুহাম্মদ আপনি আল্লাহ্*কে ভয় করুন ও ইনসাফ করুন”
রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ ধ্বংস তোমার জন্য ।আমি যদি ইনসাফ না করি তবে কে ইনসাফ করবে? সাথে সাথে ওমর (রঃ) (মতান্তরে খালিদ বিন ওয়ালিদ ) বলেন হে রাসুল আপনি অনুমতি দিন আমি এই মুনাফিককে হত্যা করি। রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ না, আমি আল্লাহ্*র কাছে আশ্রয় চাই । যদি এমন কর তবে মানুষ বলবে আমি আমার সাহাবীদের হত্যা করি ।ঐ লোক চলে যাওয়ার পর ,তিনি আরও বলেন, এই লোকটা ও তার কিছু সঙ্গী থাকবে যারা কোরআন পড়বে কিন্তু কোরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমন ভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়।[মুসলিম শরীফ]
অন্য বর্ণনায় আছে,হযরত আব্দুর রহমান ইবনে নইম হতে বর্ণিত , রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ এই লোকের বংশধর থেকে এমন কিছু লোক বের হবে যারা যারা কোরআন পড়বে কিন্তু কোরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমন ভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়।তারা মুসলিমদের (আহলে ইসলাম ) হত্যা করবে কিন্তু কাফের,মুশরিকদের ছেড়ে দিবে। তাদের সত্রুতা হবে শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে।
রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) আরও বলেনঃ নিশ্চয়ই তারা এমন ভাবে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে যেমনি একটি তীর শিকারকে ভেদ করে বের হয়ে যায় ।আমি যদি এদেরকে পাই, তবে আদ সম্প্রদায়কে যে ভাবে হত্যা করা হইয়াছে সেই ভাবে হত্যা করব। [মুসলিম শরীফ]
মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) বলেন, ‘শেষ যামানায় একদল তরুণ বয়সী নির্বোধ লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সর্বোত্তম কথা বলবে। তারা ইসলাম থেকে এত দ্রুত গতিতে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে সেখানেই হত্যা করবে। কারণ যে তাদেরকে হত্যা করবে তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট নেকী রয়েছে’।
[বুখারী হা/৩৬১১, ৫০৫৭, ৬৯৩০; মুসলিম হা/২৫১১; আবূদাঊদ হা/৪৭৬৭; নাসাঈ হা/৪১০২; মিশকাতহা/৩৫৩৫]
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) বলেন, ‘তোমরা তাদের সালাতের তুলনায় তোমাদের সালাতকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের সিয়ামের তুলনায় তোমাদের সিয়ামকে এবং তাদের আমলের তুলনায় তোমাদের আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে...। তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করবে এবং মূর্তিপূজকদের ছেড়ে দিবে...’। [বুখারী হা/৫০৫৮; মুসলিম হা/২৪৫৩ ও ২৪৪৮; মিশকাত হা/৫৮৯৪]
হিজরি ৩৭ সালে একটি কাহিনী খারেজীদের সম্পর্কে আরও পরিস্কার ধারণা পাওয়া যায়।
হযরত আলী (রঃ) শাসনের সময় ইসলামের খলিফার নির্ধারণের মুসলমানরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে ।একটি দল হল হযরত আলী (রঃ) এবং অন্য দল হল মুয়াবিয়া । ক্রমে অবস্থা রক্তক্ষয়ীতে রুপ লাভ করে (৬৫৭ সালের জুলাই মাসে আলীর সাথে মুয়াবিয়ার ‘সিফফিন’ নামক স্থানে যুদ্ধ হয়) , তখন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধের জন্য হযরত আলী (রঃ) দুই জন বিচারক নিয়োগ দিলেন ,একজন হযরত আলী (রঃ) পক্ষ থেকে অন্য জন মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে হযরত আলী (রঃ) এর একটি দল চরম প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে, এবং তারা হযরত আলী (রঃ) কে কাফির বলে সম্বোধন করেন ।তারা দাবি করে , হযরত আলী (রঃ) কে তওবা করে পুনরাই ইসলাম গ্রহন করতে হবে।(তারা মনে করে হযরত আলী (রঃ)কে হত্যা করা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো কাজ ও এর দারা আল্লাহ্* খুশি হবে এবং ফলস্বরূপ তারা জান্নাত লাভ করবে)।
কিন্তু কেন তারা তাঁকে কাফির বলেছেন ?
তাদের (খারেজীদের) বক্তব্য , “হযরত আলী (রঃ) বিচারের দায়িত্ব মানুষের উপর নেস্ত করেছেন, কিন্তু বিচারের মালিক আল্লাহ্*।আল্লাহ্* ছাড়া কারোও ফয়সালা মানা যাবে না ।“সিদ্ধান্ত তো আল্লাহ্ ছাড়া কারোর নয়” (إِنِالْحُكْمُإِلَّالِلَّهِ ৬:৫৭)।
এই আয়াতের হুকুম ভংগ করেছেন। তাই বিচারক নিয়োগ কুরআন পরিপন্থী । সুতরাং আপনি কুফরি করেছেন এবং আপনি কাফের হয়ে গেছেন ,আপনাকে তওবা করে পুনরাই ইসলাম গ্রহন করতে হবে। ”।
অথচ সত্য হল মানুষের মধ্যে ফয়সালার জন্য মানুষকেই বিচারক হতে হবে।আর ফয়সালা হবে আল্লাহ্*র আইন অনুসারে ।এই খারিজীরা নিজেদের নির্বুদ্ধিতা ধর্মীয় গোঁড়ামিতে রূপদান করে এবং মুসলমানদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা করে।
তাদের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছেঃ
#> মুসলমানদেরকে যেকোনো গুনাহের (বিশেষ করে গুনাহে কবিরা ) জন্য কাফের বলে সম্বোধন করা।এবং সামান্য ব্যাপারে কুফরের ফতোয়া দেয় । খারেজী মনে করে কবিরা গুনাহকারীরা তওবা না করা পর্যন্ত কাফির বলেই গন্য হবেন।
#> মুসলিম সাম্রাজ্যের নেতাদের [হযরত আলী (রঃ),মুয়াবিয়া (রঃ)] বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে (তাদের হত্যা ফরজ বলে ফতোয়া দেয়) এবং আর নাম দেয় জিহাদ।
#> তারা মুসলমানদের হত্যা করবে শুধু মাত্র ধর্মীয় মতের অমিলের (কিভাবে ইবাদত / শাসন করা হবে এই বিষয়ে ) কারনে। কিন্তু তারা কাফের , মুশরিক , কবর ও মূর্তি পূজারী দের ছেড়ে দিবে এবং তাদের (খারেজীদের) কথা শুনলে মনে হয় ঐ মুসলিম দলটাই ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু।
#> তারা হাদিস মানে না ,কুরআন মানে কিন্তু কুরআনের অপব্যাখ্যা দেয় ।
#> তারা নিজেদের অনেক জ্ঞানী ভাবে, এবং নিজেদেরকে সৎ পথে থাকার দাবি করে। আর ইবাদতের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করে ।
#> তারা নিজেরা ইসলামের সঠিক পথে আছে বলে দাবি করে। অন্য ইসলামিক দলকে আক্রমনারত্তক ভাবে দেখে।
[১.কবীরা গুনাহ: যিনা-ব্যভিচার করা , লাওয়াতাত বা সমকামিতা করা,শিরক করা,মানুষ হত্যা করা,জাদুটোনা করা, সুদের আদান-প্রদা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া, রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা, জুয়া খেলা, মদ্যপান, পোশাক-পরিচ্ছদে নারী-পুরুষের সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা, আমানতের খেয়ানত,বিশ্বাসঘাতকতা, বিচারকার্যে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া,দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা এবং সত্য গোপন করা,মুসলমানদের কষ্ট ও গালিদেয়া ইত্যাদি।এইসব বড় গুনা কোন মুসলমান করলে তার জন্য পরিষ্কার আইন রয়েছে । শাস্তি ভোগ ও তাওবার মাধ্যমে কবিরা গুনাহ থেকে মাপ পাওয়া যায় (যদি আল্লাহ্* চান)। সুতরাং কবিরা গুনাহ করলে কাফির হয়ে যাবে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা . ]
Comment